#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৮.
-“কি মিস্টার ইমরান আপনি বুঝি এখানে আমাকে আশা করেননি তাইনা? সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
-” আরে উনি তোমাকে ভূত ভাবছেন হয়তো। আমন ও বাঁকা হেসে বলে ওঠে।
-“হুম তাইতো উনিতো নিজের হাতে তোকে মারার ব্যবস্থা করে এসেছিলো তাইনা হটাৎ করে তোকে বেঁচে থাকতে দেখলেইতো ভূত দেখার মত মনে হবে তাইনা। অ্যাস ও বলে ওঠে।
-“ওহ হ্যাঁ তো আমিও না ভুলে গেছি। তবে চিন্তা করবেন না মিস্টার ইমরান মেহতা আমি কোনো ভূত নই মানুষ দাঁড়িয়ে আছি। সোহা এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে।
-” আরে বসুন বসুন মিস্টার ইমরান আপনি এক্ষুনি দাঁড়িয়ে পড়লে হবে কি করে এখনও তো অনেক কিছুই বাকি আছে ততক্ষণে হয়তো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য পা ভেঙে পড়ে যেতে পারেন। আমন হাত গুটিয়ে বলে ওঠে।
ইমরান মেহতা ওদের কথা শুনে চুপচাপ বসে পড়ে। সোনিয়া মল্লিক এখনও একইভাবে তাকিয়ে আছে। এদিকে সোহা আমন অ্যাসের কথা শুনে বাকিরা চমকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে এখানে কি কথা বলছে সেটাই বুঝতে পারছেনা।
-“অ্যাস এইসব কি কথা বলছো এখানে? এখানে আজকে একটা জরুরী কথা হচ্ছে আর সেখানেই কি সব কথা বলে যাচ্ছিস? সম্রাট চৌধুরী বলে ওঠে।
-” এখানে কি কথা হচ্ছে সেটা একটু পরেই দেখতে পাবেন মিস্টার চৌধুরী। আর স্যরি আমি এখন আমার ডিউটিতেই আছি তাই এখন আমি না কারোর মেয়ে আর না কারোর পরিচিত তাই চুপ করে বসে থাকলে আপনার জন্য ভালোই। অ্যাস কাট কাট কথা বলে ওঠে।
অ্যাসের কথা শুনেই সম্রাট চৌধুরীর মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রথম তিনি তার মেয়ের এমন রূপ দেখছেন একদম গম্ভীর সিরিয়াস তেজী কিন্তু তার মেয়ের কথা গুলো শুনেই আরো বেশি অবাক হয়ে গেছে কী বলতে চাইছে অ্যাস সেটা তিনি এখনও বুঝতে পারেনি ডিউটি মানে তাও এই বাড়িতে কিসের ডিউটি। তাই তিনি অবাক চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“ডিউটি মানে কিসের ডিউটির কথা বলছো তুমি আয়েশা বেটা। সাজিদ মল্লিক অবাক হয়ে বলে ওঠেন।
-” ডিউটি! কিসের ডিউটি মানে সেটাতো মিস্টার ইমরান ভালো বলতে পারবেন তাইনা মিস্টার ইম আমরা কারা? আচ্ছা মনে নেই ঠিক আছে আমরাই না হয় বলে দেই আমরা কিসের ডিউটিতে আছি। নীহার বলে ওঠে।
-” ব্ল্যাক ক্যাট নাম শুনেছেন তো? এন.এস.জি আন্ডার কভার অফিসার। অ্যাস বলে ওঠে।
অ্যাসের কথা শুনেই সোনিয়া মল্লিকের অবস্থা জলে কুমির ডাঙায় বাঘ এমন। সাজিদ মল্লিক ও চমকে গেছেন। ইমরান মেহতা শুধু শুধু বসে ঢোক গিলে যাচ্ছে আর ঘাম মুছে যাচ্ছেন।
-“ত ত তুমি কে? এরই মধ্যে সোনিয়া তুতলিয়ে উঠে।
-” কেনো কারোর মুখের সাথে মিল পাচ্ছেন বুঝি? সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
-“এটা কি করে হতে পারে? সেই মুখ? সেই একই সব কিছু? কি করে সম্ভব? সোনিয়া মল্লিক বলে ওঠে কেঁপে কেঁপে।
-” কেনো সম্ভব নয় মিসেস সোনিয়া? আর কার সাথে আমার মুখের এত মিল পাচ্ছেন শুনি আমিও একটু। সোহা আবারো তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-“সম্ভব নয় কারণ সেতো বহু বছর আগে মারা গেছে কোনো ভাবেই বেঁচে থাকতে পারেনা। সোনিয়া মল্লিক উত্তেজনার বশে বলে ওঠে।
-“রাইট প্রায় চব্বিশ বছর আগে মারা গেছে তাইনা তাহলে সত্যি তো এই মুখ কিভাবে আবার সামনে এলো? সোহা মুখে আওয়াজ তুলে বলে ওঠে।
সোহার মুখে থেকে এমন কিছু শুনেই সোনিয়া মল্লিক প্রায় আতকে উঠেছে। এবার যেনো মনে হচ্ছে তার দম টা প্রায় বেরিয়ে আসবে। আর সাজিদ মল্লিকের ও অস্বস্তি শুরু হয়ে গেছে সোহার কথা শুনে। আরহান সব কিছু শুনছিলো এতক্ষণ কিন্তু সোহার মুখে বছরের হিসাব শুনতেই সেও চমকে যায়।
