জীবন মানে তুমি পর্ব-৬৪

0
3603

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬৪

(২১৭)

আবরার হাসতে হাসতে কথাটা বলে উঠে আর ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে আসল কারণটা।আবরার ওর সামনে ডান পায়ের উপর ভর দিয়ে ঝুঁকে বাম হাত দিয়ে ওর মুখটা ধরে তুলে বলে,
-“ভয় পাও তবুও সাহস দেখাতে আসো।”

ইয়ারাবী ওর হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে বলে,
-“গায়ে হাত দিবেন না,আপনার ছোঁয়ায় আমার শরীর শিউরে উঠছে।”

আবরার মুচকি হেসে বলে,
-“রেইলি সুইটহার্ট?তুমি নিশ্চয়ই ভুলে গেছো তিন কবুল বলে মোহরানা শোধ করে তোমাকে গ্রহন করেছি।তোমার কাছে আসার সম্পূর্ন অধিকার আছে।আর আবরার তার জিনিস খুব ভালো বুঝে নিতে পারে,একটু আগে তো ট্রেলার দেখালাম।”

ইয়ারাবী ওকে কিছু বলতেই যাবে ঠিক তখনি ওকে ধাক্কা দিয়ে মুখে হাত রেখে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।বেসিনের পানি ছেড়ে দিয়ে বমে করতে থাকে।আবরার ওভাবে যাওয়া দেখেই ভ্রু কুচকে দৌঁড়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে ইয়ারাবী বমি করছে।আবরার ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওর এলোমেলো চুলগুলো ডান হাতে বন্ধি করে বাম হাত দিয়ে ওর কপাল চেপে ধরে।বেশ কিছুক্ষণ পর ইয়ারাবী ফ্রেস হয়ে মুখে পানি দিতেই আবরার হেসে বলে,
-“গুড নিউজ নাকী?”

ইয়ারাবী ভ্রু কুচকে বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বাজে কথা একদম বলবেন না।”
-“কী বাজে কথা বললাম আমি?এখানে তো না হওয়ার কিছু নেই।”
-“এক সপ্তাহ আগেই তো করলাম নেগেটিভ আসলো।”

আবরার টাওয়াল দিয়ে ইয়ারাবীর মুখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে,
-“অনেক সময় ভুল ফলাফল আসে,তুমি আবার টেস্ট করো হতেও পারে,এমনিতেও এই কয়েকদিন ধরে খেতে পারছোনা আর খেলেও বমি করে দিচ্ছো।”
-“বলছিনা এমন কিছুই হয়নি তাই মিথ্যা আসা দেখাবেন না।আর যদি হয়ও তবে আপনার কী?বেবি শুধু আমার,আপনার মতো মানুষ ওর বাবা হওয়ার যোগ্য নয়।”

ইয়ারাবীর রাগেতে শরীর ফেঁটে যাচ্ছে,কথাটা উচ্চস্বরে বলেই আবরারের হাতের থেকে টাওয়ালটা নিয়ে ফ্লোরে আছড়ে ফেলে দেয়।তারপর দৌঁড়ে রুমে এসে বিছানায় বসে হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে।কান্নাগুলো হলো ওর নিত্যসঙ্গী,কেননা আবরারের বদলে যাওয়াটা মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা ও।গত দুই সপ্তাহ ধরে এসব কাহিনি তো আছেই তবে ইরাকের বিয়ের পরে লন্ডনে ফেরার পর থেকে আবরার সত্যিই কেমন একটা বদলে গেছে।প্রায়ই ধমক দিয়ে কথা বলে,অনেকটা শাষনের মধ্যে আটকে রাখে,ভুল করলে বা কিছু করতে না চাইলে আগের মতো ভালোবেসে বুঝিয়ে করাতোনা বরং এমন আচারণ করতো যার জন্য ইয়ারাবী ভয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়,প্রতিটা কাজের সূক্ষভাবে কৈফিয়েত চাইতো আর যদি জানতো ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতে দেরি হয়েছে তবে তো ওর রক্ষা নেই।গায়ে হাত তুলে না ঠিকই তবে এমনভাবে কথা বলে যেটা সোজা মনে দাগ পরে যায় ইয়ারাবীর,নিজেকে বড্ডো অসহায় মনে হয়।আবরার অনেকটা বদলে গেছে যার দরুন ইয়ারাবী এখন প্রচন্ড ভয় পায় নিজের স্বামীকে।

