In The Depths of Love part-19

0
1020

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_19

আবির ফোনটা হাতে নিলো।

কিন্তু দেখতে যাবে তার আগেই রাই ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।

“এতো কিসের কাজ আপনার? ”

“রাই ফোনটা দাও”

“দিবনা। একহাতে ল্যাপটপ আরেকহাত এ ফোন, আর পুরো পরিবার? ”

আবির ল্যাপটপটা পাশে রাখল আর রাই কে ধরে নিজের পায়ের উপরে বসালো “কাজ আছে বলেই করছি”

রাই হতাশ চোখে তাকালো “এখনও কিন্তু বলেননি এই আঘাত গুলো কোথা থেকে পাচ্ছেন?”

আবির চুপ করে তাকিয়ে রইল ।

“এমন কিছু কি আছে যেটা আমাকে জানানো যাবেনা?”

আবির হালকা হেসে বলল “সব কি তোমার বোধগম্য?”

“তাই বলে আপনি এরকম হুটহাট অ্যাকসিডেন্ট করিয়ে আসবেন নাকি?”

“আমিও সেটাই ভাবছি………” বলে আবির রাই কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আবারো ল্যাপটপটা হাতে নিলো। রাই সত্যিই বিরক্ত “বেশিই হেয়ালি করেন আপনি ”

ল্যাপটপে চোখ রেখেই ও বললো “এতদিন আমার সাথে থেকেও ধরতে পারলে না কি বলি কি করি?”

রাই দাড়িয়ে পড়লো “না বুঝিনা। কারণ আপনি বুঝতেই দেন না” বলে রাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

আবির আর সেদিকে মনোযোগ দিলনা। এই মুহূর্তে ওর কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফোনের ব্যাপারে ভুলেই গেলো।

বাহিরে লোকটির মেসেজের উত্তর না আসায় রাগে সে ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরে এক নজরে বারান্দার দিকেই তাকিয়ে রইলো।

রাতে কাজ শেষ করতে করতে প্রায় দুটো। রাই ততক্ষণে ঘুমিয়ে গিয়েছে। বেচারি এতো করে বললো কাজ বন্ধ করে ঘুমোতে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ল্যাপটপটা রেখে আবিরের উঠে খাটের পাশে গেলো। ঘুমোলে প্রত্যেক মানুষকেই দেখতে কতটা নিষ্পাপ লাগে। মনেহয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেহারার দিকেই তাকিয়ে থাকি।
আবির গিয়ে বিছানায় রাই কে পেছন থেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

এক গোছা চুলের মাতাল করা সুবাস। যদিও বা এটা চুলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য না, তবুও এই মুহূর্তে এই গুনে গুনান্বিত চুলগুলো আবিরকে পাগল করার মত যথেষ্ট। আলতো করে চুলে মুখ গুজে ঘ্রাণ নিতে নিতে কখন যে ঘোরে চলে গেছে, আবির জানেনা….. ক্রমশ নিজের ঠোঁটজোড়া ছুঁইয়ে দিতে লাগলো রাই এর উন্মুক্ত কাঁধে, গলায়। গভীর ঘুমে বিভোর রাই, হয়তো অনুভব করতে ব্যার্থ।

“দোষ তো আমার নয়,
নয়নজোড়া যে তোমায় খোঁজে।
তুমি এতই দূরে ,
যেনো এক পৃথিবী পার করেও
পাইনা কাছে।
কাছে থেকেও দূরে।
তবুও কী সব দোষ আমার?”

বিরবিড় করতে করতে নিজের প্রেয়সী কে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আবির।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই রাই দেখলো আবির ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। মুচকি হেসে আবিরের এলোমেলো চুলের মধ্যে বাম হাতটা গুজে দিলো। আর কপাল থেকে সরিয়ে দিতে লাগলো। এইকয়দিনে চুলগুলো অনেকটাই লম্বা হয়েছে। চোখ ঢেকে যাওয়ার মত অবস্থা। কিন্তু দেখতে সুন্দর ই লাগে। মুখে হালকা দাড়ি, ঘুমন্ত চেহারা। আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট।
কিন্তু কপালের ব্যান্ডেজটা , যেনো এই সৌন্দর্য আরো সহস্র গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কি যে মাথায় এলো , রাই মুখটা এগিয়ে আবিরের কপালে একটা চুমু দিল। মহাশয় তো ঘুমোচ্ছে। নাহলে নিশ্চই রাই এত কাছে নিজে যায়না।

