#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” কেমন আছো আস্থা?”
” আপনি এখানে কি করছেন?” গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করে আস্থা।
” কেন?আমি কি এখানে আসতে পারিনা?” আবির হেসে জিজ্ঞেস করে।
” না আসতে পারেন,অবশ্যই আসতে পারেন।”
” তা তোমার পাশে ওটা কে?তোমার বান্ধবী নাকি?”
আস্থা একবার কথার দিকে তাকিয়ে বলে,
” হুম।”
” নাইস।” হালকা করে বলে আবির।
” কিছু বলছেন নাকি?”
” না কিছু না।ও হ্যাঁ তোমাকে আমি কয়েকদিন আগে মেসেজ দিয়েছিলাম রিপ্লাই দিলে না যে?”
” আমি বলছিলাম তো আমি ফেসবুক ইউজ করিনা।আপনি কাকে না কাকে মেসেজ দিয়েছে।”
” ও আচ্ছা।”
“হুম।তো আপনি যান যে কারণে এখানে এসেছেন সেটা করুন,আমরা বরং আমাদের কাজটা করি।”
” কথা চল।”
আস্থা কথার হাত ধরে টেনে তাকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে।কথা আবিরের ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে আস্থা তাকে সংক্ষেপে আবির ক্যারেকটার বুঝিয়ে দেয়।
১ সপ্তাহ পর,
অসময়েই বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।আস্থা একটা ছাউনির নিচে এসে দাঁড়ায়।আশেপাশে কয়েকটা রিকশা আসাযাওয়াও করছে কিন্তু কেউ থামছেনা।আস্থা বুঝতে পারছেনা,বৃষ্টি না থামলে সে বাড়ি ফিরবে কি করে।বাসায়ও ফোন করে কোন লাভ নেই,কারণ তার বাবা অফিসে আর মা তার ছোট ভাইকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছে,যেটা আস্থার ভার্সিটির একদম উল্টো দিকে।এখন আস্থার দাঁড়িয়ে থেকে রিকশা অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
” আস্থা।”
পরিচিত কারো কণ্ঠস্বর শুনে আস্থা চমকে যায়।তার সামনেই একটা লোক বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর লোকটা আর কেউ নয় তাজ।
” তুমি এখানে কি করছো?বাড়ি যাবেনা?”
” যাবো তো কিন্তু কি করে?আমার কাছে কোন ছাতা নেই আর না আছে রেইনকোট।এখন কোন রিকশা পেলেই তবেই বাড়ি যেতে পারবো।আর সেই রিকশার জন্যই অপেক্ষা করছি।”
” উঠে বসো বাইকে।আমিও তো বাসায় যাচ্ছি।উঠে বসো তোমাকেও পৌঁছে দিচ্ছি।মনে হয়না রিকশা পাবে,যা বৃষ্টি।এই নাও ছাতাটা নাও আর উঠে বসো।”
আস্থা কিছুক্ষণ ভেবে তাজের হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে বাইকে উঠে বসে।একহাতে আস্থা নিজের মাথার উপর ছাতা ধরেছে অন্যহাতে বাইক ধরে।তাজ রেইন কোট পড়ে আছে বিধায় তার ছাতার প্রয়োজন নেই।
আস্থাকে বিল্ডিং এর সামনে নামিয়ে নিয়ে পার্কিং লটে বাইক রাখতে চলে যায় তাজ।আস্থা তাড়াতাড়ি ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে নেয় কারণ সে অনেকটাই ভিজে গিয়েছিলো।
” মা তাড়াতাড়ি খাবার দাও,প্রচুর খিদে পেয়েছে।”
” তুই কার বাইক করে এসেছিস?” গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে আস্থার মা।মায়ের প্রশ্ন শুনে আস্থা একটু ভয় পেয়ে যায়।
” কি হলো?উওর দে।”
” ওই আসলে ওটা তাজ ছিলো,লতা আন্টি ছেলে।ওইযে আমাদের উপরের তলায় থাকে।”
” হুম বুঝেছি সেটা কিন্তু ওর বাইকে তুই কেন উঠেছিস?”
