জীবন মানে তুমি পর্ব-৩৩

0
3979

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৩৩

(১১৫)

আবরার ইয়ারাবীকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।ইয়ারাবীও চুপচাপ ওর সামনে বসে খাচ্ছে।কেবল একটা পরাটা শেষ করার পর ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আর কত খাওয়াবেন?”

-“কেবল একটা ফিনিশ করছো,কমপক্ষে তিনটা শেষ করে তবে উঠবে।”

-“আর খাবোনা ঘুম পাচ্ছে,আপনি তো কিছু খেলেন না।”

আবরার মুচকি হেসে বলে,

-“আগে আমার সুন্নত আদায় করতে দাও,তারপর খাবো।”

-“আপনাকে কিছু বলা বেকার…”

-“এখন চুপচাপ বাকিটা খেয়ে নাও।”

আবরার ওকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।উপরে যাওয়ার আগে এমাকে এক গ্লাস গরম দুধ পাঠাতে বলে।ইয়ারাবী রুমে চুল বাধছে আর আবরার বিছানায় বসে ফোন স্ক্রল করছে।দরজায় নক পরতে আবরার তাকিয়ে দেখে এমা দুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,

-“কাম”

এমা দুধের গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলে,

-“আর কোনো সেবা করতে পারি?”

আবরার ইশারায় না করলে এমা রুম থেকে চলে যায়।ইয়ারাবীর দুধ দেখে আজ গা গুলিয়ে আসছে।আবরার ওর মেডিসিন গুলো বের করছে এমন সময় আবরারের ফোনে কল আসে।ফোনটা নিয়ে দেখে ইরাক ভিডিও কল করেছে।আবরার হেসে ফোনটা রিসিব করে বলে,

-“আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন ভাইয়া?”

-“ভাইয়া ভাইয়া লাগিয়ে রাখছে,পিচ্চি নিশ্চয়ই এখনো জেগে আছে তাইতো।”

-“ওয়াশরুমে গেছে…”

-“পিচ্চি সত্যিটা জানলে কী হবে তা জানিনা বাট্ তোর এই লম্বা করে ভাইয়া ডাকটা খুব ভয়ের লাগে।”

আবরার হাসতে হাসতে বলে,

-“আরে ভাইয়া,এত ভয় পেলে হয়।আপনি না আর্মি অফিসার।”

ইরাক চোখগুলো বাকিয়ে বলে,

-“গুড জোক্স,তুই যে কেমন সেটা আমরা ভালো করে জানি আর তোর বৌও।”

-“ভাইয়া এতো ইয়ারাবী চলে এসেছে,তোমার ইরাক ভাইয়ার কল করেছে।”

ইয়ারাবী টাওয়াল মুখ মুছে বেডে বসে ফোনটা নিয়ে বলে,

-“কল কেন করেছো?”

-“আজিব তো বোনকে বুঝি কল করা যাবেনা?”

-“না করা যাবেনা,কী হই আমি তোমার।এতদিনে ফোন কেন করোনি?”

ইরাক হেসে বলে,

-“পিচ্চিটা বুঝি এই জন্য রাগ করেছে।কিন্তু রাগ ভাঙবো কী দিয়ে?”

-“লাগবেনা কিছু,যাও ভাগো।”

আবরার ভাই-বোনের খুনসুটি দেখবে আর মুচকি মুচকি হাসছে।ইরাক ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তোর চেহারা এমন লাগছে কেন?”

-“জার্নি করেছি তাই,তুমিতো জানো আমি বাই এয়ার ট্রাভেল করতে পারিনা।”

-“মনে হয় তোদের ডিস্টার্ব করলাম।আসলে এখানে ছয়টা বাজে এন্ড ফ্রিও আছি তাই কল করলাম,তাছাড়া তোকে কিছু দেখাবো।”

-“কী ভাইয়া?”

-“আসলে,আমার এখানে একটা মেয়ে আছে।ওকে তোর কথা বলতাম,তাই তোকে দেখতে চাইছে।”

ইয়ারাবী একটা ভ্রু উঁচু করে সন্দেহের দৃষ্টিতে ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমাকে দেখতে চাইছে না অন্য কোনো কাহিনি আছে,বুঝি বুঝি…”

ইরাক একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

-“কী বুঝিস তুই,কেবল আঠারো..অতটাও বড় হসনি।”

-“সব সময় বয়স নিয়ে খোটা দাও কেন?এত অফমান,ছোট বলে কী সম্মান নেই।”

ইরাক কিছুটা অবাক হয় সাথে খুশিও, ইয়ারাবীর এমন কথা শুনে।কেননা আজ অনেক বছর পর ইয়ারাবী এমন করে কথা বলছে।ইরাক আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“আবরার দেখছো তোমার বৌ এর ড্রামা…”