কিন্তু ওতো ভালো ও লাগলো না। জাস্ট একটা কিস! আবিরের গালে হাত রেখে স্লাইড করলো। আস্তে করে বাম গালে একটা চুমু দিয়ে সরে এলো।
“নট ব্যাড। বাট পারফেক্ট ছিলনা”

রাই চমকে ওঠে। তাকিয়ে দেখে আবির চোখ খুলে টিপটিপ করে তাকাচ্ছে। রাই উঠে বসলো “আপনি জেগে!”

আবির একটা হাই তুললো “জাগিয়ে বলছো জেগে!?”

রাই লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। ইশ। কি বলবে এখন? রাই উঠতে যাবে , নীল রঙের শাড়ির আঁচলটা টান খেলো পেছন থেকে। থমকে গেলো ও। ধীরে ধীরে ঘুরে দেখে আবির ধরে রেখেছে। আঁচলটা ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো রাই কে আবির। রাই চোখ নামিয়ে নিলো ।

“ঘুম ভাঙলে জরিমানা দেবেনা?”

রাই মাথা নাড়লো “ছাড়ুন। এমনিতেই………. দেরি হয়ে গেছে”

“আমারও ধরে রাখার মতো টাইম নেই।ঘুম উড়ে যাওয়ার আগে জরিমানা দিয়ে যাও। আরেক ঘুম বাকি। ”
“কিসের জরিমানা?”

“বোঝানো লাগবে?” বলে আবির রাই কে কাছে টেনে নিবে , তার আগেই বাহিরে খুব জোরে কাচ ভাঙার শব্দ হলো….
আবির রাই দুজনেই চমকে উঠলো।

“কি হলো!” রাই উঠে চুল ঠিক করে বাহিরে বেরিয়ে গেলো। পেছনে আবির ও। সবাই ঘুমোচ্ছিল। কিন্তু এই শব্দে মোটামুটি সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে। ফুপি ভয়ার্ত স্বরে বলল “এই কি ভেঙেছে?”

রাই এগিয়ে গেলো “সেটাই তো জিজ্ঞেস করতাম”

” কিসের আওয়াজ ছিলো এটা” আবিরের মা উঠে গেছেন। রেজোয়ান সাহেব আবার বেঘোরে ঘুমোনো মানুষ। নাক ডেকে জমিয়ে ঘুম দিচ্ছেন। ওনার আবার ঘুমের তালে এসব হুশ থাকেনা।

আবির এগিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো। টেবিলের কোনোকিছু ভাঙেনি। অন্য কোথাও ও কিছুই ভাঙেনি। তবে?

সামনে ড্রইং রুমে এগিয়ে গিয়ে আবির এর পা আটকে গেলো। রাই দেখছিল। “কি হয়েছে?”

সবাই আবিরের দিকে এগোলো। “এটা কে করলো!”ফুপি বললেন

সবাই দেখলো , ড্রইং রুমের জানালার কাচগুলো ভেঙে অর্ধেকটা সোফায় অর্ধেকটা মাটিতে পড়ে আছে। কিন্তু কাচ কিভাবে ভাঙলো!
আবির একপা এগিয়ে গিয়ে মাটির কাচগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।
রাই এর মনে ভয় ঢুকে গেলো। এটা কে বা কেনো করলো!

আবির কাঁচগুলো দেখে একটু পেছনে ঘুরে এদিক ওদিক তাকালো। সাথে বাকিরাও তাকালো।
নিচে ফ্লোরে একটা মাঝারি আকারের পাথর পড়ে আছে। আবির এর মাথায় একটা অন্য ই চিন্তা গ্রাস করলো।

“আরে এসব কে কি করছে! ” আবিরের মা এগিয়ে গেলো। “পাথর ফেলে কি মজা নেওয়া হচ্ছে নাকি?”

