#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_14
আবির গিয়েছে প্রায় এখন ৮ ঘণ্টা হতে চললো। এখনও একটা ফোন ও করেনি। রাই এর কাছে করেনি ঠিকাছে , কিন্তু আল্লাহর বান্দা অন্তত নিজের মায়ের কাছে তো একটা ফোন করতেই পারিস। এমনকি রেজোয়ান সাহেব নিজেও এখনও ফোন করেননি।
রাই এর মেজাজটা অনেকটাই খারাপ এই মুহূর্তে। সকাল থেকেই খারাপ। কিন্তু বাপ বেটার এমন কাজে সত্যিই রাগ বাড়ছে বলি কমছে না।
” হ্যাঁ তোরা পৌঁছে গিয়েছিস?” বাহির থেকে ভেসে এলো শাশুড়ি মায়ের গলা। রাই এর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। একলাফে দরজা পার করে বাহিরে উকি দিল । মা কথা বলছে ফোনে ” হ্যাঁ ঠিকাছে। তোরা তাহলে ভালোয় ভালোয় পৌঁছেই গেছিস, যাক। তাহলে দুইজনে ভালো করে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমাও। আচ্ছা রাখছি”
” যাক ভালো ভালোয় পৌঁছে গেছে” রাই ঘরে ঢুকে গেলো। তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো । রাই কেনো যেনো খুশি হয়ে দৌড়ে গেলো ফোন ধরতে।
” হ্যালো…..”
” হ্যাঁ রাই মা।”
” বাবা….” মুখটা নেতিয়ে পড়লো
রেজোয়ান সাহেব মনে মনে হাসলেন আর আবিরকে শুনিয়ে জোরেই বললেন ” হ্যাঁ মা, ভালো ভাবেই পৌঁছে গেছি। চিন্তা করিস না। আচ্ছা”
রাই মুচকি হাসলো ” ভালো হয়েছে। আপনারা কেউ ফোন দিলেন না তাই ভাবছিলাম……”
রেজোয়ান আবারো আবির কে শুনিয়ে বললেন ” কি , কি বললে? আবিরের সাথে কথা বলবে…..?”
রাই অবাক ও কখন এটা বললো?
ওদিকে আবির মুখ তুলেই হাত বাড়িয়ে দিল ফোনটা নেওয়ার জন্য। তখনি রেজোয়ান সাহেব বলে উঠলেন ” ওহ , কি বললে? আবির তোমাকে ফোন করেনি তাই রেগে আছো? আচ্ছা ”
আবির এর মুখ শুকিয়ে গেলো। হাতটা গুটিয়ে নিলো ও।
” আচ্ছা রাখি….”
” হ্যা হ্যালো….” রাই কে কিছু বলতেও দিলনা তার আগেই ফোন কেটে দিল রেজোয়ান সাহেব।
একদিকে আবির অন্যদিকে রাই। দুজনেই সমান আকারে হতাশ। দুজনেই ভাবলো একজন অন্যজনকে ফোন দিবে। কিন্তু ফোনটা আর হাতে নেওয়া হলো না।
” করবো না ফোন। মা কে ফোন করতে পারে , বউ কে পারে বা। মুখ পোড়া হূহ” বিড়বিড় করতে করতে রাই বিছানায় চলে গেলো।
আবির কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু প্রেয়সি আর বার্তা পাঠালো না বা যোগাযোগ ও করলো না। কি আর করার? নিজেও শুয়ে পড়লো।
পাশ ফিরতেই রাই এর মনে পড়ে গেলো আবিরের কথা, ” থাকলে এখন জড়িয়ে ধরতো…. আর ছাড়তে বললেও ছাড়ত না…..” ভেবে রাই আলতো হাতে বিছানায় হাত বুলায়।
ওদিকে আবির এর চোখের সামনে ভাসলো রাই এর হাতপা ছোড়াছুড়ি। যখনই কাছে টেনে নেবে তখনি দূরে যেতে চাইবে। আবির নিজের বুকের ওপরে একটা হাত রাখলো। নিজের হলদেটিয়া কে তো এখানেই রাখে প্রতি রাতে। জায়গাটা আজ শূন্য মনে হচ্ছে ।
দুরত্ব যদি সত্যিই এতো শক্তিশালী হতো তাহলে এতদূরে থেকে দুটো মন একই কথা ভাবতে পারতো না। কখনোই না।
____________________
পরদিন রাই ঘরে কাজ করছিল ঠিক এমন সময় নিশান ওর ঘরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিল। রাই ভেবেছে হয়তো সুমি এসেছে। তাই ও দরজার দিকে আর তাকালো না।
” সুমি, দেখেছো পানি এসেছে কিনা? এখনও তো রান্নাটা শেষ হয় নি। ”
তবে ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না। রাই হাতের কাপড়গুলো আলমারিতে রেখে ঘুরে তাকালো ” সুমি…..” কিন্তু সেখানে নিশান কে দেখে রাই ভরকে গেল। “তুমি?!”
