In The Depths of Love part-9

0
1299

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_09

অতীতে _________
সেদিন রাতে আবির আর চোখ বুঝতে পারেনি।
বারবারই ওর কানে রাই এর আর্তনাদের স্বর ভেসে আসছে।

“মেয়েটা অতিমাত্রার চালাক। ওকে বিশ্বাস করাটাই বোকামি। ” ভেবে আবির নিজের চোখদুটো বন্ধ করে খাটে হেলান দিলো।
“আমরা এমন এক জগতের বাসিন্দা , যেখানে আপন বলতে কেউই নেই। যা আছে সব স্বার্থ। ”

_________________

পরদিন সকালে খুব বেলা করেই রাই এর ঘুম ভাঙ্গে। তবে ঘুম ভাঙার সাথে সাথে গত রাতের তীব্র ব্যথাটাও যেনো জেগে উঠেছে। আবারো ব্যাথা করছে হাতে।
রাই কিছুক্ষন হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো আবির এমন কেনো!
ও কি কোনো মানসিক রোগী নাকি!?

যাইহোক বিছানা ছেড়ে উঠে মুখ হাত ধুয়ে হাতে মলম লাগিয়ে রাই বাহিরে বেরিয়ে গেলো।
সুরাইয়া রান্নাঘরে কাজ করছে। রাইগিয়ে ওর পাশে মোড়ায় বসে পড়লো ।

” কিরে এতো দেরিতে ঘুম থেকে উঠলি যে?'”

রাই স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো ” ওই, আরকি…. গতকাল জার্নি করে আর রাতে অতদেরি করে জেগে সমস্যা হয়েছে। তাই ঘুম ভেঙে নি”

সুরাইয়া হাতের টুকিটাকি কাজ করছে।রাই বললো ” দে আমি হেল্প করি”

” আরে না তুই কেনো করবি” ?

” আরে দে তো…. এতো ফর্মালিটির কি আছে?”
রাই এর জোরাজুরিতে শেষে সুরাইয়া বাধ্য হয়ে ওকে মটরশুঁটির খোসা ছাড়িয়ে দিতে বলে।
রাইও কাজ করছে আর মনে মনে গভীর চিন্তায় ব্যস্ত। সুরাইয়া একটু জোরেই বললো ” কীরে প্রেমে পড়েছিস নাকি? এতো কিসের চিন্তা তোর?”

রাই মুচকি হাসলো ” না তেমন না। আচ্ছা , শোন”

” হুম?”

” তোদের এবাড়িতে কি কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ বা এমন কিছু আছে নাকি?”

সুরাইয়া বেশ অবাক হলো। ” এটা কেমন প্রশ্ন?”

” বল না”?

” না , এমন কেউ তো নেই, কিন্তু কেনো বলবি তো?”

” উম না এমনিতেই। তোর ননদগুলা যে দাজ্জাল। তাই বললাম”

সুরাইয়া হেসে ওঠে” তুই ও না। তাও ভালো যে ওরা আপন ননদ না. মিহিরের ভাই বোন নেই”

” হুম, সেটাই। ”

আজ শুক্রবার।
বাড়ির সব পুরুষেরা নামায থেকে মাত্র ফিরছে। আবির মাটির দিকে তাকিয়ে হেঁটে বাড়ির ভেতরে আসছিল , হঠাৎই ওর মুখে পানির ঝাপটা পড়লো। ও মুখ চোখ খিচে বন্ধ করলো ” উহুম……..কে”
বলতেই এবার সজোরে ওর মুখে চুলের ঝাপটা লাগলো। আবির দুকদম পিছিয়ে গেলো। চোখ থেকে পানি হাত দিয়ে মুছে ও আস্তে আস্তে তাকালো , দেখে রাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে।

পেছনে নিশান ও ছিলো। নিশান টোকন দেখলো যে রাই উঠানে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে, ঠিক তখনই আবির সামনে এসে যাওয়ায় চুলের বাড়িটা আবিরের মুখে লাগে। আর রাই পেছনে ঘুরে আবিরকে দেখে থ মেরে যায়।

এদিকে রাই এর মধ্যে হঠাৎই আতঙ্ক গ্রাস করে । সাথে সাথে রাই মুখে হাত চেপে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। আবির শান্ত দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। পেছনে নিশান একটু অন্য নজরেই তাকিয়ে ছিল। কেননা আবির রাই এর নিশান এর মাঝে এই মুহূর্তে আবির দাড়িয়ে। নিশান এর সেটা সহ্য হলো না।

রাই ভেতরে ঢুকে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
” শুনেছিলাম , যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। কিন্তু ভাই এখন তো দুপুর। ক্যামনে কি!”

