#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_11
পরদিন রাই কে ফেরত দিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিহির তার বাবাকে কিছুটা বুঝিয়ে সুঝিয়ে সময়টা আরো তিনদিন বাড়িয়ে নিলো।
“বাবা , রাই আমাদের মেহমান। যতই হোক একটা নির্দিষ্ট সময় এর আগে নিজেরাই ওকে দিয়ে আসলে আমাদের সম্মান কোথায় থাকবে? ব্যাপারটা তো বোঝোই?”
বলে মিহির ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ওর বাবা যদিও মেয়েটাকে দেখতে পারেন না। তবুও কোনো অযথা কাজ করতে ইচ্ছুক নন।
বেড়ে গেলো আরো তিনটে দিন। রাই থাকছে।
“সুরাইয়া শোনো…….”
সুরাইয়া এগিয়ে গেলো স্বামীর কথা শুনতে ” হ্যাঁ বলেন”
মিহির এর চোখ মুখ কুচকে এলো । সুরাইয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের পায়ের উপর বসিয়ে ওর দিকে তাকালো ” সবসময় আপনি করে কেনো বলো? আমি কি অপরিচিত কেউ নাকি?”
” আরে , কি করছেন কি? কেউ আসলে তো দেখে ফেলবে”
” দেখুক…..( সুরাইয়ার মুখের সামনের চুলগুলো পেছনে সরিয়ে) দেখলে কি? বউ কে ধরে রেখেছি বাইরের কাওকে না। পার্মানেন্ট লাইসেন্স আছে”
সুরাইয়া হেসে উঠলো ” আমি কি কোনো যন্ত্রপাতি নাকি? লাইসেন্স আছে”
” রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করা কি মনে করো?” মুখটা ওর দিকে এগোতে গেলেই সুরাইয়া আটকে দিল ” ওয়েইট , কিছু একটা বলছিলেন সেটা বলেন”
” উহু,,,, তুমি করে বললে বলবো” মিহির ওর গলায় মুখ গুজল । সুরাইয়া লজ্জায় শেষ ” আচ্ছা, আচ্ছা তো…. বলো কি বলতে”
মিহির মুচকি হেসে উঠলো ” হুম, আমার রাতে ফিরতে দেরি হবে। একটা কাজে যাচ্ছি। তো সবকিছু সামলে নেবে তো?”
” এমনভাবে বলছেন ( মিহির চোখ গরম করে তাকালো ) মানে বলছো যেনো এই পুরো বাড়িতে আমি একা। ”
” উম, না সেটা অবশ্য না। আসলে….”
ওকে ইতস্তত করতে দেখে সুরাইয়া জিজ্ঞেস করলো ” কিছু কি বলবে? বলো না”
মিহির কিছুটা ভেবে সুরাইয়ার এক হাতের আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙ্গুল গুজে দিলো ” দেখো। বিষয়টাকে তুমি বেশি কিছু ভেবো না। আমি চাচ্ছিলাম তুমি একটু রাই কে দেখে রাখো। ”
সুরাইয়ার মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো ” আ….”
” দেখো রাগ করো না। তবে আমি ওর ভালোর জন্যই ভাবছি। তুমি একটু দেখো ও যেনো নিশান এর সাথে বেশি না মেলামেশা করে। বোঝই তো”
সুরাইয়ার খারাপ লাগলেও ও মাথা নেড়ে বললো ” হুম। জানি…. তুমি ঠিকই বলছো…… আমি…..”
মিহির জানে যে নিজের বোন সম্পর্কে এসব শুনতে নিশ্চই কেউ আগ্রহী না। ” দেখো। আমি কথাগুলো রাই কে উদ্দেশ্য করে বলছি না। নিশান আবির এরা আমার ভাই। অনেক আগে থেকে এদের চিনি। কে কতটুকু ভালো সেটাও বুঝি। আর অবশ্যই নিশান এমন কোনো মহাপুরুষ না যার সাথে সারাক্ষণ দুষ্টুমি আড্ডা করতেই হবে। ওর সাথে রাই যেনো কম মিশে”
সুরাইয়া মুচকি হেসে মিহিরের গালে হাত রাখলো ” হুম, আমি বুঝি। তুমি খারাপটা চাও না। আমি দেখবো ওকে চিন্তা করো না”
প্রিয়জনের এতটুকু আশ্বাসই যথেষ্ট হয় বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য।
মিহির জড়িয়ে নিলো তার প্রিয়তমা কে……….