নিশান আস্তে আস্তে রাই এর দিকে এগিয়ে এলো । রাই হাত উঠিয়ে ওকে থামিয়ে দিল ” দাড়াও….. এভাবে একজনের ঘরে ঢোকা বা দরজা লাগানো কোনোটাই কি তোমার কাছে সম্মান জনক নাকি? বের হও এখন থেকে”
” রাই!” অতিবিস্ময়ের সাথে নিশান বললো ” তুমি এভাবে বলছো?!”
” তোমার কি কোনো সন্দেহ আছে তাতে? ”
” রাই অন্তত আমাকে কিছু বলার সুযোগটা তো দাও”
রাই পিছিয়ে গেলো ” এগোবে না। আর তোমার কথা শুনবো? সিরিয়াসলি? শুনতেই তো চেয়েছিলাম, সুযোগটা তো দিয়েই ছিলাম। কই সেদিন তো কিছুই বললে না। উল্টো এমনভাব করে দাড়িয়ে ছিল যেনো তুমি আমাকে চেনোই না।”
নিশান এর কাছে এর জবাব নেই , এমনটা রাই এর ধারণা। কিন্তু নিশান প্রতিবাদী কণ্ঠ এগিয়ে এলো ” তুমি যেটা ভাবছো সেটা সম্পূর্ণ ভুল। সেদিন তোমার সামনে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল সবই আংশিক ছিলো। কিন্তু এর পুরোটা তোমার দেখা হয় নি। ”
” ওহ প্লিজ। দেখো সেদিন কি হয়েছে না হয়েছে তাতে আমার এখন কিছুই আসে যায়না। সুতরাং সে প্রসঙ্গ বাদ।”
” রাই…..”
” রাই না ভাবি…. ভুলে যেও না সম্পর্কে আমি তোমার বড়ো এখন। অতীত ভুলে চলতে শুরু করো। তখন আর এত কষ্ট থাকবেনা” বলে রাই চলে যেতে গেলো কিন্তু নিশান ওর হাতটা চেপে ধরলো
” রাই তুমি সবটা না জেনে যেতে পারোনা।”
” নিশান ছাড়ো….”
” রাই…..”
সজোরে ওর গালে চড় বসিয়ে দিল রাই। হাতটা থরথর করে কাপছে। চোখে একরাশ ঘৃণার প্রতিফলন , ঠোঁটে কঠোর বাণী
” বাংলা বোঝো না? আমি এখন তোমার সম্পর্কে বড়ো। তাই নিজের মনমতো আমাকে ডাকবে না। তোমার স্পর্শ আমি ঘৃণা করি। ঠিক এই স্পর্শটাই আজ আমার জীবনের এমন একটা মোড়ে এনে ফেলেছে। দ্বিতীয়বার এই স্পর্শ নিয়ে কি নরকে ঠাই করাতে চাও?”
নিশান এর চোখ লাল হয়ে এলো রাই এর দুবাহু চেপে ধরে খরখর গলায় বলল ” ঘৃণা! তাই না? কই বিয়ের আগ পর্যন্ত তো আমার স্পর্শে তোমার সমস্যা হতো না, এখন হটাৎ ঘৃণা কোথা থেকে এলো? সেদিন রাতেও তো…..”
