#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৪৬
#রিধিরা_নূর
ওয়াসিমের কথায় আফরান বিরক্ত হলো।
আফরান — যদি তুই কথায় না বলিস তাহলে আন্টিকে রাজি করাবি কি করে?
আহিল — কিরে চান্দু কাজ বাকি রেখে এখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেছ কোন সাহসে। এই নে যাহ ভেতরে নিয়ে যা।
ওয়াসিম বাক্সটা নিয়ে চলে গেল। আহিল দাঁড়িয়ে আফরানের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। তা দেখে ওয়াসিম ফিরে এসে পিছন থেকে লাথি দিল।
ওয়াসিম — তুই দাঁড়িয়ে আছিস কোন সাহসে। আয় ভেতরে।
.
.
মরিয়ম বেগম — বিয়াইন, ফর্দের সব জিনিস ঠিকঠাক আছে তো? জনসমাজের সামনে ফর্দ তুলে দিতে হবে।
শাহারা হায়দার — জি সব ঠিক আছে। সন্ধ্যায় আংটি বদলের পর ফর্দের কাজ সেরে নিবে।
নূর — আম্মু, তোমরা নাচবে না?
শাহারা হায়দার — এই বুড়ো বয়সে আমরা নাচব? মাজার হাড় একটাও আস্ত থাকবে না।
নূর — আরে! বললেই হলো। তোমরা হলে বর, বধূর মা। এখন থেকে প্রাকটিস কর। বিয়েতে অবশ্যই নাচতে হবে বুঝছ?
শাহারা হায়দার — তুই নাচ গিয়ে।
নূর — সে তো আমি নাচব’ই। কত অপেক্ষা করেছি এই দিনের জন্য।
শাহারা হায়দার — লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে। আমাদের সময় আমরা বড়দের সামনে মাথা তুলে তাকাতাম না। আর এখনকার ছেলেমেয়ে….
নূর — ও মাদার বাংলাদেশ। তোমরা হলে ব্যাকডেটেড মানুষ। আর আমরা আপডেটেড পোলাপাইন। ইউ হেভ টু বুঝতে হবে।
শাহারা হায়দার চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নূর ভৌ-দৌড় দিল। মরিয়ম বেগম তাদের কার্যকলাপ দেখে হাসছেন।
মরিয়ম বেগম — সারাদিন কি ঘরে এমন হৈচৈ করে?
শাহারা হায়দার হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে হাসলো।
.
.
বাতির উজ্জ্বলতায় চারপাশ আলোকিত হয়ে আছে। মেয়েরা সবুজ সেলোয়ার-কামিজ পরিহিত। ছেলেরা নীল পাঞ্জাবি৷
আলিফা তৈরি হয়ে ঘুরাঘুরি করছে আর জায়গা বেছে সেলফি তুলছে। আরিফকে দেখতে পেয়ে তাকে টেনে ধরে নিয়ে এলো। গোমড়া মুখ করে রাখায় আলিফা বিরক্ত প্রকাশ করল। কিন্তু ঘেঁচড়ার মুখে সহজে হাসি ফুটেই না। হঠাৎ আরিফ কি যেন লক্ষ্য করে আলিফার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বিষয়টা খেয়াল করে আলিফা ভ্রু কুচকে তাকাল।
আলিফা — হাসছেন কেন?
আরিফ — কয় না তো।
আলিফা — আমি দেখছি আপনি হাসছেন। আবার মিথ্যা বলছেন। কি ব্যাপার? হোওও বুঝছি। আমাকে বোধহয় আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। তাই প্রেমে পড়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। তাই না?
এবার আরিফ আর হাসি দমিয়ে রাখতে পারল না। ফিক করে হেসে দিল। আলিফা রেগে হাসার কারণ জিজ্ঞেস করল।
আরিফ — তোমার মনে আছে। ভার্সিটিতে তোমার সবুজ রঙের ওড়না বাতাসে উড়ে গাছের ডালে আটকে গিয়েছিল। আর কাক সেটা পাবলিক টয়লেট বানিয়েছিল। (অট্টহাসি হাসছে)
ইজ্জতের ফালুদা হওয়ায় আলিফার মুখ দিয়ে আর কথা বেরুচ্ছে না। একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ সে সবুজ জামা পরিধান করেছে। সাথে সবুজ ওড়না। পরক্ষণে সে-ও হেসে উঠল।
.
