#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Irini Ori
#পর্ব:১১
(৪০)
ইয়ারাবী আর কিছু বলেনা।ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।যেহেতু ইয়ারাবী আর আবরার পাশাপাশি দুটো সোফায় বসেছে সেই অনুযায়ী কাজী তাদের সামনে বসে।কাজী এসে বিয়ে পড়াবে এমন সময় ইয়ারাবীর চোখ দু’টো হল রুমের চারপাশে যায়।যতই মারামারি,ঝগড়া হোক এই সময় প্রতিটা মেয়ে চায় তাদের বাবা মা তাদের পাশে থাকুক।ইয়ামিলা চুপচাপ ইয়ারাবীর ওড়নার এক পাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মিসেস রহমান ইয়ারাবীর ওভাবে তাকানো দেখে ওর মাথায় হাত রেখে বলে,
-“ভয় পাসনা,আমি তোর খালু সবাই আছি।”
কথাটা শুনে ইয়ারাবী ছোট একটা মলিন হাসি দেয়।ওর খালা বুঝতে পেরেছে ইয়ারাবীর মনের কথা।কেননা সেও একজন মেয়ে।ওর খালার খুব রাগ হয় মিসেস ইশানির উপর।ওর বাবা না হয় ব্যাস্ত কাজে কিন্তু মা এসেতো থাকতে পারে।বিয়ে পড়ানোর কিছুক্ষণ আগে উনি মিসেস ইশানিকে ইয়ারাবীর কাছে থাকতে বললে বলে,
-“দেখ আপু,তুই তো আছিস ।তাছাড়া আদিবার শরীরটা ভালো নেই।বড় আপু আত্মীয়দদের সাথে কথা বলছে।এখন যদি আদিবাকে এই অবস্থায় একা রাখি বেচারি মন খারাপ করবে।”
-“আপু নাই কথা বলছে বুঝলাম,ওর বোন সাদিয়াতো আছে।ওকে বসতে বল।ফুয়াদ খাওয়া-দাওয়ার দিকটা দেখছে।”
-“দেখ আপু সাদিয়া বাচ্চা মেয়ে ,ও কোথায় আনন্দ করবে তা নয়।তোর জন্য রুমের মধ্যে বসে থাকবে।”
-“আর তোর মেয়ে?আর ঘন্টাখানিক পর চলে যাবে সেটাতো জানিস?দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝিসনা।”
-“হামম,তো।বিয়ে হলে তো যেতে হবে।দেখ ওকে নিয়ে এতো ডং করার সময় নেই।”
মিসেস রহমান বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।মি.রহমানের কথায় মিসেস রহমানের ধ্যান ভাঙে।ওনি কাজীকে বিয়ে পড়াতে বলেন।কাজি শুরু করবে এমন সময় জারারা এসে আটকে দেয়।
-“এক মিনিট দাঁড়ান।”
-“কী ব্যাপার জারা,এভাবে শুভ কাজে বাধা দিলি কেনো তুই?”
-“খালা পুরো বিয়েটা ভিডিও করবো তাই।”
-“ক্যামেরাম্যান তো করছে।”
-“আরে বাবা আমার মোবাইলে করবো।এবার শুরু করেন।”
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে।ইয়ারাবীর কাছে প্রশ্ন করে ও এই বিয়েতে রাজী কিনা।ইয়ারাবীর ওর খালার দিকে তাকাই।ওর খালা ও বাম হাত শক্ত করে ধরে ইশারা করে।ওই সঙ্গে সঙ্গে বলে রাজী আছে।কাজী এটা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।তারপর আবরারের কাছে শোনে কবুল করবে কিনা।আবরার এক সেকেন্ডও দেরি না করে কবুল বলে।ওর ব্যবহার দেখে ইরাকরা জোরে হেসে দেয়।তারপর সিগনেচার করবে এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে জোরে একটা চিৎকার শোনা যায়।বাইরের কিছু মানুষ বাড়ির মধ্যে যায় সাথে আবরার আর ইয়ারাবীও যায়।চিৎকারটা গেস্টরুম থেকে আসছিলো।ওরা যেয়ে দেখে আদিবা রুমের এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।চোখে অনেক ভয় কাজ করছে।
মিসেস জামান আর ইশানি দৌঁড়ে আদিবার কাছে যান।ইশানি আদিবার মুখে হাত দিয়ে বলে,
-“কী হয়েছে আম্মু,ভয় পেয়েছিস?”
-“আদিবা বল কী হয়েছে?”