” চুপ করো….. সেদিন রাতে কি হয়েছিল হ্যা কি হয়েছিল? লিট্রালি কিছুই হয় নি। আমার কাছে তুমি এসেছিলে আমি তোমাকে ডাকি নি। আর কিছু মিথ্যে আবেগী কথা বলেছিলে…… আর কি? ”
নিশান শয়তানি ভঙ্গিতে বলল ” হ্যাঁ কিছুই হয় নি । তো? তো কি? মানুষ তো জানেনা সেটা আমি ছিলাম। যদি জেনে যায় ? তখন তো আর তোমার কথা বা আমার কথায় কেউ কান দেবে না। তারা নিজেরাই বাকি সব মনগড়া কাহিনী গড়ে নিবে….. ঠিক যেমন মিহির ভাইয়ার বাবা করেছিল। হুহ। মূর্খ মানুষ।”
রাই নিজের হাত ছাড়িয়ে নিশান কে ধাক্কা দিলো ” হ্যাঁ মূর্খ ছিলেন উনি। কিছু না জেনেই এতকিছু করেছেন। তবে উনি যেটা দেখেছিলেন সেটা সত্যিই ছিলো । কিন্তু তাতে আমার এখন আর কিছু আসে যায়না। মানুষের বিশ্বাস দিয়ে আমার আর কাজ নেই। যার বিশ্বাস করার সে যদি আমাকে বিশ্বাস করে এতদূর নিয়ে আসতে পারে , বাকি জীবনটা ও পারবে…….”
নিশান অগ্নিদৃষ্টি তে তাকালো , “অহংকার! বাহ …. তা ভাই তো দেখছি ভালই জাদু জানে। কিন্তু যদি ওর এই বিশ্বাসে ফাটল ধরে যায়?”
রাই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো ” সম্ভব তোমার মত তোমার ভাই ও যদি স্বার্থপর হয় তাহলে সবই সম্ভব। কিন্তু কি জানো তো? এখনও এমন লক্ষণ আমি তার মধ্যে পাইনি। ”
” কতটা সহজে বলে দিলে এতটাও সহজ না। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে গিয়ে ওকেই জিজ্ঞেস করো সেদিন ও কেনো এসেছিল তোমাদের বাড়িতে । আর আমিই বা কেনো সেদিন জবাব দিতে পারিনি । ও নিজেই সব বলে দিবে। আর যদি না বলে ( রাই কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে) তাহলে বুঝে নিও তোমার অহংকার আর থাকলো না”
বলে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিশান।
রাই মুখ চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লো।চোখ দুটো বন্ধ করতেই গড়িয়ে পড়তে লাগলো লোনাপানি। সাথে সাথে ভেসে এলো মাগরিবের আযানের ধ্বনি।
” আল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার”
“ভুল করেছিলাম। এক মুহূর্তের আবেগের জন্য নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা শুধুই একটা ভুল ছিল। আর কিছুনা। সবসময় কেনো মেয়ে বলে আমার দিকেই আঙ্গুল তোলা হবে? কেনো? আমি কতটুকু ভুল করেছি? “.
কষ্টে গলা আটকে আসছে।
” কই নিশান কে তো এতকিছু সহ্য করতে হলো না। তাহলে শুধু আমিই কেনো? হ্যাঁ , সুরাইয়াই ঠিক বলেছিলো । ঠিক ছিল ওর কথা। ঠিক। ” কাঁদতে কাঁদতে হাটুতে মুখ গুজে নিলো রাই।
তখনি রাই এর ফোনটা বেজে উঠলো। ধীরে ধীরে হাঁটু থেকে মুখ তুলে খাটের উপর থেকে ফোনটা হতে নিলো। চোখের পানিতে একাকার দৃষ্টি। কে ফোন করেছে দেখেও নি রাই।
” হ্যা হ্যালো…..”
বুকটা কেঁপে উঠলো আবিরেরর “রাই…. কি হয়েছে? কাঁদছ কেনো?”
রাই হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরলো “না….. ( নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করে) কিছু হয় নি।”
আবিরের চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো “কি হয়েছে সেটা বলো? কেউ কিছু বলেছে?”
