তাজ ইলোর প্রণয়ালাপন পর্ব:১৩

0
406

#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:১৩

আজ আমার অবস্থা হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাস ‘মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই’ নামের মতো। শুধু নামটা পাল্টে দিলে হয় ‘ইলোরার মন ভালো নেই।’ সন্ধ্যা থেকেই হঠাৎ করে আম্মুর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ছে। ইতোমধ্যে চোখ দুটোও ভিজে উঠেছে। রুমে ভালো লাগছিল না তাই ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে এসে বসে আছি। বাড়ির বাইরের ইলেকট্রনিক লাইটের আলোক ছটা পুকুরের দিকেও কিছুটা আলো ফেলছে। বেশ কিছুক্ষণ পুকুরের দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে বসে থাকার পর হঠাৎ মনে হলো আমার পাশ ঘেঁষে কেউ বসল। আমি কিছুটা চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। তাজ ভাইকে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার পুকুরের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করলাম।‌ শ্রেয়ান ভাইয়া সন্ধ্যার কিছু আগে কোথাও একটা বেরিয়েছেন। হয়তো সেজন্যই ওনারও রুমে একা একা ভালো লাগছিল না। মিনিট দুয়েক পর তাজ ভাই বললেন,“একা একা এখানে বসে আছিস, ভয় করছে না? না-কি কষ্ট ভয়কেও হার মানায়?”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। যেমন ছিলাম তেমনই বসে রইলাম। তাজ ভাইয়ের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেলাম। উনি আমার ডান হাতের ওপর আলতো করে হাত রাখলেন। আমি কিছুটা চমকে একবার হাতের দিকে আরেকবার ওনার মুখের দিকে তাকালাম। ওনার মুখটাও কেমন যেন শুকনো লাগছে। আমার মনে হলো ওনারও হয়তো ফুপির কথা মনে পড়ছে। উনি আরেক হাত দিয়ে আমার চোখের কোণের চিকচিকে পানিটুকু মুছে দিলেন। অন্যরকম একটা সুখ অনুভব করলাম আমি। এভাবে কতশত বার কান্না করে চোখ ভিজিয়েছি। কিছু সময় পর সেই ভেজা চোখ আবার শুকিয়েও গেছে, কিন্তু জলটুকু মুছে দেয়ার মতো কেউ ছিল না। আজ মনে হলো চোখের পানি মুছে দেয়ার মতো কেউ একজন পেয়েছি আমি। এসব ভাবতে ভাবতে যে অপলক দৃষ্টিতে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তা খেয়ালই ছিল না। ওনার কথায় আমার হুঁশ ফিরল। উনি বললেন,“যাবি এক জায়গায়?”

আমি প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালেন। তারপর সেভাবেই বাড়ির গেটের দিকে হাঁটা দিলেন। অন্য সময় হলে আমি জেদ ধরে বসতাম। আজ আর সেই ইচ্ছে হলো না। চুপচাপ ওনার সাথে পা মিলিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর বাড়ির উল্টো দিকের রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম। গ্রামে এলে এই রাস্তায় খুব একটা আসা হয় না আমার। ভরা জোৎস্না না হলেও চারদিকে চাঁদের আলোয় বেশ আলোকিত হয়ে আছে। রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য বড়ো বড়ো গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এসবের নাম আমার জানা নেই। রাস্তার দুপাশেই নিচু ছোটো ছোটো বিল দেখা যাচ্ছে। তার মাঝে মাঝে আবার কয়েকটা বসত বাড়িও আছে। এমন নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ আমার মনে হলো এক প্রেমী যুগল হাত ধরাধরি করে অজানা গন্তব্যে পথ চলছে তো চলছেই। এ পথ শেষ হবার নয়। পরক্ষণেই এমন উদ্ভট কল্পনার কারণে মনে মনে হাসিও পেল। প্রায় পনেরো মিনিটের মতো নিশ্চুপ ভাবে হাঁটার পর একটা বড়ো বিলের সামনে এসে দাঁড়ালাম।‌ বিলের দিকে তাকিয়ে আমার মনটা উচ্ছসিত হয়ে উঠল। সারা বিল জুড়ে সাদা শাপলার সমাহার। বিলের মাঝামাঝি একটা নৌকায় সমবয়সী দুজন মেয়ে আর একজন ছেলেকে চোখে পড়ল। আমারও ইচ্ছে জাগল নৌকায় চড়ার। বহু বছর ধরে নৌকায় চড়া হয় না। তখনই একজন হাড্ডিসার বৃদ্ধ লোক আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,“নৌকায় উঠবানি গো দাদা?”

আমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাজ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শয়তানটা যে আমাকে নৌকায় উঠতে দিবে না তা আমি দুইশ পার্সেন্ট নিশ্চিত। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে তাজ ভাই হাসিমুখে বললেন,“হ্যাঁ দাদু। আপনার নৌকা কোথায়?”

লোকটাও হেসে বললেন,“ঐ তো ওইহানে। আহো আমার লগে।”

লোকটা বিলের তীরের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। তাজ ভাইও আমার হাত ধরে সেদিকে নিয়ে গেলেন। আমি এখনও অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। মাঝে মাঝে ওনার আচরণে পরিবর্তন দেখে আমি কনফিউশনে পড়ে যাই। বিলের পাড়ে ছোটো-খাটো একটা নৌকা বাঁধা আছে। নৌকার মাঝ বরাবর একটা হারিকেন জ্বালিয়ে রাখা। বৃদ্ধ লোকটা নৌকায় উঠে বসে আমাদেরকেও উঠতে বললেন। তাজ ভাই আমাকে ধরে সাবধানে নৌকায় উঠিয়ে দিলেন। তারপর উনিও উঠে পড়লেন। আমি নৌকার পাটাতনে পা ভাঁজ করে বসে পড়লাম। তাজ ভাইও আমার পাশ ঘেঁষে বসলেন। আমি ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বললাম,“সবসময় গা ঘেঁষে বসেন কেন? আশ্চর্য!”

আমার কথায় উনি কোনো রকম তোয়াক্কা করলেন না। মাঝি নৌকা বাওয়া শুরু করলেন। ফুরফুরে বাতাস এসে গায়ে লাগছে। আমি নিচু হয়ে কয়েকটা শাপলা তুললাম। তারপর পানিতে হাত ডুবিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। একদম পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানি। হঠাৎ কোমরে আলতো হাতের স্পর্শে আমি হকচকিয়ে গেলাম। পরক্ষণেই বুঝলাম এটা তাজ ভাইয়ের কাজ। আমি ঢোক গিলে নড়েচড়ে বসে ওনার দিকে তাকালাম। উনি তখন আমার দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছেন। এতে আমি আরও অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম। তবু নিচু স্বরে বললাম,“সমস্যা কী আপনার? গা ঘেঁষে বসেও মন ভরেনি? এখন আবার টাচ করছেন!”

উনি কপাল কুঁচকে বললেন,“নিজেকে এত ইম্পর্ট্যান্ট ভাবিস না। তোকে টাচ করার অত সাধ নেই আমার। এই বিলটা একটু গভীর। যেভাবে নিচু হয়ে পানিতে হাত ডুবিয়ে বসে আছিস, পড়ে গেলে দায় কে নিবে? সাঁতার তো জানিসই না।”

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,“আমি সামলে নিতে পারব নিজেকে। আপনার হেল্প লাগবে না।”

উনি আর আমার কথায় কান দিলেন না। আলতো হাতে কোমর ধরে আগলে রেখে চুপচাপ বসে রইলেন। ঘাড়ত্যাড়া লোক একটা! আমি আর ওনার সাথে অযথা বকবক না করে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। নৌকাটা বিলের মাঝামাঝি এসে পড়েছে। বৃদ্ধ মাঝি হঠাৎ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,“তোমার সোয়ামি কিন্তু তোমারে নিয়া অনেক ভাবে গো বইন। কত যত্ন কইরা তোমারে আগলায়া রাখছে! কপাল কইরা একখান সোয়ামি পাইছো। মাইয়া মাইনষের এমন একখান সোয়ামি থাকলে আর কী চাই? হেরা তো এমন দায়িত্ববান একখান সোয়ামিই চায়। আল্লাহর কাছে সবসময় শুকরিয়া জানাইবা, বুঝছো?”

আমি গোলগাল চোখে মাঝির মুখের দিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলাম। এসব কী বললেন তিনি! না জেনে এমন উদ্ভট কথাবার্তার কোনো মানে হয়? এই বিপজ্জনক লোকটাকে আমার হাসবেন্ড ভেবে বসলেন!তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শয়তানটা ঠোঁট টিপে হাসছে। আমার মেজাজটা বিগড়ে গেল। উনি বৃদ্ধের ভুল ধরিয়ে দেয়ার বদলে উলটো মজা নিচ্ছেন। আমি কটমট চাহনিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,“মজা নিচ্ছেন? শয়তান লোক! ওনাকে বলুন আমরা ভাই-বোন।”

উনি মাঝির দিকে তাকিয়ে বললেন,“দাদু, আমরা এখনও বিয়ে করিনি।”

আমি হা হয়ে গেলাম। বলতে বললাম কী আর উনি বললেন কী! এমনভাবে বললেন যেন এখন বিয়ে করিনি কিন্তু পরে অবশ্যই করব। মাঝি বললেন,“তাইলে তাড়াতাড়ি কইরা ফালাও দাদা।”

তাজ ভাই বললেন,“আমার মতো এত ভদ্র একটা ছেলে এমন ঘাড়ত্যাড়া মেয়েকে বিয়ে করবে কী মনে করে দাদু?”

মাঝি ফোকলা দাঁত বের করে হেসে বললেন,“পিরিতি সত্য ওইলে পরে এই গাড়ত্যাড়া মাইয়াই তোমারে জগতের সব সুখ দিবো।”

“এত নিশ্চয়তা কীভাবে দিচ্ছ?”

“কতা মিছা ওইলে পরে আমার বিচার কইরো দাদা। তয় একখান হাচা কতা কী জানো? মাইয়াডার লাইগা তোমার পিরিতি এক্কেরে খাঁটি। ও বইন, এমন পিরিতি হারাই ফালাইও না আবার।”

ইতোমধ্যে আমি অবাকের শীর্ষ স্থানে পৌঁছে গেছি। মুখ দিয়ে কথা বের করতেও ভুলে গেছি। কেবল হা করে মাঝি আর তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কথা গিলেছি। তাজ ভাইয়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে তৃপ্তির হাসি লেগে আছে। আমার মাথার মধ্যে শুধু তাদের এতক্ষণের কথোপকথনগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। তাজ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললেন,“সব কথা নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবা মাথামোটাদের কর্ম নয়। রিল্যাক্স পিচ্চি।”

আমি এবার একটু নড়েচড়ে বসলাম। কিছুটা লজ্জাও পেলাম মাঝির কথাগুলো ভেবে। বৃদ্ধ লোকটা না বুঝেই কীসব বকে যাচ্ছে। ধুর! কিন্তু আমার খটকা লাগল তাজ ভাইয়ের ব্যাপারে। মাঝিটা এত কথা বলার পরও উনি একবারও বলেননি যে এসব ভুল ধারণা। উলটো নিজেও তাল মিলিয়েছেন। এসবের মানে কী? মাঝির কথাটা কি তাহলে সত্যি? উনি সত্যিই আমাকে…..। ধুর! এটা জীবনেও সম্ভব না। কিন্তু তবুও তো ব্যাপারটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। যাকগে, এটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এখন এসব ভেবে এত সুন্দর একটা মুহূর্ত নষ্ট করার মানে হয় না। আমি আবার শাপলা দেখতে মনোযোগ দিলাম। অনেকটা সময় নৌকা ভ্রমণ করে‌ মাঝি যখন তীরে নৌকা ভিড়ালেন তখন তাজ ভাই আমার কোমর ছাড়লেন। আমি যেন এতক্ষণে স্বস্তি পেলাম। তবে একটা ব্যাপার ভেবে অবাক হলাম। উনি আমার কোমরে হাত রেখে আগলে রাখলেন অথচ আমার তেমন অস্বস্তি হয়নি। তারপর ভাবলাম উনি খারাপভাবে ছোঁননি, বরং আমাকে রক্ষার জন্যই আলতো করে ধরেছিলেন, সেজন্যই হয়তো অস্বস্তি হয়নি। তাজ ভাই আমাকে যেভাবে নৌকায় উঠিয়েছিলেন সেভাবেই সাবধানে নামিয়ে দিলেন। উনি মাঝির ভাড়া মিটিয়ে হাসিমুখে বললেন,“আসছি দাদু, ভালো থেকো।”

মাঝিও হেসে বললেন,“তোমরাও ভালো থাইকো দাদা। তাড়াতাড়ি বিয়া সাদি কইরা সুখী হও, দোআ করি।”

আমি আরেক দফা অবাক হলাম। অথচ তাজ ভাই মুচকি হেসে আমার হাত ধরে আবার হাঁটা ধরলেন। আমার মনে এই মুহূর্তে এক গাদা প্রশ্ন জমা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর এই শয়তানটার থেকে পাওয়া সম্ভব না। হঠাৎ দেখলাম কয়েকটা পিচ্চি ছেলে রাস্তার একপাশে ভীড় করে আছে। সবাই পারলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ভালোভাবে তাকাতেই দেখলাম আমার বয়সী একটা ছেলে বড়ো একটা বাক্স থেকে আইসক্রিম বের করে সবার হাতে দিচ্ছে। সবাই আইসক্রিম নিচ্ছে আর টাকা দিচ্ছে। আমি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লাম। তাজ ভাইয়ের হাতে টান পড়ায় উনিও দাঁড়িয়ে আমার দিকে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকালেন। আমি রাস্তার পাশে ইশারা করে দেখিয়ে মুখ কাচুমাচু করে বললাম,“আইসক্রিম খাব?”

