#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ০২_০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” কিরে তিথি শুনলাম তোর ভাইয়ের বিয়ে নাকি ভেঙে গিয়েছে?” বিদ্রুপ করে বলে তিথির ক্লাসমেট সুমাইয়া।
তিথি হচ্ছে তাজের ছোটবোন।ও দিক দিয়েই নিজের ক্লাসে যাচ্ছিলো আস্থা।মেয়েটার কথা শুনে সে থেমে যায়।তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আস্থা আর তিথি সেইম ভার্সিটিতে পড়ে তবে তাদের
ডিপার্টমেন্ট আলাদা।আস্থা পড়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে আর তিথি ইংরেজি বিভাগে।
” আরে তিথি কেমন আছো?”
মাথা তুলে আস্থার দিকে তাকায় তিথি।
” তোমার কথা শেষ হলে কি তুমি আমাদের একটু স্পেস দিতে পারবে?”
সুমাইয়া নামের মেয়েটা চলে যায়।আস্থা তিথির পাশে এসে দাঁড়ায়।
” কি হয়েছে?এভাবে মাথা নিচু করে আছো কেন?”
” কিছু না।”
” আমি জানি তিথি তোমার মন খারাপ কিন্তু এতে এতো মন খারাপ করোনা।যা হওয়ার তা তো হয়ে গিয়েছে,মন খারাপ করে কি হবে।আর একবার সেই মেয়েটার কথাও ভেবে দেখো তারও নিশ্চয়ই কোন সমস্যা ছিল।তাই হয়তো সে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।”
” হুম।”
” আচ্ছা মেয়েটাকে বিয়ে কেন ভেঙেছে?”
” জানিনা আমি।আমাকে বাড়ির কেউ কিছু বলেনি।”
” আচ্ছা সেসব বাদ দাও।চলো এখন ক্লাসে যায়।না হলে টিচার বকা দেবে।”
আস্থা আর তিথি নিজের নিজের ক্লাস রুমে চলে যায়।
” কিরে আস্থু তোমার চোখের মধ্যে কাজল কেন?কোথাও গিয়েছিলি নাকি?” জিজ্ঞেস করে আস্থার বান্ধবী কথা।
” হুম তাজের বিয়েতে গিয়েছিলাম।”
” তাজ?ওই তোর ক্রাশটা?”
” হুম।”
” কি বলছিস তুই আস্থু?তুই তোর ক্রাশের বিয়ে গিয়েছিলি?এই তুই কি কান্না করেছিস?হ্যাঁ?দেখি দেখি তোর চোখগুলো।”
” ধুর কান্না করবো কেন?আমি কোন কান্না টান্না করিনি।আমার চোখের পানি কি সস্তা নাকি যে একটু থেকে একটু হলে চোখ থেকে পড়ে যাবে?আর শোন তাজের বিয়ে হয়নি।সো কান্না করার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।”
” বিয়ে হয়নি মানে?তুই না একটু আগে বললি তুই তোর ক্রাশের বিয়েতে গিয়েছিলিস?”
” তো বিয়েতে গিয়েছি তাই বলেকি বিয়ে হতেই হবে?”
” এ্যাঁ…?কি সব বলছিস তুই?মানুষ বিয়েতে যায় বিয়ে হয় সে জন্য।বিয়ে না হলে কি সেখানে পিকনিক করতে গিয়েছিস?”
” আরে বেডি চুপ থাক।বিয়েতে গিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু বিয়ে হয়নি।মানে বিয়েটা ভেঙে গিয়েছে।”
” কি বলিস কি আস্থু?বিয়ে হয়নি?এই আবার এটা হয়নিতো যে তোর ক্রাশের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে আর তোর বাবা-মা জোর করে তার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।”
” চুপ করবি তুই?নাম যেমন কথা তেমনিই বেশি কথা বলিস।আরে আমি কেন বিয়ে করতে যাবো?আমাকে কি পাগল বিড়ালে কামড় দিয়েছে নাকি?”