” উহু…..” রাই কথাও বলতে পারছে না।
” রাই……. মিথ্যে বলবে না। কি লুকাচ্ছো?”আবিরের বিষয়টা একদমই সুবিধের মনে হচ্ছেনা। রাই এখন কেনো কান্না করবে? হয় ওকে কেউ কিছু বলেছে নয়তো অন্য বিষয়।
” কিছুনা ( ক্ষীণ কণ্ঠে) আপনি … আপনি ঠিক আছেন?”
” রাই…..” আবিরের কথা শেষ হবে তার আগেই রেজোয়ান সাহেব ফোনটা নিয়ে নিলেন ” আরে মা। কি খবর তোমার? সব ঠিকঠাক? কি করছো….?”
রাই এর পক্ষে আর কথা বলা কোনোমতেই সম্ভব ছিলনা। ও ফোনটা কেটে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
” হ্যালো হ্যালো রাই…. কি হলো বলতো?” রেজোয়ান সাহেব ফোনটা ছেলেকে দিলেন ।
আবিরের মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। নিশ্চই কিছু হয়েছে। নয়তো সারাদিন খবর না নেওয়ার পর এখন ফোন করায় রাই এর রেগে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ও তো …….. কি হতে পারে ?
________________
রাতে রাই শুয়ে আছে বিছানায়। যদিও চোখে ঘুম নেই মন চাচ্ছে ছুটে মায়ের কোলে গিয়ে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাই। কিন্তু সেটাও সম্ভব না। সন্ধ্যার পরে আর আবিরকে ফোন দেইনি সে। তবে মনে চাচ্ছিলো ফোন দিয়ে কথা বলতে। কিন্তু আবির হয়তো কাজে ব্যস্ত।
এদিকে আবির মাত্রই কাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। তবে মনে আসলো রাই কে একবার ফোন দিতে। দেবে কিনা সেটাই বিষয়। দেওয়া উচিত। জানতে তো হবে ওর কি হয়েছে? যেই ভাবা সেই কাজ । ফোনটা হাতে নিয়ে কল করবে ওমন সময় বাবার গলা
” আবির…. এই আবির । দরজা খোল”
আবির বেশ চটে গেলো ।খাট থেকে নেমে লম্বা কদম ফেলে দরজা টার কাছে গিয়ে দাড়ালো। কিন্তু বাবা এখনও ডেকেই যাচ্ছে। দরজাটা খুলে সোজা বাবার ওপর হামলা
” চেচামেচি করে কি হোটেলে লোক জড়ো করতে চাও নাকি? কি হয়েছে?”
রেজোয়ান সাহেব ভ্যাবলা হেসে ঘরে ঢুকে গেলেন ” কি করছিলি?”
আবির দরজা লাগিয়ে দিল “শুয়ে ছিলাম”
” ওহ। পড়ে পড়ে ঘুমাতেই এসেছ মনে হচ্ছে? ”
” আরে…. ”
” থাক আর বলতে হবেনা। নাও এই ফাইলগুলো চেক করো । আর বলো ঠিকাছে কিনা?” বলে উনি বিছানায় বসে পড়লেন। আবির আর কথা বাড়ালো না। হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে চেক করতে লাগলো।
এদিকে রেজোয়ান সাহেব এর পাশেই আবিরের ফোনটা পড়ে ছিল। উনি ফোনটা জাস্ট আড়াল করে পকেটে ঢুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বসে রইলেন। যেনো কিছুই হয় নি।
আবির ফাইল দেখতে দেখতে বললো ” বাসায় ফোন করেছিলে?”
” কেনো বলো তো?”
বাবার এমন বোকা কথায় আবির হা করে তাকালো ” এর জন্য কারণ লাগবে তোমার?”
রেজোয়ান সাহেব আমতা আমতা করে বললেন ” না,,,, সেটা না। তবে …. কারণ ছাড়া শুধু শুধু তোমার মায়ের বকবকানি শুনে কি করবো? তাই আর ফোন করিনি। তা তুই রাই কে ফোন করেছিলি?”
