#সুখের_কষ্ট
#Part_3
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
স্বাধীন আবার সন্ধ্যার পেটে আর কোমড়ে তার আধভাঙ্গা নখ ছুরির মতো বিধিয়ে দেই। সন্ধ্যা ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেলে কিন্তু সন্ধ্যা স্বাধীনকে আকরে ধরেই আছে ছাড়ছে না।
স্বাধীন সন্ধাকে আবার কাধে কামড়ে ধরে, সন্ধ্যা ব্যাথায় স্বাধীনকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
–‘ স্বাধীন আপনি শান্ত হন প্লিজ, কিছু হয়নি আপনি শান্ত হন।
স্বাধীন সন্ধাকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে হিংস্রতার সাথে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর সন্ধ্যা পিছিয়ে যাচ্ছে।
–‘ স্বাধীন দেখুন আমি আপনার স্ত্রী, আমার সাথে এমন করবেন না প্লিজ আমার কথা শুনুন। কালকে আমরা কানামাছি খেলবো। স্বাধীন প্লিজ আমার কথা শুনুন ( পিছাতে পিছাতে)
স্বাধীন সন্ধ্যার কোন কথায় শুনছে না। আক্রমনাত্মক ভাবে সন্ধ্যাকে দু-হাত দিয়ে ধরতে গেলেই সন্ধ্যা হাতের নিচে দিয়ে অপর পাশে চলে আসে। সন্ধ্যা এখন বুঝতে পারছে স্বাধীন সন্ধ্যার কোন কথা শুনবে না আর সন্ধ্যা এখন কিছু করতে ও পারবে না তাই স্বাধীনের হাত থেকে বাচঁতে সন্ধ্যা দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দেই। স্বাধীন ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাছে কিন্তু সন্ধ্যা দরজা খুলছে না। কারন সন্ধ্যা জানে দরজা খুললেই কি হবে। স্বাধীন কেমন জানি একটা আওয়াজ করতে শুরু করে দেই। হঠাৎ সন্ধ্যা ভাংচুরের আওয়াজ শুনতে পাই। কিন্ত সন্ধ্যা ভয়ে আর দরজা খুলে না, দরজার পাশেই বসে পরে। মুখ চেপে কান্না করছে সন্ধ্যা, কি হচ্ছে এই সব ওর সাথে!! সব কিছু কেমন জানি ধোয়াশা লাগছে। এই বাড়িটাকে ও তার কাছে কেমন ভুতুড়ে বাড়ি লাগছে। অদ্ভুত সব কিছু ঘটছে ওর সাথে। মানুষ গুলো ও কেমন জানি অদ্ভুত।
কিন্তু স্বাধীন, স্বাধীনের সাথে কি হলো তখন??! রুমের ভিতরে কি এমন হলো যার ফলে স্বাধীন আবার গত রাতের মতো হয়ে গেলো। স্বাধীন যদি আগে সুস্থ ছিলো তাহলে এমন কেন হয়ে গেলো। সব কিছু আমাকে জানতে হবে। কিন্তু কি ভাবে জানবো?
শাপলা হ্যা শাপলা আমাকে সব কিছু বলতে পারবে। ও আমাকে তাহলে এই সব কিছুই বলতে চেয়েছিলো? আর আশা ওকে আটকে দিয়েছিলো। আমার শাপলার সাথে কথা বলতে হবে। সন্ধ্যা এই সব চিন্তা করতে করতে ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পরে।
?????
খুব ভোরে সন্ধার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই সন্ধ্যার স্বাধীনের কথা মনে পরে। উনি ঠিক আছে তো? আর কিছু না ভেবে সন্ধ্যা লাফ দিয়ে দরজা খুলে দেখে স্বাধীন খাটের উপর নেই। পুরো ঘরে ভাঙা কাচের জিনিস ছড়িয়ে আছে।
চোখ ঘুরাতেই দেখে স্বাধীন ওয়াশরুমের দরজার এই খানেই দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। স্বাধীনের ডান হাত কেটে রক্ত পরে রক্ত শুকিয়ে গেছে।
স্বাধীনকে দেখে সন্ধ্যার মনে প্রবল বেগে ঝড় বইছে। কি নিষ্পাপ চেহারা কতো মায়ায় ভরা আর উনি কিনা আজকে পাগল!! চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো সন্ধ্যার।
সন্ধ্যা ইতস্তত করে স্বাধীন এর শরীরে হাত দিতে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীন উঠে আবার পাগলামি করবে না তো!?
সন্ধ্যা আর কিছু না ভেবে স্বাধীনের চোখে মুখে পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে ডাক দিতে শুরু করলো
–‘ স্বাধীন শুনছেন? সকাল হয়ে গেছে উঠে পড়ুন। স্বাধীন!