” পাগল বিড়ালও হয় নাকি?আর আমি তো কত গল্পে পড়েছি হুট করে বিয়ে ভেঙে গেলে অন্য মেয়েকে জোর করে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেয়।”
” পাগল বিড়ালও হয়।আর শোন এখন থেকে একটু কম কম গল্প পড়।গল্প পড়ে পড়ে তোর মাথাটা না গিয়েছে।সব জায়গায় খালি গল্পের সাথে মেলালে যাস।গল্প হচ্ছে গল্প,এটার সাথে বাস্তব কেন মিলাতে যাস বলতো?”
” তুই কি বুঝবি গল্পের র্মম?গল্প পড়লে বুঝতি গল্প কি জিনিস।”
” আ….তোরা দুজন একটু চুপ থাকবি?সেই কখন থেকে দুজনে কথা বলেই যাচ্ছিস।একটু চুপ কর।তোদের কথার জন্য আমি স্যারের কথা শুনতে পাচ্ছিনা।” বিরক্তি নিয়ে বলে নাইরা।
” আসছে আমাদের বিদ্যাসাগর।” কথা বলে।
” এই চুপ থাক।নয়তো আবারো ক্ষেপে যাবে।এবার পড়ায় মন দে।”
কথাও আর কোন কথা না বলে পড়ায় মন দেয়।
ক্যান্টিনে বসে আছে আস্থা,কথা আর নাইরা।কথা আর আস্থা কথা বলতে বলতে খাবার খাচ্ছে তবে নাইরা এখানেও বই পড়ছে।
” এই যে বিদ্যাসাগরের নাতনী এবার একটু বই থেকে চোখটা তুলুন।কি মেয়েরে বাবা ক্যান্টিনে এসেও উনি বই পড়ছেন।” কথা বলে।
” নাইরা বইটা এবার একটু সাইডে রাখ।খাবারটা আগে খেয়ে নে।”
আস্থা বলার ২/৩ মিনিট পর নাইরা বইটা সাইডে রেখে খাবার খাওয়া শুরু করে।
” তুই সারাদিন এতো কি পড়িস বলতো?” আস্থা বলে।
” ক্লাসের পড়ায় পড়ি।তোরা তো জানিস আমি বাসায় পড়ার সময় পায় না।আচ্ছা বাদ দে ওসব খাওয়া শেষ কর তাড়াতাড়ি।”
নাইরা নিজের খাওয়ার খেতে থাকে।তবে নাইরার কথা শুনে আস্থা আর কথার কিছুটা মন খারাপ হয়ে যায় কারণ তারা জানে নাইরার পারিবারিক অবস্থা এখন ভালোনা।
.
.
টিউশন শেষ করে মাত্রই বিল্ডিং এর কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে আস্থা।আস্থার পরিবার অতটাও উচ্চবিত্ত নয় তবে তার মানে এই নয় যে তার পরিবারের অবস্থা খাবার।আস্থার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবি।আস্থার মাও আগে চাকরি করতেন তবে এখন ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি আর চাকরি করেন না।আস্থাকে তার বাবা-মা টিউশনি করতে দিতে চায়নি তবে আস্থা অনেক বুঝিয়ে তাদের রাজি করিয়েছে।কারণ সে তার বাবা-মায়ের কিছুটা বোঝা কমাতে চাই।
হেঁটে এসে হাঁপিয়ে গিয়েছে আস্থা।সে আস্তে আস্তে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে উপরে উঠছে।হুট করেই সে থেমে যায়।কারণ উপর থেকে তাজ নামছে।তাজও আস্থাকে দেখে থেমে যায়।আস্থা চিন্তা করছে তার কি কিছু বলা উচিত।
” আসসালামু আলাইকুম।”
” ওয়ালাইকুম আসসালাম।কোথা থেকে আসছো?”
” টিউশন করিয়ে ফিরছি।”
” গুড।মেয়েদের নিজেদের কিছু করা দরকার।তুমি না তিথির ভার্সিটিতে পড়ো?”