” নাহ” আবির যেনো কথাটা এড়িয়েই যাচ্ছে। বাবা আবারো বললেন ” কেনো? করবি না? ফোন করে বল কি করছিস ও খেয়েছে কিনা ”
” সময় হলে করবো … আর হ্যাঁ ফাইল ঠিকাছে আর তোমার……”
আবিরেরকথা ফুরোবে তার অপেক্ষাও করলেননা রেজোয়ান সাহেব সোজা উঠে দাড়ালেন ” ঠিকাছে হ্যাঁ তাহলে ওকে বেটা গুড নাইট । ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও…..” বলতে বলতে আবিরের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে রেজোয়ান সাহেব বেরিয়ে গেলেন।
এদিকে বাবার এমন অদ্ভুত ব্যবহারে আবির বেশ অবাক ।
রেজোয়ান সাহেব বেরিয়ে নিজের রুমে এসে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন “বাছাধন। ফোন করবেনা বলছো? তাহলে তো আর ফোনের দরকার নেই। আমার কাছেই নাহয় থাক ফোনটা আজ রাত”
_______________
আজ শুক্রবার।
বাড়িতে মোটামুটি সবাই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছে। রাই শুধু শুনছে। সবাই প্ল্যান করলো ধানমন্ডি লেকে যাবে। একটু হাটাহাটি করে , সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্ট থেকে খেঁয়ে তারপর বাসায় আসবে। যথারীতি সবাই বলাবলি করছে। ফুপি জিজ্ঞেস করলো
” রাই যাও তাহলে রেডি হও।”
সুমি বললো ” ভাবি কি পরবে আজ?”
” আমি, আসলে আমি ভাবছিলাম”
” হ্যা বলো” ফুপি এগিয়ে এলেন
রাই মাথা নিচু করে নিলো ” ফুপি । আসলে অনেকদিন বাবা মা কে দেখা হয়না। তাই যদি একটু ঘুরে আসতাম বাসা থেকে”
” ওমা , সেটা আবার বলতে হবে নাকি। যাবে তো। এমনিও তো যেতেই হবে। কিন্তু যেহেতু আবির নেই তাই একা আর যেতে হবেনা। আবির আসলে দুজন একসাথে ঘুরে এসো কেমন?”
রাই খুশি হয়ে মাথা নাড়লো।
” তো এখন যাও রেডি হয়ে নাও , ”
” ফুপি আমার যেতে মন চাইছে না”
” থাক না ফুপি যেতে চাচ্ছে না তো জোর কেনো করছো?” বললো নীলা।
” চুপ কর ( নীলাকে থামিয়ে) কেনো যাবেনা? সবাই যাচ্ছে তুমিও যাবে। যাও তৈরি হয়ে নাও” ফুপি বললেন
” মানুষের কত ভীমরতি” আবিরের মা বললেন।
রাই আর কথা বাড়ালো না ” ওকে”
__________
এদিকে রেজোয়ান সাহেব ছেলের ঘরে ঢুকে চমকে গেলেন ” একি অবস্থা তোর!”
উস্কোখুস্কো চুল , চোখ লাল হয়ে গেছে যেনো কতরাত ঘুমোয়নি, চিন্তিত মুখ, পুরো ঘর ওলোট পালোট, ছেলের এই অবস্থায় রেজোয়ান সাহেব তো অবাক। আবির মুখ চোখ ঘুচিয়ে রেখেছে ।
‘” কি হয়েছে আবির?”
আবির শুষ্ক গলায় বলল ” কিছুনা। গতরাত থেকেই আমার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছিনা। সারারাত খুঁজেও আমি কত্থাও পেলাম না। উফফ। মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে”
জনাব রেজোয়ান বুঝলেন তারই কারসাজির ফল ” খোজ । দ্যাখ দ্যাখ কোথাও হবে। ”
” কোত্থাও নেই। সব জায়গায় খুঁজেছি। নেই। নেই তো নেই” বলে রেগে বিছানার একটা বালিশ ফ্লোরে ছুড়ে ফেললো আবির। রেজোয়ান সাহেব এখন ভাবছেন কিভাবে ফোনটা রাখবে। ছেলে তো পর্দার একটু কোণ ও বাদ রাখেনি।
রেজোয়ান সাহেব পুরো ঘর জুড়ে হাঁটছেন, আর চিন্তা করছেন ফোনটা কোথায় রাখা যাবে?
