পঞ্চভুজ তারা পর্ব-১৯

0
349

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৯
?নিবির ছুটে চলেছে আলিশার পিছনে কিন্তু আলিশা থামার নাম ওই নিচ্ছে না।
—–” আলিশা থামো আরে আমার কথাটা শুনো!” কথাগুলো হাপাতে হাপাতে বললো নিবির।
আলিশা পিছন না ফিরেই বললো,
—–” আপনি যে গে সেটা আগে বলবেন না।অশ্লীল কোথাকার আমাদের মতো বাচ্চা মানুষের সামনে এইসব করতে পারলেন।”
আলিশার কথা শুনে নিবির রেগে গেলো
সাহস কতো বড় মেয়টার তাকে গে বলছে। নিবির দৌড়ের গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।অবশেষে আলিশার নাগাল পেতেই এক ঝটকায় ওকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো অন্য দিকে।
—–” এই এই ছাড়ুন আমাকে আপনি আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ছাড়ুন আমি যাবো না কোথাও।আপনি একটা অশ্লীল মানুষ।”
আলিশার কথায় নিবির দাতেদাত চেপে বললো,
—–” আমি গে কি-না সেটাই প্রমান করতে নিয়ে যাচ্ছি।আর একটা কথা বললে আই সুয়ের আমি তোমাকে ধরাম করে নিচে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবো।”
আলিশা ভয় পেয়ে আর কিছু না বলে নিবির এর কোলে চুপ-চাপ রইলো।যদি সত্যি ওকে ফেলে টেলে দেয় তাহলে তো অকালে ও মাজা ভেঙে বসে থাকবে।
________________?
এদিকে সাদু দৌড় থামিয়ে নিবির আর আলিশা’র দিকে তাকিয়ে আছে।সাদু’র থেমে যাওয়াতে আলিফা’ও থেমে গেছে।সাদু বলে উঠে,
—–” ভাইয়া আলিশা’কে কোলে তুলে নিয়ে কোথায় গেলো?”
সাদু’র কথায় আলিফা ঠোঁট উল্টে ডানে বামে মাথা নাড়ালো মানে সে জানে না।
—–” তুই তো মাথা মোটা তুই এমনেও কিছু জানবি না।”
সাদু বলতে বলতে আলিফা’র দিকে তাকিয়ে দেখে আলিফা দাতঁ কেলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সাদু ভ্র-কুচকে বুঝার চেষ্টা করছে আলিফা এমন করছে কেন? কিন্তু ও কিছু বুঝে উঠার আগেই আকস্মিক মনির ওর সামনে এসে পড়ে আর ঝড়ের গতিতে ওকে কাধে তুলে নিয়ে সেও হাটা ধরলো সাদু’কে নিয়ে অন্য দিকে।সাদু স্তব্ধ হয়ে আছে বেচারি কিছুই বুজছে না হঠাৎ হলো টা কি?
আলিফা হাসতে হাসতে (?) এরকম করে আঙুল দেখিয়ে বলে উঠে,
—–” ওল দ্যা বেস্ট সাদ্দুনি।”
____________?
—–” আপনি আমায় এখানে আনলেন কেন?”আলিশা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে।
আলিশা’র কথায় নিবির বাকা হেসে আলিশা’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—–” নিজেকে প্রুভ করতে যে আমি গে না।”
—–” আমার প্রমানের কোন দরকার নেই। ছাড়ুন যেতে দিন আমায়।”
—–” উহুম! এতো সহজে তো না।”
বলে নিবির আলিশা’র ঠোঁটে হাত ছোয়ালো। সাথে সাথে আলিশা চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।বুকের ভীতর ধরাস ধরাস করছে তার নিবির এর এতো কাছে আসাতে।
কাপা গলায় বলে,
—–” ক..কি ক..করছেন আপ..আপনি।”
নিবির কিছু বললো না সে তাকিয়েই রইলো আলিশা’র মুখের দিকে। কেমন যেন নেশা চোখে সে তাকিয়ে আছে।আলিশা’র ভয়ার্ত মুখ, কাপা ঠোঁট, ওকে যেন মাতাল করে দিচ্ছে।হঠাৎ কি যেন হয়ে গেলো নিবির আলিশা’র ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোট ছুয়ে দিলো।আলিশা সাথে সাথে নিজের জামা কামছে ধরলো। আলিশা পরিমুহূর্তে কোন কিছু না ভেবে নিবির কে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে যায়।আর ধাক্কা খেয়ে নিবির এর ধ্যান আসে যে ও কতো বড় ভূল করে ফেলেছে সে।এটা করা ওর একদম ঠিক হয় নি।কি করে ফেললো সে রাগে পাশে থাকা গাছে জোড়ে ঘুশি মেরে দিলো নিবির।
