জীবন মানে তুমি পর্ব-২৬

0
4128

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:২৬

(৯৪)

আজ শুক্রবার,তাই সবাই বাড়িতেই আছে।কিন্তু ঘন্টাখানিক আগে আবরার কোনো একটা ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।ইয়ারাবী যখন জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে, উত্তরের বদলে ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে বাঁকা হাসি মেরে বের হয়ে যায়।সত্যিই লোকটা খুব অদ্ভুত।সকাল থেকে আবীর আর ওর শ্বশুড় মিলে আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে নতুন অতিথীর আগমনের বার্তা জানাচ্ছে।সত্যিই বাড়িটা কোনো উৎসবের থেকে কম নয়।

বিকালের দিকে ইয়ারাবী নিজের ঘর থেকে বের হয়।রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছেনা,জারবা বাসায় সেই,মেঘ ঘুমাচ্ছে,অন্যদিকে যে বন্ধুদের সাথে দেখা করবে তার ও উপায় নেই।ছুটিতে সবাই নিজেদের বাসায়।তাই কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটাহাঁটি করার চিন্তা করলো।যেই ভাবা সেই কাজ, আবরারদের ছাদটা অনেক বড়।তার একপাশে বসে মিসেস রায়হান ইকরার মাথায় সুন্দর করে তেল দিয়ে দিচ্ছেন।এরা বড়লোক হলেও তেমন একটা অহংকার নেই ভিতরে।তার জন্য তো সামান্য কর্মচারীর মেয়েকে বাড়ির বৌ করে এনেছে।

মিসেস রায়হান ইয়ারাবীকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ওখানে কেন দাঁড়িয়ে আছিস এখানে আয়।”

ইয়ারাবী মুচকি হেসে ওর শ্বাশুড়িরর পাশে যেয়ে বসে।ইকরা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তোমার কী শরীর খারাপ,মুখটা শুকিয়ে গেছে।”

-“না,আপু আমি ঠিক আছি।”

ওর শ্বাশুড়ি ইকরার চুলটা বেঁধে দিয়ে বলেন,

-“আমার সামনে বস,তোর চুলে তেল দিয়ে দি..”

-“না আম্মু থাক…”

-“সব সময় বেশি বুঝিস কেন?বসতে বলছি বস।”

নিরুপায় হয়ে ইয়ারাবীকে বসতে হলো।ওর শ্বাশুড়ি ইয়ারাবী মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে ঘাড়ের কাছে অনেক গভীর একটা দাগ দেখতে পান।উনি একবার প্রশ্ন করতে যেয়েও করতে পারেন না।জানেন শুনে কোনো লাভ হবেনা,কেননা মেয়েটা সব সময় চুপচাপ থাকে।ইকরা যতটা চঞ্চল,ও ততটা চুপচাপ।আজ পর্যন্ত মুখ ফুটে কোনো কিছু চাইনি মেয়েটা।মিসেস রায়হান নানা চিন্তা-ভাবনা করতে করতে বলে,

-“মা শোন,পরশু তোর ছোট মামাশ্বশুড়রা আসবে।তোর সাথে তো দেখা হয়নি,ব্যবসার জন্য বিয়েতে এ্যাটেন্ড করতে পারেনি।”

-“ও..”

একটা স্টাফ এসে ওদের চা দিয়ে চলে যায়।ইকরা এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে বলে,

-“ফাইকার থেকে দূরে থাকবে..”

-“ফাইকা কে আপু?”

-“আমাদের অত্যাধুনিক প্রিয় ননদ।”

ইয়ারাবী ইকরার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে যায়।মিসেস রায়হান ইকরার পিঠে হালকা থাবা দিয়ে বলেন,

-“সব সময় ফাজালামি তাইনা।শোন মা,ওর মা সব সময় চাইতো ওকে এই বাড়ির বৌ করতে।কিন্তু আবরার কখনো রাজী ছিলোনা।আসলে মেয়েটা তেমন একটা সুবিধার নয়।তাই ওরা আসলে তুই সাবধানে থাকবি।”

-“উনি কেমন আম্মু?”

-“চিন্তা করিস না,তবে বলাতো যায়না।ফাইকা আর ওর মা প্রচুর ধূর্ত মহিলা।ওরা আসলে যদি সামনা-সামনি পরে যাস তাহলে একটা সালাম দিয়ে চলে যাবি।আবরারও ওদের তেমন পছন্দ করেনা,তাই তোকে কথা বলতে দেখলে রেগে যেতে পারে।”

-“ঠিক আছে আম্মু।আপু ভাইয়াকে দেখলাম বেবীর জন্য অনলাইনে ড্রেস কিনতে..”

