#পঞ্চভূজ_তারা
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ৩২
বিশ্বাস করা ভালো, কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস কখনোই নয়। জীবনে চলার পথে আশেপাশের মানুষদের বিশ্বাস করেই এগিয়ে যাই আমরা। এই বিশ্বাস কখনো আমাদের জন্য শুভ ফল বয়ে আনে, কখনো আবার ঠেলে দেয় চরম বিপদে। বিশেষ করে আপনার জীবনের এমন কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে কাউকে বেশী বিশ্বাস করে ফেললে চরম মূল্য দিতে হবে আপনাকে। যদিও আমরা এসব ক্ষেত্রেই অন্যকে বেশী বিশ্বাস করে ফেলি।
দাম্পত্য দুটি মানুষের সম্পর্ক, এই দুটি মানুষের সম্পর্কের মাঝে আর কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করতে যাবেন না। না, নিজের মা বাবা বা সন্তানদেরকেও নয়। দাম্পত্য অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটি সম্পর্ক, এটা ব্যক্তিগতই রাখুন।
দাম্পত্যের মত একই কথা প্রযোজ্য বন্ধুত্বেও। অন্যের কথা শুনে বা অন্যকে বিশ্বাস করে নিজের ভালোবাসার মানুষ বা বন্ধুকে কখনোই ভুল বুঝবেন না বা সন্দেহ করবেন না। তৃতীয় ব্যক্তির ওপরে অন্ধ বিশ্বাসের মূল্য আপনাকে শোধ করতে হবে নিজের প্রিয় সম্পর্কটি দিয়ে।
মেরাজ অত্যন্ত অনুশোচনায় ভুগছে।বুকের মাজে চিনচিন ব্যাথা করছে।তবে কি তা শুধুই অনুশোচনার জন্যে না-কি অন্য কিছুর জন্যে।বুজতে পারছে না মেরাজ।ওইদিনের ঘটনাটা ভীষন কষ্ট দেয় ওকে।
ফ্লাসব্যাক………..
মিম অতি আনন্দে নিয়ে মেরাজের কাছে চলে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে জুঁই মেরাজ কে বলছে,
-” বেবি আম্মু অনেক অসুস্থ চেক-আপ করানো লাগবে।তুমি কি আমাকে কিছু টাকা দিতে পারবে? আই নো এইভাবে টাকা চাওয়াতে তুমি আমাকে খারাপ ভাবতে পারো বাট।ইউ নো নাহ আমার বাবা নেই।ভাই ও নেই যে টাকা দিবে। আম্মু কে আমাকেই দেখতে হয়।বাট এইবার আমার কাছে একটা টাকাও নেই।”
মেরাজ মুচকি হেসে বলে,
-” কতো লাগবে সেটা বলো?আমি জানি তুমি কি পরিস্থিতে আছো।আর এই সময়ে আমি হেল্প করবো নাতো কে করবে?”
জুঁই ন্যাকা কান্না করে মেরাজ কে জড়িয়ে ধরতে গেলেই মিম কোথা থেকে ছুটে এসে এক ধাক্কা দিয়ে জুঁইকে সরিয়ে দেয়।ওর এহেম কান্ডে অবাক মেরাজ।জোড়ে চিল্লিয়ে বলে,
-” ওয়াট দ্যা হেল মিম?ওয়াট আর ইউ ডুয়িং।”
মিম রাগী চোখে জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” এই মেয়ে আপনাকে চিট করেছে।আমি একে রেস্টুরেন্টে অন্য এক ছেলের সাথে অন্তরঙ অবস্থায় দেখেছি।”
মেরাজ অবাক হয়ে গেলো।সে জুঁই কে জিজ্ঞেস করে,
-” জুঁই মিম যা বলছি তা কি সত্যি?”
