#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_10
” উল্লুক এর ঘরে উল্লুক । ভাললাগেনা ধুর” রাই এর কান্না চলে আসছে।
ওদিকে আবির কিছুকদম গিয়েই বুঝলো রাই ওর পাশে নেই। আবির ঘুরে তাকালো, রাই মাথা নিচু করে ভাবছে। আবির এবার ওকে পিঞ্চ করেই বললো ” তোমাকে বন্ধক নিবে, এমন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন মানুষ আছে বলে মনে হয় না। ”
রাই চমকে উঠে আবিরের দিকে তাকালো ।
” হুতুম পেঁচার ডাক শুনে মরতে চাইলে থাকো……..”
বলে আবির আবারো হাটতে শুরু করলো। রাই ভয় পেয়ে গেল। দৌড়ে আবিরের পিছু পিছু হাটতে শুরু করল। সন্ধ্যা প্রায় হতে চলেছে। রাতে একটা থাকার বেবস্থা করতে হবে।
‘” আমরা কোথায় যাচ্ছি? ” বাচ্চাদের মত করে বললো রাই।
“জানিনা” ছোট্ট করে বললো আবির।
” আরে জানিনা মানে! রাত হতে যাচ্ছে আমরা কি করবো এখন?”
রাই দৌড়ে আবিরের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
আবির এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো। তখনি রাই ওর সামনে এসে দাড়াতেই ও থেমে গিয়ে রাই এর দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে। জাম রাঙা থ্রিপিস , ভেজা চুল, কাঁপা কাঁপা ঠোঁট আর এই দিগন্ত বিস্তৃত গোধূলি আলোয় খুব অপূর্ব লাগছে রাই কে দেখতে।
আবির একদৃষ্টে ওর চোখের দিকে তাকালো। আবির ওর কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে সিক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
” কি করতে চাও? ”
রাই একটু লজ্জায় পড়ে গেলো। ও দ্রুত আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আবির ওকে ছেড়ে আশেপাশে তাকালো ” রাতে কোথাও থাকতে হবে…… ” বলে ও হাটতে শুরু করলো।
রাই এবারে কিছু বললো না, চুপচাপ ওর পেছনে পেছনে হাটতে লাগলো।
এমনিতেই জিম করা বডি , সাদা শার্ট আর ব্লু জিন্স পরে আছে আবির। তার ওপরে ভেজা শরীরে শার্টটা পুরো লেপ্টে আছে শরীরে, চোখ গেলেই আগে ওর জিম করা বডি টাই সবার চোখে পড়বে।
রাই বারবার লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
কিছুদূর হাঁটার পর রাই হাফিয়ে উঠলো। তার ওপরে ঠাণ্ডা বাতাস, শীতের পরিমাণ ও বেড়েই চলেছে।
” আর কতদূর!” রাই দাড়িয়ে পড়লো।
আবির ও দাড়িয়ে গেলো ” আর আপনি বলেন বাড়ি ফিরবেন? রাতে আর ফেরা যাবেনা যা মনে হচ্ছে”
রাই বলে উঠলো ” কেনো!?”
আবির যেনো প্রশ্ন শুনে বিরক্তই হলো ” তোমাকে এখনও ভ্যাম্পায়ারদের হতে ধরানো বাকি তাই” বলে আবির হাটতে লাগলো। এদিকে মাগরিবের আযান পড়ে গেছে। রাই এর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ” কি বলে কি এই ছেলে! আল্লাহ বাঁচাও”
রাই এই অন্ধকারে গিয়ে আবিরের ঠিক পেছনে দাড়িয়ে গেলো। আবির একটু আশপাশে তাকিয়ে একটা বাড়ির মতো দেখলো। আর রাই এর হাত ধরে বাড়িটার দিকে এগোতে লাগলো। একে তো অন্ধকার , তার উপরে ঝোপ ঝাড়, দুজনে কি রেখে কি ধরছে, গাছ না কাটা ঠিক জানেনা। এমন করতে করতেই ওরা বাড়িটার উঠানে এসে দাড়ালো । দুটো টিনের ঘর। ভেতর থেকে হারিকেনের আলো আসছে বোঝা যাচ্ছে । একটার দরজা খোলাই ছিল। আবির গিয়ে সেই দরজার সামনে দাড়ালো
” কেউ আছেন?”
” কে?”
” একটু সাহায্য লাগতো ….. কেউ কি একটু বাহিরে আসবেন…..”