-“সোহা চব্বিশ বছর মানে তুই কি বলতে চাইছিস? আরহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” ভাইয়া আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো সব কিছু জানতে পারবে। সোহা বলে ওঠে।
এবার যেনো বাড়ির সবাই চমকে ওঠে সোহা আর আরহানের কথা শুনে। ভাইয়া তারমানে কি সোহা আর আরহান আগের থেকে পরিচিত। আমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে হচ্ছে টা কি
-” তা মিসেস সোনিয়া মল্লিক আমাকে কি ঠিক এই মহিলার মতোন লাগছে দেখুন তো একটু? সোহা তার ফোনে একটা ছবি বের করে ওদের সকলের সামনে তুলে ধরে।
-” আরিনা! প্রায় আতকে উঠে সোনিয়া মল্লিক ও সাজিদ একসাথে বলে ওঠে।
-“যাক চিনতে পেরেছেন তাহলে এখনও মনে রেখেছেন এই মুখ। স্মৃতি শক্তির তারিফ করতে হয়। সোহা বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।
-“কে তুমি? কি তোমার পরিচয় আর এইসব কিছু তুমি কি করে জানলে? আর আরিনার সাথে তুমি কি করছো? তার মানে কি আরিনা এখনও বেঁচে আছে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব আরিনা কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে ? সাজিদ এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে।
-” সত্যি এটা তো সবথেকে বড় প্রশ্ন যেখানে আপনি নিজেই আরিনা মল্লিক অর্থাৎ আপনার প্রথম স্ত্রী কে মেরে ফেলেছেন সেখানে বেঁচে কি করে থাকতে পারে তাইনা মিস্টার সাজিদ মল্লিক? সোহা কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।
-” এইসব কি বলছিস সোহা মামকে বাপি মেরেছে মানে? মাম তো অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। আরহান বলে ওঠে।
-” ওহ রিয়েলি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে মিস্টার মল্লিক। আপনি যে প্ল্যান করে তাকে মেরে ফেলেছেন সেটা বুঝি বলেননি আপনার ছেলে কে। সোহা বিশ্রী হেসে বলে ওঠে।
সোহার কথা শুনে ওখানে থাকা উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি বলছে এইসব কথা। আরিনা মল্লিক এই নাম তারা প্রথম শুনছে কিন্তু সোহার সাথে এই মহিলার কি সম্পর্ক সবাই ভেবে চলেছে। এমনকি অ্যাস নীহার আকাশ সানি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কারন তারাও জানে না এইসব কথার মানে।
-“এই কে তুমি আর এখানে এসে এই সব কি কথা বলে যাচ্ছো শুনি এখনই এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। মণিকা তেড়ে এসে বলে ওঠে।
-” ওহ জাস্ট শাট আপ ডার্টি ওম্যান । সোহা হুঙ্কার করে বলে ওঠে।
-“এই তোমার সাহস তো কম নয় আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকেই নোংরা মেয়ে বলে গালি দাও এখুনি এই বাড়ির থেকে বেরিয়ে যাবে তুমি। মণিকা রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে।
-“ওহ রিয়েলি এটা তোমার বাড়ি নাকি? আচ্ছা তুমি একবার তোমার বাপি কে অন্তত জিজ্ঞেস করে নাও এটা আসলেই ওনার বাড়ি কিনা তারপর তো নিজের বাড়ি বলবে ? সোহা বলে ওঠে।
-” ওহ আর একটা কথা আমি আমার বাড়িতেই দাঁড়িয়ে আছি তাই কাউকে বেরিয়ে যেতে হলে সেটা তোমরা যাবে আমি নই। সোহা বলে ওঠে।
-” মানে কি বলতে চাইছো তুমি? এটা অবশ্যই আমার বাপির বাড়ি আর সেই সূত্রে এই বাড়ি ও আমার। আর তোমার বাড়ি এটা স্বপ্ন দেখছ নাকি? মণিকা তর্ক করে বলে ওঠে।
_” অবশ্যই না। এটা তোমার বাবার বাড়ি ও নয়। এটা মিস আরিনা জৈনের বাড়ি । নাকি তোমার বাবার বাড়ি। তাই তোমার বাড়ি হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সোহা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
-“আর এই বাড়িতে থাকার একমাত্র অধিকার এই বাড়ির দুই ছেলে আরহান মল্লিক আক্রম মল্লিক ও আমি সোহা জৈনের আছে। কারণ বাড়িটা আমাদের তোমাদের নয়।
