Ragging To Loving 2❤পর্ব-১২

0
1198
  • #Ragging_To_Loving__2
    #পর্বঃ- ১২
    #রিধিরা_নূর

    স্পোর্টস এরিয়ায় ইয়াশ, আহিল, রিহান, ওয়াসিম অপেক্ষা করছে। সামনে তাকিয়ে আহিল উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। বাকিরা হতচকিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আহিল হাতের ইশারায় সামনে তাকাতে বলে হাসতে লাগলো। বাকিরা সেদিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠল। হাসার কারণও আছে বটেই। নূর যে ফুটবল ফুটো করে আফরানের মাথায় টুপির ন্যায় বসিয়ে দিল। আফরান সেই অবস্থায় হনহনিয়ে তাদের কাছে এলো। তাকে এই অবস্থায় দেখে আহিলরা হাসতে লাগলো। আফরান বল হাতে নিয়ে ছুড়ে মারল মাটিতে। বন্ধুদের এমন অট্টহাসি যেন তার রাগ বাড়ানোর সহায়ক।

    আফরান — শাট আপ ইয়ার।

    ওয়াসিম গুটিসুটি পায়ে আফরানের কাছে এসে চিন্তিত হয়ে বলল,

    ওয়াসিম — তোর সাথে এমন করল কে?

    আহিল হাসতে হাসতে বলটা মাটি থেকে তুলে নিয়ে আফরানের মাথায় দিল।

    আহিল — যায় বল দোস্ত। তোকে এভাবে ভীষণ কিউট লাগছে। দাঁড়া একটা সেল্ফি নেয়।

    আফরান — (বল দূরে ছুড়ে মারল) শাট আপ আহিল।

    রিহান — কিন্তু তোর সাথে এমন করল কে? (হাসি চাপা দিয়ে)

    আফরান — সেই অসভ্য মেয়েটি। চাশমিশ। নাও জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

    আহিল — কয়বার যে বললি ওয়েট এন্ড ওয়াচ। শুধু ওয়েট করতেই আছি। ওয়াচ করব কখন?

    আফরান — নাও। নবীন বরণ বলে কথা। নবীনদের একটু ওয়েলকাম করতে হবে না! সো লেটস ওয়েলকাম দেম। (বাঁকা হাসি দিয়ে)

    ক্লাসে বসে আছেন। নূর ও বাকিরা। সবাই চুপচাপ ক্লাসে মনোযোগ দিল। তারা দরজার পাশে কোণায় বসা। আফরান ও বাকিরা বাইরে বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আহিল আমরিনকে দেখেই ফিদা। ছোট ছোট চুলগুলো মুখে আসতেই আলতো করে সরিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টা যেন বারবার আহিলের মন কেড়ে নিচ্ছে। আবারও চুল আমরিনের মুখে আসতেই আহিল নিজেই মৃদু করে ফুহ্ দিল। এক অদ্ভুত শিহরণ যেন আমরিনকে ছুঁয়ে গেল। আশেপাশে তাকাতেই তার নজর পড়ে জানালার বাহিরে আহিলের উপর। অনবরত হাত নেড়ে “হাই” বলছে। আমরিন মুচকি হেসে ক্লাসে মন দিল। তার এক হাসিতেই আহিল ঢলে পড়ে আফরানের উপর। আফরান ধাক্কা দিয়ে তাকে সোজা দাঁড় করালো।

    আহিল — ইয়ার এই হাসি আমি আজীবনের জন্য চায়। আমি ভাবতেই পারিনি আমরিন আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে। কিন্তু করেছে। হয়তো ভাগ্যই কোনক্রমে আমাদের মিলিয়ে দিচ্ছে।

    রিহান — সিরিয়াসলি! তুই বলছিস এমন প্রেমময় কথা। আই ডোন্ট বিলিভ দিস।

    আহিল — একবার প্রেমে পড়ে দেখ সব বিলিভ করবি।

    আফরান — (এদের ক্লাস থেকে বের করব কীভাবে? মনে মনে ভাবছে।)

    নূর ও বাকিরা। সবাই মিলে আলিফাকে খেপাতে লাগলো।

    নূর — আহারে বেচারা আলুর বস্তা। মি. ক্রাশ তাকে পড়া থেকে বাঁচালো না। লালালা মিউজিকও বাজলো না। আর প্রেমের সূচনাও হলো না। এক বদনা সমবেদনা। (বলে হাসতে লাগলো। তার হাসিতে বাকিরাও যোগ দিল।)

