#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:১৫
আজ আবার আফরা আপু আমার পেছনে লেগেছে নতুন প্ল্যানিংয়ের জন্য। আমিও নাচতে নাচতে বলে দিয়েছি তাজ ভাইয়ের পছন্দের খাবার নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতে। আফরা আপু একদৌড়ে গিয়ে দাদুমনির কাছ থেকে জেনে এসেছে খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা তাজ ভাইয়ের খুব পছন্দের খাবার। উনি না-কি ছোটো বেলা থেকেই ফুপির হাতে রান্না করা খিচুড়ি খেতে ভালোবাসতেন। আফরা আপু মেজো কাকিকে বলে রান্নাঘরে ঢুকেছে। সে রান্না করবে শুনে মেজো কাকি আর ছোটো কাকি অবাকের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। এখন আফরা আপু ইউটিউব দেখে খিচুড়ি রান্না করছে আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। যা বুঝলাম, খিচুড়ি রান্না করা খুব বেশি কঠিন কাজ না। খিচুড়ি রান্না শেষ করে আপু মাছ ভাজল। তখন আমি দূরে সরে দাঁড়ালাম। মাছ ভাজার সময় আমার ভয় লাগে। যেভাবে তেল ছিটে, বাপরে! রান্না শেষ করে আমরা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলাম। তারপর গোসল, নামাজ সেরে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সবাই খাবার টেবিলে উপস্থিত হলো। মেজো কাকি আর ছোটো কাকি মিলে খাবার পরিবেশন করল। তাজ ভাইয়ের মুখ দেখে মনে হলো খিচুড়ি দেখে সে খুশিই হয়েছে। আফরা আপু আগেই সবাইকে বলে দিলো আজ সে রান্না করেছে। এটা শুনে কাকারাও কাকিদের মতোই অবাক হয়েছেন। খাওয়ার সময় আফরা আপু কিছুক্ষণ পরপরই তাজ ভাইকে জিজ্ঞেস করল তার কিছু লাগবে কি না, রান্না কেমন হয়েছে। তাজ ভাইও বললেন খিচুড়িটা অনেক মজা হয়েছে। অথচ বাকি সবার মতে খিচুড়ির স্বাদ তেমন মজাও হয়নি, তেমন খারাপও হয়নি। চলে আর কী। ওনার আলাদা মন্তব্যের কারণ বুঝতে পারলাম না। তবে ওনার মুখে নিজের রান্নার প্রশংসা শুনে আফরা আপু পারলে লুঙ্গি ড্যান্স দেয়। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম একটা শান্তির ঘুম দেয়ার আশায়। কিন্তু যেখানে অশান্তির রাজা বাস করে সেখানে কী আর শান্তির আশা করা যায়! সবেমাত্র চোখ দুটো বন্ধ করেছি তখনই আমার চুলে হেঁচকা টান পড়ল। ব্যথাতুর শব্দ করে আমি চোখ খুলে তাকালাম। তাজ ভাইকে পাশে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত মুখে উঠে বসলাম। রাগত কন্ঠে বললাম,“এভাবে চুল ধরে টান মারেন কেন? ব্যথা পাই না?”
উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,“যেই না চুল। দেখলেই তো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
“আস্ত শয়তান!”
“তোর ঘাড়ে চেপে বসব?”
আমি শক্ত মুখে বললাম,“যান তো এখান থেকে। এই সময় আপনি আমার রুমে কী করছেন?”
উনি কিছুটা অবাক হবার ভান করে বললেন,“তোর রুম মানে! এই রুমটা যখন করা হয়েছিল তখন কি তুই রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছিলি? আমার যতদূর মনে পড়ে, তখন তুই ললিপপ খাওয়া বাচ্চা ছিলি।”
“আপনার ফালতু কথা রেখে যাবেন এখান থেকে? আমি ঘুমাব।”
“এই রুমে তোর নাম লেখা নেই। তুই বললেই আমি চলে যাব কেন?”
আমি মুখ দিয়ে একটা বিরক্তিকর শব্দ করে বললাম,“তাহলে আপনি এখানেই বসে থাকেন। আমি চলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে বিছানা থেকে নামতে নিতেই তাজ ভাই আমার হাত চেপে ধরে আবার বসিয়ে দিলেন। আমি কিছু বলার আগেই উনি বলে উঠলেন,“আফরাকে এসব বুদ্ধি কে দেয়?”
আমি ভ্রুকুটি করে বললাম,“মানে?”
“চা করে আনে, শাড়ি পরে কেমন লাগছে জানতে চায়, ফ্রেন্ডের বাড়ি নিয়ে যেতে বলে, খিচুড়ি রান্না করে মন্তব্য জানতে চায়। অথচ ও কোনোদিন না শাড়ি পরে, না রান্নাঘরে যায়। তো হঠাৎ করে ওর মাথায় এসব এল কোত্থেকে?”
