#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২১.
আমন বসা থেকে উঠে একদম ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে কি সত্যি দেখছে নাকি ভুল দেখছে । তার সামনে দাঁড়ানো মেয়ে টা কি সত্যি তার ধানী লঙ্কা সোহা নাকি সে আবার কল্পনা করছে। আমন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এদিকে সামনে দাঁড়ানো রমনী টি আর কেউ নয় সোহা জৈন আমন এর ধানী লঙ্কা স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে। সোহা আমন এর রিয়্যাক্সন দেখে বাঁকা হাসে। সে আমন এর এইরকম একটা এক্সপ্রেশন আশা করেছিলো। আর সেটাই হলো। সোহা আলতো পায়ে হেঁটে আমন এর দিকে এগিয়ে আসে। আর এদিকে আমন নিজের কল্পনা ভেবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে ।সে দেখতে পাচ্ছে সোহা তার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু আমন যতো টুকু সোহা কে চিনেছে সোহা তো এত সহজে ধরা দেওয়ার মেয়ে নয় তাহলে। আমন এর ভাবনার মাঝে দেখে সোহা একদম তার সামনে তার একেবারে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। এই এক মাসে আমন প্রায় সময়ে তার সামনে সোহা কে দেখতে পায় । তাই এখনও সোহা কে সামনে দেখেও বুঝতে পারেনা এটা সত্যি নাকি কল্পনা। আমন এক ভাবে তাকিয়ে আছে সোহার চোখের দিকে যে এখন তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ফট করেই সোহা আমন এর দিকে ঝুঁকে গিয়ে আমন এর ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দেয়। সাথে সাথে আমন চোখ বন্ধ করে নেয়। আমন এর এখন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে সে এতটাই সোহার ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছে যে সারাক্ষণ তার আসে পাশে সোহা কে দেখতে পায় । আর আমন এর এখনও মনে হচ্ছে সে কল্পনা করছে সব কিছু এতক্ষণ যা কিছু হয়েছে সব কিছুই তার মনের ভুল। আমন নিজেই নিজের মন কে বোঝাতে থাকে। হটাৎ করেই জোরে আওয়াজ হতেই আমন এর চটকা ভাঙে। সে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সোহা। এটা দেখেই আবারো চোখ বন্ধ করে আমন। উফ আবার। হটাৎ কথা কানে আসতে চোখ খুলে এবার অবাক হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকায় দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে সোহা।
-“আরে মিস্টার চৌধুরী ভিতরে কি আসতে পারবো? নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমাকে? আর আপনি এমনি খাম্বার মত করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? সোহা খানিকটা চিৎকার করে বলে ওঠে।
আমন একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবারও বাইরে দরজার কাছে তাকায়। এখনও আমন এর মুখে থেকে অবাক এর ভাব টা যায়নি। সে যেনো এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। আর একটু আগে কি ঘটলো সোহা তার ঠোঁটে স্পর্শ করেছে ভেবেই নিজের হাত ঠোঁটের উপর চলে যায় আমন এর । সব কিছুই যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কোনটা মনের ভুল আর কোনটা ঠিক বুঝতে পারে না। উফ মনে হচ্ছে এবার এই মেয়ের জন্য সে পাগল হয়ে যাবে । আবারও দরজায় নক এর আওয়াজ আসতেই আমন ভ্রু কুঁচকে তাকায় নিজের হাতে জোরে একটা চিমটি কেটে দেখে সে সত্যি সব কিছুই দেখছে নাকি ভুল দেখছে ।
-“এই মিস্টার চৌধুরী এমন হ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছেন কেনো আরে বাবা আমি কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো ।সোহা রেগে বলে ওঠে।