_____________
প্রায় পুরোটা রাত রাই এর ঘুম হয় নি। ওর মাথায় সব জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে। এদিকে নিশানের সাথেও ও কিছুটা খারাপ ব্যবহারই করে ফেলেছে। কিন্তু সেদিন আবির না থাকলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। ডুবে যাওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত যতই বাকা কথা বলুক , আবির যে ওকে ছেড়ে যায়নি এটাই অনেক।
” ও তো এমনই ঘাড় ত্যাড়া। তবে তাও তো কোনদিকে সাহায্যের কমতি রাখেনি। চাইলে তো আমাকে জঙ্গলে ও ফেলে আসতেই পারতো। বা রাতে তো আমি ছিলাম ই ওর কাছে …..ও” চোখ বুঝে নিল রাই। কতই ও ভাবতে চাইছে না ততই যেনো ওর মাথায় সেদিনের কথাই বারবার এসে হাজির হচ্ছে।
“না না। আমি ভাববো না। ধুর। ( কিছু একটা ওর মাথায় এলো ) আচ্ছা গিয়ে একবার দেখি নিশান কি করছে” বলে রাই উঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে।
এদিকে আবির এর চোখেও তেমন ঘুম ছিলোনা। সারারাতই ও কিছু গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলো। কি সে চিন্তা তা বোঝার উপায় নেই। চাপা স্বভাবের মানুষ। তার ওপরে খুব চিন্তুক ধরনের।সবকিছুই খুব সুক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।
আবিরের চোখে ভেসে উঠলো রাই এর সেই কাঁপা কাঁপা ঠোঁট, সকালের সেই ভয়ার্ত মুখ, আর ওর স্পর্শ। যেটা না চাইতেও আবিরের মস্তিষ্কে একটা প্রভাব ফেলছেই।
সেদিন সকালে রাই এর অভাবে জড়িয়ে ধরা ” কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি? আমি কত্ত ভয় পেয়ে গেছিলাম” সত্যিই কথাটায় এতো আতঙ্ক লুকিয়ে ছিল বলার বাহিরে। মেয়েটা সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু………..
আবির নিজের মাথাটা দুহাতে চেপে ধরলো ।
” নাহ, ওকে বিশ্বাস করা যাবেনা। কোনোভাবে যদি নিশান …. নাহ…..”
আবিরের মাথায় চিনচিনে ব্যথার উদয় হলো। হাতের সামনে একটা খালি গ্লাস ছিলো। আবির রাগের বশে গ্লাসটা ধরে সজোরে ফেলে দিল সামনে।
ওদিকে রাই মাত্রই আবিরের ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল নিশানের ঘরে তখনি কাঁচ ভাঙার শব্দে ও চমকে উঠলো। ” কিহলো!” রাই দরজাটা হালকা খুলে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলো। তাকিয়ে দেখে ভেতরে আবির খাটের ওপরে মাথা চেপে বসে আছে। আর দরজার সামনে নিচে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে আছে।
” হটাৎ কি হলো!” ভাবছে রাই ” ভেতরে যাবো?” দরজা খুলতে গেলেই রাই থেমে গেলো।
” নাহ এভাবে যাওয়া উচিত না। ” ভেবে রাই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ভেতরে আবির কেমন যেনো ছটফট করছে। কিন্তু কেনো ?
