#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৪
—“কি হয়েছে সাদু ভাইয়া কি বলেছে তোকে?” নূর প্রশ্ন করছে।
—” এই সাদু কথা বল কি হয়েছে মনির ভাইয়া কি বলেছে?” আলিফা বলছে।
সবাই নানা রকম প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু সাদু কারো কোন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না।পাথরের মতো বসে আছে আর দৃষ্টি তার সামনে।ভাবছে একটা ছেলে কতোটা খারাপ হলে এইসব করতে পারে।সাদু’কে বিয়ে তো ঠিকি করবে কিন্তু ও কোনদিন মনির’কে মন থেকে মেনে নেবে না। কখনই না।
______________
—-“তুই কি এমন বলেছিস যে পিকু রাজি হয়ে গেলো?” জিজ্ঞেস করলো আফরান।
মনির বললো,,
—“আগে বল রাগ করবি নাহ! আমি যা করেছি ওর ভালোর জন্যেই করেছি।”
—“তুই আগে বল পিকু কিভাবে রাজি হলো?”
নিবির এর কথায় মনির আস্তে আস্তে সব খুলে বললো শুধু মনির সাদুকে কিস করেছে এটুকু বাদে।সব শুনে আফরান বললো,
—-” টেন্সন নিস না আমরা জানি তুই কখনই পিকুর খারাপ চাস না।কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে তুই যা করেছিস এরপর পিকু তোকে মন থেকে মেনে নিতে পারবে কি-না।”
—-” হ্যা আমি জানি ও এখন আমায় ঘৃনা করে প্রচুর ঘৃনা করে।বাট ওকে সেফ রাখতে আমি ওর ঘৃনাও সয্য করতে রাজি আছি।”
মনিরের কথা শুনে নিবির ওর কাধে হাত দিয়ে বলে,
—-” এখন আর এইসব চিন্তা করে লাভ নাই।আর জানিনা এই রজনী ভালো হবে কি-না! বাট আমার মনে হয় এ এতো সহজে দমে যাওয়ার পাত্রী না তোদের বিয়ের পরেও এ কোন না কোন ভাবে পিকুর ক্ষতি করতে চাইবে।”
আরিফ আর মেরাজ একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” সাদু’র কি শুধু দু’টো ভাই না-কি আমরাও তো আছি ওর ভাই।আমরা সবাই মিলে ওকে প্রোটেক্ট করবো।”
মেরাজ আর আরিফ এর কথা শুনে মনির,আফরান,আর নিবির এগিয়ে গিয়ে গ্রুপ হাগ করলো।
—-” চল চল এখন আর দেরি করে লাভ নাই কাজি এনে দার করিয়ে রেখেছি সেই কখন থেকে এইবার বিয়েটা হয়ে যাক।”
সবাই আফরান এর কথায় সায় জানিয়ে ক্যাভিনে চলে গেলো।ক্যাভিনে ডুকে মনির এর নজর যায় সাদু’র দিকে কিছুক্ষনের মাঝেই চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে,চোখে পানি টলমল করছে একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে চোখের পলক ও ফেলছে না।মনির এর বুক টা ধুক করে উঠলো।নিজেকে বড্ড অপরাধী লাগছে আজ ওর কাছে।মনে মনে ভাবলো,,
—-” আমাকে মাফ করে দিও উম্মি! আমি এমনটা চাই নি।আমি তো চেয়েছিলাম ভালোবেসে তোমাকে আপন করে নিতে।তুমি আমায় ভালোবাসলে তবেই আমি তোমাকে বিয়ে করতাম।কিন্তু আজ পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে আমাকে তোমার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা লাগছে।সরি ডিয়ার।সয্য করতে পারছি না তোমার চোখে নিজের জন্য একরাশ ঘৃনা দেখে।নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে!”
কারো হাতের ছোয়ায় ধ্যান ফিরলো মনির এর। মনির কে চিন্তিত দেখে আফরান, নিবির,আরিফ, মেরাজ চোখ দিয়ে সায় জানালো মানে তারা আছে টেন্সন নিস না। মনির এই চিন্তিত সময়ে খানিক সস্তির নিস্বাশ ফেললো।এই চার জন সাথে থাকলে ওর কোন চিন্তাই নাই।
অবশেষে মনির আর সাদুর বিয়ে হয়ে গেলো।সাদু পুরো সময়টা পাথরের মতো ছিলো।।
??
