জীবন মানে তুমি পর্ব-৬১

0
3703

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬১

(২০৯)

রোজ ফিল্ড থেকে একটা রাউন্ড দিয়ে এসে ইরাকের পাশে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে বলে,
-“আমাদের সম্পর্কের কী কোনো শেষ নেই?না আছে শুরু না আছে শেষ?আপনি কী আদেও আমাকে ভালোবাসেন স্যার?”
-“ডিউটির সময় অযথা কথা আমার পছন্দ নয় মিস রাজিয়া।”

ইরাক কথাটা বলে কফির মগে চুমুক দিয়ে একটু সামনের দিকে এগিয়ে দাঁড়ায়।রোজের খুব খারাপ লাগে ইরাকের এই ব্যবহার।গত দুই মাস ধরে রোজের সাথে এমন ব্যবহার করে আসছে ইরাক, না আগের মতো হাসে,না কথা বলে।শুধু এই নয় তেমন একটা শক্ত প্রকৃতির মানুষ হয়ে গেছে, সবচেয়ে বেশি কঠিন ব্যবহার করে গত দুই সপ্তাহ ধরে।দেখেই মনে হচ্ছে ওর মন ভালো নেই,কিন্তু কী হয়েছে?সেটা রোজ প্রশ্ন করলেই ইরাক এড়িয়ে চলে যাচ্ছে।

রোজ এখন আর সহ্য করতে পারছেনা এই অবহেলা,কেমন অপরিচিতার মতো ব্যবহার করছে ওর সাথে।রোজ অনেকটা সাহস জুগিয়ে ইরাকের কাছে যেয়ে বলে উঠে,
-“স্যার কাইন্ডলি বলবেন আপনার কী হয়েছে?নাকী আপনার লাইফে নতুন কারোর আগমন ঘটেছে যার জন্য আপনি আমাকে অবহেলা করছেন?”
-“দেখুন মিস রাজিয়া,অহেতুক ফালতু কথা বলে মাথা গরম করবেন না।এমনিতে মন-মেজাজ ঠিক নাই।”
-“সেটাই জিজ্ঞেস করছি,কী হয়েছে আপনার?”
-“রো…রাজিয়া ভুলে যাবেন না আমি আপনার সিনিয়র।আর সিনিয়রের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা আপনি জানেন?”

রোজের মনটা আরো খারাপ হয়ে যায় ইরাকের শক্ত জবাবে।মুখ লটকিয়ে বলে,
-“দুঃখীত স্যার,আসলে আমি কয়েকদিনের জন্য ভুলে গেছিলাম আমি আপনার যোগ্য নয়।ক্ষমা করবেন আমার ব্যবহারের জন্য।”

কথাটা বলে রোজ সামনের দিকে দৃষ্টি রাখে।আর ইরাক কফির মগে চুমুকটুকু দিয়ে ভাবতে থাকে নিজের এই কয়েকমাসের ব্যবহারের কথা।আসলে পরিস্থিতি ওকে এরূপ বানিয়ে দিয়েছে।ও ডান হাতে পরা ঘড়িতে সময় দেখে পকেটে ঢুকিয়ে বাম হাতের কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
-“স্যরি।”

রোজ সামনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ইরাক বলে উঠে,
-“তুমি জানো আমি পরিবারের বড় ছেলে।আম্মু নেই আমার,শুধু বাবা আছে।ছোট ভাইগুলোর জীবন ঠিক করে না দিয়ে নিজেরটা কীভাবে করি বলতো?ইফাজের পুরো স্বপ্নটা যে শেষ হয়ে গেছে, ওর কাছে হাজার জানতে চাইলেও বলছেনা ওর পরবর্তী পরিকল্পনা কী?বারবার শুধু বলছে,ভাইয়া যা হওয়ার ঠিক সেটাই হবে,চিন্তা করোনা।
চিন্তা কী আর এমনি করি?ওর মুখে হাসি থাকলেও বুঝি ওর ভিতর কী হচ্ছে?আর ইমন অ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভেঙে বসে আছে।আব্বু এসবের কিছুই জানেনা।আম্মু থাকলে চিন্তা করতাম না কিন্তু এখন আম্মু নেই।তুমি জানো গত ইদে য়ুহার-শৈল মারা যাওয়ার পর থেকে মামা প্রচুর অসুস্থ,পরশু আবার স্টোক করেছে।নিলয় ফোন করে শুধু কান্না করে।”
-“চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন।আচ্ছা আপনার বোন কেমন আছে?”