” আসলে বাইরে তো বৃষ্টি পড়ছে আর আমার কাছে ছাতাও ছিলো।রাস্তায় উনি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লিট দিলেন।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।যা খেতে বস,আমি খাবার আনছি।”
আস্থার মা রান্নাঘরে চলে যায়,আস্থা একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে টেবিলে বসে পড়ে।
.
.
ভার্সিটি শেষে আস্থা একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।আজ তার কেন যে খুব করে পিজ্জা খেতে ইচ্ছে করছে।তাই সে চিন্তা করেছে এখন একটা পিজ্জা কিনে নিয়ে গিয়েছে বাসায় সবার সাথে খাবে।যে ভাবনা সেই কাজ।পিজ্জা কিনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময় দু’জন মানুষের কথোপকথন শুনে আস্থা থেমে যায়।
” বিয়ে করে ফেলেছো নাকি?”
” না এখনো না।তুমি?”
” উ….করিনি এখনো।তবে পাত্র দেখছে।”
” হুম তাতো বেশ ভালোই।”
” আচ্ছা আমি যদি এখন তোমার লাইফে আবার ফিরে আসি তাহলে কি আমার জায়গা হবে?”
” আসবে কি তুমি ফিরে?”
আস্থা এবার পেছন ফিরে তাকাই।এতোক্ষণ যে দু’জনের কথা আস্থা শুনছিলো তারা আর কেউ নয় তাজ আর তন্বী(যে তাজকে বিয়ে করেনি)।আস্থা তন্বীর দিকে তাকিয়ে দেখে সে হাসিমুখে তাজের দিকে তাকিয়ে আছে।আস্থা আর সেখানে দাঁড়াতে পারলোনা।সে তাড়াতাড়ি একটা রিক্সা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।পিজ্জার বক্সটা টেবিলে রেখে সে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ঝর্না থেকে ঝিরঝির করে পানি পড়ছে আস্থার শরীরে।তার মনে আর মাথায় এখন শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,
” তন্বী কি আবারো তাজের জীবনে ফিরে আসবে?তার যদি ফিরে আসতেই হয় তাহলে সে চলে কেন গিয়েছিলো?”
অনেকক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আস্থা প্রথমে তার ফোনটা হাতে নেয়।তারপর কিছু একটা টাইপ করে মোবাইলটা রেখে দেয়।
পরেরদিন,
” আমাকে এখানে কেন আসতে বলেছো আস্থা?” প্রশ্ন করে তাজ।আস্থা কিছু না বলে শান্ত দৃষ্টিতে তাজের দিকে তাকিয়ে আছে।কাল সে তাজকে মেসেজ করে রোজি পার্কে আসতে বলেছিলো,আস্থা মনে করেছিলো তাজ আসবেনা কিন্তু তাজ এসেছে দেখে সে কিছুটা খুশি হয়েছে।
” কি হলো কেন ডেকেছো আমাকে?”
” আপনি কি কাউকে ভালেবাসেন তাজ?”
” মানে?এসব আবার কেমন প্রশ্ন?”
