#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ4
রাত 11:35 ……..
ঢাকার গ্রিন এভার ক্লিনিকের করিডরে বসে আছে মিরা রহমান,,আজম রহমান,সাথি রহমান ।শিহাব রহমান রিসিভশনে গেছেন ফর্মালিটিজ পূরণ করতে।
মিরা রহমান সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন,,,, তার দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরছে,,, শব্দহীন কান্না করছেন তিনি ।অতিশোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। তার ছেলে মেয়ে দুজনই এই ক্লিনিকে ভর্তি।মিহিরকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ,, ডাক্তার আসলেই অপারেশনটা করা হবে,,,মেঘকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে,,,হাতে স্যালাইন লাগানো হয়েছে,,,প্রায় পাচ ঘন্টা ধরে মেঘ অঙ্গান হয়ে আছে।অতিরিক্ত মানষিক চাপ, উইকনেস এর কারনে এই অবস্থা হয়েছে,,,তাছাড়া অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার কারনে প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে যার জন্য শ্বাস নিতে পারছে না,,, তাই অক্সিজেন লাগানো হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন sense না আসা পযর্ন্ত আর কিছু বলা যাচ্ছে না।ওনারা সিলেট থেকে রাত নয়টায় ফ্লাইটে ঢাকার উদ্যেশে রওনা হয়েছেন,,, ঢাকা এয়ারপোর্টে রাত 11 টায় ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে।এয়ারপোর্ট থেকে এখানে 11:30 এ পৌছেছে।শিহাব রহমানের ডাকে চোখ খুলে তাকায় মিরা রহমান।শিহাব রহমান শুকনো গলায় বললেন
কিছু ক্ষনের মধ্যেই ডাক্তার আসছে,,, ওনার বাসা এখান থেকে কাছাকাছি,,,এই ক্লিনিকের ওনারের wife। একজন নামকরা ডাক্তার ।
__________________________________________________
খান ম্যানসন দুই তলার সাদা কালারের একটা ডু প্লেক্স বাড়ি।বাড়িটার চারপাশে কালো রঙের পোশাক পড়ে হাতে বন্ধুক নিয়ে কিছু গার্ডস পাহাড়া দিচ্ছে। এই বাড়ির মালিকের নাম হলো আহাদ খান,,,উনি একজন পলিটিশিয়ান প্লাস একজন বিজনেসম্যান,,,ওনার ওয়াইফ এর নাম মোনা খান,,,পেশায় একজন ডক্টর।ওনাদর দুই ছেলে,,,বড় ছেলের নাম সাবরিদ সিজাত আহান।সবাই আহান বলে ডাকে,,, আহান লন্ডনের একটা ভার্সিটি থেকে MBA করছে।পাশাপাশি তার বাবার লন্ডনের বিজনেস সামলায়। ছোট ছেলের নাম হলো সাফওয়ান সিজাত আহির,,,আহির ঢাকার একটা ভার্সিটিতে অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
সোফায় বসে কফি খেতে খেতে বিজনেস নিয়ে টুকটাক কথা বলছে আহান এবং আহাদ খান।পাশের সোফায় বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে গেমস খেলছে আহীর।মোনা খান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো
__”হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল,,, আমাকে এখনি হসপিটালে যেতে হবে,,, একটা এমারজেন্সি কেস আছে।আহান তুমি আমাকে একটু ড্রপ করে দেবে প্লিজ।”
