?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 04
আজ উজানের ছুটি বিধায় উজান আজ সারাদিন বাড়িতে,যদিও অফিসের হেড হবার বদৌলতে বিকেলে গিয়ে একবার সব চেক করে আসবে বলে কাকে জানি ফোনে বলছিলো,আর হিয়া সেই দুপুরের খাবারের পর পরি রেহানের রুম থেকে একটা কলেজের সাইন্স বিভাগের বই এনে সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে ওটাকে ঘেটেঘুটে দেখাতে সময় পার করছিলো
উজানঃ পড়াশুনো করবার ইচ্ছে আছে সামনে (ল্যাপ্টপের স্ক্রীনে তাকিয়ে থেকেই)
হিয়াঃ আমাকে বলছেন
উজান রাগী চোখে হিয়ার দিকে তাকালে হিয়া বুঝে হিয়া একটা ভুল কথা বলে ফেলেছে আবার,কথা টা হিয়াকে বলবেন না তো কাকে বলবে রুমে নিশ্চয় হিয়া ছাড়া অন্য কেউ নেই
হিয়াঃ হ্যা আছে,আর আমি আপনার মাকেও বলেছিলাম আমাকে পড়াশোনা করতে দিলেই তবেই আমি আপনার ছেলে কে বিয়ে করবো নয় তো না
উজানঃ রেজাল্ট কি ছিলো মাধ্যমিকে
হিয়াঃ আপনি জেনে কি করবেন
উজানঃ তারমানে ভালো ছিলো না তাই তো,ভালো হলে নিশ্চয় আগ বাড়িয়ে বলতে
হিয়াঃ একদম বাজে বকবেন না,পুরো স্কুলে আমি থার্ড হয়েছি জানেন আপনি,আসছে আবার আমাকে কথা শুনাতে হু
উজানঃ গুড
_______________
এক সপ্তাহ পর
উজান হিয়াকে ওর অফিসের কাছের গার্লস কলেজটাতে ভর্তি করে দিয়ে আনুষাঙ্গিক যা লাগে সব কিনে দেয়,দুজনে এখন হুট তোলা রিক্সায়াতে উঠে বাড়ি যাচ্ছে,উজানের গাড়ি টা বিহান নিয়ে বেড়িয়েছে আর বাইকে উজান হিয়াকে বসাবে না তার বাইকের পেছনের সীট টা শুধুই নীলিমার জন্য বরাদ্দ,তাই বাধ্য হয়ে রিকশা তে,যদিও এতে হিয়ার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না,মধ্যে দুপুরের ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখতে বেশ লাগছে তার
উজানঃ হ্যা আমি হাফ এন্ড আওয়ারের মধ্যে জয়েন করছি আপনারা প্লিজ কন্টিনিউ করুন,ইয়া,ওকে
উজান ফোন টা কান থেকে নামিয়ে কেটে দিতেই হিয়া উজানের দিকে একটু ঝুঁকে এসে উজানের ফোন স্ক্রীনের ছবি টা দেখতে চেষ্টা করে
উজানঃ হোয়াট,কি সমস্যা
হিয়াঃ(পিছিয়ে গিয়ে ঠিক করে বসে)ওটা কে নীলিমা আপু?
উজান কিছু না বলে হিয়ার দিক থেকে মুখ সারিয়ে সামনে তাকায়,হিয়ার ছোট মনে তখনো নীলিমা কে দেখার চঞ্চলতা বিরাজ করছে
হিয়াঃ আমি নীলিমা আপুকে দেখবো?
