#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_16
মেঘের হাটতে হাটতে হঠাৎ আহানের দিকে চোখ পড়তেই ওর পা টা থেমে গেলো ।ও ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো এইসব আবার কি?এতোক্ষন তো সব ঠিকই ছিলো।এখন আবার এইগুলো কোথা থেকে আসলো।
মেঘ ভ্রু নাচিয়ে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“এইসব আবার কি? এতোক্ষন তো জিন্সের সাথে শার্ট পড়েছিলেন তাহলে হটাৎ করে আবার হুডি আর মাক্স কেনো পড়লেন ?”
আহান নিজের মতো করে সামনে হাটতে হাটতে বললো
“এগুলো পড়েছি যাতে আমাকে কেউ চিনতে না পারে সেই জন্য।”
মেঘ আহানের সাথে দ্রুত তালমিলিয়ে হাটতে হাটতে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো
“আপনি কি নিজেকে বলিউড মুভির সালমান খান মনে করেন? যে যেখান থেকে হেটে যাবেন সবাই আপনাকে দেখেই চিনে ফেলবে।তারপর অটোগ্রাফ আর সেলফি নেওয়ার জন্য ভিড় করবে।”
“জ্বি না ম্যাম! আমি এই হুডি আর মাক্সটা ফ্যানদের থেকে বাচার জন্য পড়িনি আমার আমার বিপরীত পক্ষের শএু দের হাত থেকে বাচার জন্য পড়েছি।আপনি তো আবার মহান একজন ব্যাক্তি গার্ড সাথে নিয়ে কোথাও যেতে চান না।গার্ডদের সাথে নেওয়াটা নাকি আপনার কাছে সো-অফ লাগে। তা এখন যদি আমাকে কেউ চিনে ফেলে আর আমাদের উপর অ্যাট্যাক করে তাহলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন।আর আমি তো আর আপনার বালিউড মুভির সালমান খান না যে সবাইকে ঢুসুম ডাসুম মেরে গুন্ডাদের হাত পা ভেঙে দিবো।”
মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো
“নিজের প্রটেক্ট নিজে যখন করতেই পারেন না।তখন এতো শএু বানানোর কি দরকার। আর এই আপনার সাহসের নমূনা এতো মানুষের মধ্যেও ভয়ে হুডি পড়ে ঘুরছেন।”
মেঘের কথায় আহানের পা দুটো স্থির হয়ে গেলো। আহানকে এভাবে হটাৎ দাড়াতে দেখে মেঘও দাড়িয়ে গেলো। আহান তীক্ষ্ম চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
আহান খানের সাহস সম্পর্কে তোমার বিন্দুমাত্রও ধারনাই নেই মেঘ। আর ভয়? ভয় জিনিসটা আমার মধ্যে ছোট্ট বেলা থেকেই নেই।
কথাটা বলে আহান আরো এক পা মেঘের সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো
“যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে একটা ছোট্ট পরির প্রতি দূর্বলতা। যার গায়ে এক চুল পরিমান আঘাত লাগলেও আমার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন হয়। ইচ্ছে করে সব কিছু জ্বালিয়ে শেষ করে দেই। আর তাইতো হুডি পড়ে মুখে মাক্স পড়ে নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে রেখেছি যাতে কেউ আমার ক্ষতি করতে এসে আমার ছোট্ট পরিটার ক্ষতি করে না ফেলে।”
কথাটা বলেই আহান সামনের দিকে হাটা দিলো।আর মেঘ সেখানেই স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে অবাক চোখে আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মস্তিষ্কে শুধু একটা কথাই ঘুরছে,, এসব কি বলে গেলো আহান? আর কেনোই বা বললো?