” জ্বি।”
” হুম।আচ্ছা যাও,আমিও আসি।পরে কোন সময় দেখা হবে।”
মাথা নাড়িয়ে আস্থা সরে দাঁড়ায়।আস্থা সরে দাঁড়াতেই তাজ চলে যায়।আস্থা একবার উপরে আর নিচে দেখে নেয়।
” আ…..ও মাই গড,ও মাই গড।আমার ক্রাশ আমার সাথে কথা বলেছে।আল্লাহ আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিনা,ক্রাশ আমার সাথে কথা বলেছে।আ…আমার কি যে খুশি লাগছে।” খুশিতে একপ্রকার লাফিয়ে লাফিয়ে আস্থা নিজের বাসায় আসে।
২ ঘন্টা পর,
” আস্থা?এই আস্থা?”
” কি হয়েছে মা?এভাবে ডাকছো কেন?”
” এই নে ধর।” একটা মাঝারি সাইজের বাটি আস্থার হাতে ধরিয়ে দেন আস্থার মা।
” এই বাটিটা আমাকে দিচ্ছো কেন?”
” যা বাটিটা লতা ভাবীকে দিয়ে আয়।”
” কি আগে গো বাটিতে?”
” পায়েস আছে।কাল যা ঘটেছে ভাবীদের মানসিক অবস্থা ভালো না।তাই ভাবলাম তাদের মিষ্টি কিছু রান্না করে দিয়।এবার যা দিয়ে আয় আর শোন সাবধানে উঠবি।নয়তো দেখা যাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হাত পা ভেঙে ফেলেছিস।”
মায়ের কথায় কান না দিয়ে আস্থা দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে।তাজের ফ্ল্যাটের সামনে এসে বেল চাপে আস্থা।তিথি এসে দরজা খুলে দেয়।
” এই নাও,মা পাঠিয়ে।” বাটিটা তিথির দিকে করে বলে আস্থা।
” কে এসেছেরে তিথি?”
” আস্থা এসেছে মা।”
” ওকে ভেতরে নিয়ে আয়।”
তিথি আস্থার হাত ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে আসে।ভেতরে এসে আস্থা দেখে শুধু তিথি আর তার মা আছে।বিয়ে সহ বাকি সব অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টার হওয়ার কারণে বাসায় তেমন কেউ আসেনি।আর যারা ছিলো তারা সকালের মধ্যেই ফিরে গিয়েছে।তবে বাড়িটার মধ্যে এখনো একটা বিয়ে বিয়ে ভাব রয়েই গিয়েছে।আস্থা তিথির মায়ের থেকে পারমিশন নিয়ে বাড়িটা ঘুরে দেখতে থাকে।একটা রুমের সামনে এসে আস্থা থেমে যায়।পর্দা নামিয়ে রাখার কারণে ভিতরে কি আছে তা দেখা যাচ্ছে না।পর্দা সরিয়ে আস্থা ভেতরে ঢুকে।রুমের মধ্যে এদিক ওদিক ককসিট ছড়িয়ে আছে আর এককোণে ককসিট দিয়ে বানানো একটা দোতলা বাড়িও দেখতে পাই আস্থা।আস্থা ককসিট দিয়ে বানানো বাড়ির কাছে এসে বসে আর হাত হালকা হালকা করে সেটাকে ছুঁয়ে দেখতে থাকে।আস্থা জানে এটা তাজই বানিয়েছে কারণ তার কাজই যে এটা।উঠার সময় হঠাৎ আস্থার বেডের পেছনের দেয়ালটার দিকে চোখ পড়ে আর পরক্ষণেই তার মুখ থেকে হাসিটা মুছে যায়।দেয়ালের মধ্যে তাজ একটা মেয়ের সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আস্থা আন্দাজ করে বোঝে মেয়েটা হচ্ছে তাজের সেই হবু বউ।যদিওটা তার সাথে তাজের বিয়ে হয়নি তাও কেন জানি আস্থার ছবিটা দেখে মোটেও ভালো লাগেনি।কোথাও যেন তার মনের মধ্যে একটা খারাপ লাগা কাজ করছে।
চলবে……
(আচ্ছা গল্পের চরিত্রের নামগুলো কি আপনাদের পছন্দ হয়নি?)
