#আমার রাজ্যের রানী
#Part: 5
#Writer: Sriti Nur Avni
?
হাতে একটা টিয়া পাখি আর আরেক হাতে একটা ডায়রী নিয়ে নীলের দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে অভনী।নীলের মুখ দেখেও বুঝা যাচ্ছে অভনী কে দেখে সেও খুব অভাক হয়েছে। নীল রঙের শাড়ি পরে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে শুধু কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিয়েছে সে,,,,এতো অল্প সাজেও খুব সুন্দর লাগছে অভনী কে যা নীল কে ঘায়েল করতে যথেষ্ট,,,,, সকাল সকাল অভনী কে নিজের বাসায় দেখার তো কথা না তাহলে?,,ও তো ওদের বাসা ও চিনে না তাহলে?নীলের মাথায় প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খেলেও অভনীর মাথায় এতো প্রশ্নের বোঝা সহ্য করা সম্ভব হলো না তার,,,,তাই অভনী বলে উঠলো,,,,
—আপনি এখানে কেন?আপনি কি অলওয়েস আমায় ফলো করেন?(অভনী)
অভনীর কথায় নীল ভ্রু কুচকে তাকালো,,,,বলল,,,
— এই মেয়ে আমার এতো এতো কাজ রেখে আমি তোমাকে ফলো করতে যাবো?লাইক সিরিয়াসলি?
আমাকে ফলো করতে করতে নিজেই তো চলে আসলে। (নীল)
—ও আপনি তাহলে স্যার এর মেয়ে থুক্কু ছেলে?( অভনী)
নীল কিছু বলতে যাবে তখনি ওদের ড্রাইভার কাকা এসে অভনী কে বললো,,,
—মা এই নাও তোমার গাছ টা,,,কোথায় রাখবো বলো আমায় আমি রেখে আসছি (ড্রাইভার)
—আংকেল আপনি সামনে রাখুন আমি নিজেই নিয়ে যাবো (অভনী হেসে)
গাড়ি দিয়ে আসার সময় ড্রাইভার এর সাথে কথা বলতে বলতে ড্রাইভার কাকার সাথে মিশে গেছে অভনী,,,লোকটার কথা শুনে খুব ভালোই লাগছিল তার,,, ওর কাছে মনে হচ্ছিল,,,লোকটা ভালো নাকি এতো ভালো মানুষদের সাথে থাকতে থাকতে ভালো হয়ে গেছে কথায় আছে না সংজ্ঞ দোষে লোহা বাসে।
অভনী কে এইভাবে গাছ,পাখি নিয়ে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে নীল,,,,নিজের মধ্যে প্রশ্ন গুলো কে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে ড্রাইভার কাকা কে জিজ্ঞাসা করলো,,,
—হাসু (হাসেম) কাকা তুমি ওকে চিনো?(নীল)
—বাপজান এই মায় হইলো তোমগো অফিসে কাজ করে,,,তোমার জন্মদিনের লাইগা ম্যাডাম আমারে ওরে নিয়া আসতে কইছে (হাসেম)
নীল আর কিছু না বলে চলে গেলো ওর কাজে,,অভনী গাছ টা হাতে নিয়ে ভিতরে ডুকতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো,,,,
এই জন্যই কি এই লোকটাকে আমার বিশ্বাস করতে মন চায়?এই জন্যই কি সবাই বলে বাবা মা যেমন হয় যেমন শিক্ষা দেয় ছেলে মেয়ে তেমন ই হয়?হয়তো শতকারা ৬০%ই হয়।
অভনী ভিতরে গিয়ে নিহাল আহম্মেদ আর নিলিমা চৌধুরী আহম্মেদ এর সাথে কাছে গেলো (নিলিমা আহম্মেদ চৌধুরী নামের শেষে চোধুরী তার বাবার বাড়ির নামের পদবী,,,ওর ধারনা বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি নামের পদবী ও পাল্ট ফেলতে হবে নাকি?বাবা মা কে সবাই কে ছেরে তো চলেই আসলো তাই বলে কি নাম টাও রাখা যাবে না?থাক না একটা পদবী সাথে মাঝে মাঝে নিজের নাম শুনলেও মনে হবে না বাবার বাড়ি থেকে চলে আসলেও অধিকার টা রয়ে গেছে।)
অভনী পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে অনেক সুন্দর আর বড়ো বাড়িটা,,, তখনি একজন ছেলে হুট করে ওর সামনে এসে বললো,,,
—হেই এটিটিউট গার্ল তুমি এখানে?(নির্ঝয়)
অভনী হঠাৎ সামনে কেউ চলে আসায় ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে,,,ভয় মাখা মুখে অভনী কে খুব কিউট লাগছে,,,
—হায় ম্যা মার জাওয়া (নির্ঝয় মনে মনে)
অভনী চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রাস্তায় যেই ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল সেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।এমন ভাবে হাসতে দেখে অভনীর রাগ উঠে গেলো,,ও কি এলিয়েন নাকি যে এভাবে হাসতে হবে?রেগে অভনী বললো,,,
—আপনিও এখানে?হাও?