উজানঃ কেনো
হিয়াঃ এমনি ইচ্ছে করছে তাই
উজানঃ ইচ্ছে করলেই যে সব টা পূরণ করতে আছে তার তো কোনো মানে নেই
হিয়াঃ নীলিমা আপু অনেক সুন্দর দেখতে তাই না
উজানঃ হ্যা সুন্দর অন্তত আমার চোখে সে সবার চাইতে সুন্দর
হিয়াঃ তাহলে দেখাতে সমস্যা কোথায়
উজানঃ অন্য একদিন
হিয়া জানে উজানকে জোর করে কোনো লাভ নেই,তাই হিয়া চুপ হয়ে যায়,রিক্সা চলতে থাকে নিজ গতিতে,দুজনেই চুপচাপ,হিয়া ব্যস্ত শহরের ওলি গলি দেখতে,হঠাৎই সব নীরবতা কাটিয়ে উজান কথা শুরু করে
উজানঃ জানো হিয়া নীলিমাও তোমার মতো অনেক ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলো,প্রতিবার ক্লাসে ওর আর আমার পজিশন টা উনিশ বিশ হতেই থাকতো,কখনো ও এগিয়ে কখনো বা আমি,আর আমার পজিশন টা ওর থেকে এক ধাপ উপরে উঠলেই ম্যাডামের চোখ মুখ রাগে পুরো আগুন হয়ে যেতো,আর ওর ঔ রাগী রাগী চাহনি দেখতে আমি ওলয়েজ ট্রাই করতাম ওর থেকে বেটার করার,কখনো পারতাম কখনো বা ও জিতে যেতো
হিয়া খেয়াল করে নীলিমার কথা বলার সময় উজানের চোখ মুখ থেকে কি রকম শান্তির ছাপ ভেসে আসছে,হিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে উজানের দিকে আর ভাবে নীলিমা আপু টা কতো লাকি যে ওনাকে কেউ এতো গভীর ভাবে ভালোবাসছে যার ফোনের ওয়ালপেপার থেকে শুরু করে রাতের ঘুম অবধি সে জরিয়ে,হিয়া খেয়াল করে উজানের চোখে হালকা জল,নীলিমাকে নিয়ে আর কিছু বলতে গেলেই হয়তো সেই জল চোখ বেয়ে গাল অবধি গড়িয়ে পড়বে যেকোনো মুহুর্তে
হিয়াঃ বাসায় এসে গেছি
উজানঃ কিছু বললে
হিয়াঃ বাড়িতে এসে গেছি,আপনি উপরে যাবেন,,,,,না অফিসে যাবেন
উজানঃ কাজ আছে তুমি যাও
হিয়াঃ হুম
হিয়া বই গুলো নিয়ে নামতে ধরে হালকা চটকে পড়ে
উজানঃ আস্তে,সাবধানে,,পাড়বে ওগুলো নিয়ে উঠতে না আমি যাবো সাথে
হিয়াঃ না না আমি ঠিক পারবো,এটুকু বোঝা নিয়ে যাবার অভ্যাস আমার আছে,আসছি
_______________
বাড়িতে আজ উজানের ফুফু আর ফুফুর মেয়ে সহ এক নাতিতে এসেছে,সেই নিয়ে ব্যস্ত বাসবি,জিনি বাড়িতে নেই টিউশন পড়তে গেছে,পাবলো আর বিহানো বাহিরে,হিয়া তাই এখন নিজের রুমে একা একা বসে আছে
নিলয়ঃ মামি কি করো একা বসে বসে
হিয়াঃ কিছু না সোনা এমনি বসে আছি
নিলয়ঃ আমার সাথে খেলবে
হিয়াঃ তোমার সাথে,খেলা যায়,কি খেলবে বলো
নিলয়ঃ কি খেলবো কি খেলবো লুকোচুরি খেলবে,আমি লুকোবো তুমি আমাকে খুঁজবে
হিয়াঃ উমমম ঠিক আছে
নিলয় লুকোনোর জায়গা খুঁজতে গিয়ে ওর চোখ যায় আয়নার পাশে দাঁড় করে রাখা একটা গিটারের উপর
নিলয়ঃ মামি এটা কার গিটার,আমি বাজাই