#কি_করিলে_বলো_পাইবো_তোমারে
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
সকালের ফুরফুরে বাতাসটা আস্থার খুব ভালো লাগে।তবে সবসময় নয়,হুট করে কোন সময় তার এই সকালের বাতাসটা ভালো লাগে।আর যখনই তার ভালো লাগে সে দেরি না করে ছাদে চলে আসে।আজো আস্থা ছাদে চলে এসে।ছাদের হরেক রকমের গাছ আছে।সব এই বিল্ডিং এর মানুষদের।আস্থা এতগুলো গাছের মধ্যে থাকা তাজের গাছটার কাছে এসে দাঁড়ায়।গাছটাতে সাদা সাদা কতগুলো ফুল ফুঁটেছে,তবে এই ফুলের নাম আস্থার জানা নেই।নিচে উঁকি দিয়ে আস্থা দেখে কেউ নেই।তাই সে বিল্ডিং এর পেছন দিকটা দেখতে চলে যায়।
বিল্ডিং এর পেছন দিকে একটা ছোট জিম আছে।যেখানে এই বিল্ডিং এর মানুষরা নিজেদের সুবিধামতো জিম করে থাকে।এখন সেখানে কয়েকটা মধ্যবয়স্ক পুরুষ আছে আর তাদের সাথে আছে তাজ।জিমের দৌড়ানোর যে জিনিসটা থাকে তাজ ওটাতেই দৌড়াচ্ছে।আস্থা এটারও নাম জানেনা আর সে জানতেও চায়না।হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই আস্থা দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে।
” এইযে শুনছেন?”
কারো ডাকে তাজ পেছন ফিরে তাকায়।হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে আস্থা।
” আমাকে বলছো?”
” জ্বি আপনাকেই বলছি।আচ্ছা ছাদের ওই সাদা ফুলের গাছটা আপনার না?”
” হ্যাঁ ওটা আমারই গাছ।কেন?কিছু হয়েছে?”
” না না কিছু হয়নি।আসলে আমার না ফুলগুলো পছন্দ হয়েছে।আমি কি আপনার গাছ থেকে ফুল নিতে?” পিটপিট চোখে তাজের দিকে তাকিয়ে বলে আস্থা।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাজ বলে,
” আচ্ছা ঠিক আছে নাও।”
” থ্যাংক ইউ।আচ্ছা আমি কয়টা ফুল নিতে পারি?”
” তোমার ইচ্ছা।তবে হ্যাঁ সাবধানে নিও,যেন গাছের কোন ক্ষতি না হয়।”
” কিছু হবেনা গাছের।আমি কিছু হতেই দেবোনা।” খুশি মনে আস্থা জিম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে আসে।আস্থার কান্ড দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাজের কপাল কুচকে যায়।
” মা আমি আসছি।” ঘর থেকে বের হতে হতে বলে আস্থা।
” সাবধানে যাস আর খাবার খেয়ে নিস।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”
তাড়াতাড়ি দরজা খুলে জুতোটা পড়ে নেয় আস্থা।কিন্তু সে যখনই নামার জন্য এগোবো তখন পেছন থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাকে।মাথা উঁচু করে আস্থা দেখে তিথি নামছে আর তার পেছনে তাজও আছে।
” ভার্সিটিতে যাচ্ছো বুঝি?” তিথি জিজ্ঞেস করে।
” হ্যাঁ।”
” চলো তাহলে আজ আমরা একসাথে যায়।ভাইয়া তুমি তোমার অফিসে চলে যাও।আমি আস্থার সাথে চলে যাবো।”
” কোন সমস্যা হবে নাতো?”
” আরে না কেন কোন সমস্যা হবে?আমি আর আস্থা কথা বলতে বলতে চলে যাবো।”
” সেটাই তো সমস্যা।তোর কথার কারণে তো মানুষের পাগল হওয়ার জোর।”
” ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”
” বাহ্,এতটুকু মেয়ে আবার অপমানও বুঝে।আচ্ছা যাইহোক নিজের খেয়াল রাখিস।আর আস্থা তুমিও নিজের খেয়াল রেখে।দেখো তোমরা দুজন কথা বলতে বলতে আবার রাস্তার মাঝখানে চলে আসবে।তখন আবার আরেকটা বিপদ হয়ে যাবে।”
” আরে কিছু হবেনা।আস্থা চলোতো,এখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে জ্ঞান ভরা কথা শুনতে শুনতে আমাদের দেরি হয়ে যাবে।” আস্থার হাত ধরে তিথি নিচে নেমে যেতে থাকে।তাদের পেছন পেছন তাজও নামছে।পেছনে তাজের অস্তিত্ব থাকায় আস্থার মনের মধ্যে ধুকধুক করছে।নিজের পছন্দের মানুষটাকে কাছ থেকে দেখতে পাওয়া একটা অন্যরকমের আনন্দ।
.