“””””””””” বিকেলে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে , তখনি রাই মিহিরকে উদ্দেশ্য করে বলল ” ভাইয়া….. আপনাদের এখানে নদী নেই আশপাশে?”

মিহির বললো ” ঘুরতে যাবা?”

” বাহ, কি সুন্দর। ভাইয়া মনে কথা কিভাবে বোঝেন আপনি?” রাই বললো ।

মিহির হেসে উঠলো ” তোমার আর আমার মন কি আলাদা নাকি শালী সাহেবা? ”

সুরাইয়া কড়া নজর তাকালো মিহিরের দিকে। মিহির চুপ করে গেলো। এটা দেখে উপস্থিত সবাই হাসতে লাগলো।

” আচ্ছা , তো চলো যাই। নিশান যা আবিরকে ও ডেকে আন….” বলে মিহির উঠে দাড়ালো।

রাই এর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল “উনিও আসবে নাকি! না না” মনে মনে ভাবছে রাই।

নিশান একটু আমতা আমতা করে বলল ” ভাইয়া,,,, মনে হয় না যাবে .. জানোই তো ভাইয়া কেমন”

মিহির মাথা নাড়লো ” যাবে না যাবে পরের বিষয় । আগে তো বলতে হবে? যা বলে আয়। গেলে যাবে না গেলে নাই”
রাই, একটা শুকনো ঢোক গিলে নিলো ‘” ইয়া আল্লাহ, উনি যেনো না আসে। উনি আসলে আমি যাবনা…” মনে মনে বললো।

সুরাইয়ার নজর গেলো রাই এর শুকনো মুখের দিকে। তবে ও কিছু বললো না। কিছুক্ষন পর নিশান ফিরে এলো। এদিকে রাই মনে মনে দোয়া পড়ছে যেনো আবির না আসে। হলো ও তাই।

” ভাইয়া যাবেনা বললো” বলে নিশান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

সাথে সাথেই রাই লাফিয়ে ওঠে ” ইয়ে”

সবাই ওর দিকে তাকায়। ও থতমত খেয়ে গেল ” আ মানে ইয়ে আমরা নদীর পাড়ে যাবো , হাহা আমি রেডি হয়ে আসি” বলে লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে নিজের ঘরে চলে গেল।

মিহির অবাক হলো। নিশান ও।
যাইহোক, সকলে মিলে বের হলো নদীর তীরে ঘোরার উদ্দেশ্যে।
অবশেষে নদীর পাড়ে পৌঁছে গেলো ওরা সবাই।
সবাই গল্প করছে আর হাঁটছে। এমন সময় নিশান পেছন থেকে রাই এর জুতো পাড়িয়ে ধরে ফলে রাই হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে যায়। নিশান সাথে সাথে ওকে ধরে ফেলে।

” বেয়াইনের কি চোখ অকালেই গেছে নাকি?” বলে নিশান হাসতে হাসতে সামনে সবার সাথে হাটতে থাকে।

” দাড়াও দেখাচ্ছি ” বলে রাই এগিয়ে গিয়ে একই কাজ করে নিশান এর জুতো শক্ত করে পাড়া দিয়ে ধরে। কিন্তু এইবারে নিশান তাল সামলাতে না পেরে সোজা মাটিতে পড়ে যায়। এদিকে সবাই যে যার মতো হাঁটছিলো কেউ রাই কে খেয়াল করে নি তাই রাই দ্রুত সুরাইয়ার পেছনে গিয়ে দাড়ায়।

মিহির বলে ওঠে ” কীরে দিনে দুপুরে পড়ে যাওয়ার সখ হলো নাকি?”

রাই বললো ” ভাইয়া আমার মনে হয় সে মাটি পরিষ্কার করছিল….”
সুরাইয়া বলে ” দেবর মশাই ঝাড়ু এনে দেই?”

