তোর মনের অরন্যে পর্ব-৬

0
930

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৬.
সোহা ও আমন একে অপরের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তারা দুজনই বিশ্বাস করতে পারছে না যেটা হচ্ছে সেটা সত্যি কিনা। আজ সকালেই তাদের ঝগড়া বেঁধে ছিলো। সেই ছেলেটা কিনা সিনিয়র অফিসার। আর এদিকে আমন এর মনেও চলছে একই কথা। এই ঝগড়ুটে মেয়েটা কিনা লেডি ডন। এই জন্য এই মেয়ের এত তেজ উফ এবারে বুঝলাম এই মেয়ের মাঝে কি রহস্য লুকিয়ে আছে। এটা ভাবতেই তার আর তার সামনে দাঁড়ানো লেডি ডন কে দেখেই তার মুখে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। সোহা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে তাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

-“এ.আর.চৌধুরী রাইট? সোহা বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমিই। আমন বলে ওঠে।

-“আচ্ছা আপনি একজন অফিসার হয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে কিভাবে অন্যমনস্ক হতে পারেন। আপনার এই অন্যমনস্কতার কারণে যে কারোর ক্ষতি হতে পারতো। সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

আমন তীক্ষ্ণ চোখে তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কে দেখছে। এটা বুঝতে পারছে মেয়েটা তার সকালের ঝাল ঝাড়ছে তার উপরে উম ইন্টারেস্টিং। এটা ভেবেই তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা প্রস্সস্ত হয়। আমন কে কিছু বলতে না দেখেই সোহা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওখানে আকাশ সানি অ্যাস নীহার চলে আসে। ওদের দেখে আর কিছু বলে না তবে নীহার বলে ওঠে।

-“আরে সকালে আপনি ছিলেন না? আপনার সাথেই তো সু এর ঝগড়া লেগে ছিলো। বাহ আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি আপনি র এর অফিসার।

-” আমি ও বুঝতে পারিনি। আমন ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে ওঠে।

-“ভাবা যায় একজন অফিসার অন্য একজন অফিসার কে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছিলো সানি হেসে বলে ওঠে।

এদিকে অ্যাস এক ভাবে আমন এর দিকে তাকিয়ে আছে । তার মুখে ফুটে আছে বিস্ময়। আমন অ্যাস ও এর দিকে তাকায়। আমন প্রথমে কয়েক মিনিট অবাক হয়ে তাকিয়ে হেসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। অ্যাস হেসে আমন কে জড়িয়ে ধরে।

-“ভাইয়া তুই? অ্যাস বলে ওঠে।

-” ইয়েস পিচ্চি আমি।

এদিকে ওদের দুজন কে দেখে সোহা নীহার আকাশ সানি । সোহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে বোঝার চেষ্টা করছে হচ্ছে টা কি?

-“ভাইয়া তুই র এর সিনিয়র অফিসার? কবে থেকে মানে বাড়িতে কেউ জানে এটা? আর তুই আমাকেও এটা বললি এটা কিন্তু ঠিক নয়। অ্যাস কৌতুহল ও অভিমান নিয়ে বলে ওঠে।

-“উম না এই তুই জেনে গেলি। আমন হেসে বলে ওঠে।

-“আচ্ছা তুই আমাকে এটা বল তুই যে এই লেডি ডন কে চিনিস আমাকে তো বলিস নি। আমন সোহার দিকে ইশারা করে মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।

অ্যাস আমন এর কথা শুনে মুচকি হাসে। তার পরেই অ্যাস বাকি চার জনের দিকে তাকিয়ে দেখে তারা তাদের দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। সোহার দিকে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে আছে তার দিকে তাকিয়ে।

