Ragging To Loving 2❤পর্ব-৪২

0
939

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৪২
#রিধিরা_নূর

খুশি মনে আফরান বের হলো। ফোন রিং হতেই দেখল তার বাবা ফোন করেছে।

আফরান — বাবা আমি….

আফরানের বাবা — তোমাকে শুধু একটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সেটাও পালন করতে পারলে না।

আফরান — না বাবা। তেমন না। হুট করেই মিউজিক….

আফরানের বাবা — মিউজিক! তুমি আর তোমার মিউজিক। মিউজিক শখ হতে পারে, ক্যারিয়ার না। আগেও একবার ধাক্কা খেয়েছ। এখন আবারও সেই পথে চলছ। সময় থাকতে সঠিক পথ বেছে নাও। পরিক্ষা শেষে আমার অফিসে জয়েন কর।

আফরান নীরবে শুনছে। তার বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন,

আফরানের বাবা — তোমার এই এটিটিউডের কারণে সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হও।

বলেই ফোন রেখে দিল। মূহুর্তেই প্রফুল্ল মনটা হতাশায় নিমজ্জিত হলো।

আফরান — বাবা বিশ্বাস করে একটি দায়িত্ব দিয়েছিল। সেটাও যথাযথ পালন করতে পারলাম না।

এই মূহুর্তে আফরানের কি করা উচিৎ বুঝতে পারছে না। আদৌও কি সেই দায়িত্ব পালনে যাবে কি যাবেনা দ্বিধায় পড়ল। কারণ দায়িত্ব পালন করতে না পারার অপবাদ দিয়েই দিয়েছে। এখন গেলেও না গেলেও সেই অপবাদ বিমোচন হবে না। ভাবতে ভাবতে ফোন বেজে উঠল।
.

পহেলা ফাগুন। গাছে নতুন পাতা গজাতে শুরু করল। নতুন ফুলের সুরভিত সুবাসে চারপাশ মো মো করছে। বেশ যাক ঝমকে বসন্ত বরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। অনাথ আশ্রমের পার্শ্ববর্তী খোলা মাঠেই অনুষ্ঠানের কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। মেহের, আলিফা বাচ্চাদের নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হলো। সিমা, আমরিন তৈরি হয়ে তারাও গেল সেখানে। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হতেই নূর এবং পুষ্পও হাজির হলো। মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ী পরিধান করল। চুল কোপা করে বাসন্তী রঙের গাঁদাফুলের মালা জড়িয়ে নিল। দু হাত ভরতি লাল,কমলা কাচের চুড়ি।

নূর বাচ্চাদের একপাশে চেয়ারে সারিবদ্ধভাবে বসালো। মাঝে মাঝে তাদের নৃত্য পদক্ষেপ দেখিয়ে দিচ্ছে। সবাই বেশ উৎসাহিত হয়ে অপেক্ষা করছে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হতে। এলাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত হতে লাগলেন। অনুষ্ঠানে অতিথিরা হাজির হলেন। সাদরে তাদের গ্রহণ করলেন এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রথম দফায় শুরু হলো বক্তৃতা। যা শোনার আগ্রহ কারো নেই।

সকলে অধীর আগ্রহে বিশেষ অতিথির অপেক্ষা করছে। শহরের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি আসবেন। নামকরা ব্যবসায়ী। বিভিন্ন অনাথ আশ্রম এবং বিদ্যাশ্রমের লোকদের ভরণপোষণের জন্য তিনি সবসময় হাত বাড়ান। শান্তি নিকেতনের বাচ্চাদের যাতে বিনামূল্যের পড়াশোনার সুযোগ দেয় তারই দৃশ্য আকর্ষণে নূর এই আয়োজন করে।

মেহের — নূর। জাবেদ চাচা ফোন করেছে। আমরা সবাই এখানে চলে এলাম। কিন্তু চাচা শান্তি নিকেতনে একা। অনুষ্ঠানের আয়োজনে কিছু কাজ বাকি রয়েছে শান্তি নিকেতনে। চাচা একা হাতে সামলাতে পারছে না। তাই আমি আর পুষ্প সেখানে যাচ্ছি। তোরা এদিকটা সামলা, আমরা ওদিকটা দেখছি।

নূর সম্মতি জানালো। আর যদি কোন প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে জানাতে বলল। মেহের মাথা দুলিয়ে সায় দিল।