উনি সরু চোখে আইসক্রিমের বাক্সটার দিকে তাকালেন। তারপর বললেন,“বাইরের খোলা আইসক্রিম খাওয়ার কোনো দরকার নেই। এসব অস্বাস্থ্যকর।”

আমি জানতাম উনি ঠিক এটাই বলবেন। তবু গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি আইসক্রিম খাবই খাব। কিন্তু উনি কিছুতেই খেতে দিবেন না। শেষমেষ আমাকেই হার মানতে হলো। কারণ উনি আমাকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে গেলেন। মনে মনে আমি ওনাকে এক গাদা বকা দিলাম। বাড়ির প্রায় কাছাকাছি এসে হঠাৎ আমি কিছু না ভেবেই বলে বসলাম,“আমাকে বনলতা নামে ডাকার কারণটা ঠিক বুঝলাম না।”

উনি আমার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন,“আগেই বলেছি সবকিছু বুঝা তোর মতো মাথামোটাদের কর্ম নয়।”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,“আপনি যেহেতু ডেকেছেন জেনেই তো ডেকেছেন। কারণটা বললেই তো হয়। বনলতা নামের একজনকেই চিনি। জীবনানন্দ দাশের কবিতার বনলতা। আমি কীভাবে বনলতা হলাম?”

উনি সেই ত্যাড়াভাবেই বললেন,“সবকিছু বুঝলে কি আর তোকে পিচ্চি বলতাম?”

উনি যে আমার কোনো প্রশ্নের সঠিক জবাব দিবেন না তা ভালোভাবেই বুঝতে পারলাম। তাই নিজেও চুপ থাকলাম। ওনার এই ত্যাড়া-ত্যাড়া কথা শুনে মেজাজ খারাপ করার থেকে চুপ থাকা শ্রেয়। বাড়িতে ঢুকে বসার ঘরে দাদুমনি আর ছোটো কাকির সামনে পড়লাম। তাজ ভাই দাদুমনির পাশে বসে বলতে লাগলেন আমরা কোথায় গিয়েছিলাম। আমি সেখানে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে এলাম। রুমে ঢুকে বিছানায় বসতেই জেমি লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠল। ওকে আদর করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। অজু করে নামাজ পড়ে জেমিকে নিয়ে রুম থেকে বেরোতে নিতেই আফরা আপু রুমে এল। আমি তাকে দেখে মিষ্টি হেসে বললাম,“কী করছিলে আপু?”

আপু আমার কথার উত্তর না দিয়ে গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করল,“কোথায় গিয়েছিলি?”

আমি সোজাসাপ্টা উত্তর দিলাম,“তাজ ভাইয়ের সাথে শাপলা বিলে গিয়েছিলাম।”

“একাই চলে গেলি!”

“উনিই হঠাৎ নিয়ে গেলেন। আমি জানতাম না ওখানে নিয়ে যাবেন।”

“বাহ্! একসাথে অনেকটা সময় কাটাতে পেরেছিস।”

আফরা আপুর কন্ঠটা কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগল আমার কাছে। তবু আমি হাসিমুখে বললাম,“আগে জানলে তোমাকে নিয়ে যেতাম আপু। সরি।”

আপু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,“বাদ দে। আমি একটা কথা বলার জন্য এসেছি।”

“হ্যাঁ বলো।”

“তুই তাজ ভাইয়ের থেকে………….।”

আপুর কথা শেষ না হতেই তাজ ভাই রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,“আমাকে নিয়ে কী কথা হচ্ছে?”

আফরা আপু মেকি হেসে বলল,“আমাকে ছাড়াই ঘুরে এলেন ভাইয়া?”

তাজ ভাই বললেন,“ওহহো! একদম খেয়াল ছিল না আফরা। আসলে শ্রেয়ান বাসায় ছিল না তো তাই তোমার কথাও মনে ছিল না। মন খারাপ কোরো না। পরেরবার কোথাও গেলে অবশ্যই তোমাকে নিয়ে যাব।”

উনি যে মিথ্যা কথা বললেন তা আমি বেশ বুঝতে পারলাম। আসলে উনি ইচ্ছে করেই আফরা আপুকে সাথে নেননি। আফরা আপু জোরপূর্বক হেসে মাথা দোলালো। আমি আফরা আপুর মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। তাজ ভাই জানালেন শ্রেয়ান ভাইয়া এইমাত্র বাসায় ফিরেছেন। কাকিরা আমাদের খাবার টেবিলে ডাকছে। আমি আর আফরা আপু তাজ ভাইয়ের পেছন পেছন রুম থেকে বেরিয়ে এসে খাবার টেবিলে বসলাম।

চলবে……………..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here