আহান হাতের কফির মগটা টেবিলে রেখে দাড়িয়ে গিয়ে বললো
__”ওকে মা।আমি পাচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
আহানের কথা শেষ হতেই আহির বললো
___”মা তোমাদের সাথে আমিও যাবো। বাড়িতে ভীষন বোরিং লাগছে,,,তাছাড়া অনেক দিন হসপিটালে যাওয়া হয়না।”
মোনা খান ওনার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বললেন
__”ঠিক আছে তারাতারি রেডি হও।হাতে বেশি সময় নেই।”
তাদের কথার মাঝে আহাদ খান হালকা রাগ দেখিয়ে বললো
__”রেডি হও মানে কী?সবাই চলে গেলে আমি বাসায় বসে একা একা কি করবো?”
আহান সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললো
__”কি আর করবে,,, পেত্নির সাথে কাপল ড্যান্স করবে।”
কথাটা বলেই আহান উপরে রেডি হতে চলে গেল,,, আহানের কথা শুনে আহির ফিক করে হেসে দিল,,,তারপর সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বললো
__”বাবা,,,মা কিন্তু প্রায়ই রাতে হসপিটালের কথা বলে বের হয়,,,আদৌ হাসপাতালে যায় কিনা সেটা নিয়ে আমার যঠেষ্ট ডাউট আছে,,, প্লিজ সাবধানে থেকো আর নিজের বউয়ের দিকে নজর রেখো কখন তোমার জন্য সতীন নিয়ে বাড়িতে চলে আসে বলা তো যায়না।”
আহাদ খান আহীরের কান টেনে ধরে বললো
__”তুমি তোমার নিজের চরকায় তেল দাও বাবা,,,আমার বউয়ের ব্যাপার আমি বুঝে নেব।তোমার এতো বেশি না ভাবলেও চলবে।”
আহির তার বাবার থেকে নিজেকে ছাড়িরে নিয়ে বললো
__”হুহ,,,এই জন্য লোকে বলে কারো ভালো করতে নেই।যখন তোমার বউ তোমাকে ছ্যাক্যা দিয়ে ব্যাক্যা করে চলে যাবে,,,, তখন বসে বসে অরিজিৎ সিং এর স্যাড সং শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”
কথাটা বলেই উপরের দিকে হাটা শুরু করল।আহাদ খান ছেলের কথায় কোনো পাএা দিলেন না,,,দূনিয়ার যতো উদ্ভট কথা তা তার ছোট ছেলের মুখ থেকে শোনা যাবে।এই ছেলের সাথে কেউ পাচ মিনিট কথা বললে তার মাথা খারপ হয়ে যাবে।যার একবার পিছনে লাগে তার জিবন তেজপাতা বানিয়ে ছাড়ে।তার বড় ছেলে ঠিক তার ছোট ছেলের উল্টো একদম শান্ত,গম্ভির বুদ্ধিমান একটা ছেলে।কারো সাথে অতিরিক্ত কথা বলবে না,মিশবে না, বেশি হাসবে না । শুধু দুই ভাইয়ের মধ্যে দুইটা জিনিসের মিল আছে একটা হলো দুই ভাই দেখতে অসম্ভব সুন্দর।
দিত্বীয় হলো এদের মাথায় একবার রাগ উঠলে যা খুশি তাই করতে পারে। বিশেষ করে আহান সবসময় রাগ তার নাকের ডগায় থাকে।
আহাদ খান মোনা খান কে উদ্যেশ্য করে বললো
_” আমিও যাবো তোমাদের সাথে।”
মোনা খান এবার রেগে গেলেন,, তিনি রাগি গলায় বললেন
___”Why not,,,তুমি একা কেন যাবে,,,এই বাড়িটাকে সাথে করে উঠিয়ে নিয়ে চলো,,আমি তো পিকনিক করতে যাচ্ছি ওখানে। ”
সিড়িতে দাঁড়িয়ে আহির তার বাবাকে উদ্যেশ্য করে বললো
__”দেখেছো ড্যাড,,মম তো তোমাকে বলতে পারতো ঠিক আছে চলো,,,কিন্ত মম উল্টো রাগ দেখাচ্ছে,,,মম তোমাকে সাথে করে কোথাও নিয়ে যেতে চায় না,,,নিশ্চই ডালমে কুছ কালা হে।”
মোনা খান আহির কে তাড়া করে বললো
__” অসভ্য ছেলে তোমাকে আমি জুতা পেটা করবো,,,মুখে যখন যা আসে তখন তাই বলো।”
__”bro আমাকে এই ঘসেটি বেগমের হাত থেকে বাচা।”
কথাটা বলেই আহির দিলো এক ভো দৌড়।তাকে আর পায় কে?