আবরার হেসে বলে,

-“দেখলাম তো,তবে তোমার কথাটা একদম সত্যি।অতটাও বড় হয়নি,পিচ্চি এখনো আছে।”

ইয়ারাবী মুখ ফুলিয়ে বলে,

-“আপনি একদম কথা বলবেন না।আপনিও খারাপ,”

ইরাক হাসি থামিয়ে বলে,

-“তাহলে রোজ মানে রাজিয়ার সাথে কথা বল।”

ইয়ারাবী ইরাকের পাশে একটা মেয়েকে দেখে।উঁচু, লম্বা,ফর্সা,চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত,পরনে জগিং এর ড্রেস।ওর একটুও বুঝতে অসুবিধা হলোনা মেয়েটাও ওর ভাইয়ের মতো একজন আর্মি অফিসার।মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছো সোনা?”

ইয়ারাবী মৃদু হেসে বলে,

-“ওয়ালাইকুমুসসালাম,আলহামদুলিল্লাহ্ আপু।তু…আপনি কেমন আছেন?”

-“তুমি আমাকে তুমি করে বলতে পারো।আসলে তোমার ভাইয়ার কাছে রোজ তোমার কথা শুনতাম তাই তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি।”

-“আচ্ছা আপু,তুমি ফাইজা আন্টির মেয়ে না, রাজিয়া তাব্বাসুম যারা?”

-“হ্যাঁ,তুমি আমাকে চেনো?”

-“না,দুইবার খালামনির সাথে তোমাদের বাসায় গেছিলাম।ছবিতে দেখেছি তোমাকে,তুমিতো ক্যাডেটে পড়তে তখন।”

-“হ্যাঁ,জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।”

-“খুব ভালো বললে।”

-“তুমিও খুব ভালো,আমি তাহলে আসি কাজ আছে।”

-“ঠিক আছে আপু”

রাজিয়া যেতেই ইয়ারাবী বলে,

-“খালামনিকে বরণ ডালা সাজাতে বলি…”

ইরাক খানিকটা চমকিয়ে বলে,

-“পাগল হয়ে গেছিস,তুই যা মনে করছিস সেটা না…”

-“রাজিয়া থেকে রোজ,চালিয়ে যাও।আমি ঘুমাবো..”

-“তোর বরের কাছে ফোনটা দিয়ে ঘুমা,কথা বলবো।”

-“হ,ওরেই তো চাইবা।বোন তো কোন কালে পর হয়ে গেছে…”

-“আরেকবার বল লাস্টের লাইন,ঠাটিয়ে চড় দেবো ফাজিল মেয়ে”

-“পারবেনা,কেননা আমি তোমার সামনে নেই।লজিক অনুযায়ী কথা বলো,”

ইয়ারাবী আবরারকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে টেবিল থেকে মেডিসিনগুলো নেই।আবরার ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে অনেকক্ষণ কথা বলার পর রুমে এসে দেখে ইয়ারাবী ঘুমিয়ে পরেছে।টেবিলে তাকিয়ে দেখে মেডিসিন নিয়েছে কিন্তু দুধের গ্লাসে দুধ তেমনি আছে।আবরার হাতের ফোনটা টেবিলে রেখে দুধের গ্লাস নিয়ে ইয়ারাবীকে ডাকতে থাকে।ইয়ারাবী হালকা আড়মোড়া ছেড়ে বলে,

-“কী?”

-“দুধ খাওনি কেন?”

-“বমি আসছে”

-“রোজ রোজ এক কথা শুনতে ভালো লাগেনা, উঠো।”

-“আমিতো রোজ খাই,কিন্তু আজ খেলে সত্যি বমি করে দিবো।খেতে পারিনি বলে রেখে দিয়েছি…”

আবরার গ্লাসটা নিয়ে বাইরে বের হয়ে যায়।ইয়ারাবী খুব খুশি,ওর দুধ খেতে হবেনা।কিন্তু ওর খুশি দীর্ঘস্থায়ী হয়না,কেননা দু’মিনিট পরে আবরার দুধের গ্লাস নিয়ে রুমে ঢোকে ওর সামনে দিয়ে বলে,

-“এবার খাও,জানি একটু খারাপ লাগবে কিন্তু খেতে হবে।চিনি দিয়ে এনেছি…”

-“আমি মিষ্টি খেতে পারিনা।”

-“নো বাহানা…”

ইয়ারাবী এক রাশকষ্ট আর বিরক্তি নিয়ে দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে একবার দুধ একবার আবরারের দিকে তাকায়।আবরার চোখ রাঙাতেই শতকষ্টে দুধ খেয়ে নেয়।গা গুলিয়ে আসতেই বেড থেকে নামতে আবরার ওর হাত আটকে দিয়ে বলে,

-“কোথাও যাবেনা…”

-“খারাপ লাগছে..”