” আবির”
আবির বাবার দিকে তাকালো ।
” তুই খাটের তশক উঠিয়ে দেখেছিস?”
আবির অবাক। মাথা নাড়লো।
” আরে তো ঐটাই দেখ। ওঠ ওঠ” রেজোয়ান সাহেব হাফ ছাড়লেন।
ছেলেকে উঠিয়ে এমন ভঙ্গি করলেন যেনো উনি সত্যি সত্যিই খুঁজছেন। অবশেষে তশকের তলা থেকে ফোনটা বের করে রীতিমত বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠলেন ” পেয়েছি এইতো পেয়েছি।”
আবির হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গেলো ” থ্যাংক গড”
” খুঁজলেই পেয়ে যেতে. হাহাহাহা”
কিন্তু বাবার আগমনে ফোনের এমন উদয় , আবিরের তো খটকা লাগছে। সন্দিহান চোখে বাবার দিকে তাকালো।
রেজোয়ান সাহেব একটু বোকা বোকা হাসি দিলেন ” বুঝলো নাকি!” ভেবে উনি তাড়াহুড়ো করে উঠলেন ” চল চল, মিটিং আছে চল। কি তুই একটা ফোন নিয়ে এতকিছু ধুর” বলতে বলতে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আবির বাবার যাওয়ার পানে একবার, আর ফোনের দিকে একবার তাকাল।
________________
সারাদিন ভালোই ঘোরাঘুরি করেছে সবাই। তবে রাই নিশানের থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব রেখেই চলেছে।
শেষে সবাই একটা রেস্টুরেন্টে এলো।
খাবার খাওয়ার সময় নীলা চালাকি করে সবার ছবি তোলার ছলে নিশান আর রাই এর ছবি তুলে নিলো। যদিও তারা আলাদাই বসেছে কিন্তু নীলার অ্যাঙ্গেল থেকে তাকালে দুজনকে পাশাপাশিই মনে হয়। সেই সুযোগে নীলার এমন শয়তানি বুদ্ধি।
পরদিন আবিরের কাছে খবরটা প্রথমে এলো যে ওরা যে ডিলের জন্য এখানে এসেছিল সেই ডিলাররা ডিল ক্যানসেল করে নিয়েছে। আবির গেলো তার বাবার রুমে ” বাবা….”
রেজোয়ান সাহেব সিরিয়াস একটা মুখ করে বললেন ” আবির, কাজের চাপ দেখে মনে হচ্ছে এ সপ্তাহে আর ফেরা হচ্ছেনা। ”
” কিন্তু ডিল তো ক্যানসেল হয়ে গেছে”
” হ্যা তো …….( আনমনেই বলছিলেন তখনি মাথায় এলো ) কিহ্হ ডি ডিল ক্যানসেল মানে কি? কে কে বললো?”
” হ্যাঁ মাত্রই তাদের কাছ থেকে খবর এসেছে…..( আবির সন্দিহান চোখে তাকিয়ে) তো এখন তো ডিল ক্যানসেল। তাহলে ফেরা যাক বাড়িতে?”
” ফিরবো! ( হতাশ কণ্ঠে) ”
আবির সত্যি এবার খুবই অবাক। বাবার এমন ভঙ্গিমা যেনো ওর সন্দেহই বাড়াচ্ছে আর কিছুনা।
“কেনো? এখানে সেটেল হওয়ার প্ল্যান আছে নাকি?”
রেজোয়ান সাহেব অসহায় গলায় বললেন ” সে সখ আর পূরণ হলো। তোমার মায়ের কৃপায় সেটা আর সম্ভব না”
আবির বাকা চোখে তাকালো “আমি টিকিট বুক করছি। রেডি হও” বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ।
রেজোয়ান সাহেবের মাথায় হাত ” কোথায় ভাবলাম একটু সবক শেখাবো তা তো হলোই না উল্টো ডিল টাও ক্যানসেল……”
চলবে…………….??