ভেতরে বসে থাকা একটা বৃদ্ধ মহিলা হারিকেনটা হাতে নিয়ে বের হলেন ” কে রে? ”
আবির একটু হেসে উত্তর দিল ” দাদী, আমরা একটু বিপদে পড়েছি তাই একটু সাহায্য লাগতো”
ভেতর থেকে অন্য একটা ছেলের কণ্ঠ কানে এলো ” কে আইছে দাদী?”
ছেলেটা বেরিয়ে আসতেই আবির কে দেখে দাড়িয়ে পড়লো ” কে আপনি?”
আবির একটু মিয়িয়ে যাওয়া গলায় বললো ” আসলে আমরা একটু বিপদে পড়ে গেছি। দক্ষিণ পাড়া থাকি। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো ভ্যান পাবোনা আবার সন্ধ্যা ও হয়ে গেছে, হাতের ফোন টাকা কোনোটাই নেই। আজকে রাতে যদি একটু থাকতে দিতেন ,কাল ভোরেই চলে যাবো”
বৃদ্ধা বলে ওঠলেন ” না না , ওসব অপরিচিতদের থাকতে দেওয়া যাবেনা। যাও তোমরা অন্য কোনো জায়গায় যাও”
ছেলেটি বলল ” আচ্ছা দাদী দাড়াও আমি কথা কচ্ছি তো…. তো ভাই আপনারা কি বিপদে পড়ছেন ইকটু কলি ভালো হয় বোঝেনই তো”
আবির একপলক রাই এর দিকে তাকিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো ” হুম” একে একে সব ঘটনা বলার পর ছেলেটা একটু হইতো বিশ্বাস করলো। বৃদ্ধা তখনও মানতে নারাজ ।
বৃদ্ধা বললেন ” তোমরা কি জামাই বউ নাকি? তা না হইলে যাও , আমরা এরকম অবিহত মাইনষেরে রাখতাম না”
আবির একটু থেমে গেলো। রাই তো চককেই উঠলো ” বিবাহিত! না না” মনে মনে ভাবছে।
আবির একটু কৃত্রিম হাসি মুখে টেনে নিলো ” হ্যাঁ। আমরা ওই আরকি , বিবাহিত”
ছেলেটা ওর দাদীকে বললো ” দাদী অহন কি তোমার সমস্যা আছে?”
রাই এর মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। বলে কী! বিবাহিত!
বৃদ্ধা কিছুটা ভেবে বললো” আচ্ছা , থাকো। কিন্তু সকালেই চইলা যাবা….”
বলে উনি ঘরে ঢুকে গেলেন। ছেলেটা মলিন গলায় বলল ” আসেন ভাই। ভাবি আপনিও আসেন”
কিন্তু রাই এর পা দুটো বরফের মতো জমে গেছে। ওর তো এগোতেই মনে চাচ্ছেনা। আবির বিষয়টা বুঝতে পারলো। আবির নিচে নেমে রাই এর হাত ধরলো ” চলো…..”
ছেলেটা হেসে ঘরে ঢুকে গেলো। আর রাই অবুঝের মতো আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি হচ্ছে টা কি?
( ফাইজলামি হইতাসে?)
যাইহোক দুজনে ঘরে যেতেই ছেলেটা একটা গামছা , একটা সাদা কাপড় আর একটা লুঙ্গি এনে আবিরের হাতে দিলো ” আমরা গরীব মানুষ। ভাই যেহেতু আপনারা ভিজা গেছেন কাপড় পাল্টায় নেন। নইলে ঠাণ্ডা লাগবো। ”
” এতেই হবে। ধন্যবাদ” আবির বললো।
ছেলেটা বেরিয়ে গেলো। রাই আগেই গামছা টা হাতে নিলো আর মাথা মুছতে লাগলো।
আবির একটানে ওর থেকে গামছা টা নিয়ে লুঙ্গি হাতে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল ” ৫ মিনিট, চেঞ্জ করে নাও। আমি এসে যেনো এভাবেই না দেখি” বলে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
রাই তো রেগে শেষ। এগুলো কোন ধরনের ব্যবহার!? শুধু আজ বিপদে পড়েছে বলেই। নইলে আবিরকে ও তো……… যাইহোক ,রাই দ্রুত কাপড় বদলে নিলো। ভরসা নেই। ৫ মিনিটেই যদি চলে আসে।
যাইহোক শাড়ি রাই পরতে পারে। তাই দ্রুত শাড়িটা পরে নিলো রাই আর কাপড়গুলো পাশের দড়িতে বাঁধিয়ে দিলো।
কিছুক্ষন পরে কেউ একজন ঘরে ঢুকলো । রাই চমকে উঠলো ” কে?”