-“পানি খেয়ে নাও ঠিক হয়ে যাবে।”

ইয়ারাবীর পানি খেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে।আবরার গ্লাসটা রেখে এসে বিছানায় শুয়ে ইয়ারাবীকে নিজের বুকের উপরে নেয়।ইয়ারাবী ঘুমঘুম চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আবরার আমি যদি মারা যায় আপনি কী কাঁদবেন?”

কথাটা শুনে আবরার ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধমক দিয়ে বলে,

-“তোমাকে কিছু বলিনা বলে যা খুশি তাই বলছো, এমন স্টুপিড মার্কা আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।”

ওর ধমক শুনে ইয়ারাবী কেঁপে উঠে বলে,

-“স্ স্যরি,আসলে আমি….”

-“আর একটা কথাও বলবেনা,ঘুমাবে এখন।”

-“ব্যাথা পাচ্ছি…”

-“বলছিনা ঘুমাতে..”

ইয়ারাবী আর কথা না বলে ওভাবে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকে।এদিকে আবরারের চোখে ঘুম নেই,রাগ ওর মাথায় চড়ে বসেছে।ইয়ারাবী ঘুমিয়ে যেতেই ওকে বালিশে ঠিক করে শুয়ে দেয়। ফোন নিয়ে বেলকনিতে যেয়ে কাউকে ফোন দিয়ে বলে,

-“কাজটা হয়েছে বিহান?”

-“স্যার আপনার কথামত শুধু হাত-পা ভেঙে পুলিশে দিয়েছে।চিন্তা করবেন না,ম্যামের নাম সামনে আসবেনা।”

-“গুড জব,আইন নিজের হাতে তুলবোনা এই জন্য ওকে ছেড়ে দিয়েছিলাম।রেস্টুরেন্টের ঘটনায় কিছুটা আচ করতে পারছিলাম,আর পরবর্তীতে ও যখন আবার ইয়ারাবীকে ছবি দিয়ে ডিস্টার্ব করছিলো তখন সিওর হলাম।”

-“বেচারা মনে হয় ভুলে গেছিলো ওর ভাই একজন আর্মি।যারা অপরাধীদের খুব সহজে খুঁজে বের করতে পারে।”

আবরার খানিকটা হালকা হেসে বলে,

-“ওকে তাহলে রাখছি,সব কিছুর আপডেট দিতে থাকবে।”

ফোনটা কেটে দু’হাত রেলিং এ রেখে একটা লম্বা শ্বাস নেয়।অনেকদিন পরে শাওনের কৃতকর্মের সাজা দিতে পেরেছে তবে আফসোস নিজের হাতে দিতে পারলোনা।আরো অনেক কাজ বাকী,ইলার হত্যাকারীদের ধরতে হবে।জানতে হবে আসল রহস্য কী?কিন্তু একমাত্র সাক্ষী ইয়ারাবী যাকে কীনা নিজের বোনের খুনের দায়ে কালকুঠরিতে পাঠাতে ওর বাবা-মা দ্বিধাবোধ করলো না।আবরার বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে রুমে এসে ইয়ারাবীর মাথাটা নিজের বুকে নেয়।ইয়ারাবী ঘুমের ঘোরে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আবরার ওর কান্ড দেখে হেসে দেয়।

(১১৬)

রোজকার মতো আজও সকালবেলা ঘুম ভাঙে ইয়ারাবীর।তবে আজকের দিনটা ব্যাতিক্রম কেননা আজ শুক্রবার,আর প্রতি শুক্রবারে স্কুল বন্ধ থাকে।তবে বন্ধ বলে শুয়ে থাকলে তো চলবেনা।ইয়ারাবী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ওযূ করে নামায পরে নেয়।তারপর নয়টা পর্যন্ত পড়তে থাকে।মিসেস ইশানি রান্নাঘর থেকে একটা একটা করে ডিস টেবিলে রাখছেন।মি.ফুয়াদ রুম থেকে বের হয়ে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“মিনার মা কী আজ আসেনি?”

-“না,মেয়ের জ্বর এসেছে তাই…”

-“তোমার এই অবস্থায়,তুমি আমাকে তো ডাকতে পারতে।”

-“আরে কেবল দেড়মাস তো,তাছাড়া এটাতো আর প্রথম না।”

-“তারপরও কোনো রিস্ক নিতে চাইনা…”

-“জানো আমার মন বলছে মেয়ে হবে”

-“আমিও চাই,ইস্মা কোথায়?ব্রেকফাস্ট করবে না…”

মিসেস ইশানি মুখে বিরক্তি ভাব ফুঁটিয়ে বলেন,

-“তিনি তো নবাবজাদী,যতক্ষণ ডাকবো না তিনি আসবেন না।”