এইতো দেড় মাস আগের ঘটনা,এখন মোটামুটি রান্না-বান্না করতে পারে ইয়ারাবী।তবে বেশিক্ষণ ধরে আগুনের তাপের কাছে থাকতে পারেনা, থাকলেই মাথায় যন্ত্রনা হানা দেয়।সেদিন এনা আসেনি কাজে,তাই ইয়ারাবী মেডিকেল থেকে এসে ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়।তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিচেনে প্রবেশ করে অনেকক্ষণ ভেবে চিকেন মুয়াম্বা,ফ্রাইড রাইস আর লাসানা বানিয়ে ফেলে।কেননা যেদিন আবরার ল্যাবে থাকে সেদিন বাসায় এসে যে কোনো সময় লান্চ করে।ইয়ারাবী সবটা গুছিয়ে রেখে কিছুক্ষণ ছাদে যেয়ে দাঁড়ায়,মনটা বেশি একটা ভালো নেই তার এই মুহুর্তে।ঘন্টাখানিক পরে কেউ একজন পিছন থেকে অনেকটা ধমকের স্বরে বলে উঠে,
-“এই সময়ে ছাদে কী করছো?তুমি জানোনা এই সময়ে ছাদে ওঠা তোমার জন্য নিষেধ,তার উপর চুল খুলে রেখেছো।”

ইয়ারাবী পিছন ফিরে চুলটা হাত খোঁপা করে বলে,
-“আবরার আপনি বকছেন কেন?আর এই সময়ে তো আমি প্রায়ই আসি।আর চুলের খোঁপাটা খুলে গেছিলো তাই।”
-“কেননা এই সময়ে বাড়িতে কেউ না কেউ থাকে বাট্ আজ তুমি একা আছো।এতো কিছুর পরে একটা মানুষ কীভাবে ভুল করে?আজ থেকে বাড়িতে কেউ না থাকলে ছাদে উঠবেনা তুমি।আর আমার কথার বিপরীতে যাওয়ার চেষ্টাও করবেনা।”

ইয়ারাবী অবাক হয়ে যায় আবরারের ব্যবহারে,ও বুঝতে পারছেনা এতো ছোট বিষয়ে এভাবে চিৎকার করছে কেন ওর উপরে।ও আবরারের কাছে যেয়ে কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“কী হয়েছে আপনার?”
-“কিছুনা,খাবার দাও।আমি ফ্রেস হয়ে আসি,আজ দেরি হয়েছে অনেক ।”

ইয়ারাবীর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ছাদ থেকে নেমে গিয়ে টেবিলে খাবারগুলো রাখে।এর মধ্যে আবরার ফ্রেস হয়ে এসে চেয়ারে বসে বলে,
-“এনা আসেনি তাইনা?তুমি রান্না করেছো?”
-“ইলেক্ট্রিক চুলায় করেছি সমস্যা হয়নি।”
-“হামম দাও,তুমিও বসো খেয়ে নাও।”
-“আজ এতো রেগে আছেন কেন?”

ইয়ারাবী পাশের চেয়ারে বসে আবরারকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে কথাটা বললে আবরার শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,
-“রেজাল্ট এতো খারাপ এসেছে কেন?তোমাকে কী খারাপ রেজাল্ট করার জন্য পড়াচ্ছি।”
-“ক..কী বলছেন আপনি?”
-“কী বলছি তুমি বুঝতে পারছোনা?”

আবরার টেবিলে অনেক জোরে শব্দ করে কথাটা বলে উঠে,এই ব্যাবহারে ইয়ারাবীর চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি পরতে থাকে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে ঝাড়ি মেরে বলে,
-“চোখের পানি মুছো,কান্না করে সিক হবে পরে দৌঁড়াদৌঁড়ি আমাকে করতে হবে।কী হলো কথা কানে যায়না?দেখ ইয়ু,অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে রেখেছি,আর আমার রাগ সম্পর্কে খুব ভালো জানো।তাই ফালতু কিছু করে রাগ তুলবেনা।তুমি কী ভেবেছিলে?আমাকে না বললে আমি জানবোনা।কাল রেজাল্ট পেয়েছো আমাকে আজও জানাওনি।”

ইয়ারাবী চোখ মুছে বলে,
-“ম মনে ছিলোনা।”
-“মন কোথায় থাকে তোমার?তিন-চারটা বাচ্চা আছে নাকী যে তাদের সামলাতে সামলাতে তোমার কিছু মনে থাকেনা?আমাকে যদি ডা.লিন্ডা না বলতো তবে জানতেই পারতামনা।এতোটা খারাপ রেজাল্ট কীভাবে করো তুমি?নিজে যতটা সময় পায় তোমার পিছনে ব্যায় করি কিন্তু তুমি তার এই প্রতিদান দাও।”
-“আপনি এমন ক…কেন করছেন?শুধু এই বার খারাপ করেছি,আগের গুলোতে মা…মার্কস্ ভালো ছিলো আর র…রেজাল্টও ভালো ছিলো।আ আপনি জানেন এবার খারাপ কেন হলো?তারপরও এভাবে না বকলে কী হয়না?অতোটা খারাপও তো হয়নি,পজিসনে পনেরতে আছি।আজকাল শুধু বকাবকি করেন আমাকে।”