ইয়াশ অনুষ্ঠানের ছবি তুলছে। ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত হওয়ায় খেয়াল না করেই ধাক্কা লাগে মেহেরের সঙ্গে। দুজনে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে চিৎপটাং। ইয়াশ তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়িয়ে মেহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেহের মুচকি হেসে হাত ধরতে গেলে ইয়াশ খানিকটা হাত পিছিয়ে নেয়।
ইয়াশ — ভেবে দেখ কিন্তু। একবার এই হাত ধরলে আজীবন ধরে রাখতে হবে। পরে চাইলেও ছুটাতে পারবে না।
মেহের গম্ভীর মুখ করে হাত না ধরেই উঠে দাঁড়াল। ইয়াশ অবাক হয়ে তাকাল। সে ভাবেনি মেহের তাকে এভাবে উপেক্ষা করবে। মনে মনে বেশ কষ্ট পেল। বিষন্ন চেহারা নিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। অনুচিত কিছু চেয়ে বসেনি তো? মেহের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
মেহের — সামান্য হাত নিয়ে আজীবন থাকতে পারব না। যদি পুরোপুরি আমার হয় তাহলে ভেবে দেখতে পারি।
ইয়াশ বিস্মিত নয়নে মাথা উঠিয়ে তাকাল। মেহের মুখে চঞ্চল হাসি দেখে বুঝতে বাকি রইল না। ইয়াশ কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই সিমা এসে মেহেরকে নিয়ে গেল। পিছন ফিরে এক নজর ইয়াশের দিকে তাকাতেই ইয়াশ ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিল। মেহের মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেল।
.
তন্বী তৈরি হয়ে নূরকে দেখতে গেল সে তৈরি হয়েছে কি-না। কক্ষে প্রবেশ করতেই তন্বী হা হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করে দেখল। সবুজ সেলোয়ার-কামিজ পরিহিত, লম্বা চুলে বেনি করে একপাশে দিল। ওড়না জড়িয়ে নিয়ে যেই না পাশ ফিরে তাকাল দেখল তন্বী হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
তন্বী — আফুনি। তুমি এই জামা কেন পরেছ?
নূর — কেন? আমরা তো আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মেয়েরা সবুজ সেলোয়ার-কামিজ পরব। আর তুইও তো পরেছিস। তাহলে কি সমস্যা?
তন্বী — সেটা আমরা পরব বলেছি। তুমি না। তোমার জন্য না জামা দিয়েছে। তুমি সেটা পর।
নূর — আরে আমি কেন সেটা পরব। সবাই পরবে একরকম আর আমি অন্যরকম। আমাকে এলিয়েন ভাববে।
তন্বী — কোন এলিয়েন না। তুমি সেটাই পর।
নূর — না। আমি এটাই পরব। এটাই ঠিক আছে।
তন্বী — তুমি…. (দরজার কড়ার আওয়াজ শুনে থেমে গেল)
কক্ষের পাশ দিয়ে আফরান অতিক্রম করছিল। নূর আর তন্বীর চেঁচামেচি শুনে দরজায় কড়া নাড়লো।
আফরান — নূর? কোন সমস্যা? (চিন্তিত হয়ে)
নূর — না। কোন সমস্যা নেই। (চেঁচিয়ে)
তন্বী — আছে সমস্যা। (চেঁচিয়ে)
নূর চোখ রাঙিয়ে তাকাল। কিন্তু তন্বী ভাবলেশহীন নূরকে উপেক্ষা করে দরজা খুলল। আফরান চিন্তিত হয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল।
তন্বী — আফুনি জামাটা পরতে চাইছে না। এবার তুমি কিছু বল। সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। আমি যায়। তুমি আফুনিকে নিয়ে এসো।
তন্বী যাওয়ার পর পরই নূর তার অটল সিদ্ধান্ত আফরানকে জানিয়ে দেয়।
নূর — দেখুন আমি এটাই পরব। চেঞ্জ করব না। সবাই সবুজ পরবে আর আমি আসমানী। কেমন বিদঘুটে হয়ে যাবে না।
ফোন নিতে নিতে বলল কথাগুলো। পিছন ফিরতেই ঝাটকা খেয়ে থমকে দাঁড়ালো। কালো পাঞ্জাবি, হাত কুনুই পর্যন্ত ভাজ করা। ফর্সা ত্বকের সঙ্গে কালো রঙটা মিশে আছে। গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
কালো রঙ নূরের প্রিয় রঙ। শ্যামলা গায়ের বর্ণ হলেও কালো রঙের জামা পরতে ভালোবাসে। আফরানকে কালো রঙে আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু আজ পরেছে। তাও পাঞ্জাবি। নূর নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। চেয়েও যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। স্থির দাঁড়িয়ে আছে। আফরান যে তার দিকে এগিয়ে আসছে সেই হুশও তার নেই। শুধু নিষ্পলক তাকিয়ে আছে।