“আমি কীভাবে জানব? আপুকেই জিজ্ঞেস করেন।”
“আমাকে কি তোর মতো মাথামোটা মনে হয়? পিচ্চি মাথায় এত বদ বুদ্ধি আসে কীভাবে? নেক্সট টাইম আবার যদি ওকে এসব ভুলভাল বুদ্ধি দিস, তাহলে পানিশমেন্ট পেতে হবে।”
“বেশ করেছি। আরও বেশি বেশি দেবো। আপনার কী?”
“অতিরিক্ত পেকে গেছিস।” কথাটা বলেই উনি আবার আমার চুল ধরে হেঁচকা টান দিলেন। এবার বেশ জোরেই লাগল। ব্যথায় আমার চোখে পানি চলে এল। আমি ওনার মুঠো থেকে আমার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। বেশ রেগে গিয়ে একপ্রকার জোরেই বলে উঠলাম,“কথায় কথায় ব্যথা দেন কেন? মগের মুল্লুক পেয়েছেন? সুইডেন থেকে ফেরার পর থেকে এমন আচরণ করছেন। এখন তো আবার কথায় কথায় ব্ল্যাকমেইল করার সুযোগ পেয়েছেন। সবসময় শুধু রাগ, ধমক, উলটা-পালটা কথা। কেন ভাই? আপনি কি আমার বয়ফ্রেন্ড, না-কি হাসবেন্ড? বেড়াতে এসেছেন নিজের মতো থাকেন না। অযথা আমার পেছনে কেন লেগে থাকেন? অসহ্য লাগে আপনাকে আমার। আমার আশেপাশেও আসবেন না আর কখনও।”
তাজ ভাই অবাক দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কথাগুলো বলে আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়ালাম না। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সোজা চলে গেলাম দাদুমনির রুমে। নিজেকে সামলে নিয়ে দাদুমনির সাথে গল্প করতে বসলাম। গল্প করতে করতে একসময় দাদুমনির খাটেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল মাগরিবের সময়। আমি উঠে দেখি দাদুমনি নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি বললাম,“আসরের সময় ডাকলে না কেন দাদুমনি?”
দাদুমনি বলল,“ডাকছিলাম। তোর তো ওঠার নামও নাই।”
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের রুমে আসার সময় তাজ ভাই আর শ্রেয়ান ভাইয়ার সামনে পড়লাম। তাজ ভাই কিছু বলতে চাইছিলেন। কিন্তু আমি গম্ভীর মুখে তাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে নামাজ পড়লাম। তারপর বাবা আমাকে চা খেতে ডাকতে রুমে এল। বাবার সাথে বসার ঘরে এলাম। এসে দেখি তাজ ভাই, শ্রেয়ান ভাইয়া, মেজো কাকা আর আফরা আপুও আছে। আমি গিয়ে আফরা আপুর পাশে বসলাম। আফরা আপু সবাইকে চা দিলো। বাবা আর মেজো কাকা তাদের কাজের বিষয়ে কথা বলছে। আমি চুপচাপ বসে চা খাচ্ছি। শ্রেয়ান ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন,“তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন ইলোমিলো? কিছু হয়েছে?”
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,“না ভাইয়া। ঠিক আছি আমি।”
আমি হঠাৎ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,“আমরা ফিরব কবে বাবা?”
আমার কথায় সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। আফরা আপু বলল,“ইলো, তুই চলে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করছিস! সবসময় তো তুই গ্রামে এলে আর ফিরতেই চাস না। কাকাকে বলে বলে আরও কয়েকদিন থেকে যাস। তাহলে এবার কী হলো?”
মেজো কাকাও বললেন,“তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে মা?”
আমি বললাম,“না কাকা। সমস্যা হবে কেন?”
“তাহলে?”
“এই মাসেই আমার পরীক্ষা কাকা।”
বাবা বলল,“পরীক্ষা নিয়ে তুই আবার এত ভাবতে শুরু করেছিস কবে থেকে?”
শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন,“আমার মনে হচ্ছে কোনো কারণে তোমার মন খারাপ।”
আমি বললাম,“না ভাইয়া।”
সবার মাঝে তাজ ভাই শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কোনোরকমে চা-টা শেষ করে রুমে গেলাম। ফোন নিয়ে বান্ধবীদের সাথে চ্যাটিং করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আফরা আপু আর অলি এল। আফরা আপু এসেই উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,“ইলো, ঝটপট রেডি হয়ে নে তো।”
আমি প্রশ্ন করলাম,“কেন? কোথাও যাবে?”