আবরার ডান হাত দিয়ে নিজের কপালটাকে ডলে চুলগুলো মুঠ করে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“আমি যেটা করি তোমার ভালোর জন্যই করি।আর আজ পনেরতে কাল বিশের বাইরে যেতে সময় লাগবেনা।এখানকার স্টুডেন্ট খুব মেধাবী,তোমাকেও সেভাবে নিজেকে গড়তে হবে।নয়তো একজন ভালো ডাক্তার হতে পারবেনা।”

ইয়ারাবী কাঁপা কাঁপা স্বরে বলতে থাকে,
-“সব সময় তো পড়ি,এখনতো ফোনটাও ছুঁইনা প্রয়োজন ছাড়া।আর রাতে জেগে পড়তে পারিনা সেটা আপনিও জানেন।”
-“আচ্ছা বাবা সরি,আর বকছিনা।এরপর থেকে ভালো করার চেষ্টা করবে।”

একটা দীর্ঘশ্বাস কথাটা বলে আবরার খাবার খেতে শুরু করে,কিন্তু ফ্রাইড রাইসের এক চামশ মুখে তুলতেই কেমন চোখ-মুখ কুচকে ফেলে।ইয়ারাবী সেটা দেখে দ্রুত মুখে দিয়ে টের পায় লবণের পরিমান অনেক বেশি হয়েছে।বাকী দুইটাতেও একই অবস্থা।আবরার কিছু বলার আগেই ইয়ারাবী দ্রতু উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“আপনি একটু কষ্ট করে বসুন আমি অন্য কিছু বানিয়ে দিচ্ছি।শুধু দশ মিনিট লাগবে।”

আবরার বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“এত লবণ কেউ দেয়?মানুষের একবার ভুল হয় কিন্তু তোমার বারবার।একটা ডিশও ঠিকভাবে রাঁধতে পারোনি,লবন দেওয়ার সময় মন ককোথায় ছিলো,যতসব।”
-“প্লিজ আ আপনি রাগ করবেন না।আমি এখনি…”
-“থাক দরকার নেই,এমনিতে তাপের কাছে এতো সময় কাজ করা তোমার উচিত নয়।এগুলো তো আর খাওয়া যাবেনা আর আমাকে এখনি হাসপাতালে যেতে হবে।আমি অর্ডার করে দিচ্ছি এলে খেয়ে নিবে,আমি বাইরে থেকে করে নিবো।”
-“কিন্তু..”
-“এখন তুমি রান্না করো বা আমি সময় লাগবে, কিন্তু আমার এতো সময় নেই।”

কথাটা বলে আবরার পাশ থেকে কোটিটা তুলে পরে নিলো।ইয়ারাবী মুখ ভার করে আছে,নিজেকে দোষারোপ করছে স্বামী কিছু না খেতে পারায়।আবরার ওর গালে হাত দিয়ে বলে,
-“আমার আসতে দেরি হবে,সাবধানে থাকবে।যদি ভয় পাও তবে কল দিয়ো।আর হ্যাঁ,খাবার খেয়ে পড়তে বসবে।”
-“স্যরি,এরপর থেকে সবটা দেখে রান্না করবো।আসলে যদি টেস্ট করতাম তাহলে এমন হতোনা।”
-“ব্যাপার না,আমিও দুঃখীত।আসি আল্লাহ হাফেজ।”

যেদিন আবরার শান্ত ভাবেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে,কিন্তু ইয়ারাবীর মন অশান্ত থাকে।আবরারের এভাবে বদলে যাওয়ার কারণগুলো বোঝতে পারেনা।অাজকাল আবরার কথায় কথায় বাচ্চার ব্যাপার টেনে আনে যার জন্য ইয়ারাবীর আরো বেশি খারাপ লাগে।তাইতো যখন জানতে পারলো আবরারের নতুন সম্পর্কের কথা তাই না চাইতেও স্বামীর অগোচরে বিষয়টা খুঁটিয়ে দেখতে গেছিলো।

হঠাৎ মাথায় কারো স্পর্শে অশ্রুসিক্ত নয়নে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে আবরার দাঁড়িয়ে আছে।আবরার ওর ভিজা চুলের মধ্যে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বলে,
-“আমি জানি আমি বদলে গেছি আর এটাও জানি আমার আচারণে তুমি বড্ডো ভয় পাও।কাল অনেক সাহস নিয়ে বিচ্ছেদের কথাটা বলেছিলে।কিন্তু সত্যি বলছি তুমি যা ভাবছো সেটা নয় ইয়ু।”
-“শুধু আমি দেখতাম তবে বিষয়টাকে কিছুটা হলেও নিজের মনের সন্দেহ বলে চালাতাম কিন্তু এতোগুলো মানুষের দেখাতো আর মিথ্যা হতে পারেনা মি.আবরার।আর তাছাড়া আপনি নিজের মুখে সব বলেছেন সেগুলো…আসলে সব ছেলেরাই এক হয়,আমি জানতাম আমার ভাগ্যটা এমন হবে।কেননা তেল আর পানি কখনো একসাথে মিশেনা।”
-“বড্ডো বেশি বোঝো তুমি পিচ্চি বউ।”

কথাটা বলেই আবরার ইয়ারাবীর বাম হাতটা ধরে বলে,
-“হাত খালি কেন?ব্যাসলেট কোথায়?গলায় পেন্ডেন্ট,হাতের আংটি কোথায় গেলো?খালি কেন সব?”
-“সেটা জেনে আপনার কী?বারবার গায়ে কেন হাত দিচ্ছেন?”

