#এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৬
নির্জন মাঝরাস্তায় থেমে আছে গাড়ি।রাত বাজে ন’টা দশ।তিন চারবার চাবি ঘুরিয়েও গাড়ি স্টার্ট দিতে ব্যর্থ তিহান।খুব সম্ভবত টায়ার পান্চার হয়ে গেছে।মেজাজ বিগড়ে গেলো তিহানের।রাগের চোটে হাত দিয়ে বারি দিতে যেয়েও থেমে গেলো সে।
পাশের সিটে ঘুমিয়ে আছে তোহা।আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যাবে।ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে তোহার রেশমি কালো চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে বারবার।
॥
প্রচন্ড জ্যামে প্রায় একঘন্টা আটকে থেকে বহুকষ্টে গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো রাস্তায় এসেছে তিহান।এদিকটায় জ্যাম নেই।তবে মানুষজনও নেই।নিরব পরিবেশ।তবে জ্যামের মধ্য বসে থাকলে আজ আর বাড়ি ফিরা লাগতোনা।এখানে এসেও বাঁধলো বিপত্তি।মাঝপথেই টায়ার পান্চার হয়ে গেলো।
তখন জ্যামের মধ্যেই বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছে তোহা।তিহানও আর ডাকেনি।
একবার ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে সিটবেল্ট খুলে ফেললো তিহান।বের হওয়ার জন্য গেট খুলতেই তোহা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,
—“কোথায় যাচ্ছেন?”
তিহান তাকালো।একটু থেমে তোহার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললো,
—“তুই ঘুমা।”
তিহানের কথায় চোখ পিটপিট করে তাকালো তোহা।আশেপাশে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসে হাত বাড়িয়ে তিহানের কব্জি ধরে আটকে বললো,
—“আমি ঘুমাবো আর আপনি আমাকে এইখানে একা রেখে চলে যাবেন?”
—“পাগল নাকি তুই তিহু?টায়ার ফেটে গেছে।নতুন টায়ার লাগাতে হবে।সেজন্যই যাচ্ছি।তোকে রেখে চলে যাবো কেনো?”ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো তিহান।
তিহানের কথায় বোকা বনে গেলো তোহা।ঘুমের ঘোরে কি বলেছে নিজেই বুঝেনি।আমতা আমতা করে সে বললো,
—“ওহ আচ্ছা,আমি ভাবলাম..”
—“তোর কিছু ভাবা লাগবেনা,চুপচাপ ঘুমিয়ে থাক।আমি আসছি।”বলে হাতের দিকে তাকাতেই তিহানের হাতটা ছেড়ে দিলো তোহা।চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে নিয়ে শাড়ির আচঁল ঠি ক করে বসলো।তিহান ক্ষীণ হেসে বেরিয়ে গাড়ির দরজা আটকে দিলো।
পিছে থেকে এক্সট্রা টায়ারটা আর কিছু যন্ত্রপাতি বের করে নিয়ে রাস্তায় একহাঁটু গেড়ে বসতেই বুঝলো তার পাশে এসে দাড়িয়েছে তোহা।তিহান তাকালোনা,প্লাস ঘুরিয়ে ট্রায়ারটা খুলতে খুলতে বললো,
—“নামলি কেনো?ঘুমাতে বললাম না?”
—“ঘুম আসবেনা আর।”বলে তিহানের কাঁধে একহাত রেখে একটু ঝুঁকে গেলো তোহা।খোলা চুলগুলো তিহানের গালে ঝাঁপটে পরতেই তিহান কাজ করতে করতেই সন্দিহান কন্ঠে বললো,
—“কি দেখিস?”
