এক ফালি রোদ্দুর পর্ব:০৫

0
1000

#এক_ফালি_রোদ্দুর?
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম?
#পর্ব:০৫

—-“আশ্চর্য!’তোরা সবাই হাসছিস কেন?’

“এক প্রকার অবাক হয়ে কথাটা বললো রিয়াদ সবাইকে’!!ওদের হাসার কারন এখনো বুঝতে পারছে না রিয়াদ’!!রিয়াদের কথা শুনে আহান বলে উঠলঃ

—-“কি অবস্থা করেছিস তুই নিজের…

—-“কি করেছি, আমি তো কিছুই করি নি…

“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

—-“আরে ভাইয়া ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি নিজের মুখে মেকাপ করতে ছিলে নাকি…

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ অবাক হয়ে বললোঃ

—-“মানে…

—-“আমি বলছি….

“এই বলে আহান রিয়াদের সামনে নিয়ে আসলো একটা ছোট্ট আয়না’!!আয়নায় নিজের মুখ দেখে রিয়াদ কি রিয়েকশন দিবে ভুলে গেছে’!!এক প্রকার রেগে বলে উঠল সেঃ

—-“এগুলো কে করেছে….

—-“তা তো জানি না তখন তোর রুমের এসে তোর অবস্থা দেখে আমি তো ভূত দেখার মতো চমকে গেছি….

—-“এখন ভূতের মতো এইভাবে সেজে থাকলে ভয় তো পাবেনই তাই না আহান ভাইয়া,,

“এই বলে আমি একটু এগিয়ে গেলাম রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তারপর বললামঃ

—-“হায় রে আমার বিলেতি হনু থুরি আমার বিদেশি ভাইয়ার কি অবস্থা হয়েছে,কিন্তু কি করে হলো ভাইয়া ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মেকাপ করছিলেন নাকি…

“আমার কথা শুনে সবাই হেঁসে দিল সাথে আমিও’!!

“এদিকে রিয়াদের বুঝতে বাকি নেই কাজটা কে করেছে,নিশ্চয়ই সে যখন ঘুমিয়ে ছিল সেই সুযোগে তানজু রুমের এসে এই কাজটা করছে

—-“তোকে তো আমি এক্ষুনি দেখে নিচ্ছি…(মনে মনে)

“রিয়াদের ভাবনার মাঝে বলে উঠলাম আমিঃ

—-“সবাই চলো এখন এখান থেকে ভাইয়া এখন নিশ্চয়ই তার ভুতুড়ি মেকাপ উঠাবে…

—-“হুম ঠিক বলেছিস তানজু, ভাইয়া তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো,চল সবাই…

“রুহির কথা শুনে একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো সাথে আমিও,,হর্ঠাৎই রিয়াদ ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেললো’!!সাথে সাথে ঘাবড়ে গেলাম আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরল’!!ওনার কাজে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আমার,

—-“হায় রে কোনো ভাবে বুঝে গেলো নাকি কাজটা আমি করেছি,তাইলে তো তুই গেছো তানজু….

“সবাই রুম থেকে বের হতেই রিয়াদ ভাইয়া দরজা বন্ধ করে দিল!’যা দেখে রীতিমতো কাঁপাকাঁপি অবস্থা আমার’!!রিয়াদ ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললোঃ

—-“এগুলো তুই করেছিস তাই না….

“রিয়াদ ভাইয়ার কথা আর কাজ দেখে আমি পিছনে যেতে যেতে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলামঃ

—-“তুমি এগোচ্ছ কেন,আর আমি.. আমি কিছু করে নি….

—-“তুই যদি কিছু না করে থাকিস তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?

—-“কে…ব…লে…ছে…আমি ভয় পাচ্ছি এই তানজু কাউকে ভয় পায় না…(কাঁপা কাঁপা গলায়)

—-“তাহলে কাঁপছিস কেন?’

