#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:২৭
(৯৮)
নিয়তি কতটা নিষ্ঠুর।আমরা না চাইতেও এমন কিছু মুহুর্ত আমাদের সামনে আসে যা আমরা কখনো চাইনা,আবার কখনো কখনো সেটা সহ্য, করার ক্ষমতাও আমাদের থাকেনা।তারা ওর কথাগুলো শুনে বলে উঠে,
-“ও বাড়ির সবাই কেমন রে?”
-“ভালো,জানো স্টারপু আমাকে কোনো কাজ করতে দেয়না।সব সময় এক কথাই বলে,যাও পড়তে বসো।মানুষ শ্বশুড়বাড়ি গেলে যে একটা ফিলিংস আসে,মনে ভয় থাকে আমার তেমন কিছুই হয়না।ওদের ব্যবহার সত্যিই অনেক ভালো।”
-“আর আবরারের?”
ইয়ারাবী তারা দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
-“অলওয়েজ একটা বাচ্চার মতো ট্রিট করে।যতক্ষণ বাসায় থাকে এক্সট্রা কেয়ারের উপর রাখে আর বাইরে থাকলে ঘনঘন ফোন দেয়।জানো,গত শুক্রবারে একটা এতিমখানায় গিয়েছিলাম বাচ্চাগুলোকে নতুন কাপড় দেওয়ার জন্য।এক ঘন্টাও হয়নি গুনেগুনে পাঁচবার ফোন করেছিলো,সবাই কত হাসাহাসি করছিলো জানো।চৈতি হাসতে হাসতে বললো আবরার নাকী বৌ পাগল।”
য়ুহার ওর মাথায় বিলি কাঁটতে কাঁটতে বলে,
-“জানিস আমরা মেয়েরা আসলে কী চাই সেটা আমরা নিজেরাই জানিনা।আমাদের সমাজ কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক,এখানে পুরুষের কথাই বেশির ভাগ সবকিছুতে চলে।অনেক মেয়ে আছে,যারা সারাজীবন ধরে স্বামীর সেবাযত্ন করে গেলো কিন্তু বদলে স্বামীর কাছে থেকে অবহেলা পেলো যেখানে তারা একটু ভালোবাসা চেয়েছিলো।অপরদিকে যেসব স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কেয়ার করে তাদের কাছে এসব অসহ্য লাগে।তোর তো নিজেকে লাকী মনে করা উচিত যে আবরার তোকে এতো কেয়ার করে,তোর যত্ন নেয়।”
-“নিজেকে কখনো ভাগ্যবতী ভাবতে চাইনা আপু, যখনি এমন কিছু করেছি তখনি…”
-“ইয়ারাবী আবার মন খারাপ করছিস?”
-“না করছিনা,আচ্ছা আপু কাল নিলয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় একটা বিড়াল ছানা দেখলাম,ওইটা কার ছিলো?”
-“আর বলিস না,নিলয় মাঠে খেলতে যেয়ে বাচ্চাটাকে পেয়েছে।তাই নিজের কাছেই রাখলো।”
-“পুরোটা বল বল লাগছিলো,একদম মিষ্টি…”
-“নিবি তুই?”
ইয়ারাবী হ্যাঁ বলতে যেয়েও কিছু একটা ভেবে বলে,
-“না আপু থাক,এমনিতে ওই বাড়িতে চেলসি আছে।তাছাড়া জানি না ওনারা বিড়াল পছন্দ করে কীনা?ধরো একে নিয়ে যাওয়ার পর আগের মতো ওরাও যদি মেরে ফেলে?”
