#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৬.
সোহা রুমের মধ্যে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছে। সম্পূর্ণ এক আলাদা রূপে। সব সময়ের ড্রেস জিন্স প্যান্ট ছাড়াও তাকে এই প্রথম অন্য কোনো ড্রেসে দেখলো আমন। আনারকলি ড্রেস পরে আছে মাথা থেকে শরীরে একটা ওড়না দিয়ে আবৃত্ত করে রেখেছে। রুমের মধ্যে নীল রঙের ড্রিম লাইট জ্বলছে আর এই আলোয় স্পষ্ট ভাবে সোহাকে দেখা যাচ্ছে
আমন সোহার এই রূপ দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে আছে । তার পা থমকে গেছিলো সোহাকে এই ভাবে দেখে। তার চোখ স্থির হয়ে আছে রুমের মধ্যে নামাজে দাঁড়ানো সোহার উপর। তার নিজেরই চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই দৃশ্য দেখে। এটা কিকরে ঘটতে পারে। সোহা নামাজ পড়ছে এটা কিভাবে সম্ভব? এটাই যেনো আমনের মাথায় ঢুকছে না। আমন এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। গভীর দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে সোহাকে। একদম নিখুঁত ভাবে নামাজ পড়ে যাচ্ছে তার মধ্যে না আছে কোনো জড়তা আর না কোনো সংকোচ। তাকে মনে হচ্ছে খুব ভালোবেসে মন দিয়ে তার এই কাজ টা সম্পূর্ণ করছে।
আমনের মাথায় শুধু এটাই ঘুরছে সোহা আর নামাজ দুটো একসাথে কিভাবে মিললো। সোহা হিন্দু পরিবার থেকে মানে সে নিজেও তাই হওয়া উচিত। তাহলে সে নামাজ কিভাবে পড়ছে? আর সোহার নামাজ পড়া দেখে আমনের একদমই মনে হচ্ছে না সে এই পথে নতুন। সোহাকে এই ভাবে দেখে সত্যি বিভ্রান্ত হয়ে গেছে তার মাথা কাজ করা পুরো বন্ধ করে দিয়েছে। আমন সোহাকে দেখে সে তার মত নামাজ পড়ে যাচ্ছে। তার অন্য দিকে কোনো ধ্যান নেই। আমন এক পলক দেখে নিয়ে দরজা টেনে দিয়ে দ্রুত পায়ে আবার চলে যায় নিজের রুমের দিকে।
আমন রুমে ঢুকে ভাবতে বসে সে একটু আগে যা দেখেছে সেটা কি আদেও সত্যি ছিল নাকি? কিন্তু সেতো তার এই চোখ দুটো দিয়ে দেখেছে আর এতক্ষণ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে না সে ভুল হতে পারে না। কিন্তু এটা সম্ভব কিকরে সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না। হিন্দু একজন মেয়ে হয়ে এত দক্ষতার সাথে নামাজ আদায় করা শিখলো কিকরে? আর তাছাড়া একটা হিন্দু মেয়ে কিভাবে নামাজ পড়তে পারে সেটাইতো আমনের মাথায় আসছে না। সোহার এই একটা কাজ আমনকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। শত শত প্রশ্ন এসে মাথায় কিলবিল করছে। কিকরে হতে পারে এটা। আমন এবার সোহার সাথে তার প্রথম দেখা হওয়া থেকে এই পর্যন্ত পুরোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভাবতে থাকে। না সে এর আগে সোহাকে কোনো অসঙ্গত কিছু করতে দেখেনি তাহলে। পুরোটা সময়ে ভাবতে ভাবতেই এসে থেমে যায় তাদের বাড়িতে সোহার আসার প্রথম দিন মনে গতকাল এর ঘটনা গুলো। যখন মণিকা সোহাকে জিজ্ঞেস করেছিলো সেই হিন্দু কিনা। কিন্তু আমনের যতদূর মনে পড়ে সেতো অন্য কথা বলেছিল।
-“সোহাতো নিজের মুখে বলেনি সেই হিন্দু। সে শুধু বলেছিলো তার পরিবার হিন্দু।” মণিকার কথার উত্তর সে ঘুরিয়ে দিয়েছে হ্যাঁ এটাই একটা পয়েন্ট সোহাতো এটা বলতে পারতো সে হিন্দু তাহলে পরিবারের কথা কেনো বললো? তারমানে সোহার পরিবার হিন্দু হলেও সোহা হিন্দু নয়। আর তাই সে নামাজ পড়ছে তারমানে সোহা মুসলিম কিন্তু এটা কিকরে সম্ভব হতে পারে? তাহলে কি সোহা জৈন পরিবারের অংশ নয়? আর তারা সোহার আসল মা বাবা নয়? তাহলে কি এর মধ্যে বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? কিন্তু কি রহস্য থাকতে পারে এর মধ্যে? উফ মাথা কাজ করছে না আমার। আমন মাথায় হাত চেপে বসে নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে ওঠে ।
-“না এইভাবে হবে না। আমাকে এই রহস্যের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। আমাকে জানতেই হবে সোহার আসল পরিচয় কি ও যদি সত্যি হিন্দু হয় তাহলে ও নামাজ কি করে পড়ছে? আমন রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আর বিড়বিড়িয়ে বলে যাচ্ছে।