-” গাইজ মিট মাই ভাইয়া আমন রোদ চৌধুরী। অ্যাস বলে ওঠে।

সোহা একবার আমন আর অ্যাস কে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। তারা জানা মতে এই ব্যাঙ্গালোর শহরেই অ্যাস এর বাড়ি তার বাবা মা ভাইয়া ও সে মিলিয়ে তাদের ফ্যামিলি। কিন্তু এর বেশি আর কিছু জানতো না শুধু ওদের বাবা মা এর নাম আর বাড়ির এড্রেস জানে। ওর ভাইয়ার ব্যাপারে জানা ছিল কিন্তু নাম বা অন্য কিছু জানতো না। এদিকে একে একে নীহার সানি আকাশ পরিচিত হয়ে নেয় আমন এর সাথে । সোহা একবার তাকিয়ে নেয় সবার দিকে। তারপরেই বলে ওঠে।

-“সো আমরা এবার কি কাজের কথায় আসতে পারি?

-” ওহ ইয়েস। আমন হালকা হেসে বলে ওঠে।

সোহা এক পলক তাকিয়ে নিয়ে ভিতরে রুমে চলে যায়। পিছে পিছে বাকিরা ও রুমে ঢুকে যায়। সোহা আমন রুমে ঢুকতেই তার কাছে থেকে এতদিনের ডিটেইলস নিতে থাকে তারপরেই ইউনিভার্সিটি এর প্রফেসর আর ম্যাডাম দের ব্যাপারে ও বলতে থাকে সাথে স্টুডেন্টদের ও। আমন এর কাছে থেকে তথ্য গুলো পেয়ে তাদের আজকের পাওয়া কিছু তথ্য অনুযায়ী সব গুলো টেবিলের উপর একে একে সাজাতে থাকে আর বাকিদের ও প্ল্যান বোঝাতে থাকে। সব কিছু ঠিক করে নেওয়ার পর এরপরেই সোহা তার মেইন টার্গেট সাজিয়ে ফেলে।

এতক্ষণ আমন একভাবে সোহার কথা শুনে যাচ্ছিলো। সে কথা গুলো মন দিয়ে শুনলে তার চোখ ছিল সোহার দিকে। সে মাঝে মাঝে সোহা কে দেখ ছিল তার স্কিল তার কথা বলার ভঙ্গি তার অ্যাটিটিউড সব কিছুই লক্ষ করতে থাকে। এটা যে সোহার চোখ এড়িয়ে গেছে এটাও কিন্তু নয়। প্ল্যান সাজিয়ে নেওয়ার পর এবার সোহা এক এক করে তাদের বলতে থাকে কে কি দায়িত্বে থাকবে।

-” সানি তোকে ইউনিভার্সিটি তে স্টুডেন্ট হয়ে এন্ট্রি নিয়ে স্টুডেন্ট দের মধ্যে মিশে যেতে হবে। যাতে কোথায় কি ঘটছে তার সব তথ্য আমরা পেয়ে যাই।

-” আকাশ তোর একটাই কাজ ইউনিভার্সিটি তে থেকে সমস্ত সিস্টেম হ্যাক করা। আর বিশেষ করে ওই ইউনিভার্সিটি এর যে দল গুলো আছে তাদের মধ্যে সবার সিস্টেম হ্যাক করে নেওয়া তবে ছেলেদের মেয়েদের নয়।

সোহা কথা টা বলতেই সবাই মিট মিট করে হেসে ওঠে। আর এদিকে আকাশ এর মুখটা ফুলে যায়।

-“নীহার তোর একটাই কাজ আমার পরেই তোর সব প্ল্যান গুলো রেডি করে ফেলা। আর তোকে পুরো বিষয়টার উপর নজর রাখতে হবে।

-” আর অ্যাস তোর কাজ তো তুই খুব ভালো করেই জানিস তার পরও একবার বলে দেই। আমার পাঠানো সমস্ত তথ্যের উপর সাথে সাথে অ্যাকশন নেওয়া।

সোহা চারজন কে সব টা বুঝিয়ে দেয়। এবার সোহা আমন এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে মিস্টার চৌধুরী।

-” আপনি পুরো মাথাটার উপর নজর রাখবেন। সব সিস্টেম অপারেট আপনি করবেন। আর আমি জানি আপনাকে আমার কিছু বলতে হবে না। সোহা বলে ওঠে।