আদিবা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মা আমি ওয়াসরুম থেকে ব্ বের হয়ে দেখলাম ক্ কেউ আমার মতো দ্ দেখতে সেম ড্রেসে খাটের ওপর প্ পা ঝুলিয়ে বসে আছে।অ্ আমাকে দেখে খ্ খুব বাজে ভ্ ভাবে হাসছিলো।আর ব্ বললো আমাকে ছাড়বেনা।”
আবরার এসব শুনে বলে,
-“এগুলো আপনার মনে ভুল।”
আদিবা দৌঁড়ে আবরারের হাত ধরে বলে,
-“বিশ্বাস করেন আমি সত্যি বলছি।”
ইফাজ আদিবাকে সরিয়ে নিয়ে বলে,
-“লিসেন আদিবা,আই থিন্ক তুমি অনেক সিক।খালা একে বাসায় নিয়ে যাও এন্ড ভালো ডাক্তার দেখাও।পিচ্চি চল এখনো রেজিস্ট্রেশন বাকী আছে।”
মিসেস ইশানি ইফাজকে ধমক দিয়ে বলে,
-“দেখছিস মেয়েটা অসুস্থ আর তুই বিয়ে নিয়ে পরলি।”
-“লিসেন খালা,বাড়ি ভর্তি মানুষ তাই কোনো সিনক্রেট করতে চায়না ।তাছাড়া একজনের লো কোয়ালিটি ড্রামার জন্য আমার বোনের জীবন দুর্দশা করতে চায়নি।সরি আবরার প্লীজ চলো,পিচ্চি চল।ভাগ্যিস বাকীরা রুমে নেই।”
ওরা হল রুমে ফিরে আসে।মি.রহমান আর ফুয়াদ সবটা সামলে নেয়।পেপারে সাইন করার সময় ইয়ারাবীর খুব কষ্ট হচ্ছিলো।ও বন্ধুদের কথাগুলো কানে বাজছিলো।অনেকে বলেছিলো,”এখন দেখবি এক রুপ বিয়ের পর আরেক রুপ।দেখবি তোর জীবনে কোনো স্বাধীনতা থাকবেনা।ভাগ্য ভালো হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবি আর খারাপ হলে ওর রান্নাঘর অব্দি সীমা।”
পরক্ষনে ওর নিজের জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পরলো।ও আগে কখনো স্বাধীন ছিলো নাকী সন্দেহ।ওর ইচ্ছার দাম বাবা-মা রাখিনি।ওকে শুধু হাতে গুনা কয়েকজন ভালো বেসেছে।মি.ফুয়াদ দূর থেকে মেয়েকে দেখে যাচ্ছেন।মি.রহমান ইয়ারাবীর মাথায় হাত রেখে সাইনটা করতে বলে।ইয়ারাবী কাঁপা হাতে সাইনটা করে দেয়।পরে আবরার সাইন করে দিলে সবাই দোয়া করে ওদের জন্য।জোড়ে যায় এক অদৃশ্য বন্ধনে।
ওদের খাওয়া হয়নি তাই ওদেকে ফুড সাইডে নিয়ে খাবার দেয়।যারা যারা খাইনি তারা সবাই বসে যায়।আজ ইয়ারাবীর অনেক ইচ্ছা ছিলো একটু হলেও মায়ের হাতে খাবে।কিন্তু ওর মা আসবেনা সেটা ও জানে।ইয়ারাবীর হাত ভর্তি জুয়েলারি।ও ওর খালার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আজ শেষ মতো একটু খাইয়ে দেবে খালামনি?”
ওর খালা কথাটা শুনার সাথে সাখে কেঁদে দেয়।তারপর নিজের হাতে ইয়ারাবীকে খাইয়ে দিতে থাকে।যেহেতু আবরারের পাশে বসে ছিলো তাই খাওয়ার সময় ও সবটা খেয়াল করে।
খাওয়া-দাওয়ার পর্বে অনেক দেরি হয়ে যায়।এবার রওনা দেবার জন্য বের হবে।কিন্তু ওর বাবা-মা একজনও সেখানে উপস্থিত নেই।শুভ ভিতরে যেয়ে ইয়ারাবীর ট্রলি নিয়ে আসে।ইরাক সাইডে যেয়ে কাকে যেনো ফোন করে।কিছুক্ষণ পরে ইয়ারাবীর বাবা-মা বের হয়।মিসেস ইশানি মেয়েকে কিছু না বলে আবরারের ভাবির সাথে কথা বলতে থাকে।মি.ফুয়াদ ইয়ারাবীর হাতটা ধরলে ও অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।মি.ফুয়াদ মেয়ে কান্ড থেকে বিন্দুমাত্র অবাক হোন না,জানেন এটা ওনার প্রাপ্য।উনি ইয়ারাবীর হাতটা নিয়ে আবরারের হাতে দিয়ে শুধু বলেন,
-“দেখে রেখো,ভুল করলে শাসন করো।”