তোহা আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিষন্ন কন্ঠে বললো,
—“আপনি পারবেন?কষ্ট হবেনা?মিস্ত্রি ডেকে নিতেন।”
—“বেকুবের মতো কথা বলিস কেনো তিহু?।এখানে মিস্ত্রি কোথায় পাবো?আর এটা এমনও কিছুনা।দশ-বিশমিনিটেই হয়ে যাবে।মাথা ঘামাসনা।”
কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো তোহা।তিহানের উরুর উপর ঠেকানো ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে রাখা ফোনটা বারবার পরে যাচ্ছে।অন্ধকারে দেখতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে তিহানের।হাতে ময়লা লেগে গেছে বিধায় ফোনটা বারবার তুলে সোজাও করতে পারছেনা তিহান।মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক “ধুর” শব্দটা বের হতেই তোহা ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে সুন্দরমতো ধরে দাড়াতেই মাথা নিচে ঝুঁকিয়ে নি:শব্দে হেসে ফেললো তিহান।
মেয়েটার যে তার কষ্ট করাটা সহ্য হয়না সে জানে।তবে কখনো কিছু বলেনা।
মুহুর্তেই ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক করে মাথা তুলে বামহাতটা তোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে সে বলে,
—“ঘড়িটা খোলতো তিহু।ময়লা হয়ে যাচ্ছে।”
তোহা চুপচাপ লাইটটা গাড়ির উপর রেখে একহাতের উপর তিহানের হাত নিয়ে আরেকহাত দিয়ে ঘড়িটা খোলে ।সেটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পুনরায় লাইট ধরে ঘড়িতে চোখ পরতেই আৎকে উঠে সে।একপ্রকার চিল্লিয়ে বলে,
—“তিহান ভাই,সাড়ে ন’টার বেশি বাজে।”
—“খালু কে ফোন দিয়ে বলেছি আমি।ফিরতে একটু দেরি হবে।সমস্যা নেই।চিল্লাচিল্লি করিসনা।”
বেশ কিছু সময় সব নিরব।গাড়ি চলাচল নেই এখানে।মাঝেমধ্য একটা দুটো রিক্সা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।পেছনের ঝাঁড় থেকে গাছ নড়ার শব্দ হতেই জমে যায় তোহা।ফাঁকা ঢোক গিলে তিহানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে তার কাঁধে আলতো করে হাত রাখতেই ঝোঁপ থেকে একটা কমলা লাল রংয়ের কুকুর বেরিয়ে ঘাউ ঘাউ করতেই চিৎকার করে উঠে তোহা।তিহানের কাঁধে নখগুলো প্রায় দাবিয়ে দিয়ে বলে,
—“তিহান ভাই…কুকুর।”
কুকুরটা নিজেই যেন তোহার চিৎকারে ভয় পেয়ে যায়।কয়েককদম দৌড়ে দুরত্ব নিয়ে দাড়িয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়াতে থাকে অনবরত।তিহান ফুঁসে উঠে।টায়ারটা লাগিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে সাদা পান্জাবিতে ময়লা হাতটা মুছে তোহার হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাছে টেনে বলে,
—“তোর চিৎকারে কুকুরটাই ভয় পেয়ে গেছে তিহু।ও কি করবে তোকে?গাধা।”
তোহা উওর দিলোনা।তাদের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কুকুরটা চলে গেলে তিহান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে নষ্ট টায়ারটা আর জিনিসপত্র গুলা পিছে ঢুকিয়ে রেখে ফিরে আসতেই দেখলো গাড়ির সামনের জায়গাটায় উঠে পা ঝুলিয়ে বসেছে তোহা।মায়াবী দৃষ্টিজোড়া হয়তো অন্ধকার আকাশে তারা গোনায় ব্যস্ত।ঠোঁটে হাসি নেই।মুখে প্রাণবন্ত ভাব নেই।নির্জীব উদাস মুখশ্রীটা নজরে আসতেই বুকের কোথাও একটা মোচর দিয়ে উঠলো তিহানের।ধীরপায়ে এগিয়ে এসে তোহার কঁনুই ধরে শান্তভাবে বলল,
—“নাম তিহু,রাত হয়েছে।।বাড়ি ফিরতে হবে।”
তোহা নামলোনা।বরং আচমকাই তিহানকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা ঠেকাতেই চমকে উঠলো তিহান।সাথে অবাকও হলো বেশ।তোহার উষ্ণ নি:শ্বাস পান্জাবির পাতলা কাপড় ভেদ করে বুকে ছড়িয়ে পরতেই আরো একটু থমকে গেলো সে।কিছুক্ষণ নিশ্চুপ,নির্বাক থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে একহাত তোহার গালে আর আরেকহাত মাথার পিছে রেখে নরম কোমল কন্ঠে বললো,
—“কি হয়েছে?”
