তোর মনের অরন্যে পর্ব-২৪

0
670

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৪.
সাজিদ মল্লিক চৌধুরী বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকেই অস্থির হয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে বেড়ে চলেছে প্রচণ্ড আতঙ্ক। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে। সে কি তাহলে দোটানায় ভুগছে। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয় তাহলে। যেখান থেকে সে সোহা কে দেখেছে তার সামনে ভেসে আসছে সেই এক মুখ। একদম সোহার মত আরো একটা মুখ যেই মুখের সাথে মিশে আছে সোহার মুখের আদল। সেই হাসি সেই চোখ সেই মুখ সব কিছুই একদম একই ধারার কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হতে পারে। বাইশ বছর আগেই সব কিছু শেষ হয়ে গেছে সেখানে আজ বাইশ বছর পর সেই মুখ তার সামনে এসে দাঁড়ালো কি করে। এটা কি পুরো টা কাকতালীয় না কি তার সাথে কোনো ভাবে যুক্ত হতে পারে। উফ সাজিদ মল্লিক নিজের রুমের মধ্যে পায়চারি করে যাচ্ছে নিজের মাথা চেপে ধরে। আজ এত বছর পর আবারো ওই মেয়ে কে দেখেই ওই একই একটা মুখ তার মনে পড়ে গেলো। বলতে গেলে যার শেষ এর কারণ তিনি। যাকে সে কোনোদিন ও মনে রাখেনি আর আজ এসে সেই মায়া ভরা মুখটা হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো। না এটা কিছুতেই হতে পারে না। সেই অতীত কখন ফিরে আসতে পারে না। যা চলে গেছে সেটা কখনই ফিরে আসবে না। সেই মুখ বাইশ বছর আগেই তার চোখের সামনে মারা গেছে হ্যাঁ মারা গেছে কিছুতেই হতে পারে তার ভাবনার সাথে মিল। এটা সম্পূর্ন কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

সাজিদ মল্লিক রুম থেকে বেরিয়ে দ্রুত পায়ে সতর্কতার সাথে বাড়ির পিছনের দিকে সেই বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা স্টোর রুমের সামনে চলে যায়। বাইশ পর আজ সে এসেছে এই রুমের সামনে চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নিয়েই রুমের সামনে থাকা সেল্ফ টা কে সরিয়ে দেয়। তার কাছে থাকা একটা চাবি বের করে পকেট থেকে তার পরেই তালা খুলে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে যায়। চারিদিকে ময়লা জঞ্জালে ভরে আছে। চারদিকে একবার ভালো করে এগিয়ে গিয়ে সেই আলমারির সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। চারদিকে খুঁজে ও তিনি আলমারির চাবি খুঁজে পেলেন না এর আগেও তিনি খোঁজার চেষ্টা করে গেছে কিন্তু পারেন নি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নিজেই রুম থেকে এই সমস্ত জিনিষ এই রুমে বন্ধ করে রেখেছেন। চারদিকে তাকিয়ে আবারো নিরাশ হয়ে ফিরে যান। তবে এখন তার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন সোহা বলে মেয়েটা কে?

————–

চৌধুরী ম্যানসনে সবাই একসাথে বসে সকালের ব্রেক ফাস্ট করছে আর গল্পে মেতে আছে। বিশেষ করে মিস্টার সম্রাট চৌধুরী সোহাদের কেস নিয়ে কথা বলছে। তাদের তো এই ভাবে খুব বেশি পাওয়া যায় না। ইনফ্যাক্ট বলতে গেলে পাওয়ায় যায় না তাদের কে কথা বলার জন্য। তাই কথা বলায় মেতে আছে। আর আমন তাদের কথার মাঝে শুধু নিরব দর্শক এর মত চুপচাপ তাদের কথা শুনে যাচ্ছে আর কোনা চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে। যদি ও কথা বলার মাঝে লক্ষ করেছে আমন তার দিকে মাঝে মাঝে দেখছে আর খাচ্ছে। তাদের কথার মাঝে হঠাৎ করেই টপকে যায় মণিকা আর আরহান।

-“হ্যালো আংকেল হ্যালো আন্টি । মণিকা বাড়িতে ঢুকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে।

-” ওই নাও লেজুড় চলে এসেছে। আকাশ ফোড়ন কাটে।

সোহা এক পলক মণিকা কে দেখে নিয়েই আমন এর মুখের দিকে তাকিয়ে খেতে থাকে। তার কাছে যেনো মণিকা নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। মণিকা বলে যে কেউ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা যেনো তার চোখে পড়ছে না। এদিকে আমন ঢোক গিলে একবার মণিকা এর দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে খেতে থাকে। এখন তার পুরো ফোকাস সোহার দিকে রেখেছে যাতে তার ধানী লঙ্কা এই মেয়ে কে নিয়ে যেনো আর কোনো কথা না বলতে পারে। মণিকা এসে আমন এর পাশে বসে পড়ে।