কিন্তু ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো , লোকটি আর কেউ না আবির। শুধু লুঙ্গিটা পরে আছে। রাই খিল খিল করে হেসে দিল ” পুরাই মফিজ”
আবির একটু মুখ ঘুরিয়ে নিল । এদিকে রাই হেসেই যাচ্ছে। যতই হোক আবিরের মতো একজনকে লুঙ্গিতে দেখাটাও ভাগ্যের বিষয় । রাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করার মত অবস্থা। আবির গিয়ে চুপচাপ খাটে বসে পড়লো। ওদিকে ওই ছেলে আর ওর দাদী পাশের যে আরেকটা ঘর আছে সেই ঘরে চলে গেছে। মোট কথা এঘরে আমরা একা।
আবির নিজের ফোনটা নিয়ে খুলে খুলে দেখতে লাগলো। কিন্তু উপায় নেই , ফোনের আনাচে কানাচে পানি ভরপুর।
” ইউসলেস” বলে আবির ফোনটা রেখে দিল।
” কাল সকালে আবার কিভাবে যাবো?” রাই জিজ্ঞেস করলো।
“হেঁটে”
” কিঃ!!!!!!!” ওর কিঞ্চিৎ চিৎকারে আবির কান দিলনা।
” হেঁটে হেঁটে এতদূর যাবো পাগল নাকি!” রাই এর কথা শুনে মনে হচ্ছে ওর জন্য কেউ প্রাইভেট প্ল ঠিক করে রেখেছে। এমনিতেই এই দিকে তেমন মানুষজন নেই। ভ্যান রিকশা তো বাদই দেই তাই হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায়?????
“তোমাকে যেতেই হবে এমন তো না। হাটতে না পারলে যাবেনা” বলে আবির হারিকেনটা নিভিয়ে শুয়ে পড়লো। রাই থ মেরে আছে। লোকটা এমন কেনো ! সব সময় একটা বাকা উত্তর। মুখে হাসি তো বাদই দিলাম, ভাবটাই বেশি……….. রাই মুখ ঘুরিয়ে নিল।
কিন্তু বিপত্তি হলো এক জায়গায় । এই খাটে শুধু দুটো মোটা কাঁথা বিছানো আর শক্ত দুটো বালিশ ছাড়া কিছুই নেই। ফলে পিঠে খুব বাধছে।
রাই বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত। কিন্তু শুতেও পারছেনা। অবশ্যই অভ্যাস নেই। এদিকে আবির ঘুমিয়ে গেছে নাকি জেগে আছে বুঝাও মুশকিল। অন্ধকারে শুধু একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে আর কিছুই না।
” আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন?” রাই ডাকলো।
কিন্তু আবির কিছু বললোনা।
” ঘুমিয়ে গেছে! এদিকে আমি যে ঘুমাতে পারবোনা? ওটার কি! ” বিড়বিড় করছে রাই। তখনি ওর হাতে হ্যাঁচকা টান পড়লো। সাথে সাথে গিয়ে পড়লো আবিরের বুকে।
আবির ওর মাথায় হাত রাখলো ” ঘুমাও”
রাই ভিষন অবাক….. আবির ঘুমোয় নি। আর বুঝলো কিকোরে!