” বলুন না।”
” না।”
” আমি আপনাকে ভালোবাসি তাজ,অনেক বেশিই ভালোবাসি।আর হ্যাঁ এটা আমার ভালোলাগা বা মোহ নয়।আপনাকে প্রথমে আমার ভালোলাগলেও এখন আমি আপনাকে ভালোবাসি।আর কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ভালোলাগা সেটার পার্থক্য আমি বুঝি।”
” দেখো আস্থা আমি তোমাকে কখনো ওই চোখে দেখিনি আর না তোমার প্রতি আমার কোন ফিলিংস আছে।আমি তোমাকে ভালোবাসিনা,তাই এসব ভালোবাসা ভুলে গিয়ে পড়াশোনার মন দাও।” নির্লিপ্ত ভাবে বলে তাজ।তাজের এই ভাবলেশহীন কথাগুলো আস্থার হৃদয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।আস্থা তাজের হাত ধরে বলে, ” প্লিজ তাজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি,আমি পারবোনা আপনাকে ছাড়া থাকতে।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।” আস্থা ভেজা কন্ঠে তাজকে বলে। ” ও আচ্ছা আপনি পরিবারের চিন্তা করছেন তো?আপনি একদম চিন্তা করবেন আমি সবাইকে রাজি করিয়ে নেবো।প্লিজ আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।”
তাজ আস্থা থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
” তোমাকে একবার বললে বোঝোনা কেন?আমি ভালোবসি না তোমাকে,আমি তোমাকে আমার জীবনে জরাতে চাইনা।তোমার জন্য ভালো এটাই হবে তুমি তাড়াতাড়ি বাস্তবটা মেনে নাও।আসছি আমি।”
তাজ আর একমুহূর্ত দেরি না করে চলে যায়।আস্থা কয়েকবার তাজকে ডাকে কিন্তু তাজ একবারের জন্যও ফিরে তাকাই না।আস্থা চোখে জল নিয়ে তাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।এছাড়া যে তার আর কিছু করার নেই।
১ দিন পর,
মন মরা হয়ে শুয়ে আছে আস্থা।কাল থেকেই তার মন খারাপ,তার দেহে বেঁচে থাকলেও তার মনটা আর বেঁচে নেয়।অনেক্ষণ যাবৎ আস্থা ফোনটা বেজে চলেছে।অবশেষে না পারতে আস্থা ফোনটা রিসিভ করে।
” হ্যালো।” খুবই নিচু স্বরে বলে আস্থা।
” বেপি কি হয়েছে তোর?তোর গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন?আর আজ ভার্সিটিতে আসিসনি কেন?তোর কি শরীর খারাপ?জ্বর এসেছে?”
কথার কন্ঠস্বর শুনে আস্থা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা।সে হুট করে কান্না করে দিলো।আচমকাই আস্থার কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে কথা ঘাবড়ে যায়।
” আস্থু কি হয়েছে তোর?কান্না করিস কেন?”
” কথা আমার সব শেষ।এতোদিন আমি যে আশা দেখেছি,যে স্বপ্ন দেখেছি সব শেষ সব।” অঝোরে কান্না করতে করতে বলে আস্থা।
” আস্থা তুই প্লিজ শান্ত হয়।আমাকে বল কি হয়েছে?”
আস্থা আস্তে আস্তে কথা কালের ঘটনা বলতে থাকে,তবে তার কান্না এখনো থামেনি।আস্থার কথা শুনে কথার বেশ রাগ হয় তাজের উওর।সে আস্থা কোনভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করে।কথা আস্থাকে আশ্বস্ত করে যে সে কিছু একটা করবে।
২ দিন পর,
আস্থা মাত্রই খেয়ে নিজের রুমে এসেছে।সে যেতে চাইনি তবে তার মা জোর করে তাকে খেতে নিয়ে গিয়েছে।আস্থাকেও আর না পারতে যেতে হলো নয়তো তার মা আবার সন্দেহ করবে।
রুমে আসতে আস্থা শুনতে পাই তার ফোন রিং হচ্ছে।আস্থা ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই অপর পাশের ব্যক্তিটা বলে উঠে,
” এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার হ্যাঁ?একবার একটা কথা বললে বুঝতে পারোনা?তোমাকে না আমি সেদিন না করেছি তাহলে তোমার বান্ধবী কেন আবার আমার কাছে এসেছে?”
কথা শুনে আস্থার আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে এটা তাজ।আস্থা হুট করে বলে বসে,
” কি করিলে বলো পাইবো তোমারে,প্রিয়?”
আস্থার কথা শুনে তাজ ঝাঁঝালো গলায় বলে,
” কিছু করলেই তুমি আমাকে পাবেনা।তুমি যদি মরেও যাও,তাও তুমি আমাকে পাবেনা।আমি তোমাকে নিজের জীবনে আসতে দেবো,আমি জড়াবোই না তোমাকে নিজের জীবনে।”
আস্থা আর শুনতে পারলো না,সে ফোনটা কেটে দিয়ে আবারো অঝোরে কান্না করতে লাগলো।
চলবে…..