কথাটা বলে জোরে জোরে ইয়ারাবীকে ডাকতে থাকেন।ইয়ারাবী ব্লেড দিয়ে পেন্সিল কাটছিলো, এমন ডাক শুনে কেঁপে উঠে ওর হাত কেঁটে যায়।সাথে ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে উঠে।মি.ফুয়াদ মেয়ের আওয়াজ শুনে দৌঁড়ে উপরে যেয়ে দেখেন টেবিলের উপরে রাখা সাদা খাতাটা পুরে রক্তে ভিজে গেছে আর কয়েক ফোঁটা রক্ত সাদা টপসে্র উপরে পরছে।উনি ইয়ারাবীর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখেন বাম হাতের দু’টা আঙ্গুলের মাঝামাঝি ব্লেডটা গেঁথে আছে।উনি তাড়াতাড়ি মেয়ের হাত ধরে টান দেন।খুব আস্তে করে ব্লেডটা বের করে নেন।ব্লেড বের করার সময় ইয়ারাবী প্রচুর কাঁদতে থাকে।মি.ফুয়াদ মেয়ের হাতে ফুঁ দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মিসেস ইশানি এসে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বলেন,

-“ব্লেডে হাত কাঁটলো কীভাবে?চোখ কোথায় ছিলো তোর।”

ইয়ারাবী ব্যাথা আর কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না।মি.ফুয়াদ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“বেশি কথা না বলে কাবার্ড থেকে ফাস্টএইড বক্সটা দাও,অনেক রক্ত বের হয়েছে।”

-“ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে তো।”

-“কিছু হবেনা,মেডিসিন ঘরে আছে।”

মি.ফুয়াদ মেয়েকে বিছানায় বসিয়ে স্যাভলন নিয়ে জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে দেন।স্যাভলনের ঝাছে মেয়েটা আরো কান্না আর ছটফট করছে।মি.ফুয়াদ ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাজটা করতে থাকে।জায়গাটা ঠিক মতো পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন।কাঁদতে কাঁদতে চোখ দু’টা লাল হয়ে গেছে।মেয়ের চোখ মুছে দিয়ে স্ত্রীকে খাবার আনতে বলেন।মিসেস ইশানি খাবার নিয়ে আসলে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেন মেয়েকে।

ইয়ারাবীর যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সামনের সোফার ইরাককে বসে গেম খেলতে দেখে আর মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখে ওর খালামনি বসে আছে।ও নিজের খালামনিকে দেখে গায়ের থেকে চাদর সরিয়ে উঠতে গেলেই বাম হাতের আঙ্গুলে বারি লাগার সাথে সাথে,

-“আহ্হ্,আম্মু…”

-“কী হয়েছে আম্মু?ব্যাথা লেগেছে নিশ্চয়ই,সব সময় তাড়াহুড়ো…”

ইয়ারাবী ওর খালামনির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বলে,

-“বকছো কেন তুমি,মানুষ মাত্রই তো ভুল করে।যাকে বলে “ম্যান ইজ্ মরটাল”।আমার মতো একমাস পরে যার বারো বছর হবে এমন মেয়েতো ভুল করতেই পারে।”

ইরাক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ওর মাকে বলে,

-“তোমার মেয়ের ভাগ্য ভালো আজ চড় মারিনি ওকে।শুনো তো ওর কাছে,ওকে ভুলভাল ইংরেজি কে শিখিয়েছে?”

-“দেখো খালামনি,তোমার বড় ছেলে বকা দিচ্ছে।”

মিসেস রহমান কপোট রাগ দেখিয়ে বলেন,

-“ইরাক ফাজালামি করবিনা একদম।”

-“খালামনি,আম্মুনি কই ক্ষুদা লেগেছে।”

-“নিচে চল লান্চ করে নিবি।”

ইয়ারাবী ওনাদের সাথে নিচে যায়।মিসেস ইশানি সবার প্লেটে খাবার দেন।মি.ফুয়াদ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“ইস্মা তোমার হাতে কী এখনো ব্যাথা করছে?”

-“একটু একটু…”

ইশানি বোনের দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“দেখ আপু তোরা যাবি যা,ওকে কেন সাথে নিবে?তোমাদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।”

ইরাক খেতে খেতে বলে,

-“আমরা পারমিশন নিতে নয় আপনাদের জাস্ট জানাতে এসেছি।”

মিসেস রহমান ইয়ারাবীকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে দিতে বলে,

-“ইরাক ভদ্রভাবে কথা বলো।আর ইশানি আমি যখন বলেছি তখন ও যাবে।তাছাড়া কাল থেকে তো ভ্যাকেশন চালু হয়েছে।”

মি.ফুয়াদ ওর খালার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আপা আমাদের কোনো সমস্যা নেই,যাক ঘুরে আসুক।এমনিতেও ইশানি প্রেগন্যান্ট,ইস্মার ভ্যাকেশনের মধ্যে এক্সটা কেয়ার করার সম্ভব নয়।”