ইকরা হাসতে হাসতে বলে,

-“ওই পাগলের কথা বাদ দাও তো,যখন থেকে শুনেছে বাবা হবে তখন থেকে পাগলামি করছে।ওর ধারনা মেয়ে হবে,তাই আগে থেকেই লেগে পরেছে।”

-“হতেও তো পারে…”

-“তোমারও মনে হয় মেয়েই হবে…”

-“হামম,দেখো মেয়ে হবে।”

ওর শ্বাশুড়ি ইয়ারাবীর মাথায় তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিয়ে বলেন,

-“আবরার কোথায় গেল?”

-“জানিনা আম্মু,উনি আমাকে কিছু বলে যায়নি।কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে,”এখন মুড নেই পরে বলবো।”ওনার সব কিছু করার মুড থাকে শুধু আমার প্রশ্নের অ্যান্সার দেওয়ার মুড থাকেনা।”

-“আমার নামে মম্ এর কাছে নালিশ করা হচ্ছে বুঝি।”

পিছনে তাকিয়ে দেখে আবরার রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে এক কাপ কফি খাচ্ছে।মিসেস রায়হান ওর দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“কখন ফিরলি?”

-“দশ-পনের মিনিট হবে,এসে শোনলাম ম্যাডাম কত সুন্দর করে আমার প্রশংসা করছে।”

-“বাদর ছেলে,ওকে জ্বালাস কেন তুই?”

আবরার বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ওর মাকে বলে,

-“নাউজুবিল্লা মম্,ছোট বাচ্চা ভেবে এখনো জ্বালানো শুরু করেনি তাই এই অবস্থা।আর যখন জ্বালাবো তখন কী হবে সেটা ভাবতে ভাবতে আমার হাসি পাচ্ছে।”

মিসেস রায়হান আবরারের কান টেনে বলেন,

-“আবার শুরু করেছিস…”

-“আহ্,মম্ লাগছে তো।দেখ মার্কেটে আমার একটা রেসপেক্ট আছে,কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে কী হবে বুঝতে পারছো।”

-“দেখুক,এতবড় ছেলে বাদরামি করার জন্য মায়ের হাতে মার খাচ্ছে।”

আবরার মুখ লটকিয়ে বলে,

-“এখন তো বউ সব,এ কারনে মানুষ বলে বাচ্চা বিয়ে করতে নেই।বাচ্চা বিয়ে করলে বাড়ির ছেলে পর হয়ে যায়।এখন সেটা বাস্তবে দেখলাম।”

ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমি বাচ্চা নই,আঠারো চলছে আমার…”

-“তো,জারবার থেকে দুই বছরের বড়।আমিতো বাচ্চাই বলবো।”

-“আম্মু দেখুন কী বলছে?”

মিসেস রায়হান ওনার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“দেখ আর একবার যদি ওকে বাচ্চা বলে ক্ষ্যাপিয়েছিস তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।”

-“আচ্ছা,এখন বলছিনা,বেবীদের মতো আর মুখ ফুলিয়ে না।ওহ্ যা বলতে চাচ্ছিলাম,ইয়ারাবী তোমার আব্বু ফোন করেছিলো।তোমার ফোন বন্ধ ছিলো তাই আমাকে কল করে বললো,কাল একবার তোমাদের বাসায় যেতে।”

-“আমি কোথাও যাবোনা।”

-“দেখো তোমার বোনের জন্য দোয়া করা হবে,তুমি যদি না যাও কেমন দেখায়?”

-“এর আগেও যখন কিছু হয়নি এখনো হবেনা,আমি রুমে যাচ্ছি..”

ইয়ারাবী ছাদ থেকে চলে যেতেই আবরার কফির মগটা রেখে রেলিং এর উপর দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়ালো,মুখে একরাশ হতাশা।ওর মা ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

-“মেয়েটা যখন যেতে চাইছেনা তাহলে জোড় করিস না মেয়েটাকে।”

-“আম্মু ও যদি না যায় তাহলে ইলার জন্য তোমরা ওই বাসায় যেতে পারবেনা।ও থাকলে সবটা জেনে যাবে।”

ইকরা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“এমনিতেও পরে এক সময় সবটা জেনে যাবে, তখন কী করবে?”

-“তার আগে ওকে মেন্টালি ঠিক করতে হবে।মাত্র আট বছর বয়সে দু’টা খুন নিজের চোখের সামনে দেখেছে।নিজের পরিবার ওকে ওতটুকু বয়সে বোনের খুনি বানিয়েছিলো,মানসিক ভারসম্যটাও হারিয়ে ফেলেছিলো,বুঝতে পারছো ওর উপর দিয়ে কী গেছে?আজ যদি হাতে গোনা কয়েকজন ওর পাশে না থাকতো তবে মেয়েটা অনেক আগেই মারা যেতো।”

-“তো এখন ওই বাড়িতে যাবে কীভাবে?”

