#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:০২
ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। ভারি অবাক হলাম। আমি তো গাড়িতে ছিলাম। নিজের রুমে কখন এলাম? পরক্ষণেই মনে পড়ল তাজ ভাইয়ার কথা। শয়তানটা বোধ হয় আবার আমাকে কোলে তুলে রুমে দিয়ে গেছে। বড্ড অসভ্য লোক তো! ইচ্ছে করছে গরম পানি গায়ে ঢেলে দিতে। কিন্তু এখন ঝগড়া করার মুড নেই। তাই বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম নয়টা বাজে। জেমিকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি খাবার টেবিলে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে মারজিয়া খালাকে জোরে ডেকে বললাম,“খালা, আমার চা কোথায়?” সঙ্গে সঙ্গে খালা দু কাপ চা নিয়ে উপস্থিত। আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলাম,“বাবা তো বাসায় নেই। দুই কাপ কেন?”
খালা হেসে বললেন,“তাজ বাবার জন্য।”
আমি ব্রেডে কামড় বসিয়ে ছোটো একটা শব্দ করলাম,“ওহ্।”
খালা কিচেনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন,“তাজ বাবার চা টা দিয়ে আসো তো মা।”
আমি অসহায় চোখে কিচেনের দরজার দিকে তাকালাম। মারজিয়া খালা আমাদের বাসায় কাজ করেন। আম্মুর মৃত্যুর আগে থেকেই তিনি আমাদের বাসায় কাজ করেন। খুব ভালো আর বিশ্বাসী একজন মানুষ। তার কাছে বাসার একটা চাবি থাকে। খালা সকাল সকাল আসেন। সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় বাবা বাসায় আসার পর চলে যান। অজানা কোনো কারণে খালা তাজ ভাইয়াকে একটু ভয় পান। তাই তাজ ভাইয়া এই বাসায় এসে হতে আমাকে দিয়ে চা পাঠান। বাধ্য হয়ে আমাকে যেতেই হয়। ওনার রুমে আমার যেতেই ইচ্ছে করে না। গেলেই শুরু হয়ে যায় লোকটার বিভিন্ন রকম শয়তানি। বিরক্তি নিয়ে চায়ের কাপ হাতে সোজা তাজ ভাইয়ার রুমে ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখলাম তাজ ভাইয়া খালি গায়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছেন। আমি আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম লোকটা আসলেই খুব সুন্দর। সাধেই কী আর প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়েছিলাম? পরক্ষণেই নিজেকে শাসালাম। এই উজবুকের উপর ক্রাশ খাওয়া চলবে না। এ আমার ক্রাশ হওয়ার যোগ্যই না। ধ্যান ভাঙল তাজ ভাইয়ার ডাকে। উনি চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“তোর তো নজর খারাপ রে। নক না করেই একটা ছেলের রুমে ঢুকে তার বেখেয়ালের সুযোগ নিয়ে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,“ফালতু কথা বলবেন না তো ভাইয়া। আপনি চুল আঁচড়াচ্ছিলেন তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই নিন আপনার চা।”
তাজ ভাইয়া গায়ে শার্ট জড়িয়ে বললেন,“টেবিলে রাখ।”
আমি চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে দরজার দিকে পা বাড়ালাম। হঠাৎ গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলাম,“আপনি আবার আমাকে কোলে তুলেছিলেন?”
তাজ ভাইয়া তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন,“তোর মতো আটার বস্তাকে কোলে নিয়ে ঘুরার শখ নেই আমার।”
এই লোকটা সোজা প্রশ্নের উত্তর সবসময় বাঁকাভাবে দিতেই পছন্দ করেন। আমি রাগত কন্ঠে বললাম,“আমাকে আপনার আটার বস্তা মনে হয়? আমার বান্ধবীরা তো বলে আমি স্লিম।”
“হেহ্, ভুয়া কথা বলে।”
“আপনি এত শয়তান কেন?”
“তোর ঘাড় মটকানোর জন্য।”
আমি দাঁতে দাঁত চেপে তাজ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,“আজাইরা বকবক বন্ধ করে গিয়ে রেডি হ। ভার্সিটি যাবি না?”