“কার ভাই খেয়ে দেয়ে কাজ নেই?”
সুমি এগিয়ে বললো “নিশ্চই ওই পাশের বিল্ডিং এর পুঁচকে গুলো এসব করেছে। এমনিও তো ওরা বেআদব”

“হতে পারে। আচ্ছা যা তোরা আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি” বলে ফুপি এগোলেন……
রাই বললো “ফুপি ফ্লোরের গুলো পরিষ্কার করে ফেলা যাবে কিন্তু সোফার গুলো তো সম্ভব না। ওটা তো সোফার পিলো বদলাতে হবে”

“হুম, সেটাই। ”

আবির কিছুক্ষন চিন্তামগ্ন থেকে নিজের ঘরে চলে গেল।

বিকেলে আবির বাহিরে গিয়েছিল। আবিরের মা রেজোয়ান সাহেবকে যে সে কি ঝাড়লেন বলার মত না। যেনো মরার মত ঘুম তার। এতো কেউ দুনিয়াদারি ছেড়ে ঘুম কিভাবে ঘুমায়! সেই কষ্টে রেজোয়ান সাহেবের দুপুরের খাওয়াটা ও ভালো হলোনা।
এদিকে সুমি রাই কে নিয়ে বেরিয়েছে। আগামীকাল আবিরের জন্মদিন। এখন সবকিছুর আয়োজন তো করতেই হবে। মার্কেটে গিয়ে সে ইচ্ছেমত কেনাকাটা করলো সুমি।
ফাঁক বুঝে রাই আবিরের জন্য একটা (। )ঘড়ি কিনে নিলো

আবিরকে দেখা গেলো একটা প্রাইভেট ব্যাংক থেকে বেরোলো। ফোনটা হাতে নিয়ে কাওকে ফোন করলো “কোথায় তুই?”

“ভাই আমি তো বাসায় , কেনো ভাই?” সৌরভ নড়েচড়ে বসলো।

“একটা অ্যাড্রেস দিচ্ছি, কুইক খবর লাগা”

“জ্বী ভাই”

আবির ফোনটা রেখে দিল। আর সৌরভ কে একটা অ্যাড্রেস সেন্ড করলো। “তুই যা , আমি কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়ছি” বলে আবির নিজের কালো সানগ্লাস চোখে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। পেছনে কতগুলো ওয়ার্কার কানাঘুষা করছে “ছেলেটা কিউট ছিলনা?”

“হ্যাঁ কি হ্যান্ডসাম”

“কালো জ্যাকেট, হোয়াইট টিশার্ট, চুলগুলো দেখেছিস?”

আরেক মেয়ে বলে উঠলো “আরে , দেখলেই বোঝা যায় খুব আপার ক্লাসের”

এইসবই চলছিল। এর মধ্য থেকে দু একটা অবশ্য আবিরের কানেও এসেছে। তবে আবির উল্টো একটা তুচ্ছ হাসি দিয়ে গাড়িতে বসে গেলো

“যার বর তার খবর নাই,
পাড়া পড়শীর ঘুম নাই”

গাড়ি স্টার্ট দিলো। বা হাতে সানগ্লাসটা খুলে পাশের সিটে রেখে দিল।

মাত্রই সৌরভের সাথে সেই অ্যাড্রেসে পৌঁছেছে আবির। সৌরভ খবর নিয়েছে।
“ভাই বিশেষ কিছু এইখানেও নেই”

“মনে হচ্ছে (একটা বাড়ির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ) বিয়ের বয়স হয়েছে তোর। বিয়ে ছাড়া ব্রেইন কাজ করছেনা?”

সৌরভ একটু লজ্জা পেলো “ভাই বিশ্বাস করেন, একটা কাজের খবর যদি পাই। এইবারের আপনার এই কেসগুলো সত্যিই জটিল”

“প্রমোশন ও চাও, বিনা খাটুনিতে?”
বলে আবির সিড়িতে উঠছিলো হঠাৎই একটা লোকের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো। “সরি ” বলে আবির চলে গেলো । লোকটা মাথা নিচু করে হাঁটা ধরলো। লোকটা প্রায় নিচে চলে গিয়েছে। আবির ও দোতলায় পৌঁছেছে।

“ভাই, এই বাড়িতে কি কাজ আপনার?”

“আছে , ওই লোকটা……” সাথে সাথে আবিরের মাথায় কি একটা খেলে উঠলো “সৌরভ ওই লোকটা….”

সৌরভ এদিক ওদিক তাকালো “কোন লোকটা?”