ভেতরে আবিরের মাথায় দুটো বিষয়ে একপ্রকার যুদ্ধ চলছে। যেমন নিজেকে দমাতে পারছে না, ঠিক তেমনই নিজেকে এগোতে ও পারছেনা। আবির একটা বালিশ নিয়ে সামনে ছুড়ে ফেলতে গেলো কিন্তু বালিশটা গিয়ে ওর নিজের পায়েই লাগলো। যে পায়ে ব্যথা ছিল। ” আহহহহ” আবির ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো।
রাই এর চোখে ভেসে উঠলো গতকালের কথা। যখন আবির রাই কে ধরে একটা ঢাল থেকে উঠাচ্ছিল তখনি মাটির একটা বড়ো শুকনো চাকা এসে আবিরের পায়ের ওপরে পড়ে যায়। আর তখনই আবির মারাত্মকভাবে ব্যাথা পায়।
দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠতেই রাই দরজা খুলে ফেললো। আর কাঁচগুলো ফাঁকে ফাঁকে পা ফেলে ভেতরে ঢুকে গেলো
” কি করছেন এগুলো! আপনার পায়ে তো ব্যাথা” বলে ও আবিরের পায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো।
হটাৎ রাই এর আগমনে আবির থ মেরে তাকিয়ে রইলো। কিছু একটা দেখছে ও রাই এর মাঝে।
রাই পা থেকে বালিশটা সরিয়ে নিয়ে পাশে রাখলো।
” বেশি ব্যাথা করছে নাকি?”
আবির নিশ্চুপ।
রাই ওর পা দেখে যাচ্ছে। পা প্রায় কালসিটে হয়ে গেছে। সত্যিই ছেলেটা অনেক ব্যাথা পেয়েছে।
” এখন থেকে যাও। ”
রাই অবাক চোখে তাকালো ” হুম?”
” এখন থেকে বের হও” কঠোর গলায়
” আপনি…..”
” বের হও……………” আবিরের এমন রাগান্বিত কণ্ঠের সাথে পরিচিত হলেও আজ রাই এর মনে হচ্ছে আবির রাই কে খুব ঘৃণার সহিত বলছে একথা। রাই আর কিছু বলল না। আস্তে করে উঠে দাড়ালো।
আবির স্থির দৃষ্টিতে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে।
রাই আর কিছু বলল না বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
বাহিরে নিশান ও মাত্রই রুম থেকে বের হয়েছে তখনি আবিরের ঘর থেকে রাই কে বের হতে দেখে ও থেমে গেলো ” রাই….” কিন্তু রাই ওদিকে মনোযোগ দিলনা সোজা নিশানকে ইগনোর করে ওর পাশ দিয়ে চলে গেলো।
ঘটনাক্রমে নিশান এবার বেশ অবাক সাথে বিরক্ত ও হলো। কি এমন হলো যে রাই আবিরের ঘরে গেলো! নিশান নিজেই আবিরের ঘরের দিকে গিয়ে দেখে দরজার সামনে গ্লাসের ভাঙ্গা টুকরো। ওদিকে আবির বসে আছে। নিশান কিছুর তোয়াক্কা করলো না , ঘরে ঢুকে গেলো ও
” রাই কেনো এসেছিল এখানে?”
আবির ওর দিকে তাকালো না। এতে যেনো নিশান আরো কিছুটা রেগে গেলো ” আমি কিছু জিগ্গেস করছি”
” তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই” সোজা উত্তর।
” তুই বাধ্য….. রাই কেনো এসেছিল?”
” যে এসেছিল তাকেই জিজ্ঞেস কর”
” তুই এখন বেশি করছিস ভাইয়া”
” তো দাড়িয়ে কেনো আছিস? যা এখান থেকে…..” আবিরের মুখ শক্ত হয়ে এলো।
নিশান কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। মুখ ঘুরিয়ে নিশান ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
_________
রাই সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো। সুরাইয়া র শাশুড়ি ও ওখানেই ছিলেন। রাই নিজেকে স্বাভাবিক করেই ভেতরে গেলো।
” আরে রাই। কিছু লাগবে তোমার মা? ” ভদ্রমহিলা বললেন।
” না না আণ্টি এমনিতেই এলাম,” বলে রাই সুরাইয়ার সাথে গিয়ে দাড়ালো। কিছুক্ষন উনি সুরাইয়া কে কাজ বুঝিয়ে দিলেন তারপর রান্নাঘর থেকে চলে গেলেন। সুরাইয়া লক্ষ্য করলো রাই এর চেহারায় কোনো হাসি নেই। কেমন একটা গুমুট ভাব।
” কিরে কি হয়েছে ?”