-“আচ্ছা,তুই আবরারের কাছ থেকে শুনিস তারপর জানাবি।এমনিতে আমার কাছে অনেকগুলো আছে।”
ইয়ামিলা এর মধ্যে রুমে এসে সবাইকে নিচে ডাকে, কেননা ইস্মিতার জন্য দোয়া করা হবে।ইয়ারাবী প্রথমে যেতে চাইনা তবে ওদের জোরাজুরিতে যেতে হয়।ইস্মিতার জন্য দোয়া করা হলে,এতিম আর গরীবদের দান করা হয়।কাজগুলো করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
ইয়ারাবী রুমে যেয়ে রেডি হচ্ছে এমন সময় মি.ফুয়াদ রুমে ঢুকে বলেন,
-“মা প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,আজ থেকে যা কাল সকালে যাস।”
ইয়ারাবী প্রতিত্তুরে কোনো কথা না বলে নিজের মতো ঘুছাতে থাকে।মি.ফুয়াদ বুঝতে পারছেন মেয়ে তার সাথে কোনো কথা বলবেনা।এর ভিতর ইয়ারাবীর মেজো খালা রুমে ঢুকে বলে,
-“আজ থেকে যা সোনা,কাল যাবি…”
-“না খালামনি,কাউকে বলে আসা হয়নি,তাছাড়া কাল বাড়িতে গেস্ট আসবে।”
-“সমস্যা নেই আমি মমকে বলে দিয়েছি…”
ইয়ারাবী দরজায় তাকিয়ে দেখে আবরার দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি বলেছিলেন আপুনির জন্য দোয়া করে চলে যাবো।”
-“বাট্ তোমার আব্বু-আম্মু চাই থাকি।তাছাড়া সবাই বলছে থাকতে…”
-“কিন্তু আবরার আমার তো কোনো মেডিসিন আনা হয়নি,”
-“আছে,আমি নিয়ে এসেছি।তাই এখন এসব ছেড়ে ছাদে যেয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করো ভালো লাগবে।তোমার আপুরা ছাদে আড্ডা দিচ্ছে,ওখানে যাও…”
ইয়ারাবীর খুব বিরক্ত লাগলো আবরারের সিদ্ধান্ত শুনে।তবুও কিছু না বলে কাবার্ড থেকে একটা নরমাল ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মি.ফুয়াদ জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“ধন্যবাদ দিলে ছোট হয়ে যাবে,তোমার জন্য মেয়েটা আজ থাকতে রাজি হলো।”
আবরার হেসে বলে,
-“এমনিতেও আব্বু সোম-মঙ্গলবারে লন্ডনেও এক-দুই সপ্তাহের জন্য যাচ্ছি।তাই ভাবলাম একরাত আপনাদের সাথে থাকুক।”
-“ওহ্,লন্ডনে কেন যাচ্ছো?”
-“তেমন কিছুনা,একটু ঘুরতে তাছাড়া ওখানের কাজ অনেকদিন দেখা হয়না।তাই ভাবলাম একবারে সেরে আসি।”
মিসেস রহমান ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ড্রইংরুমে যেয়ে গল্প করলে ভালো হতো,মিনাকে ওখানে চা-নাস্তা দিতে বলছি।”
আবরার ওর খালার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনারা যান আমি ফ্রেস হয়ে আসছি..”
-“ইস্মাকেও সাথে নিয়ে আসবে…”
আবরার মুচকি হেসে মাথাটা হালকা নাড়িয়ে কাবার্ড থেকে একটা গেন্জি আর প্যান্ট বের করতে যেয়ে একটা লকারের দিকে চোখ আটকে যায় ওর।পাশে একটা চাবি দেখতে পায়,ও চাবিটা হাতে নিয়ে লকারটা খুলে কিছু ফটো আর কিছু কাগজ দেখে।ছবিগুলোতে ইয়ারাবীর সাথে ষোড়শী এক মেয়ের ছবি।মেয়েটাকে আবরার চেনে,কেননা এই সেই ইস্মিতা।ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে ওদের বন্ডিংটা অনেক ভালো ছিলো।দরজা খোলার আওয়াজে ও ছবিগুলো যায়গায় রেখে দেয়।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি ড্রেস কোথায় পেলেন?”
-“আগের বার রেখে গেছিলাম,তাই…”
-“আমার কিন্তু একটুও ভালো লাগছেনা।”
আবরার ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“শরীর কী খুব বেশি খারাপ করছে,ব্যাথা করছে কোথাও?”