আবরার কেন জানি হঠাৎ করে হাতটা ছেড়ে দেয় ওর,তারপর কাবার্ডের সামনে চলে যায়।ইয়ারাবী ভাবে ওর কথায় এভাবে চলে গেলো,অন্য সময় হলে মন খারাপ হতো তবে আবরার যা করেছে তাতে ওর একটুও মায়া কাজ করছেনা।চোখের সামনে আবরার আর ওই মেয়ের মুহুর্তগুলো ভেসে উঠছে।কাঁধে মাথা রাখা,হাতের উপর হাত রেখে কথা বলা সবকিছু।এসব ভাবছিলো তখনি হঠাৎ করে আবরার ওর হাতটা ধরে ব্যাসলেটটা পরিয়ে দিয়ে বাকীগুলো জোর করে পরাতে থাকে।তারপর একটা ড্রেস আর বোরখাটা ওর দিকে দিয়ে বলে,
-“খবরদার এসব খুলেছো তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।ড্রেসটা পরে নাও বের হতে হবে।”
-“আমি কোথাও যাবোনা আর না আপনার এসব পরবো।কিছু লোক দেখানো লাগবেনা,এমনিতে দুইদিন পরে এসব আপনার প্রেমিকার হয়ে যাবে।”

আবরার এতক্ষণ ধরে শান্ত থাকলে এখন মেজাজ ওর চড়া হয়ে যায়।রাগে বাম হাত দিয়ে ওর চুলগুলো মুঠো করে ধরে ডান হাত দিয়ে ওর মুখ জোরে চেপে ধরে বলে,
-“অনেক বেরেছো,নিজেকে কী ভাবো হ্যাঁ?অসুস্থ বলে কিছু বলবোনা সেটা যদি ভেবে থাকো তবে ভুল।এই কয়েক বছরে না হলেও এই কয়েকমাসে বুঝতে পেরেছো আমি ঠিক কেমন ছেলে?আর কথার খেলাফ হওয়া আমি পছন্দ করিনা।চুপচাপ তৈরি হয়ে নাও।”
-“আ আমি য যাবোনা আপনার সাথে।”
-“কোনো ব্যাপার না আমি তৈরি করিয়ে দেয় তোমাকে।তাছাড়াও এটা তো নতুন কোনো ব্যাপার নয় বলো,আগেই বলতে আমার হাতে রেডি হতে চাও বৌ।”

ইয়ারাবী ভীত চোখে চিৎকার করে উঠে বলে,
-“আমি পারবো।”
-“গুড গার্ল,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।আমার গার্লফ্রেন্ড আবার অপেক্ষা করছে।আগে তার সাথে দেখা করবো তারপর হাসপাতালে তোমাকে নিয়ে যাবো।”

কথাটা শুনে ইয়ারাবী ছলছল চোখে ওর দিকে তাকায় আর ভাবে,একটা মানুষ কতটা নির্লজ্জ হলে বৌয়ের সামনে এমন কথা বলতে পারে।কাজী নজরুল ইসলাম ঠিকই বলেছিলেন-”মৃত্যুর যন্ত্রনার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন, কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে”।এসব ভাবনার ভিতরেই আবরার হুট করে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
-“অনেক বকেছি নাও এবার একটু আদর করে দিলাম।আর হ্যাঁ,এভাবে কেঁদোনা সুইটহার্ট,খুব খারাপ লাগে যে।ওহ্ বড্ডো দেরি করছো,যাও তৈরি হয়ে আসো।”

(২১৮)

মি.ফুয়াদ অফিস থেকে সবে মাত্র বাড়িতে ফিরতেই দেখেন উনার স্ত্রী সোফায় মন খারাপ করে বসে আছেন।ইয়ামিলাও চুপ করে বসে আছে,আজ বাড়িতে থমথমে পরিবেশ।মি.ফুয়াদ চিন্তিত মুখে ড্রইংরুমে ঢুকে কাঁধের ব্যাগটা সোফায় রাখতেই ইয়ামিলা এসে জড়িয়ে ধরে বাবাকে।মি.ফুয়াদ মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতেই ইয়ামিলা বলে উঠে,
-“আচ্ছা আব্বু,তুমি কখনো এভাবে আপুকে আদর করেছো?জানো আব্বু,আপু বলে অসুস্থ হয়ে গেছে।রাতে কান্না করে,আপুর একা লাগে সব সময়।”
-“কে বললো এসব কথা তোমায় আম্মু?”