ইরাক মৃদু হেসে বলে,
-“ভালো আছে,প্রতিদিন এখানকান সময় রাত সাড়ে এগারোটায় ফোন করে কথা বলে।”
-“দেশে কবে আসবে?শুধু ফোনে কথা হয়েছে কখনো সরাসরি দেখিনি ওকে।”
-“আসার সময় হলে আসবে,ওখানে যেয়ে মেডিকেলে নতুন করে পড়ছে।শেষমেশ আবরারের উসিলায় স্বপ্নটা পূরন হলো ওর।”
-“স্বামী যদি ভালো হয় তবে স্ত্রী সুখেই থাকে।”

ইরাক মুচকি হেসে বলে,
-“দুঃখীত,মন-মেজাজ ভালো নেই তাই এই কয়েকদিন এমন ব্যবহার করেছি।”
-“ইটস্ ওকে স্যার।”
-“এখন ডিউটি টাইম,লান্চের সময় কথা হবে।”

কথাটা বলে ইরাক সামনের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়,রোজ আনন্দে লাফ দিয়ে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে নিশ্চিত হয় কেউ খেয়াল করেছে কীনা।আসলে আনন্দে ও ভুলে গেছিলো ও ডিউটিতে আছে।আর আনন্দটা হলো অাজ অনেকদিন পর ইরাক ওর সাথে কথা বলেছে আর সেটা মনখুলে।আগে রোজের রাগ লাগলেও এখন বুঝতে পারছে ইরাকের দিক থেকে ঠিক ছিলো, কেননা মা হারা পরিবারের বড় সন্তানরা কখনই চাইবেনা ছোট ভাইদের আগে নিজের সংসার সাজাতে।

আসলে ছেলেদের জীবন এমনি,বাইরে থেকে নারিকেলের মতো শক্ত তো ভিতর থেকে নরম।
যাকে পরিবারকে বোঝাতে হবে না তারা কি চাচ্ছে,কি লাগবে,কি করবে?যাকে তাদের কিচ্ছু বলতে হয়না,বলার আগেই সে সব বুঝে যাবে সব।
তবুও সে পরিবারকে বুঝতে দেয়না তার অনুভূতি, সে বুঝতে দেয়না তার কষ্টটা।সে শুধু অভিনয় করে যায়,সে কিছুই বোঝেনি।কী অদ্ভুত না?

রোজ কথাগুলো ভেবে সামনে পাশে রাখা ফাইলে একবার চোখ বুলিয়ে সাইন করে দেয়।

(২১০)

দুপুরের দিকে অনু টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে ঠিক এমন সময় ওর ঘরের কলিংবেল বেজে উঠে।অনেকটা বিরক্ত নিয়ে গ্লাস থেকে পানি পান করে উঠে বেসিনে হাত ধুঁয়ে গেইট খুলে দেখতেই অবাক।কেন তার সামনে স্বয়ং ওর বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে,যাদের কীনা আজ আসার কথা নয়।অনু কিছুটা অবাক হলেও লম্বা হাসির রেখা টেনে উনাদের ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয়।উনারা সোজা যেয়ে সোফার উপরে বসেন।উনাদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে কিছু বিষয় নিয়ে গম্ভীর ভাবে চিন্তা করছেন।অনু উনাদের সামনে বেতের মোড়ার উপর বসে খুকখুক করে কেশে বলে উঠে,
-“তোমরা ফ্রেস না হয়ে বসে আছো কেন?আর আসবে সেটা আগে জানালে কী হতো?রান্না করে রাখতাম তোমাদের জন্য।কখন বের হয়েছো তোমরা?”

অনুর বাবা গম্ভীর স্বরে বলে উঠেন,
-“শুনলাম কোন একটা ছেলে বলে প্রায় তোমার ফ্ল্যাটে আসে?”

