#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:২৮
ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমিরা আপু গাল ফুলিয়ে বসে আছে। বড়োরা খাওয়া শেষ করে ওঠার পর আমরা ছোটোরা সবাই একসাথে খেতে বসেছি। আমিরা আপু খুব আশা নিয়ে আগে-আগে তাজ ভাইয়ের পাশের চেয়ারে বসেছিল। কিন্তু আমি এসে তাদের বিপরীত দিকের চেয়ারে বসার পর, তাজ ভাই নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়েছেন। তার কান্ডে উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসলেও আমিরা আপুর মুখটা চুপসে গেল। মেয়ের মুখের অবস্থা দেখে ফুপু তাজ ভাইকে প্রশ্ন করলেন,“ওখান থেকে আবার এখানে এলি কেন বাবা?”
তাজ ভাই স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,“ইলু ঠিকমতো না খেলে ওর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। দূরে বসে থাকলে ও অজুহাত দেখিয়ে ঠিকমতো খাবে না।”
আমিরা আপু বলে উঠল,“তা দেখার জন্য তো বড়োরা আছে ভাইয়া। আপনাকেই কেন লাগবে?”
আমিরা আপুর সাথে তাল মিলিয়ে জুম্মান ভাইয়াও বললেন,“তাই তো, এখানে আম্মু আছে, মামি আছে। তারা তো খেয়াল রাখবেই।”
তাজ ভাই তাদের কথায় কান না দিয়ে খেতে আরম্ভ করলেন। খাবার মুখে পুরে আমাকে বললেন,“খাচ্ছিস না কেন?”
আমি খাবার মুখে তুলতে গিয়েও থেমে গেলাম। তাজ ভাই ভ্রুকুটি করে পুনরায় প্রশ্ন করলেন,“কী হয়েছে?”
আমি এদিক-ওদিক সন্ধানী দৃষ্টি বিচরণ করে বললাম,“জেমি কোথায়? এখানেই তো ছিল।”
অর্নি ভাবি হেসে বললেন,“এখানেই আশেপাশে আছে হয়তো। চিন্তা কোরো না। তুমি খাও, জেমিকে আমি খাবার দিচ্ছি।”
অর্নি ভাবি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠতে যেতেই জেমি এসে উপস্থিত। এসেই আমার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে মিয়াও মিয়াও শুরু করে দিলো। অর্নি ভাবি একটা বাটিতে মাংস তুলতে নিতেই ফুপু বাধা দিয়ে বললেন,“আরে থামো, থামো। আমি দিচ্ছি খাবার, তুমি খাও।”
অর্নি ভাবি ‘আচ্ছা’ বলে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। ফুপু রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। আমি পরোটা ছিঁড়ে মুখে পুরে চিবোতে-চিবোতে রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকালাম। ফুপু একটা বাটি হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বাটিটা জেমির সামনে রাখতেই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বাটিতে কিছু হাড়গোড়, একটু আগে বড়োরা খাওয়ার পর যেগুলো ফেলে দিয়েছিল সেগুলোই হয়তো। জেমি সেগুলো শুঁকে বাটির কাছ থেকে সরে এসে আবার আমার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে মিয়াও মিয়াও শুরু করল। আমি কিছু বলতেও পারছি না। তাজ ভাই জেমির বাটির দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে বললেন,“এসব কী দিয়েছ ফুপু?”
ফুপু বললেন,“বিড়ালকে এছাড়া আবার কী দিব?”
মিনহা আপু বলল,“কেন? তুমি দেখনি জেমি কী খায়?”