জুঁই ন্যাকা কাদঁতে কাদঁতে বলে,
-” নাহ বেবি ও মিথ্যে বলছে বিশ্বাস করো।সকালে আমি আম্মুকে নিয়ে আংকেল এর সাথে ডিস্কাস করতে গিয়েছিলাম যেন আম্মু’র চেক-আপ এর জন্যে আমাকে কিছু টাকা দেয় বাট উনি না করে দেন।আর এই মেয়ে তা দেখে কি সব উলটা পালটা বলছে।”
মিম অবাক হয়ে যায়।একটা মেয়ে ঠিক কি পরিমান বেহায়া হলে এইসব বলতে পারে।মিম মেরাজের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
-” দেখুন আমার কথাটা শুনুন ও মিথ্যে বলছে আপনি আল….”
মিম কিছু বলার আগেই মেরাজ শক্ত কন্ঠে বলে,
-” আমি কিছু শুনতে চাই নাহ।জাস্ট লিভ।”
-” বাট আমার কথাটা তো শুনুন আমার।…”
-” জাস্ট লিভ মিম।” চিৎকার করে বলে মেরাজ।
-” আরে আপনি এইভাবে আমার কথা না শুনে যেতে বলছেন কেন?আমার কাছে প্রমান আছে।”
মিম কথাটা বলে যেই না ফোন বের করতে যাবে। ঠিক সেই মূহুর্তে মেরাজ ঠাস করে একটা চড় মেরে দেয় মিমের গালে।মিম গালে হাত দিয়ে হতবুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।মেরাজ চিৎকার করে বলে,
-” ইউ চিপ গার্ল।জাস্ট গো টু হেল উইথ ইউর প্রুভ’স।আর কোনদিন আমার সামনেও আসবে নাহ।জুঁই কে আমি ভালো করে চিনি।ইনফেক্ট আজ থেকে ৩ বছর ধরে চিনি সো তোমার এই মিনিংলেস কথায় আমার কিচ্ছু যায় আসবে না।”
মিম অঝোড়ে কাদঁতে লাগলো।শুধু এইটুকুই বললো,
-” আজ আমাকে এইভাবে অপমার করলেন নাহ।ঠিক একই কারনে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসবেন।কিন্তু তখন আমাকে আর পাবেন নাহ।”
বলেই আর এক মিনিট ও ওয়েট না করে দৌড়ে চলে যায়।মেরাজের বুকিটা ধুক করে উঠে।ও কি তবে কিছু ভূল করে ফেললো।
নাহ সে কিছুই ভূল করেনি।এটাই ঠিক আছে জুঁই ওকে ভালোবাসে সেখানে জুঁই ওর সাথে এইগুলো কেন করবে।”
নাহ কিচ্ছু ভালোলাগছে নাহ অসয্য লাগছে সবকিছু ওর কাছে।
জুঁই আমার ন্যাকা কান্না করতে করতে বলে,
-” জান আমি কিছু মনে করিনি।ওর যা মন চায় বলুক শুধু তুমি আমার থাকলেই হবে আর কাউকে আমার লাগবে নাহ।”
বলেই যেই না মেরাজ কে জড়িয়ে ধরতে যাবে মেরাজ তার আগেই ওকে দূরে সরিয়ে দেয়।
-” জুঁই আমার ভালো লাগছে নাহ।রেস্ট করবো তুমি গিয়ে আন্টিকে ডক্টর দেখাও। এই নেও টাকা।”
মেরাজ জুঁইকে টাকা দিয়ে চলে গেলো।আর জুঁই মেরাজের দিক তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে টাকা নিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেলো।
বর্তমানে,,,,,,,
মিম ৩ দিন ধরে ভার্সিটি আসে নাহ।এই ৩ দিন মেরাজ অনেক চেষ্টা করেছে মিম এর সাথে কন্টাক্ত করার কিন্তু মিম কিছুতেই ওর সাথে কথা বলবে নাহ।মিম যেহেতু আলিফা’দের বাড়িতে থাকে ওখানে গিয়ে বাসার নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে আলিফাকে রাজি করিয়েছিলো মিম এর সাথে দেখা করানোর জন্যে কিন্তু মিম দেখা করবেই না।ইনফেক্ট এই ৩ দিন ধরে মিম ঘড় ছাড়া কোথাও বের হয় নাহ। মিম কথা বলে না দেখে মেয়েরা কেউ মেরাজের সাথে কথা বলে নাহ।আর ছেলেদেরকেও মেরাজের সাথে কথা না বলার জন্যে বলে দিয়েছে।