—-“দেখো ভাইয়া আমাকে যেতে হবে আম্মু ডাকছে…

“বলে যেই না আসতে যাবো সাথে সাথে ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরলো আলমারির সাথে’!!কারন আমার পিছনে আলমারি ছিল’!!রিয়াদ ভাইয়ার কাজে আমি ভয়ে বলে উঠলামঃ

—-“আমি কিছু করি নি…

—-“তুই সত্যি কিছু করিস নি,

—-“সত্যি…

—-”আমার সুন্দর মুখটার পুরো তেরোটা বাজিয়ে দিয়ে বলছিস তুই কিছু করিস নি….

“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে ফট করে বলে উঠলাম আমিঃ

—-“কাল রাতে যখন তুমি আমায় ভূত বানিয়ে ছিলে তখন…

“এতক্ষণ রিয়াদ সন্দেহের বসে তানজুকে জিজ্ঞেস করলেও এখন সে পুরোপুরি শিউর কাজটা তানজুই করেছে’!!

—-“তার মানে তুই কাল রাতের প্রতিশোধ নিয়েছিস….

“এই রে খাইছে সত্যি সত্যি ধরা পড়ে গেলাম নাকি…!!

—-“কি হলো কথা বলছিস না কেন…

—-“না মানে…

—-“তার মানে কাজটা তুই করেছিস আজকে তোকে তো আমি…(ধমক দিয়ে)

“রিয়াদ ভাইয়ার ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম আমি’!!হায় রে এখন না জানি আমার সাথে কি করে?’একটু নীরবকন্ঠে বলে উঠলাম আমিঃ

—-“সলি ভাইয়া….

—-“কি….

—-“সরি ভাইয়া…..

—-“কি বললি শুনতে পাই নি…

—-“সরি ভাইয়া…

—-“কি সরি, সরিতে তো হবে না…

—-“দেখো তুমি আমায় ভূত বানিয়েছো আমিও তোমায় ভূত বানিয়েছি তাহলে শোধবোধ….

—-“এইভাবে কি করে শোধবোধ হবে….

“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম আমিঃ

—-“মানে….

—-“কান ধর….

—-“কি….?

—-“কানে শুনতে পাস নি নাকি…

—-“আমি কোনো কানে-টানে ধরতে পারবো না….

—-“তুই যদি কানে না ধরিস তাহলে….

—-“তাহলে কি করবে তুমি…

—-“তোর ওই স্পেশাল লুঙ্গি ড্যান্স ওলা ফটো ভাইরাল করে দিবো….

“হায় রে আমি তো ছবি গুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম’!!কিছুটা ভরকে গিয়ে বললামঃ

—-“ব্লাকমেল….

—-“হুহ…

…………

“কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!আর রিয়াদ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ইচ্ছে চাটি মেরে মাথাটা ফাটিয়ে দেই’!’

—-“আমি যতক্ষণ পর্যন্ত এই মেকাপ উঠিয়ে বাহিরে না আসবো ততক্ষণ তুই এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি’!!যদি বাই এনি চান্স তুই রুম থেকে বেরিয়েছিস তো তাহলে তো বুঝতেই পারছিস…

“বলেই আমার মুখের সামনে তার মোবাইলটা ঘুরিয়ে চলে গেল রিয়াদ ভাইয়া ওয়াশরুমে’!!আর আমি সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম’!!

—-“শালা শয়তান,নয় ঠ্যাং,বিলেতি হনুমান,ফাটা টিউবলাইট,ভাঙা হেরিকেন,ছেঁড়া খাতা,পঁচা আলু,টমেটো বেগুন সবকিছু,তোর কপালে ভালো বউ জুটবে না দেখিস….

“রাগে গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে খুব!’যে করেই হোক সবার আগে ওই রিয়াদের বাচ্চার মোবাইলটা হাতে পেতে হবে তারপর ছবিগুলো ডিলিট করে দিতে হবে না হলে সারাদিন শুধু ব্ল্যাকমেল করতেই থাকবে….

.

“পাক্কা দেড় ঘন্টা পর বের হলো ভাইয়া’!!এই দেড় ঘন্টায় যে কি কি করেছি আমি নিজেও জানি না,প্রথমে বিছানায় বসেছি কতক্ষণ রুমের মধ্যে পায়চারি করেছে,কতক্ষণ নাগিন ড্যান্স দিসি,,আবার কখনো রিয়াদকে হাজারটা গালি গালাজ করেছি,সব মিলিয়ে এক প্রকার বিরক্ততার সাথে কেটেছে আমার’!!রিয়াদ ভাইয়া বের হচ্ছে বুঝতে পেরেই দৌড়ে গিয়ে নিজের জায়গায় কান ধরে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!