নির্ঝয় কিছু বলতে যাবে তখনি সেখানে নীল চলে আসলো,,
—হেই হোয়াটসাপ? তুই এভাবে একা একা দাঁড়িয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলছিস কেন?(নীল)
—বলতে দিলি কই তুই তো চলে আসলি (হেসে নির্ঝয়)
—অভনী সি ইজ মাই ফ্রেন্ড যাকে বলে জানে জিগার দোস্ত (নীল নির্ঝয় কে জরিয়ে ধরে)
নির্ঝয় হাত বাড়িয়ে দিয়ে অভনী কে বললো,,,
—কেমন আছো? ( নির্ঝয়)
অভনী হাত না বাড়িয়ে সালাম দিয়ে পাশ কেটে চলে গেলো,,,
নির্ঝয় নিজের হাত টা বুকের বা পাশে নিয়ে বললো,,,
—ইশশশ হার এটিটিউট,,,,ক্রাশ(নির্ঝয়)
নির্ঝয় কে এভাবে অভনীর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুব রাগ হচ্ছে নীলের তবুও নিজের রাগ টাকে দমিয়ে রেখে বললো,,,
—বেশি ক্রাশ খাস না পরে বাশ খেতে হবে চল রুমে চল (নীল)
—দোস্ত ও এখানে কিভাবে? জানিস সেদিন আমি ওকে,,,
নির্ঝয় কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই নীল বলল,,,
—জানি রাস্তায় দেখছিলি আর ধাক্কা ও খেয়েছিলি (নীল)
—কিন্তু তুই জানিস কিভাবে??(নির্ঝয়)
নির্ঝরের কথায় নীল এবার থতমত খেয়ে গেলো রাগের মাথায় কি বলে ফেললো সে,,,,
—ওই আন্দাজে বললাম আরকি তুই তো জানিস ই আমার আন্দাজ কতো ঠিক হয়ে যায়,,,ও হচ্ছে মামুনির পি এ। চল চল এখন রুমে চল কত দিন পর দেখা তোর সাথে,,,,আমার বার্দডে আর তুই এখনো উইশ করছিস না কেন?(কথা ঘুরিয়ে,,,নীল)
—তার জন্যই তো চলে আসলাম। হ্যাপি বার্দডে জান্টুস (নির্ঝয়)
?