গ্রিন এভার ক্লিনিকের লিফট থেকে তিন তলায় নামলো মোনা খান,আহাদ খান, আহান এবং আহির সাথে দুইজন নার্স,,,তাদের কে দেখে রিসিভশনের মেয়ে গুলো দাঁড়িয়ে গিয়ে হ্যালো বললো।উওরে উনারা হ্যালো বলে সামনে এগোলো।
একজন নার্স মিরা রহমান দের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো এনারা পেশেন্টের বাড়িড় লোক ম্যাম।নার্সের কথা শুনে, মিরা ও আজম রহমান চোখ তুলে মোনা খানদের এর দিকে তাকায়,,,তাকিয়ে তারা একটা বড়ো সড়ো একটা ঝটকা খায়,,,মিরা রহমান বসা থেকে দাড়িয়ে যায়,,,মোনা খান দুই পা পিছিয়ে গিয়ে পরে যেতে নিলেই আহাদ খান ধরে ফেলেন।তাদের পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে,,,এনারা একেক জন আরেক জনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।ওনারা সবাই রিতিমতো স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে ।মোনা খান আর মিরা রহমানের চোখ দিয়ে গরিয়ে পানি পরছে।
মোনা খান কাপা কাপা গলায় ডাক দেয়
___”মিরা।”
মোনা খানের ডাকে হুস ফিরে মিরা রহমানের,,,,সে দৌড়ে গিয়ে মোনা খানের পা ধরে জোড়ে শব্দ করে কেদে দেয়,,আর কেদে কেদে বলে
__”আপা আমার ছেলেটাকে বাচিয়ে নাও প্লিজ,,আমি তোমার কাছে আমার ছেলের প্রান ভিক্ষা চাইছি,,,আমার দুই ছেলে মেয়ের অবস্থাই খারাপ,,,আমার উপর একটু দয়া করো,,আমার ছেলেটা কে তুমি বাচিয়ে নাও।”
মোনা খান মিরা রহমান কে ধরে দাড় করালেন ,,তারপর অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন
___” বাচিয়ে নেবো মানে ,,কি হয়েছে তো ছেলের?”
মিরা রহমান কাদতে কাদতে বললেন
__”গুলি লেগেছে।প্লিজ আমার ছেলেটাকে বাচিয়ে নাও ।আমার ছেলে মেয়ের কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো।”
মোনা খান চমকে উঠলেন।মায়াভরা দৃষ্টিতে মিরা রহমানের মুখের দিকে তাকালেন,,,কতোগুলো বছর পর দেখলেন তার এই বোনটা কে,,,তার সেই ছোট্ট বোনটা কতো বড়ো হয়ে গেছে।আজকে এতোগুলো বছর পর বোনটাকে দেখলেন তাও আবার এই অবস্থায়।বোনটাকে এতো বছর পর কাছে পেয়েও সে খুশি হতে পারছে না কারন তার বোনটা যে খুব কষ্টে আছে।মোনা খান হাত বাড়িয়ে মিরা রহমানের চোখের পানি মুছে দিলেন।একবার বোনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন
___” ইনশাআল্লাহ ,,,I will try my Best. আজকে যদি তোর ছেলেকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারি,,,তাহলে আর কোনো দিন এই ডাক্তারের এ্যাপরোনটা পরবো না ।
এখানে উপস্থিত সবাই চমকে উঠে মোনা খানের দিকে তাকালো।কেউ ভাবতেই পারেনি মোনা খান এই কথা বলবেন।
মোনা খান এবং মিরা রহমান দুজন আপন বোন ।আহাদ খান মিরা আর আজম রহমান কে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন ,,,আহান এবং আহির বাস্তবে কখনও মিরা রহমানকে না দেখলেও ছবিতে দেখেছে,,,তাই তাদের খালামনি কে চিনতে কোনো আসুবিধা হলো না।
মোনা খান মিরা রহমানকে ছেরে দিয়ে ,,,,তার কপালে একটা চুমু খেলেন তরপর বললেন
__”একদম কান্নাকাটি করবি না,,,তোর ছেলে মেয়ের কিচ্ছু হবে না,,,আমি আছি তো,,,, আমি সব কিছু ঠিক করে দেব।”
মিরা রহমান যেন বোনের কথায় কিছুটা ভরসা পেল,,, মোনা খান মিরা রহমানকে ধরে বসিয়ে দিলেন,,,তারপর আহানের সামনে এসে গলার স্বরটা নিচু করে বললেন
__”আহান তোমার মামাদের ফোন করো ,,,,,,সবাইকে এক্ষুনি এখানে আসতে বলো ।”
আহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মোনা খান তাড়াতাড়ি করে ওটির মধ্যে চলে গেলেন। এতক্ষন এখানে যা হলো তা শিহাব রহমান এবং সাথী রহমানের মাথার উপর দিয়ে গেল,,,,তাদের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না কারা এরা,,,মিরা রহমানকেই বা কিভাবে চেনে? কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে,,, শিহাব রহমান এবার অাজম রহমানকে জিঙ্গেস করলেন?