আবির ওকে ধাক্কা দিয়ে ১০ সিড়ি নিচে নেমে গেলো । দূরে তাকিয়ে দেখে একটু আগের সেই ধাক্কা খাওয়া লোকটা দ্রুতবেগে দৌড়াচ্ছে। আবির ও এক ছুট লাগলো।

“ভাই…” সৌরভ ও পেছনে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো।
এদিকে রোড ক্রস করে লোকটা অলরেডি অন্য একটা গলিতে ঢুকে গেছে। আবির ও প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। এই সেই লোকটা যাকে ও খুঁজে চলেছে।
আজ সত্যিই একবার হাতে আসুক।
সৌরভ পড়ে গেলো রাস্তার জ্যামে। গাড়ি একটার পর একটা এসেইচলেছে।

আবির দৌড়ে যতক্ষণে ওপরের গল্লিতে পৌঁছলো ততক্ষণে লোকটা গায়েব। পুরো হওয়ায় মিলিয়ে গেছে। আবির রেগে পাশের একটা দেওয়ালে ঘুসি মারলো “ড্যাম”

“ভাই….. পেয়েছেন?”

আবির মাথা নাড়লো। সৌরভ আশপাশের দু চারটে বাড়ির সিড়ি চেক করলো। নেই। চিনতেই দেরি হয়ে গেল।

রাই আর সুমি বাড়িতে ফিরেছে সবেমাত্র।
সব কেনাকাটা হয়ে গেছে । আগামীকাল রাত ১২ টায় আবির সারপ্রাইজটা পাবে। সবাই জানে ব্যাপারটা যে আয়োজন করা হচ্ছে, শুধু আবির বাদে। বাসায় ফিরেই রাই দেখেছিল নিশান কেমন করে যেনো ঘুমোচ্ছে। ওর ঘরের দরজা হালকা খোলা। যেনো খুব ক্লান্ত। অবশ্য সারাদিন কি করে কই থাকে , কেউই তার খবর নেইনা। অথবা নিশান খবর দেয়না। তাতে এই মুহূর্তে রাই এর কিছুই যায় আসেনা।

“ও যদি এতই ভালো হতো, তাহলে এমন গুন্ডাদের মতো অবস্থা না করে বাবার কাজে হাত দিত। ” বলে মুখ ঘুরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় রাই।

ততক্ষণে আবার আবিরের মাথার ব্যান্ডেজের মধ্য থেকে অল্প অল্প রক্ত বের হতে শুরু করে দিয়েছে।

“ভাই, আপনার তো আবারো রক্ত পড়ছে” বলে সৌরভ এগিয়ে গেলো।

এতো দৌড়াদৌড়ি করলে এমনটা হবেই
“স্বাভাবিক ” বলে আবির গাড়ির দিকে ফিরল।

“ভাই আপনি বাড়িতে যান , এদিকে অনেক সিসিটিভি আছে। আমি বাকিটা দেখছি”

“না….”
“ভাই আপনার কথা শুনবো না। আপনি বাড়িতে যান। আমি বললাম। তো আমি দেখে নিব। এই অবস্থায় আপনি বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে পারবেন না। পরে আরেক ঝামেলা হবে”

সৌরভের অনেক জোরাজুরিতে অবশেষে আবির বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলো। যদিও জানে সৌরভ গাফিলতি করবেনা। কিন্তু লোকটা এতো চতুর যে হাতের কাছ দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য।

এই মুহূর্তে আবির রাই এর সামনে বসা। রাই এর তো মেজাজ তুঙ্গে। রেগে রেগে আবিরের মাথার ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।

“যতই বলি এসব করবেন না, আমার কথা কে শোনে? যার যা ইচ্ছা তাই করে এবাড়িতে”

আবির চুপ করে শুনছে।

“রক্তই যদি বের হলো ব্যান্ডেজের কি মূল্য রয়ে গেলো? আপনি কি এমন করছিলেন যে এইটা হতেই হলো?”

আবির নিজের হলদেটিয়ার কোমর জড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাই নিজের মতই ব্যান্ডেজ করেই যাচ্ছে , আর বকবক করছে।

“আমার কোনো মূল্যই নেই। ”

“নিজেই নিজেকে মূল্যহীন বললে মানুষ কী বলবে?”