-“আরে আরহান মণিকা যে এসো বসো। আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-” আন্টি আমাকে বলতে হবে না দেখো আমি আগেই বসে গেছি। মণিকা হেসে ন্যাকা ভাবে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ সেই একেবারে ন্যাকামির দোকান। সাথে ছোঁছা মেয়ে তাইতো এমন হ্যাংলার মত বসে পড়েছে। আকাশ আবারো বলে ওঠে মৃদু ভাবে।

এদিকে আকাশের বলা কথা শুনেই সানি অ্যাস নীহার হেসে ফেলে সোহার খুব হাসি পাচ্ছে। তবে সে একদম স্বাভাবিক ভাবে বসে খেয়েই যাচ্ছে। আমন ভ্রু কুঁচকে সব গুলো কে দেখে সে জানে এরা কি বিচ্চু এরা যে কাউকে ধুয়ে রেখে দেবে। আর সব গুলোর হাসি দেখেই তাই মনে হচ্ছে।

আরহান টেবিলের সামনে এসে থমকে যায়। তার সামনে সোহা বসে আছে। সেই মেয়ে হ্যাঁ এ সেই মেয়ে কি মিল। কিন্তু এই মেয়ে এখানে কি করছে। তার আত্মার মুখের মুখ বসানো আছে মনে হচ্ছে তার কাছে। সে সোহা কে দেখার পর থেকে এই মুখের রহস্য ভেদ করতে চেয়েও পারেনি। একমাস শুধু মিল খুঁজে গেছে তার আত্মা আর তার সামনে বসে থাকা এই মেয়ের মুখের মধ্যে দুটো ছবির মধ্যে থেকে পার্থক্য খুঁজে বের করতে চেয়েছে কিন্তু কখনই পারেনি। আরহান কে এক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-“আরে আন্নি বেটা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো বস।

-“আরে ভাই তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোকে কি নিমন্ত্রণ পাঠাতে হবে বসার জন্য? আমন বলে ওঠে।

আরহান ডাক শুনেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আমন এর আরেক পাশে বসে যায়। এদিকে সোহা খেতে খেতে থমকে যায়। আভা চৌধুরীর ডাক শুনে হাত থেমে যায় তার। মাথা তুলে সামনে তাকাতে দেখে তার ঠিক সামনেই একটা ছেলে বসে আছে যে তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। যেই চোখে রয়েছে একরাশ মুগ্ধতা কৌতুহল আর প্রশ্ন চিহ্ন। তাকে দেখে যে সামনে বসা ছেলে টা খুশি হয়েছে সাথে চমকে আছে সেটা বুঝতে পারে সোহা। সোহা নিজেও তাকিয়ে আছে ছেলেটার মুখের দিকে। তার চোখ জোড়া ও কিছু খুঁজে চলেছে কোনো কিছুর সন্ধানে। বেশ কিছুক্ষণ পরই সোহার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সোহা ঠোঁট কামড়ে হাসি দেয়। তার ভিতরে হঠাৎ করেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ইমোশন নামের অনুভূতিরা জোট বেঁধে ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে ভিতর থেকে। চোখের কোন টা ও ভিজে উঠছে বুঝতে পারে সোহা। সে নিজের ঠোঁট কামড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চোখ চেপে বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। আরহান এতক্ষণ সব কিছুই লক্ষ করছিলো হঠাৎ করেই মেয়েটা তার মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেছিলো বোধ হয় তার মুখে হাসি আর চোখের কোণে পানি ও দেখা গেছে। কিন্তু কেনো? কি কারণ হতে পারে এর? সে না হয় তার আত্মার সাথে এই মেয়ের মিল পেয়েছে কিন্তু এই মেয়ের তাকে দেখে এমন চোখ মুখের ভাব পাল্টে গেছিলো কেনো? কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো এই মেয়ে তাকে দেখে খুশি হয়ে গেছিলো কিন্তু কেনো? কি কারণ হতে পারে। তাহলে কি সত্যি কোনো কানেকশন আছে তাদের মধ্যে তাহলে কি এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয় সত্যি কোনো যোগ সূত্র আছে তাদের মধ্যে? আরহান এর মনে আরো এক ঝাঁক প্রশ্নেরা ডানা মেলেছে। এদিকে আরহান এর সাথে সাথে আমন ও লক্ষ করেছে আরহান আর সোহা কে প্রথম থেকে । তার মনেও কিছু প্রশ্ন উদয় হয়েছে।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

(বিঃদ্রঃ – জানি আজ পর্ব ছোটো হয়েছে। আজ খুব ডিসট্রাব আছি তাই কি লিখেছি আমি নিজেও জানি না ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here