সন্ধ্যার ডাকে স্বাধীন চোখ খুলে তাকিয়েই সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে। বুকে মাথা রেখে বলে উঠে
–‘ আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমাকে রেখে?? আমার অনেক ভয় করছিলো!! আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? আমাকে রেখে আর কোথাও যাবেন না বলুন।
সন্ধ্যার চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে।
–‘ কোথাও যাবো না আমি আপনাকে রেখে কথা দিলাম। এখন উঠুন আপনার হাত কেটে গেছে ব্যান্ডেজ করে দেই।
সন্ধ্যা স্বাধীন এর হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে স্বাধীনকে ওয়াশরুমের পাঠায় ফ্রেশ হতে। কিন্তু স্বাধীনের আহহ শব্দ শুনে সন্ধ্যা দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়।
–‘ কি হয়েছে আপনার?
–‘ হাতে ব্যাথা পেয়েছি। ( মুখে ব্রাশ নিয়ে)
–‘ আপনি আমার ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজছেন কেনো আপনার ব্রাশ তো ওটা।
–‘ আপনি তো আমার বউ তার মানে আপনার সব কিছুই আমার।
–‘ বাবা অনেক কিছু জানেন দেখছি।
সন্ধ্যা স্বাধীনকে ব্রাশ করিয়ে হাত মুখ ধুইয়ে খাটের উপর বসায়।
–‘ এখানে এখন ভালো বাচ্চার মতো বসে থাকবেন আমি ঘর পরিস্কার করবো। নিচে নামলে আবার পা কেটে ফেলবেন।
সন্ধ্যা কাচ গুলো একটা বেলচা তে তুলছে।আর স্বাধীন অপলক দৃষ্টিতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধার চোখ স্বাধীনের দিকে যেতেই স্বাধীন চোখ নামিয়ে ফেলে।
–‘ কি দেখছেন?
–‘ আপনাকে! আপনি একবারে আমার ওই পুতুলটার মতো
সন্ধ্যা মুচকি হাসলো স্বাধীনের কথায়। কাচ গুলো নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই ফ্লোরে পড়ে থাকা একটা কাচের টুকরো সন্ধার পায়ে ডুকে পড়তেই সন্ধ্যা উফফ করে উঠে। স্বাধীন লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে সন্ধ্যাকে খাটে বসিয়ে সন্ধ্যার পা স্বাধীনের হাটুর উপর রাখে।
–‘ কিছু হয়নি আপনি খাটে বসুন ।
–‘ আপনার পা থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে। কাচ বিধে আছে।
স্বাধীন আর কিছু না বলে সন্ধার পায়ের কাচ বের করে আনার জন্য ঠোঁট দিয়ে কাচ চেপে ধরে
সন্ধ্যা চোখ বন্ধ করে ফেলে স্বাধীনের ঠোঁটের স্পর্শে।
সন্ধ্যার ফোন বাজতেই সন্ধ্যা চোখ খুলে খাটের উপর থেকে ফোন নিয়ে দেখে সিহা কল দিয়েছে।
–‘ হুম সিহা বল।
–‘ বিয়ের দুদিন না যেতেই বোনকে ভুলে গেলি।
–‘ তুই ও তো আমাকে ঠিকই ভুলে গেছিস একটা কল ও দিস নি।
–‘ আমি ভুলিনি বলেই আজকে আসবো।
–‘ সত্যি?!!
–‘ হুম একটু পরেই আসবো।
–‘ আচ্ছা আয়। মামি আসবে?
–‘ না রে আম্মুর কাজ আছে আসবে না।
সন্ধ্যা কিছুক্ষণ চুপ থেকে
–‘ আচ্ছা তুই সাবধানে আসিস। রাখি।
.
.
.
সকালের নাস্তা করে সবাই সবার কাজে চলে যায়। শাপলা বাহিরে যাওয়ায় সন্ধ্যা অপেক্ষা করছে শাপলা কখন আসবে। আর সব জানতে পারবে কি হয়েছিলো স্বাধীনের সাথে। সন্ধ্যাকে এমন পায়তারা করতে দেখে সন্ধ্যার শাশুড়ী নাফিজা বেগম সন্ধ্যার কাছে আসে।
–‘ কিছু হয়েছে মা? স্বাধীন আবার কিছু করেছে?