নিজেই এত কথা বলল এখন আমাকে বলছে আজাইরা বকবক বন্ধ করতে। আমি হনহন করে তার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলাম আমার চা ঠান্ডা শরবত হয়ে গেছে। মারজিয়া খালাকে বললে এখনই আবার গরম চা দিয়ে যাবেন। কিন্তু এখন আর ওই মুড নেই। চা ফেলে রেখে নিজের রুমে গিয়ে রেডি হলাম। ব্যাগ কাঁধে নিতে গিয়ে মনে পড়ল বাবা তো নেই। তাহলে আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসবে কে? আম্মুর মৃত্যুর পর থেকে বাবাই সবসময় আমাকে সব জায়গায় নিয়ে যায়। প্রতিদিন সকালে বাবা আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে সে অফিসে চলে যায়। দুপুরে ছুটি হলে আবার আমাকে নিয়ে বাড়িতে ফেরে। এর আগে বাবা আমাকে রেখে কোথাও যায়নি। গতকাল তাজ ভাইয়া এসেছে বলে তার উপর ভরসা করে আমাকে রেখে গ্রামের বাড়ি গেছে। গ্রামে আমার দাদা বাড়ি। সেখানে জমিজমা নিয়ে কী সব ঝামেলা হয়েছে, তাই চাচা বাবাকে খবর দিয়ে নিয়েছে। আমি ভাবলাম আজ একাই ভার্সিটিতে যাব। অনেক বছর পর আজ বাস জার্নি হবে। ওয়াও! তাড়াতাড়ি ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,“খালা, আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি। এসে দরজাটা লক করে দিন।”
জেমিকে আদর করে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেইটের কাছে পৌঁছাতেই দেখলাম তাজ ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আরামসে ফোন চাপছেন। আজ পড়েছেন মেরুন কালার শার্ট আর কালো প্যান্ট। সানগ্লাসে তো দেখছি আরও হিরো হিরো লাগছে! তাতে আমার কী? আমি আর এই বিপজ্জনক লোকের উপর ক্রাশ খাব না বাবা। ওদিকে আর পাত্তা না দিয়ে আমি গেটের দিকে পা বাড়ালাম। দু’পা এগোতেই তাজ ভাইয়া বলে উঠলেন,“ওই ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন, কোথায় যাচ্ছিস?”
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। পেছন ফিরে অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। কথাটার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। তাজ ভাইয়া হাতের ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আবার প্রশ্ন করলেন,“কী? কোথায় যাচ্ছিস?”
আমি কপাল কুঁচকে বললাম,“এর আগে কী বললেন?”
“কী বললাম?”
“ঐ যে কী যেন বললেন। ইন্টারন্যাশনাল…..।”
“ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন।”
“হ্যাঁ। এখানে আপনি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন কোথায় পেলেন?”
“আমার সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছে।”
আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললাম,“কী আজগুবি কথা বলছেন?”
তাজ ভাইয়া পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,“আজগুবি কোথায় বললাম? আচ্ছা তুই তোর নামের পূর্ণরূপ জানিস?”
আমি প্রশ্ন করলাম,“মানে?”
“মানে, এই যে তোকে সবাই ইলো ইলো বলে ডাকে। এই ইলোর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন।”
আমি আহাম্মক বনে গেলাম। আমার এত সুন্দর নামটার একি হাল করল লোকটা! আমি রাগত স্বরে বললাম,“এসব গাঁজাখুরি কথা আবিষ্কার করা আপনার পক্ষেই সম্ভব।”
তাজ ভাইয়া বিদ্রুপ করে বললেন,“তুই কি ভাবছিস তোর নামের খুব সুন্দর মিনিং? শোন, আমি তোকে বুঝাচ্ছি। ইলো ভাঙলে কী হয়? ‘হ্রস্ব-ই’, ‘ল’ আর ‘ও’ বা ‘অ’ যা-ই হোক। তো ‘হ্রস্ব-ই’ তে কী হয়? ইন্টারন্যাশনাল। ‘ল’ তে লেবার আর ‘অ’ তে অর্গানাইজেশন। এবার বুঝলি?”