—“ভালো লাগছেনা।”প্রাণহীন কন্ঠে জবাবে দিলো তোহা।
তোহার মুখের দিকে চাইলে তিহান।বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চোখেমুখে।চোখ বন্ধ।গলার স্বর আরো একটু নামালো তিহান।বললো,
—“মন খারাপ?”
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তোহা।অত:পর তিহানের পিঠের দিকের পান্জাবিটা দু হাতে খামছে ধরে সিক্ত কন্ঠে বললো,
—“ওই লোকটা আমাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে।”
এতক্ষণে বিষয়টা বুঝে আসলো তিহানের।তোহার মন খারাপের কারণটাও স্পষ্ট হয়ে গেলো তার কাছে।যদিও তখন দেখামাত্রই তোহাকে টেনে নিয়েছিলো সে তবুও তোহা তো আর বাচ্চা না যে ভালো খারাপের তফাত বুঝবেনা।
এইযে সে তার বুকে মাথা রেখেছে।নিশ্চয় সে জানে তিহান তাকে খারাপভাবে কখনোই স্পর্শ করবেনা।সেই ভরসা থেকেই তার মধ্য এখন কোন ভয় নেই।
মূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে ফেললো তিহান।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“তখনই চড় মেরে দিলিনা কেনো?”
—“উনি আপুর দেবর।আ…”
তোহার মুখের কথা ছিনিয়ে নিলো তিহান।ধমকের স্বরে বললো,
—“সে যেই হোক তিহু।তোর আত্মসম্মানের থেকে বড় কিছু না।”
পাল্টা জবাব না দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো তোহা।তিহান আবারো ধমকে বললো,
—“এখন কাঁদছিস কেনো?তখনতো একটা কথাও বলিসনি।”
তিহানের ধমকে তোহার কান্না বাড়লো বই কমলোনা।এবার একটু শিথিল হলো তিহান।শান্তশীতল কন্ঠে তোহার হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে বললো,
—“যদি কখনো আমাকেও কোনদিক দিয়ে খারাপ মনে হয় অথবা আমার স্পর্শে তোমার অসস্তি হয় বা মনে হয় আমি তোমাকে খারাপভাবে ধরছি তখন আমাকেও চড় মারতে কোন দ্বিধা করবানা।
মূলত সে যেই হোক না কেনো এক চড়ে তাকে বুঝিয়ে দিবা তোমার সম্মান টা ঠি ক কত উপরে।নিজের গুরুত্ব বুঝতে শিখো।একটা মেয়ের জন্য আত্মসম্মানের উপরে কিছু নেই।”
বলে হাত দিয়ে তোহার চোখের পানিগুলো দিতেই মুচকি হাসলো তোহা।তিহান ছাড়াতে চাইলেও সে ছাড়লোনা।বরং শক্ত করে জাপটে ধরে তিহানের বুকে পরম শান্তিতে মাথা গুঁজে রইলো।
~চলবে~
[গতকাল রাত থেকে বামচোখে প্রচন্ড ব্যাথা আমার।তাকাতে পারছিনা।চোখের চারপাশ ফুলে গেছে।একটু লিখে আবার কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার লিখি।বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে মাথাব্যাথা করে।তাই আজকে একটু ছোট হলো।সরি।?]