Ragging To Loving 2❤পর্ব-২৫

0
1125

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৫
#রিধিরা_নূর

নূর ঢ্যাং ঢ্যাং করে হাটছে। সামনে তাকিয়ে দেখে আলিফা হাত নেড়ে তাকে ডাকছে৷ হেলেদুলে হাটতে হাটতে যায়। বিপরীত দিক থেকে পান্না আসছিল। নূর পা মচকে পান্নার উপর পড়ে। পান্না টিকটিকির মতো দেয়ালে লেপটে যায়। নূর তড়িঘড়ি সরে দাঁড়ায়।

নূর — দুঃখিত আপু। আসলে পা মচকে গিয়েছিল।

পান্না — জাস্ট শাট আপ। আর ইউ ব্লাইন্ড? চোখে চশমা লাগিয়ে আছ। তবুও দেখতে পাও না? ইডিয়ট। (হনহনিয়ে চলে গেল)

নূর — এইটা ওই বিলাতি বকের গার্লফ্রেন্ড না? হাহ্! হু কেয়ারস? (পাত্তা না দিয়ে আলিফার কাছে গেল।) আলুর বস্তা কি খবর? মেহের কোথায়?

আলিফা — মেহের আসেনি। (গম্ভীর স্বরে)

নূর — কি হয়েছে? আলুর ভর্তা বানাইলো নাকি কেউ?

আলিফা — আরিফ…আরিফ…আরিফ…(তিনবার ঘাড় ফিরিয়ে) এনাফ ইজ এনাফ। অনেক হয়েছে। এবার তো এর হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব। আজ একটা সিদ্ধান্ত তো হবেই হবে। হয় আজ আরিফ পটে যাবে নাহয় আমি পটিয়ে নিব। আজ একেবারে ফাইনাল ডিসিশন নিব।

নূর আড়চোখে আলিফার দিকে তাকাল। ঘুরে ফিরে সবকিছু গিয়ে আটকায় আরিফের মাঝে। আলিফা নূরকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যাচ্ছে। নূর পা দুটো শক্ত করে পিছন দিকে হেলে বসল। আলিফাও টানছে। নূর বেশ মজায় পাচ্ছে এবং খিলখিল করে হাসছে। ছোট বেলায় এভাবে অনেকবার খেলেছে। যেটাকে বলে ন্যাচারাল রাইডস। আলিফা না বুঝে প্রথমে টানলেও পরে বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দেয়। নূর ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল।

আলিফা — বেয়াদব মেয়ে। আমাকে কি গরু পেয়েছিস? যে আমি গরুর গাড়ির মতো তোকে টানব। উঠে আয়।

নূর — যা সর। পারব না যেতে। তুই যা।

কে শুনে কার কথা আলিফা নূরকে টেনে নিয়ে গেল।
.
.
সিমা, পুষ্প, আমরিন একসাথে এলো। ভেতরে প্রবেশ করতে আমরিন চোখ বুলিয়ে চারপাশে দেখছে। হঠাৎই অকারণে লজ্জা পাচ্ছে। রোজ তো ভার্সিটিতে আসে। তাহলে আজ এতো লজ্জা লাগছে কেন? মাথা নিচু করে হাটছে। পুষ্প, সিমা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় আমরিনকে দেখাল।

পুষ্প — হাই আহিল ভাইয়া।

আমরিন তড়িঘড়ি মাথা উঁচু করে তাকাল। কোথায়? আহিলকে তো দেখতে পাচ্ছে না। সামনে, পিছে, চারপাশে দেখল। কিন্তু আহিলকে পেল না।

আমরিন — কোথায় আহিল?

সিমা পুষ্প একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। দুজনে একসাথে বলল, “তোর ভাবনায়”। আমরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।
.
.
আফরান বেশ শান্ত হয়ে জানালার দ্বারে দাঁড়িয়ে আছে। এবং নিজেকে প্রস্তুত করছে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে। নিশ্বাস নেওয়ার সময়টুকু পেল না শুরু হলো প্রশ্নের ঝড়।

আহিল — ভাই? কখন, কীভাবে, কোথায় হলো এসব? পান্নার সাথে ব্রেকআপ হলো কখন?