আবরার বাঁকা হেসে বলে,

-“ইউ নো তোমার জা আমার প্রতিটা কথা মেনে চলে,রাতের আগে এটাও মানিয়ে নিবো।”

-“সত্যি তুমি পারো বটে…”

আবরার ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“নতুন অতিথির আগমনে আজ তোমার হাতের রান্না খেতে পারবো তো।”

-“তা কেন নয়,আজ আমি নিজে রান্না করবো।তোরা নিচে আয়,একটু পরে সন্ধ্যা হয়ে আসবে তার আগেই ইকরা চলে আসবি কিন্তু।এই সময়ে সন্ধ্যায় ছাদে থাকতে হয়না।”

-“হ্যাঁ,মা তুমি যাও আমি আসছি।”

মিসেস রায়হান চলে যেতেই ইকরা আবরারের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে,

-“পরশু তোমার জিএফ আসছে…”

আবরার কিছুটা অবাক ভ্রুটা উঁচু করে বলে,

-“কোনটা,কেউ তো ফোন করেনি আমাকে…”

-“মজা করো,যা বলেছো বলেছো ইয়ারাবীর সামনে কিছু বলবেনা।ওর খুব খারাপ লাগবে।”

-“এখন বলো কার কথা বলছো..”

-“ফাইকা আসবে,তোমার বিয়েতে ছোট মামারা আসতে পারেনি।তাই পরশু অষ্ট্রিয়া থেকে আসবে।”

-“যত সব আবর্জনা,শুধু মামা আর ফারহান আসলে হতো।ওই আপদ দু’টা কেন আসছে?”

-“বৌ দেখতে আসবে,তবে ইয়ারাবীকে সাবধানে রেখো।বুঝতেই তো পারছো,ও যতই স্ট্রং হোক না কেন শ্বাশুড়বাড়ির মানুষ বলে চুপ থাকবে।”

-“হামম দেখছি,প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো।নিচে যায়,মাগরিবের আযান দিবে।”

ইকরা আর আবরার টুকটাক কথা বলতে বলতে নিচে নামে।আবরার রুমে এসে দেখে জারবা আর ইয়ারাবী হেসে হেসে গল্প করছে।আবরারকে দেখে ইয়ারাবী হাসি থামিয়ে দেয়।আবরার জারবা মাথায় একটা টুকা দিয়ে বলে,

-“মিশ্মিদের বাসা থেকে কখন আসলি?”

-“আগে বলো তুমি কোথায় ছিলে,ভাবলাম তোমাকে বলবো নিয়ে আসতে।কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ ছিলো।”

-“ওই তো ল্যাবে ছিলাম,তুই তো জানিস বেশি বিজি থাকলে ফোন বন্ধ রাখি..”

-“মিথ্যা কথা,তুমি ল্যাবে ছিলেনা।আমি ল্যাবে ফোন করলে প্রাপ্ত ভাইয়া বলে তুমি নেই ওখানে।”

কথাটা শুনে ইয়ারাবী খানিকটা চমকে আবরারের দিকে তাকায়।ও যদি ল্যাবে না থাকে তাহলে কোথায় ছিলো?আর জারবাকে মিথ্যা কেন বললো?তাহলে কী আবরার কিছু লুকাচ্ছে?এর ভিতরে মাগরিবের আযান দিয়ে দেয়।আবরার ইয়ারাবীর চোখ দেখে বুঝতে পারে ও কী ভাবছে।আবরার জারবার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“প্রাপ্তকে যখন ফোন দিয়েছিলি তখন ওর সাথে দেখা হয়নি তাই।আর পরে গল্প করিস,যেয়ে নামায পড়।মেঘ মনে হয় ঘুমাচ্ছে,ওকে যেয়ে বল নামায পড়তে।”

-“যাচ্ছিতো বকছো কেন?”

জারবা রুম থেকে যেতেই আবরার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“কখনো চোখের দেখা আর কানে শোনার মধ্যেও অনেক ভুল থাকে।তাই কোনো বিষয় নিয়ে আগে ভালো করে এপিঠ-ওপিঠ পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় নিতে হয়।আর হ্যাঁ,যা হয় সেটা কিন্তু ভালোর জন্যই হয়।”

ইয়ারাবী বোকার মতো আবরারের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে।আর থাকবে নাই বা কেন,ও আবরারের প্রতিটা কথা আর করা কাজে বোকা হয়ে যায়।তবে ও বুঝতে পারছেনা আবরার কেন ওকে এসব বললো।

(৯৫)