হিয়াঃ না সোনা এটা তোমার মামার গিটার,মামা দেখলে যে বকুনি দিয়ে দেবে
নিলয়ঃ শুধু একটু ধরবো প্লিজ,প্লিজ প্লিজ প্লিজ
নিলয়কে হিয়া আর না করতে পারে না,গিটার টা এক হাতে তুলে এনে বিছানায় রেখে গিটারের গা থেকে কাপড় টা খুলে দেয়
হিয়াঃ হয়েছে দেখা,শান্তি
নিলয়ঃ হুম চলো এখন আমরা লুকোচুরি খেলি
হিয়াঃ ঠিক আছে আসো
হিয়ার ইচ্ছে নেই লুকোচুরি খেলবার,তবুও বাচ্চাদের কে কেই বা মানা করতে পারে,হিয়াও রাজি হয়ে যায় এদিকে খেলতে মিলতে ও পাশে ফুফু দের সাথে গল্প করতে হিয়া ভুলে যায় স্নান করবার কথা,সন্ধ্যা হয়ে আসে একটু পর তো আবার উজান আসবে আর এসেই স্নানে ঢুকবে তার চেয়ে বরং আগে আগে ঢুকে স্নান টা করে নেওয়াই বেটার
হিয়া গিটার টা ওরকম করে বিছানার উপর থুইয়ে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে,আর এদিকে নিলয় হিয়াকে খুঁজতে রুমে এসে গিটার টাকে দেখেই লাফিয়ে উঠে,,খুব সর্তকভাবে আশপাশে চেক করে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে,ছোট হাত দুটো দিয়ে জোরালে ভাবে বাজাতে গিয়েই ছিড়ে আসে গিটারের তিনটে তার,ভয়ে এক ছুটে রুম থেকে পালিয়ে যায় নিলয়,কিছুক্ষন বাদে উজান রুমে আসে,এসেই অফিসের ব্যাগ টা সোফায় থুয়ে বিছানায় বসে টাই টা খুলতে যাবে ওমনি চোখ গিয়ে পড়ে ওর গিটার টার উপর,আর ওটা হাতে নিতেই খেয়াল করে তিনটে তার ছিঁড়ে আছে খুবই বাজে ভাবে,
মুহুর্তে রাগের পাহাড় এসে জমা হয় উজানের কপাল জুড়ে,রাগে ফুঁসতে থাকে সে,এটা হিয়া ছাড়া কারো কাজ না,সেদিন তো হিয়াই গিটার টা বাজাবে বলে বায়না করছিলো কিন্তু উজান কিছুতেই রাজি হয় নি,রাজি তো দূরে থাক গিটার টাকে ধরা অবধি সে নিষেধ করে দিয়েছিলো,তারপরো হিয়া কোন সাহসে,
এমন সময় হিয়া স্নান সেড়ে ওয়াশরুমের গেট টা আলতো করে খুলে কাপড় রাখা বালতি টা বের করে সামনে রেখে ওর মাথার কিলিপ টা নিতে যেই আবার ওয়াশরুমে ঢুকলো ওমনি উজান সোজা গিয়ে গেট টা দুম করে খুলে হিয়াকে দু’হাতে চেপে ঝর্নার কাছে ধরতেই হিয়া পুরো থ,ঝর্না গড়িয়ে জল পড়ছে অবিরাম,হিয়া ভিজে যাচ্ছে সাথে ভিজছে হিয়ার বাহু চেপে ধরে থাকা উজানের হাত দুটো
উজানঃ হাউ ডেয়ার ইউ তোমার সাহস হয় কি করে আমার জিনিসে হাত দেবার,এতো ওডাসিটি আসে কোথা থেকে(উঁচু গলাতে ঝারি দিয়ে)
হিয়াঃ আম আম আমি কি হাত দিয়েছি আপনার(ভয়ে)
উজানঃ তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম হিয়া আমার গিটারে হাত দেবে না দেবে না দেবে না তুমি তার পরো,কেনো(আরো জোড় গলাতে)