ইয়ারাবীর মেজাজটা চরমপর্যায়ে পৌঁছে যায়।ও হাতের টাওয়েলটা টান দিয়ে বিছানায় ফেলে মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে পরে।
-“ধুর,আমার কেমন লাগছে সেটা আমি জানি?আমার পাশের রুমটা আপুনির,বারবার মনে হচ্ছে ও ওখানে বসে আছে।দমবন্ধ হয়ে আসছে,চলুন না চলে যায়…”
আবরার কিছুটা আড়মোড়া ছেড়ে বলে,
-“ট্রাস্ট মি,আমি যেতাম বাট্ রাত হয়ে গেছে।শীতের রাত তোমার জন্য সেভ নয়।তাছাড়া আমি নিজেও অনেক টায়ার্ড,ড্রাইভ করার কোনো মুড নেই।”
-“জানি আপনাকে বলে কোনো লাভ নেই,যেটা আপনার ইচ্ছা করবে সেটাই হবে।”
আবরার ওর কথা শুনে হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।কিছুক্ষণের জন্য ইয়ারাবী রুমে পুরো একা, বারবার ওর মনে হচ্ছে রুমে ও ব্যাতিত আরো কেউ আছে।গভীর রাতের দুঃস্বপ্ন না হলেও এখন আবার সেই উপস্থিতি অনুভব হচ্ছে।ও না চাইতেও হাজার চিন্তা ওর মাথায় হানা দিচ্ছে।বেশিক্ষণ আর রুমে একা থাকতে না পেরে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ইয়ারাবী ছাদে যেয়ে দেখে তারা,য়ুহার,ইফাজ, ইমন,নিলয়,শুভ,টিকলি এরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।ও যেয়ে বসতেই ইফাজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কীরে পিচ্চি আসতে এতো দেরী হলো কেন?আবরারের সাথে কী ঝগড়া করছিলি নাকী?”
-“ভাইয়া,উনার সাথে আমি কখনো ঝগড়া করিনা।”
ইমন ওর চুল টেনে বলে,
-“বল সাহস নেই,যে বাইরে বাঘিনী সে বরের কাছে ভিজে বেড়াল।”
-“বাজে কথা বলবেনা ভাইয়া,উনাকে দেখে ভয় পাওয়ার কী আছে?উনি বাঘ না ভাল্লুক,আমি উনাকে ভয় পায়না।”
-“আচ্ছা তাই বুঝি..”
-“তাছাড়া আর কী?আমি কিছু বলিনা বলে আমি ভীতু তা নই।আমি একটা মাসুম বাচ্চা তাই হাসবেন্ডকে সম্মান করি,নয়তো উনি আমার কাছে কিছুই না।আমি যদি রেগে থাকি তবে উনি আমার কাছে কিছুই না।”
য়ুহার বারবার ইয়ারাবীকে নিষেধ করে বলছে,
-“মনি চুপ কর,তুই কেমন সেটা আমরা জানি।”
-“চুপ করবো কেন আমি কী ভয় পায় নাকী?”
-“তাইতো ভয় পাওয়ার কী আছে?”
-“হ্যাঁ,একদম ঠি…”
ইয়ারাবী ওর পিছনে তাকিয়ে দেখে আবরার প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওর মুখের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে ইয়ারাবী যা যা বলেছে সবটাই ও শুনেছে।ইয়ারাবীর মুখটা ভিজা বিড়ালের মতো চুপছে যায়।ইফাজের তো হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা।ইয়ারাবী ভ্রু কুচকে ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এখানে কোনো জোক্স হয়নি যে তুমি এভাবে হাসছো।”
-“কই আমি কোথায় হাসছি,চশমা পরিসনি তাই ভুল দেখছিস…”
-“আমি ওতটাও কানা নই যে চশমা ছাড়া কিছু দেখবোনা।”
য়ুহার আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“দাঁড়িয়ে আছো কেন,বসো।”
-“হ্যাঁ,আপু বসছি…”
ইয়ারাবী চুপচাপ বসে আছে,তারা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কীরে পুতুল মুখে তো খই ফুটছিলো,এখন চুপ করে আছিস কেন?”
-“আপু আমার বাচ্চা বৌকে আর পিন্চ করেননা।”
ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি বাচ্চা নই….”