“রিয়াদ ভাইয়া তার মুখটা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বলে উঠলেনঃ

—-“তুই এতক্ষণ সত্যি সত্যি কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলি তো….

—-“???

—-“ঠিক আছে এখন যা আর আমার জন্য গরম গরম কফি বানিয়ে নিয়ে আয়….

“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ

—-“আমি আনবো….

—-“হুম তুই আনবি…

—-“আমি পারুম না…

—-“সত্যি পারবি না…

—-“না…

—-“ভেবে বলছিস তো..(মোবাইলটা দেখিয়ে)

“সাথে সাথে তেরে বলে উঠলাম আমিঃ

—-“তোমায় তো আমি,, আনছি….

“বলেই হন হন করে চলে আসলাম আমি’!!রাগ হচ্ছে খুব…

“এদিকে তানজুর কাজে হাসলো রিয়াদ’!!আনমনেই বললো সেঃ

—-“পাগল একটা না থুরি পাগলী একটা….!’

__________________

“২ ঘন্টা পর….

“এক কাপ কফি নিয়ে তুমুল বেগে দৌড়াচ্ছি আমি’!!না জানি এত দেরি হয়েছে বলে রিয়াদ ভাইয়া কি বলে আমায়?’ফড়ফড় করে রিয়াদ ভাইয়ার রুমে কফিটা দিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

—-“সরি ভাইয়া একটু দেরি হয়ে গেছে…

—-“এখানে একটু দেরি…

—-“উফ সরি ভাইয়া,

“বলেই কোনো রকম কফিটা রেখে আমি দৌড়’!!কারন আমেরিকা থেকে আফরিন আপু ফোন করেছে,কিছু বিশেষ কারনে আফরিন আপু আসে নি বিয়েতে,,আমাকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে অবাক হয়ে বললো রিয়াদ ভাইয়াঃ

—-“কি হয়েছে দৌড়াচ্ছিস কেন?’

—-“না তেমন কিছু নয় ওই আফরিন আপু ফোন করেছে…

“বলেই দৌড় আমি,…

“তারপর সবাই মিলে কিছুক্ষণ আফরিন আপুর সাথে কথা বললাম’,তার সাথে আপুর বর সায়ান দুলাভাইয়ের সাথেও!’আফরিন হলো রিয়াদ ভাইয়ার বড় বোন,,তার বিয়ে হয়েছে প্রায় দু’বছর হতে চললো,বর্তমানে সে প্রেগন্যান্ট তাই তো আসতে পারলো না শিউলি আপুর বিয়েতে,,আপু আর সায়ান ভাইয়া দুজনেই আমেরিকায় থাকে আর রিয়াদ ভাইয়াও ওনাদের সাথেই থাকে,পড়াশোনার জন্য রিয়াদ ভাইয়া গিয়েছে আমেরিকা বর্তমানে সে আমেরিকার বিখ্যাত ভার্সিটির মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই বড় ডাক্তার হয়ে যাবে ভাইয়া….

___________________

“পরেরদিন সকালে সূর্যের তীব্র আলোতে ঘুম ভাঙল আমার’!!আশেপাশে কাউকে না চরম অবাক আমি,এত ভোরে রুহি,শিফা, তরী ওরা গেল কই?’

“কৌতূহলী চললাম আমি নিচে’!!সিঁড়ির উপর দাঁড়াতেই দেখলাম মেজো খালামনি আইমিন রুহি,শিফার আম্মু,শিফা রুহি দুজনই আপন বোন’!!খালামনি কিছু একটা গোছাচ্ছে ,আমি গিয়ে পিছন থেকে খালামনিকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ

—-“খালামনি….

—-“হুম বল ঘুম ভাঙল তোর…

—-“হুম কিন্তু বাড়ি ফাঁকা কেন সবাই গেল কই…

—-“ওঁরা তো বেরিয়েছে…

“খালামনির কথা শুনে আমি চরম অবাক হয়ে বললামঃ

—-“কি,এত ভোরে…

—-“ভোর কোথায় সকাল ১০টা বাজে…..