“দেখেছি। বলি একটা বিড়ালকে নিয়ে এত আদিকখেতার কী দরকার? মাছ-মাংস না দিলে ক্ষুধার জ্বালায় সবই খাবে।”
আমি খাবার রেখে অবাক দৃষ্টিতে ফুপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তাজ ভাই বললেন,“এসব ও কখনও খায় না ফুপু।”
আহনাফ ভাইয়া বললেন,“ওসব ফেলে মাংস দাও ফুপু।”
মেজো কাকি বললেন,“আমি দিচ্ছি।”
সঙ্গে সঙ্গে ফুপু ধমকের সুরে বললেন,“চুপচাপ খা তো নিজেরা। একটা বিড়ালের খাবারের জন্য নিজেরা খাওয়া বন্ধ করে বসে আছে সবাই। আজব! ক্ষুধা পেলে সবই খাবে দেখিস। এসব বিড়াল-টিড়ালকে মাথায় তুলতে হয় না।”
ফুপুর ধমক শুনে সবাই চুপচাপ খাওয়া শুরু করল। তাজ ভাই জেমির দিকে তাকিয়ে আছেন। জেমি ক্ষুধায় আমার চেয়ারে দু’পা তুলে জোরে-জোরে চেঁচামেচি করছে। আমি না পারছি কিছু বলতে, না পারছি সহ্য করতে। ওর ক্ষুধার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে, ওর এমন আচরণ দেখে আমার চোখে পানি চলে এল। আমি টলমল চোখে, অসহায় দৃষ্টিতে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। ওনার মুখটা গম্ভীর দেখাচ্ছে। ফুপু আমাকে বললেন,“কী হলো? খাও।”
আমি জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম। মাথা নিচু করে পরোটা ছিঁড়ে মুখে তুলতে যেতেই হুট করে তাজ ভাই নিজের প্লেটটা দূরে ঠেলে দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। উপস্থিত সবাই তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। ফুপু ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে বললেন,“কী হলো বাবা? এভাবে উঠে গেলি কেন? খাবার ভালো হয়নি?”
তাজ ভাই তার কথায় কান না দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালেন। তারপর শ্রেয়ান ভাইয়া আর নাসের ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,“লাগেজ গুছিয়ে নে, হারি আপ।”
কথাটা বলে তাজ ভাই এক মুহূর্তও দাঁড়ালেন না। আমার হাত ধরে টানতে-টানতে দ্রুত সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেন। উপস্থিত সবাই ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে আমাদের পেছন-পেছন ছুটে এলেন। কিন্তু তাজ ভাই তাদের আগেই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে এসে সোজা আমার রুমে চলে এলেন। রুমে ঢুকেই ভেতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে আমার লাগেজ বের করে জামাকাপড় গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ওদিকে বাইরে থেকে সবাই দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে, আর তাজ ভাইকে ডেকে চলেছে। আমি হতবাক হয়ে ওনার কান্ড দেখতে লাগলাম। তাজ ভাই পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন করলেন। ওপাশের ব্যক্তি ফোন রিসিভ করতেই বললেন,“শ্রেয়ান, কী করছিস তুই?”
শ্রেয়ান ভাইয়া কিছু একটা বলতেই উনি রাগত স্বরে বললেন,“আমি তোকে হাত-পা তুলে বসে থাকতে বলেছি? তাড়াতাড়ি লাগেজ গুছিয়ে নে, পারলে আমারটাও গোছা। আমি এক্ষুনি আসছি।”
উনি ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? রেডি হয়ে নে।”
আমি সাহস করে এগিয়ে গিয়ে বললাম,“আপনি না গতকাল রাতেই বললেন বউ ভাতের অনুষ্ঠানের পরে যাবেন? এখন আপনি চলে গেলে সবাই ভাববে আমার জন্য আপনি চলে গেছেন। এভাবে চলে যাওয়া কি ঠিক হবে?”