______________?

—–” আপনি আমাকে কাধে করে এখানে আনলেন কেন?”
সাদু’র করা প্রশ্নের কোন জবাব দিলো না মনির সে এক ধ্যানে তাকিয়ে সাদু’র দিকে।
মনির থেকে কোন জবাব না পেয়ে সাদু আবারো বললো,
—–” দেখি সরুন আমাকে যেতে দিন।আমি নূর,আলিশ আর মিম কে একটা দরকারি কথা বলবো।”
সাদু যেতে নিলেই মনির সাদু’র হাত ধরে হেচকা টানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আর ওর হাত দুটো মুড়ে এক হাত দিয়ে সাদু’র পিছনে বেধে রাখে।আর আর এক হাত রাখে সাদু’র গালে।সাদু কেন যেন মনিরের ছোয়া পেয়ে আবেশে চোখ বুজে নেয়।মনির সাদু’র সাথে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইলো সাদু’র দিকে।দুজনের উত্তপ্ত নিশ্বাস একে অপরের নিশ্বাসের সাথে বারি খাচ্ছে।সাদু যেন কোন ঘোরের মাজে ডুবে গেছে।আশেপাশে কি হচ্ছে তা যেন সব ভূলে গেছে ও।এরকম কতোক্ষন থাকলো দুজনে জানা নেই।হঠাৎ মনির এর আওয়াজে সাদু চোখ খুলে।
—–” উম্মি আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না।”
সাদু তাকালো মনির দিকে।চোখ স্থির হয়ে রইলো মনিরের আকুলতা ভরা দুটি নয়নে। এই দুটো চোখে সাদু নিজের জন্য অসীম ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।তলিয়ে যাচ্ছে সে মনিরের ওই ভালোবাসার সমুদ্রে।পরি-মুহূর্তে মুনিরের হাসপাতালের বলা কথা গুলো মনে পড়ে যায়।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগে।মনির ও আর জোড়াজোড়ি না করে ছেড়ে দেয় সাদু’কে।সাদু মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।মনির অসহায়ভাবে একপলক তাকায় সাদু’র দিকে।আবারো সাদু’র কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে নিজের দিকে ফিরায়।সাদু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই মনিরের কথা থেমে যায়।
—–” প্লিজ উম্মি আমার কথাটা শুনো।”
সাদু আবারো তাকায় মনিরের দিকে।চেহারায় স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে।সাদু চোখ সরিয়ে নিলো বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না উনার দিকে।মনির সাদু’র হাত নিজের হাতে পুরে নিয়ে নিবিরভাবে আকড়ে ধরে বলতে শুরু করলো,
—–” জানো উম্মি তোমাকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি।যখন আমি ভালোবাসা মানেই বুজতাম না। তুমি যখন একেবারে ছোট। তোমার ছোট্ট হাত-পা নাড়িয়ে খেলছিলে আমি অবাক নয়নে সেদিন দেখছিলাম সব। জানো তুমি যতো বড় হচ্ছিলে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাও বাড়তে থাকে।আমি তোমাকে কোন ছেলেদের সাথে খেলতে দিতাম না।একদিন তো তোমায় রেগে থাপ্পর ও দিয়েছিলাম।সেদিন সে-কি কান্না করেছিলে তুমি।তখন তুমি ক্লাস সিক্সে পড়তে মনে আছে হয়তো তোমার।এরপর বাবা আমাকে শর্ত দেয় যেন তোমার আশে-পাশে আমি না যাই।নাহলে তিনি কোনদিন ও তোমাকে আমার বউ করে আনবে না।জানো কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি শুধু তোমাকে এক পলক দেখার জন্য।তুমি স্কুলে ছেলেদের সাথে কথা বললে আমি দূর থেকে দেখে কষ্ট পেতাম।তবুও তোমার সামনে যেতাম না।কিন্তু ঠিকি ওই ছেলেদের মেরে আসতাম যেনো আবারো তোমার আশেপাশেও না যায়।”