হিয়াঃ আসলে তখন ঔ নিলয় এসে বললো(ভয়ে চোখ বন্ধ করে)
উজানঃ দিলে তো দিলে সেটাকে আবার নষ্ট করেও দিলে,এতো সাহস আসে কোথা থেকে তোমার,তুমি জানো ঔ গিটার টা আমার কাছে কতো টা ইম্পর্ট্যান্ট
হিয়াঃ আমার হাতে লাগছে,প্লিজ ছাড়ুন
উজানঃ কি ভেবেছো তুমি,তুমি আমার লাইফ থেকে নীলিমার সব স্মৃতি মুছে দিয়ে নিজে সে জায়গা দখল করে নেবে,নো হিয়া মুনতাসীর ,নেভার,তোমার ওসব ড্রীম ড্রীমই থাকবে
হিয়াঃ আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন
উজানঃ আর কখনো আমার পারমিশন ছাড়া যদি আমার জিনিসে হাত দিয়েছো তো আমি কিন্তু তোমাকে এই রুম থেকে তো বের করে দেবো,সাথে প্রয়োজন পড়লে এই বাড়ি থেকেও বের করতে এক সেকেন্ড সময় নেবো না
কথাটা বলেই উজান হিয়াকে এক ধাক্কা দিয়ে পেছনে সারিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে,এতোক্ষণে হিয়া আবার ভিজে যায়,কোনো রকম মনে আসা কান্না টা দু হাতে চেপে ধরে নিজেকে আলতো করে মুছে নিয়ে রুমে আসতে খেয়াল করে উজান রুমে নেই,হিয়া আলতো পায়ে গিটারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে দেখতে পারে গিটার টা সত্যি খুব বাজে ভাবে নষ্ট হয়ে আছে,হিয়ার মনটা খারাপ হয়ে আসে কেনো সে নিলয়ের কথা শুনে গিটার টা বের করতে গেলো,সত্যি তো কারো উপহার করা জিনিস এভাবে ভাঙ্গলে তো হিয়ারো কম কষ্ট হতো না,হিয়া গিটার টা খুব যত্ন করে এক পাশে তুলে রেখে জামা টা চেঞ্জ করে নেয়,
রাত এখন ১১টা পেড়িয়ে ১২টা ছুঁই ছুঁই কিন্তু উজান এখনো বাড়িতে আসছে না,হিয়া বারবার ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে উজানের ফেরার অপেক্ষায় পায়চারি করতে থাকে,এদিকে যে সে বাসবি কে গিয়ে কিছু বলবে পিসি রা থাকায় সেই সাহস অবধি সে পাচ্ছে না,সময় যতো পেরুতে থাকে হিয়া তোতোই ছটফট শুরু করে,উজান আবার রাগের মাথায় কিছু উল্টাপাল্টা করে বসবে না তো,
হিয়ার মনে আসা ভাবনা গুলোর ছেদঁ ঘটে সন্ধির আসা একটা কলে,হিয়া ফোন টা রিসিভ করতেই সন্ধি কাঁপা গলায় রাগে চিৎকার করে উঠে
সন্ধিঃ হিয়া একবার বাড়িতে আসতে পারবা,ইটস আর্জেন্ট
হিয়াঃ উনি ঠিক আছে তো আপু
সন্ধিঃ হ্যা ঠিক আছে শুধু গলা অবধি ড্রিংক করে মাতলামি করছে
হিয়াঃ উনি নেশা করেছেন!!
সন্ধিঃ হুম,আমি রাসেলকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাকে নিয়ে আসার জন্য,আর আন্টির কথা ভাবতে হবে না,আন্টি কিছু বললে বলবা সন্ধি ওর বাড়িতে ডাকছে,খুব দরকার
হিয়াঃ ঠিক আছে,তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিন ভাইয়াকে