____________________
মেঘদের বাড়ির গেটের সামনে অসহায় ফেইস করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে সাড়িকা এবং সাঈফা। ওদের থেকে কিছুটা দূরে মিহির আর আহির ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আহির মুখ থেকে বিরক্তকর একটা চ শব্দ উচ্চারন করে বললো
“কি সমস্যা তোদের? এখনো সং এর মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো? গাড়িতে উঠবি না? অলরেডি মেঘের বাদরামির জন্য অনেক লেইট হয়ে গেছে । এখন কি সকাল হওয়া পযর্ন্ত এখানেই দাড়িয়ে থাকবি।”
সাড়িকা কাদো কাদো মুখ করে বললো
“আমাদের সাথে এতোজন গার্ড কেনো যাচ্ছে? এনারা আমাদের সাথে গিয়ে কি করবে? মনে হচ্ছে যেনো শপিং করতে না,যুদ্ধ করতে যাচ্ছি।”
মিহির বলল
“এতোজন কোথায়? মাএ তো পাচ জন।”
সাঈফা মুখটা বাকিয়ে মিহিরের মতো করে বললো
“হ্যা সেই তো,, এতোজন কোথায় ?মাএ তো পাচ জন ।আমরা চারজন মানুষ আর আমাদের সাথে পাচ জন গার্ড । এটা কোনো কথা? আহির ভাইয়া একটা কাজ করো ,,বিশ পচিশ জন আরো নিয়ে নেও ,, আমরা যেখানে যেখানে যাবো এরাও আমাদের পিছু পিছু লাইন ভেধে যাবে। যাতে সবাই এটা ভাবতে পারে যে আমরা কেনাকাটা করতে না ডাকাতি করতে আসছি ।যএসব,,,,,”
সাঈফার কথার রেশ ধরে সাড়িকাও ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো
আরে আমাদের সাথে গার্ডের কি প্রয়োজন।(আহির আর মিহিরের দিকে ইশারা করে বললো) তোমরা দুজন আছোতো ভার্ষিডির সো কলড ডন। যারা কথায় কথায় মারামারি করে মানুষকে ভয় দেখায়। তারা থাকতে আবার আমাদের সেইফ করার জন্য গার্ডের কি দরকার।”
ওদের কথায় আহির আর মিহির দুজনই রেগে গেলো।
আহির মৃদু চেচিয়ে বললো
“থাপ্পড় চিনিস? থাপ্পড় মেরে দাত ফেলে দিবো বেয়াদপ কোথাকার। এতো সাহস হয় কি করে তোদের আমাদের ব্যাঙ্গ করে কথা বলছিস। আমরা যখন একবার বলেছি আমাদের সাথে গার্ড যাবে তার মানে যাবে । আর এই বিষয়ে যদি একটা কথাও বলেছিস তাহলে লাথি মেরে ডাষ্টবিনে ফেলে দিবো।”
মিহির হনহন করে হেটে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ড দিয়ে তীক্ষ্ম কন্ঠে বললো
“আহির ওদের সাথে ফালতু কথা বলার সময় আমাদের একদমই নেই। অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
আহীর রাগি চোখে এক পলক সাড়িকা সাঈফার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে মিহিরের পাশের সিটে গিয়ে বসলো তারপর বললো
“ম্যাম আপনারা চাইলে আমাদের সাথে আমাদের গাড়িতে আসতে পারেন । আর যদি আসতে না চান তাহলে চুপচাপ বাসার ভিতরে চলে যান ,এক পাও গেটের বাইরে রাখবেন না। ”
সাড়িকা সাঈফাও আর কিছু বললো না চূপচাপ ভালৌ মেয়ের মতো গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো।কি আর বলবে এখন কিছু বললে নিশ্চয়ই ওদের এখনে রৈখেই চলে যাবে। আর ওদের শপিং করাই হবেনা।