রাগে আমার মাথাটা দপদপ করে উঠল। লোকটার সাথে কথায় আমি জীবনেও পেরে উঠব বলে মনে হয় না। আমি বললাম,“এসব ফালতু এক্সপ্লেইন পেলেন কোথায় আপনি?”
“আমার আর কী দোষ? তোর এই নাম তো মনে হয় মামু রেখেছিল। মামুকে যে এই নাম রাখার বুদ্ধিটা কে দিয়েছিল! আমার ধারণা আমার মামুকে এই বুদ্ধিটা দিয়েছে তোর মামু। ব্যাটা তো দেখছি খুব ধুরন্ধর!”
আর কিছুক্ষণের মধ্যে যে এই লোক আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,“এসব ফালতু কথা আপনি নিজেকে নিজে বলেন। দয়া করে আমাকে শুনাবেন না। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”
“গাড়িতে ওঠ।”
তাজ ভাইয়ার কথায় আমি ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বললাম,“গাড়িতে ওঠ মানে? আপনার সাথে কোথায় যাব আমি?”
তাজ ভাইয়া স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,“ভার্সিটিতে। মামু আমাকে বলেছে তোকে দিয়ে আসতে।”
আমি গোঁ ধরে বললাম,“অসম্ভব। আমি আপনার সাথে যাব না।”
“তোকে নিয়ে যাওয়ার শখও নেই আমার। নেহাত মামু বলেছে।”
“বাবা তো আর জানে না আপনি কতটা বিপজ্জনক। আমি বাসে চড়ে যাব।”
কথাটা বলেই হনহন করে হেঁটে গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দারোয়ান কাকা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“কী মামনি? গাড়ি তো ওইহানে।”
আমি বললাম,“গেইট খুলুন কাকা। আমি বাসে যাব।”
দারোয়ান কাকা নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,“সর্বনাশ! স্যার আমার চাকরি খায়া ফালাইব এই কথা শুনলে। ছোটো স্যারের লগে যাও মামনি।”
আমি বিরক্ত হলাম। এই লোককে আবার ছোটো স্যারও বানিয়ে ফেলল! এখন তো মনে হচ্ছে এ বাড়িতে আমার থেকে বেশি এই রাক্ষসটার অধিকার। অনেক অনুরোধ করেও দারোয়ান কাকাকে দিয়ে গেইট খুলতে পারলাম না। শেষমেষ বাধ্য হয়ে তাজ ভাইয়ার গাড়িতেই উঠে বসলাম। আমি ওঠার আগেই তাজ ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে ছিলেন। আমাকে পেছনের সিটে বসতে দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন,“আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয়? সামনে এসে বস, নইলে ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই।”
আমি কটমট করে তার দিকে তাকিয়ে পেছনের সিট থেকে নেমে সামনে চলে এলাম। পরক্ষণেই মনে পড়ল এটা তো বাবার গাড়ি না। বাবা তার গাড়ি নিয়ে গেছে। তাহলে এটা কি তাজ ভাইয়ার? হয়তো নতুন কিনেছে। যাকগে, আমার অত জানার ইচ্ছে নেই। সারাটা পথ আমি চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে রইলাম। আর তাজ ভাইয়াও চুপচাপ ড্রাইভিং করে গেলেন। ভার্সিটিতে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমেই আমি ক্লাসের দিকে হাঁটা দিলাম। তাজ ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমাকে পিছু ডাকলেন,“এই, এদিকে আয়।”
নামটাও সুন্দরভাবে বলে না। না-কি আমার নামের সাথেও তার শত্রুতা আছে? আমি ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই উনি বললেন,“তোর ফোনটা দে।”
আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,“কেন?”
উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,“দরকার আছে বলেই চাইছি। বের কর।”
এর সাথে এখন এখানে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করলে আমার মানসম্মান ধুলায় মিশে যাবে। আড়চোখে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম অনেকেই আমাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। পাশেই কয়েকজন সিনিয়র আপুরা হা করে তাজ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমার মতো প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়েছে। আমার খুব হাসি পেল। মনে মনে ভাবলাম,‘এই ছেলে যে কতটা বিপজ্জনক তা জানলে আর কেউ ক্রাশের ‘ক’ ও খেতে না আপুরা।’
তাজ ভাইয়া এবার ধমকে উঠলেন,“দিচ্ছিস না কেন?”