—-“কি আমি এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলাম…

—-“তোকে তো ওরা কতবার ডাকলো কিন্তু তুই তো উঠলি না তাই ওরা একাই চলে গেছে….

—-“কোথায় গেছে খালামনি ওঁরা…

—-“আশেপাশেই আছে হয়তো গ্রাম ভ্রমণের বেরিয়েছে ওরা,রিয়াদ আহানও সাথে আছে ওদের….

—-“ওহ…(মন খারাপ করে)

—-“মন খারাপ করিস না তাড়াতাড়ি নাস্তা করে তুই বেরিয়ে পড় রাস্তায় কোথাও না কোথাও দেখা মিলেই যাবে….

“এমন সময় দরজার সামনে হাজির হলো আমার ছোট্ট ছোট্ট পিচ্চি বন্ধুরা, জুথি,টুম্পা,ফুলটুসি,ইব্রাহীম আর অভ্র!’ওদের সবার বয়স ৮ থেকে ১০ বছর’!!ওঁরা আমায় খুব ভালোবাসে সাথে আমিও প্রত্যেক বার গ্রামের আসলে ওদের সাথে ঘুরতে না বের হলে আমার ভালো লাগে না,আমি খুশি মনে দৌড়ে চলে গেলাম ওদের সাথে’!!তারপর বলে উঠলামঃ

—-“তোরা…

—-“তানজু আপু ঘুরতে যাবে আমাদের সাথে…

—-“আরে এটা আবার জিজ্ঞেস করার মতো কথা তোরা বস আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি কোথাও যাবি না কিন্তু…

“বলেই আমি দৌড়!’আমাকে দৌড়াতে দেখে ওঁরাও বলে উঠলঃ

—-“তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু তানজু আপু….

—-“হুম জাস্ট দু’মিনিট….

—-“রুহি,শিফা আর তরী আপু আসবে না তানজু আপু….(ফুলটুসি)

“ফুলটুসির কথা শুনে আমি বললামঃ

—-“ওরা তো ঘুরতে বেরিয়েছে তবে কোনো ব্যাপার না আমি আছি তো….

“হাসলো ওঁরা….!

_____________________________________

____________________

“পুরো গ্রাম ঘুরছে রুহি,শিফা,তরী, আহান আর রিয়াদ’!!রিয়াদের হাতে আছে তার মুঠো ক্যামেরা বহুদিন পর সে গ্রামে এসেছে প্রায় সবকিছুই নতুন লাগছে তার কাছে,আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য ক্যামেরায় ক্যাপচার করে নিচ্ছে সে’!!যেমন গাছের উঁচু মগডালে বসে আছে দুটো হলদে পাখি সেগুলোকে ক্যাপচার করছে সে’!!সাথে পুকুরে বসে থাকা দবদবে হাসা রঙের হাঁস তবে একটা নয় অনেকগুলো হাঁস একসাথে জোট বেঁধে ঘুরতে বেরিয়েছে মনে হয়,আচমকা একটা হাঁস আরেকটা হাঁসের গালে চুমু কাটলো ঘটনা হুট করে হয়ে যাওয়াতে সেই মুহূর্তেই ফটো তোলে রিয়াদ,আনমনে হেঁসে উঠল সে….!’আচমকা আহান বলে উঠলঃ

—-“ওটা কে তানজু না…

“তানজু” নামটা শুনতেই অবাক চোখে তাকালো রিয়াদ,সাথে বাকিরাও!’ সামনে তাকাতেই দেখলো তারা, তাদের থেকে অনেকটা দূরে “কোলা” মানে ফসলের মাঠ ভরা পানির মাঝখানে ভাসছে তানজু,ভাসছে বললে ভুল হবে কিছু একটা উপর উঠে ঘুরছে তানজু,সময়টা শ্রাবণ মাস হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে ভরে গেছে মাঠ-ঘাট….

“কৌতূহলে এগিয়ে গেল রুহি,শিফা,তরী, আহান আর রিয়াদ তানজুর দিকে….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here