অনুর ভ্র কুচকে যায়,ও নড়েচড়ে বসে বলে,
-“তুমি জানলে কোথা থেকে?”
-“আমি সেটা জানতে চাইছি সেটা বলো?”
-“হ্যাঁ,আসে তো আর সেটা তোমরাও জানো এবং ছেলেকে চেনোও।”
-“আমরা জানি?”

অনুর বাবা-মা অনেকটা অবাক হয়ে কথাটা বলে উঠেন।কেননা অনুর এই স্বাভাবিক ব্যবহার উনারা কাম্য করেছিলেন না।কারণ গতকাল দুপুরে পাশের ফ্ল্যাটের গৃহকর্ত্রী মাজিদা অনুর মাকে ফোন করে কিছু কথা শুনান।অবশ্য উনার কাছে অনুর মায়ের নাম্বার ছিলোনা,কিন্তু গতবার অনেক অাগ্রহ দেখিয়ে মহিলাটি নাম্বার নিয়েছেন।আর অনুর মাও মেয়ের খোঁজ-খবর এবং সুবিধা-অসুবিধার জন্য মহিলাকে নাম্বার দিয়ে দেন।কিন্তু ভাবতে পারেননি উনি এমন কোনো কথা বলতে পারেন।আসলে মিসেস মাজিদা ফোন করে লম্বা সালাম দিয়ে বলেছিলেন,
-“বৌদি মেয়ের তো একা রাখেন তা কিছু কী জানেন?দেখেন আপনার মেয়েকে?”
-“কী হয়েছে ভাবী?অনু আবার কী করেছে?”

অনেকটা উত্তেজিত হয়ে কথাটা বলে উঠেন অনুর মা,উনার মাথায় হাজার নানা খারাপ চিন্তা এসে ভর করেছে।মিসেস মাজিদা গলা ঝেড়ে আবার বলতে শুরু করেন,
-“বৌদি দেখেন অনুকে আমি আমার নিজের মেয়ের মতো মনে করি,তার খারাপ কখনো চাইবো না আমি।”
-“কী হয়েছে সেটা তো বলবেন?”

মিসেস মাজিদা একটু ন্যাকা সুরে বলে উঠেন,
-“আর বলেন না বৌদি,অনুকে তো নিজের মেয়ের মতো দেখি।তাই দেখতে হয় বাসায় কে আসলো আর গেলো।”
-“দেখুন ভাবী আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা।”
-“আরে বৌদি সেটাই তো বলছি।শুনেন তো,আগে একটা-দু’টা মেয়ে আসতো সেই সাথে ছেলেরা আসতো জানতাম স্ট্যাডি করতো।আর একটা মেয়ে ধরতে গেলে রোজ আসতো কিন্তু এখন আর আসেনা তেমন একটা।আর আসলেও থাকেনা সেই মেয়েটা যেমন আগে থাকতো।”
-“ও হ্যাঁ হ্যাঁ,চিনি মেয়েটাকে।ওর নাম তো ইয়ারাবী, কিন্তু কী হয়েছে ভাবী?”
-“আরে বিষয়টা মেয়েটাকে নিয়ে নয়,বিষয়টা একটা ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই আসে এখানে।”
-“ও মনে হয় মেঘের কথা বলছেন,ভাবী ও আমার মেয়ের খুব ভালো বন্ধু।”

মিসেস মাজিদা বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন,
-“আরে আমি ওই মেঘ-বাদলের কথা বলছিনা।ওকে তো আমি চিনি।আমি বলছি ফর্সা করে উচু-লম্বা একটা ছেলের কথা।”
-“ছেলেটা কী প্রায়ই আসে?”
-“না না তেমন না,মাঝে মাঝে আসে।দুই বার ফ্ল্যাটে আসছে,আর সাত বার গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে,ঘুরতে গেছে।আরে বৌদি জানেন না আপনার মেয়েতো ওই ছেলের সাথে ঘুরতেও যায়,ফোনে কথাও বলেছে।”

অনুর মার হঠাৎ করেই কিছুটা বিরক্ত লাগে মহিলার উপরে,কেননা ঘুরতে যাওয়া ঠিক আছে সেটা চোখে পরতে পারে। তবে ফোনে কথা এটাও উনি দেখেছেন,অতিরিক্ত বলছেন মিসেস মাজিদা, কিন্তু অনুর মা উনাকে আর কথার পিঠে কথা বলেন না।শুধু ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে কল কেটে ওই রাতেই স্বামীকে নিয়ে বেড়িয়ে পরেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।