আমন সোহার রাগী মুখ দেখে আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে ইশারা করে সোহা কে ভিতরে ঢোকার। সোহা আমন কে একবার আপাদমস্তক ভালো করে দেখে নেয়। সে বুঝতে পারে আমন এর এখন কার অবস্থা কি তার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে। ঠোঁট এলিয়ে হেসে এগিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। সোহা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে আমন এখনও সেই ভাবে তাকিয়ে আছে।
এদিকে আমন সোহা কে সেই একই ভাবে ভিতরে ঢুকতে দেখে তার মনে হচ্ছে যে সে এতক্ষণ এটা কল্পনা করছিলো আর এখন বোধ হয় সত্যি হতে চলেছে। তাই সে একভাবে সোহার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সোহা কে এসে বসে পড়তে দেখে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। সোহা আমন কে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে টেবিলের উপর জোরে আঘাত করে সাথে সাথে আমন চমকে উঠে এক পলক সোহা কে দেখে নিয়েই পিছন মুড়ে যায়। জোরে জোরে কয়েকটা বড় করে শ্বাস নেয় এক হাত উঠিয়ে নিজের ঠোঁটের উপর স্পর্শ করে আমন। তার কেনো যেনো এখনও মনে হচ্ছে স্পর্শ টা কোনো মনের ভুল নয় সত্যি ছিল। কিন্তু সেটা কি ভাবে সম্ভব সে তো নিজেই দেখলো সোহা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় সারাদিন সোহা কে নিয়ে কল্পনা করতে করতে এখন সব জায়গায় দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু এক মিনিট সোহা এখানে কি করছে? তার মানে সোহা সত্যি এসেছে? ভেবেই খুশি হয়ে সোহার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে যায়। আমন এর মুখে থেকে খুশি উপচে পড়ছে।
-“এই মিস্টার চৌধুরী আপনি ঠিক আছেন তো? মানে আপনার শরীর ঠিক আছে তো? আপনি এমন করছেন কেনো? সোহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” ন ন না না আমি ঠিক আছি । আম ফাইন। আমতা আমতা করে বলে ওঠে নিজের চেয়ারে এসে বসে পড়ে আমন।
-” সত্যি বলছেন তো আপনি ঠিক আছেন? না মানে আপনাকে দেখে কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না আপনি ঠিক আছেন? সোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে আমন কে দেখে বলে ওঠে।
আমন হেসে পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘাম মুছে নেয়। এসির মধ্যে থেকেও ঘেমে গেছে আমন। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েই এবার সোহার দিকে তাকায় আমন । ভালোভাবে এবার সোহা কে দেখতে। এতদিন সে কল্পনায় সোহা কে দেখলেও আজ একমাস পর সোহা কে নিজের সামনে বসে থাকতে দেখে। আমন সোহা কে দেখে নিজের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে থাকে।
-“তো মিস সোহা আপনি তাহলে ফিরে এলেন তাই তো? আমন ভ্রু কুঁচকে উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে।
সোহা তীক্ষ্ণ চোখে আমন এর দিকে তাকিয়ে দেখে আমন এর চোখে তার মুখের থেকে তার সেই কাঙ্খিত উত্তর এর অপেক্ষায় আছে।
-” হ্যাঁ অবশ্যই ফিরতে তো আমাকে হতো তাইনা। আমার যে এখানে অনেক অপূর্ণ কাজ থেকে গেছে যেগুলো কে সম্পূর্ণ করতে আমাকে আবার ফিরতে হতো। সোহা বলে ওঠে।
-” অপূর্ণ কাজ যেমন? আমন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
-“আমার আপনার হেল্প লাগবে মিস্টার চৌধুরী। বলেই সোহা তার হাতে থাকে ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে আমন এর দিকে এগিয়ে দেয়।
আমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। সে সোহার হাতের থেকে ফাইল নিয়ে নেয়। তার এবার মনে হয় সোহা শুধু তার কেস এর জন্য এখানে ফিরে এসেছে তার জন্য নয়। তার মানে সোহার মনে এখনও তার জন্য কিছু নেই। সেই শুধু সোহার ভালোবাসায় ডুবে যাচ্ছে কিন্তু সেই একা সোহা নয় সে তাকে ভালোবাসে না। এটা ভেবেই আমন এর মুখে থাকা এতক্ষণ এর উজ্জ্বল ভাব টা কেটে গিয়ে মলিন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। আমন এর মনের মধ্যে জ্বলতে থাকা খুশির প্রদীপ টা এক নিমেষে নিভে যায়। আমন এবার ফাইল এর দিকে চোখ বুলিয়ে নেয় । পুরোটা পড়ে সোহার মুখের দিকে তাকায়। সোহা কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে ও চোখে চোখ রাখে।