-” পুরো প্ল্যান সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে একবার আপনি ও দেখুন কোথাও যদি কিছু চেঞ্জ করতে হয়। কোথাও যদি মনে হয় আরো কিছু খামতি থেকে গেছে তাহলে ঠিক করে নেওয়া যাবে। সোহা বলে ওঠে।

আমন সোহার বলা কথা টা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। সাধারণ এইসব জায়গা তে বড় কোনো অফিসার থাকলে তারা তাদের প্ল্যান এর উপর আর কারোর কথা শুনতে চায়না আর এই মেয়ে তার কাছে থেকে সাজেস্ট চাইছে। এক কথায় বলতে গেলে আমন সোহার করা এই প্ল্যান এর উপর কোনো কথা বলতে পারছেনা কারণ সোহা খুব সুক্ষ ভাবে তার প্ল্যান সাজিয়েছে। এর উপর আর কোনো কথা বলাই চলে না। আজ মিটিং রুমে সে চুপ করে আছে। সাধারণত সে এই ভাবে চুপ করে থাকে না। আর সে কারোর ধার ও ধারে না এর আগে সিনিয়র অফিসাররা প্ল্যান সাজালে ও সেটা আমন আবারো চেঞ্জ করে। তার পছন্দ মত নাহলে সে কাজ করেনা কারণ প্ল্যান মত কাজ না হলে মাঝে এসে সব কিছু ঝুলে যাবে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আর তার এই অ্যাটিটিউড এর জন্য তার ডিপার্টমেন্ট তার বেশ খ্যাতি আছে। কিন্তু আজ সে কোনো কথা বলতে পারিনি শুধু শুনে গেছে।

-“কোনো সমস্যা নেই সব একদম ওকে আছে। যদি সামনে কিছু অন্য রকম দেখা যায় তখন না হয় প্ল্যান চেঞ্জ এর ব্যাপার নিয়ে ভাবা যাবে। আমন বলে ওঠে।

সোহা আমন এর কথা শুনে একবার আমন এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সোহার মতে এখানে যখন তারা দুজনই এই কেস এর তদন্তে আছে আর দুই জনই সিনিয়র অফিসার সেটা যেই ডিপার্টমেন্টে হোক না কেনো তাই অবশ্যই তার একা কথা বলার সব ডিসিশন একা নেওয়ার রাইট নেই যদি ও সে চাইলেই সব সিদ্ধান্ত একাই নিতে পারে কিন্তু এতে অন্য জন কে অপমান করা হবে। সে তার ডিপার্টমেন্টে যেমন সেরা। আমন ও তার ডিপার্টমেন্টে সেরা। তাদের দুজন এর কাজ আলাদা হলেও তাদের দক্ষতা কিন্তু কারোর থেকে কারোর কিছু অংশে কম নয়। তাই একে অপরের সম্মান করা উচিত।

আকাশ নীহার সানি অ্যাস অলরেডি তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। সোহা বাইরে রুমে গিয়ে কফি মেশিন থেকে দুটো কফি নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু তাকে মাঝ পথে থেমে যেতে হয় আমন রুমের বারান্দার গ্লাস হালকা সরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে থেকে মৃদু হওয়া আসছে আমন দাঁড়িয়ে রাতের প্রকৃতি উপভোগ করছে। এটা সোহার বাংলো। তবে সেটা এখনও আমন এর জানা নেই। আর সোহা আমন কে পেছনের রাস্তা থেকে ভিতরে ঢুকিয়েছে। আর তার এই বেসমেন্ট টা গার্ডেন এর সাথে ও খোলে। এখান থেকে গার্ডেন ও যাওয়া যায়।

সোহা আমন এর দিকে এগিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আমন কারোর উপস্থিতি পেয়ে পাশে ঘুরে দেখে সোহা এসে দাঁড়িয়েছে। সোহা হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেয় হাতের কফি কাপ আমন এর দিকে ।আমন ভ্রু কুঁচকে একবার সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে সোহার হাতের থেকে কফি কাপ নিয়ে নেয়। সোহা একবার আমন এর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়।

চলবে…. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here