অনু ওর বাবা-মাকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠে,
-“তোমরা চুপ করে আছো কেন?”
-“বলো ছেলেটা কে?”
-“মেঘ ছাড়া আর কেই বা হবে?জানো আজ সকালে ভার্সিটিতে যেয়ে ক্লাস হয়নি,তাই এসে কেবল গিলে চলে গেলো।তুমিতো জানো ও কেমন ছেলে।কিন্তু আজ হঠাৎ কেন বলছো তোমরা?”
-“আমরা মেঘের কথা জানতে চাইছিনা।আমরা ওই ছেলের কথা জানতে চাইছি যে দুইবার তোমার ফ্ল্যাটে আর সাতবার তুমি তার সাথে গেইটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলে।”

অনু মাথায় হাত দিয়ে চোখ দু’টো বড় বড় করে বলে,
-“বাপরে বাপরে বাপ!তোমরা এতো হিসাব কেমনে রাখো?আর তুমি এতো কীভাবে জানলে?কোনো ক্যামেরা ফিট করছো নাকী?”

অনুর মা কিছুটা রেগে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কেন?তোমার পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলা মিসেস মাজিদা ভাবী আমাকে জানালেন।কথাটা ঠিকভাবে বলো,আর কী ভেবেছিলে?তোমাকে একা রাখি বলে যা খুশি তাই করে বেড়াবে।”

অনু এবার মোড়া থেকে উঠে লাফ মেরে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
-“তুমি ওই কুটনৈতিকবাজ মহিলাকে কীভাবে ভদ্র বলো?”

অনুর বাবা রেগে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“এসব কী বলছো অনু?এমনভাবে ভদ্র মানুষকে কেউ অপমান করলে পাপ লাগে।”
-“আরে আমার বাপ রাখো তোমার পাপ।তুমি জানো ইয়ু আমার বাসায় এসে থাকতো সেটাতেই উনি যা ব্যবহার করতেন,একবার উনি আমার ফ্রেন্ডের সামনেই ঝগড়া করা শুরু করেছিলেন।উনার ভাষ্যমতে আমি একা থাকি একাই থাকবো, বাইরের মেয়ে কেন আসবে?আর কীসব ভাষা যে দিয়েছিলেন,এই জন্যই তো আমি উনার থেকে দূরে থাকি।আর রইলো সেই ছেলেটার কথা,আমি আরো কয়েকদিন পরে তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম।”
-“কে সেই ছেলে অনু?তুমি কিন্তু….”
-“বাবা একবার ভুল করেছি বলে বারবার করবো সেই মেয়ে আমি নই।আর হ্যাঁ,যে দিগন্ত আমার সাথে বেইমানি করেছিলো,সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাস করেছিলো।আজ এই ছেলে তাকে জেলের কাল কুঠরিতে ঢুকিয়েছে যাকে তোমরা আটকাতে পারোনি।সমাজের লোকের ভয়ে করতে দাওনি কিছু।”
-“আমি সেটাই জানতে চাইছি কে ছেলেটা?”

অনু এবার ওর বাবার হাত ধরে বলে,
-“বাবা ওর নাম প্রত্যয়,একজন আর্মি অফিসার।ইয়ারাবীর ভাইয়ার ফ্রেন্ড।”

অনুর বাবা প্রথমে রেগে থাকলেও যখন শুনলো ছেলে একজন আর্মি অফিসার এবং পরিচিত তখন একটু দমে গেলেন উনি।কিছুটা নরম সুরে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
-“তুমি চিনলে কীভাবে?আর ইস্মা জানে তোমাদের ব্যাপারে?”