রিহান — পান্না কি আবার কিছু করেছে?

ওয়াসিম — কেন করেছিস ব্রেকআপ?

আরিফ — তোরা একটু থামবি? ওকে বলার সুযোগ তো দে। আফরান বল তুই।

আফরান — (গভীর নিশ্বাস ছাড়ল। বিগত দুই দিনের সব ঘটনা বলল। পার্লির বলা কথাগুলো বলল।) আসলেই দোস্ত। দম আটকে আসছিল আমার। এখন মনে হচ্ছে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ছি।

আহিল — দেখিস উড়তে উড়তে আবার নূরের মতো আলিফার ওড়নায় হাগু করার চিন্তা করিস না। (হাসছে)

বাকিরাও তাল মিলিয়ে হাসছে। আফরান ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাতেই আহিল চুপ হয়ে যায়।

ইয়াশ — আমরাও তোকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম। আমরা দুই বছর বুঝানোর পরও তুই বুঝিসনি। আর পার্লি দুই দিন বুঝাতেই সব বুঝে গেলি! ব্যাপার কি বন্ধু। সত্যি সত্যি তোর মনে অনুভূতি হতে লাগলো?

আফরান — নো ইয়ার। তেমন কিছু না। সে শুধু আমার একজন ভালো বন্ধু। জানি তোরা আমাকে বুঝিয়েছিস। কিন্তু তখন সাহসটুকু যোগাতে পারিনি। পার্লির বলার পর চিন্তা করলাম। তোদের কথা চিন্তা করলাম। সর্বপরি নিজের কথা চিন্তা করলাম। অন্যায় করছিলাম পান্নার সাথে। তাকে প্রতিনিয়ত আশা দিয়ে তার প্রত্যাশা বাড়াচ্ছিলাম। আমি শুধু তার আকর্ষণ। ভালবাসা না। তাই চায়নি তাকে দুর্বল করতে। পরে সে আরও বেশি কষ্ট পেত। আমি পান্নার ভালবাসার মানুষ নয় শুধু নামকরা সো কলড বয়ফ্রেন্ড। যাকে সে সবার সাথে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় করতে চায়। তা আমি সে দিন বুঝতে পারলাম যেদিন সে রেস্টুরেন্টে তার ফ্রেন্ডের সাথে আমাকে পরিচয় করালো। তাই চায়নি তার আবেগ আরও দৃঢ় হোক। জানি না তোদের মনে আমাকে নিয়ে কেমন ধারণা হচ্ছে।

রিহান — তোর সাথে আমার সম্পর্ক চৌদ্দ বছরের। সেই পিচ্চিকাল থেকে আছি। তোর জন্য নূরের সব অত্যাচার সহ্য করেছি। (আফরান সরু দৃষ্টিতে তাকাল) সবসময় তোর পাশে থেকেছি। তন্বী হওয়ার পর নূর একজন সাথী পেল। যার সাথে সব কিছু শেয়ার করত। কিন্তু আমি তোদের পেয়েছি। সবচেয়ে বেশি তোকে পেয়েছি। জানি তুই আবেগপ্রবণ। বুদ্ধি দিয়ে নয় মন দিয়ে বেশি চিন্তা করিস। তাই বাঁশটা সর্বপ্রথম তুই খাস। আর পান্না নামক বাঁশটা তুই মন থেকে চিন্তা করার ফল স্বরূপ খেয়েছিস।

মূহুর্তের জন্য সবাই একটু আবেগী হলেও রিহানের শেষ কথার জন্য সবাই হো হো করে হেসে উঠল। আফরান চোখ মুখ কুচকে তাকাল রিহানের দিকে। পরক্ষণে নিজেই হেসে দিল। রিহান আফরানকে জড়িয়ে ধরল। তাদের উপর একের পর এক সবাই একসাথে জড়িয়ে ধরল।

আহিল — গাইজ আমার কিছু বলার আছে।

আরিফ — কি?