সময় চলে নিজ গতিতে আজ প্রাই ১ সপ্তাহ হয়ে গেছে সাদু আর মনির এর বিয়ে হয়েছে।কিন্তু সাদু ওই এক সপ্তাহ কারো সাথে কথা বলেনি।শুধু নূর,অলিশা,আলিফা আর মিম এর সাথে অল্প অল্প কথা বলেছে। ভাইদের সাথে প্রচুর অভীমান জন্মেছে সাদুর।আর মনির কে তো দেখতেই পারে না।সাদু নিজের বাড়িতেই থাকে।কারন ও বলেছে ও নিজের বাড়িতেই থাকবে কেউ বেশি জোড়াজুড়ি করলে নিজের ক্ষতি করে দিবে।তাই আর কেউ জোড় করে নি।আর রজনীকে জেলে দেওয়া হয়েছে এটেম্পট টু মার্ডার কেসে। এই এক সপ্তাহে সাদু’র পা পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছে।তাই ভার্সিটি যাবে আজকে। সাদু কারো সাথেই ভার্সিটি যাবে না বলে দিয়েছে তাই বাকিরা মন খারাপ করে চলে গেছে।সাদু একাই রওনা দিলো ভার্সিটিতে পৌছানো মাত্র গাড়ি থেকে নেমে হনহনিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।এদিকে সবাই অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে সাদু’র দিকে।নূর মনিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“ভাই তুই এটা কি করলি ও এখন আমাদের কারো সাথেই কথা বলে না!”
—“দেখ নূর আমি জানি তোদের খারাপ লাগছে,আমার কি কম খারাপ লাগছে আমি পাগলাটে উম্মিটাকেই ভালোবাসি!এই গম্ভীর উম্মিকে দেখে আমার কি পরিমান কষ্ট লাগছে বলে বুজাতে পারবো না।” মনের কন্ঠে চাপা দুঃখ।
কেউ আর কিছু বললো না সবাই মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ আলিশা লাফিয়ে উঠে বলে,,
—” হেই ভাইয়ারা আমরা কোথাও ঘুরতে যেতে পারি।”
—“ওয়াও।হ্যা ঘুরতে যাবো।” আলিফা রিতিমতো লাফাচ্ছে।
আরিফ ওর বাচ্চামো দেখে মুচকি হাসলো।মেয়েটা পুরাই বাচ্চা তবে আরিফ এর বেশ লাগে ওকে বাচ্চাদের মতো করতে দেখে।
—“কিন্তু যাবোটা কোথায়?” মিম প্রশ্ন করলো।
—” এখন দূরে কোথাও যেতে পারবো না।কারন সামনে আমাদের এক্সাম ভেবে চিন্তে কাছে কোথাও যেতে হবে।” মেরাজকে ওর কথার পৃষ্টে কথা দেখে ভ্রু-কুচকে ফেললো মিম,বলে,
—” আর যাবো তো ঠিক আছে।ওখানে যেন কেউ কারো গার্ল্ফ্রেন্ড নিয়ে না যায়।”
মেরাজ বুজলো মিমযে কথাটা ওকে উদ্দেশ্য করে বলেছে বলে,
—” আমার এতোটুকু জ্ঞান আছে যে কোথায় আর কখন গার্ল্ফ্রেন্ড নিয়ে যাওয়া লাগে।”
—” ওহ রেয়েলি! তাইতো বাচ্চাদের সামনে নিজের গার্ল্ফ্রেন্ড এর সাথে চিপকে থাকেন সব সময়।”
—“আমি বাচ্চাদের সামনে কখন চিপকালাম?”
—“হ্যা ওইযে নবীনবরন এর দিন তো চিপকে ছিলেন সারাক্ষন।”
—“তো আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান এ বাচ্চা আসলো কোত্থেকে?”
—“কেন? আমাকে আর আমার ফ্রেন্ডদের চোখে পড়ে না।”
মেরাজ ভ্রু-কুচকে বলে,
—“তুমি বাচ্চা?”
মিম ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,,
—“হ্যা এনি ডাউট।”
—“য়েস!”
—“কি?”
—” তুমি বাচ্চা হলে কিভাবে?”
—“তো আমি তো বাচ্চাই।”
—“কোথায় তোমাকে দেখলে আমার মনে হয় দুই বাচ্চার মা।”
—” নাউজুবিল্লাহ!! বদ পোলা,ঠাডা পরবে আপনার উপর,আপনার বউ শাকচুন্নি হবে,আপনার বউয়ের বিয়ের আগেই ১০০ টা বাচ্চা হবে,অসভ্য ইতর পোলা।”
সাদু আসছিলো ওদের ডাকতে যে ক্লাস করতে হবে।এসে দেখে মিম ঝগড়া করছে মেরাজ এর সাথে।সাদু নাক মুখ কুচকে হনহনিয়ে এসে মিম এর চুল মুঠি ধরে নিয়ে টানতে টানতে ক্লাসে নিয়ে গেলো। মিম চিল্লাচ্ছে,
—” ওরে শাকচুন্নি আমার চুল ছাড়।”
সাদু টানতে টানতেই বলে,
—” ক্লাস না করে ওখানে মেরাজ ভাইয়ের সাথে ঝগড়া কেন করছিলি!”