-“বাহ বাহ্,তোমরা যে মেয়ের কেয়ার করো সেটা শুনে মনটা পুরো জুরিয়ে গেলো।”

ইরাক ওর মায়ের কথা শুনে মিটমিট করে হাসে।ইশানি বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“দেখ আপু,তুই এমনভাবে বলছিস যেন আমরা কিছু করিনা।আমরা ওর বাবা-মা,ওর ভালো-মন্দ বু্ঝি।”

-“কেমন বু্ঝিস সেটা আমরা জানি।তার জন্য তো দুই বছর আগে দুধের বাচ্চাকে কালকুঠরিতে পাঠাতে চাইছিলি।তুই তো মানু্ষের মধ্যেই পরিস না।”

ইয়ারাবীর ওর খালার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আম্মুনিকে বকছো কেন তুমি?আর যাবে কোথায় তোমরা?”

-“তোর খালু কাল বাসায় এসেছে,তাই ছেলেরা জিদ করছে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে।”

-“ওহ্হ্,”

খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে ওর নিজের রুমে যায়।ইরাক ফুয়াদের সাথে পড়াশোনা নিয়ে কথা বলছে,ইশানি ঘরে এসে মেয়েকে বলেন,

-“যাচ্ছিস ভালো কথা,তবে কোনো সমস্যা যেন না হয়।”

ইয়ারাবী মাথা নাড়ায়।মিসেস রহমান রুমে ঢুকে বলেন,

-“কীরে তোর হয়নি আম্মু?”

-“এইতো কাপড় গুছিয়ে…”

-“লাগবেনা,ওই বাসায় তোর জামা কাপড় থেকে শুরু করে সব আছে।চল এখন…”

ইয়ারাবী একটা প্যান্ট আর গেন্জি গলায় স্কার্ফ আর চুলে ব্যান্ড পরে রেডি হয়ে নিলো।ওর খালা একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে,

-“ঘড়ি কোথায় তোর,আজকাল তো ঘড়ি পরতে দেখিনা।”

-“ভ্ ভালো লাগেনা তাই,চলো চলো দেরি হয়ে যাবে।”

-“আরে যাচ্ছি,পাগলী একটা।”

ইয়ারাবী হেসে বলে,

-“আমিতো পাগলীই খালামনি,সবাই তো জানে।”

কথাটা শুনার সাথে সাথে ওনাদের দুই বোনের চেহারা বদলে যায়।মিসেস রহমান ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তুমি ভাইয়ার সাথে যেয়ে গাড়ীতে বসো,আমি এখনি আসছি।”

ইয়ারাবীর খালার কথা শুনে নিচে নেমে যায়।কিছুক্ষণ পরে ওর খালা আসে,তবে ওর মায়ের মুখটা কালো হয়ে ছিলো।যা দেখে বুঝা যাচ্ছে ওর খালা ওর মাকে কিছু বলেছে।আধাঘন্টার মধ্যে ওরা ওর খালার বাসায় পৌঁছে যায়।বাসায় পৌঁছেই ওর এদিক-সেদিক ছুটাছুটি শুরু।পরদিন ওরা বাই এয়ার অর্থাৎ আকাশ পথে প্লেনে কক্সবাজারে পৌঁছায় তবে ততটুকু সময়ে ইয়ারাবী প্রচুর অসুস্থ হয়ে পরে।পুরো একদিন ওরা হোটেল থেকে বের হতে পারে।ইয়ারাবী ওর খালার কোলে মাথা রেখে বলে,

-“এজন্য আম্মুনি নিষেধ করছিলো,অাসলে আমার জন্য তোমরা পুরো একটা দিন মজা করতে পারোনি।আর তুমি আম্মুনিকে শুধু শুধু বকলে।”

-“মার দিবো,বেশি বুঝা শিখেছিস..তুই আসলে আনন্দটাই মাটি হয়?”

ওরা তিনদিন কক্সবাজারে মজা করে তারপর ঢাকায় ব্যাক করে।ঢাকা এসেই ওরা নিজের বাসায় যায়।ওর খালা আরো কিছুদিন থাকতে বলেছিলো কিন্তু ও বলে,

-“আম্মুনি ছাড়া থাকবোনা,আগে এক বছর ছিলাম তখন অসুস্থ ছিলাম তাই।তাছাড়া য়ুহার আপি ছিলো সাথে কিন্তু এখন নেই।আমি আম্মুনিকে মিস করছি বাসায় যাবে।”

নিরুপায় হয়ে ওর খালা ওকে বাসায় নিয়ে যায়।ও গেট দিয়ে ঢুকে ওর মাকে দেখে ওর সেজো খালার সাথে কথা বলছে।ও দৌঁড়ে ওর মাকে যেয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“আম্মুনি কেমন আছো?”