-“হোক না আমার জন্য নাই বা আসুক কাজের জন্য হলেও তো ফিরে এসেছে। এটাই বা কম কিসের। তাকে তো সমানে থেকে দেখতে পাব তার কথা শুনতে পাবো। আর আমার কাছে আবারো সুযোগ আছে তাকে ভালোবাসার। আমার ভালোবাসা তাকে অনুভব করানোর। আমন নিজের মনে ভেবে নেয়।
-” তো বলুন মিস সোহা আমি আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি? আমন নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েই বলে ওঠে।
-” মিস্টার চৌধুরী আমি কেসে আপনাকে পাশে চাইছি। আমি চাই এতে আপনি ও আমাকে সাহায্য করুন। সোহা আমন এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-“ওকে । আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো। আমন মলিন হেসে বলে ওঠে।
সোহা প্রথম থেকেই আমন এর এক্সপ্রেশন তীক্ষ্ণ নজরে পর্যবেক্ষণ করে গেছে তার মুখের অবাক হয়ে যাওয়া চমকে যাওয়া তাকে দেখে খুশি হওয়া আর তার পরেই মুখে অন্ধকার নেমে আসা সব কিছুই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করছে সোহা। আর এখন আমন এর এই ছোটো হয়ে যাওয়া মুখ টা ও দেখছে একটু আগের তাকে দেখে খুশি ভাবটা কেমন এক নিমেষে উড়ে গেছে আমন এর মুখ থেকে।
-“আমার সাথে থাকতে তো তোমাকে হবে মিস্টার চৌধুরী। আমি তোমার জীবনে আসিনি তুমি আমার জীবনে ঢুকে পড়ে আমাকে বাধ্য করেছ তোমার দিকে আকর্ষিত হতে। আর এখন তো তুমি আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। তবে এত সহজে ও আমি তোমার হাতে আসছি না। সোহা জৈন কখনো ভুল রিপিট করে না। এতদিনে আমি তোমার সব খবর রেখেছি আর এখন থেকে নিজেও তোমার সাথে থাকবো প্রতি টা মুহূর্ত তুমি আমার নজর বন্দি হয়ে থাকবে। তোমাকে যাচাই না করে কি করে তোমাকে এত সহজে ধরা দেই বলো। আমিও তো দেখতে চাই তুমি আমাকে ভালোবেসে আর কত অপেক্ষা করতে পারো আর কি কি করতে পারো। আর একটু আগের তোমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা কোনো মনের ভুল নয় সেটা আসলেই সত্যি ছিল তবে সেটা তুমি তোমার মনের ভুল বলে জানবে এখন। এটুকু ভেবেই বাঁকা হেসে ওঠে সোহা।
তখন সোহা রুমে ঢুকে আমন এর অবস্থা দেখে বুঝতে পারে আমন এখনও দ্বিধায় আছে সে ঠিক দেখছে নাকি ভুল নিজের মনের। এটা দেখেই তখন সোহা হেসে উঠেছিলো। তার পরেই আমন এর দিকে এগিয়ে গিয়েই আমন ঠোঁটে নিজের ঠোঁট এর স্পর্শ করায়। আমন চোখ বুঝে নিতেই সে অতি সাবধানতার সাথে দ্রুত রুমের বাইরে চলে যায়। আর আমন এতটাই কল্পনার মধ্যে ছিল যে কোনও কিছু বুঝতে পারিনি। সব কিছুই নিজের মন এর ভুল ভেবে নিয়েছে আমন।
-“এটা তোমার পাওনা ছিল মন। তোমার বলা কথাটাই আমি সত্যি করে দিলাম। তুমি আমার যাওয়ার দিন আমার কপালে চুমু এঁকে বলে ছিলে এরপরেরবার দেখা হলে স্পর্শ টা আমার ঠোঁটে থাকবে। তাই আমি দিয়ে দিলাম তবে তুমি জানতেও পারলে না। তবে এবার থেকে এমন অনেক কিছুই ঘটবে যেটা তুমি বুঝতেও পারবে না এটা সত্যি নাকি ভুল তোমার মনের। সোহা কে পেতে হলে একটু তো পরীক্ষা তোমায় দিতেই হবে মন। কারণ সোহা তার জীবনে কোনো ভুল করতে চায়না। সে কখনোই এই সব সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে চাইনি কিন্তু তুমি আর তোমার স্মৃতি আমাকে প্রতি নিয়ত জ্বালিয়ে নিয়েছ তাই এখন তোমার জ্বলার পালা। জানি এতদিন তুমি দেবদাস হয়ে ছিলে তবে এবার তুমি দেবদাস নয় আমার টর্চারে আরও বেশি করে আমার মনের অরণ্যে বন্দি হয়ে যাবে। সোহা নিজের মনেই বলে ওঠে।
চলবে….. ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
❎(কপি করা নিষেধ। প্লিজ কেউ কপি করবেন না।) ❎