শীতের সন্ধ্যাগুলো অনেক নিস্তব্ধ থাকে।আর এমন নিস্তব্ধ সন্ধ্যার সাথে মিশে থাকে হাজারো কষ্টের নিঃশ্বাস।আসলে কষ্টগুলো এমন যে মানুষের ভীরে তারা ধরা দেয়না,কিন্তু নিস্তব্ধ সময়ে না চাইতেও জলের ফোয়ারার মতো প্রতিটা নিঃশ্বাসে আছড়ে পরে।ঠিক সেমনটা হচ্ছে পল্লবীর ক্ষেত্রে।আজই ও জানতে পেরেছে সায়ন অন্য নারীতে আসক্ত।আর সেই নারীটা আর কেউ নয় জারিকা।

প্রতিটা বন্ধের দিনের মতো আজও সায়ন ঘুম থেকে দেরীতে উঠে।সকাল থেকেই ওর ফোনের ম্যাসেন্জারে অনেকগুলো ম্যাসেজের টুংটাং শব্দ আসে।পল্লবী গোসল থেকে বের হয়ে ওর ফোনটা হাতে উঠিয়ে ম্যাসেজ সিন করলে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।ও ভাবতেও পারেনি বোন হয়ে বোনের সংসার ভাঙবে জারিকা।

সায়ন ঘুম থেকে উঠে পল্লবীর হাতে ফোন দেখে খানিকটা ভয় পায়।কিন্তু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।সায়নের বাবা-মা ছেলের এভাবে চলে যেতে দেখে পল্লবীকে নানা ভাষায় গালি দিয়ে কথা বলতে থাকে।এক পর্যায়ে ওর শ্বাশুড়ি পানের পিক ফেলে বলে,

-“কেমন বৌ তুমি,তোমার বর না খেয়ে চলে গেলো আর তুমি সেখানে মেয়েকে আরাম করে গেলাচ্ছো।”

পল্লবী ওনাকে কিছু না বলে চুপচাপ মেয়েকে খাওয়াতে থাকে।ওর শ্বাশুড়ি আবার বলে উঠে,

-“দেখো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে তাই বলে স্বামী চলে যাবে আর তুমি বসে বসে খাবে।জানো তোমার শ্বাশুড় না খেলে আমি খেতাম না,ভুল যারই হোক না কেন তুমি যেয়ে ক্ষমা চেয়ে নিবে।”

পল্লবী এবার আর চুপ থাকতে পারলোনা।ও প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

-“ওহ্ তো আপনার স্বামী যদি পরকীয়া করে বেড়াতো তবে আপনিও তাকে কিছু বলতেন না।”

-“পল্লবী তোমার তো সাহস মন্দ নয়,তুমি তোমার শ্বশুড়ের নামে উল্টো-পাল্টা কথা বলছো।”

-“কী গায়ে লাগতো তাইনা মা,আপনাও ছেলেও পরাকীয়া করে বেড়ায়।আর সেটা আমি দেখেও চুপ করে থাকবো আপনি ভাবলেন কী করে?”

ওর শ্বাশুড়ি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,

-“নিজেদের মধ্যে সামঝোতা করে নাও,এটা নিয়ে আর বেশি ঘাটিয়োনা।পানিতো যতো নামবে ততো ঘোলা হবে।মানুষ মাত্র ভুল করে,সমাজের মানুষ জানলে আমার ছেলের কী হবে বুঝতে পারছো?”

-“আপনার ছেলে কোনো বাচ্চা নয় মা,ভালো খারাপের জ্ঞান আছে তার।আর সামঝোতা করার কথা বলছেন।এই পর্যন্ত সামঝোতা করেই চলেছি তবে আর নয়।এবার আমি করবো আর আপনারা দেখবেন।আর হ্যাঁ,ভুলেও আমাকে আটকানোর চেষ্টা করবেন না।নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”

হঠাৎ ওর মেয়ে পরীর আধো আধো কথায় ও বাস্তবে ফিরে আসে।পরীর ওর গালে হাত দিয়ে বলে,

-“মাম্মা,তুমি কাতো কেনো?”

-“কিছুনা সোনা,”

-“ওহ্ আমি ভাবলাম তুমাল কেউ বকা দিতে।”

-“আমাকে কে বকবে সোনা?”

-“আমাল খুতা লাগতে,থাবো..”

পল্লবী ওর কথা শুনে হেসে দেয়।মেয়েটার সত্যিই খুব মায়াবী পরীর মতো।কেউ ওর উপর রাগ করতে পারবেনা।ওর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে বলে,

-“মেয়েদের কখনো দুর্বল ভাবতে নেই সায়ন,আর দশটা পাঁচটা মেয়ের মতো মুখ বুজে স্বামীর অন্যায় মেনে নিবো সেটা কখনো ভেবো না।আর না নিজের বাবার বাড়ি যাবো।এটা আমার সংসার,আর আমি এখান থেকে কোথাও যাবোনা।এবার তুমি দেখবে আমার রুপ।এবার থেকে আমি বলবো আর তুমি শুনবে।”

-“ও মাম্মা,থাবো দাও..”