-“খুব ভালো,এখন সর।”

ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।ওর মা একবারও শুনলোনা ও কেমন ছিলো?ইয়ারাবী মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়।মিসেস রহমান ওনার বোনকে বলে,

-“মেয়েটার সাথে এমন ব্যবহার করা কী খুব দরকার?”

-“না মেরেছি না বকেছি,ভালো করে তো কথা বললাম।”

-“আসার পর থেকে শুধু আম্মুনি আম্মুনি করছে, আর তুই।”

ওনার সেজো বোন বলে,

-“এখানে ইশার কোনো দোষ তো নেই আপু,ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকবে নাকী?তাছাড়া ও প্রেগন্যান্ট,এমনিতেও মেয়েদের এতো লাই দিতে নেই…”

-“তুই চুপ কর,তোকে বাবা শুধু শুধু লেখাপড়া শিখিয়েছে কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয়নি।আর ইশা মেয়ের যেন কিছুনা হয়।এমন কোনো কমপ্লেন না আসে আমার কাছে তাহলে কিন্তু…”

মিসেস ইশানি বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“হবেনা আপু,তুই যা…”

রাতের দিকে মিসেস ইশানি কাপড় আয়রন করছেন আর ইয়ারাবী ওনার পাশে বসে ছবি আঁকছে।

-“আম্মুনি আব্বু কখন আসবে?”

-“আজ আসতে রাত হবে।”

-“আব্বুকে বলছো আমার জলরং লাগবে।”

-“হ্যাঁ,নিয়ে আসবে।আচ্ছা শোন আমি ভাতটা নামিয়ে আসছি,তুই এই শার্টটা আয়রন কর।সাবধানে পুরে যেন না যায়,তোর আব্বুর নতুন শার্ট।”

মিসেস ইশানি রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ইয়ারাবী ডান হাত দিয়ে শার্টটা ঢলতে থাকে।মনে ভুলে বাম হাত দিয়ে শার্ট উল্টাতে যেয়ে ওর হাতে চাপ লাগে।ব্যাথায় ও আয়রনটা শার্টের উপরে রেখে ওর বাম হাতে ফুঁ দিতে থাকে।কিছুক্ষণ পরে একটা পোঁড়া গন্ধ আসে, মিসেস ইশানির নাকে।উনি রুমে এসে দেখেন শার্টের উপর আয়রন রাখা,উনি দ্রুত আয়রনটা সরিয়ে দেখেন শার্টটা পোড়ে গেছে।মেজাজ উনার চরমে চলে যায়,পাশে তাকিয়ে দেখেন ওনার মেয়ে বাম হাতে ফুঁ দিচ্ছেন।উনি আচমকা যেয়ে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে টেনে ধরেন।

-“আহ্,আম্মুনি লাগছে..”

-“তোর এত সাহস,তোকে পইপই করে বললাম শার্টটা যেন না পরে আর তুই।”

বলেই মেয়েকে মারতে থাকেন।

-“আমি দে দেখিনি,হ হাতে ব্যাথা প্ পেয়েছিলাম তাই..”

-“কুত্তার বাচ্চা,তোর সাহস কী করে হয়?তোর থেকে এই শার্টটা দামী।সারা জীবন ধ্বংস করে গেলি..তোকে তো আজ আমি..”

মিসেস ইশানি রাগের মাথায় গরম আয়রন মেয়ের পিঠে চেপে ধরেন।ইয়ারাবী চিৎকার করে উঠে, কিন্তু আফসোস আজ ওর আত্মচিৎকার চার দেওয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে।

অতীতে ঘটে যাওয়া দূর দিনটা স্বপ্নে আরেকবার দেখে চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠ ইয়ারাবী।আবরার বেলকনিতে দারিয়ে ছিলো,ওর আওয়াজ শুনে দৌঁড়ে রুমে এসে সামনে বসে ওর দুই বাহু ধরে বলে,

-“কী হয়েছে ইয়ারাবী?”

ইয়ারাবীর কষ্ট হচ্ছে,পুরো শরীর কাঁপছে ওর।ওই দিনটা ও চাইলেও ভুলতে পারেনা।আবরার ওর অবস্থা দেখে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে,কিছুক্ষণ পর ও শান্ত হলে ওকে ছেড়ে দেয়।তারপর পানির গ্লাস ওর দিকে এগিয়ে দিলে ও পুরো পানিটা শেষ করে।আবরার ওর মুখটা তুলে বলে,

-“খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”

-“হ্ হ্যাঁ…”

-“খারাপ স্বপ্ন শয়তান দেখায়,এগুলো মাথায় রাখতে নেই।ফ্রেস হয়ে নাও ব্রেকফাস্ট করবো।”