-” আচ্ছা এটাতো হতে পারে যে আসলেই সোহা জৈন পরিবারের মেয়ে সে আসলেই হিন্দু ছিল। হয়তো কোনো ভাবে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ এটা হতে পারে। সোহারতো বলতে গেলে প্রায় বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে কেটে যায় তার মিশনের জন্য সেখানেই হয়তো কোনো কারণ বসত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ এটাই হতে পারে। সে আসলেই তার ধর্ম ছেড়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেছে। এটাই একমাত্র উপায় হতে পারে। আমন নিজের মনে ভেবে চলেছে।
আমন রুমের মধ্যে ঘুরে ঘুরে একে একে কারণ খুঁজে যাচ্ছে সে কিছু একটা ভেবেই তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ টা হাতে তুলে নেয় ।
-“সোহা এই মুহূর্তে নামাজ পড়ছে আমি ওর ল্যাপটপ হ্যাক করলে কোনো না কোনো তথ্য পেতে পারি সব সময়ে তো সার্টিফিকেট নিয়ে ঘোরা সম্ভব নয়। ফটো কপি তো থাকতেই পারে। আমন ল্যাপটপ চালাতে চালাতে বলে ওঠে।
আমন দ্রুততার সাথে সাথে সোহার ল্যাপটপ হ্যাক করে ফেলে। এর আগেও তারা একসাথে কাজ করেছে আর সোহার ল্যাপটপ নিয়ে সে কাজও করেছে। তাই তার জানা আছে সোহার কম্পিউটার সিস্টেম ডিটেইলস। আমন দ্রুত সোহার ল্যাপটপ দেখতে থাকে প্রত্যেকটা ডকুমেন্ট ডিটেইলসে দেখতে থাকে। হটাৎ একটা ফোল্ডারে এসে থেমে যায়। “এস” এর লোগো দেওয়া আমন দ্রুত ওপেন করে ফেলে। হ্যাঁ এখানেই সব ডকুমেন্ট আছে সোহার। একের পর এক চেক করে বাবা মায়ের জায়গায় শ্রেতা জৈন ও ধীরাজ জৈন। বার্থ সার্টিফিকেট দেখেই আমন থমকে যায় না তার ক্যালকুলেশন ঠিক আছে দেখছে। সোহার জন্ম লন্ডন সিটি হসপিটালে হয়েছে তারমানে সোহার জন্ম লন্ডনে হয়েছিলো।
না আমন এবার সিউর হয়ে গেছে যে সোহা জৈন পরিবারের মেয়ে সে হিন্দু ছিল কিন্তু কোনো কারণে হয়তো মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ এটাই হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কি কারণ আছে সেটা আমাকে জানতে হবে। আমন আবারো সোহার ল্যাপটপের সিস্টেম ঠিক করে দেয় যাতে সোহা কোনো ভাবেই বুঝতে না পারে। এবার শুধু তার কাজ হলো সোহার এই মুসলিম হওয়ার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে সেটাই জানার।
আর আজকের আরহান আর সোহার দৃষ্টিও কিছু আলাদা ছিল ওদের হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছিলো তারা একে অপরকে চেনে। কিন্তু এটা কিভাবে হতে পারে তারা একে অপরকে কিভাবে চিনতে পারে? তাদের মধ্যে তো কোনো সম্পর্ক থাকতেই পারে না। তাহলে কি ভাবে চিনতে পারে? আমাকে সব প্রশ্নের উত্তর পেতেই হবে।
————
আরহান রুমের মধ্যে তার বিছানার উপর চারিদিকে ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে আর তার মাঝে বসে আছে সে। প্রত্যেকটা ছবি সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে যাচ্ছে। না তার মধ্যে আর কোনো সন্দেহ নেই। তার আত্মার সাথে যে সোহার কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে সেটা আজকেই সে কর্নফার্ম হয়ে গেছে সোহা কে দেখার পর। আজকে চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার পর সোহাকে গভীর ভাবে সে পর্যবেক্ষণ করেছে। সে যখন সোহাকে গভীর ভাবে দেখছিল তখন সোহাও তার দিকে তাকিয়ে হেসেছে সোহাকে দেখে তার মনে হলো সোহা তাকে চেনে। তাহলে এটা বোঝা যায় তাদের মধ্যে কোনো কানেকশন আছে। আরহান আজকে সোহাকে পর্যবেক্ষণ করে এটা সে বুঝে গেছে। না সে এবার তাকে এই রহস্য সমাধান করতেই হবে।
-“আচ্ছা বাপি তো কালকে চৌধুরী বাড়িতে গেছিলো তাহলে বাপি কি সোহাকে দেখেছে? তাই কি বাপি বাড়িতে আসার পর অমন অস্থির হয়ে ছিল। বাপিকে দেখে মনে হলো যে বাপি ভয় পেয়ে আছে। কিন্তু চৌধুরী বাড়িতে বাপির ভয় পাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। তবে? তাহলে কি সোহা কে দেখেই বাপি এমন ভয় পেয়েছিলো? হ্যাঁ এটাই হবে কারণ সোহাকে দেখতে পুরো আমার আত্মার মতো। তাই বাপি সোহাকে ভয় পেয়েছে। কিন্তু ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই সোহাকে আত্মার মতো দেখতে তাহলে তো বাপির খুশি হওয়ার কথা ছিল। তাহলে কি বাপির ভয়ের পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে। আমাকে সব কিছুর কারণ খুঁজে বের করতেই হবে। আরহান নিজের মনে বলে ওঠে।
চলবে….. ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
(বিঃদ্রঃ – যারা যারা সোহার সাথে আরহান কে ভেবে ছিলেন তাদের জন্য বহুত দুঃখ ভরা ছ্যাকা খাওয়ার সমবেদনা)