-“আম্মু একটু বসো আমি তোমার জন্য নুডুলস্ নিয়ে আসি।”

-“আততা,কাটাপ থিবে..”

-“আম্মু ওটা কাটাপ না ক্যাচাপ হবে…”

পরীর একটা হাসি দিয়ে মেঝেতে বল নিয়ে খেলতে থাকে।পল্লবী রুম থেকে বের হবে সেই সময় সায়ন ঘরে ঢুকে ওকে বলে,

-“যখন সব জেনেই গেছো তখন আর লুকিয়ে কী লাভ?আমার ডিভোর্স চাই…”

পল্লবী রুম থেকে বেরতে যেয়ে আবার ওর দিকে ঘুরে বলে,

-“কী চাই তোমার?”

-“ডিভোর্স চাই,আর হ্যাঁ মেয়েটাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবে।”

কথাটা সায়নের বলতে দেরী হলেও ওর মুখে থাপ্পড় পড়তে দেরী হয়নি।পল্লবীর মেয়ের ওর মায়ের কাজ দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।পল্লবী ওর মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,

-“সোনা তুমি একটু ফুপির কাছে যাও,আমি তোমার নাস্তা নিয়ে আসছি।”

-“আততা মাম্মা…”

পরী যেতেই পল্লবী সায়নের শার্টের কলার ধরে বলে,

-“আজ যা বললি বললি,যদি আর একবার বলিস তাহলে ওর শরীরে আর মাথা থাকবেনা।”

-“পল্লবী তুমি কিন্তু বেশি করছো..”

বলেই সায়ন একে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলতে গেলেই ওর হাতটা উল্টে ধরে মুচরিয়ে ধরে বলে,

-“কী ভেবেছিলি,এসব শুনে বাকী মেয়েদের মতো তোর পায়ে পরবো।আজকের পল্লবী আর আগের পল্লবীর মধ্যে অনেক তফাত।ফের যদি তোকে এমন কিছু করতে দেখি তো…”

কথাটা বলে পল্লবী ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে যেতেই সায়ন ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।ও কখনো কল্পনাতেও পল্লবীর এই রুপের সাথে পরিচিত ছিলোনা।হঠাৎ আজ এই রুপ দেখে থমকে যায় ও।ও তো ভেবেছিলো পল্লবীকে ছেড়ে দিয়ে জারিকার সাথে নতুন করে একটা সংসার করবে।কিন্তু ওর সব আশায় পানি পরে গেলো।ও কিছু একটা ভেবে জারিকার নাম্বারে কল করলো কিন্তু বারবার ওর ফোন বিজি আসছে।ওর মাথা কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।

(৯৬)

সবাই ডিনার করতে বসেছে,সার্ভেন্টরা এটা-ওটা এনে টেবিলে রাখছে।আজ মিসেস রায়হান নিজের হাতে বিরিয়ানি,সর্ষে ইলিশ,ইলিশ ভাপা,মিট চপ, কাবাব, চিংড়ি মাছের মালাই কারি,খাসির মাংসের রেজালা,মুরগির রোষ্ট,রুই মাছের মুড়িঘন্টো,দই , সবজি আর সালাত করেছেন।মিসেস রায়হান সবার প্লেটে খাবার পরিবেশন করে দেন।মি.রায়হান খাবারের দিকে তাকিয়ে বলেন,

-“যাক,বড় বৌ মার দৌলতে রাতের সময় এগুলো খেতে পারছি..”

-“এমনভাবে বলছো যে এসব খাও না।”

-“না সেটা নয়,তবে তোমার মেজো ছেলের জন্য তো রুটিনের বাইরে খুব কম খাওয়া হয়।”

আবরার পানি খেয়ে বলে,

-“হেল্থের জন্য যেটা ঠিক আমি সেটাই করি বুঝছো।”

সবাই খাচ্ছে এমন সময় জারবা খেতে খেতে বলে,

-“বড় ভাইয়াতো বিয়ের কিছুদিন পরে হানিমনে গেছিলো,কিন্তু তোমরা কবে যাবে মেজো ভাইয়া?বিয়ের তো চারমাস হয়ে গেলো?”

-“আগে ওর পড়া শেষ হোক তারপর…”

মি.রায়হান ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“ওর পড়া শেষ হতে কমপক্ষে তিন-চার বছর লাগবে তারপরও আরো কিছু করা বাকী।তাছাড়া ওর এখন ছুটিও আছে তাই বলছিলাম তোমরা কিছুদিনের জন্য কোথাও ঘুরে এসো।”

-“বাট্ ড্যাড….”

-“কোনো কিন্তু নয় আবরার,ওর ও মাইন্ড ফ্রেসের দরকার আছে।তাহলে তোমরা কোথায় যাবে বলো?”