“হ্যাঁ, ঘুরতে যাব। তাড়াতাড়ি রেডি হ, আমি যাই রেডি হতে।” কথাটা বলেই আফরা আপু দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল। তার পেছন পেছন অলিও চলে গেল। আমি ভাবলাম এখন বাইরে থেকে ঘুরে এলে মনটা একদম ভালো হয়ে যাবে। তাই ফোন রেখে উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। রেডি হয়ে বেরিয়ে দেখলাম অলিও রেডি। আফরা আপু এখনও রুম থেকে বের হয়নি। অলি বারকয়েক ডাকার পর আপু বেরিয়ে এল। আপুকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই সন্ধ্যাবেলা বাইরে ঘুরতে যাবে তাতে এত সাজার কী হলো? মেজো কাকিকে বলে আফরা আপু তাড়া দেখিয়ে আমাদের নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। গেট পেরিয়ে রাস্তায় আসতেই আমি চোখ বড়ো বড়ো করে সামনে তাকালাম। তাজ ভাই আর শ্রেয়ান ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার মানে ওনারাও যাবেন। অথচ আফরা আপু আমাকে বলেইনি ওনাদের কথা। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। আফরা আপুও দাঁড়িয়ে বলল,“কী হলো?”
আমি বললাম,“আমি যাব না আপু।”
আপু অবাক হয়ে বলল,“যাবি না মানে? রেডি হয়ে রওনা দেয়ার সময় বলছিস যাবি না! কিন্তু কেন?”
“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।”
“হঠাৎ করে তোর শরীরের কী হলো? দেখে তো একদম সুস্থ মনে হচ্ছে।”
“তুমি বুঝতে পারছো না আপু।”
আফরা আপু আমার হাত ধরে বলল,“এমন করিস না বোন। তুই জানিস? তুই চা খেয়ে যখন রুমে চলে গেলি তখন তাজ ভাইয়া নিজেই আমাকে বলল, চল আফরা সবাই মিলে ঘুরে আসি। ভাবতে পারছিস? উনি নিজের ইচ্ছেয় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইছেন। আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। এটা শুধু তোর প্ল্যানের জন্যই সম্ভব হয়েছে। সো, তোকে যেতেই হবে।”
আমি হা হয়ে গেলাম। তাজ ভাই আফরা আপুকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইছেন! কিন্তু উনি তো আপুকে পছন্দই করেন না। তাহলে এসবের মানে কী? অদ্ভুত লোক! কখন কী করে ঠিক থাকে না। শ্রেয়ান ভাইয়া উচ্চস্বরে আমাদের বললেন,“ওখানে থেমে আছো কেন তোমরা?”
আফরা আপু মন খারাপ করে বলল,“ইলো যাবে না বলছে ভাইয়া। ওর না-কি শরীর খারাপ লাগছে।”
তাজ ভাই আর শ্রেয়ান ভাইয়া আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। তাজ ভাই গম্ভীর মুখে বললেন,“কী সমস্যা?”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না। শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন,“তোমাকে দেখে তো অসুস্থ মনে হচ্ছে না ইলোমিলো। কী হলো হঠাৎ?”
আমি কিছু বলার আগেই তাজ ভাই বললেন,“অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। চল।”
আমি বাড়িতে ফেরার জন্য ঘুরে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে তাজ ভাই আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেললেন। আফরা আপু আর শ্রেয়ান ভাইয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে। উনি আমাকে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। আমি হন্তদন্ত হয়ে হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বললাম,“আরে, আমি যাব না বললাম না? হাত ছাড়ুন। উফ্, লাগছে তো।”
ততক্ষণে উনি গাড়ির দরজা খুলে আমাকে ঠেলে ভেতরে বসিয়ে দিলেন। আফরা আপু আর অলিও এসে আমার দুপাশে বসে পড়ল। শ্রেয়ান ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসল আর তাজ ভাই তার পাশে। গাড়ি চলতে থাকল আর আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। আফরা আপু কনুই দিয়ে আমাকে গুঁতো মেরে বলল,“তোর কী হয়েছে বল তো? এমন করছিস কেন?”