একটু পর-ই উপস্থিত হলেন বিশেষ অতিথি জনাব শরীফ আহমেদ। সম্মান সহিত উনাকে বরণ করলেন। তিনিও বেশ কিছুক্ষণ বক্তৃতা দিলেন। টানা এক ঘন্টা ধরে বক্তৃতা পর্ব শেষে শুরু হলো নৃত্য প্রদর্শন পর্ব। অতিথিরা মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। নামার সময় ফোন নিতে গিয়ে জনাব শরীফ সাহেবের পকেট থেকে ওয়ালেট পড়ে যায়। কেউ খেয়াল না করলেও নূর দেখল বিষয়টা। তড়িঘড়ি সেদিকে গেল ওয়ালেট তুলতে। কেউ খেয়াল না করায় অনেকের পায়ের নিচে চাপা পড়ে ওয়ালেট। ওয়ালেট নিয়ে সেই ভদ্রলোকের পিছনে ছুটলো। তিনি ফোনে আলাপ করায় নূর তারই পিছে অপেক্ষা করল। কথা শেষ হতেই নূর উনাকে ওয়ালেট এগিয়ে দিল। তখনই গেইট দিয়ে প্রবেশ করল আফরান। নূরকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে থেমে গেল।

নূর — স্যার, আপনার ওয়ালেট। মঞ্চের পাশে পড়ে গিয়েছিল।

শরীফ আহমেদ — ধন্যবাদ মা। তোমার নাম কি?

নূর — নূর হায়দার।

শরীফ আহমেদ — নূর হায়দার? তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। নামটাও বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে।

ভদ্রলোক বারবার হায়দার নামটি আওড়াচ্ছেন। কাউকে স্মরণ করার চেষ্টা করছেন। নূরও বেশ আগ্রহী হয়ে তার কার্যকলাপ দেখছে।
আফরান কাছে আসতেই থমকে দাঁড়াল। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তাদের পানে।

আফরান — বাবা! নূর বাবার সঙ্গে কি করছে? নিশ্চয় আবার কোন প্যাঁচাল বাঁধছে। কি করব এখন? (চিন্তিত হয়ে)

শরীফ আহমেদ — জুনায়েদ হায়দার! (প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

নূর মুচকি হেসে বলল,

নূর — আমার আব্বু। জুনায়েদ হায়দার, একজন ব্যবসায়ী। আপনি চেনেন আব্বুকে?

বিষয়টি যেন শরীফ আহমেদের কাছে সুবিধার ঠেকল না। কেমন যেন অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে আছে। নূরের মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করছে। তারই মাঝে উপস্থিত হলো আফরান। একবার নূরের দিকে তাকাল, একবার বাবার দিকে।

নূর — ওহ্ হ্যালো মি. উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। আপনি এখানে কি করছেন?

আফরান চোখ মুখ কুচকে ফেলল। বাবার সামনে না পারছে কিছু বলতে না পারছে নিজের ইজ্জতের ফালুদার স্বাদ নিতে। নূরকে উপেক্ষা করে বাবার উদ্দেশ্যে বলল,

আফরান — আমি….

আফরানের কথা কেটে তার বাবা বললেন,

শরীফ আহমেদ — তোমরা একে অপরকে চেনো?

নূর — হ্যাঁ! চিনি। অভদ্র একটা লোক। আমি যেখানেই যায় এই খাটাশ লোক সেখানেই হাজির হয় আমার জন্য ঝামেলা তৈরি করতে।

আফরান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। বাবার সামনে এমন অপমান সইতে পারছেনা। না জানি বাবার কাছে তার কেমন প্রতিচ্ছবি তৈরি হবে। আগে থেকে দায়িত্বহীন উপাধি পেয়েছে। এখন ভাববে তার ছেলে মেয়েদের পেছনে ঘুরে বেড়ায়।

আফরান — এই কি বলছ তুমি? আমি তোমার পিছনে যায়? আমি ঝামেলা করি?

নূর — তা নয়তো কি। গত পরশু অনাথ আশ্রমে পৌঁছে গেলেন। আর আজ এখানে। তা কে বলেছে শুনি আপনাকে এখানে আসতে?

আফরান — নূর। তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছ।

তাদের দুজনের ঝগড়ার মাঝে আফরানের বাবার ঠিকা মুশকিল। তাই তিনি চুপচাপ সেদিক থেকে সরে এলো। কিছু দূর গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আফরান ও নূর তুমুল ঝগড়া করছে।

খানিক বাদেই শান্তি নিকেতনের নাম ঘোষণা হলো। এবার শান্তি নিকেতনের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। অতিথিরা প্রথম সারিতে বসলেন। পুষ্প এবং বাকিরা সবার শেষে পেছনের সারিতে বসল। নূর মঞ্চের সামনে দাঁড়ালো বাচ্চাদের উৎসাহ দিতে। আলতো করে চোখের পলক ফেলে আশ্বাস দিল।

.
.
.

চলবে

বিঃদ্রঃ ফোন বারবার হ্যাং করছে যার কারণে সম্পূর্ণ দিতে পারছি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here