মি.ফুয়াদ অবাক হয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করতেই মিসেস ইশানি স্বামীর সামনে এক গ্লাস পানি দিয়ে বলেন,
-“আজ কিছু পিঠা বানিয়ে ছিলাম তাই মেজ আপার বাড়িতে দিতে গেছিলাম।তিন ভাই একসাথে আছে,মা নেই।তাই যেয়ে কথা বার্তা বলছিলাম,এর মাঝেই গল্পে গল্পে ইফাজ কথাটা বলে উঠে।আবার মানষিক সমস্যাটা নতুন করে বেড়ে উঠেছে ওর।”
-“কী বলছো এসব?জামাই নিজে ওর ট্রিটমেন্ট করছিলো তাহলে আবার কেন?”

মিসেস ইশানি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,
-“জামাই কিন্তু এটাও বলেছিলো,সমস্যাটা একবারে সেরে উঠবেনা।সময় লাগবে,একটু বেখেয়ালি হলে আবার শুরু হবে।আর মেয়েটা ওখানে একা,প্রচুর পড়ার চাপ মাঝে মাঝে ঔষধ খেতে ভুলে যেত তাই।”
-“কিছুই তো বুঝতে পারছিনা,মেয়েটাও তো কথা বলেনা আমাদের সাথে?ওই জামাই জোর করে মাঝে ভিডিও কলে কথাটা বলিয়ে দেয়।বলার মধ্যে শুধু সালামটা দেয়।”
-“আজকাল খুব মনটা খুব পুড়ে মেয়েটার জন্য।আচ্ছা ফুয়াদ মেয়েটা ভালো আছে তো?শুনেছি জামাই খুব রাগী,একবার তো গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিলো যার জন্য ইরাক ওকে ঝামেলা করে নিয়ে আসে।কিন্তু এখন মেয়েটাতো একা।আর মেজো আপা,য়ুহার মারা যাওয়ার পর থেকে কেমনটা এলোমেলো হয়ে গেছে সব।”

মি.ফুয়াদ স্ত্রীর কথা শুনে বলেন,
-“এই আমরাই কিন্তু কয়েক বছর আগে এসবের কিছুই ভাবতাম না।মেয়েটাকে ভালোবাসতে যেয়েও বাসতে পারিনি।আদর করার বদলে অবহেলা করতাম।ওইদিন ও ঠিকই বলেছিলো, হারিয়ে ফেললাম মেয়েকে।আর জামাই,চিন্তা করতে হবেনা আমাদের।ওর জন্যই নতুন জীবন পেয়েছে ইস্মা মা।”

ইয়ামিলা বাবার মুখে হাত রেখে বলে,
-“আপুতো অভিমান করেছে তোমাদের উপরে, তোমরা জানোনা।আমি যেমন অভিমান করলে তোমরা চিপস্, চকলেট,গিফ্টস্ কিনে দাও ওমন তো আপুকে দিয়ে মান ভুলাওনি।তাই আপুর বেশি রাগ তোমাদের উপর।এবার আপু এলে বেশি বেশি ভালোবাসা দিবে তোমরা,দেখবা আপুর মন ভালো হয়ে যাবে।আর তখন আপুও আমার মতো তোমাদের দুই জনকে জ্বালাবে,দুষ্টুমি করবে।”
-“আমার আম্মুটা দেখি সব বোঝে।”

বলেই মি.ফুয়াদ ইয়ামিলাকে দুইটা চকলেট দেন।ইয়ামিলা চকলেট দুইটা নিয়ে দৌঁড়ে নিজের ঘরে চলে যায়।মি.ফুয়াদ টাই খুলতে খুলতে রুমে ঢুকে খাটের উপরে বসে পরেন,তারও মনটা আজ ভালো নেই।নিজের করা মেয়ের প্রতি অন্যায়গুলো আজ সকাল থেকেই দল বেঁধে হানা দিচ্ছে মস্তিষ্কে।মেয়েটাকে কখনো ছয় বছর বয়সের পর থেকে আদর করে কোলে নেয়নি,না মেয়ের আবদারগুলো রেখেছে।আর তার মেয়েটাও সব থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতো।আর রাখবে নাই বা কেন?উনি আর উনার স্ত্রী যে ব্যবহার করতেন সে রকম ব্যবহার কেউ সৎ বাচ্চার সাথেও করেনা।কতটা নির্যাতন করেছেন মেয়েকে মানুষের কথায়,যে দোষগুলো না করতো সেইগুলোর জন্যেও মারতেন মেয়েকে।তার শাস্তিও পাচ্ছেন উনারা,মেয়েটা কখনো মুখ ফুঁটে বাবা-মা বলে ডাকেনা।মেয়েকেফোন দিলে বাহানা দিয়ে এড়িয়ে চলে যায়।মিসেস ইশানি স্বামীকে টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বলেন,
-“গোসল সেরে নাও,আমি খাবার দিচ্ছি।”
-“হ্যাঁ,দাও দাও।জানো আজ বস বলছিলো,রোযার ঈদে বলে মেয়েটা আসবে।আর দুই দেড় মাস মতো সময় আছে।”
-“সত্যি,তাহলে তো ইরাকরাও জানতো।কিন্তু বলেনি কেন?”
-“ওরা জানলে কী বলবে আমাদের?যা করেছি তার শাস্তি তো পেতে হবে।তোমার মনে আছে, একদিন মাগরিবের আযানের সময় বলেছিলাম ইস্মাকে,”তুই জাহান্নামি হবি।”জানো এখন নামাযে প্রতি ওয়াক্তে মেয়েটার জন্য দোয়া করি।আচ্ছা ইশা বাবা-মায়ের অভিসাপ কী লেগে যায় সন্তানদের?”