আমার কথা শেষ হতেই উনি ধমকে উঠে বললেন,“ঠিক ভুল আমি তোর থেকে শিখব? রেডি হতে বলেছি রেডি হ। বাড়তি কথা বলতে বলিনি।”
ওনার ধমক শুনে আমি মিইয়ে গেলাম। ওনার ভাঁজ করা কাপড়গুলো থেকে একটা ড্রেস নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম ওনার লাগেজ গোছানো শেষ। দরজার বাইরে এখনও সবার হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে। উনি উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতে-বাড়াতে বললেন,“আমি রেডি হয়ে আসছি। ততক্ষণ পর্যন্ত রুম থেকে বেরোবি না।”
আমার উত্তরের আশা না করে উনি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন। উনি বেরোতেই দরজার সামনে দাঁড়ানো মানুষগুলো ওনাকে বুঝাতে-বুঝাতে ওনার পেছনে ছুটলেন। আমি সেদিকে কান না দিয়ে চুপচাপ রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হিজাব পরার সময় আমিরা আপু রুমে এল। সে এসেই আমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে রাগত স্বরে বলল,“এই মেয়ে, খুব ভালোভাবেই হাত করেছ দেখছি ওনাকে। বড়োদের কথাও শুনছে না, ভাবা যায়! আর তোমাকে রেডি হতে বলেছে বলেই রেডি হওয়া শুরু করে দিলে? ড্রেস চেঞ্জ করে এক্ষুনি গিয়ে ওনাকে বলো তুমি আজ যাবে না।”
আমি বললাম,“উনি আমার কথা শোনার মতো মানুষ না আপু। আমি বলেছিলাম, কিন্তু উনি উলটো আমাকেই ধমকেছেন। তোমাদের কথাই তো শুনছে না। দেখছো না?”
আপু দাঁতে-দাঁত চেপে বললেন,“ঠিক আছে, যাচ্ছ যাও। কিন্তু একটা কথা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে যাও। তাজ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাড়ির বড়োরা সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বড়োদের সিদ্ধান্ত উনি ফেলতে পারবেন না। বলা যায় আমি খুব শিঘ্রই ওনার বউ হতে চলেছি। তাই এখন থেকে ওনার কাছ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখবে। ওনার আশেপাশেও ঘেঁষবে না, খবরদার।”
আমি হা করে আমিরা আপুর কথা শুনলাম। কথা শেষ করেই আপু যেভাবে এসেছিল সেভাবেই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে ভাবলাম,“হিন্দি সিরিয়ালের খলনায়িকাদের মতো হুমকি দিয়ে গেল!” পরক্ষণেই এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে হিজাব পরায় মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই বাইরে থেকে শ্রেয়ান ভাইয়ার কন্ঠস্বর শোনা গেল। সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ডেকে বললেন,“ইলোমিলো, আসব?”
আমি বললাম,“আসুন ভাইয়া।”
শ্রেয়ান ভাইয়া রুমে ঢুকে আমার লাগেজটা হাতে নিয়ে বললেন,“চলো।”
আমি শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে রুম থেকে বেরোতে-বেরোতে বললাম,“ওনাকে একটু বোঝান না ভাইয়া। এভাবে চলে গেলে এ বাড়ির সবাই আমাকে দোষারোপ করবে।”
শ্রেয়ান ভাইয়া হতাশ গলায় বললেন,“ও শুনবে আমার কথা? দেখো না কথায়-কথায় কীভাবে ধমকায়?”
আমি মুখটা ছোটো করে বললাম,“আমাকেও ধমকেছে। লোকটা পারেও বটে!”
“ওর জায়গায় আমি থাকলেও ঠিক এটাই করতাম। শুনতে খারাপ লাগলেও, এ বাড়ির কিছু-কিছু মানুষের আচরণ সহ্য করার মতো না। এজন্যই তাজ এত রেগে গেছে।”
“হুম। জেমি কোথায়?”