.
হেঁটে এসে হাঁপিয়ে গিয়েছে নাইরা তবে তার থেমে থাকলে চলবেনা।কারণ তাকে এখনো এতো বড় ক্যাম্পাসটা পার করে সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসেও যেতে হবে।ভিতরে ঢুকে একসাইডে দাঁড়িয়ে নাইরা নিজের ব্যাগ থেকে একটা বোতল করে পানি পান নিজের তৃষ্ণা মেটায়।
” নাইরা।”
হঠাৎ নিজের নাম শুনে পিলে চমকে উঠে নাইরা।সে পেছন ফিরে দেখে একটা ছেলে হাসিমুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটাকে দেখে মনে মনে নাইরা কিছু বিরক্ত হয়।ছেলেটার নাম হচ্ছে অগ্নি মির্জা।এই ভার্সিটিতেই মাস্টার্স করছে সে।
” কেমন আছো তুমি?”
” জ্বি ভালো ভাইয়া।” কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলে নাইরা।কারণ প্রতিদিন একই কথা শুনতে শুনতে এখন সে বিরক্ত।
” কাল আসোনি যে?কোন সমস্যা?”
” না ভাইয়া কোন সমস্যা না।”
” এই তুমি আমাকে কথায় কথায় ভাইয়া ভাইয়া বলছো কেন?আমি তোমার কোন ভাইটাই না।আমার একটা নাম আছে অগ্নি,তুমি সেই নামে ডাকবে।”
” আমি এখন আসছি ভাইয়া,আমার ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
দ্রুত পায়ে নাইরা স্থানটা ত্যাগ করে।অগ্নি অসহায় দৃষ্টিতে নাইরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।প্রতিদিন সে কথা বলতে চাইলে নাইরা বাহানা বানিয়ে চলে যায়।
” একটা বছর ধরে তোমাকে ভালোবেসে আসছি নাইরা।কিন্তু তুমি আজো তা বুঝলেনা।কিভাবে আমি তোমাকে নিজের করে পাবো নাইরা?কি করিলে বলো পাইবো তোমারে?”
.
.
” এই অনি যাবি আমার সাথে?”
” কোথায় আপু?”
” উপর তলায়।”
” তাজ ভাইয়াদের বাসায়?”
” হ্যাঁ।যাবি?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো।চলো।”
অনিক তাড়াতাড়ি বইখাতা ফেলে আস্থার সাথে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়।আস্থা একটা বাটিতে নিয়ে তাজদের বাসায় এসে বেল চাপে।
” আজ আবার কি নিয়ে এসেছিস শুনি?”
” আচার।মা আজ আচারে বানিয়ে পাঠিয়ে।”
” তোর মা’টাও না।এতো করে বলি প্রতিদিন এতো কিছু বানিয়ে দিওনা কিন্তু কে শোনে কার কথা।”
” আরে আন্টি তুমি তো জানোই মায়ের নতুন কিছু বানাতে কত ভালো লাগে আর নিজের বানানো খাবার অন্যদের খাওয়াতেও মায়ের খুব ভালো লাগে।তাই তো তোমাদের দে।”
” তাও তুই ঠিক বলেছিস।আরে অনিক বাবা যে।কতদিন পর পুচকুটাকে দেখলাম।আয় আয় তোরা ভেতরে আয়।”
আস্থা আর অনিক ভেতরে গিয়ে বসে।আস্থা লতা আন্টির সাথে রান্নাঘরে চলে যায় আর অনিক দৌড়ে তাজের রুমে চলে আসে।অনিকের তাজকে খুব ভালো লাগে।তাই তো সে এখানে আসার কথা শুনে আর না করেনি।
রুমে এসে অনিক দেখে তাজ নিচে বসে ককশিট দিয়ে কিছু একটা করছে।
” তাজ ভাইয়া?”