যাক আপাতত ক্লান্তিতে রাই কিছুই বলতে চাচ্ছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
আবির এখনও জেগে। ওর চোখে ভেসে উঠলো আজকে সকালের একটা দৃশ্য।
(সকালে)
আবির মাত্রই ঘুম থেকে উঠে বের হয়েছে পাশেই নিশান এর ঘর। ঘরের সামনে দিয়ে আসার সময় আবির নিশান এর গলা শুনতে পেলো। যদিও ইচ্ছে ছিলো না, তবুও কৌতূহল বশতই আবির একটু দাড়িয়ে পড়লো। আর নিশান এর কথাগুলো শুনতে লাগলো। যেটা শোনার জন্য হইতো ও প্রস্তুত ছিলো না।
এখন________
সকালের সেই দৃশ্য চোখে ভাসতেই আবির চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। আর রাই এর মাথায় হালকা করে একটা চুমু দিল।
_____________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে রাই আবিষ্কার করলো আবির ওর পাশে নেই। রাই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো । তবে কি উনি আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন? মানে আমি একা এই অচেনা জায়গায় হারিয়ে গেছি? আল্লাহ।
রাই ভয়ে থরথর করে কাপছে। স্বাভাবিক। এমন একটা পরিস্থিতিতে যেকোনো স্বাভাবিক মানুষই ভয় পেয়ে যাবে। রাই কাপা কাপা পায়ে খাট থেকে নেমে মাত্রই বের হবে তখনি সামনে আবির এসে দাড়ালো। আবিরকে দেখেই রাই এক ছুটে ঝাপটে ধরলো ” আপনি চলে যেনো গিয়েছিলেন? ”
ওর কণ্ঠে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আবির ওকে ছাড়িয়ে দাড় করতে গেলেও রাই ওকে ছাড়লো না। শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে ” আপনি কেনো গিয়েছিলেন। জানেন আমি কত ভয় পেয়ে গেছি? আপনি আপনি আমাকে ফেলে কিভাবে যেতে পারেন?” রাই কান্না করে দিয়েছে।
আবির অবাক। ও এতো ভয় পেয়ে গেছে! আবির তো এমনিতেই জমা কাপড় বদলাতে গিয়েছিল। এখন তো ওদের বেরোতে হবে।
” রাই…..”
” আপনি খুব খারাপ। খুব খারাপ ….শুরু থেকেই আমার সাথে এমন করেন। কি সমস্যা আপনার? আমার সাথেই কেনো?” রাই এর আপাতত ভয়ের কারণে কি বলছে না বলছে জানেনা।
” তোমার সাথে করতে হবে বলেই এমন করি। আর আমি কেমন? সে তো তুমি বলেই দিচ্ছ……”
আবিরের কথা শেষ হলেও রাই এর হাতপা এখনও ঈষৎ কাপছে। আবির এখনও ওকে জড়িয়ে নেয়নি।
কিছুক্ষন পর একটু শান্তি হয়ে নাক টানতে টানতে সরে দাড়াল। আবির এর ভাব পরিবর্তন হলোনা।
” রেডি হও, বেরোতে হবে” বলে আবির বাহিরে বেরিয়ে গেলো।
” মুখ পোড়া” বলে ভেংচি কাটলো রাই। নাহলে আর কি? এমন নিরামিষ মুখ বোজা মানুষ আর দুটো হয়না। রাই কাপড় বদলে নিলো।
বাহিরে বেরিয়ে দেখে আবির ছেলেটার হাতে কতগুলো টাকা গুজে দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে। বৃদ্ধা বাহিরে গেছে। ছেলেটা নিতে না চাইলেও জোড়াজোরি করেই টাকাটা দিলো আবির। এরপর দুজনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।
রাই এর মাথায় একটাই কথা ঘুরছে টাকাটা কোথা থেকে এলো? কালকে তো ছিলনা। আর যদি ওনার কাছে টাকা থেকেই থাকে তো গতকাল আমরা বাড়ি কেনো ফিরি নি?
রাই আমতা আমতা করে বলল ” একটা কথা বলি?”
আবির হাঁটছে আর” হুম” বললো।
” আ…. আপনার কাছে টাকা কিভাবে এলো? মানে কালকে তো ….”
আবির বাকা চোখে তাকালো ” তোমরা মেয়েরা কী আজীবনই বুদ্ধি হাঁটুতে নিয়ে ঘুরবে?”
” সবসময় একটা বাকা উত্তর” বলে রাই মুখ ফুলিয়ে নিলো।
” আমার কাছে টাকা ছিল। কিন্তু আপনার মেহেরবানী, টাকাগুলো ভিজে গেছিলো। রাতে সেগুলো শুকাতে রেখেছিলাম। সেখান থেকেই দিয়েছি” আবির হাঁটছে আর আশপাশে দেখছে।
রাই আবারো লজ্জায় পড়ে গেলো।
” তাইতো…… ইশ” ভাবলো রাই।
.
.
“ভাইয়া অনেক হয়েছে , আর কত ? গতকাল থেকেই তুমি আটকিয়ে রেখেছ….. আমি যাচ্ছি ওদের খুঁজতে”
বলে নিশান উঠে দাড়ালো।
” কোথায় খুঁজবি? ওরা কি এক জায়গায় থাকবে নাকি? নিশ্চই আবির এত্তো বোকা না যে পানির মধ্যেই রাত কাটিয়ে দেবে”
সুরাইয়া বললো ” আপনি এতো সিওর কিভাবে হন যে ওদের কোনো ক্ষতি হয় নি। নদীর গভীরতা বোঝেন?”