“নাসেরের কাছে।”
আমরা নিচে এসে দেখলাম বাড়ির সবাই এখনও তাজ ভাইকে ঘিরে দাঁড়িয়ে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেই চলেছে। কিন্তু উনি কারোর কথা কানে তুলছেন না। ওনার কাকারা কেউ এখন বাড়িতে নেই। তারা থাকলে হয়তো ওনাকে আটকানো সম্ভব হত। আমরা নিচে আসতেই তাজ ভাই আমাদের ইশারায় ডেকে সবার উদ্দেশ্যে ‘আসি’ বলেই দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। তার পেছন-পেছন নাসের ভাইয়াও ছুটলেন। আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে বড়ো কাকির সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,“আসছি কাকি, ভালো থাকবেন।”
কাকি ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“আবার এসো মা।”
“আপনারাও যাবেন আমাদের বাসায়।”
আমি আর শ্রেয়ান ভাইয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ছোটো কাকি, ফুপু আর আমিরা আপু বিদায় নেওয়ার মুহুর্তেও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম তাজ ভাই জায়েদ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছেন। আমি তাদের থেকে বিদায় নিতে যেতেই মাহিন ভাইয়া বললেন,“নেক্সট টাইম ঢাকায় গেলে তোমার সাথে মিট করব ইলোরা। ভালো থেকো।”
আমি হাসিমুখে বললাম,“নিশ্চয়ই, আমাদের বাসায় যাবেন কিন্তু ভাইয়া।”
মাহিন ভাইয়া হেসে বললেন,“ইন শা আল্লাহ্।”
গাড়িতে ওঠার সময়ও আফনান ভাইয়া তাজ ভাইকে বললেন,“এভাবে না গেলেও পারতি ভাই। আবার আসবি তো?”
“ইচ্ছে হলে আসব। তোমরা সবাই যেয়ো ঢাকায়।” বলেই তাজ ভাই গাড়িতে উঠে বসলেন। আসার সময় যেভাবে বসেছিলাম, যাওয়ার সময়ও সেভাবেই বসলাম। তাজ ভাই ড্রাইভিং সিটে, আমি তার পাশের সিটে, শ্রেয়ান ভাইয়া আর নাসের ভাইয়া পেছনের সিটে। গাড়ি স্টার্ট করার পর থেকে তাজ ভাই একটা কথাও বললেন না। আমি আড়চোখে ওনার দিকে কয়েকবার তাকালাম। নাকের ডগায় এত রাগ নিয়ে থাকে বলেই বোধ হয় লোকটা মাফিয়া হতে পেরেছেন। প্রায় বিশ মিনিটের মতো ড্রাইভ করার পর তাজ ভাই একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালেন। আমরা গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। সকালের খাবারটা কারোরই হয়নি, বিধায় সবারই ক্ষুধা পেয়েছে। তাজ ভাই নিজে জেমিকে খাওয়ালেন। অথচ কদিন আগে নিজেই জেমিকে ফেলে দিয়ে এসেছিলেন, ভাবতেই আমার হাসি পেল। সবাই পেটপুরে খেয়েদেয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম। গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। আমার, শ্রেয়ান ভাইয়ার আর নাসের ভাইয়ার কথা শুনতে-শুনতে এক সময় তাজ ভাইয়ের রাগ হাওয়া হয়ে গেল। তারপর কথায়-কথায় আমাদের জার্নিটা বেশ ভালোই কাটল। বাসায় পৌঁছাতে-পৌঁছাতে দুপুর আড়াইটা বাজল। শ্রেয়ান ভাইয়া আর নাসের ভাইয়া পথেই নেমে পড়েছিলেন। তারা ট্যাক্সি নিয়ে যার-যার বাড়ি ফিরে গেছেন। শুক্রবার হওয়ার দরুন বাবা বাড়িতেই ছিল। আমরা বাড়িতে প্রবেশ করতেই সে ছুটে এসে আমাদের বুকে জড়িয়ে নিলেন। মারজিয়া খালা, মিতা আর রিতাও ছুটে এল। তাদের চোখ-মুখের খুশিই জানান দিলো, আমাদের অনুপস্থিতিতে তাদের মন কিছুটা হলেও খারাপ ছিল।
___________________________________
বিকাল সাড়ে চারটা বাজে। আমি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। পাশের সোফায় তাজ ভাই কাত হয়ে শুয়ে মনোযোগ দিয়ে টিভিতে খবর দেখছেন।
“ওই পিচ্চি, বারবার ঘড়ির দিকে কী দেখছিস? জামাই আসার কথা না কি আজ?”
তাজ ভাইয়ের কথায় আমি ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে ওনার দিকে তাকালাম। বললাম,“আমি বিয়ে করলাম কবে?”