ইয়ারাবী ক্লজেট থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।আবরার নিচে যেয়ে আজকের রান্নার ব্যাপারে কথা বলে রুমে এসে দেখে ইয়ারাবী একটা চেইন লাগানো টপস্ পরেছে।ও পিঠের চেইনটা খুলে আয়রনের পোঁড়া দাগটা দেখার চেষ্টা করছে।আবরার যেয়ে ওর জামার চেইনটা লাগিয়ে দিতেই ও কেঁপে উঠে তাড়াতাড়ি চোখ মুখে নেয়।আবরার ওর কাঁধে দু’হাত রেখে বলে,

-“অতীতকে ভুলা সম্ভব নয়,তবে কারোর সাথে শেয়ার করলে কষ্টটা বাড়ার থেকে বরং কমে।”

ইয়ারাবী ওর সামনে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিলো।কিন্তু আবরারের কথা শুনার সাথে সাথে ওকে আবরারকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।আবরার ওকে থামাই না,কেননা কাঁদলে মন হালকা হয়।কিছুক্ষণ পর ইয়ারাবী ওর বুকে মাথা রেখেই বলতে থাকে,

-“আম্মুনি শুধু কথায় কথায় আমাকে মারতো,পান থেকে চুন খসলে মারতো।আগে কাঁদতাম কিন্তু একটা সময়ে সয়ে যায়।যখন গ্রামে যাওয়ার পর প্ পিয়াসের ওই জঘন্যতার জন্য ওরা আমাকে মারে, আব্বু আমাকে ধারালো বটি দিয়ে মারতে চায় তখন থেকে মন উঠে গেছে।”

-“তারপর…”

-“জানেন,যখন আব্বু আমার বিয়ের কথা বললো যে তার বসের ছেলের জন্য আমাকে দেখতে আসবে আমার মনে হয়েছিলো,এমন কোনো মানুষের সাথে আমাকে বিয়ে দেবে যে উঠতে বসতে মারবে।কারন আম্মুনি সব সময় বলতো আমাকে এমন কারোর সাথে বিয়ে দিবে।আপনার চোখটা দেখে আমার খুব ভয় করে,প্রথমদিন যখন আপনি আমাকে মেরেছিলেন তখন আমার মনে হয়েছিলো আপনিও আব্বু-আম্মুর মতো হবেন।”

আবরার ইয়ারাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-“আমাকে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই ইয়ারাবী, আর ট্রাস্ট মি আজ পর্যন্ত তোমার সাথে যা কিছু হয়েছে সব ঠিক করে দিবো আমি।অনেক কান্না করেছো এখন ব্রেকফাস্ট করবে চলো।”

ইয়ারাবী ওর চোখে-মুখে পানি দিয়ে আবরারের সাথে নিচে নেমে যায়।আবরার ব্রেকফাস্ট টেবিলে একমনে ইয়ারাবীকে দেখছে আর ভাবচ্ছে,

-“কোনো মা এমন কী করে হতে পারে?আসল কাহিনি কী?এমন কোনো রহস্য যার জন্য ইয়ারাবীকে এমনভাবে টর্চার করা হয়েছে।ওর মাকে দেখলে বুঝা যায়না উনি এমন ভয়ংকর মহিলা আর ওর বাবা।উনি তো আজও এতটুকু মেয়েকে ভাবেন তার বড় মেয়ের খুনি।যেসব অন্যায় কোনো দিন মেয়েটা করেনি তার জন্য ঘৃনা করে।”

ইয়ারাবী আবরারের হাত ঝাকিয়ে বলে,

-“আবরার না খেয়ে কী ভাবছেন?”

আবরার মৃদ্যু হেসে বলে,

-“এটাই ভাবছি তোমাকে আজ কোথায় নিয়ে যাবো?শপিং নাকী কোনো…”

ইয়ারাবী জুস খেতে খেতে বলে,

-“আমি আপনার ল্যাব দেখতে চাই…”

আবরার খানিকটা চেহারায় মৃদ্যু হাসির রেখা টেনে বলে,

-“ল…ল্যাব,ল্যাব কোনো ঘুরার জায়গা?তার থেকে তোমাকে ফার্স্টে এখানকার মিউজিয়ামে নিয়ে যাবো,দ্যান আমার এক ফ্রেন্ড ইনভাইট করেছে, সেখানে যাবো…পুরানো ফ্রেন্ডরা এক সাথে হবো তাই।ভালো লাগবে তোমার..”

-“না আমি বিডির ল্যাব দেখেছি,এখানকারটাও দেখবো।”

-“জেদ করবেনা,ক্যামিক্যালের মধ্যে রিস্ক আছে…”

ইয়ারাবী সন্দেহের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আপনি আমাকে ল্যাবে কেন নিতে চাচ্ছেন না।আর ল্যাবটাতো আপনার পার্সোনাল,তাহলে…”

আবরার বুঝতে পারছে ইয়ারাবী নাছোড়বান্দা, ওকে থামানো যাবেনা।তাই বিষয়টাকে কোনো ভাবে সামলানোর জন্য বলে,

-“ওকে,নিয়ে যাবো তবে আজ নয়।তুমি জানো আমি ল্যাবে যাওয়া মানে কাজে আটকে যাওয়া।বাট্ এখানে তো আমি কাজের জন্য নয় আসছে..”