রাই মাথা ঝাঁকাল ” কিছুনা”
তবুও কেমন যেনো। সুরাইয়া বেশ খানিকক্ষণ খেয়াল করলো ব্যাপারটা। তারপর হাতের কাজ রেখে রাই কে ধরে নিজের সামনে দাড় করলো
” শোন রাই ( সে তাকালো) তোকে কিছু কথা বলতে চাই”
” হ্যা বল”
” দ্যাখ কিছু জিনিস এমন থাকে যেগুলো আকার ইঙ্গিতেই বুঝে নেওয়া ভালো। তো আমার কথা ভালো করে শোন”
রাই একটু চিন্তায় পড়ে গেল। ও কি এমন বলবে?সুরাইয়া মনে মনে সমস্ত কথা গুছিয়ে নিলো।
” দ্যাখ , মানুষকে বাহির থেকে দেখে কখনোই বোঝা সম্ভব না সে কেমন। কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত আগে সেই মানুষটাকে সম্পূর্ণ জেনে নেওয়া তারপর গিয়ে তার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব বা যাই বলি সম্পর্কে যাওয়া। প্রত্যেক হাসির পেছনে যেমন কষ্ট লুকোনো সম্ভব, তেমনি প্রত্যেক সুন্দরের মাঝে কুৎসিত ও লুকিয়ে থাকতে পারে।
কোনোকিছু তোর ভালো লাগলো আর হুট করেই তুই সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলি বিষয়টা কেমন?”
এতক্ষণ সুরাইয়া যা যা বললো এর এক ইঞ্চিও যদি রাই এর মাথায় ঢোকে ” তুই কি বলতে চাচ্ছিস ? একটু খুলে বলবি?”
সুরাইয়া ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেললো ” আচ্ছা । দেখ তোর আর নিশানের মেলামেশা কিন্তু চক্ষুকটু ধরনের। তোর কি মনে হয় না একটা অপরিচিত যতই আমার দেবর হোক সে তো তোর কাছে অপরিচিত। সেক্ষেত্রে ওর সাথে কোন কথা বলা। কিছুটা দুরত্ব বোজিয়ে রাখা?”
রাই এর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। মুহূর্তেই যেনো মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো ” কে কেনো বলছিস এটা?”
” কেনো বলছি সেটা তো তুই জানিস ই । আলাদা করে আর বলতে চাই না। তবে, নিশান কে যতটা ভালো দেখা যাচ্ছে , আসলে কিন্তু ও এতটাও সুবিধার না। আমি তো এবাড়ির বউ। আমি জানি কোন মানুষটা কেমন। ”
রাই আমতা আমতা করে বলল ” কেমন কেমন ভালো না ও?”