মনির থামে।আর সাদু অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছিলো সব কিছু। চোখের পলক ফেলতেও সে ও ভূলে গেছে।মনির সাদুকে টেনে কাছে এনে জরিয়ে ধরে। এইবার সাদু আর কিছু বললো না।চুপ-চাপ মনিরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে রইলো।যেন এর থেকে বেশি শান্তির জায়গা আর একটি নেই। মনির আবারও বলছে,
—–” জানো আফরান যখন বললো তোমরা আমেরিকা চলে যাবে সেদিন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।কিছুতেই মানতে পারছিলাম না আমার পিচ্চি উম্মি আমাকে ছেড়ে দূর দেশে পারি জবামে।বাবা যেতে দিচ্ছিলো না তোমাকে দেখতে। পরে লুকিয়ে ব্যালকনি দিয়ে পাইপ বেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। ছুটে গিয়েছিলাম তোমার কাছে। কিন্তু কাছে যাইনি শুধু একপলক দূর থেকে দেখেছিলাম।তুমি যাওয়ার তিনটা বছর আমার কাছে নরক যন্ত্রনার সমান মনে হয়েছিলো।আমি জানি তুমি হস্পিটালে আমার ব্যবহারের জন্য আমাকে ঘৃনা করো।কিন্তু বিশ্বাস করো ওই মুহূর্তে আমার কাছে এ ছাড়া আর কোন পথ ছিলো না।আর তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করে নিলে।আরে বোকা মেয়ে আফরান আমার ভাইয়ের থেকেও বেশি।আর নূর তো আমার কলিজার টুকরো বোন।ওদের ভালোবাসা আলাদা করার স্পর্ধা কি আমার আছে।আফরান চাইলে তো আমি আমার জানটাও হাসতে হাসতে দিয়ে দিবো।তবু তোমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য আমাকে ওইসব নাটক করা লাগে।”
সাদু কিছুই বলছে না।কেন যেন মনিরের কথাগুলো শুনতে ওর ভালো লাগছে।সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত শীতলতাভাব বিচরন করছে।মনির সাদু’র মাথাটা বুক থেকে উঠালো।ওর হাত দুটো আবারো শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করলো।

——” ?প্রত্যেক দিনের শুরুতে তোমায় মনে ভেবে দিনকে আলোকিত করি, প্রত্যেক বিকেলে তোমাকে গোধুলী আকাশে মনের মত করে সাজাই, প্রত্যেক সন্ধায় শুক তারার মত করে আমার পাশে তোমাকে রাখি, প্রত্যক রাতে তোমায় ভেবে আমার স্বপ্ন রঙ্গিনবানাই, এভাবে আমার একটা দিন সর্ম্পূন হয়।য়ার শুরুতে তুমি থাকো আর শেষে ও তুমি থাকো।তুমি আমার সর্বশ্বজুড়ে থাকো।তোমাকে মন থেকে আমি কতটা ভালোবাসি এটা প্রকাশ করার জন্য ভালোবাসি এই শব্দটা অনেক ছোট হয়ে যায়। তোমাকে আমি যে পাগলের মতো ভালোবাসি এটা বুঝানোর জন্য আমার এক জীবন খুব ছোট হয়ে যায়।