“আমি কী জানি! করতেও পারিস। আজকাল কাউকে বিশ্বাস নেই।”
“তাহলে তো আপনিও বিয়ে করেছেন। ঐ যে পলাশ ভাইয়া আর তার বউ বারবার ভুল করে আমাকে ভাবি বলে ফেলেছিল। তার মানে আপনি সত্যিই গোপনে বিয়ে করে বসে আছেন?”
তাজ ভাই চোখ বড়ো করে বললেন,“আরে শুধু বিয়ে না কি? আমার তো কয়েক হালি বাচ্চাকাচ্চাও আছে।”
ওনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। পরক্ষণেই তাজ ভাইয়ের দৃষ্টি লক্ষ্য করে থেমে গেলাম। উনি একদৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ইতস্তত বোধ করে নড়েচড়ে বসলাম। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠতেই আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তাজ ভাই বললেন,“সত্যি-সত্যিই তোর জামাই চলে এল না কি রে? কার জন্য অপেক্ষা করছিলি?”
“এক্ষুনি দেখতে পারবেন।” হাসিমুখে কথাটা বলেই আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুললাম। দরজা খুলতেই ওপাশের মানুষটা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,“কেমন আছিস ইলো?”
আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে বললাম,“ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো। তাজ ভাইয়া কোথায়?” বলতে-বলতে আফরা আপু আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি বললাম,“ভেতরেই আছে। আসো।”
আফরা আপু লাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকল। আমি দরজাটা বন্ধ করে এগিয়ে গেলাম। আফরা আপু হাসিমুখে তাজ ভাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করলেন। আপুকে দেখে তাজ ভাই হয়তো কিছুটা অবাক হয়েছেন। আপু কিছুক্ষণ গল্প করে লাগেজ রাখতে রুমে যেতেই তাজ ভাই আমাকে বললেন,“এই পিচ্চি, ও আসবে আমাকে বলিসনি কেন?”
আমি ত্যাড়াভাবে বললাম,“কেন? বললে কি পার্লারে গিয়ে সাজগোজ করে আসতেন?”
“সাট আপ। এই, ও কি পার্মানেন্টলি এখানে চলে এসেছে?”
“হ্যাঁ। কথা তো এটাই ছিল যে, এখন থেকে আপু এখানে থেকেই পড়াশোনা করবে। এ কদিন আমি বাসায় ছিলাম না বলে আপু আসেনি। আজ আমি বাসায় আসার সময় গাড়িতে বসেই আপুকে মেসেজে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমি বাড়ি ফিরছি। তাই আপুও আজ চলে এল। এরমধ্যে না কি একদিন এসে আপু তার যাবতীয় জিনিসপত্র সব রেখে গিয়েছিল, একসাথে নিয়ে আসতে ঝামেলা হবে বলে। ভালো হয়েছে না আপু আসায়? বাড়িতে একজন মানুষ বাড়ল।”
বলেই আমি দাঁত কেলিয়ে হাসলাম। তাজ ভাই আমার মাথায় চাটি মেরে বললেন,“যা হাসার হেসে নে। দুদিন পর আবার দেখবি নিজেই এজন্য আফসোস করছিস।”
আমি গাল ফুলিয়ে হাতের তালুতে মাথা ঘষতে-ঘষতে বললাম,“উফ্! মাথায় ব্যথা পেয়েছি। আফসোস করব কেন? আজব কথা!”
“সময় এলে এমনিতেই বুঝে যাবি পিচ্চি। এখন হাজার বুঝালেও বুঝবি না। আসলে, সমস্যাটা হচ্ছে তোর মোটা মাথায়।” কথাগুলো বলতে-বলতে উনি দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলেন। আমি গাল ফুলিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলাম রিতা দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলাম,“হাসছিস কেন?”
“ভাইয়া ঠিকই বলে, আপনি সত্যিই মাথামোটা।” দাঁত কেলিয়ে কথাটা বলেই রিতা রান্নাঘরের দিকে ভোঁ দৌড় দিলো। আমি হা করে আহাম্মকের মতো সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। শেষে কি না সার্ভেন্টের মুখেও ‘মাথামোটা’ শব্দটা শুনতে হলো!
চলবে………………?