সুরাইয়া ওর মাথায় হাত রাখলো ” সেটা জেনে তোর কাজ নেই। আর এমনিতেও তোর কাজ তুই ওর থেকে দূরে থাকবি ব্যাস।”
রাই ওর কথায় মাথা নাড়লো। কিন্তু মুখে একটা চিন্তার রেখা রয়েই গেছে।
” প্রেম ভালোবাসা এসবে কখনো কোনো বাঁধা নেই আমাদের জীবনে। কিন্তু বিষয়টা গিয়ে দাড়ায় সঠিক জীবনসাথী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে। আবেগ এক জিনিস আর ভালোবাসা আরেক। আবেগ কে ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেওয়া মানে নিজেকে নিজেই ঠকানো। সাথে আরো একটা জীবন নষ্ট করা।
আবেগী মানুষ মুহূর্তেই একটা মোহে পড়ে যায় যে সে হইতো প্রেমে পড়েছে। অন্যদিকে ভালোবাসায় মানুষ কখনো বুঝতেই পারেনা সে ভালোবেসে ফেলেছে। মানুষের ব্যবহার দেখেই সহজেই বোঝা যায় ও ভালোবাসে নাকি শুধু ছুঁচকো একটা ধারণা নিয়ে বসে আছে। তাই নিজেকেই সাবধান হতে হয়।” বলে সারাইয়া ঘুরে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।
রাই এর মাথায় টাস করে উঠলো। ও তো ঠিক কথাই বলছে। “ভুল তো কিছু বলেনি। কিন্তু ও কি কোনোভাবে আমার কথা জেনে গেছে! ” ভাবতে ভাবতে রাই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
সুরাইয়া পেছনে তাকিয়ে রইলো।
______________
সেদিনের মত আর সারাদিনেও রাই নিশানের সাথে কোনপ্রকার কথা বলেনি। কেননা রাই এর মনে কেমন একটা সন্দেহ বাসা বেঁধে নিলো যে আসলেই কি ও নিশানকে হ্যাঁ বলে ভুল করেছে? ও কি একটু তাড়াতাড়িই বলে ফেলেছে কথাটা। যদিও দুদিনের পরিচয়ে ভালোলাগাকে রাই ভালোবাসা বলে চালিয়ে দিলেও বাস্তবে তো এত সহজ না ।
নিশান বারংবার চেষ্টা করেছে রাই এর সাথে কথা বলার। কিন্তু রাই সেই সুযোগটা দেয় নি। রাতে মিহির প্রায় ১০ টটার দিকে ফিরলো। তখন সুরাইয়া আবিরকে খাবার দিতে গিয়েছিল। পাশে রেজোয়ান সাহেব ও বসে। উনি একটু আগেই এলেন এবাড়ি। মিহির ফিরেই আবিরের ঘরে চলে গেল। ওদিকে রাই বসে টিভি দেখছিল।
রেজোয়ান সাহেব ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন ” তা পায়ে এমন আঘাত কিভাবে পেলি?”
আবির কিছু বলবে তার আগেই মিহির বলে ওঠে ” কিছুনা আঙ্কেল।ওই সিড়িতে নামতে গিয়ে…..”
আবির চেয়ে রইলো ” এটা কোনো উত্তর ছিল!” মনে মনে ভাবছে। এদিকে সুরাইয়া মিহিরকে খোঁচা দিল ” এই বয়সে আবার সিড়ি থেকে নামতে গিয়ে এমন হয় নাকি!? কি বলো এসব?”
রেজোয়ান সাহেব হেসে উঠলেন ” হবেই তো, সারাদিন ওই ফোনের মধ্যে ঢুকে কাজ করতে থাকলে তো এটাই হবে। ” বলে উনি হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন। যাক ব্যাপারটা জানলে উনি কষ্ট পেতে পারেন তাই মিহির বললো না।
একে একে দুদিন এভাবেই হাসি ঠাট্টায় চলে গেলো। তবে রাই এখনও নিশান এর সাথে বেশি একটা কথা বলেনি। যাও বলেছে তাও খুব অল্প। কিন্তু রাই আবিরকে পর্যবেক্ষণ করেছে। ছেলেটা প্রায় পুরোটা দিনই ফোন নিতেই থাকে , নয়তো বাবার কাজে সাহায্য করবে, নয়ত চুপচাপ থাকবে। অযথা বকবক করা ওর স্বভাবে নেই। রাই যদিও আবির কে অপছন্দই করে , তবুও আবিরের সোজা সাপটা কথা বলার স্বভাবের জন্য ওকে ভালোই লাগে। তবে বেশি ভালো লাগে রেজোয়ান আঙ্কেল কে। লোকটি বেশ মজার মানুষ। যেমন মিশুক তেমন নরম মনের। দেখে মনেই হবেনা যে ওনার মত মানুষের ছেলে আবির।