-“হুয়াট এভার!আমিতো বলতো,তোমার মতে এটাকে মৌলিক অধিকার বলে।”
-“আপনার সাথে কথা বলে পারা যায় না।”
ওরা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর মজা করছে।এর মধ্যে ওর বড় খালা আর ছোট খালা ছাদে আসে।মিসেস জামান ইয়ারাবীকে উদ্দেশ্য করেই বলেন,
-“কী যামানা আসলো নিকি,এখানে বড় বোন মারা গেছে আর ছোট বোন না কেঁদে মজা করছে…”
-“আরে আপু বুঝছিলা,বোনটা তো আর আপন না। রাস্তা থেকে সরিয়ে তো ওর ভালোই হলো,সম্পত্তির একটা ভাগ কমলো।”
ওদের কথা শুনে ইয়ারাবী চুপ হয়ে গেলো।অন্য দিন হলে জবাব দিতো কিন্তু আজ কেন জানি প্রতিবাদ করতে ওর ভালো লাগছেনা।বিষয়টা যখন ইস্মিতা সম্পর্কীয় হয় তখন কোথাও ওর নিজের একটা হলেও অপরাধ বোধ কাজ করে।ওর মনে হয় ওর ভুলের জন্য ইস্মিতা মারা গেছে। আবরার চেয়ার থেকে উঠে ওনাদের সামনে যেয়ে হেসে বললো,
-“ওহ্,তাই নাকী আন্টি।তো হাদিসের কোথায় লিখা আছে মৃত ব্যাক্তির জন্য সব সময় কান্না করতে হয়।”
ওর খালারা কিছুটা থতমত খেয়ে যায়,তবুও তারা চুপ থাকার পাত্রী নন।মিসেস নিকি কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলেন,
-“তুমি যাও বলোনা কেন,দোষটা কিন্তু ইয়ারাবীর ছিলো?মানলাম খুনটা ও করেনি,তবে হতে তো দেখেছিলো।সেই সময় তো সবাইকে জানাতে পারতো।”
মিসেস জামান বলেন,
-“তুই মানছিস কেন যে ও খুনটা করেনি,আমি জোর দিয়েই বলতে পারি খুনটা ওই করেছে।দোষটা ওর।”
ইয়ারাবী ওদের কথা শুনে না পেরে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করতে থাকে।য়ুহাররা ওকে সামলাচ্ছে।ইফাজের মনে অলরেডি ভয় ঢুকে গেছে যে এটা নিয়ে আবার হিতের বিপরীত কিছু না হয়।কেননা যখন ও ছোট ছিলো তখন এসব মানুষের জন্যই ওর সমস্যাটা হয়েছিলো। ইফাজ রেগে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আবরার ইয়ারাবী দিকে তাকিয়ে ওর খালাদের বলে,
-“তাহলে মনে হয় আপনি খুনটা নিজের চোখে করতে দেখেছিলেন,তাইতো?”
-“তুমি এসব কী বলছো?আমি কেন করতে দেখবো,আমি তো কথার কথা বললাম।ও যে মেয়ে তাতে খুন করা ওর জন্য অসম্ভব কিছু নয়।আচ্ছা আমরা যাই,নিকি চল।”
ইয়ারাবীর খালারা দ্রুত নিচে নেমে চলে যায়।এদিকর য়ুহার,তারা মিলে ইয়ারাবীকে সামলানোর চেষ্টা করছে।ইফাজ ওখান থেকে যেতে গেলে ইমন ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলে,
-“প্লীজ ভাইয়া,আজ কিছু করেনা ওদের। তুমি তো জানো ওনারা কেমন?”
-“তুই বুঝতে পারছিস,ওর মেন্টালি প্রেশার পরলে কী হবে?”
-“আমি জানি,আমিও চাইনা ওর কিছু হোক…”
আবরার এসে ইফাজকে বলে,
-“আজকে বাবা-মা কারোর মুড ভালো নেই,এমন কিছু না করাই ভালো।”
-“আবরার…”
-“ইউ নো আমি কেন বলছি,তাকাও ওর দিকে… এটা নিয়ে যত বেশি হাঙ্গামা হবে ততোটা ওর মানসিক চাপ পড়বে।”
য়ুহার ওর সামনে ইয়ারাবী মুখ তুলার চেষ্টা করে বলে,
-“দেখ কান্না করলে কিন্তু ইস্মিতার খারাপ লাগবে।আর তুই কান্না করছিস কেন? তোর তো কোনো দোষ নেই।”
-“না আপু,দোষটা আমারি।সবাই ঠিকই বলে,যদি আমি জিদ না করতাম আর যদি সেই সময় সবাইকে ডাকতাম তো এমন হতোনা।”
-“দেখ ফালতু কথা বললে মার খাবি কিন্তু,কান্না থামা।”
-“ও কাঁদছে কেন?”
য়ুহার সামনে তাকিয়ে দেখে মিসেস ইশানি দাঁড়িয়ে আছে।কেউ কোনো কথা বলছেনা দেখে উনি আবারো জিজ্ঞেস করেন,
-“কী হলো বলবি তো,ও কাঁদছে কেন?”
ইফাজ চোখমুক শক্ত করে বলে,
-“সেটা তোমার না জানলেও চলবে খালা..”
-“অদ্ভুত তো,আমার মেয়ে কাঁদছে আর আমি জানবো না?”