—” আর করবো না ছাড় আমার একটা জড়ুরি কথা আছে মনির ভাইয়ার সাথে।”
সাদু থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে বলে,
—” কি কথা?”
মিম দাত কেলিয়ে বলে,
—” আছে তুমি পড়ে জানতে পারবা বেপি।ছাড় এখন আমায় আমি বাকিদের ও নিয়ে আসছি।”
সাদু সন্দেহ দৃষ্টিতে কতোক্ষন তাকিয়ে থেকে ছেড়ে দিলো মিম কে তারপর ক্লাসে চলে গেলো।মিম ছাড় পেয়ে এক দৌড়ে মনির দের সামনে গিয়ে হাপাতে লাগলো।
এদিকে সবাই আহাম্মক হয়ে দাড়িয়ে আছে।সাদু ঘূর্নিঝড়ের মতো এসে আবার চলেও গেলো মিমকে নিয়ে এদিকে আবার মিম এখানে এসে পড়লো।
—” এইগুলা হচ্ছেটা কি ভাই?” আলিফার বোকা গলা।
মিম কাদো কাদো হয়ে বলে,
—” উফফ চুরেল টা আমার চুল টেনে কতোগুলো ছিড়ে ফেলেছে।”
মেরাজ হেসে দিয়ে বলে,
—” ভালো করেছে আর করবে ঝগড়া।”
মিম রেগে বলে,
—“ইউ খ্রাপ পোলা সাট আপ নাহলে গুল্লি করে দিবো।”
—-“চুপপপপপপপপ!” আফরান, নিবির, মনির চিল্লিয়ে উঠলো।
বাকিরা ওদের ধমক শুনে “???”
—“তোরা সবাই কি ঝগড়া করবি নাকি বলবি কোথায় যেতে পারি!” রাগী গলায় বলে মনির।
—” এইগুলা মানুষ হলো না!” আফরান হতাস হয়ে বলে।
—” আপনি কি মনে হয় মানুষ!” নূর এর কথা শুনে আফরান চোকা চোখে তাকায়।বলে,
—” আমি কি মানুষ না?”
—“আজ্ঞে না আপনি আস্তো একটা খাটাস আর এলিয়েন!”
আফরান চোখ বড় বড় করে তাকালো নূর এর কথায় বাকিরা হাসতে হাসতে শেষ।
আফরান দাতে দাত চেপে বলে,
—” তোমাকে পরে দেখে নেবো।”
নূর ভেংচি কেটে দিলো আফরান কে।
নিবির অনেকক্ষন ধরে চিন্তা করছে হঠাৎ বললো,
—” হেই ব্রোস এন্ড সিসটার্স লিসেন টু মি।”
নিবীড় এর চিল্লানো শুনে আলিশা লাফিয়ে উঠলো। আসলে হঠাৎ নিবীড় এর চিল্লানোতে আলিশা বেচারি ভয় পেয়েছে। আলিশা কটমট চোখে তাকায় নিবিড় এর দিকে। নিবীড় একটা ভ্যাবলা হাসি দিয়ে বলে,
—” প্লিজ কিছু বলো না এখন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো।”
আলিশা কিছু বললো না শুধু কট মট চোখে তাকিয়েই রইলো।
—” হ্যা কি বলবি নিবীড়!”
মনির এর কথা নিবির একটা ঢুক গিলে বললো,
—” দেখ যেহেতু সামনে আমাদের এক্সাম তাহলে বেশিদূর যেতে পারবো না।তাই আমি ভাবলাম ঢাকা থেকে গাজীপুর অনেক কাছে তাহলে আমরা হুমায়ুন আহমেদ এর বাড়ি ” নুহাস পল্লি ” তে ঘুরতে যেতে পারি। পিকুরও অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো যাওয়ার।”
—” ওয়াও অনেক ভালো হবে তাহলে।” আলিফা খুশিতে গদগদ।
মনির বললো,
—” সো গাইস কারো কোন সমস্যা নেই তো ওখানে যাওয়ার জন্যে।”
—” নাহ!” সবাই বললো।
মনির হালকা হেসে বলে,
—-” ওকে দেন কাল রাতে প্রাইভেট বাসে আমরা ‘ নুহাস পল্লি ‘ যাবো।”
মেয়েরা ‘ হুররেএএএএ’ বলে চিল্লিয়ে উঠলো।
চলবে,,
সরি গাইস লেট করে দেওয়ার জন্যে একটু প্রোবলেমে ছিলাম। ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।