সবাই ফিক করে হেসে দিল। নিশান প্রতিশোধ এর নজরে তাকিয়ে রইলো। এদিকে রাই সবার আড়ালে ওকে ভেংচি কাটলো।

রাতে খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে , নিশান রাই এর ঠিক বিপরীতে বসেছে। তখনি রাই এর পায়ে কেমন একটা লাগলো। রাই নিচু হয়ে দেখে নিশান ওর পায়ের ওপর আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করছে। রাই উপরে মুখ তুলেই রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। নিশান ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে খাবার খেতে লাগলো।
তখনি আবির এলো , আবির ডাইনিং রুমে ঢুকেই প্রথমে। ওর চোখ গেলো নিশান এর দিকে ।

আবির দেখলো নিশান মিটিমিটি হাসছে। ও কপাল কুচকে নিশানের চোখ বরাবর তাকায়। দেখে রাই রাগান্বিত চোখে কিছু ইশারা করছে।
আবির ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
সুরাইয়া ওকে দেখে বললো ” ভাইয়া আসেন , আপনার অপেক্ষাই ছিলো। ” বলে সুরাইয়া প্লেট নিয়ে ওকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো।

আবির নিশান এর দিকে স্থির দৃষ্টিতে রেখে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লো। মিহির জিজ্ঞেস করলো ” কীরে কোথায় ছিলি এতক্ষণ?”

আবির গম্ভীর গলায় বলে ওঠে ” নিশান……”

নিশান চমকে উঠে নিজের পা সরিয়ে নেয়। রাই হাফ ছাড়লো।

” নিশান এর সম্পর্কেই বাবার সাথে কথা হচ্ছিল” বললো আবির।

নিশান তাকালো ” আমাকে নিয়ে!”

” তোর তো সামনে বছর যাওয়ার কথা”……..

রাই বললো ” কোথায়?”
আবির রাই এর দিকে চোখ ফেরালো। রাই নিজের চোখ নামিয়ে নিলো।
মিহির বললো ” আরে, ওর তো বিজনেস নিয়ে পড়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা চলছে। তো ডিসিশন নিয়েছিস তোরা?”

আবির চোখ নামিয়ে নিলো ” নির্ভর করে, নিশান কি চায় তার ওপর…..'”

রাই এটা শুনে নিশানের দিকে তাকালো। নিশান একটু চিন্তায় পড়ে গেল। দুজনেই চুপ করে গেলো কেমন একটা। বাকিরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো।
আবির ও নিশ্চুপ ভঙ্গিতে খাবার খেতে লাগলো।

_____________
এরপরে দুদিন কেটে গেলো। এই দুদিন রাই এর নিশান এর মধ্যে বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়ে গেল। দুজনই খুব দুষ্টুমি করে, একে অন্যকে জ্বালাতন করে। আবার ওদের ভাব ও বেড়েছে। বিষয়গুলো দুটো মানুষের চোখে পড়লো। এক সুরাইয়া, দ্বিতীয় আবির।
যখনই রাই এর দিকে তাকানো যায়, তখনি রাই কে নিশান এর সাথেই বেশিরভাগ দেখা যায়। নিশান ও কেমন শুধুই রাই এর সাথেই সারাদিনের হাসি ঠাট্টা।

এক রাতে রাই শুয়ে ছিল। হটাৎ ওর দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। ও চমকে ওঠে ” কে?”
বলে ও দরজার কাছে যেতেই কেউ আস্তে করে ডাকে ” আমি দরজা খোলো।”

” আপনি?”
নিশান ঘরে ঢুকে আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দেয় , ” হুম”

রাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো ” আপনি এতো রাতে?”

নিশান মুচকি হাসলো ” উম ভাবলাম তোমাকে একটু জ্বালিয়ে যাই কি বলো?” বলতে বলতে ও খাটে গিয়ে বসলো ” কিছুদিন পরে তো এমনিতেই চলেই যাবে….. তাই”

” বের হন এখন থেকে , এতো রাতে” ওকে পুরোটা বলতেও দিলো না নিশান ওর একহাত ধরে টেনে খাটে ওর পাশে বসিয়ে দিল ” হবো না, কি করবে?”

রাই ঘাবড়ে গেল ” দেখেন, দূরে যান। এভাবে হাত ধরার মানে কি?”