    আলিফা — চুপ কর। (রেগে)

    স্যার — কে হাসাহাসি করছে? এটা যে ক্লাসরুম তা কি ভুলে গিয়েছ? হয় ক্লাসে মনোযোগ দাও নাহয় ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও। অযথা বাকিদের ডিস্টার্ব কর না। এটা মাছের বাজার কোন ক্লাসরুম নয়।

    নূর, আফরান সহ উপস্থিত সবাই স্যারের কথায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে স্যারের দিকে। স্যার নিজেই যেন বোকা বনে গেল।

    স্যার — আই মিন এটা ক্লাসরুম কো…কোন মা..মাছের বাজার নয়। (তোতলিয়ে)

    স্যার ভীষণ রাগী তাই হাসার মতো দুঃসাহস কেউ করতে পারল না। মুখ টিপে হাসছে। কিন্তু বাইরে আফরানদের হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। ক্লাসের ভেতরে পিছন থেকে একজন উচ্চস্বরে বলে উঠল, “এই লইট্যা মাছ”। এবার আর কেউ হাসি দমিয়ে রাখতে পারল না। উচ্চহাসির শব্দ পুরো ক্লাসে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দম ফাটানো হাসি যেন নূর হাসছে।

    স্যার — শাট আপ। (রেগে)

    সবার হাসির আওয়াজ কমলেও ভেটকানির হাসি কমছে না। ওড়না ভাজ করে মুখে চেপে ধরল। তারপরও হাসি থামছে না।

    নূর — লইট্যা মাছ… (বলে ফিক করে হেসে দিল)

    বিষয়টি নিয়ে যতটা না হাসি পাচ্ছে তার চেয়ে বেশি হাসি পাচ্ছে নূরের এমন গড়াগড়ি খাওয়া হাসি দেখে। আরেক দফা হাসির বন্যা হলো ক্লাসে।

    স্যার — এই বেরিয়ে যাও ক্লাস থেকে। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। (রেগে উচ্চস্বরে বলল)

    নূর হাসি চেপে চেহারাটা মলিন করে ফেলল। কিন্তু স্যারের দিকে তাকাতেই আবারও হেসে দিল। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দিল দৌড়। তার পিছে পিছে পুষ্পসহ বাকিরা বেরিয়ে এলো। ক্লাসের বাইরে এসে দেখে আহিল রিহান আরিফ দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে আহিল লাট্টু হয়ে আছে, অপরদিকে আলিফা। আলিফা ছুটে গেল আরিফের কাছে। আহিল ছুটে এলো আমরিনের কাছে।

    আহিল — হাই! আমরিন। কেমন আছ?

    আমরিন — ভালো। আপনি কেমন আছেন?

    আহিল — আপনি? কেমন পর পর ভাব। তুমি করে বল। হাই গাইজ। আমি আহিল। আমরিন বলে হয়তো আমার ব্যাপারে।

    নূর — কয় না তো। আমরিন তো আমাদের কিছু বলে নি। (আহিলের চেহারাটা মলিন হয়ে গেল। করুণ দৃষ্টিতে তাকাল আমরিনের দিকে। হয়তো আমরিনের কাছে সে ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। আহিল চলে যেতে নিলে নূর হেসে দেয়।) মজা করছিলাম। বলেছে।

    আহিল — আলিফা এবং আমরিনের সাথে তো বন্ধুত্ব করলাম। তোমাদের সাথে করতে পারি কি?

    পুষ্প — অবশ্যই।

    আহিল সবার সাথে পরিচয় হলো। আরিফ, রিহানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। নূর গিয়ে রিহানের পেটে চিমটি দিল। রিহান রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই নূর চোখ টিপি দিল। নূর রিহান অপরিচিত হওয়ার ভান করে সবার সাথে পরিচিত হলো। কথা বলতে বলতে পকত করে কিছু একটা নূরের মাথায় পড়ল। উপরে তাকাতেই তা মাথা থেকে গড়িয়ে গাল বেয়ে পড়ল। নাক সিটকানি দিতেই কাচা ডিমের গন্ধ পেল। একই ভঙ্গিতে মেহের, সিমার মাথায় পড়ল। সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না। অবিরাম পকত পকত করে কয়েকটা ডিম তাদের মাথায় পড়ল। খিলখিল হাসির আওয়াজ অনুসরণ করে পিছনে তাকিয়ে আছে আফরান, ইয়াশ, ওয়াসিম হাসতে।