_____________________
একটা সফট টয়ের শপের মধ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘ একটা পিংক কালারের টেডিবিয়ার হাতে নিয়ে দেখছিলো । টেডিবিয়ার টা ওর থেকেও লম্বা। এটা মেঘের ভিষন পছন্দ হয়েছে।বিশেষ করে এই পিংক কালার টা, এই কালারটা মেঘের খুবই পছন্দের । যদিও ওর রুম ভর্তি টেডিবিয়ার তাও নতুন কোনো ডিজাইনের টেডিবিয়ার দেখলেই ওর কিনতে ইচ্ছে করে । আহান আর মেঘ একটা ড্রেসের শপে ঢুকতে যাচ্ছিলো তখনই মেঘের চোখ পড়ে এই পিংক কালারের টেডিবিয়ার টার উপর । টেডিবিয়ারটা দোকানের বাইরে থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো।মেঘ আহানের কাছে বায়না করে ও এটা কিনবে, আহানও আর অমত করেনি। আহানের সম্মতি পেয়ে মেঘ এক দৌড়ে এই দোকানে চলে এসেছে। আহান মেঘের পিছনে আসতেই যাচ্ছিলো তখনই ওর ফোনে একটা কল আসে আর ও ফোনটা রিসিভ করে এক সাইডে কথা বলতে চলে যায়।
মেঘ টেডিবিয়ার টা হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিলো।তখনই কেউ ওর হাত থেকে টেডিবিয়ার টা হেছকা টান দিয়ে ছো মেরে নিয়ে নিলো।হঠাৎ এভাবে টেডিবিয়ারটা নেওয়ায় মেঘ হকচকিয়ে উঠলো। টেডিবিয়ার টা কে নিয়েছে সেটা দেখতে পাশ ফিরে তাকাতেই মেঘ অবাক হয়ে গেলো, সাথে ওর চোখে মুখে স্পষ্ট ঘৃনার ছাপ ফুটে উঠলো। বিরবির করে বললো এরা আবার এখানেও চলে এসেছে। এদের ভুলেই তো গেছিলাম তাও আবার চার বছর পর সামনে এসে কেনো পুরনো ক্ষতগুলো তাজা করে দিচ্ছে।
মেঘের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে আবির আর জেরিন । জেরিনের হাতে মেঘের টেডিবিয়ার টা ধরে রেখেছে।ওর ঠোটের কোনে বাকা হাসি। গায়ে ওয়েষ্টার্ন ড্রেস পড়া,,মাথার সব চুলগুলো কালার করা, চোখে লেন্স লাগানৌ মুখে ভারি মেকাপ করা।এই মূহুর্তে জেরিন কে দেখে মনে হচ্ছে যেনো চলতি ফিরতি মেকআপের দোকান। আবির জেরিনের পাশে দাড়িয়ে এক ধ্যানে শুধু মেঘকেই দেখছে।আশে পাশে কি হচ্ছে তাতে যেনৌ তার বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই। সে এই মৃহুর্তে মেঘকে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ায় ব্যাস্ত। জেরিন একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই টেডি টা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে । এইটা আমার লাগবে। আর যদি পছন্দ না হতো তাও নিয়ে নিতাম। ইউ নো, ছোট বেলা থেকেই তোর পছন্দের জিনিস গুলো কেরে নিতে আমার খুবই ভালো লাগে। মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত শান্তি পাই আমি। ছোট বেলা থেকেই তোর ফেবারিট ড্রেস , টয়,জুতা সব আমি নিয়ে নিতাম।বড় হওয়ার পর তোর থেকে আবিরকেও নিয়ে নিয়েছি আর এখন এই পুতুলটাও নিয়ে নিবো।”
জেরিনের কথা শুনে মেঘের খুব কষ্ট হচ্ছে। যে মেয়েটাকে ও এতো ভালোবাসতো সেই মেয়েটা সবসময় ওর বন্ধুত্বের সুযোগ নিতো। মেঘ তাছিল্য হেসে বললো
“তুই আমার থেকে আমার প্রিয় জিনিস গুলো কেরে নিতিস না, আমি তোকে নিজের ইচ্ছায় দিয়ে দিতাম। জানিসতো ছোট বেলা থেকেই তুই আর দিশা ছাড়া আমার কোনো বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলো না।তাই তুই আমার থেকে যখন যেটা চাইতিস আমি তোকে ভালো বেসেই দিয়ে দিতাম।আর বাকি রইলো আবির ভাইয়ার কথা,, আবির ভাইয়া কখনোই আমার প্রিয় তালিকার মধ্যে ছিলো না। আর ভুলে জাসনা চাচ্চু তোদের বিয়েটা আমার কথাতেই দিয়েছিলো।আর তোর এই টেডি টা পছন্দ হলে তুই নিয়ে নে এটা আমার লাগবে না।”
জেরিন রেগে গিয়ে বললো