আহিল — আমরিনও আমাকে ভালবাসে। গতকাল রাতে ফোন দিয়েছিলাম। যখন বললাম তুমি কি আমাকে ভালবাস? যদি উত্তর “না” হয় তাহলে বল আমাকে অন্য মেয়ে পটাতে হবে। উফফ মেয়ের কি রাগ। রেগে বলে একেবারে খুন করে ফেলব অন্য মেয়ের দিকে তাকালে।

রিহান — তো? এখানে সে বলল কোথায় যে সে তোকে ভালবাসে।

আহিল — জানিসই তো মেয়েটা কত লাজুক। অল্প বিষয়ে লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যায়। সে না বললেও আমি জানি সে আমাকে ভালবাসে। একেবারে লজ্জাবতী। (বুকের বাপাশে হাত দিয়ে দুলছে)

আফরান — গাইজ তোদের প্রাকটিক্যালি দেখায় লজ্জাবতী আমরিন এবং প্রেমিক আহিলের রোমেন্স?

ওয়াসিম — হ্যাঁ! হ্যাঁ! অবশ্যই।

আহিল ভ্রু কুচকে তাকাল। বাকিরাও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।

আফরান — ঠিকাছে। তোরা কোণায় বসে ড্রামা দেখ।

তারা কোণায় গিয়ে বসল। আরিফ যেতে নিলে আফরান তার হাতের কব্জি চেপে ধরে। আরিফ ভ্রু কুচকে পিছন ফিরে তাকাল। তখনই দুয়ারে এন্ট্রি নিল আলিফা, নূর। আলিফা টেনে ধরল নূরকে। আরিফ এবং আফরানকে এভাবে দেখে দুজনেই সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। দুয়ার বরাবর শুধু আফরান এবং আরিফকে দেখা যাচ্ছে। বাকিরা কোণে বসে চুপচাপ বসে আছে।

আফরান নম্র চোখে তাকাল। এক টানে আরিফকে কাছে নিয়ে এলো। আরিফ চোখ বড় করে তাকাল। অন্যদিকে দর্শকদের মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গিয়েছে।

রিহান — আফরান হলো প্রেমিক আহিল। আর আমাদের ঘেঁচড়া আরিফ হলো লজ্জাবতী আমরিন। এবার চুপচাপ দেখতে থাক। (ফিসফিস করে বলল। আহিল কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিহান তার মুখ চেপে ধরল। রিহান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আহিল চুপ হয়ে গেল।)

আফরান শাহাদাত আঙুল দিয়ে আরিফের কপাল থেকে এলোমেলো চুল সরিয়ে দিল।

আফরান — সেই প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম। কি মিষ্টি চেহারা, হরিণী চোখ, গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট। ইউ আর মাই লাভ এট ফার্স্ট সাইট। কবে যে তোমাকে এতো ভালবেসে ফেলেছি নিজেই বুঝতে পারলাম না।

আরিফ — আফরান! কি করছিস এসব? (আফরান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।)

আফরান — শশশ। কিছু বল না। আমি জানি তুমিও আমাকে ভালবাস। আই লাভ ইউ মাই লাভ।

আফরান ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। আরিফের চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। নূর, আলিফা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আলিফা হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নিল।

আলিফা — এই দৃশ্য দেখার পূর্বে আমি অন্ধ হয়ে গেলাম না কেন? (আঙুল ফাঁকা করে দেখছে।)

আফরান ধীরে ধীরে এগুচ্ছে আরিফ পিছন দিকে হেলে পড়ছে। নূর এক টানে আলিফা নিয়ে গেল। রিহানের হাত ছাড়িয়ে আহিল দৌড়ে গেল। আফরান এবং আরিফকে আলাদা করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।

আহিল — ছিঃ! ছিঃ! কি অশ্লীল তোরা।

বিপরীতে রিহান, আফরান, ইয়াশ, ওয়াসিম হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরিফ এখনো বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হয়েছে।

ওয়াসিম — আমাদের মি. প্রেমিক এখন লজ্জাবতীর প্রেমে নিজেই লজ্জাবতা হয়ে গিয়েছে।
.
.
নূর ডিপ্রেশন মুডে বেখেয়ালি হয়ে হাটছে আর আলিফা ছ্যাঁকা মুডে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here