-“মানে এই বাড়ি মামের? আরহান জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” ইয়েস ভাইয়া এই বাড়ি মামের। সোহা আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” তোমার অধিকার মানে? তুমি এইসব কথা কি করে জানলে? কে তুমি? সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে।
-” ডটার অফ আরিনা মল্লিক ওপশ আরিনা জৈন । সোহা বলে ওঠে।
সোহার কথা শুনে রুমের মধ্যে একটা বড়ো সড়ো বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। সাজিদ মল্লিক ধপাস করে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বসে পড়ে। আর রুমে থাকা বাকিরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে । আমন এক ভাবে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে তার মাথার ভিতরে দ্রুত চলতে থাকে প্রায় একমাস আগের ঘটনা যেদিন সে সোহাকে নামাজরত অবস্থায় দেখেছে তার মনে কৌতুহল ও জেগে ছিল সে নিজের মত করে ভেবে নিয়েছিলো। এর পর সোহা নিজেও বলতে চেয়েছিলো তার পরিচয় এর ব্যাপার নিয়ে। কিন্তু সে শুনতে চাইনি তারমানে এটাই সত্যি যে সোহা হিন্দু নয় সে মুসলিম। সে মুসলিম বংশের সন্তান। তাহলে শ্রেতা জৈন উনি কে আর জৈন পরিবারের সাথে বা কি সম্পর্ক সোহার ভাবতে থাকে আমন নিজের মনে।
এদিকে আক্রম এতক্ষণ সব কিছু শুনলে ও এই মুহূর্তে সোহার বলা কথা গুলো শুনেই সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে। সোহা তার মায়ের মেয়ে মানে তার বোন। তার মা কে ঠিক করে তার মনে নেই তাই সে সোহাকে ঠিক করে চিনে উঠতে পারিনি। কিন্তু সে তার মায়ের নাম জানে তার মায়ের ছবিও দেখেছে কয়েকবার কিন্তু সেই ভাবে মনে নেই তার মায়ের সব গল্পই শুনেছে সে তার ভাইয়ের থেকে। কিন্তু তার যে একটা বোন আছে সেটা জানতো না। আক্রম আরহানের দিকে প্রশ্ন চোখে তাকালে আরহান ইশারা করে। আক্রম এক পা এক পা করে সোহার দিকে এগিয়ে যায় সোহার সামনে দাঁড়িয়ে এবার সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজের বোন কে দেখতে থাকে। তার বোন কে একদম তার মায়ের মতো দেখতে তাই এরা দেখে এমন চমকে গেছিলো। পুরো তার মায়ের জেরক্স কপি দাঁড়িয়ে আছে। আক্রম কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে নিয়ে সোহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। সাথে সোহা ও জড়িয়ে ধরে তার ভাই কে। সে ছোটো থেকেই জেনে এসেছে তার আরো দুটো ভাই আছে কিন্তু সময় এবং সুযোগ কোনোটাই হয়নি তাদের ভাইদের দেখার আজকে সে পূর্ণ তার ভাইদের সে পেয়ে গেছে। আরহান ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চোখে পানি নিয়ে দেখে যাচ্ছে তার আত্মার দুই অংশ। তার আত্মা তার মায়ের সন্তান তার ভাই ও বোন আর তার দুই সহোদর। আর রুমের মধ্যে থাকা বাকিরা তাজ্জব হয়ে সব কিছু দেখে যাচ্ছে । সব কিছুই যেনো তাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমন কিছু কিছু বুঝতে পারলেও আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী থামের মতো দাঁড়িয়ে আছে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না, তারা এর আগে শুনেছিল যে সাজিদ মল্লিকের আগের স্ত্রী মারা গেছেন আর আরহান আর আক্রম তার আগের স্ত্রীর সন্তান কিন্তু এইসব কি শুনছে তারা। অ্যাস নীহার আকাশ সানি এতদিন সোহার সাথে থাকলেও তারা এইসব কিছুই জানতো না। তাদের তো এখন রীতিমত মাথা খারাপের জোগাড় হয়েছে সোহা যদি আরিনা মল্লিকের মেয়ে হয় তাহলে শ্রেতা জৈন ধীরাজ জৈন কে? তারা তো এতদিন জানতো সোহা জৈন পরিবারের মেয়ে শ্রেতা জৈন আর ধীরাজ জৈন এর মেয়ে তাহলে আর ওদের দেখেও তো কখনো মনে হয়নি যে সোহা ওদের মেয়ে নয়। আর তাছাড়া ও সোহার সমস্ত সার্টিফিকেটেও শ্রেতা জৈন ও ধীরাজ জৈন এর নাম আছে তাহলে কি সম্পর্ক তাদের মধ্যে সেটাই বুঝতে পারছে না তারা।
চলবে….. ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।