“তুই বললেও টেডি টা আমি নেবো,,,না বললেও নেবো। আর সবসময় এতো ভালো মেয়ে হওয়ার নাটক করিস কিভাবে? ওই দিন আমার আর আবিরের বিয়েটা এমনিতেও হতো,,আমাদের বিয়েটা কেউ আটকাতে পারতো না। মাঝখান থেকে তুই মামুকে বিয়েতে রাজি হওয়ার কথাটা বলে সবার চোখে মহান হয়ে গেলি। তুইতো সবসময় সবার সামনে ভালো মেয়ে সেজে থাকার প্লান করতিস,,আর আমাকে সবার চোখে খারাপ বানিয়ে দিতিস।”
জেরিন রাগের চোটে কথাটা এতো জোড়েই বলেছে যে শপের কাষ্টমার সহ সব স্টাফেরা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।আবির এতোক্ষন মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলেও জেরিনের চেচিয়ে বলা কথায় ঘোর থেকে বের হয়ে আসে।সবাই এভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মেঘের ভিষন লজ্জা আর অসস্তি লাগছে ।ও নিজের মাথাটা নিচু করে ফেললো।এই মূহুর্তে মেঘের নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। মনের অযান্তেই চোখ দুটো নিশব্দে আহানকে খুজে যাচ্ছে ।তখনই খুব পরিচিত একটা কন্ঠস্বর মেঘের কানে ভেষে এলো।
“ওর ভালো বা মহান সাজার কোনো দরকার নেই মিসেস আবির রহমান। ওর মনটা এমনিতেই এনজেলদের মতো,,একদম স্নিগ্ধ সশ্চ পবিত্র । ”
মেঘ চট করে মাথা তুলে দরজার দিকে তাকালো ।দেখলো আহান ফোনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে ভিতরে ঢুকছে।আবির আর জেরিনও ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকালো দেখলো হুডি পড়া একটা ছেলে ওদের দিকেই আসছে।ছেলেটার চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আহান জেরিনের একদম সামনে এসে স্ট্রং হয়ে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো
“আর ও আপনাকে সবার চোখে খারাপ বানাবে?হাউ ফানি? যে সবসময় আপনার করা ভুল গুলো দায় ভার ইচ্ছে করে নিজের মাথায় নিয়ে নিয়েছে। আপনার করা অন্যায় গুলোর জন্য সবার কাছে বকা শুনৈছে। তবুও কখনো মুখ ফুটে কোনো অভিযোগ করেনি সেই মেয়েটা কিভাবে আপনাকে সবার সামনে খারাপ বানাবে বলুনতো। আসলে কি জানেন? আপনি যেই পরিমান নোংরা মানষিকতার মানুষ তাতে আপনাকে খারাপ বানানোর সাধ্য ওর কেনো কারোর । আপনার মধ্যে সব কিছুর কমতি থাকলেও ব্যাডনেসের কমতি একদমই নেই।”
আহানের কথায় জেরিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো জোড়ে চেচিয়ে আহানকে উদ্দেশ্য করে বললো
“হাউ ডেয়ার ইউ মিষ্টার ।আপনার সাহস তো কম না আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে বলছেন।আপনি জানেন আমি কে?আমি চাইলে এক্ষনি আপনাকে মেরে হাত পা ভেঙে রাস্তায় বসিয়ে দিতে পারি।”
জেরিনের কথায় আহান হো হো করে হেসে দিলো এমন ভাবে হাসছে যেনো মনে হচ্ছে ওকে কেউ এই বছরের সেরা যোকস টা বলেছে।মেঘের ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই হাসির মানে আর কেউ না বুঝলেও ও ঠিকই বুঝেছে।
মেঘ মনে মনে বললো,এই মেয়েটা কি আদৌ জানে ও কাকে কি বলছে। আহান খানকে ক্ষমতা দেখাচ্ছে,হাত পা ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আল্লাহ জানে ওর কি অবস্থা হবে।আহান হাসতে হাসতে বললো
“রিয়েলি? আপনার এতো ক্ষমতা যে আপনি আমার হাত পা ভেঙে দিবেন? ওহ মাই গড আমি তো ভিষন ভয় পেয়ে গেলাম।”
ওদের এভাবে জোড়ে জোড়ে কথা বলতে শুনে একজন স্টাফ এগিয়ে এসে জেরিনকে উদ্দেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“এনি প্রভলেম ম্যাম?”