মিসেস ইশানি চোখের কোনের জল মুছে বলেন,
-“জানিনা গো কিছু জানিনা,আমিও তো কম কথা শোনায়নি মেয়েকে।এমন কী আজ মেয়েটা শুধু আমার জন্য মা হতে পারছেনা।মা হয়ে কত বড় সর্বনাস করেছি মেয়েকে।ও হবার পর ডাক্তার বলেছিলো,ওর সমস্যা আছে।এক্সট্রা কেয়ারে যেন রাখি,কিন্তু আমি নিজে হাতেই মেয়েকে শেষ করেছি।”

মি.ফুয়াদ নিঃশ্চুপ হয়ে স্ত্রীর কাঁধে হাত রাখেন, আসলে কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে।দেড় বছর আগে নিজের স্ত্রীর সত্য জানতে পেরেছিলেন আর তখন অনেকটা ভেঙ্গে পরেছিলেন উনি।বাবা-মায়ের দেওয়া আঘাতের উপহার স্বরুপ রোগ শরীরে বহন করে বেড়াচ্ছে মেয়েটা।মিসেস ইশানি স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ঘর থেকে বের হয়ে দোতালায় উঠে ইয়ারাবীর ঘরে ঢুকেন।আজকাল প্রায় উনি এই ঘরে বেশি সময় ব্যায় করেন,মেয়ের প্রতিটা জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে উপস্থিতি অনুভব করতে চান।ঘরের কিছুতে যাতে ধুলাবালি না পরে তাই নিজের হাতে সবকিছু পরিষ্কার করেন।আর ভাবেন যদি সব ঠিক থাকতো তবে আজ পরিস্থিতি এমন হতোনা।ইস্মিতা আর ইয়ারাবীর ফটোফ্রেমটা বের করে নিজের মনে বিরবির করে কিছু আওড়াতে থাকেন।

(২১৯)

আবরার গাড়িটা মিকের বাড়ির সামনে এসে থামায়,এতে ইয়ারাবী কিছুটা অবাক হয়ে যায়।কেননা পুরো রাস্তা আবরার নিজের প্রেমিকার সাথে দেখা করবে সেই বিষয়ে কথা বলে অস্থির করে তুলেছিলো ইয়ারাবীকে।বারবার বলেছে লেট হয়ে যাচ্ছে,এমনকী যাতে দ্রুত পৌঁছাতে পারে সেই জন্য অনেক ছোট রাস্তা দিয়ে এসেছে।আবরার গাড়ি থেকে নেমে আড়মোড়া ছাড়ে,ইয়ারাবী বেড় হয়ে আবরারকে কিছু বলতেই যাবে ঠিক সেই সময়ই মিক আর মিকের স্ত্রী মার্টি বাইরে এসে ওদের স্বাগত জ্বানায়।মার্টির কোলে তার ছেলে লুকাস রয়েছে,মার্টি ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি কেমন আছো?”
-“আলহামদুলিল্লাহ্‌,আমাদের সৃষ্টিকর্তা যেভাবে রেখেন ঠিক তেমন আছি।আপনি কেমন আছেন আর বেবী?”

মার্টি হাসি হাসি মুখে বলে উঠে,
-“আমরাও ভালো আছি ঈশ্বরের কৃপায়।”
-“আজ কী বাসায় কোনো পার্টি আছে?”
-“হ্যাঁ,তুমি কিছু জানোনা।আজ লুকাসের জন্মদিন, ডা.এআর তোমাকে জানায়নি।”
-“উনি কিছু বলেননি।”

মিক আবরারের পেটে ঘুষি দিয়ে বলে,
-“বন্ধু,তোমার প্রিয়তমাকে জানাওনি কেন?”
-“আসলে ওর মনটা ভালো ছিলোনা আর শরীরটাও ভালো নয়,তাই ভাবলাম তোমাদের এখানে এনে সারপ্রাইজ দিবো।”

ইয়ারাবী লুকাসের গালে হাত দিয়ে আদর করছে, বাবুটা আসলেই অনেক সুন্দর।ইয়ারাবী হঠাৎ করে নিজের মধ্যে শূন্যতা খুঁজে পায়।মনে মনে আওড়াতে থাকে,লুকাসের মতো যদি একটা বেবী ওদেরও থাকতো তবে আবরার আজ এমনটা করতোনা।ইয়ারাবী মার্টির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“একটু লুকাসকে আমার কোলে দিবেন?”