আবরারও একটা আশ্বাসের হাসি দেয়।ওনি কিছুক্ষণ ওনার বসের সাথে কথা বলে ভিতরে চলে যান।আবরার ইয়ারাবীর আর ওর মায়ের ব্যাবহারে খুব অবাক হয়। বিদায়ের সময় ইয়ারাবী ওর ইরাকদের তিন ভাইর আর ওদের বাবা-মা, ফুপি,তারা, জারা,শুভ আর নিলয় আর বিশেষ করে অনুকে জড়িয়ে কান্না করে।ফিরেও ও ওর বাবা-মায়ের কাছে যায় না আর না তারা আসেন।ইরাক আর ইভাজ আবরারের সাথে কিছুকথা বলে যেটা ইয়ারাবী শুনতে পায়না।ওরা গাড়িতে উঠবে এমন সময় ইয়ামিলা ওর আপুর হাত আটকে ধরে বলে,
-“আপু একটু দাঁড়া,আমি যাবো আর আসবো।প্লীজ যাসনা।ভাইয়া প্লীজ একটু দাঁড়ান আমি দু মিনিট না না তার আগেই চলে আসবো।একটু পরে যেয়েন আপুকে নিয়ে প্লীজ।”
আবরার হেসে ইয়ামিলার গাল টেনে দিয়ে বলে,
-“ঠিক আছে বুড়ি,তুমি যখন বলেছো তোমার আপুকে নিয়ে পরেই যাবো।আমরা ওয়েট করছি।”
ইয়ামিলা একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে দৌঁড়ে ভিতরে চলে যায়।ইয়ারাবী বুঝতে পারেনা ও ওদের আটকালো কেন।ওর হঠাৎ করে সবকিছু খারাপ লাগতে শুরু করে।ইয়ামিলা এক মিনিটের মধ্যেই হাসতে হাসতে দৌঁড়ে ইয়ারাবীর সামনে দাঁড়ায়।ইয়ারাবীর ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।ইয়ামিলা হাত পিছন থেকে সামনে নিয়ে অনেক বড় একটা চকলেট বক্স বের করে আর বলে,
-“আপু আমি তো সব সময় তোর চকলেট কেড়ে নিতাম।আমার জন্য তুই চকলেট খেতে পারিসনা।কিন্তু আমি জানি চকলেট তোর খুব প্রিয়।তাই কাল স্কুল থেকে আসার সময় এটা তোর জন্য কিনেছি।”
ইয়ারাবীর বোনের প্রতি রাগ থাকলেও এখন সেটা আর নেই।ও অনেক কষ্টে নিচে ঝুঁকে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
-“আমার লাগবেনা এটা তুই রাখ।এসব এখন আর খাইনা আমি।”
-“প্লীজ আপু রাগ করে থাকিস না।”
ইয়ারাবীর চকলেট বক্স থেকে মাত্র চারটা চকলেট বের করে সবটা ইয়ামিলাকে দিয়ে বলে,
-“তোর উপরে আমি রাগ করে নেই।দেখ তুই বললি বলে চকলেট নিলাম।তুই তো জানিস তোর এই দ্যা গ্রেট ডাক্তার ইফাজ ভাইয়া এসব খেতে মানা করেছে।”
ইয়ারাবীর ঝুঁকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে,পেটে আর বুকে হালকা ব্যাথা শুরু হয়েছে।ও উঠতে গেলে ইয়ামিলা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে।নিরুপায় হয়ে ইয়ামিলাকে ওর কোলে নিতে হয়।কিন্তু ওর কোলে রাখতে খুব কষ্ট হয়।মিসেস ইশানি যেয়ে মেয়েকে অনেক কষ্টে ছাড়ান।যেহেতু বিয়ে বলে কথা তাই ইয়ারাবীর সাথে ইফাজ আর অনু যায়,তবে ইফাজের গাড়িতে।
আবরার যে প্রাইভেটে আছে সেটাতে,ড্রাইভার, আবীর আর জারবা আছে।ইয়ারাবী গাড়িতে বসায় কিছুক্ষণ পর বুকের ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।ব্যাথা চেপে রাখতে না পারাই এক পর্যায়ে ওর চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে।আবরার ফোন টিপছিলো।হঠাৎ ইয়ারাবীর দিকে চোখ যাওয়ায় দেখে ও বাইরের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে।আবরার ইয়ারাবীর কাধে হাত রাখতেই ও চোখের পানি মুছে ফেলে।আবরার ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
-“এখন হাজার চাইলেও তুমি এই চোখ আমার থেকে লুকাতে পারবেনা।”
আবরার আর কিছু বলতে যাবে তখনি জারবা ওর ভাইকে গুতা মেরে বলে,
-“ছোট ভাইয়া ভুলে যাসনা গাড়িতে আমিও আছি।তাছাড়া ওয়েডিং নাইটের জন্য কিছু তুলে রাখ।”
আবরার ওর মাথায় এক গাট্টা মেরে বলে,
-“সব সময় তোর ফাজলামি না।পড়াশোনায় তো মন নেই ফাজলামিতে পিএইচডি করেছিস।”
-“বড় ভাইয়া দেখো ছোট ভাইয়া আমাকে মারছে।”