আবরার একবার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে,

-“তাহলে দেশের বাইরে যায়,কিছুদিনের জন্য লন্ডন থেকে ঘুরে আসি।”

-“তাহলে তাই হবে,পরশু তোমাদের যাওয়ার ব্যাবস্থা করছি।ইয়ারাবী তোমার কাগজপত্র আছে?”

-“জ্বি আব্বু…”

-“তাহলে সকালে আমাকে দিও,আর বাকী আমি করে দিবো।”

-“তাহলে তিন-চারদিন পরে যাওয়া হচ্ছে…”

বিভিন্ন কথার মধ্যে দিয়ে ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায়।ইয়ারাবী ড্রেস চেন্জ করতে ওয়াশরুমে যেতেই আবরার বেলকনিতে যেয়ে কাউকে ফোন করে বলে,

-“এইতো সোম-মঙ্গলবারে লন্ডনে যাবো,আমি চাই তুমি একবার ওকে দেখো..”

-“ঠিক আছে,বাট্ ওকে না জানিয়ে কীভাবে সম্ভব।”

-“আই নো বাট্ তুমি চিন্তা করোনা,তুমি শুধু রেডি থেকো।”

-“ওকে…”

-“থ্যাংকস্ ইয়ার,তাহলে ইয়ারাবীকে নিয়ে আসবো।”

আবরার ফোন কেঁটে দিয়ে পিছনে ঘুরে চমকে যায়।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?”

আবরার কিছুটা হেসে বলে,

-“লন্ডনে আমার কিছু ফ্রেন্ড আছে,বিয়েতে আসতে পারেনি।তাই তোমাকে দেখতে চেয়েছে, ওদেরকে বললাম আরকঅ।”

-“ওহ্,বাইরে খুব ঠান্ডা পরছে ভিতরে আসেন।”

-“হামম,চলো…”

রুমে এসেই ইয়ারাবী বিছানায় নিজের শুয়ে পড়লে আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“পড়া নেই নাকী,শুয়ে পরলে যে?”

-“মাথা ব্যাথা করছে তাই…”

আবরার সোফা থেকে উঠে কাবার্ডের একটা ড্রয়ার খুলে মুভ বের করে ইয়ারাবীর পাশে বসে।ইয়ারাবী কপালের দু’পাশে কারোর হাতের স্পর্শে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আবরার ওর কপালে পরম যত্নে মুভ লাগিয়ে দিচ্ছে।

-“আপনার এসব করতে হবেনা।এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে।”

-“ডাক্তার আমি, তুমি নও বুঝলে।”

-“যানেন ফ্রেন্ডরা বলতো ডাক্তার বিয়ে করা মানে লাইফটা ঝালাফালা হয়ে যাওয়া।তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি।”

আবরার ওর কথা শুনে হেসে দিয়ে বলে,

-“আজ বুকে ঘুমাবে?”

ইয়ারাবী ওর কথা শুনে চুপ করে থাকে।আবরার বুঝতে পারছে ও লজ্জা পাচ্ছে।তাই ও নিজেই ইয়ারাবীর মাথা নিজের বুকে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।ইয়ারাবী চোখ বন্ধ করে চুপ করে আছে।

-“ইয়ারাবী…”

-“জ্ জ্বি..”

-“তুমি আমাকে দেখে লজ্জা কেন পাচ্ছো,যেখানে আমি তোমার সাথে সহজ হতে চাইছি ওখানে তুমি নিজেকে আরো জটিল করে তুলছো।একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

-“বলেন…”

-“ভালোবাসো আমায়?”

ইয়ারাবী কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছেনা।এটা ঠিক আবরারকে দেখলে ওর অন্যরকম ফিল আসে,ওর ছোট ছোট কেয়ার,শাসনগুলো ভালো লাগে।কিন্তু এটা ভালোবাসা কিনা জানেনা।তাই ও সাবলীলভাবে উত্তর দেয়,

-“জানিনা…”

আবরার ওর মাথায় চুমু দিয়ে বলে,

-“জানতে হবেনা,তবে এটা জেনে রাখো কাল আমরা ওই বাড়িতে যাচ্ছি…”

-“আমি যাবোনা,আপনি যান…”

-“তোমার কাছে অপশন চাইনি,আমরা যাবো ব্যাস।তুমি জানো,আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল: কোন নারী সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বললেন ঐ নারীই উত্তম, যে নারী তার স্বামীকে আনন্দ দেয় যখন সে তার দিকে তাকায়; তার আনুগত্য করে, যখন সে নির্দেশ দেয় এবং তার নিজের ও সম্পদের ব্যাপারে সে যা অপছন্দ করে তার বিরুদ্ধাচরণ করে না।” (ইমাম নাসায়ী হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।”

ইয়ারাবী ওর বুকে মাথা রেখে গুটিগুটি হয়ে শুয়ে বলে,

-“আবরার আপনি কিছু জানেন না।”

-“আমি সব জানি,তুমি যাবে তোমার আপুনির জন্য দোয়া করবে দ্যান আমরা চলে আসবো।”

-“আপনি যত সহজ বলছেন ততটা নয়…”

-“একদম ইজি,দেখ যা হয়েছে সেটাই তোমার কোনো হাত ছিলোনা।তাহলে কেন নিজেকে গুটিয়ে রাখো?”