জেরিন চেচিয়ে বললো
“হ্যা বিগ প্রভলেম। কোথায় থাকেন আপনারা? আপনাদের শপে এইসব থার্ড ক্লাস লোকেরা ঢোকে কিভাবে?( আহানকে হাতের ইশারায় দেখিয়ে বললো)এই লোকটা কখন থেকে আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করছে। এনাকে প্লিজ এক্ষুনি ঘার ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করুন।”
ষ্টাফ টা মার্জিত ভঙ্গিতে বললো
“প্লিজ ম্যাম এতো জোড়ে কথা বলবেন না।এতে আমাদের অন্য কাষ্টমারদের সমস্যা হবে।( তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বললো)স্যার কি সমস্যা হচ্ছে আমাকে বলুন সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
আহান জেরিনের হাতে থাকা টেডিবিয়ার টাকে দেখিয়ে বললো
“আচ্ছা,,আপনাদের কাছে এরকম সেইম ডিজাইনের কয়টা টেডি আছে?”
ছেলেটা একটু ভেবে বললো
“এরকম সেইম ডিজাইনের দেখতে আরো চারটা আছে স্যার।ম্যামের হাতের টা নিয়ে টোটাল পাচটা।”
“ওকে একটা কাজ করুন। এই পাচটা টেডির বিল আমার নামে বানাবেন। ওই চারটা ভালো করে প্যাকিং করে আমাকে দিন। (জেরিনের হাতে থাকা টেডি টাকে দেখিয়ে বললো) আর এইটাকে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। ”
আহানের কথায় মেঘ, জেরিন,আবির ভিষন অবাক হলো।ছেলেটার মুখ দেখেও মনে হচ্ছে ও নিজেও বেশ অবাক হয়েছে। হবে নাই বা কেনো ? কখনো কারো এইরকম আজগুবি আবদার শোনেনি। টাকা দিয়ে জিনিস কিনে সেটা যে কেউ পুড়িয়ে ফেলেতে বলতে পারে এটা আগে ওর জানা ছিলোনা।ছেলেটা জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“বাট ওটা পুড়িয়ে কেনো ফেলবো স্যার?ওটা মনে হয় এই ম্যামের (জেরিনকে দেখিয়ে)খুব পছন্দ হয়েছে।আপনার যদি ওটা না লাগে তাহলে ওটা এই ম্যাম দিয়ে দেই।”
জেরিন ওর হাতে থাকা টেডি টা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে ফেলে দিয়ে আবিরের কাছে গিয়ে ওর একহাত আকরে ধরে ন্যাক্যামো করে বললো
“হাবি দেখো না,, ওই ছেলেটা বলছে আমার পছন্দের টেডিটা নিয়ে নিবে। তুমি ওই গুলো আমাকে কিনে দাওনা প্লিজ। এই ডিজাইনের সব টেডি গুলো আমার এক্ষুনি লাগবে ।”
আবির জেরিনের দিকে তাকিয়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে।সেই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“আমি এই টেডি গুলোর ডাবল দাম দিবো ।আপনি এইগুলোর বিল আমার নামে করুন।”
আহান বললো
“দেখুন আপনারা এইগুলোর প্রাইজ যা চান আমি তাই দিবো। তবুও এইগুলো আমারই চাই।”
ওদের কথা শুনে ছেলেটা পড়ে গেলো মহা বিপদে। কার কথা শুনবে কিছুই বুঝতে পারছে না।ইচ্ছে করছে এখান থেকে দৌড়ে চলে যেতে। বেচারার মুখটা একদম কাদো কাদো হয়ে গেছে।ও জীবনেও কাউকে টেডিবিয়ার কেনা নিয়ে লরাই করতে দেখেনি তাও আবার এতো বড় বড় ছেলে মেয়েদের। বেচারা কি করবে বুঝতে না পেরে দৌড়ে ম্যানেজারকে ডাকতে চলে গেলো। ছেলেটার এরকম অবস্থা দেখে মেঘের পেট ফেটে হাসি আসছে। এটা ওর সবসময়ের অভ্যাস সিরিয়াস মোমেন্টে ফিক করে হেসে দেওয়া। কিছু সময়ের মধ্যেই সেই ছেলেটা একজন মাঝ বয়সি লোককে সাথে নিয়ে হাজির হলো ।লোকটি আনুনয়ের স্বরে বললো
“স্যার আপনাদের সমস্যাটা আমি শুনেছি। কিন্তু আপনারা এভাবে যদি বলেন তাহলে কিভাবে হবে। তারথেকে আপনারা একটা কাজ করুন আপনারা দুজনেই আপাততো দুটো দুটো চারটা টেডি নিয়ে নিন আর বাকি গুলো আমি আপনাদের কালকের মধ্যে অর্ডার দিয়ে এনে দিবো।”
চলবে,,,,,