সেই একই স্বভাব। এই ছেলের বাকা কথা আর শেষ হওয়ার না।

“আমি বলছি কম আপনি প্রমাণ করছেন বেশি” বলে রাই সরে গেলো।

রাতে রাই আর বাকিরা মিলে অলরেডি সব প্ল্যানিং করে নিয়েছে। আগামীকাল কিভাবে কি হবে সেসব। আবির আপাতত রেজোয়ান সাহেবের সাথে কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

_________________

পরদিন সকাল থেকেই আয়োজন শুরু হয়েছে। আবির রেজোয়ান সাহেবের সাথে অফিসে গিয়েছে। নিশানের খবর কেউই জানেনা। এস ইউসুয়াল। যাইহোক সবাই আবিরের পছন্দের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। কেক তৈরি হচ্ছে বাড়িতেই। সুমি আর রাই মিলে কেক তৈরি করছে।

এভাবেই হাসি ঠাট্টায় দিন পার হয়ে গেলো।
রাত ৯ টায় মাত্রই সবাই কাজ শেষ করে নিজের নিজের ঘরে যাবে , তখনি রেজোয়ান সাহেব আর আবির ফিরে এলো।
রেজোয়ান সাহেব ঘরে ঢুকেই খাবারের সুস্বাদু ঘ্রাণ নাকে টেনে বললেন “আরে বাহ, মনে হচ্ছে ভালো কিছু রান্না হয়েছে?”
আবির ও পেছনে সবেমাত্র ঘরে ঢুকলো। ফুপি বললেন “হ্যাঁ হয়েছে মানে? ভাবি তোমার জন্য রাজভোগ সাজিয়েছে” সবাই হেসে উঠলো।

“এইযে একটা কথা বললি তুই। নির্ঘাত ঘাপলা আছে। ”
আবিরের মা এগিয়ে গেলো “এই কি ঘাপলা হ্যাঁ?” রেগে গেলেন।

“মানে এই কথাটা মানতে আমি নারাজ। তুমি নিশ্চই নিজের ছেলেদের জন্যই রান্না করেছো”
মহিলা কিছু জবাব দিবে তার আগেই আবিরের ফোনটা বেজে ওঠে । ফোন কানে নিতেই আবিরের মুখ ভাব বদলে গেলো।

ফোন কেটে ও ঘুরে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো ।

“এই আবির ” সবাই ডাকলো। রাই ব্যাপক অবাক। এদিকে আবির তাড়াহুড়ো করে সিড়ি থেকে নেমে নিচে চলে গেলো।

“কিহলো ওর?” সুমি বললো। রেজোয়ান সাহেব তেমন পাত্তা দিলেননা “চিন্তা করো না, ও চলে আসবে। চলো তো”

রাই এরই মাঝে আবিরের ফোন একটা মেসেজ দিয়ে দিলো “রাত ১২ টার মধ্যে ছাদে চলে এসেন। প্লিজ”

ওদিকে আবিরের ফোন মেসেজ এসেছে , ও একপলক দেখেই ফোনটা রেখে গাড়ি স্টার্ট করল।

এদিকে রাত প্রায় ১২ টা বাজতে গেলো। আবিরের দেখা নেই।
সবাই ছাদে দাড়িয়ে। খুব সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে ছাদটা। সবকিছু ঠিকঠাক। শুধু আবির ই নেই। রাই একটা লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরেছে। সাথে হালকা সাজ। যেহেতু উনি বেশি সাজগোজ পছন্দ করেন না। ফলে রাই ও এখন অতটা সাজে না।

কিন্তু একে একে সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা চলে যাচ্ছে আবিরের দেখা নেই। সবাই ক্লান্ত। এখন রাত ১ টা। আবির নেই। সবাই অনবরত কল করেই যাচ্ছে। কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স নেই। সবাই সত্যিই এবার রেগে যাচ্ছে। এমনটা কেউ করে!?

“কি হলো ছেলেটার?”
“কি জানি। ফোনটা ও ধরছে না”
“ভাইয়ার যদি কাজ থাকে তো বলেই যেত”
” অফিসের কাজ তো আজ আর নেই। থাকলেও কি ও রাত পার করবে?”