-“এই ভয়টা যে আমাকে তাড়া করে বেড়াই…”

-“ঘুমানোর চেষ্টা,নয়তো বেশি ব্যাথা হবে।”

-“আপনি কিছু ভুলে যাচ্ছেন?”

আবরার হেসে বলে,

-“না ভুলি নাই,তবে এমন অবস্থায় ওই মেডিসিন দেওয়া যাবেনা তাই…”

-“ওহ্হ্,আবরার একটা কথা বলি..”

-“বলো..”

-“আমাকে সূরা-ইয়াসীন পড়ে শুনাবেন,আপনার কন্ঠে ভালো লাগে।”

-“ঠিক আছে,কিন্তু তার আগে তুমি চোখ বন্ধ করো।”

ইয়ারাবী চোখবন্ধ করলে আবরার লাইট অফ করে ব্লাঙ্কেটটা ভালো করে গায়ে টেনে সূরা-ইয়াসীন পড়তে থাকে।এটা এমন একটা সূরা যা শুনলে মনটা জুড়িয়ে যায়।আবরার যেমন একটা মেয়ে খুঁজছিলো ইয়ারাবী ঠিক তেমনি।অন্য মেয়েদের মতো কোনো ন্যাকামো করেনা,যেটা আবরারকে খুব মুগ্ধ করে।

(৯৭)

ইয়ারাবী দরজার চৌকাঠে পা রাখতেই সবাই যেনো ভুত দেখার মতো চমকে যায় শুধু দু’টা মানুষ বাদে।তারা হলো ইফাজ আর য়ুহার,ওদের হাসি দেখে মনে হচ্ছে এটা হওয়ার ছিলো।আজ এই বাড়ির মানুষ শুধু চমকাচ্ছে।কেননা য়ুহারও এই বাড়িতে ইস্মিতার মৃত্যুর পর ওর সম্পর্কীয় কোনো কিছুতে আসতো না।কিন্তু আজ ও এসেছে।

ইয়ারাবীর ফুপিরাও এসেছে কিন্তু ওর চাচারা আসেনি,এটা কেউ বুঝতে পারেনা উনারা কেন আসেন না?ইয়ারাবী আজ খয়েরী কালারের বোরখা পড়েছে।বরাবরের মতো মুখটা নেকাবে আবৃত।তারা দৌঁড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বোনকে।

-“পুতুলটাকে যে কতদিন দেখিনা,ভালো আছিস তুই?আবরার তুমি কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ্‌,আমরা ভালো আছি।আপু আপনি কেমন আছেন?”

-“আমিও ভালো আছি,তোমরা ভিতরে এসো।”

ইয়ারাবীকে দেখে ওর খালারা কিছু বলতে গেছিলো কিন্তু পিছনে আবরারের উপস্থিতি টের পেয়ে চুপ করে যায়।মিসেস ইশানি মেয়ের মুখে হাত দিয়ে বলে,

-“কেমন আছিস আম্মু?”

ইয়ারাবীর কথাটা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।ওর মা ওকে আম্মু বলে ডাকছে।এটা কীভাবে সম্ভব নাকী লোক দেখানো?ও হাসার চেষ্টা করে বলে,

-“ভালো আছি..মনি তোমরা কেমন আছো?আচ্ছা খালামনি আসেনি?”

-“আরে বাবা সবাই আসছে,তোরা রুমে যেয়ে রেস্ট কর।মিনা তোদের নাস্তা নিয়ে যাচ্ছে…”

আবরার হেসে ওর মনির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“এতো ব্যস্ত হবেন না ফুপি…”

-“জামাই বাড়িতে এসেছে আর আমরা ব্যাস্ত হবোনা।তোমরা উপরে যাও,ইয়ামিলা তোর আপুর রুমটা খুলে দিয়ে আয়…”

ইয়ামিলা ওর আপুর হাত ধরে বলে,

-“চলো আপু,…”

ওরা উপরে যেতেই জারিকা ওর বড় ফুপুর কানে কানে বলে,

-“ও এখানে কেন এলো বলেনতো?”