সন্ধ্যা কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু সন্ধ্যার জানতে হবে এমন ইতস্তত করলে চলবে না
–‘ আসলে মা আমি উনার সম্পর্কে জানতে চাই, কি হয়েছিলো উনার যার জন্য উনি মানসিক রোগী হয়ে পড়ে।
নাফিজা বেগমের চোখে পানি চলে আসে সন্ধ্যার কথা শুনে।
–‘ ভেবেছিলাম তোমায় বলবো না। কিন্তু তুমি ওর স্ত্রী তোমার জানার অধিকার আছে। তাহলে শোনো কি হয়েছিলো।
স্বাধীন কানাডায় থেকে পড়াশোনা করতো। অনেক ভালো এবং ব্রিলিয়ান্ট একটা স্টুডেন্ট ছিলো। বাহিরে থাকার সময় ও খুব ভালো ছিলো। কিন্তু একবার ছুটিতে দেশে বেড়াতে এসে একটা মেয়েকে ওর অনেক ভালো লেগে যায়। ওর নাম ছিলো রিয়া। বলতে পারো ওই মেয়ের জন্য স্বাধীন পাগল ছিলো। মেয়েটা ও স্বাধীনকে পছন্দ করতো। দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু দূর্ঘটনাবসত ওই মেয়েকে অয়ন ও পছন্দ করতো। একদিন স্বাধীন যখন রিয়াকে বাসায় নিয়ে আসে তখন আমি বুঝতে পারি অয়নও ও কে পছন্দ করে। কিন্তু অয়ন স্বাধীনের জন্য আর কিছু বলেনি ও রিয়াকে ভুলে যায়। কিছুদিন পরেই ওদের বিয়ে ঠিক হয়।
কিন্তু সেইদিনটা যে ভুলবার নয় স্বাধীন আর রিয়া শপিং করতে বের হয়েছিলো কিন্তু কার এক্সসিডেন্টে সব তছনছ হয়ে যায়। রিয়া মারা যায় সেই এক্সসিডেন্টে আর স্বাধীন ও মাথায় অনেক আঘাত পাওয়ায় ওর এমন হয়ে যায়। এমন অবস্থায় স্বাধীনকে কেউ বিয়ে করতে চাই নি মা। তাই তোমাকে নিয়ে আসা।
নাফিজা বেগম কথা গুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। সন্ধ্যার চোখ দিয়ে ও পানি পড়ছে।
–‘ কিন্তু অয়ন যে প্রতিদিন উনাকে রুমে নিয়ে গিয়ে……
–‘ স্বাধীনকে প্রতিদিন একটা ইঞ্জেকশন দিতে হয় আর কিছু ঔষুধ খাওয়াতে হয় যা ও খেতে চাই না।আর ইঞ্জেকশন না দিলে ও কোমায় চলে যাবে। কিন্তু ও এই ইঞ্জেকশন দিলে কেমন জানি করে।
সন্ধ্যা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে
–‘ উনি কি আর সুস্থ হবে না?
–‘ ডাক্তার তো বলেছে হবে। কিন্তু সময় লাগবে। তুমি ওকে সুস্থ করে তুলো মা তুমি ই পারবে আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে। বলো তুমি আমার ছেলের পাশে থাকবে ( সন্ধ্যার হাত ধরে)
–‘ সমস্ত পৃথিবী যদি বিন্যস্ত হয়ে ও যায় আমি উনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।আমি উনার পাশে থাকবো মা কথা দিলাম। ( নাফিজা বেগমের দুই হাত ধরে)
–‘ এখন আমি মরে ও শান্তি পাবো আমার ছেলেকে আমি বিশ্বস্ত কারো হাতে তুলে দিতে পেরেছি।
?????
সন্ধ্যা রুমে গিয়ে দেখে স্বাধীন সন্ধ্যার ফোনে গেমস খেলছে। কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো সন্ধ্যা। তারপর স্বাধীনের কাছে এসে….
–‘ আপনি চকলেট পছন্দ করেন??
–‘ হুম অনেক অনেক।
–‘ আপনার একটা বোন আসবে অনেক গুলো চকলেট নিয়ে যদি আপনি আমার কথা শুনেন তো। আর সব গুলো চকলেট আপনাকে একা খেতে দিবো।
–‘ আমি আপনার সব কথা শুনবো। প্লিজ আমাকে চকলেট দিন।
–‘ গুড ভয়। তাহলে আমার সাথে চলুন।
সন্ধ্যা স্বাধীনকে তাদের রুমের বেল্কুনিতে নিয়ে বসায়, সামনে একটা আয়না রেখে।
তারপর শরীরে একটা কাপড় জড়িয়ে দেয়।
–‘ চুপ করে বসে থাকবেন আমি আপনার নখ আর মাথার চুল কাটবো।
–‘ আচ্ছা আমি একটু ও নড়বো না।
–‘ গুড বয়। এখন চকলেট আরো বেশি দিবো।
সন্ধ্যা স্বাধীনের হাত পায়ের নখ কেটে, চুল কেটে স্বাধীনকে ক্লিন শেভ করে দেই। সন্ধ্যা যেন স্বাধীনকে চিনতে পারছে না।এই কোন স্বাধীনকে দেখছে সন্ধ্যা। একটা পুরুষ মানুষ এতো সুন্দর হতে পারে!! ছবিতে ও তাকে এতো সুন্দর লাগে নি। ঘোর লাগা চাহনিতে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যা।
হঠাৎ সন্ধ্যার বাহিরে চোখ যেতেই দেখে চাদর জড়ানো একজন ওদের দিকে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছে। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিলো, সন্ধ্যা এতোক্ষন ব্যাস্ত থাকায় তা খেয়াল করেনি। সন্ধ্যা লোকটাকে দেখে ফেলতেই উনি দৌড়ে পালিয়ে যায় সন্ধ্যা শাপলাকে ডাকছে কিন্তু ওর কোন সারাশব্দ নেই। তাহলে কি শাপলা এখনো বাসায় আসেনি???…….
.
.
.
চলবে…….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন