পঞ্চভুজ তারা পর্ব-১৩

0
398

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৩
_______________________________

” স্টপপপপপপপপ সাট-আপ ইউ গাইস জাস্ট সাট আপ!!!!!” সাদুর চিৎকারে সবাই অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে।সাদু প্রচন্ড রেগে আছে। এতোক্ষন সবার কান্ড কারখানা দেখছিলো ও।বাট এইবার সয্য করতে না পেরে ধমকে উঠে।

—“কি হ্যা কি?আমাকে কি মগের মল্লুক পেয়েছো সবাই।যে বলবে এখন বিয়ে করবো তো আমি নাচতে নাচতে বিয়ে করে ফেলবো।মানে আমার সাথে এতো কিছু হলো আমিই জানি না।[আফরান আর নিবির এর দিকে তাকিয়ে] ভাইয়া তোরা দুইটা আমার থেকে এইসব লুকিয়ে রেখেছিস।না জানি আর কতো কিছু লুকাচ্ছিস তোরা আমার কাছ থেকে।আরেএ আমাকে তো পুতুল পেয়েছো সবাই।একজন আমাকে ভালোবাসে আর তাকে এই অন্য একজন ভালোবাসে বলে আমাকে মাঝখান থেকে বলির পাঠা পেয়ে সরিয়ে দিতে চাইছে।মানে আ’ম জাস্ট ফেড আপ গাইস।হাউ কুড ইউ গাইস ডু দেট টু মি! তোরা যা ইচ্ছা চাইবি আর আমাকে সেইটাই মেনে নিতে হবে কেন?আমার কি কোন পছন্দ থাকতে পারে না তোদের ভালোলাগা, পছন্দ থাকে আমার কি নেই!না-কি তোরা আমাকে মানুষ বলেই গন্য করিস না।” প্রচন্ড রেগে কথাগুলো বললো সাদু।

আফরান করুনভাবে বলে,
—“পিকু বোন আমার।আমরা ভাইয়ারা কেউ তোর খারাপ চাই না রে বোন।নাহ বাবা মা চায়।মনির অনেক ভালো ছেলে আর তোকে অনেক ভালোবাসে।তাই আমরা তোকে ওর কাছে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম যে আমার বোন কখনো মনির এর কাছে খারাপ থাকবে না।”
নিবির সায় দিয়ে বলে,
—“হ্যা বোন আমার ভাইয়ারা কখনো কি তোর খারাপ চেয়েছি।আর তুই দেখ তোকে রজনী ক্ষতি করতে চেয়েছে বলে মনির কতো কিছু করলো।আর আমরা ভাই হয়ে সামান্য তোকে দেখেও রাখতে পারি নি।”
—” সে যাই হোক! উনি বললেন যে বিয়ে করবে আমাকে,বললেই কি হয়ে যায় ভাইয়া।বিয়ে মানে স্বামী স্ত্রীর একটা পবিত্র বন্ধন।আর স্বামী স্ত্রীর মাজে ভালোবাসাটা অনেক জরুরী ভাইয়া।হয়তো উনি আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি তো বাসি না।দেখা যাবে উনি এখন তো আমায় ভালোবাসে।বিয়ের কয়েকবছর পরেও হয়তো ভালোবাসবে।কিন্তু একসময় উনিও বিরক্ত হয়ে যাবেন যখন দেখবেন আমার কাছ থেকে উনি প্রাপ্য ভালোবাসা টা পাচ্ছেন না।তখন উনি আমাকে ছেরে দিতে দুবার ভাববে না।”
—“তোর কথায় যুক্তি আছে পিকু।কিন্তু তুই দেখ পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কেউ কাউকে চিনেও না।কিন্তু দেখিস বিয়ের পর একে অপরকে ঠিকি ভালোবেসে ফেলে।”
নিবির এর কথায় সাদু ভাবে আসলেই তো ইভেন আমার বাবা মা’র ওতো পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে তাও তো দিব্বি ২৫ বছর ধরে তারা একে অপরের সাথে। আর একে অপরকে কতো ভালোবাসে।
পরিমুহূর্তে নিজেকে ঠিক করে নেয় সাদু কাঠ কাঠ গলায় বলে,
—“তবুও আমি এই বিয়ে করবো না!”
—“কিন্তু পিকু একবার….”
আফরান কে থামিয়ে সাদু জোড়ে বলে,
—“বলেছি না আমি এই বিয়ে করবো না।”

এতোক্ষন মনির সব চুপ চাপ দেখছিলো সাদু কি কি করতে পারে।ও জানতো এমন একটা সিচুয়েশনে ওকে পরতে হবে। তাই ও আগে থেকেই যব প্লান করে রেখেছে।মনির গম্ভীর গলায় বলে,,
—“তোরা সবাই বাহিরে যা আমার ওর সাথে একা কিছু কথা বলার আছে।”
সাদু চকিতো হয়ে তাকায়।মানে কি? একা কি কথা বলবে আবার!সাদু হন্তদন্ত হয়ে বলে,
—“নাহ নাহ! ওরা কেউ কোথায়ও যাবে না।”
—“আমি যেতে বলেছি সবাইকে জাস্ট লিভ ফ্রোম হিয়ার!”
মনির এর চাপা রাগ দেখে সবাই বের হয়ে গেলো ক্যাভিন থেকে।নূর যেতে যেতে ভাইকে একবার দেখে তারপর বলে,

—“দেখ ভাই যা করবি ভেবে চিন্তে করিস।ওর সাথে এমন কিছু করিস না যাতে তোকে আজীবন পস্তাতে হয়।”
—“সেটা আমি বুঝে নিবো।বিয়ে তো ওকে আমাকেই করতে হবে।শুধু সোজাভাবে না বুঝলে আঙুল বাকা করে বুঝানো লাগবে।আর আমার জিনিস আমি এতো সহজে ছার দেই না।আর সেখানে ওকে আমি আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।”
মনির এর কথা শুনে নূর একটা শ্বাস ফেলে।তারপর বললো,
—“হুম ভাইয়া জানি তুই ওকে অনেক ভালোবাসিস।ইন্ফেক্ট আমি সেই ছোট থেকেই বুঝতে পারতাম।কিন্তু আমি অপেক্ষায় ছিলাম যে তুই নিজে এসে আমাকে বলবি।আজ যখন সকালে তুই আমায় সব বলিস আমি একটুও অবাক হয়নি।শুধু এখন একটা কথাই বলবো প্লিজ ওকে বুঝিয়ে বল।আর কিছু উল্টা পুল্টা করিস না।”
—“ডোন্ট ওয়ারি আই’ল হ্যান্ডেল হার।তুই যা বাহিরে শুধু একটু অপেক্ষা কর।”
—“হুম!”
নূর চলে গেলো।মনির এইবার তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি সাদুর দিকে দিলো।সাদু সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।কারন মনির এর এই চোখের চাহনী ও একদম সয্য করতে পারে না একদম না।তাই উস্খুস করে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।

—“তো বলো আমাকে বিয়ে করবে কি-না?”
মনির এর কথা শুনে হালকা কেপে উঠে সাদু।তাকায় ওর দিকে, কিন্তু বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে না।তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে ফেলে।তা দেখে মনির নিশব্দে খানিক হাসে বলে,

—“কি আমার চোখের চাহনী সয্য হয় না।”
—“এ..এমন ক..কিছু ন..না।”
—“তাহলে তোতলাচ্ছো কেন?”
—“এমনি!”
—“ওহ আচ্ছা!”
বলতে বলতে মনির সাদুর পাশে বসে পড়লো সাদু ঘাবড়ে গিয়ে সরে যেতে চাইলো কিন্তু পায়ে ব্যাথার কারনে নড়তে পারছে না।তবুও চেষ্টা করতে সরতে নিলেই মনির ওর হাত শক্ত করে ধরে থামিয়ে দেয় বললো,,
—“কি আমার থেকে পালাতে চাইছো?”
—“আ..আজব আ..আমি কে..কেন পালাবো!”
—“তাহলে আমি পাশে বসতেই সরে যেতে চাইছো কেন?”
—“এমনিই আপনি প্লিজ সরে বসুন আমার কাছ থেকে!”
—“কেন সরবো কেন?আজকের পর থেকে তো আমার সাথেই থাকা লাগবে?”
—“কেন? কেন থাকবো আমি আপনার সাথে?”
—“কারন একটু পর আমাদের বিয়ে হবে তারপর তো আমার সাথেই তোমার থাকতে হবে।”
—“আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।”
সাদু এহেম কথায় মনির এর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে,সে একটান মেরে সাদুকে নিজের বাহুডোরে নিয়ে আসে এতে সাদু পায়ে খানিক ব্যাথা পেয়ে ‘আহহ’ করে উঠে।মনির বলে,