___” আজম কি হচ্ছে এসব,,,এনারা কারা,,, এনারা মিরাকেই বা কিভাবে চেনেন? আর ওই ভদ্র মহিলাকে মিরা কেনই বা আপা ডাকছিল? ওনি তো ডাক্তার মোনা খান ।এই হসপিটালৈর ওনারের wife. তাহলে মিরার সাথে ওনাদের কি সম্পর্ক?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আজম রহমান কিছু বলতে যাবে,,, তার আগেই আহাদ খান সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বললো
__” আমি বলছি।”
শিহাব রহমান এবং সাথি রহমান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আহাদ খানের দিকে তাকালো,,,আহাদ তাদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললোঃ
___”একটু আগে যে ভদ্রমহিলা কে জরিয়ে ধরে মিরা কাদছিলো,,,,উনি হলেন ডক্টর মোনা খান। মিরার আপন বড়ো বোন।আর আমি ডাক্তার মোনার হাসবেন্ড,,, মিরার একমাত্র দুলাভাই,,(তারপর আহান এবং আহিরের দিকে তাকিয়ে বললো) আমার বড় ছেলে আহান আর ছোট ছেলে আহির।তাছাড়া আমার আরো একটা পরিচয় আছে,,,আমি আর আজম একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আমরা একই ভার্সিটিতে একই ইয়ারে পরতাম।”
আহাদ খানের কথায় শিহাব রহমান এবং সাথি রহমান চমকে উঠলেন ,,, কারন উনারা এতোদিন জানতো ,মিরা রহমানের বাবার বাড়ির লোক খুবই গরিব,,,তাই মিরা রহমানের কেউ কোনো খোজ খবর নেয় না। আর এইজন্য মিরা রহমানকে তার শশুর বাড়ির অনেকেই অনেক অপমান করতো।বিশেষ করে আবিদা রহমান উনি কথায় কথায় মিরা রহমানকে সবার সামনে ছোটলোক বাড়ির মেয়ে বলে অপমান করতেন।মিরা রহমান কিংবা আজম রহমান কখনও বলেননি মিরা রহমানের বাবার বাড়ি কোথায়,, কিংবা বাড়িতে কে কে আছে । আর তার বাবার বাড়ির কোনো লোক এতো বছরে মিরা রহমানের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। তাছাড়া মিরা রহমানকে ছোট ফ্যামিলির মেয়ে বললে সে কখনো কোনো প্রতিবাদ করতো না,,,তাই সবাই এটাই ভাবতো যে তার ফ্যামিলি লোক সত্যিই গরিব।কিন্তু মোনা খান আহাদ খান কে দেখে যথেষ্ট রিচ বলে মনে হচ্ছে শিহাব রহমানের। শিহাব রহমানের ভীষন Confusing লাগছে ব্যাপারটা। confusion দূর করতে সে আজম রহমান এর দিকে তাকিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলো। কিন্তু আজম রহমান তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো
__” আমি জানি ভাইয়া আপনি কি বলবেন,,,আমিও আপনাকে সবটা খুলে বলতে চাই।এটা যদিও বলার সঠিক সময় না,,,তবুও বলবো।আজকে যদি না বলি তাহলে হয়তো আরও দেরি হয়ে যাবে।তাছাড়া অতীত যখন সামনে এসেই গেছে,,,তাহলে সবটা বলে দেওয়াই ভালো।”
________________________________________________________________________________________________
ওটির সামনের করিডোরের একপাশের সিটে বসলেন আহাদ খান,,তার পাশে আজম রহমান,,আর তারপরে শিহাব রহমান।
ওপর পাশে ওনাদের মুখোমুখি হয় বসে আছেন সাথি রহমান,,মিরা রহমান,এবং আহির। আহির একহাতে মিরা রহমানকে জড়িয়ে ধরে আছে,,, মিরা রহমান আহিরের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছেন।আহান তার মামাদের সাথে ফোনে কথা বলতে একটু নিচে গেছে।এখানে কথা বললে পেশেন্টের ডিষ্টার্ব হবে তাই।নিচে যাওয়ার আগে মিরা রহমানকে একবার জড়িয়ে ধরে,,,কপালে চুমু দিয়ে বলেছে