মেরাজ মন মরা হয়ে বসে আছে।নিবির হঠাৎ এসে মেরাজ এর কাধে হাত দিয়ে বলে,
-” ভূল করেছিস এখন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।তবে হাল ছেড়ে দিস নাহ।চেষ্টা চালিয়ে যা। মিম এর রাগের কারনে আমাদের বাঘিনীগুলাও সেই রেগে আছে।”
মেরাজ দু-হাতে মুখ ডেকে বলে,
-” আমি কি করবো ইয়ার আমার মাথায় কিছু আসছে নাহ।আমি চেষ্টা করবো কিভাবে?যেখানে ও বাসা থেকেই বের হয় নাহ।”
-” আসবে আসবে।শুনেছি আজ না-কি মিম আসবে সাথে না-কি কি সার্প্রাইজ নিয়ে আসবে।”
মুহূর্তেই মেরাজের মুখে হাসি ফুটে উঠে।আজ কতোদিন পর মেয়েটার মুখটা দেখতে পারবে।নিবিরের কথায় ওর ভাবনায় ছেদ পড়ে।
-” দোস্ত ওইতো মিম আসছে।”
মেরাজ তাকিয়ে দেখে মিম আসছে,সাথে আছে সজীব,মিমকে প্রচন্ড হ্যাপি লাগছে,কিন্তু এই হাসিখুশি চেহারার নিচে যে কতোটা দুঃখ লুকিয়ে আছে সেটা মেরাজ আচঁ করতে পারছে।
মিম এসেই আগে ওর প্রানের বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে।
সাদু বলে,
-” ফকিন্নি ৩ দিন ধইরা আসিস নাই ভার্সিটি তোরে পিছা দিয়া বাইরামু।”
মনির ধমকে বলে,
-” সাদু চেঞ্জ ইউর ল্যাংগুয়েজ।এটা কিরকম ধরনের কথাবার্তা।”
-” হ্যা এখন কি আপনার জন্যে মনের সুখে কথাও বলতে পারবো নাহ।”
সাদু’র কথায় মনির চোখ উল্টিয়ে অন্য দিকে তাকালো।এই মেয়েকে বুজিয়ে লাভ নেই তা ও ভালো করে জানে।
– তোরে সাদু পিছা দিয়ে বাইরাবে।আর আমি তোরে আমার ফ্লাইং জুতা উড়ায় মারবো।সাথে থাপ্রাইয়া মুতায় দিমু হ্রামী মাইয়া।”
আফরান চোখ বড় বড় করে তাকায় নূরের দিকে।নূর আফরান কে ভেংচি কেটে দেয়।তা দেখে আফরান হেসে দেয়।
মিম ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বলে,
-” আরে দাদিরা আমাকে বকতে হলে পড়ে বকিস আগে সার্প্রাইজের কথা তো শুনবি?”
আলিফা লাফিয়ে উঠে বলে,
-” হ্যা হ্যা বল বল কি সার্প্রাইজ।”
আরিফ আলিফাকে সবার সামনেই হেচকা টানে কাছে এনে বলে,
-” সব সময় এতো লাফাও কেন? স্থির থাকতে পারো নাহ।পরে যে ব্যাথা পাবা সেই খবর রাখো।”
আলিফা সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে ওদের দিক তাকিয়ে।আলিফা মিনমিন গলায় বলে,
-” আর করবো না এইবার তো ছাড়ুন।”
আরিফ আলিফা’র কানের কাছে আস্তে করে বলে,
-” এরপর যদি লাফাতে দেখি।ডিরেক্ট কিস করে দেবো তাও সবার সামনে।”
আলিফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আরিফের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।আরিফ হাসছে ওর কান্ড দেখে।
মিম এইবার জোড়ে বলে,
-” আমি কি সার্প্রাইজ এর কথাটা বলবো?”