-“ম্ মানে?”

-“ঘুরতে রে বাবা,বাহ্ বৌটা আমার এতো ভয় পায়।”

কথাটা বলে আবরার একটা বাঁকা হাসি দেয়।

(১১৭)

য়ুহার আবার নতুন করে ট্রিটমেন্ট শুরু করবে তাই শৈলের সাথে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করতে এসেছে।আসলে শৈল ওকে জোর করে বাসা থেকে নিয়ে এসেছে।ডা.আশানূহ এর সামনে দুজন বসে আছে।ডা.আশানূহ অনেক মনোযোগ সহযোগে ওর রিপোর্টগুলো দেখে বলে,

-“মিসেস.য়ুহার আপনার রিপোর্ট দেখলাম কিন্তু আমার বলতে খুব খারাপ লাগছে যে আপনার রোগটা…”

-“আমি জানি ডাক্তার,বাট্ শৈলকে বোঝানো দায়..”

ডা.আশানূহ বলে উঠে,

-“দেখুন য়ুহার বাঁচানোর মালিক আল্লাহ।আমরা চেষ্টা করতে পারি,আমার রোগটা বাড়লেও আপনি নিজ থেকে স্ট্রং,এই জিনিসটাই লাগবে।তো কালই হসপিটালে ভর্তি হয়ে যান।”

-“ডাক্তার একটা রিকুয়েস্ট,আমি এখানে এডমিট হতে পারবোনা।টাইমলি এসে ট্রিটমেন্ট করে যাও প্লীজ।”

-“এটা কীভাবে সম্ভব?”

শৈল একবার য়ুহারের দিকে তাকিয়ে ডাক্তারকে বলে বলে,

-“প্লীজ ডাক্তার,আমি ওকে রোজ নিয়ে আসবো।কিন্তু রাতে এখানে রাখতে পারবোনা।কেননা ফ্যামিলির কেউ জানেনা কথাটা,যদি জানে খুব কষ্ট পাবে তারা।আর ও চাইনা পরিবারের কেউ জানুক।”

-“আমি বুঝতে পারছি কথাটা।তবে কাল থেকে ইনশাল্লাহ্ আমার ট্রিটমেন্ট শুরু করেদি।”

শৈল আর য়ুহার ডাক্তারের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢোকে।য়ুহার আজ জলপাই রঙের পাড় দেওয়া কালো শাড়ি,চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া,কানে ঝুমকো, হাতে কাঁচের চুরি,চোখে কাজল,ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপিস্টিক আর কপালে ছোট টিপ।সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে মেয়েটাকে।শৈল ওয়েটারকে চিকেন থাই স্যুপ আর কোল্ড ড্রিংকস্ অর্ডার করে।শৈল য়ুহারের হাত ধরে বলে,

-“জানো সবটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে, তোমাকে নিজের করে পেয়েছি।”

-“যদি মারা যায়…”

-“হাতের পাঁচ আঙ্গুল কখনো সমান হয়না,ঠিক তেমনি সবার ভালোবাসার ধরন এক হয়না।আমি জানিনা কী হবে শেষ পরিনত?তবে নিজের জীবনের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি।”

-“আমি জানি শৈল,এমনকি আমি বুঝতামও তুমি আমাকে ভালোবাসো তবে প্রতারণা,অতীতের কথাগুলো আর বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে বদলে দিয়েছিলো।”

শৈল কথাটা ঘুরানোর জন্য বলে,

-“জানো য়ুহার আমার অনেক দিনের ইচ্ছা তোমাকে বিয়ের দিন লাল শাড়িতে দেখবো, আলতা দেওয়া পায়ে নুপুর,কোমরে বিছা,মাথায় টিকলি,মেহেন্দী দেওয়া হাতে চুরি ভর্তি,চোখে কাজল,নাকে ন।কল্পনায় তোমাকে যেভাবে ভেবেছি আমি চাই তুমি ঠিক সেইভাবে সাজবে।”

-“তুমি যখন বলছো তখন আমি বিয়ের দিন নিজে হাতে তোমার জন্য এভাবে সাজবো।”

কথাটা বলে য়ুহার খানিকটা লজ্জা পায়।শৈল য়ুহারের কথা শুনে হেসে দেয়।কতটা সুন্দর মুহুর্তে বন্দি হয়ে আছে এরা দুইজন।তবে আদেও কী ওদের স্বপ্ন পূরন হবে নাকী রাতের আঁধারের মতো সব কিছু অন্ধকারে ঢেকে যাবে।সত্যিই কী ইয়ারাবীর দেখা স্বপ্ন ফলে যাবে?

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here