    আফরান — আরে নবীনদের বরণ করতে হবে না? আমরা সিনিয়র। এটা আমাদের কর্তব্য জুনিয়রদের সাদরে গ্রহণ করা। উই আর নিউ জেনারেশন। তাই ওয়েলকাম একটু নিউ স্টাইলে করা উচিৎ। তাই এই আয়োজন। ওয়েলকাম মিস চাশমিশ। (ওয়াসিমের হাতে থাকা ডিমের ট্রে থেকে একটি ডিম নিয়ে ছুড়ে মারল নূরের উপর। একেবারে কপালে পড়ল ধপাক করে।) ওয়াও। আমার নিশানা একদম পারফেক্ট।

    আহিল — আফরান এসব কি?

    আফরান — তুই তো বলেছিলি। শুধু ওয়েট করছিস। ওয়াচ করবি কখন? নাও ওয়াচ দিস। (বাঁকা হাসি দিল।)

    আমরিন — তার মানে এসব আপনাদের কারসাজি। এসব বন্ধুত্বের নাটক করা সব শুধু আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য। আপনি এটা মোটেও ঠিক করেননি।

    আহিল — তুমি ভুল ভাবছ।

    নূর তেড়ে আফরানের কাছে গেল। রাগে ফোপাঁতে লাগলো। ডিমের গন্ধে নাক সিটকানি দিয়ে আফরান পিছিয়ে গেল।

    সিমা — এই এনাকন্ডা, উল্লুক কোথাকার, শেওড়া গাছে ঝুলে থাকা বাদুড়, আফ্রিকান বাঁদর আপনার সাহস কি করে হয় আমার উপর ডিম ছোড়ার। আপনাকে তো আমি… (ওয়াসিমের হাতে থাকা ডিম নিয়ে তার মাথায় ভাঙল। ওয়াসিম হাবাগোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।)

    আফরান — এই…. (নূর তার মাথা থেকে ঝরা ডিম নিয়ে আফরানকে মাখিয়ে দিল।) হোয়াট দ্যা হেল।

    নূর — দিস ইজ নট হেল। দিস ইজ আন্ডা। (সিমার মাথা থেকে ভাঙা ডিম নিয়ে আফরানের চুলে, মুখে মেখে দিল। আবার দৌড়ে গেল আলিফার কাছে। হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ভেতর থেকে পাউডার বের করল। ব্যাগ আলিফার হাতে দিয়ে আফরানের কাছে এলো। পুস পুস করে মাথার উপর সব পাউডার ঢেলে দিল। চুলে, মুখে ডিম মাখা থাকায় পাউডারে সাদা ভূত হয়ে গেল।) এখন লাগছে। এক্কেরে ধলা মিয়া। শুধু শুধু আমার সাথে লাগতে আসবেন না।

    আফরান চুল ঝাড়তেই নূর কাশতে লাগলো। দুজনেই একে অপরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন পারলে এক্ষুনি কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।

    নূর — (ও মা গো। একে দেখে তো আমারই ভয় লাগছে।)

    ইয়াশ মেহেরের দিকে তাকাল। যদি নূর, সিমার মতো সেও কিছু করে। কিন্তু না। মেহের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এতে ইয়াশ কোন ভাবান্তর করল না।

    স্যার — কি হচ্ছে এখানে?

    স্যারের কথা সবাই ভীত হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। তাদের নাজেহাল অবস্থা। তাদের দেখে স্যার সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।

    স্যার — তোমরা কি বলবে এখানে কি হচ্ছে?

    নূর — স্যার আসলে…. (আফরান তার হাত চেপে ধরল।)

    আফরান — স্যার আসলে আজ আমার বার্থডে। আর এসব নাকি নতুন ট্রেন্ড বার্থডে সেলিব্রেট করার। আমি কতবার বারণ করেছি এসব না করতে। বললাম এটা ভার্সিটি। ভার্সিটিতে এসব মানানসই নয়। কিন্তু শুনল-ই না।

    স্যার — তোমার এই অবস্থা কে করেছে?