মিহির গিয়ে সুরাইয়া র হাত চেপে ধরে নরম স্বরে বলল ” আমি জানি , আবির এতো অবুঝ নয়। আর আবির সাঁতার জানে, যদি রাই কে ও পেয়ে যায় তাহলে আর ভয় নেই”
সুরাইয়ার মুখের চিন্তা এখনও সরেনি। সম্ভব ও না। যতক্ষণ পর্যন্ত ওরা না ফিরবে ততক্ষণ কারো শান্তি নেই। এবাড়িতে সবারই চিন্তায় খারাপ অবস্থা । এখনও রাই এর মা বাবাকে বিষয়টা বলার সাহস পায়নি কেউ। মিহিরের বাবা চিন্তায় চিন্তায় পায়চারি করছে। যদিও তাদের খুঁজতে যেতে চেয়েছিল সবাই। কিন্তু মিহির কাওকে যেতে দেয়নি।
নিশান এর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে । ও চেঁচিয়ে উঠলো ” ব্যাস আমি যাচ্ছি” বলে ও বেরোতে যাবে তখনি দরজা দিয়ে খোড়াতে খোড়াতে প্রবেশ করলো আবির, সাথে রাই। রাই আবিরকে ধরে ধরে নিয়ে আসছিলো।
ওদের দেখেই সুরাইয়া ছুটে গেলো ” রাই”
রাই আবিরকে দাড় করিয়ে দিল। সুরাইয়া ওকে জড়িয়ে ধরলো ” তুই ঠিক আছিস?”
মিহির ওর বাবা সবাই এগিয়ে আবিরকে ধরলো ” তুই ঠিক আছিস? কি হয়েছে?”
আবির খাটে বসে বললো ” হ্যাঁ ঠিকাছি”
নিশান দূরেই দাড়িয়ে ছিলো। সবার সামনে তো আর ওর কাছে যেতে পারবেনা।
কিন্তু অবাক কান্ড, রাই নিশানের দিকে একপলক তাকিয়ে আবিরের কাছে চলে গেলো। নিশান এতই বিস্মিত হলো যে বোঝার উপায় নেই, রাই এর আবার কি হলো!
রাই গিয়ে মিহিরকে বললো ” ভাইয়া , ওনার পায়ে প্রচুর আঘাত পেয়েছে আসার পথে। ডাক্তার ডাকুন”
মিহির চেঁচিয়ে উঠলো ” আর এই তুই বলছিস ঠিক আছিস?” বলে মিহির হেঁটে বাইরে চলে গেলো ডাক্তারকে ফোন করতে।
” মিহির…. আরে ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন নেই। আমি ঠিকাছি। ”
মিহিরের বাবা বললো ” কোথায় ছিলে তোমরা দুজন? জানো কত চিন্তা হচ্ছিলো?”
” রাতে ফেরার মতো অবস্থা ছিলনা তাই একবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম” বলে পা টা চেপে ধরলো আবির।
মিহিরের বাবা যদিও চিন্তিত ছিলেন কিন্তু এই মুহূর্তে তার ভীষণ রাগ হচ্ছে রাই এর ওপর ” এই মেয়েটার জন্যই এতকিছু। রেজোয়ান জানলে কি হতো! একটা চরিত্রহীন মেয়ে ” ভাবতে ভাবতে কিছুনা বলে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আবির আস্তে আসতে উঠে দাড়ালো ” আমি ঘরে যাবো” বলে আগাতে গিয়েই ও পড়ে যেতে গেলো। নিশান এগিয়ে ধরতে গিয়ে থেমে গেলো। কারণ সুরাইয়া আর রাই দুজনেই ওকে ধরে ফেলেছে। ” চলুন” বলে ওরা আবিরকে ওর ঘরে নিয়ে গেল।
এদিকে নিশান এর মনে হচ্ছে যেনো ও অদৃশ্য। ওকে কেউ দেখতেই পায়নি। বিশেষ করে রাই। কিন্তু ওর মাথায় আসছেনা ও কি করেছে? রাই কেনো ওকে ইগনোর করছে।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ডাক্তার এসে গেলেন আর আবিরকে দেখে গেলেন। পুরো রাস্তা দুজনে হেঁটে এসেছে বিধায় দুজনেরই পায়ের অবস্থা খারাপ। রাই নিজের ঘরেই আরাম করছে । আবির ও। এদিকে নিশান লুকিয়ে রাই এর ঘরে ঢুকে দরজা টা লাগিয়ে দিল। আর ওর পাশে গিয়ে বসল। রাই প্রায় তন্দ্রায় ছিলো রাই বুঝতে পারেনি। হটাৎ নিজের হাতে কিছু স্পর্শ অনুভব করে ও চমকে ওঠে। নিশান কে দেখে যেনো ওর বিস্ময় সাথে রাগ দুটোই বেড়ে যায়।
” তুমি এখানে?”