-“মেয়ে সিরিয়ালি,কখনো মেনেছো ও তোমার মেয়ে?তাহলে আজ দরদ এতো উথলিয়ে পরছে কেনো?”
মিসেস ইশানি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেন।আসলে ইফাজ যা বলছে সেটা পুরোটা ভিত্তিহীনও নয়।ছয় বছর বয়স থেকে ইয়ারাবীকে কখনো নিজের মেয়ে মনে করেননি উনি।সব সময় উনি আর উনার স্বামী ওকে অবহেলা করে এসেছেন।অাবরার মিসেস ইশানির দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“তেমন কিছু নয় আম্মু,ওর আপুর জন্য কাঁদছে।”
-“ওহ্,আচ্ছা তোমরা খেতে এসো।সবাই বসে আছে তোমাদের জন্য।”
-“হ্যাঁ,আপনি যান আমরা আসছি।”
(৯৯)
রাতে খাওয়া-দাওয়া করে আবরার সবার সাথে কথা বলে রুমে চলে যায়।মি.ফুয়াদ ওদের রুমে দরজা নক করে বলে,
-“ভিতরে আসবো?”
-“আরে আব্বু আসুন…”
মি.ফুয়াদ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,
-“ইস্মা কোথায়?”
-“ওর ফুপির সাথে কথা বলছে,”
-“মেয়েটা ফাতেমার খুব ভক্ত।”
-“কিছু বলবেন আব্বু?”
-“হ্যাঁ,আসলে জানতে চাইছিলাম ইয়ারাবীর কী হয়েছে।দেখো ওর বাবা হিসাবে সবটা জানার অধিকার আমার আছে,প্লীজ খুব চিন্তা হয় মেয়েটার জন্য”
আবরার একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
-“আব্বু কথাটা বেশি কেউ জানেনা আর ইয়ারাবী তো একদমই নয়।আর আমি চাইনা ও কিছু জানুক।”
-“ও কিছু জানবেনা,দেখো এবার আমার সত্যিই খুব চিন্তা হচ্ছে।”
-“আব্বু ওর মাথার আঘাতটা খুব গভীর,রক্ত জমে গেছে যদি মেডিসিনে ঠিক না হয় অপারেশন করতে হবে।ওর বুকে পাজরে ওখানে মেবি কোনো কারনে আঘাত লেগেছিলো সেটাতে অনেক সমস্যা আছে।ওর মেন্টালি কন্ডিশন ঠিক নেই,আর সবচেয়ে বড় কথাটা হলো ওর মা হওয়ার চান্স খুবই কম।আইথিন্ক এমন কিছু হয়েছিলো যার জন্য ও এই ক্ষমতাটা হারায়।”
মি.ফুয়াদ কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছেননা।উনি আহতদৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মেয়েটা..আমি বুঝতে পারছিনা।”
-“আব্বু আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি,প্রতিমাসে ওর চেক-আপ করছি।ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-“কে কে জানে কথাটা?”
-“ওর মেজো খালারা,য়ুহার আপু আর আমার পরিবার ছাড়া আর কেউ জানেনা।”
-“ওহ্হ্,আচ্ছা তুমি থাকো,অনেক রাত হয়ে গেছে..”
মি.ফুয়াদ বের হতে গেলে আবরার পিছন থেকে ডেকে বলে,
-“আপু ইয়ারাবী যেন কথাটা না জানে।”
-“জানবেনা বাবা।”
মি.ফুয়াদ বেরিয়ে যেতেই কেউ একজন পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে যায়।কথাগুলো শুনে ওই ব্যাক্তির চোখে-মুখে খুশির আভাস পাওয়া যায়।
ইয়ারাবী ওর ফুপির সাথে কথা বলতে বলতে অনেকটা রাত হয়ে যায়।ফুপিকে বাই বলে রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ ওর ইস্মিতার রুমের দিকে চোখ যায়।আর যা দেখে তাতে ওর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।কেননা ইস্মিতার রুমের দরজা খোলা।ও চিৎকার করে ইয়ামিলাকে ডাকতে থাকে।ইয়ামিলা ওর আওয়াজ শুনে রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলে,
-“কী হয়েছে আপু?”
-“এই রুমটা কে খুলেছে?”
ইয়ামিলা চুপ করে আছে,ইয়ারাবী এবার ওকে ধমক দিয়ে বলে,
-“চুপ করে আছিস কেন?বল কে খুলেছে?”