-“এখন ওর বৌ এসেছে বৌকে বিচার করতে বল।”
আবীর সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে।জারবা আবীরের কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।এদের ভাই বোনের কান্ড দেখে ইয়ারাবীর খুব হাসি পাচ্ছে।
(৪১)
গাড়িটা বাড়ির সামনে দাড়ালে সবাই নেমে পরে।আবরারের মা বরণ করার জন্য সব কিছু রেডি করে রেখেছিলো।দরজার কাছে দাঁড়াতেই ওর মা ইয়ারাবীকে বরন করে ভিতরে নিয়ে সোফায় বসায়।পদার্পণ করলো ইয়ারাবী এক নতুন জীবনে।এক অচেনা ব্যাক্তির সাথে অদৃশ্য বন্ধনে আজীবনের জন্য আটকে গেল।জানা নেই সামনের দিনগুলো কেমন হবে ওর জন্য।এখানেও কী পারবে সবার মন জয় করতে নাকী অবহেলা পাবে।
এসব কথা যখন ভাবছিলো তখন কেউ মিষ্টি জাতীয় খাবার আবরার আর ইয়ারাবীর সামনে রাখে।ইয়ারাবীর পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে,ওর ভয় হচ্ছে যদি এগুলো খেয়ে আরো ব্যাথা হয়।মিসেস রায়হান হাসি মুখে একটা মিষ্টি কেটে ওর মুখে তুলে দিলেন।ইয়ারাবী না চাওয়া সত্ত্বেও খেয়ে নেয়।এরপর ইকরা ইয়ারাবীকে নিয়ে আবরারের রুমে ভেতরে যেতে গেলে জারবা আর তার কিছু কাজিন দরজায় আটকে দেয়।
-“জারবা এভাবে আটকাচ্ছো কেন?তুমি জানো মেয়েটা কত টায়ার্ড তারপরও?”
-“আহ্ ভাবী ভুলে গেলে,রুমে ঢুকতে হলে টাকা দিতে হবে।”
-“হ্যাঁ,সেটা তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে।”
-“নো ভাবী,ভাবীকে ঢুকতে হলে টাকা দিতে হবে।তোমায় সময় অসুস্থ ছিলাম বলে এই বিচ্ছু বাহিনি কোনো কাজ করেছিলোনা।এত কষ্ট করে ডেকোরেট করছি এমনি এমনি।”
-“তোমরা না লোক এসে করেছে ননদিনী”
-“ওহ্ ভাবী,ছোট ভাবী বিশ হাজার টাকা দাও তো,নয়তো তোমাকে ঢুকতে দিবোনা।”
-“এই কে আমার জানুকে আটকাচ্ছে।”
-“ওই অনু দিদি তোমার বান্ধবীককে বলো টাকা দিতে।”
-“আরে বাবা আমার জানটাতো আর টাকা নিয়ে আসেনি তাইনা।”
-“সে কথা বললে হচ্ছেনা,আগে টাকা ছাড়বি দ্যান ঢুকবি।”
পিছনে তাকিয়ে দেখে মেঘ পান্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে বলছে।ওদের চুপ করে থাকতে দেখে বলে,
-“তোরা দুই রাক্ষসী আমার পকেট খালি করে খুব ফুসকা খেয়েছিস।আজ সুদে আসলে সব নিবো।”
ইয়ারাবী মেঘের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,
-“কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই,ভাইয়ার কাছে থাকতে পারে।আমাকে কেউ বলেনি তাই …”
-“থাক মন খারাপ করতে হবেনা।জারবা বাহিনি ওর ভাইকে যেয়ে ধর,ওকে ঢুকতে দে।”
-“যদি না দেই..”
-“ভাইয়া দিয়ে দিবো,না দিলে আমাকে বলো।”
জারবারা খুশি মনে নিচে যেয়ে ইফাজকে ধরে।ইফাজ আগে থেকেই জানতে তাই সাথে করে টাকা নিয়ে এসেছিলো।ইয়ারাবীকে রুমে বসিয়ে দিয়ে বলে,
-“ডোন্ট ওরি,একদম ভয় পাবেনা।আমার দেবর কোনো বাঘ,ভাল্লুক নয়।তবে একটু ঘাড়ত্যাড়া,আর বদরাগী। আর শোনো তোমার যখন যা প্রয়োজন আমাকে বলবে।তোমার ট্রলি কাবার্ডের পাশে রাখা।অনেক রাত হয়েছে আমি আবরারকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।আর অনু তুমি জারবার সাথে থাকবে কেমন।”
ইকরা কথাটা বলে রুম থেকে বের হতেই ইয়ারাবী অনুর হাত চেপে ধরে বলে,
-“অনু খুব খারাপ লাগছে…”
-“চিন্তা করিসনা,দাভাই আসলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
-“বিল্লি কোথাকার,আমার শরীর খারাপ লাগছে।”
-“কী হচ্ছে তোর?”