যাইহোক
অবশেষে দিন এলো রাই আর দাদীর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার। সাথে রেজোয়ান সাহেব ,মিহির ওর বাবা আর নিশান ও যাচ্ছে। রেজোয়ান সাহেব যাচ্ছেন বেড়ানোর জন্য। মিশুক মানুষ, হওয়া বদল করতে বেশি পছন্দ করেন। আর নিশানের কথা নাই বলি।
কিন্তু মিহিরের ভয় অন্যদিকে। ওর বাবা কেনো যাচ্ছে সেটা আঁচ করতে পারছেনা মিহির। কিন্তু বুঝতে পারছে যে ওর বাবা রাই কে একটু ও পছন্দ করেনা।
বিদায়ের বেলায় সবার থেকেই বিদায় নিল রাই। শুধু একজনই বাদ ছিলো।
কথার ফাঁকে সুরাইয়া বললেন” আবির ভাই কে বলবি না? যা বলে আয়”
রাই মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।
ভেতরে আবির ফোন কিছু কাজ করছে আর হাতে কিছু কাগজ। রাই আস্তে করে ভেতরে গেলো আর একটু গলা ঝেড়ে নিলো।
আবির এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল। তবে বুঝতে পারলো রাই এসেছে। তাই ও উপরে তাকালোনা।
” কি মানুষ। মুখ পোড়া কোথাকার” কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কিভাবে শুরু করবে? ভেবে রাই নরম স্বরে বলল
” আমি আর দাদু এখন চলে যাচ্ছি। ”
আবিরের হেলদোল নেই। রাই বিরক্ত হলো। আবার অপমান বোধ ও করলো। ” তো এজন্য বিদায় জানাতে এসেছিলাম……”
আবির এবার ফোনটা রেখে রাই এর দিকে তাকালো , ” তো এরপর আর দেখা হচ্ছেনা?”
রাই মাথা নাড়লো ” না। এরপর আমরা ঢাকায় চলে যাবো। তো আর্কবে দেখা হবে বলা যায়না”
আবির মাথা নামিয়ে আবারো ফোনটা হাতে নিলো “ঠিকাছে , বিয়েতে দাওয়াত দিও। ”
” কিহ……!” রাই এর বিরক্তির সীমা যেনো এখানেই শেষ হলো। এটা কেমন কথা,? চলে যাচ্ছি আর একটা বাই ও ঠিক মত বললো না। এমন কেনো এই লোকটা? রাই রেগে গেলো ” হ্যাঁ বিয়েতে দাওয়াত দিব , সাথে করে বিরিয়ানী নিয়ে আইসেন নিজের টা নিজেই খেয়ে জাইয়েন” বলে রাই হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
পেছনে আবিরের মুখে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
বাহিরে এসে রাই মুখ ফুলিয়ে নিলো। সুরাইয়া কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো তবে কিছু বললোনা। জানেই যে আবির নিশ্চই কিছু বাকা কথাই বলেছে। অবশেষে বিদায়ের বেলা।
গাড়িতে উঠে বসেছে সবাই।
এদিকে মিহির একটু আড়ালে গিয়ে সুরাইয়ার কপালে গভীরভাবে একটা চুমু একে দিল ” থাকো। আসি তবে”
রাই তাকিয়ে রইলো বাড়ির দিকে। কিসের আশায়!? হয়তো কোনো একজনের আশায়। যে অন্তত গেটের সামনে এসে দাড়াবে। কিন্তু বাস্তব আর কল্পনা দুটো খুব ভিন্ন।
তাই তেমন কিছুই হলো না।
গাড়ি স্টার্ট করে এর সর্বোচ্চ গতিতে চলতে শুরু করল। পেছনে রয়ে গেলো সেই মানুষগুলো।
চলবে❄️❄️❄️❄️