তোর মনের অরন্যে পর্ব-২৯

0
652

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৯.
-“আপনি যদি কখনো জানতে পারেন আমি অন্য কেউ তখন কি করবেন? সোহা দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে ওঠে।

আমন সোহার কথাটা শুনেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় সোহার দিকে ।

-” আমি যে হিন্দু পরিবারে থেকেও হিন্দু নই মুসলিম সেটা বোধহয় আপনি জানেন তাইনা? সোহা সেই একইরকম ভাবে বলে ওঠে।

সোহার এই কথা শুনে আমন খানিকটা থমকে যায়। সোহা কিভাবে বুঝতে পারলো? এটাই ভাবছে আমন।

-” আগের দিন আপনি আমাকে রুমের মধ্যে নামাজ পড়তে দেখেছেন তাহলে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না যে? সোহা এবার সরাসরি আমনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

আমনের মনে থাকা সন্দেহ এবার দৃঢ় রূপ নিয়েছে সোহা যে বুঝতে পেরে গেছে সে তাকে নামাজ পড়তে দেখেছে। আমন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে।

-“তোমাকে নামাজ পড়তে দেখে আমি চমকে গেছিলাম ঠিকই। একটু বিচলিত হয়েছিলাম তোমাকে নামাজ পড়তে দেখে কিন্তু এটা নিয়ে আমার মনে তোমাকে নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। আমি ভেবেছি যে তুমি কখনো হয়তো তোমার ধর্ম চেঞ্জ করে নিয়েছ। আর তাছাড়াও তুমি কোন ধর্মের সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশি। এটা আমি আগেও বলেছি আজও বললাম। আমন দৃঢ় ভাবে বলে ওঠে সোহার চোখে চোখ রেখে।

-“আর যদি এখন এটা জানতে পারেন যে আমি জন্ম থেকেই মুসলিম বা আরো ভালো এটা বলা আমি বংশ পরম্পরা মুসলিম? সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে আমন একটু থমকে যায়। আজ প্রথম থেকেই সোহাকে অন্য রকম লাগছে কি হয়েছে। কিন্তু নিজের মনের ভাব বাইরে একদম পড়তে দিচ্ছে না নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে।

-“তুমি আমার কাছে তুমি সোহা। ব্যস এর আগে পিছে কি আছে না আছে এটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। হ্যাঁ এটা বলতে পারো যদি তোমার লাইফে অন্য কেউ থাকতো তাহলে হয়তো আমি থাকতাম না কারণ তৃতীয় ব্যাক্তি হিসাবে আমি কখনই ঝামেলা ক্রিয়েট করতে যেতাম না। আর যদি তোমার বিয়েও হয়ে যেতো একটা বা ডিভোর্সী হতে তাহলেও আমার কোনো অসুবিধা ছিল না। কারণ আমার কাছে ইম্পোর্টেন্ট। আমন দৃঢ় ভাবে বলে ওঠে।

সোহা চুপ করে আমনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এই ছেলের প্রতি কথায় সে ভীষণ ভাবে আহত হয়। প্রত্যেকটা কথা তার মন ছুয়ে যায়। তাকে এত কেনো মুগ্ধ করে সোহা বুঝতে পারেনা।

-“আপনি আমার ব্যাপারে কিছু জানতে না চাইলেও আমি বলতে চাই। আমি চাইনা কোনো সম্পর্কে যাওয়ার আগে আমার ব্যাপারে কোনও অজানা তথ্য থাক আমি….

এটুকু বলতেই আমন সোহাকে একটানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কষে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে। আমনের এমন কাজে সোহা হকচকিয়ে যায়। হটাৎ করে আমনের এমন ব্যবহার চমকে দেয় সোহা বুঝতে পারেনা এমন করার কারণ। আমন সোহার মুখটা তার দুহাতের মধ্যে তুলে ধরে সোহার কপালে ওষ্ঠ ছুইয়ে দেয় গভীর ভাবে। আমনের এমন গভীর স্পর্শে সোহা চোখ বন্ধ করে নেয়।

-“তুমি তুমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবছো তুমি তুমি আমার হতে রাজি আছো। আমি ভাবতে পারছি না শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে পেলাম। আমন উৎসাহে বলে উঠে আবারো সোহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

সোহা আমনের উৎসাহ দেখে কেমন পাগলামিতে মেতে উঠেছে শুধুমাত্র তার এই কথাটাই এত খুশি হয়ে গেছে আর সে যদি এখন বলে তাকে ভালোবাসে তাহলে তো মনে হয় এখনই সাইলেন্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে এই ছেলের। সে কি বলতে যাচ্ছিলো আর এই ছেলে তার একটা কথা শুনেই লাফাতে শুরু করেছে তাকে বলতেই দিলো না কথা গুলো। তবে আমন যে তার কথা শুনতে এমনিতেও ইচ্ছুক নয় সেটা বুঝতে পারছে। শুধু সে বলতে চাইছিল বলেই শুনতে চাইছিল। আর এখন তো মনেই হয়না এই খুশির মুহূর্ত ছেড়ে আর কোনো কথা শুনতে পাবে বলে। আর সোহাও চাইছেনা এই মুহূর্তে তার কথা গুলো শুনিয়ে একটা থমথমে পরিবেশ তৈরী করতে সে আমনের এই খুশিটাকে নষ্ট করতে চায়না। তাই সোহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের হাত টাও আমনের পিঠের উপর রাখে সাথে সাথে আমন আর শক্ত করে জড়িয়ে নেয় সোহাকে।