__” একদম চিন্তা করবে না মামনি। সব ঠিক হয়ে যাবে ,,, তুমি এখানে একটু বসো ,,,আমি নিচ থেকে এখনি আসছি,,”
মিরা রহমান উওরে কিছুই বলেননি শুধু মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আহানের মুখের দিকে।
আজম খান লম্বা একটা শ্বাস নিলো,,,তারপর গলার স্বরটা একটু আস্তে করে বলা শুরু করলো
___”আমি আর আহাদ খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আমি ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে ঢাকায় ভর্তি হই আর তখন থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ত্ব হয়। আমরা এতটাই ভালো বন্ধু ছিলাম যে একজন আরেকজনকে রেখে একগ্লাস পানিও কখনো খেতাম না।আমাদের যখন অর্নাস শেষ হয়,,তখন আহাদের বাবা জানায় তার বন্ধুর মেয়ের সাথে আহাদের বিয়ে ঠিক করছে।আহাদও বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিল,,,ও অন্য কাউকে পছন্দ কিংবা ভালোবাসতো না,,,বিয়েতে অমত করার কোনো কারণ ছিলো না।তারপর মোনার সাথে আহাদের বেশ ধুমধাম করে বিয়েটা দেওয়া হয়। তখন থেকেই আমি আহাদের সাথে মাঝে মাঝে মোনাদের বাড়িতে যেতাম,,, আর সেখানেই আমার মিরার সাথে পরিচয় হয়,,,,আর আস্তে আস্তে ওকে ভালোবেসে ফেলি। সবকিছু ঠিকই চলছিল,,,তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললে বড় ভাবির বোনের সাথে।আর আমি সেই কথা মিরাকে বলি,,মিরা কোনো উপায় না পেয়ে ওর বাড়ির সবার কাছে আমাদের বিষয়টা বলে দেয়।ওদের বাড়ির কেউ আমাদের সম্পরর্কটা মেনে নেয়নি।কারন জিঙ্গেস করলে মিরার বাবা বলেছিলেন ওনার যতো টাকা আর প্রোপ্রার্টি আছে,,,সেই টাকার প্রোপ্রার্টির চারভাগের একভাগ ও আমার বাবার নেই ।অনেক বোঝানোর পরও মিরার বাবা ভাইরা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতে চায় নি।উল্টে মিরার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেন।আমি আহাদ আর মোনার কাছেও সাহায্য চেয়ে ছিলাম,, কিন্তু ওরা আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে,,ওরা পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো গিয়ে কোনো কথা বলবে না,,,তারচেয়ে আমি যেনো মিরা কে ভুলে যাই সেটাই সবার জন্য ভালো হবে। তাই আমরা আর কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেই।তোমাদের ইচ্ছে করেই মিরা ওর পরিবারের সম্পর্কে কিছুই বলে নি।কারন তোমরা সত্যিটা জানলে তোমাদের সামনে আমি ছোট হয়ে যেতাম।নিজে তো বলেই নি আমাকে দিয়েও প্রমিজ করিয়ে ছিলো ,,যাতে ওর পরিচয়টা কখনো কাউকে না বলি।নিজে সবার হাজার অপমান সহ্য করেছে,,, কাউকে কখনো এটা বুঝতে দেয় নি যে,, আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি ,,,মিরা আমার অযগ্য বলে নয়,,,,আমি ওর অযগ্য বলে।”
কথাগুলো একসঙ্গে বলে থামলো আজম রহমান,,,তারপর আস্তে করে নিজের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে নিলেন।এবার শিহাব রহমান বেশ আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গেস করলো