-“হালকা ব্যাথা করছে,আচ্ছা শোন যদি উল্টো-পাল্টা কিছু করে এখন”
-“তুই দাভাইকে বলিস খারাপ লাগছে,মনে হয় চলে এসেছে আমি যাই”
অনু আর না দাঁড়িয়ে চলে যায় ওখান থেকে।বেচারা আবরার বোনকে গাট্টা মারার ফল ভোগ করছে।পঞ্চাশ হাজারের কমে রুমে ঢুকতে পারলোনা।জারবা দু পক্ষ থেকে টাকা আদায় করে বাহিনীদের নিয়ে নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে যায়।
ইয়ারাবী গুটিগুটি মেরে বেড়ের ওপর বসে আছে।আবরারের রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,তবু এখানে কোনো রিয়েল ফুল ইয়ারাবী দেখতে পাচ্ছেনা।অবশ্যই ইয়ারাবীর তেমন পছন্দ নয়,কেননা ও ছোট বেলা থেকে ফুলের স্মেল সহ্য করতে পারেনা।হঠাৎ দরজা বন্ধের আওয়াজে ওর হুশ ফেরে।সামনে তাকিয়ে দেখে আবরার দরজা লক করে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বেধে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আবরারের চাহনি অনেক মারাত্মক লাগছে ওর কাছে।ওর হতে শুরু করে এসময় আবরার যদি কোনো কিছু করে।আবরার আস্তে আস্তে কাবার্ডে দিকে এগিয়ে দিয়ে কিছু টাকা বের করে।টাকাগুলো নিয়ে ইয়ারাবীর সামনে বসে ওর কাছে এগিয়ে দেয়।
-“আমাকে কেন দিচ্ছেন?”
-“কেননা দেন মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত তোমাকে স্পর্শ করা হারাম হবে।হাদিসে আছে স্ত্রীকে স্পর্শের আগে দেন মোহর পরিশোধ করতে হয়।”
-“কিন্তু এত টাকা দিয়ে আমি কী করবো?তার থেকে এটা আপনার কাছে রেখে দিন।লাগলে আপনার কাছে থেকে চেয়ে নিবো।”
আবরার ইয়ারাবীর কথা শুনে হাসে।তারপর টাকা গুলো কাবার্ডের একটা লকার দেখিয়ে ওখানে রাখে আর বলে,
-“যখন যা লাগবে এখান থেকে নিবে।এখন যেয়ে অযু করে আসো।নামায পরবো।”
ইয়ারাবীর ওযু ছিলো ।তারপরও আবরারের কথা শুনে কিছু ভারী গহনা খুলে ওয়াশরুমে ওযু করতে যায়।এসে দেখে আবরার দু’টা জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছে।আবরার কিছু পড়ছে তাই ইশারায় ওর পাশেরটাতে বসতে বলে।ও বসার পর দু’জনে একসাথে নামায আদায় করে নেয়।
নামায পরে বিছানায় বসতেই ইয়ারাবীর প্রচন্ড ভাবে বুকে আর পেটে ব্যাথা শুরু হয়।এমন অবস্থা যে ও আর বসে থাকতে পারছেনা।আবরার জায়নামায দু’টা গুছিয়ে পিছন ফিরে দেখে ইয়ারাবীর চোখ থেকে পানি পরছে।আর হাত দিয়ে বুক আর তলপেট চেপে ধরে আছে।আবরারের বুঝতে দেরি হয়না যে সিরিয়াস কিছু হয়েছে।ও ইয়ারাবীকে যেয়ে ওর বাহু ধরে বলে,
-“কী হচ্ছে ইয়ারাবী,বলো আমাকে?কোথায় ব্যাথা হচ্ছে বলো?”
ইয়ারাবী অনেক কষ্ট করে ইশারা করে বলে বুকে আর পেটে।আবরার তাড়াতাড়ি ওকে শুয়ে দেয়।আবরার যেহেতু সাইক্রেটিস তাই নিউরোলজিস্টের ব্যাপারে তেমন ধারণা নেই।কী করবে ও ভেবে উঠতে পারছেনা।আবরার কিছুক্ষণ ভেবে ওকে প্রশ্ন করে,
-“তোমার মেডিসিন কোথায়?আনছো সাথে?”
ইয়ারাবী অনেক কষ্টে বলে ও জানেনা।ও ইয়ারাবীর বাম হাতটা শক্ত করে ধরে রেখে কাউকে কল দেয়।কিছুক্ষণ পরে কেউ আবরারের রুমের দরজা নক করে।আবরার ওর হাতটা ছেড়ে দেখে ইফাজ এসেছে,মুখে চিন্তার ছাপ।ইফাজ যেয়ে ইয়ারাবী মাথায় হাত রেখে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এসব কখন থেকে হলো?”