ওর কথায় মধ্যে একটা আকুতি ভরা কন্ঠস্বর ছিলো,যা মিক আর আবরার দুই জনেই বুঝেছে।মার্টি লুকাসকে ইয়ারাবীর কোলে দিয়ে ওদের ভিতরে নিয়ে যায়।মিক আবরারের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“কলে বলেছিলে সমস্যায় আছো,আমি কোলাহলপূর্ণ এলাকাতে ছিলাম তাই বুঝতে পারেনি।”

আবরার সুইমিংপুলের পাশের চেয়ারে বসে ওয়েটারের কাছ থেকে এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে পান করতে থাকে।মিক ওর ব্যাবহার দেখে বুঝতে পারে বিষয়টা জটিল,তাই ও আবরারের সামনে টেবিলে বসে পানীয় পান করতে করতে বলে,
-“কোনো জটিলতায় ফেঁসেছো নিশ্চয়ই।”
-“বলতে পারো,তুমি জানো এখানে আমার কাছের বন্ধু বলতে তুমি একজন।তাই তোমার সাথে সব কথা ভাগাভাগি করি।”
-“আমি সমাধানের চেষ্টা করবো,তুমি বলো।”

আবরার গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে বলে,
-“লন্ডনে ফিরে আসার এক সপ্তাহ পরে বিহানের মাধ্যমে জানতে পারি বিডির ল্যাবের সমস্ত পরিশ্রম দুই জনের জন্য বৃথা হয়ে গেছে।আমি এখান থেকে যতটুকু পারছি করছি আর বাকীটা ওরা সালাচ্ছে।তারপর এখানের ওই দুর্ঘটনা সেগুলো নিয়ে প্রচুর চাপে থাকতাম,তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইয়ুর ছোট ছোট ভুলগুলো নিয়ে প্রচুর বাজে ব্যবহার করতাম ওর সাথে।গত দুই মাসে খারাপ আচারণ বেশিই করে ফেলি, এর মাঝে ওর আবার সেই সমস্যাগুলো শুরু হয়ে যায়।”
-“আবার?বাট্ তুমি তো ওকে সুস্থ করেছিলে?”
-“সম্পূর্নটা হয়নি,মাঝে মাঝে ও রাগ করে ডোজ কম্পিলিট করেনা যার জন্য এই অবস্থা হয়েছে।আমিও ঠিকভাবে চাপের জন্য কেয়ার করতে পারতাম না।”
-“ওহ্হ্,কিন্তু এই সমস্যার সমাধান তোমাকেই করতে হবে।কেননা এইটা তোমার প্রফেশন।”

আবরার মৃদু হেসে বলে,
-“আসল সমস্যা এটা নয়,আসল সমস্যা আমার প্রেমিকাকে নিয়ে।”

কথাটা শুনে মিকের গলায় পানীয়টা আটকে যায়, অনেক কষ্টে নামিয়ে চোখ বড়বড় করে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-“এআর সাত বছর হয়ে গেছে,এখন তোমার প্রেমিকা কোথা থেকে আসবে।তোমার শেষ যার সাথে সম্পর্ক ছিলো সে কেরেন আর বর্তমানে ও এখন কানাডার বাসিন্দা।”

আবার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মিলোডি ফিরে এসেছে,আর তুমি জানো সে একজন ডাক্তার।গত দুই সপ্তাহ ধরে আমার সাথে ল্যাবে কাজ করছে।”
-“এক মিনিট,মিলোডি তোমার তৃতীয় প্রেমিকা ছিলো।আমরা যাকে এক্সটা অডিনারি পার্লার বলে ডাকতাম।যাই হোক,আসল ঘটনাটা বলো।”

আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মিলোডির স্বামীর সাথে ওর বিচ্ছেদ ঘটেছে,ওর বাচ্চা ওর মায়ের সাথে থাকে।কিন্তু গল্পটা হলো মিলোডি এই চৌদ্দ দিনে পরিচিতদের কাছে বলেছে ও আমার প্রেমিকা আর আমাদের গভীর সম্পর্ক আছে।ঠিক সেই কথা ইয়ুর কানে পৌঁছেছে।ও অসুস্থ,আমার আচারণটাও ঠিক যাচ্ছেনা ওর সাথে,এর ভিতরে এসব কথা শুনতে পায়।যার জন্য ওর মনে হচ্ছে ওর অক্ষমতার জন্য আমি ওর প্রতি তিক্ত হয়ে গেছি আর আমি আমার প্রমিকার জন্য বাজে ব্যবহার করছি।সত্য কিন্তু এর কোনোটাই নয়।”
-“এআর বোঝাও ওকে,একমাস আগে হাসপাতালে যখন চেকআপ করেছিলাম তখনও এতটা কাহিল লাগেনি আজ যতটা লাগছে।”

আবরার গ্লাসটাকে রাউন্ড সার্কেলে ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলে,
-“বোঝানো যেত যদি নিজের চোখে না দেখতো।”
-“মানে?কী দেখেছে ও?”