-” হ্যা বল!” আলিশা বললো।
-” আসলে তোদের সার্প্রাইজ হলো আমরা ২ দিন পর আমাদের বাড়ি যাচ্ছি।” মিম এর কথায় আলিশা বললো,
-” হ্যা তা যাবি তুই তোর বাসায় এখানে অবাক হওয়ার কি আছে?”
নিবির একধমক দিয়ে বলে,
-” উফফ তুমি চুপ থাকতো পারো নাহ ওকে আগে বলতে দেও।”
আলিশা তার থেকেও জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলে,
-” আপনি চুপ থাকেন।বান্দর পোলা নাহলে মাথা ফাটিয়ে দেবো।”
নিবির বিরবির করে বলে,
-” এহ কাকে ভালোবাসলাম খোদা।পুরাই ধাণি লংকা।আমার কোন দামিই নেই।আমার ছোট্ট একটা ধমকে আমাকে রাম ধমক দিয়ে বসিয়ে দেয়।”
-” আমরা বাড়ি যাচ্ছি কারন আগামি ৫ দিন পর আমার বিয়ে। তাই ২ দিন আগে যাবো।”মিম এর কথায় মেরাজ আগেই চিল্লিয়ে উঠে,
-” হুয়াট!!!”””
এদিকে সবাই অবাক।এই মেয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে নিশ্চিত কিসব উল্টাপালটা বলছে।আলিশা হা হয়ে বলে,
-” তোর বিয়ে হাও? কিভাবে? কেমনে?পাত্র কে?কোথায় পেলি?বাট তুই তো।”
-” স্টোপ আমি আগের কিছু শুনতে চাই নাহ।আর আমার বিয়ে যার সাথে হচ্ছে সে স্বয়ং নিজেই তোদের দাওয়াত দিতে আসছে।”
নূর উকিঝুকি দিয়ে মিম এর চারপাশ তাকালো তারপর ঠোঁট উলটে বলে,
-” কোথায় আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি নাহ।”
মিম সজীবের হাত ধরে সামনে এগিয়ে এনে বলে,
-” ইনি হলো আমার হবু বর।আর তোদের হবু জিজু।”
সবাই আরেক দফা অবাক হয়ে তাকালো ওদের দিক।এ কি শুনছে তারা।
এদিকে মেরাজ শুধু করুন চোখ মিমের দিকে তাকিয়ে আছে।বুকের ভীতর প্রচন্ড ব্যাথা করছে।সয্য করতে পারছে না সে মিম কে অন্য কারো সাথে দেখে।সব কিছু ভেংগে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
মানুষ যাকে ভালোবাসে, জীবনে কি তাকেই পায়? কেউ পায়, কেউবা পায় না। মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষটিও দূরে সরে যায় ছোট ছোট ভুলের কারণে। আবার কখনো দেখা যায় যাকে মানুষ পছন্দ করে তার সাথে হয়তো কোনো কারণে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। তাই বলে কি প্রিয় মানুষটি অপ্রিয় হয়ে যায়? মোটেও না! পছন্দের মানুষটি যখন আপনাকে ভালো না বেসে জড়িয়ে পড়ে অন্য কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে, তখন অন্তরে দহন হওয়াটাই স্বাভাবিক আর সেটা এই মুহুর্তে হচ্ছে মেরাজের সাথে।
চলবে,,,,,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি জানি কোন গল্পে টুইস্ট রাখলে পরে কি হবে তা পড়ার জন্যে আমরা ব্যাকুল হয়ে যাই।আর সেটা আমি ভালো করেই বুজি কারন আমিও একজন পাঠিকা।এইজন্যে কষ্ট হলেও আর একটা পার্ট লিখে ফেললাম।কেমন হয়েছে জানাতে ভূলবেন নাহ।