-“আ আমি,নিন্দু মামী খুলতে বলেছিলো তাই..”
-“তার জন্য খুলবি,তুই জানিসনা আমি বাসায় থাকাকালীন এটা বন্ধ রাখা হয়।”
মিসেস ইশানি মেয়েদের সামনে এসে বলেন,
-“ওকে ধমকাচ্ছিস কেন তুই?”
ও ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওহ্ সরি,মাফ করে দিবেন।এখন আপনার মেয়ের পা ধরে কী আমার ক্ষমা চাইতে হবে?”
-“এটা কী ধরনের কথা?”
-“যা এতদিন ধরে হয়ে এসেছে তাই তো বলছি।মিসেস ইশানি আপনার যদি এতই প্রয়োজন হয় রুমটার তাহলে আমি কাল বাড়ি থেকে চলে গেলে খুলবেন,আমার সমস্যা হয়।অবশ্য আমার সমস্যাতে আপনার কিছু যায় আসেনা,তবুও বললাম আরকী”
কথাগুলো বলে ইয়ারাবী নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।ওর সেজো খালা এসে ওর মাকে বলে,
-“তোর মেয়ে বেয়াদবি করলো আর তুই কিছু বললিনা।অন্ততপক্ষে একটা থাপ্পড় মারা উচিত ছিলো।”
-“সেটা আমি বুজবো কী উচিত ছিলো আর কী ছিলোনা,নিজের ঘরে যা।”
মিসেস রায়ীনা মুখ বাঁকিয়ে,
-“মেয়েকে শাসন কর,নয়তো যে তেজ তাতে সংসার টিকবেনা বলে দিলাম।কানার কথা কিন্তু বাসি হলেও ফলে।”
-“সেটা ওর স্বামী বুজবে।”
এদিকে ইয়ারাবী রুমে এসে মেডিসিন নিয়ে আবরারের পাশে চুপচাপ শুয়ে পরে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি কিন্তু তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম।”
ইয়ারাবী কথাটা শুনে বালিশ থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ওর বুকে মাথা রাখে।আবরার হেসে ওকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে বাম হাত দিয়ে মাথায় আলতো করে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে,
-“ঘুমানোর সময় আমার বুকে সব সময় মাথা রাখবে,যত যা কিছু হোক না কেন,বুঝেছো।”
-“হামম,”
ইয়ারাবী ওর টি-শার্টের বোতাম ধরে টানতে টানতে বলে,
-“আবরার একটা কথা বলার ছিলো…”
-“বলো..”
-“আগে বলুন রেগে যাবেন না তো?”
আবরার ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে হেসে বলে,
-“আচ্ছা রাগ করবোনা বলো।”
ইয়ারাবী বেড বক্সের উপর থেকে ওর ফোনটা নিয়ে আবরারের হাতে দিয়ে বলে,
-“ম্ ম্যাসেজটা একটু দেখবেন..”
আবরার ওর দিকে তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজগুলো দেখে রেগে যায়।কেননা সেইম ভাবে কিছু ছবি আর ম্যাসেজ এসেছে,তবে অনেকদিন যাবত ধরে আবার আসছে,ম্যাসেজগুলো দেখে বুঝা যাচ্ছে।ইয়ারাবী ওর বুকে মাথা রেখেই ভয়ে ভয়ে বলে,
-“সেদিনের পর আর ম্যাসেজ না এলেও এক্সামের ভিতর আসছিলো।আমি ভয়ে আপনাকে কিছু বলিনি…”
আবরার অনেকটা গম্ভীর কন্ঠে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তাহলে আজ কেন বলছো?”
-“আবরার বিশ্বাস করুন আমি এই ছেলেটাকে চিনিনা।আজ সকাল থেকে এই ম্যাসেজগুলো ঘনঘন আসছে।লাস্ট ম্যাসেজটা পরে আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলোম,এজন্য।প্লীজ আমাকে মারবেন না,আমি কিছু জানিনা এই ব্যাপারে।”
-“রাত অনেক হয়েছে ঘুমাও…”
-“আবরার?”