    আফরান — এই যে (নূরকে দেখিয়ে। নূর হা হয়ে তাকিয়ে আছে।) কতবার বারণ করলাম কিন্তু শুনল না। দেখুন স্যার আমি মিথ্যা বললে হাতে দেখুন। পাউডার এখনো হাতে নিয়ে আছে। (নূর হাতের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে ফেলে দিল)

    স্যার — কিন্তু এরা তো নতুন শিক্ষার্থী। আর তোমার সিনিয়র।

    রিহান — স্যার। আসলে ও আমার বোন। সেই হিসেবে পরিচিত। আমরা ফ্রেন্ডস। (জোর পূর্বক হেসে। পরিস্থিতি এমন দেখে কেউ রিহানের কথায় গুরুত্ব দিল না। কিন্তু স্যার তা সত্যি ভেবে নিল।)

    স্যার — তোমরা কিন্ডারগার্ডেনে পড়া ছোট বাচ্চা না। ভার্সিটিতে পড়ছ। এইটুকু জ্ঞান তো আছে যে কোথায় কি করতে হয়। পরবর্তীতে যেন এসব না দেখি। নাহলে কিন্তু তোমাদের সবার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। আশা বুঝতে পেরেছ সবাই।

    সবাই মাথা নিচু করে বলল — জি স্যার।

    স্যার চলে গেল। নূর হাত ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল। আফরানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

    নূর — এসব আপনার জন্য হয়েছে। আর আপনি সব দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিলেন।

    আফরান — মিথ্যা কি বললাম? আমার এই অবস্থা তুমি করেছ।

    নূর — এসব কেন করেছি তা আপনার কাছে অজানা নয়। আপনি প্রথমে শুরু করেছেন। শেষ আমি করলাম।

    আফরান — এখনো শেষ কোথায়? সবে তো শুরু হলো। এর পরিসমাপ্তি আমি করব।

    .

    আহিল — আমরিন?

    আমরিন — নূর চল। চল সবাই। (আড়চোখে আহিলের তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল।)

    মেয়েরা চলে যাওয়ার পর আফরানকে উদ্দেশ্য করে আরিফ গম্ভীর গলায় বলল,

    আরিফ — আফরান এসব কি? তোরা তিনজন মিলে এসব কান্ড করলি আমাদের জানালি না।

    ওয়াসিম — জানালে কি করতি?

    রিহান — এসব করতে দিতাম না।

    ইয়াশ — তাই জানায়নি। কারণ জানি আমাদের নীতিবাদী আরিফ মহাশয় জ্ঞান দিবে। রিহান মহাশয় তাকে সায় দিবে। আর মি. প্রেমিক তার প্রেমিকার বান্ধবীদের সাথে এমন করতে দিবে না। কিন্তু তাদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

    আরিফ — কীসের উচিৎ শিক্ষা?

    ইয়াশ — আমার ক্যামেরা নষ্ট করার।

    আফরান — আমাকে বারবার অপমান করার।

    ওয়াসিম — আর আমার সাথে ঝগড়া করার।

    আরিফ — সিরিয়াসলি গাইজ! তোদের এসব কারণ আমার কাছে ফাউ মনে হচ্ছে। ইয়াশ। সেদিন সে তোকে সরি বলেছিল। আর ওয়াসিম তুই। কোন দিক দিয়ে তোর কাছে এই কারণ সঠিক মনে হচ্ছে এমন করার। আর আফরান…..

    আফরান — এখন বলিস না যে আমার কারণটাও ফাউ। প্রথমত মিথ্যা নাটক করেছে। এরপর গায়ে পড়ে এসে না জেনে না শুনে ঝগড়া করেছে। এরপর ফুটবল ফুটো করে ভার্সিটির সবার সামনে আমার মাথায় পরিয়ে দিয়েছে। এটা আমার কাছে কতটা লজ্জাজনক ব্যাপার ছিল জানিস?

    মূহুর্তটা মনে করতেই ইয়াশ, ওয়াসিম হেসে দিল। রিহান, আরিফ মুখ টিপে হাসছে। আফরান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেল। আহিল এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে গেইটের দিকে।

    .
    .
    .

    চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here