” রাই….. কাল থেকে এই পর্যন্ত কত চিন্তা করেছি জানো” বলে ও রাই কে জড়িয়ে ধরতে গেলেই রাই ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলো।নিশান বেশ অবাক ” রাই”
” কি হ্যাঁ? কথায় কথায় জড়িয়ে ধরতে হবে এটা কেমন কথা? তোমার নিজের কোনো সেল্ফ রেসপেক্ট না থাকলেও আমার আছে”
রাই এর মুখে এমন নিন্দামুলোক কথায় নিশান যেনো বেশ হতভম্ব ” কি বলছো এসব?”
” কেনো ভুল কিছু বলেছি?”
” রাই, তোমার কি হয়েছে?” বলে ও হাত বাড়ালেই রাই আবারো ওর হাত সরিয়ে দিলো ” বলেছি তো দূরে থাকো । সহজ ভাষা বোঝো না নাকি?”
নিশান এর ধৈর্য শেষ ও খপ করে রাই এর হাত চেপে ধরলো ” একরাতেই কি এমন হলো যে তুমি আমাকেই এভাবে বলছো? কি হ্যা? ”
” ছাড়ো ….. ( হাত ছাড়িয়ে) তোমার চিন্তা ধারা কত নিচু নিজেই দেখো। গতকাল আমার নদীতে পড়া থেকেশুরু করে এই অবধি আমাকে খুঁজতে গিয়েছিলে? কেমন আছি না আছি কোথায় আছি বেঁচে না মরে গিয়েছ দেখতে?”
নিশান এর রাগ একটু কমে এলো ” আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু”
” যাও নি। এটাই কথা। যখন আমি পড়ে যাই তখনও তুমি না আবির ঝাঁপ দিয়েছিল। কেনো? তোমার ভাবতেই এতো সময় কেনো লাগলো যে তুমি আমাকে বাঁচাবে? কেনো তুমি ছিলে না সে জায়গায়?”
নিশান একটু সময় নিল। সত্যিই তো , ওরই তো সেখানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ও তো মিহিরের কথা শুনেই ক্ষ্যান্ত ছিলো। কিন্তু মিহির শুধুই একটা অজুহাত। মূলত নিশান যায়নি এটাই একটা সত্য।
” তখন তাৎক্ষণিক ভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। সরি। কিন্তু তুমি এভাবে বলো না….. ” নিশান ওর একটা হাত নিজের হাতের ভাজে নিলো।
রাই তবুও নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল ” যাও এখন। আমি খুব ক্লান্ত। যাও। পরে কথা হবে” বলে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলো রাই।
নিশান স্তব্ধ। কি বলবে জানেনা। ও চুপচাপ বেইয়ে গেলো ঘর থেকে।
মিহির ঘরে ছিল তখনি ওর বাবা ঘরে ঢুকলো ” মিহির”
পেছনে ঘুরে বাবাকে দেখে মিহির জবাব দিলো ” জ্বী আব্বা”
সুরাইয়া ঘরে নেই নিশ্চিত হয়ে উনি বললেন ” আগামীকাল রাই কে ফেরত দিয়ে আসার বেবস্থা করো। সাথে আমিও যাবো ওই বাড়িতে। ”
মিহির বাবার কথায় অনেকটা অবাক। কিন্তু নিষেধ করার ও কোনো কারণ নেই ” আচ্ছা আব্বা , কিন্তু”
ওকে বলতে না দিয়েই ওর বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
মিহির অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
চলবে????????
সবার কমেন্ট ই পড়ি আমি। গত পার্ট এ এক আপু লিখেছেন উনি নিশান এর ওপরে ক্রাশ খাইসে। আবির হিরো না হইলে ভালো হইতো।
বাই দা ওয়ে , আমার আবির রে ভাল্লাগে না । বেশি ভাব লয় ? তবে নিশান রে ও ভাললাগেনা। ? আমার মিহিরকে ভাল্লাগে। ?