” দূরে?” বলে নিশান রাই এর আরো একটু কাছে গেলো। রাই নিজের হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে যেতে গেলো , কিন্তু নিশান আবারো ওর হাত ধরে ফেলে ” এতো দূরে যাওয়ার সখ?”

রাই নিশ্চুপ।

” কিহলো বলো?”

” আপনি বিদেশে চলে যাবেন?”

নিশান একটা শ্বাস ফেলে রাই এর মুখ নিজের হাতের ভাজে নিলো ” সেটা এখনো ডিসাইড হয়নি। বলা যাচ্ছেনা”

” ওহ….” মলিন স্বরে।

” কেনো মন খারাপ হচ্ছে নাকি? ”

” আমার , কেনো মন খারাপ হবে?”

নিশান ফিসফিস করে বললো ” প্রেমে পড়ে গেছো মনে হচ্ছে?”

রাই কেপে উঠলো । নিশান বিজয়ের হাসি হাসলো ” মনে তো তাই হচ্ছে। ”

রাই মাথা নাড়লো ” না, আপনি হাত ছাড়েন আর যান এখন…”

নিশান চোখের পলকেই রাই কে জড়িয়ে ধরলো ” রাই……”

নিজের ঘাড়ে গরম নিশ্বাস আর এই ঠাণ্ডা শীতল পরিবেশের মধ্যে রাই এর হৃদপিন্ডের গতিটাই যেনো ক্রমশ বেড়ে উঠছে “নিশান…. ছাড়ুন…..”

” তুমি করে বলো……”

রাই এরমাথা ঘোরার উপক্রম” নিশান , আপনি যান এখন থেকে কেউ দেখলে…….”

” তুমি করে বলো আগে ……”

” নিশান ছাড়ো…..” রাই এর ঠোঁট কাপছে।
নিশান খুশিতে পুলকিত হলো। রাই কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রাই এর বুকে যেনো কেউ আরো জোরে জোরে হাতুড়ি পেটাতে লাগলো। ” নিশান…….”

” রাই , আই লাভ ইউ …..”

রাই এর মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। নিশানের কোথায় ওর শরীরের লোম দাড়িয়ে গেলো।
অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেল ওর মধ্যদিয়ে।
” রাই, উত্তর দেবে না?”

রাই পুরো ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। কি বলবে ও জানেনা। দুদিনের পরিচয়েই কি ভালোবাসা হয়ে যায়? কিন্তু ছেলেটাকে যে ও খুব পছন্দ করে।
নিশান সামনে এসে ওর মুখে আলতো করে হাত রাখলো ” রাই বলো …..”

এমন এক মুহূর্তে নির্ঘাত যে কারোরই মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। হ্যাঁ বলাটাও সহজ না। আবার না বলতেও মন সায় দেয় না।
” রাই বলো …….”

রাই নিশ্চুপ রইলো।

” বিশ্বাস করো খুব খুব ভালোবাসি তোমাকে একবার বলো ভালোবাসি। একবার……”

রাই কাপা কাপা গলায় বলল। ” নিশান…….”

” বলো,,,,, একবার…..রাই”

খুব স্বাভাবিক । কেউই পারে না এমন সময়ে নিজের ইমোশন ধরে রাখতে। রাই ও পারেনি। রাই নিশান কে জড়িয়ে ধরে মাথা নাড়লো। নিশান যেনো হাতে চাঁদ পেল। খুশিতে রাই কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ” আই লাভ ইউ।”

” জানিনা, ভুল কিনা। তবে, বলেই দিলাম” মনে মনে ভাবলো রাই।

এদিকে দরজার বাহিরেই দাড়িয়ে একটা ছেলে কণ্ঠ আর একটা মেয়েলি গলা শুনে চমকে উঠেছেন মিহিরের বাবা। কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে না পারলেও এটুকু বুঝেছি যে সেঘরে রাই এর সাথে একটা ছেলেও উপস্থিত ছিল।
মিহিরের বাবার এই বিষয়টা খুবই দৃষ্টিকটু লাগলো। উনি রেগেমেগে সেখান থেকে চলে গেলেন।
কিছুক্ষন পরে নিশান রাই এর সাথে গল্প করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