-“আবার কথা বলে,রাত জাগলে মাথা ব্যাথা করবে।চশমা কিন্তু আনা হয়নি,সো চুপচাপ ঘুমাও।আর এসব নিয়ে চিন্তা করবেনা,আমিতো আছি…যে করছে তাকে খুঁজে বের করবো চিন্তা করোনা।”
ইয়ারাবী আবরারের শেষ কথাটা শুনে কিছুটা স্বস্তি পায়।ও আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আরেকটা কথা শুনতে চাইছিলাম।”
-“ঘুমাচ্ছোনা কেন, এবার কিন্তু আমি সত্যিই রাগ করবো।”
-“জাস্ট একটা…”
-“আচ্ছা,বলো…”
-“আপনাদের বাসার সবাই কী বিড়াল পছন্দ করে?”
-“হঠাৎ এই কথা?”
-“না এমনি,বলেন না…”
-“হামম,সবাই করে।কেন?”
-“ঘুমাবো..”
ও কথাটা বলে আবরারের বুকে চুপচাপ মাথা রাখে।আবরার হেসে ওকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।কিছু দোয়া পড়ে ওকে ঝেড়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজেও শুয়ে পরে।
মাঝ রাত,চারিদিকে নিস্তব্ধ।শীতের রাতে দূরের রাস্তার পাশ থেকে কিছু কুকুর আর শিয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে।রাতের গম্ভীরতা আর শেয়ালের ডাক মিলে অনেকটা ভয়ানক হয়ে উঠেছে পরিবেশটা।এমন পিনপিন নিরবতার মাঝে ইয়ারাবী ঘুম ভেঙে যায়।কারেন্ট চলে গেছে ঘরটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে,ওর কাছে তাও মনে হচ্ছে কেউ সোফায় বসে ওদের উপর দৃষ্টি রাখছে।অজানা আতঙ্কে ইয়ারাবীর শরীরটা কেঁপে উঠে।ও দেওয়ালের দিকে সরতে গেলে বুঝতে পারে ও আবরারের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে।ও আবরারের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আবরারকে ডাকতে থাকে।আবরার চোখ বন্ধ রেখে ওকে আরো শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে বলে,
-“কী হয়েছে,ঘুমাও না কেন?”
-“র্ রুমে কেউ আছে…”
-“হামম আছে,আমি আর তুমি..”
-“আমার ভয় করছে,কাউকে ফিল করছি।প্লীজ উঠুন না,আমার সত্যি ভয় করছে।”
আবরার তাড়াতাড়ি উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কী হয়েছে?”
ইয়ারাবী সোফা দিকে ইশারা করে বলে,
-“ও ওখানে কেউ আছে,ক্ কাছে আসার চেষ্টা করছে..”
-“কেউ নেই ওখানে,তোমার মনের ভুল।”
-“ন্ না,আপনি বুঝতে পারছেন না।আছে আমি দেখছি ওখানে..”
-“ওকে দাঁড়াও আমি দেখছি…”
আবরার সুই টিপে দেখে কারেন্ট চলে গেছে।পরে পাশ থেকে ফোনটা তুলে টর্চ জ্বালিয়ে দেখে কেউ নেই।অবশ্য ও জানে এটা ইয়ারাবীর মনের ভুল, কেননা আজ এখানে থাকা বলে ওরা আসেনি তাই রাতের যে মেডিসিন ওকে দিতো সেটাও আজ দেওয়া হয়নি।আবরার ইয়ারাবীর দিকে ঘুরে বলে,
-“দেখলে তো কেউ নেই এখানে,এখন ঘুমাবে আসো।”
বাইরে একটা বিকট আওয়াজে ইয়ারাবী চমকে উঠলে আবরার ওকে আশ্বস্ত করে বলে,
-“টাইয়ারের আওয়াজ,জাস্ট রিল্যাক্স কিছু হয়নি।”
-“আমার খুব ভয় করছে,মনে হচ্ছে জিনিসটা আমাকে মেরে ফেলবে।”
কথাটা বলেই কান্না করে দেয়।আবরার ওকে চোখ মুছিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“তুমি নিজের মস্তিষ্কে একটা কল্পনাকে বসিয়েছো, তাই এমনটা হচ্ছে।যদি কেউ থেকেও থাকে তারপরও কিছু করতে পারবেনা।”
(১০০)
-“পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর, ২)
হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮)
এগুলো শুনেও কী তোমার মনে একটু ভয় হয়না।যারা পরকীয়া করবে মৃত্যুর পরে তাদের জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।”
সায়ন গলা ছেড়ে বলে,
-“আমরা কোনো পরকীয়া করিনা পল্লবী,একে অপরকে ভালোবাসি।আর ভালোবাসা কোনো অন্যায় নয়।আমি যদি জারিকার সাথে ভালো থাকতে পারি তবে তোমার সমস্যা কোথায়?”