নিলিমা আহম্মেদ চৌধুরীর রুমে বসে নোক কামড়াচ্ছে অভনী,,, তার সামনে ছরানো ছিটানো দামি দামি অনেক ড্রেস,,,অভনী প্রশ্নবোধক চাহনি তে চেয়ে আছে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিহাল আহম্মেদ আর নিলিমা আহাম্মেদ চৌধুরীর দিকে,,,অভনী কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিহাল আহাম্মেদ বললো,,,
—তাকিয়ে না থেকে এগুলো পরে নাও তো মামুনি।
—কিন্তু কেন আমি তো শাড়ি পড়েই এসেছি আংকেল (অভনী)
—জানি এতো কিছু এখন তোর কাছে অভাক লাগছে মা কিন্তু কেউ স্বার্থ ছারা কিছু করে নারে মা (নিহাল)
স্বার্থর কথা শুনে মুকটা চুপসে গেলো অভনীর,,,, তাহলে কি এই মানুষ গুলো ও স্বার্থের জন্য ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করলো?মানুষ চিনতে ভুল করে ফেললো সে?কিন্তু ও তো মানুষ চিনতে ভুল করেনা তাহলে?,,,,
—স্বার্থ? (অভনী)
—হুম নিজের মেয়ের মতো একটা মেয়েকে ফিরে পাওয়ার লোভ। (চোখ মুছে নিলিমা)
—মানে? (অভনী)
—জানিস আমাদের ও ফুটফুটে একটা মেয়ে ছিল।বড় ভাইদের কলিজার টুকরা আর মা বাবার হীরার মানিক ছিল সে।সারাদিন হৈহুল্লোর করে সারা ঘর মাতিয়ে রাখতো সে।ঘুটি ঘুটি পায়ে পুরো ঘর হেঁটে বেড়াতো সে,,, নাম ছিল নিশু।যখন ওর ৪ বছর বয়স তখন ওর দাদুর বাসায় গ্রামের বাড়ি যাই আমরা। ওইখানেও দুষ্টমি করে সারা বাড়ি মাথায় তুলে রাখতো নিশু,,,সবার খুব আদরের ছিল,, এমনিতেই গ্রামে তার উপর আবার যখন তখন এয় ওয় নিয়ে ঘুরে বেড়াতো সবাই।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
সেদিন বাড়ির সামনের পুকুরের পাশে সবাই একসাথে খেলতে গিয়ে নীলের দেয়া ওর সবচেয়ে প্রিয় গাড়িটা পুকুরে পরে যায়।নিশু আমার কাছে এসে কেঁদে কেঁদে বলেছিলো “” মামুনি মানুনি সোনা ভাইয়াল সুন্দল গালি (গাড়ি) টা ওই পুকলে পলে গেতে। আমি তেমন একটা গুরুত্ব দেইনি শুধু বলে ছিলাম কান্না করে না মামুনি সোনা ভাইয়া আরেকটা গাড়ি কিনে দিবে।তুমি ভাইয়াকে গিয়ে বলো।
নিশু চলে গিয়েছিল আমি ভেবেছিলাম হয়তো নীল বা নীরব (নীলের বড় ভাই) এর কাছে গেছে,,,,কিন্তু ছোট্ট নিশু সেদিন তার ভাইয়ার দেয়া গাড়ির জন্য পুকুরে চলে গিয়েছিল,,,দুপুর টাইম হওয়ায় কেউ ই ছিল না ওইদিকে।
তার একটু পরেই আমি নীলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম নিশু কোথায় কিন্তু ও বললো ওর কাছে যায়নি,,, নিরবের কাছে গেলাম ওয় ও বললো ওর কাছে যায়নি। তখন আমার খুব চিন্তা হতে লাগলো কথায় আছে না মায়ের মন সন্তানের বিপদ হলে আগে থেকেও বুঝে যায়,,,,কারো কাছে পাইনি আমি সেদিন নিশু কে।সবাই মিলে খুজতে খুজতে যখন পুকুর পাড়ে গেলাম ছোট্ট নিশু কে পুকুরের মাঝ খানে বেশে উঠতে দেখলাম (কেঁদে কেঁদে)
আমি নিশু কে এই অবস্থায় দেখে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।
যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম সারা বাড়ি মানুষ,,আমি দৌড়ে পাগলের মতো নিশু কো খুঁজতে লাগলাম কিকিন্তু আমার কলিজার টুকরা টাকে সেদিন আমি সাদা কাফন জরিয়ে এতো পাকা মেয়েটাকে চুপটি করে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছিলাম।
সেদিন নীরব আর নীল পাগলের মতো কান্না করে আমায় জরিয়ে ধরে বলেছিল,,,মামুনি গো আমরা আমাদের পরী কে দেখে রাখতে পারলাম না,,,,আমাদের ভালোবাসায় কমতি ছিলো মামুনি?তাই কি আমাদের সাথে রাগ করে চলে গেলো?মা নিশু পাখি কে বলো না একটু কথা বলতে আমি ওকে এমন হাজার হাজার গাড়ি কিনে দিব প্লিজ বলো না।
সেদিন ছেলে ২ টার কান্না দেখে নিজের কষ্ট টাকে দমিয়ে রেখে ওদের কে আমিই সান্ত্বনা দিয়ছিলাম কিন্তু দিন শেষে প্রতি রাতে নিহাল কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতাম।(নিলিমা)
খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কথা গুলো অভনী,,,, চোখ দিয়ে তার টপটপ পানি পরছে,,,কাঁদছে ওরা সবাই,, নিহাল নিলিমার সাথে আজ কাঁদছে অভনী ও,,,,একটু থেমে নিলিমা আহম্মেদ চৌধুরী আবারো বলতে লাগলেন,,,,,
—নিশু কে গ্রামে মাটি দিতে দেয়নি ওরা,,, তাহলে নাকি নিশু অনেক দূরে চলে যাবে।তাই বাসার পিছনেই মাটি দেয়া হয়েছিল।সেদিন থেকে আর কখনো গ্রামের বাড়ি যায়নি তারা,,,ওদের ভাবনা গ্রামে যাওয়ার জন্যই ওদের আদরের বোন আজ এতো দূরে।
এই যে এই জামা গুলো দেখছো প্রতিবছর নিশুর জন্মদিনে নীল নিরব আর ওদের বাবা কিনে আনে,,,,,ওদের নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় এতো এতো গিফট পেয়ে যদি নিশুর রাগ কমে যায়।
সেদিন যখন তুমি নিহাল কে হসপিটাল পৌঁছে দিয়েছিলে সেদিন ও পরে অনেক খুজে ছিল তোমায়।বাসায় এসে আমায় বলে ছিল,,নিলিমা আজ আমি আরেকটা মেয়েকে হাঁড়িয়ে ফেললাম,,মেয়েটা এমদম নিশুর মতো দেখতে মিষ্টি একটা মেয়ে।ওর মধ্যে যেন আমি আমার নিশু কেই ফিরে পেয়েছিলাম,,,সেদিন অনেকক্ষন নিশুর কবরের পাশে বসে কেঁদেছিল মানুষ টা তোমাকে দেখে মেয়ে হারানোর শোক তা যেন আবারো নাড়া দিচ্ছিল তাকে।
আবার যেদিন তোমায় দেখতে পায় সেদিন কি যে খুশি হয়েছিল তোমাকো বলো বোঝাতে পারবো না,,,আমিও খুব খুশি হয়ে ছিলাম।
মামুনি খুব কি ক্ষতি হবে মেয়ে ছারা এই বাবা মার মেয়ে হলে? (কান্না করতে করতে)
অভনী কি বলবে বুঝতে পারছে না,,,, চিৎকার করে কান্না পাচ্ছে তার,,, এখন তার মনে হচ্ছে “” ইসসসস আমি যদি পারতাম নিশু কে ওদের মাঝে ফিরিয়ে দিতে”ওর ও তো বাবা নেই তাহলে ক্ষতি কি এমন একটা বাবা পেলে?
অভনী কান্না করতে করতে জরিয়ে ধরলো ওদের আর বলতে লাগলো,,,
—-হুম এখন থেকে আমিই তোমাদের মেয়ে তবে আমাকে আবার অফিসে কাজ করতে না করো না (অভনী হালকা হেসে)
তখনি বাইরে থেকে ডাক এলো,,,
—মামুনি হলো তোমাদের? কয়টা বাজে দেখেছো তাড়াতাড়ি করো (রুমের বাহিরে থেকো নীল)
চলবে,,,,,
(নিশুর কথা বলতে গিয়ে আমারি খুব কান্না পাচ্ছিলো,,,, হয়তো প্রতিনিয়ত বাস্তবে এমন হচ্ছে তাই,,,,মনে রাখবেন একটা দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না,,,,গিফটের বিষয় টা কাল ক্লিয়ার করবো)