-“আমাকে কিছুই বলেনি,খুব সিরিয়াস হয়েছে তখন বললো।”
-“খুব চাপা স্বভাবের,মরে গেলেও মুখ ফুটে কিছু বলবেনা।কিন্তু এমনতো হওয়ার কথা ছিলোনা।পিচ্চি আজ মেডিসিন নিয়েছিলি।”
-“স্ সময় পায়নি নেওয়ার।”
-“সময় পাইনি!নিজেকে অবহেলা করতে ভালো লাগে আপনার,কোনো খেয়াল রাখেন না।তোকে মারলেও এখন আমার রাগ কমবেন।”
-“তোকে আমার বউকে বকা দিতে নয় ট্রিটমেন্ট করতে ডেকেছি।”
ইফাজ একবার আড়চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে ওর কাবার্ড থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে।যেহেতু আবরার ডাক্তার তাই ওর রুমে সবটা থাকে।ইফাজ ওর বিপি মেপে দেখে অনেক লো।আবরার ওর হাতটা ধরে বসে আছে।
-“আবরার দেখ মনে হয় ওর ব্যাগে মেডিসিন আছে।”
আবরার উঠে ব্যাগ খোলে ঠিকই কিন্তু কোনো মেডিসিন পায়না।ও ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠে,
-“তোমার ব্যাগপ্যাক কে করেছিলো?”
-“জ্ জানিনা”
-“কেন কী হয়েছে?”
-“একটা মেডিসিনও দেয়নি।”
আস্তে আস্তে ইয়ারাবীর অবস্থা খুব খারাপ হতে থাকে।ওর বারবার মনে হচ্ছে মরে গেলে যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতো।সহজে ভেঙে পরা মেয়ে নয় কিন্তু আজ ও এই ব্যাথা সহ্য করতে পারছেনা।আবরার কিছুক্ষণ ভেবে হঠাৎ কাউকে ফোন করে।ওপাশের ব্যাক্তি এত রাতে ফোন পেয়ে কিছুটা চমকে যান।তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিব করে,
-“আসসালামুআলাইকুম,আবরার তুমি এত রাতে ফোন করেছো কেন?কোন সমস্যা হয়েছে?”
-“হ্যা,আব্বু অনেক বড় একটা সমস্যা হয়েছে।বলছি আম্মু কী আপনার পাশে আছে?”
-“না আসলে ইয়ামিলা খুব কান্না করছিলো তাই ওর কাছে এখন”
-“আব্বু আপনি কী একটু কষ্ট করে ওনাকে ফোনটা দিবেন”
মি.ফুয়াদ আর কিছু না বলে ওকে অপেক্ষা করতে বলে।মিনিট দুয়েক পর মিসেস ইশানি কথা বলে উঠে,
-“আবরার কী হয়েছে বাবা,তুমি আমাকে কেন চাইছিলা।”
-“আম্মু ইয়ারাবীর ব্যাগপ্যাক কে করেছিলো?আসলে যে প্যাক করেছে সে ওর মেডিসিনগুলো দিতে ভুলে গেছে।
-“আমিই করেছিলাম,আসলে খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই ওটা খেয়াল করিনি।কী হয়েছে?”
-“আসলে ওর বুকে আর পেটে খুব ব্যাথা করছে”
-“ওহ্ এই সামন্য ব্যাপারে তোমার চিন্তা করা লাগবেনা।ওর তো প্রায় হয়,যদি খুব সিরিয়াস হয় তাহলে পেইনকিলার দিবে।রাখি ভালো থেকো, আল্লাহ হাফেজ।”
মিসেস ইশানির এই ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে ও খুব অবাক হয়।একজন মা মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে কীভাবে শান্ত থাকতে পারে?ইফাজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“দেখলি তো,ওদের এই ডোন্ট কেয়ার ভাবটার জন্য আজ এর এই অবস্থা।মেয়েটা যখন থেকে বুঝতেও শেখেনি শুধু পেয়েছে অবহেলা।দুঃখ,কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি।”
-“ভ্ ভাইয়া, খুব ব্যাথা করছে।”
আবরার যেয়ে একটা ইনজেকশন বের করে ওকে পুশ করে ঘুম পারিয়ে দেয়।কেননা এত রাতে মেডিকেল শপ খোলা নেয়,আর না ওর বাবা-মা মেডিসিনগুলো পাঠাবে।তাই আবরারের কাছে যেটা বেষ্ট অপশন মনে হয়েছে সেটাই করেছে।ইফাজ চলে যাওয়ার পর আবরার আস্তে করে ওড়না আর হেজাবটা খুলে দেয়।চুলগুলো অনেক ক্লীপ দিয়ে বাধা তাই ওর আর খুলতে পারেনা।গায়ে একটা চাদর টেনে দিয়ে ওর গলার হার খুলতে গেয়ে দেখে ওর বুকের উপর আর কাধের নিচে খুব কালো দাগ হয়ে আছে।কিছুক্ষণ ভালো করে তাকিয়ে দেখে ওটা কোনো মারের দাগ ছাড়া আর কিছুই নয়।আবরার কৌতুহল হলের জন্য ওর কাধ থেকে পিঠ পর্যন্ত চেক করে দেখে ছোট ছোট হালকা কালো লম্বা দাগ।আরো অনেক জায়গায় আছে কিন্তু লম্বা হাতার জামা পরায় ও আর দেখতে পারেনা।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