—“কি উম্মিপাখি ব্যাথা পেলে তো! আমিও পেয়েছি এইযে একটু আগে তুমি যেই কথাটা বললে ওটা শুনে।ঠিক বুকের বা পাশে তীরের মতো বিধেছে।”
—“ছাড়ুন আমায় আমি বিয়ে করবো না।”
সাদু’র বলতে দেরি মনির সাদু’র জামাটা কাধ থেকে খানিক সরিয়ে সেখানে জোড়ে সোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।ব্যাথায় আতকে উঠে জোড়েসোড়ে একটা চিৎকার দিতে গিয়েও পাড়ে না সাদু কারন মনির যে তার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দ্বারা আবদ্ধ করে ফেলেছে।সাদু শুধু দস্তাদস্তি করছে ছুটার জন্য।কিন্তু একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়।দু চোখ বন্ধ করে নেয় আর দুচোখের কিনারা ঘেসে গড়িয়ে পড়ে অস্রুবিন্দু।মনির তো ব্যস্ত প্রেয়সীর ঠোঁটের সুধা পানে।খানিক বাদে মনির ছেরে দেয় সাদুকে। সাদুর মুখ পানে তাকিয়ে দেখে চোখ বন্ধ করে একপ্রকার চাপা কান্না করছে সাদু।আবার চোখ ঘুরাতেই সাদুর কাধের উপর নজর যায় মনিরের দেখে কামড়ের জায়গা কালসিটে দাগ হয়ে গেছে।মনির সাদুকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে মুখ এগিয়ে নিয়ে যায় সাদুর কাধের দিকে।তারপর যেখানে কামড় দিয়েছে সেখানে একেরপর এক ছোট ছোট চুমু দিতে থাকে।ভূমিকম্পের ন্যায় কেপে উঠে সাদু।মনির এর ঘাড় খামছে ধরে। সয্য করতে না পেরে ঠেলে মনির কে সরিয়ে দিতে থাকে আর জোড়ে কান্না করে দেয়,

—“প্লিজ ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।”
সাদু’র কান্না শুনে মনির সরে আসে।তারপর বাকা হেসে বলে,,
—“সামান্য এটুকুতেই এই অবস্থা।”
—“আপনি জঘন্য খারাপ।”
—” থাক্স তা আমি জানি।তোমার বেলায় আমি ভয়ানক খারাপ হতেও রাজি।”
—“প্লিজ এমন করছেন কেন?আমি..”
সাদুকে থামিয়ে দিয়ে মনির বলে,,
—“আহা! ভুলেও ওটা উচ্চারণ করবা না তাহলে একটু আগে যা হয়েছে তার থেকে দ্বিগুন সয্য করা লাগবে।আর তুমি ভেবে না আজ যদি আমার আর তোমার বিয়ে না হয় তো এরপরের সব কিছুর জন্য দ্বায়ী থাকবে তুমি।ওহ হ্যা বলে রাখি আফরান আর নূর একেওপরকে ভালোবাসে।”
মনির এর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় কি বলতে চাইছে সে।মনির আবারো বলে,

—“আমি জানি তুমি জানো নূর আফরান কে ভালোবাসে।আর আফরান ও নূরকে ভালোবাসে।এখন তুমি যদি এই বিয়ে না করে তাহলে আমি কখনোই নূর আর আফরানকে এক হতে দিবো না।”

সাদু কাদতে কাদতে তাকায় মনির এর দিকে।একটা মানুষ ঠিক কতোটা খারাপ হলে নিজের বোনের ভালোবাসাকেও নিঃস্ব করতে দুবার ভাবে না।

—“আপনি এতো খারাপ আমি আগে জানতাম না।এটা কিভাবে পারবেন আপনি!”
—“বেবি আমি তোমার জন্য সব করতে পারি।এখন বলো রাজি কি-না তুমি বিয়েতে।”

সাদু কি করবে?নিজের কথা ভাবলে দুটো ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে যাবে।আর এটা ঘোর অন্যায় সাদু থাকতে সে এটা কখনোই করতে দিবে না।সাদু কান্নাজড়িত গলায় বলে,

—“আপনাকে বিয়ে করলে ওদের আর আলাদা করবেন না তো?প্রমিস করুন!
—“প্রমিস! আমি নিজে ওদের বিয়ে দেবো।”
—“আ..আচ্ছা তা..তাহলে আমি রাজি।”

সাদুর কথায় মনির বিশ্বজয়ী হাসি দিলো।আর সাদুর মনে মনির কে নিয়ে জন্ম নিলো একরাশ ঘৃনা।দেখতে থাকি সামনে কি হয়!

চলবে,,,,,

ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here