পল্লবীর মেজাজটা চরমপর্যায়ে পৌঁছে যায় তবু নিজেকে শান্ত করে জায়নামাজটা ভাজ করে আলনাতে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এটা আমার সংসার,তাই আমি এখান থেকে কোথাও যাবোনা।”
সায়ন খাট থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলে,
-“নির্লজ্জ,বেহায়া মেয়ে,তোর লজ্জা করেনা।আমি তোকে রাখতে চাইছিনা আর তুই বেহায়ার মতো আমার ঘাড়ে চেপে আছিস।”
-“মুখের ভাষা ঠিক রাখবে নয়তো ভুলে যাবো তুমি আমার স্বামী।”
-“কী করবি তুই?”
-“তোমাকে বুঝাতে চাইছিলাম,কিন্তু তুমি বুঝলেনা।কথায় আছে,কুকুরের লেজ টানলেও সোজা হয়না।”
-“ওই তুই আমাকে কুকুর বললি?”
-“আমি উদাহরন দিয়েছি,”
সায়ন পল্লবীর উপরে হাত তুলতে গেলে পল্লবী ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মুখ চেপে বলে,
-“মেয়েদেরকে জীবনে দুর্বল ভাব্বিনা।তারা তাদের অধিকারের জন্য ঠিকই লড়তে পারে।আজ থেকে দেখবি আমি কী জিনিস।”
-“মাম্মা,তুমি উতে পলেতো?”
পরী ঘুমুঘুমু চোখে উঠে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“হামম,সোনা এইতো।কিন্তু আজ তুমি উঠতে দেরি করে ফেলেছো।নামায তো পড়তে পারলেনা।”
-“তুমি আল্লাহকে আমাল ওয়ে সলি বলে দিয়ো।থাবো ইতুর দৌল করে…”
পল্লবী সায়নকে ধাক্কা দিয়ে ওর মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
-“আমার আম্মুর খুদা লেগেছে।চলো তোমাকে ডিম সিদ্ধ করে দিচ্ছি….”
পল্লবী রুম থেকে বেড় হওয়ার সময় সায়নের প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ,আর রুম থেকে আলমারির চাবি আর ফোন নিয়ে নেয়।সায়ন পিছন থেকে চিল্লিয়ে বলে,
-“ওই আমার জিনিসে হাত দিচ্ছো কেন?”
-“আজ থেকে এসব আমার কাছে থাকবে।”
পল্লবী রান্নাঘরে এসে ডিম সিদ্ধ দিয়ে মেঝেতে বসে তরকারি কাঁটছে।পাশে পরী পুতুল আর বল নিয়ে খেলা করছে।ওর শ্বাশুড়ি এসে পল্লবীর পাশে বসে বলে,
-“দেখো তুমি যা করবে তাতে আমি বাঁধা দিবোনা, তোমার সাথেই আছি।”
হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ওর শ্বাশুড়ি যেয়ে দরজা খুলে দেখে জারা দাঁড়িয়ে আছে।
-“তুমি এতো সকালে এ বাড়িতে?”
-“আপু ফোন করে আসতে বললো,আপু কোথায়?”
-“রান্নাঘরে,ভিতরে আসো”
জারা রান্নাঘরে যেয়ে দেখে পল্লবী পুঁইশাক কাটছে, আর পরি বসে খেলা করছে।জারা পিছনে থেকে জড়িয়ে পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
-“আমার আম্মুটা কেমন আছে?”
-“ভায়ো,তুমি তেমন আতো আত্তি?”
-“আমি তো সুপার ডুপার কুল আছি।আপু এতো ভোরে ফোন করে ডাকলে সব কিছু ঠিক আছে তো?”
পল্লবী শাকটা কেটে পাশে থাকা বাটির পানিতে হাত ধু্য়ে আচলে মুচতে মুচতে বলে,
-“আজকের দিনটা তুমি পরীকে নিজের কাছে রাখতে পারবে,রাত হলে দিয়ে যাবে।”
-“তা নয় পারবো কিন্তু কী হয়েছে?”
পল্লবী জারাকে সব ঘটনা খুলে বলে।জারা সবটা শুনে বলে,
-“আমি আব্বুকে ফোন করছি,ওর বারোটা আমি বাজিয়ে ছাড়বো।”
-“না তুমি কিছু করবেনা যা করার আমি করবো।”
#চলবে_____