রাই যেনো খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল। আজ এই প্রথম ও ভালোবাসা জিনিসটাকে উপলব্ধি করছে। ওর এতই ভালো লাগছে যে খুশিতে আর সারারাত ঘুম হবে বলে ওর মনে হয়না।

_______________

পরদিন সকাল থেকেই নিশান আর রাই এর চেহারায় এক অন্য ধরনেরই হাসি। দুজনের চোখাচোখি সুরাইয়া দেখেও একটু ইগনোর করলো।

বিকেলে মিহির বললো ” আচ্ছা সবাই মিলে চলো আমরা নদীর ওইপারে আমার এক চাচার বাড়ি আছে। বেড়ায় আসি। চলো”

” না নদীর ঐপার যাবনা” সুরাইয়া বললো।
” কেনো? চল না যাই। ” রাই বললো।
নিশান ও তাল মেলায়।
মিহির বললো ” আমরা যাচ্ছি, সবাই রেডি হও, আর সুরাইয়া তুমি কিছু বলোই না। আর আবিরকে ও ডাক দাও”

এই কয়দিন আবির তেমন একটা রাই কে জ্বালাতন করেনি, তাই রাই এর ভয় কিছুটা কেটে গেছে।
রাই তেমন কিছু মনে করলনা।

আবির তখনি বাহিরে যাচ্ছিলো। এমন সময় মিহির ওকে ডেকে উঠলো ” এই আবির দাড়া”
আবির ফোন করো সাথে কথা বলছিল । তখনি মিহিরের ডাকে ও দাড়িয়ে পড়লো।

” এই রেডি হ আমরা বেরোবো…..”

” আমি যাবনা” বলে আবির আবারো ফোনে কথা বলতে গেলো। মিহির গিয়ে ওর ফোন নিয়ে নিলো ” তুই যাচ্ছিস, রেডি হ তারপরই ফোন পাবি”
বলে মিহির আবিরের ফোনটা নিয়ে চলে গেলো।
আবিরের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো।
/
/
/

যাক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবিরকে ও নিয়ে গেলো মিহির।
মিহির, সুরাইয়া, আবির, নিশান আর রাই নৌকায় উঠেছে স্রোত বায়ে বয়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডা বাতাস, রোদের তীব্রতা সব মিলিয়ে সোনালী বিকেল। সবাই নৌকায় আড্ডা দিতে দিতেই যাচ্ছিলো এমন সময়, নিশান এর সাথে রাই এর কিছু কথা নিয়ে দুষ্টুমি হওয়ার সময় নিশানের হাতের সাথে ধাক্কা লেগে রাই পানিতে পড়ে গেলো।

” রাই…….” বলে নিশান চিৎকার দিয়ে উঠলো। সাথে সাথে আরো একজন নদীতে ঠিক একই জায়গায় ঝাঁপ দিলো।

” রাই…..” বলে সুরাইয়া ও চিৎকার করে উঠলো। মিহির ওকে ধরে ফেললো” সুরাইয়া….. দাড়াও….”

” রাই…… ওখানে” নিশান ঝাপ দিতে গেলেই মিহির ওর হাত ধরে আটকে ফেলে। ” আবির কিন্তু গিয়েছে। তোর আলাদা ভাবে যাওয়ার দরকার নেই। ” বলে আবির নদীর চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো কোনদিকে দুজনকে দেখা যাচ্ছেনা।

এদিকে সুরাইয়া আর নিশান দুজনেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে ” ভাইয়া আমি যাই ছাড়”

মিহির কড়া গলায় নিশান কে বললো ” চুপ, এটা কি রাস্তা নাকি গেলেই খুঁজে পাবি? ” বলে মাঝিকে নৌকা তীরের কাছে নিয়ে যেতে বললো মিহির।

______ ওদিকে
পানিতে ডোবার সাথে সাথেই স্রোতের টেনে রাই নৌকার পাশ কাটিয়ে বামে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু হাতে ওর একটা টান লাগলো।
স্রোতের বেগ এতই বেশি ছিল যে নৌকা থেকে প্রায় অনেক দূরেই চলে এলো রাই। শ্বাস আটকে আসার উপক্রম । পানিতে হাতপা ছুড়ছে এমন সময় ওকে টেনে কেউ পানির স্তরের উপরে নিয়ে এলো।

প্রাণ যাওয়ার দোর গোড়া থেকে যেনো ফিরে এলো রাই। সামনের মানুষটিকে শক্ত করে ধরে শ্বাস টেনে ফুসফুসকে সতেজ করার চেষ্টা।

কিছুক্ষন এভাবে চলার পরই, রাই একটু শান্ত হয়। ধীরে ধীরে ও মানুষটির সামনে মুখ এনে দেখে আবির। আবির একহাতে ওকে ধরে রেখেছে অন্যহাতে কোনমতে সাঁতরে পাড়ের দিকে যাচ্ছে।

” আ,,,, আপনি?”