___” পালিয়ে আসার পর আর কখনো মিরার বাবার বাড়ি গিয়েছিলি?”
আহাদ খান বেশ শান্ত সুরে বললো বাকিটা আমি বলছি। কথাটা শুনেই সবাই ওনার দিকে তাকালো।তারপর ওনি বললো
___”মিরা চলে যাবার পর,,,,সবাই এটা জেনে যায় যে মিরা ওর বয়ফেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে ।মিরার সাথে যে ছেলেটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল ,,,,,সেই ছেলেটার বাড়ির লোক ,,মিরাদের বাড়িতে এসে,,,মিরার বাবাকে,, মাকে,,ভাইদের,,মোনাকে,, আমাকে খুব অপমান করে।শুধু ওনারা না পাড়া, প্রতিবেশি,আত্মীয়, স্বজন যে যেখানে পারতো সেখানেই অপমান করতো।আমার আজম আর মিরার উপর ভীষন রাগ হয়েছিল।তাই ওদের কখনো কোনো খোজখবর নেইনি।ওরা যাওয়ার প্রায় তিন বছর পর আমার স্বশুর -স্বাশরি গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়।সেখানেই আমার শ্বাশরির স্পট ডেড হয়।আমার স্বশুরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।আর তার দুইদিন পর উনি মারা যান। মারা যাওয়ার আগে,,,উনি সবাইকে ডেকে বলেছিলেন,,,উনি মিরাকে আর আজমকে মাফ করে দিয়েছেন।মোনা আর মোনার ভাইদের বলে ওরাও যাতে মিরাদের মাফ করে দেয়।আর ওদের বিয়েটা মেনে নেয়। কিন্তু ওদের মনে মিরার প্রতি অনেক রাগ ছিল ,,,, তাই মাফ তো করেইনি ,,,, উল্টে মিরার মা বাবার মৃত্যুর খবরটাও ওকে জানায়নি।ওনাদের মৃত্যুর পনেরো দিন পর,,,মিরা আর আজম কিভাবে যেন খবরটা পেয়ে যায়।খবরটা শুনেই ওরা মিরাদের বাবার বাড়িতে আসে,,,মোনা আর মোনার ভাইরা ওদের বাসায় ঢুকতে দেয়নি।এমনকি ওর মা বাবার কবরটা কোথায় সেটাও বলেনি।মিরা মোনার পা ধরে অনেক কেদেছিল ,,, কিন্তু মোনার মোন একটুও গলেনি।উল্টে বলেছিল মিরা যাতে কখনও এই বাড়ির চারপাশেও না আসে। সেদিন মিরা কাদতে কাদতে বলেছিলো ও আর কখনও ওই বাড়ি যাবে না। তারপর সেই যে মিরা চলে এসেছিল,,,তারপর আর কোনোদিন ওই বাড়িতে আসেনি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছু বদলে যায়,,,আমাদের সবার রাগ অভিমান সব কমে গেছিলো। আর ওরাও মিরাকে মাফ করে দিয়েছিল।তারপর মিরাকে আমরা অনেক খুজে ছিলাম কিন্তু কোথাও পাইনি। ”
কথাগুলো বলেই একটা দীর্ঘস্বাস ফেললা আহাদ খান। কথাগুলো শুনে শিহাব রহমান এবং সাথি চোখে পানি এসে গেছে।
#চলবে…