(৪২)
-” কী এমন বৌ আনলে ভাবী?সকাল ৭টা বেজে গেলো এখনো ঘর থেকে বেরনোর নাম নেই।”
-“লিজা ঘর থেকে কিন্তু এখনো আবরারও বের হয়নি।”
-“বাহ্ রে,কাল ছেলেটার উপর দিয়ে কত ধকল গেছে তাই ঘুমাচ্ছে।আর তোমার বৌমার তো আবরারের সাথে সাথী নেই।”
-“লিজা ধরতে গেলে সব থেকে বেশি ধকল মেয়েটার উপর দিয়ে গেছে,নিজের আপনজনদের ছেড়ে অচেনা বাড়িতে এসেছে।তোমার এমন নেগেটিভ কথা শুনলে মন খারাপ হতে পারে।”
-“একজনকে তো ছাড় দিয়ে রেখেছো,আরেকটাকেও দাও।দেখবে যেদিন তোমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিবে।”
-“ওকে তাড়াবে কী রাখবে সেটা তোর না ভাবলেও হবে।আর ভদ্র মানুষের মতো বিহেব কর।কেননা তোর কৃতকর্মের জন্য তোকে এখনো ক্ষমা করিনি।”
-“ভাইয়া আমি…”
মি.রায়হান ওনার বোনের কথা না শুনে ইকরার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“সবাই তো ঘুমাচ্ছে,তুমি যেয়ে ডাক দিয়ে দেখতো মা।”
ইকরা তার শ্বশুড়ের কথা শুনে আবরারের রুমে যেয়ে নক করে ডাকতে থাকে।আবরার ফজরের নামায পরে একবারে ঘুমিয়েছে।আওয়াজ শুনে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা বাজতে চললো।পাশে ইয়ারাবী ঘুমিয়ে আছে।ওর একটা হাত আবরারের পেটের উপর।ও আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে দরজা খোলে।
-“কী ব্যাপার দেবর সাহেব,বৌকে ছেড়ে কী উঠতে ইচ্ছা করছেনা?”
-“ভাবী এমন কিছুই না..”
-“আরে এমন ভারী ড্রেস পরেই ঘুমিয়েছে কেমন করে মেয়েটা?”
-“ঘুমাইনি ঘুম পারাতে হয়েছে।”
-“মানে?”
-“কাল রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পরেছিলো।কারন বিয়ের জন্য সারাদিন মেডিসিন নিতে পারেনি,আর ওর আম্মু ব্যাগপ্যাক করে দিয়েছে কিন্তু একটা মেডিসিনও দেয়নি।বিপি লো হয়ে গিয়েছিলো আরো।তাই ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখছিলাম।”
-“ওমা, তুমি বলোনি কেন কাউকে?এদিকে ওর ঘুমানো নিয়ে লিজা ফুপি মায়ের সাথে একদফা ঝগড়া করে নিয়েছে।”
-“ইফাজ ছিলো,তুমি যাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।তারপর এই লিজা ফুপির ক্লাস নিচ্ছি।”
ইকরা ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে নিচে চলে যায়।কেউ এসে যাতে ডিস্টার্ব না করে সেজন্য দরজা দিয়ে তারপর ওয়াশরুমে যায় ফ্রেস হতে।হঠাৎ করে একটা চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে ইয়ারাবী খাটের এক কোনে ঘুটিশুটি মেরে বসে আছে।আর তার কিছুটা দূরে চিলসি বারবার ওর কাছে যাওয়ার ট্রাই করছে।আবরার তাড়াতাড়ি যেয়ে চেলসিকে খাট থেকে নামিয়ে দেয়।
-“কী হয়েছে ইয়ারাবীর?এভাবে চিৎকার করলে কেন?”
-“ক্ ক্ কুকুর।”
কুকুর শব্দটা শুনে চেলসি জোড়ে ডেকে উঠে।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করতে বলে।তারপর ইয়ারাবীকে বলে,
-“এত ভয় পাওয়ার কিছু নাই,ডোন্ট ওরি।ও কিছু করবেনা।জাস্ট তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার জন্য এসেছে।”
-“স্ সত্যিতো,কামড়াবেনা?”