আমি বললাম,“আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না আপু।”
সামনে থেকে তাজ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,“কেন? বিয়ে-শাদী করতে মন চায় না-কি? তাহলে বল, আজই একটা রিকশাওয়ালা খুঁজে বিয়ে দিয়ে দেই।”
ওনার কথা শুনে অলি হি হি করে হেসে উঠল। আমি চোখ পাকিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আবার বললেন,“বুঝেছি, বুঝেছি। এই আফরা, পরিচিত কোনো রিকশাওয়ালা আছে এখানে? ঠিকানা দে তো। ধরে এনে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দেই।”
আফরা আপু ঠোঁট টিপে হেসে বলল,“আছে ভাইয়া। কিন্তু তার ঘরে চারটা বউ আছে। ইলো তাহলে পাঁচ নাম্বারে পড়বে।”
আমি এবার আফরা আপুর দিকেও গাল ফুলিয়ে তাকালাম। এদের মিটিমিটি হাসি দেখে মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। তাজ ভাই বললেন,“সমস্যা কী? ছোটো বউরা আদর পায় বেশি জানিস না?”
আফরা আপু, অলি আর শ্রেয়ান ভাইয়া এবার একসাথে হুঁ হা করে হেসে উঠল। আমি কটমট চাহনিতে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। শ্রেয়ান ভাইয়া হাসি থামিয়ে বললেন,“ইলোমিলো, তুমি রাগ কোরো না। আজ তোমাকে এক প্লেট বেশি ফুসকা খাওয়াব।”
আমি কোনো কথা বললাম না। গাল ফুলিয়ে বসে বসে এদের তামাশা দেখলাম। প্রায় বিশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর শ্রেয়ান ভাইয়া একটা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি দাঁড় করাল। আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢোকার সময় তাজ ভাই কিছুটা পিছিয়ে এসে আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে নিচু স্বরে বললেন,“নিজে আমাকে একগাদা কথা শুনিয়ে এখন নিজেই গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কোন দুঃখে? এভাবে মুখ ভার করে রাখলে থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দেব বেয়াদব মেয়ে।”
আমি বিরক্ত হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। কিছু বলার আগেই উনি দ্রুত পায়ে হেঁটে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলেন। আমরা একটা টেবিলে বসে পড়লাম। একপাশে আমি, আফরা আপু আর অলি। অন্যপাশে তাজ ভাই আর শ্রেয়ান ভাইয়া। তাজ ভাই খাবার অর্ডার করলেন। আমি আফরা আপুর সাথে টুকটাক কথা বললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে এল। আমি খাবার দেখে অবাক হয়ে বললাম,“এত খাবার কে খাবে?”
তাজ ভাই বললেন,“অর্ধেক তুই খাবি আর বাকি অর্ধেক আমরা।”
শ্রেয়ান ভাইয়া হেসে বললেন,“ভয় পেয়ো না ইলোমিলো। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আমরা ধীরে ধীরে খাওয়া শেষ করব। তুমি না পারলে আমি আছি।”
অলি বলে উঠল,“আমিও আছি ইলুপি।”
আমি এবার একটু হেসে বললাম,“হ্যাঁ, তোর মতো পুঁচকি এসব খেয়ে শেষ করবে।”
তাজ ভাই বললেন,“তুই কী? নিজেই তো এক পুঁচকি।”
আফরা আপু বলল,“মেয়েটা এখন বড়ো হয়েছে ভাইয়া। শুধু শুধু খেপান কেন?”
আমরা খেতে শুরু করলাম। খেতে খেতে তাজ ভাই শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে নিচু স্বরে কিছু কথা বলল, যা আমাদের কানে এল না। আমি আর আফরা আপু অলিকে নিয়ে দুষ্টুমি করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম। খাবার শেষ করতে আমাদের বেশ অনেকটা সময় লেগে গেল। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমি খেয়াল করলাম আমার মনটা এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন,“ইলোমিলো, তোমার ফুসকা বাকি আছে কিন্তু এখনও। বাইরে একটা দোকান দেখে এসেছি। খাবে?”
আমি চোখ বড়ো করে বললাম,“পেট ফেটে মরে যাব ভাইয়া। পেটে আর একটুও জায়গা নেই।”
শ্রেয়ান ভাইয়া হেসে বললেন,“আচ্ছা, তাহলে আরেকদিন খাওয়াব।”
তাজ ভাই বিল মিটিয়ে দিলেন। আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করলাম। আফরা আপু সেলফি তুলতে তুলতে অতিষ্ঠ করে দিলো। তবে সময়টা খুব ভালো কাটল। একাকীত্বের সময় আমি সবসময় এমন একটা হাসিখুশি মুহূর্ত চাই। হঠাৎ করে আমার মনে হলো তাজ ভাই আসার পর থেকে আমি এমন মুহুর্তগুলো একটু বেশিই পাচ্ছি। অথচ তার আগে একা একা কতই না আফসোস করতাম। লোকটাকে মনে হয় আমি কোনোদিনও সঠিকভাবে চিনতে পারব না। অজান্তেই আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। রাত প্রায় সাড়ে দশটার দিকে আমরা আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরলাম।
চলবে………………….?