আমি মুখটা ছোটো করে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তার হাতে দিলাম। উনি কিছুক্ষণ আমার ফোনে কী যেন করলেন। তারপর আমাকে আমার ফোনটা ফেরত দিয়ে বললেন,“আমার ফোন নাম্বার সেভ করে দিয়েছি। ছুটির পর আমাকে কল করবি। আমি আশেপাশেই থাকব। কল দিলেই এসে নিয়ে যাব। বেশি পাকামো করতে যাস না আবার।”
অগত্যা আমি মাথা নাড়লাম। উনি সিনিয়র আপুদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে আবার গাড়িতে উঠে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলেন। আবার এই লোকের সাথেই বাড়ি ফিরতে হবে। ধুর! আমি রাগে ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে ক্লাসের দিকে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ হলো দুপুর দুইটায়। আমি ক্লাস থেকে বেরিয়ে ফোন হাতে নেয়ার আগেই দেখলাম দূরে তাজ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে দুজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় তার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে। আমি চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু ভালোভাবে মুছে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। তাজ ভাইয়া ওই মেয়েদের থেকে চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। তাজ ভাইয়াও উঠে বসলেন। গাড়ি স্টার্ট করে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“ভার্সিটিতে কেঁদেকেটে সাগর বানাতে এসেছিস?”
আমি থমথমে মুখে তার দিকে তাকালাম। শয়তানটা মুখ দেখেই বুঝে ফেলেছে কেঁদেছি। তার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। উনিও আমার জবাবের অপেক্ষা করলেন না। মিনিট দশেক পর আমার চোখের কার্নিশ বেয়ে আবারও জল গড়িয়ে পড়ল। আমি দ্রুত তা মুছে ফেললাম। তাজ ভাইয়া সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন করলেন,“কী হয়েছে?”
আমি এবারও চুপ থাকলাম। এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারব না। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা চালালাম। তাজ ভাইয়া হঠাৎ করেই খুব জোরে ব্রেক কষলেন। আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এখনও তো বাড়ি পৌঁছাইনি। তাহলে গাড়ি থামাল কেন? আমি প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। উনি গম্ভীর মুখে বললেন,“আমার গাড়িতে কেঁদেকেটে সাগর বানাবি না। বাসায় গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদিস। এখন বল কাঁদার কারণ কী?”
আমি এবারও চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। উনি হঠাৎ আমার হাতের বাহু ধরে এক টানে তার দিকে ফিরিয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন,“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
হাতের বাহুতে বেশ ব্যথা পেলাম। ওনার উপর প্রচন্ড রাগও উঠে গেল। আমি কাঁদি বা হাসি, তাতে তার কী? এক ঝটকায় তার হাতটা সরিয়ে কড়া গলায় বললাম,“আপনাকে কেন বলব? আমার বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবে না আপনাকে। আপনি আমার তেমন ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না যে সব কথা বিশ্লেষণ করতে হবে।”
রাগের বশেই কথাটা বলে ফেললাম আমি। এমনিতেই প্রায় আধঘণ্টা ধরে কাঁদছি। তারমধ্যে ওনার প্যারা সহ্য করতে ইচ্ছে হলো না। তাজ ভাইয়া কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর গাড়ি স্টার্ট করে খুব দ্রুতই বাড়ি পৌঁছে গেলেন। আমি গাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে একছুটে বাড়িতে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে ব্যাগটা বিছানার একপাশে ছুঁড়ে ফেললাম। তারপর ধপ করে বিছানায় বসে দুহাতে মাথাটা চেপে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলাম। ভালো হয়েছে বাবা বাসায় নেই। তাহলে শান্তিতে একটু কাঁদতেও পারতাম না। সবসময় শুনি কাঁদলে না-কি মন হালকা হয়। আমিও দেখি সত্যি সত্যিই হালকা হয় কি না।
চলবে…………………….?