কতক্ষণ তাঁরা এই ভাবে একে অপরের সাথে জড়িয়ে ছিল জানে না তাদের সময়ের কোনো জ্ঞান ছিলোনা। তারা দুজন একে অপরের সাথে মিশে থেকে একে অপরকে অনুভব করতে ব্যস্ত ছিল। আজ যেনো তাদের দুজনের বাঁধ ভেঙে গেছে সাথে মনের ঘরের তালা বন্ধ হয়ে থাকা অনুভূতি গুলো ডানা মেলে দিয়েছে। চারিদিকে জ্যোৎস্না রাত চাঁদের আলোয় চারিদিকে ছাড়িয়ে আছে। মৃদু হাওয়া বইছে সাথে গার্ডেন সাইটের আলোর ছিটে চারদিকে আলোকিত করে রেখেছে। এমন মোহনীয় পরিবেশে তারা দুজন ও নিজেদের মধ্যে মোহিত হয়ে আছে। আজ যেনো আর কোনো বাধা মানতে চাইছেননা এত প্রতীক্ষার পর তারা এক হয়েছে। বিশেষ করে আমনের সেতো সোহার ভালোবাসার সাগরে দিনরাত ডুবে ছিল দিনে রাতে জেগে স্বপ্নে সব সময়ে সে সোহাকে নিজের সামনে কল্পনা করতো। আজ শেষ পর্যন্ত তার প্রতীক্ষা শেষ হয়েছে সোহাকে। সে নিজের করে পেয়েছে সে আগেই সোহার মনের কথা বুঝতে পেরেছিল আর আজকে সোহার ওই টুকু কথায় তার জন্য যথেষ্ঠ ছিল তার আর কিছু জানার নেই।

কতক্ষণ এই ভাবে সময় কেটে গেছে জানা নেই তবে তাদের সুন্দর মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটে যায় ফোনের শব্দে। সশব্দে ফোনের রিং বেজে ওঠে। এতেও তাদের যেনো ঘোর কাটে না। একবার কেটে গিয়ে আবারো বাজতে থাকে। সোহা ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে ফোনের শব্দে তার পকেটে থাকা বাজছে। এদিকে সোহা ধ্যানে ফিরলেও আমন এখনও একই ভাবে কষে জড়িয়ে রেখেছে সোহাকে। সোহা নিজেকে আমনের থেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারেনা। শেষে আমন কে ধাক্কা দিতে শুরু করে।

-“উম প্লিজ এত নড়োনা তো একটু চুপ করে আমার বুকের মাঝে থাকো আমার বুকটা কে একটু শান্তি দাও এতদিন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছ। আমন ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে।

-” আরে ছাড়ুনতো আমায় ফোন বাজছে। সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে ওঠে।

-“বাজুক ফোন বেজে বেজে কেটে যাক। চার্জ শেষ হয়ে ফোন সুইসাইড করে নিক তবুও এই ভাবে থাকো ধানী লঙ্কা। আমন বলে ওঠে ।

সোহা বুঝতে পারে এইভাবে কাজ হবে না। আমন এখন অন্য জগতে বিচরণ করছে। তাই সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে অন্য টেকনিক ইউজ করে।

-” মন। সোহা মোহনীয় কন্ঠে ডেকে ওঠে।

ব্যস এটুকুই ছিল আমন কে কাবু করার জন্য। আমন সোহার মুখে এই ডাক শুনে চমকে ওঠে। সাথে সাথে তার হাত আলগা হয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সোহার মুখের দিকে। আর এই সুযোগে সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আমনের থেকে। আর হটাৎ করে আমন সোহাকে তার থেকে এই ভাবে দূরে সরে যেতেই ভ্রু কুঁচকে নেয় । সোহা এক পলক আমনকে দেখে নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে। ততক্ষণে ফোন কেটে গেছে আকাশ কল করেছিলো এটা দেখেই সোহা সাথে সাথে রিং ব্যাক করে। আর এদিকে আমন এখনও গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে । প্রথমত আজকে সে এতগুলো ঝটকা একসাথে খেয়েছে যে ঘোর কেটে বেরোতে পারছে না প্রথমে সোহার তাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়া। আর এখন তাকে মন বলে ডাকা সবটাই তাকে মোহিত করে তুলছে। তবে সোহাকে তার থেকে দূরে যেতে দেখে তার ভালো লাগেনি। আরে বাবা সবেতো তার কাছে ধরা দিয়েছিলো আর আবারো দূরে গেলো তার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ফোন টাকে আর যে ফোন করেছে তাকেই তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে। আর সোহাযে তার সাথে ছল করেছে সেটাও ধরতে পারে। তার থেকে ছাড়া পেতেই তার নাম ধরে ডেকেছে তার দুর্বলতার কাজে লাগিয়ে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। সোহা কথা বলে ফোন রাখতেই দেখে আমন এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে সেই একইভাবে।

-“এটা কি হলো? আমন নারাজ হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” কি হলো কিছুই হলোনা শুধু একটু টেকনিক ইউজ করলাম। নিঞ্জা টেকনিক বুঝতে পারলেন। সোহা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-“এটা কিন্তু ঠিক হলোনা একদম। আমন চোখ মুখ বাচ্চাদের মত করে বলে ওঠে।

-” এটাই ঠিক হয়েছে। এখন চলুন কাজ আছে। বলেই সোহা হাঁটা দেয়।

-” আমিও দেখে নেবো তোমাকে ধানী লঙ্কা। এই আমনের হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই। আমন বলে ওঠে ।

-” সেটা আমিও জানি। তাই বেশি কথা না বলে আসুন। আর নাহলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যান। সোহা না ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে ওঠে।

আমন সোহার কথা শুনে হেসে ফেলে এই মেয়ের তেজ যাবে না। নিজের মনে বলে দৌড় দেয় নিচের দিকে।

চলবে…… ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here