-“সেটা আমি কীভাবে বলবো,ওর বরের জন্য তো কিছু বলতেও পারলাম না।”

-“আপনি কিছু বলেন আর না বলেন আমি তো বলবো…”

য়ুহার ওদের কথা শুনে বলে,

-“খাল কেটে কুমির আনার মানে বুঝিস।যদি বুঝে থাকিস তবে এটা জেনে রাখ,আবরার হচ্ছে সেই কুমির।ভুলেই ইয়ারাবীকে কিছু বলতে যাসনা।”

-“ত্ তুমি কী বলছো এসব?”

-“দেখ জারিকা,আমি একজন লয়ার।কোনো অপরাধীর চোখ দেকে বুঝতে পারি কী হবে।সুতরাং আমাকে বুঝাতে আসিস না।”

মিসেস জামান এই য়ুহারকে দেখে একটু হলেও কেন জানি ভয় পান।মেয়েটার চোখটা খুব মারাত্মক,অন্যায় দেখলে ছেড়ে কথা বলেনা।আর যদি সেটা ইয়ারাবী রিলেটেড হয় তবে তো কোনো কথাই নেই।মিসেস জামান বুঝতে পারেনা ইয়ারাবী ওর রক্তের বোন না হয়েও এত প্রতিবাদ কীসের?

আবরার ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে ইফাজদের সাথে যেয়ে কথা বলছে আর এদিকে ইয়ারাবী চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। য়ুহার আর তারা একসাথে কথা বলতে বলতে রুমে ঢোকে।য়ুহার এসে বিছানায় বসতেই ইয়ারাবী ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।তারা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তোকে এমন লাগছে কেন?”

-“তেমন কিছুনা স্টারপু,ওই একটু আরকী?”

য়ুহার ইয়ারাবীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

-“হ্যাঁ রে,আবরার তোকে ভালোবাসে তো?”

-“জানিনা আপু,কোনোদিন বলেনি…”

তারা ওর হাতটা ধরে হাসতে হাসতে বলে,

-“পাগলি ভালোবাসলে কী বলতে হয় নাকী?অনেক সময় কথা আর কাজেও প্রকাশ পায়..”

য়ুহার ওকে বলে,

-“তোদের মধ্যে সব কিছু হয়েছে?”

ইয়ারাবী য়ুহারের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“তুমি যা বলছো ওসব কিছু হয়নি,উনি বলেছেন বিশ বছর না হলে ওসব কিছু করবেন না।আর বেবী সেটা আমার লেখাপড়ার পর।জানো আপু ইকরা আপুর বেবী হবে,আমারও বেবী অনেক ভালো লাগে।কিন্তু উনি বলেছেন স্ট্যাডি কম্পিলিট না হওয়া পর্যন্ত বেবী নিবেনা।”

য়ুহার বেবীর কথা শুনে চুপ করে যায়।ও মুখে হাসি টেনে বলে,

-“ঠিকই তো বলেছে আবরার,তুই নিজেই একটা বাচ্চা।আবার বাচ্চা সামলাবি কী করে।তাছাড়া অনেক বড় একজন বিচারক হয়ে নিন্দুকদের মুখের উপর জবাব তো দিতে হবে তাইনা।”

-“ঠিক বলেছো আপু,আমার ড্রিমটা ওরা সবাই মিলে শেষ করেছে।কিন্তু ওরা জানেনা একটা স্বপ্ন ভাঙলে আরেকটা স্বপ্ন গড়া যায়।তবে যাই বলো কেন বেবী আমার খুব ভালো লাগে।ওদের কচি কচি হাত-পা,ওদের টোল পড়া গাল,ওদের হাসি,আধো আধো বুলিতে মা ডাকা,হাঁটতে শেখা তুমি ভাবতে পারছো আপু কতটা আনন্দের।ভাবতেই অনেক ভালো লাগে।তুমি জানো তো এই জন্য আমি বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করি।ওই বাচ্চাগুলো যখন আমাদের মা বলে ডাকে সত্যিই খুব একটা ভালো লাগা কাজ করে।আর যখন নিজের বাচ্চা ডাকবে তখন…”

কথাগুলো বলে ইয়ারাবী হাসতে থাকে।য়ুহার ভাবতে থাকে, মেয়েটা বেবী নিয়ে কত স্বপ্ন দেখছে কিন্তু বেচারি জানেনা ও কোনোদিন মা হতে পারবেনা,আর যদিও চান্স থাকুক না কেন ওর প্রান সংশয়।আর আবরার ওর প্রানের সংশয় হয় এমন কাজ করবেনা।

নিয়তি কতটা নিষ্ঠুর।আমরা না চাইতেও এমন কিছু মুহুর্ত আমাদের সামনে আসে যা আমরা কখনো চাইনা,আবার কখনো কখনো সেটা সহ্য, করার ক্ষমতাও আমাদের থাকেনা।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here