আমার কাছে ভালোবাসা কি জানো?আমার কাছেভালবাসা একটি টস্ করা পয়সার মত…… যার একদিকে থাকে প্রেম আরএকদিকে থাকে ঘৃণা; যখন কাউকে ভালবাসো তখন পয়সাটি ঘুরতে থাকে… তুমি যখন এই ঘূর্ণন থামাবে তোমার সামনে আসবে – হয় প্রেম , নয়তো ঘৃণা ।আমার কপালে নাহয় তোমার ঘৃনায় জুটলো।জানো ঘৃনা কাকে করে যখন সে কারো মনে একটু হলেও জায়গা করে নিতে পারে তাকেই ঘৃনা।আমি এতেই খুশি তুমি আমায় ঘৃনা তো করো।তবু যতো যাই হয়ে যাক না কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি,আর সারাজীবন ভালোবাসবো।”
বলেই মনির সাদু’র হাত ছেড়ে দেয়।ওর চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।সাদু যেনো এত্তোক্ষন কোন ঘোরের মাজে ছিলো।মনিরের বলা প্রতিটা কথা ওর হৃদয়ে ঝংকার তুলে দিয়েছে।” ভালোবাসি” শব্দটা এখনো বাজছে। মনির মায়া ভরা দৃষ্টিতে অতী আকুলতা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
—–” উম্মি আমাকে একটু ভালোবাসা যায় না।আমাদের সম্পর্কটাকে একটু সুযোগ দেওয়া যায় না।আমি কাঙাল উম্মি ভালোবাসা’র কাঙাল তোমার ভালোবাসার কাঙাল।”
মনিরের কথাগুলো শুনে সাদু’র কি হলো ও জানে না।দৌড়ে গিয়ে সে মনির কে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে।কান্না মাখা গলায় বললো,
—–” আমি জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না।আমি আদোও জানি না আমি আপনাকে ভালোবাসি কি-না।তবু বলবো আমি আজ থেকে নিজের সর্বশ্ব দিয়ে চেষ্টা করবো আপনাকে স্বামি রূপে গ্রহন করার।শুধু ততোটুকু দিন আমাকে সময় দিন।আমাকে আপনাকে ভালোবাসার সময় দিন।কথা দিচ্ছি এই সাদু’র জীবনে আপনি ছাড়া দ্বিতীয়টি আর কেউ হবে না।আজ আমি এটা জেনে নিলাম আমার জীবনে যে কেউ আসুক না কেন?আপনার মতো কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে না, কেউ না!ভালোবাসতে পারবো কি-না জানিনা।তবু আপনার সাথেই আমি আমার সারাটিজীবন কাটাবো।আমাকে একটু সময় দিন শুধু।”
সাদু কান্না করছে মনিরের বুকে লেপ্টে রয়েছে রয়েছে সে।সাদু’র কথাগুলো শুনে মনিরের যেনো আনন্দ আর ধরে না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছে সে।ওর উম্মি ওকে স্বামি রূপে গ্রহন করেছে।এর চেয়ে খুশি কথা আর কি’বা হতে পারবে।
—–” তোমার যতো সময় নেওয়ার নেও।তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করবো উম্মিপাখি।তুমি জানো না তুমি আজ আমাকে কতো বড় আনন্দ দিয়েছো।আমার একটাই চাওয়া আমার উম্মিপাখিটা যেনো সারাজীবন এইভাবেই আমার বুকের খাচায় আবদ্ধ থাকে।”
সাদু কিছু বললো না।আর একটু জোড়ে জরিয়ে নিলো মনিরকে।মনির ও চোখ বুজে আকড়ে নিলো ওর উম্মিকে।সময় থেমে যাক।সারাজীবন এই ভালোবাসার মানুষ দুটি যেনো এইভাবেই একে অপরের সাথে থাকে।প্রকৃতি যেন সাক্ষী হয়ে থাকে তাদের এই ভালোবাসার মুহূর্তের।।

চলবে,,,,,,

ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আর প্লিজ ঘঠনমূলক কমেন্ট করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here