“বুঝি না , কি ছেলে পেটে ধরলাম। এক চুলও যদি বুঝি ওকে”

সবাই নিজের মধ্যেই কথা বকে যাচ্ছে। আর রাই এর দৃষ্টি দুরেরর ওই এলইডি আলোয় আলোকিত রাস্তার দিকে। যদি আবির আসে।

“আচ্ছা এখানে এভাবে দাড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। ও আসলে নাহয় আমরাও আসবো চলো বাসায়” ফুপি উঠে দাড়ালো।

বাকিরা ও বসা থেকে উঠে দাড়ালো।

“হ্যাঁ চলো”

রাই বললো “আপনারা যান। আমি নাহয় একটু পরেই আসি। দেখি উনি যদি আসে”

“না না এই রাতে ছাদে থাকা লাগবেনা। চলো ও আসলে আবার আসবো” আবিরের মা বললেন

” মা দেখি না। যদি চলে আসেন। একটু পরেই আমিও চলে আসবো । কিন্তু”

“আহা, থাক থাকতে দাও। রাই ওই হদচ্ছড়া আসলে আমাদের ডেকো” বললেন রেজোয়ান সাহেব।
সুমি থাকতে চাইলেও ফুপি দিলেন না। ওদের প্রাইভেট টাইম ও তো দরকার। তাই সবাই একে একে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
পেছনে রয়ে গেলো রাই।

একে একে সময় পার হয়ে গেলো। কিন্তু তখনো আবিরের দেখা নেই। রাই চেয়ারে বসে, আছে। আর অপেক্ষা করছে।

“আজকে ভেবেছিলাম খুব সুন্দর করে আপনাকে কিছু কথা বলবো। যেগুলো এর আগে বলা হয় নি। আপনিই তো সেই কথা গুলো শোনার জন্য এত টর্চার করেছেন। আর আজ যখন আমি প্রস্তুত (হাতের গিফট বক্সের দিকে তাকিয়ে) তখন আপনিই নেই। ”

আঁধারে ছাওয়া কালো আকাশটাই ও আজ চাঁদের দেখা নেই। ছাদের হলদে বাতির আলোয় যতটুকু স্পষ্ট, সেটুকুতেই রাই চোখ বুলিয়ে নিলো। কত সুন্দর করে সাজানো এই জায়গাটা।

“যেমন সাজ, তেমন সময়। তবুও আপনিই নেই। কখন আসবেন?
আচ্ছা (বাচ্চাদের মত করে) আপনি কি শুনতে চান না আমি……. নাহ আর বলবো না, আসুন আগে তারপর ইচ্ছেমত বকবো। তারপরে যদি আপনি ক্ষমা টমা চান তারপর ভেবে দেখবো……”

রাই এর চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন। একটু একটু করে রাই টেবিলের ওপর মাথাটা নুইয়ে দিলো। চোখজোড়া সত্যিই লেগে আসছে। কি করবে ও জানেনা। আবির কেনো আসছে না।
বক্সের মধ্য থেকে ঘড়ির কাটার টিকটিক আওয়াজ ও এই নিস্তব্ধতায় স্পষ্ট কানে আসছে। মস্তিষ্ক জেগে থাকতে চাইলেও শরীর আর এই ক্লান্তির ভার সইতে পারলো না।
চোখজোড়া শুধু লেগে এলো।

রাত ২ টা। আবির এখনও যদিও বাড়ি পৌঁছয় নি। তবে ছাদে কেউ একজন অগোছালো পা ফেলে উঠে এলো। তার চোখ গুলো জ্বলজ্বল করছে। আশেপাশের এই সাজ এই আনন্দ তার একটুও সহ্য হলো না। তার থেকে বেশি তার চোখে কাটার মত বিধলো একটাই দৃশ্য।

লাল শাড়িতে একদম নববধূ বেশে ওই চেয়ারটায় বসে টেবিলে মাথা রেখে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়া রাই। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী উলোট পালোট করে দেক। একপা একপা করে সে রাই এর দিকে এগোতে লাগলো। আজকে কিছু একটা খুব বড়ো অঘটন ঘটবে। প্রকৃতি তার সাক্ষী। আশেপাশে হালকা বাতাসে যেনো এই বার্তাই ভেসে বেড়াচ্ছে, যা শোনার মত সক্ষমতায় রাই নেই।

চলবে………….????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here