অনু খানিকটা মুচকি হেসে বলে,
-“ইয়ুর বিয়েতে দেখা আর সেখান থেকেই,আর ইয়ু শুধু জানে আমরা প্রায় দেখা করি বাট্ জানেনা যে আমাদের……..।বাবা ও খুব ভালো।”
-“পরিবারে কে কে আছে?তোমাদের ব্যাপারে জানে ওর পরিবার?”
-“বাবা,ওরা দুই ভাই এক বোন।ওরা দুই ভাই জমজ,ওর ভাইয়ের নাম প্রাপ্ত।একজন ডাক্তার,বারো-তোরো বছরের বোন আছে নাম ফিলা।ওর বাবা-মা আর বোন বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে থাকেন আর ওর দাদা-দাদী এখানেই থাকে।প্রত্যয় খুব ভালো ছেলে বাবা,ও আমার ব্যাপারে সব জেনে তারপরও ছেড়ে যায়নি।”

অনুর বাবা উনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“আমি আর কী বলবো বলো?যেখানে তোমার মেয়ে সবটা বুঝা শিখেছে,যদি আগের মতো কিছু হতো তবে শাসন করতাম কিন্তু এবার কোনো ভুল করেনি।”
-“সেটাই তো দেখছি।হ্যাঁ রে অনু,তুই আবার ওই বাড়িতে একা যাসনি তো?”

অনু ওড়নার কোনা আঙ্গুলে পেঁচিয়ে লাজুক হেসে মাথাটা নাড়িয়ে বলে,
-“ও নিয়ে গেছিলো,আমিতো আগে বুঝতেই পারিনি।”
-“হ্যাঁ রে,ওর মা কেমন?”
-“মা ওর মা আগেই মারা গেছে।কিন্তু ওর সৎ মা অনেক ভালো,উনি একজন ব্রিটিশ লেডি।সেই সূত্রে ফিলাও বিদেশি।”
-“ও সে কী কথা?কীভাবে মারা গেলো?”
-“জন্মের সময়।”
-“বেচারা,হ্যাঁ রে ওকে একবার আসতে বল বাসায়।”
-“মা ওতো ক্যাম্পে ফিরে গেছে।যদিও ঢাকাতেই তবুও খুব ব্যাস্ত আছে।ফ্রি হলে ফোন করে কথা বললে আমি জানাবো মা।”
-“ঠিক আছে,আসলে আমাদেরই ভুল।একজনের কথায় এভাবে ব্যবহার করা উচিত হয়নি।তাছাড়া তুই নিজেই আমাদের বলতিস।”
-“আচ্ছা,বাদ দাও তো।কোনো ব্যাপার না, আজ কিছু স্পেশাল রান্না করো।আমি সব ফ্রেন্ডের দাওয়াত দিবো।”
-“ঠিক আছে আম্মাজান।ওই শোন ইস্মার সাথে কথা হয় তোর।”
-“হ্যাঁ,রোজ কথা হয়।শেষ পর্যন্ত ওর স্বপ্ন সত্যি হলো,এখন সব সময় খুশি থাকে।”
-“ভগবান কৃপা করছে,মেয়েটা যা মায়াতে ভরা যাকে ভালো না বেসে থাকতে পারেনা।আর তুই তো বললি ছেলে ওর খালামনিদের পরিচিত।”
-“হ্যা,মা জিজু খুব ভালো।একজন সাইক্রেটিস তাই সবটা বুঝে তাই সমস্যা হয়না।”

অনু কথাটা বলে ফ্রিজ খুলে জুসের বোতল বের করে সেটাতে মুচকি হেসে হেসে চুমুক দিতে দিতে ঘরের ঢুকেই বুকে হাত রেখে লম্বা শ্বাস নিতে থাকে।আসলে ওর মনে ভয় ছিলো কেননা ওর বাবা-মা প্রচুর গম্ভীর মুখে ছিলো।তবুও ও বুকে সাহস নিয়ে প্রতিটা কথা বলেছে।কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো ভেবেই অনু দ্রুত ফোনটা হাতে উঠিয়ে কারো নাম্বারে ঘটনাগুলো লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে।

(২১১)

সকাল সাতটা বাজে,মাথার কাছে এলার্ম অনাবরত বেজেই চলছে।ইয়ারাবী চাদরের ভেতর থেকে বিড়ালের মতো মাথা উঠিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে এলার্ম বন্ধ করে আবার চাদরের ভিতর ঢুকে যায়।চোখে ঘুম ভর করে আছে,তাই নিজের মতো আবার ঘুমিয়ে পরে।কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পরে মনে হয় কেউ মুখের উপর হালকা পানির ছিটা দিচ্ছে।বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে দেখে আবরার জগিং ছুটে ওর দিকে কিছুটা রাগি চেহারা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবী ওর দিকে অনেক কষ্টে তাকিয়ে মুখে একটা ভুবন ভুলানো হাসি দেয়।আবরার ওর হাসিতে না গলে গায়ের থেকে চাদর টান মেরে সরিয়ে ওকে বসিয়ে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,
-“কী,কয়টা বাজে ম্যাডাম?ক্লাস আছেনা আজ?”

ইয়ারাবী চোখ ডলতে ডলতে ওর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,
-“আরেকটু ঘুমাই।”

বলেই বিছানায় জুড়ে শুয়ে পরে।আবরার ওকে আবার উঠিয়ে ধরে বলে,
-“আরেকটু ঘুমালে ক্লাস কখন করবে তুমি?”

ইয়ারাবী আবরারের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আপনার না আজ কোনো কাজ নাই,আমিও থাকিনা আজ বাসায় আপনার সাথে।”
-“গত তিনদিন ধরে খেয়াল করছি যে তুমি ক্লাসে যেতে চাইছোনা।কিছু হয়েছে নাকী?”
-“না না কী হবে?কিছুই হয়নি।আব…আপনার সাথে থাকতে ইচ্ছা করছে তাছাড়া প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

আবরার ওর নাক টেনে মুচকি হেসে বলে,
-“পাগলি,তুমি তো আমার সাথেই থাকো।ওকে আজ যেতে হবেনা,এমনিতে তোমাকে নিয়ে মিক এর সাথে দেখা করতে হবে।এসো তো যাওয়ায় হয়নি।”
-“ওকে তাহলে আপনি ঘুম দেন।”
-“না আমি ঘুম দিবো,না তুমি দিবে এখন।উঠে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও,তারপর যত ইচ্ছা ঘুমাবে।”
-“উহু…”
-“বকবো এবার,কাল রাতেও কিছু খাওনি।আমি বলেছিনা আগে নিজে খেয়ে নিবে,কিন্তু না করে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে।এসে দেখি তুমি কাউচে ঘুমিয়ে পরছো,তাই আর ডাকি নাই।”

ইয়ারাবী মুচকি হেসে ওর স্যুটের চেইন টানতে টানতে বলে,
-“একটা মানুষ বেঁচে থাকার জন্য,ভালোবাসার খুব বেশি প্রয়োজন।হোক না কথা-দেখা কম,কিছুটা অপেক্ষা,তবুও ভালোবাসাটা থাকুক, নিস্পাপ, সুন্দর, নিঃশ্বার্ত, ও পবিত্র এই রকম।আপনার প্রতি কখনো আমার রাগ-ঘৃনা আসেনা কারণ অসংজ্ঞায়িত ভাবে ভালোবাসি আপনাকে।”
-“জানি সেটা আমার পাগলি।আচ্ছা শোনো বিকালে তোমাকে নিয়ে একটা সুন্দর জায়গায় যাবো।”
-“কোথায় কোথায় কোথায়?”

ইয়ারাবী কথাটা অনেকটা উৎফুল্ল ভাবে বিছানা থেকে এক লাফে নিচে নেমে কথাটা বলতে থাকে। আবরার ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমার না ঘুম পাচ্ছে?”
-“ধুর,ঘুম চলে গেছে।আগে আপনি বলুন কোথায় নিয়ে যাবেন।”
-“আজ মিকের ওয়াইফের বেবি শাওয়ার হবে।সেখানেই নিয়ে যাবো।”
-“হুয়াট?উনি বিবাহিত….”

আবরার ওর কথায় মৃদু হেসে বলে মাথা নাড়িয়ে বলে,
-“তিন বছর হয়েছে ওদের,অবশ্য মিককে দেখলে বোঝা যায়না।ওর ওয়াইফ এক হাফ ব্রিটিশ কারন ওর বাবা ছিলো এক বাঙালি।ব্যবহার অনেক সুন্দর,পেশায় একজন ডিজাইনার।তুমি গেলে বুঝতে পারবে।”

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here