-“আরে বাবা সত্যি বলছি,ওর নাম চেলসি আমার ডগি।”
ইয়ারাবীর ভয়কে দুর করার জন্য আবরার চেলসিকে কোলে নিয়ে ওর কাছে দেয়।ইয়ারাবী ধরবে কি ধরবেনা ভাবতে থাকে।হঠাৎ চেলছি ওর হাতে আদর করতে থাকে।এটা দেখে ইয়ারাবী কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
-“আচ্ছা,এর আগে একবার এসেছিলাম,একে তো দেখিনি?”
-“ওইদিন ডগ ট্রেনিং সেন্টারে ছিলো তাই।আর কাল বাড়িতে বেশি লোক থাকায় ওকে আর বের করিনি।”
-“এটা “গোল্ডেন রিট্রিভার” প্রজাতির তাইনা।”
-“আরে বাহ্,আমার বৌতো দেখছি খুব ইন্টেলিজেন্ট।”
-“তেমন কিছুনা।আমি পড়েছিলাম এদের ব্যাপারে, ভীষন বিশ্বাসী আর কম্প্যানিয়ন হয়।আসলে আমি কুকুরকে ভয় পেতাম তাই,সরি।”
-“কোনো ব্যাপার না।যদি এখন কিছুটা ওয়েল ফিল করো তাহলে ফ্রেস হয়ে নাও।আদেও ঠিক আছো?”
-“আলহামদুলিল্লাহ,থ্যাংকস। আপনার জন্য বেঁচে গেলাম,নয়তো মারা যেতাম।”
-“আমাকে ইফাজ যা বলেছে তাই করেছি।এখন চেলসিকে নিয়ে বসলে কিছু হবেনা।উঠে ফ্রেস হয়ে নাও।আর শোনো শাওয়ার নেওয়ার দরকার নেই।হালকা করে ফ্রেস হয়ে এসো।”
ইয়ারাবী মাথা নাড়িয়ে ব্যাগ থেকে একটা গাউন বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।আবরার রেডি হয়ে বেলকনিতে যেয়ে দাঁড়ায়।ইয়ারাবী মাথায় হালকা পানি নিয়ে চুল মুচতে মুচতে বের হয়।আজ নীল কালারের একটা সুতির গাউন পরেছে।আবরার রুমে এসে দেখে ও চুল মুচতে।
-“তোমাকে না বললাম সকালে শাওয়ার নিবেনা।”
-“শাওয়ার নেয়নি তো,শুধু মাথায় পানি দিয়েছি।সমস্যা নেই চুল শুকিয়ে যাবে।”
আবরারের হঠাৎ চোখ ওর হাতের দিকে গেলো।দুর্ভাগ্যবসতো আজ ইয়ারাবী হাফ হাতার গাউন পরেছে।আর ওর হাতের কনুয়ের উপর কিছু লম্বা কালো দাগ দেখা যাচ্ছে।আবরার যেয়ে ইয়ারাবীর হাত ধরে টান দিয়ে বলে,
-“এগুলো কিসের দাগ?আর হ্যাঁ মিথ্যা বলার সাহস করবেনা।”
ইয়ারাবীর ওর কন্ঠ শুনেই ভয় লাগতে শুরু করে।তারপরও নিজেকে সামলে বলে,
-“এটা ঐ আসলে,ও সি সিড়ি থেকে পরে গেছিলাম।”
আবরার কথাটা শোনার সাথে সাথে ওর বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
-“তোমাকে আমি ওয়ার্ন করেছিলাম না,মিথ্যা বলবেনা।আবার সেটা করছে।”
-“আহ্হ্”
-“বলবে তুমি?”
-“আম্মু মেরেছিলো,এটা অানেক আগের।”
কথাটা বলতেই ইয়ারাবীর চোখ থেকে পানি পরতে শুরু করে।আবরার ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,
-“তোমার গলার নিচে আর পিঠে যে দাগগুলো আছে,ওগুলোও কী?”
ইয়ারাবী চোখের পানি মুচে শুধু মাথা নাড়ায়।
-“কেন?”
-“অন্য একদিন বললো,প্লীজ আর কোনো প্রশ্ন করবেন না।”
-“ঠিক আছে,চলো নিচে যায়।”
-“শুনুন,আজ অনুষ্ঠানের পর ওই বাসায় যেতে হবে তাইনা”
-“হ্যাঁ,সবাই বলে তাই। কেন?”
-“না গেলে হয়না।”
-“নিচে চলো..লেট হচ্ছে।”
ইয়ারাবী ওড়না দিয়ে মাথা দিয়ে গলা,আর কাধ পর্যন্ত কভার করে নিচে নামে।যাতে কারো চোখে দাগগুলো আর ধরা না পরে।তারপর চোখে চশমাটা পরে নেয়।তবে নতুন বৌদের মতো সাজেনা। নামার সময় চেলসি ইয়ারাবীর ওড়নার এক কোনা কামড়ে ধরে ওর সাথে নামতে থাকে।ওর কান্ড দেখে আবরার হাসতে থাকে।
#চলবে________