মিক অনেকটা কৌতুহল নিয়ে ওকে প্রশ্নটা করলে আবরার কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-“ছিঃ এসব কিছুই নয় মিক,নিজের চিন্তা-ধারা বদলাও।”
-“ওকে ওকে আমি এসব কিছুই ভাবছিনা।এখন বলো?”
-“দুই দিন আগে ও সত্যতা যাচাই করতে যায় আমার হাসপাতালে আর তখন ও আমাকে জুনের সাথে দেখে।”

মিক চোখ দুইটা বড়বড় করে বলে,
-“জুন আমার কাজিন।যার ট্রিটমেন্ট তুমি করছো।”
-“হ্যাঁ,ও ড্রাগ এডিক্টেড ওর ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে।ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে আর ও তোমাকে যেমন মান্য করে ঠিক তেমনি আমাকেও ভাই হিসাবে মান্য করে।তো সেদিন ও আমার সাথে দেখা করতে আসে,টিনেজার মেয়ে বেশি চঞ্চল।আমিও ওকে বোনের নজরে দেখি,তো ওর সাথে ইয়ু আমাকে দেখে ওকে মিলোডি ভাবতে থাকে।ও দেখে জুন আমার কাঁধে মাথা রেখেছে,হাত ধরে কথা বলছে।”

মিক বাম হাতের বৃদ্ধা আগুল দিয়ে ভ্রুর নিচে স্লাইড করে বলে,
-“ও আই সি,ও জুনকে মিলোডি ভাবছে।আর তোমার মনে তোমার স্ত্রী ব্যাতিত কোনো দ্বিতীয় মেয়ে নেই।তুমি ওকে বোঝাও শান্তভাবে।”
-“আর শান্ত,সোজা বিচ্ছেদে চলে গেছে ম্যাডাম।খাবার-মেডিসিন কিছুই নিতে চাইছেনা।কাল থেকে প্রচুর ঝগড়া করছে যা আগে কখনো করেনি।”
-“তো আমি কী করতে পারি?”
-“জুন এখন পাটিতে আছে,তুমি আমাকে সাহায্য করো সবটা জানাতে।ওকে বোঝাও,আমার ভয় ছিলো ও বিডিতে কাউকে বলে না দেয়।তবে আল্লাহর অশেষ রহমত যে ও কিছু জানায়নি।”

মিক মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে,
-“বন্ধুর জন্য সব করতে পারি,চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আবরার ওর কথায় হেসে দেয়,হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই বলে,
-“ওহ্হ্,বলছি একবার ইয়ুকে চেকআপ করতে হবে।আমার মনে হলেও সঠিক কী সেটা বুঝতে পারছিনা।”
-“কী হয়েছে?”
-“আই থিংন্ক ইয়ু প্রেগন্যান্ট।”

মিক খুশি হয়ে হেসে ওকে বলে,
-“কনগ্রাটুলেটস্ বন্ধু।”
-“আমি শিওর নই মিক,এক সপ্তাহ আগে টেস্ট করেছিলো কিন্তু নেগেটিভ আসে।”
-“তাহলে তুমি এটা বুঝলে কীভাবে?”
-“আমিও ডাক্তার তবে বিভাগ আলাদা।ওর ডেট মিস হয়েছে,কোনো কিছু খেতে পারছেনা।যা একটু খাচ্ছে বমি করে ফেলে দিচ্ছে,দুধ-ডিম সহ্য করতে পারছেনা।অনেক সময় কিটের রিজাল্ট ভুল হয়।আমি চেক আপ করলে আমার মনে হলো কিন্তু ভুলও হতে পারে।”

মিক হেসে বলে,
-“চিন্তা করোনা,হতে পারে এবার সত্যিই কিছু ভালো হতে চলেছে।”

আবরার কিছু একটা ভেবে চিন্তিত মুখে বলে,
-“সত্যিই কী ভালো হবে?”
-“জানিনা,তবে উপরে যিনি বসে আছেন উনি কখনো নিরাশ করেন না।ভরসা করো তোমার প্রভুর উপর,পার্টি শেষ হলেও আমি চেকআপ করবো।চলো ওইদিকে যেয়ে আগে সমস্যার সমাধান করি।”

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here