আবির এর মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট। ” অন্য কাওকে আশা করছিলে ? নাকি মরার প্ল্যান করছিলে?”

” মানে কি?” বলে রাই সরে যেতে গেলেই আবারো চুবুনি খায়, আর সাথে সাথে আবিরের হাত জড়িয়ে ধরে।
আবির প্রায় নিজের গলা সমান পানিতে এসে দাড়িয়ে রাই কে শক্ত করে ধরে । কিন্তু রাই এর এইখানে ঠাই নেই। সাঁতার ও জানেনা। তাই ও আবিরের হাত ধরেই রেখেছে।

“এতো শক্ত করে ধরার কি আছে? ছাড়ুন”

আবির নিজের হাতের বাঁধন হালকা আলগা করতেই রাই ডুবে যেতে যায় আর ওকে আবারো জড়িয়ে ধরে।
আবির ওকে নিজের থেকে একটু সরিয়ে নেয় , “ছেড়ে দেই নাকি?”

‘” না,,,, না”
” কিন্তু তুমি হইতো চাও না আমি তোমাকে ধরে রাখি”?

” হুম…..” আনমনেই বলে ফেলে রাই। আবির আবারো হাতের বাঁধন আলগা করে দিতেই রাই লাফিয়ে ওঠে ” না না, মানে… প্লিজ উপরে চলেন , আমি সাঁতার জানিনা” ।

আবির বাকা চোখে তাকায় ” ঝাঁপ দিতে তো জানো”

” আমি কি সাধে লাফ দিছি? আপনার ভাই ই তো….”

” আমার ভাই? নাকি তোমার……” বাকিটা এমনভাবে ইঙ্গিত করলো আবির যে রাই ইতস্তত বোধ করলো। চুপ করে গেলো রাই।
আবির নিজের কঠোর চেহারা বজিয়েই রাই ঘুরিয়ে পানির যেখানে ঠাই আছে সেখানে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ফলে রাই আবারো নাকানি চুবানি খেলো।

আবির ওকে ছেড়ে পানি থেকে উঠতে লাগলো।
কিছুক্ষন পরে রাই ও আস্তে আস্তে বালুর মধ্যে পা রেখে রেখে উপরে উঠে এলো।
” আপনি একটু বেশিই করছেন” বলে রাই চেঁচিয়ে ওঠে।

আবির নিজের চুলগুলোর মধ্যে হাত বুলিয়ে পানি ঝাঁড়ছিল তখনি রাই এর এমন কথায় ও ভ্রু কুচকে তাকালো ” হুম???”

রাই একটু দমে গেলো ” আপনি……..(কিছুটা ভেবে ) আপনি অভাবে কেনো ফেলে দিলেন ?”

” ভেসে যেতে দেইনি এটাই তোমার ভাগ্য”
বলে আবির আশপাশে তাকাতে লাগল।
কেউই নেই। আর না কোনো নৌকা আছে।
একজন থেকে ওরা যে ঘাট থেকে নৌকা নিয়েছিল সেই ঘাট ও খুব দূরে দেখাই যাচ্ছে।
” এখন কিভাবে ফিরবো?” রাই নিজের ওরনা চিপড়ে নিলো।
আবির নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে রাই এর দিকে তাকালো ” তোমাকে নৌকা ওয়ালার কাছে বন্দক রেখে বলবো আমাকে ওইপারে দিয়ে আসতে ” গম্ভীর গলায় বলে আবির এগোতে লাগলো।

” কিঃ!” রাই আকাশ থেকে টুপ করে পড়লো। এই ছেলে কি এমন করবে নাকি! রাই পুরো ভয় পেঁয়ে গেলো।
ওদিকে আবির তীর ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।

চলবে……………..✨✨✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here