আফরানের ঠোঁটের কোণে চঞ্চল হাসি, দুচোখে দুষ্টুমি খেলা করছে। ধীরে ধীরে নূরের কাছে এগিয়ে গেল। আফরানকে এতো কাছে অনুভব করে নূরের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। ধুকপুক ধুকপুক শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে বাজছে না। আফরান খানিকটা নিচু হয়ে নূরের দিকে এগুচ্ছে৷ নূর জামা খামচে ধরে চোখ বুজে নিল।
আফরান — এভাবে তাকিও না গো। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। এরপর পারমানেন্ট লাইসেন্স পেয়ে যাবে দেখার।
নূর অবাক হয়ে আফরানের দিকে তাকাল। তাদের মাঝে দূরত্ব নেই বললেই চলে। আফরান আলতো করে নূরের চশমা খুলে নিল। মায়াবী কৃষ্ণবর্ণ নয়নের মায়ায় ধরা পড়েছে।
আফরান — ♪কি নামে ডেকে বলব তোমাকে, মন্দ করেছে আমাকে ওই দুটি চোখে।♪
ঘোর লাগা কণ্ঠে মগ্ন হয়ে হারিয়ে আছে একে অপরের দৃষ্টিতে। শুভদৃষ্টির মিলনে বিভোর দুই মন।
আচমকা কারো গলার গোংরানি শুনে নূর দ্রুত পিছিয়ে গেল। আফরান তাকিয়ে দেখে আহিল ভ্রু নাচিয়ে হাসছে। এক প্রকার দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করল। আফরানের পেটে কুনুই দিয়ে খোঁচা মেরে ইশারা করল।
নূর — আমি যায়। সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। (বলে দৌড়ে চলে গেল।)
আহিল — কি হচ্ছিলো এখানে?
আফরান — যেটা তোর আর তোর বউয়ের মধ্যে হয়।
আহিল — মানে? (অবাক হয়ে)
আফরান — রোমেন্স। (হাসছে)
নূর আনমনে হাটছে। একটু আগের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বারেবারে শিউরে উঠছে। আনমনে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করল। তাকিয়ে দেখে আফরান মুখ টিপে হাসছে। সাথে সাথে নূর চোখ ফিরিয়ে নিল। নূরকে দেখে তার মা ক্ষেপে উঠলেন।
শাহারা হায়দার — নূর, এই জামা কেন পরেছিস? তন্বী তোকে যেই জামা দিয়ে এসেছে ওটা না পরে এটা পরলি কেন?
নূর — আম্মু। এটাতে কি সমস্যা?
আফরান আলতো করে পলক ফেলতেই নূরের মা চুপ হয়ে গেলেন। আফরানের মা এসে সাদরে নূরকে নিয়ে বসালেন। তার পাশেই আফরান বসলো। তা দেখে নূরের কপালে ভাজ পড়ল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আফরানের দিকে। একপাশে আফরান, অপর পাশে আফরানের মা। তাই চেয়েও কিছু বলতে পারছে না।
মরিয়ম বেগম — প্রথমে আংটি বদলের কার্যক্রম শেষ করি। এরপর ফর্দের কার্যক্রম হবে। তারপর আমাদের নূর তার সংগীত আয়োজন করবে।
নূর মিষ্টি হাসি দিল। মরিয়ম বেগম আংটির বাক্স আফরানকে দিল। নূরের মা নূরের হাতে দিল। নূর অবাক হলো।
নূর — আমাকে কেন দিচ্ছ?
শাহারা হায়দার — আফরানকে পরিয়ে দিবি।
নূর — মানে? আমি উনাকে আংটি পরাবো?
শাহারা হায়দার — তা নয়তো কি। তোর আর আফরানের বাগদান। তোরা একে অপরকে আংটি পরিয়ে দিবি।
নূর হতচকিত হয়ে সবার দিকে তাকাল। কারো চেহারায় চিন্তার ভাব নেই। সবাইকে বেশ আনন্দিত লাগছে। যেন সবাই আগে থেকেই জানে। তার মানে কি? সবাই জানতো আজ আমার আর আফরানের বাগদান। এসব ভেবে নূর হুট করে উঠে দাঁড়ালো। কেউ কিছু বলার পূর্বেই নূর উঠে চলে গেল। সকলে হতভম্ব হয়ে নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
ওয়াসিম — হঠাৎ নূরের কি হলো? (সিমাকে উদ্দেশ্য করে)
সিমা খেয়াল করল ওয়াসিম তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সেদিক থেকে সরে দাঁড়াল। ওয়াসিম অসহায়ের মতো সিমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সিমা তার দিকে ফিরেও তাকাল না।
পুষ্প — আমি দেখে আসি নূরের কি হয়েছে?
আফরান — পুষ্প, আমি দেখছি।
.
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ ? পাঠিকা/পাঠকরা দেখি অনেক চালাক হয়ে গেছে। ভাবছিলাম পুষ্প,রিহানের বিয়ে বলে সবাইকে কনফিউজড করব। কিন্তু রিডার্স আমাকেই কনফিউজড করে দিল ?