” আরে অনিক বাবু যে।তা এতোদিন পর তাহলে তুমি আবার আমাদের বাড়িতে এলে।আমি কিন্তু তোমার সাথে খুব রাগ করেছি।”
” কেন তাজ ভাইয়া?”
” এইযে তুমি এতোদিন পর আমাদের বাড়িতে এলে তাই।”
” আমি তো চাই তোমাদের বাসায় আসতে কিন্তু মা দেয়না।সারাক্ষণ শুধু পড়তে বলে।”
” আহারে বেচারা অনিক বাবুটা,পড়তে পড়তে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে না?”
” হুম।পড়াশোনা আমার একদম ভালো লাগেনা।কিন্তু মাতো বোঝেইনা না।পড়বোনা বললে মাইর দেয় আর আপুও আমাকে বাঁচায় না।”
” আন্টি মারলে তোমার আপু তোমাকে বাঁচাতে আসেনা?”
” না গো তাজ ভাইয়া।আপু তো নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে থাকে।শুধু খাওয়ার সময় বের হয়।”
” তা তোমার আপু দরজা বন্ধ করে কি করে?”
” দরজা বন্ধ করে আপু পড়াশোনা করে।আমি আপুর রুমে যায় তাই মা বলেছে দরজা বন্ধ করে পড়তে।আপু তো আমার সাথে খেলেও না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে অনিক বাবু।মন খারাপ করোনা,আমি সময় পেলে তোমার সাথে খেলবো।”
” সত্যি?”
” হ্যাঁ তিন সত্যি।”
” আচ্ছা তাজ ভাইয়া তোমার বউ কোথায়?মা তো বলেছিলো বিয়ে হলে নাকি বউ হয়।আমরা তো সেইদিনই তোমার বিয়েতে গিয়েছিলাম তাহলে তোমার বউ কোথায়?”
অনিকের কথা শুনে তাজের মন খারাপ হয়ে যায়।সে চুপ করে একদৃষ্টিতে ককশিট দিয়ে বানানো বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে।
” অনি।”
আস্থা এসেছিলো অনিককে নিয়ে যেতে,সে অনিককের পুরো কথাটা শুনতে না পেলেও শেষের কথাটুকু শুনতে পাই।
” অনি যা বাসায় যা।মা তোকে ডাকছে।”
মা ডেকেছে শুনে অনিক তাজের থেকে বিদায় নিয়ে দৌড়ে নিচে চলে আসে।
” দুঃখিত।অনিক বুঝতে পেরেনি ও আসলে কি বলতে কি বলেছে।ওর কথায় প্লিজ কষ্ট পাবেন না।”
” না না ঠিক আছে।আমি ওর কথায় কিছু মনে করিনি।ও ছোট বাচ্চা না বুঝে বলে ফেলেছে।”
” আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
” হুম করো।”
” এইযে ছবির মেয়েটাই আপনার হবু বউ ছিল না?”
আস্থাদের আঙ্গুল অনুসরণ করে তাজ দেয়ালের দিকে তাকাই।তাজ ভুলেই গিয়েছিলো ছবিটার কথা।
” কি হলো?”
” হুম ওর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।তন্বী ওর নাম।”
” আচ্ছা আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ ছিল?” কথাটা বলতে আস্থার খুবই কষ্ট হচ্ছিলো।সে মনে মনে চাইছিলো তাজ যেন প্রশ্নের নাবোধক উওর দেয়।আর হলোও তাই।
” না আমাদের এ্যারেন্জ ম্যারেন্জ ছিল।”
তাজের কথা শুনে আস্থার মন থেকে যেন একটা ভারী কিছু নেমে যায়।
” আচ্ছা তাহলে আমি আজ আসি।ভালো থাকবেন।”
আস্থা তাজের দিকে তাকাতে তাকাতে তার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তবে তাজ এখনো ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে……