প্রস্থান — ৩০তম পর্ব। রিফাত হোসেন।

0
469

প্রস্থান — ৩০তম পর্ব।

রিফাত হোসেন।

৩৭.
বিকেলে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সুব্রতর সাথে দেখা হলো চিত্রার। সুব্রত গাড়ি পার্ক করে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল, চিত্রা তখন রশ্মিদের বাড়ি থেকে ফিরছিল। দুজনেই দাঁড়াল দরজার বাইরে।
চিত্রাকে দেখে সুব্রত সোজা দাঁড়িয়ে বলল, “চিত্রা যে, কোথায় গেছিলে?”
চিত্রা হেসে বলল, “রশ্নিদের বাড়িতে গেছিলাম, সুব্রত ভাই।”
সুব্রত বলল, “ব্যাপার কী? তোমাকে আজ বেশিই খুশি লাগছে।”
চিত্রা ঠোঁট টিপে বলল, “আছে আছে, সময় হলেই জানতে পারবেন!”
“খুহ রহস্য করে কথা বললে তো! কী জানতে বাকি আছে আমার?”
চিত্রা হাসল সশব্দে। বলল, “সুব্রত ভাই, আপনিও না! একটু ধৈর্য ধরুন। সময় হলে অবশ্যই জানতে পারবেন। আমি মাত্রই জানলাম। আপনি জানতে পারবেন, শীঘ্রই।”
হাসতে হাসতে কলিংবেলে চাপ দিলো চিত্রা। এরপর দুই হাত বুকের নিচে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই মুহূর্তে ভীষণ চঞ্চল সে। কালকে চমকপ্রদ কিছু হতে চলেছে কী-না!
সুব্রত আর কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ। আড়চোখে মাঝেমধ্যে দেখতে লাগল চিত্রাকে। চিত্রা আগে কখনো রহস্য রেখে কথা বলেনি তাঁর সামনে। ইদানীং মেয়েটাকে অচেনাই মনে হচ্ছে যেন! এত দৃঢ়তা আগে ওর মধ্যে বিরাজমান ছিল না।
সুলতানা দরজা খুলে দিলে চিত্রা আর সুব্রত ভিতরে ঢুকল। সুব্রত নীরবে নিজের ঘরে চলে গেল, আর চিত্রা ড্রয়িংরুমে বসে রইল।

রাতে, ডিনার শেষে ঘরে এলো চিত্রা। ফিরোজ তখন ল্যাপটপে কিছু করছিল, চিত্রার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে, আবার তীব্র অভিমানে গম্ভীর চেহারা করে বসে রইল। চিত্রা দেখল ফিরোজকে, কিন্তু ওই অভিমানকে পাত্তা না দিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ফিরোজ ল্যাপটপ রেখে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। বিড়বিড় করে বলল, “আশ্চর্য! সেই দুপুরের পর মাত্র ঘরে দেখল। দেখল আমি মন খারাপ করে বসে আছি। অথচ ওর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই!”
চিত্রা বেরোনো অব্দি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ফিরোজ, রাগান্বিত হয়ে। চিত্রা ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই বলল, “সমস্যা কী তোমার?”
মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো চিত্রা। ফিরোজকে দেখে বিস্মিত গলায় বলল, “ওমা! এমনভাবে, শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
ফিরোজ রাগ ঈষৎ মলিন হলো। বলল, “তোমার কী হয়েছে বলোতো? এভাবে উপেক্ষা করছ কেন আমাকে?”
হেসে উঠল চিত্রা। চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে বলল, “সারাদিন কত ব্যস্ত ছিলাম। এতদিন পর এলাম না, সেজন্য। তাছাড়া কে জানতো, তুমি আজ দুপুরেই এসে যাবে? ভেবেছিলাম রাত করে ফিরবে, ঠিক এই সময়েই; তাই তো সকাল থেকে দুপুর অব্দি ঘুমিয়েছি। এরপর ঘরদোর গোছালাম।”
ফিরোজ চিত্রার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “ড্রয়িংরুমে বসে তুমি ঘরদোর গুছিয়েছ?”
ঘুরে দাঁড়াল চিত্রা। ফিরোজের একদম কাছে এসে আহ্লাদ করে বলল, “আহারে! আমায় খুব চাচ্ছিলে বুঝি?”
আচমকা চিত্রার কোমরটা জড়িয়ে ধরল ফিরোজ। দুটো শরীরের মধ্যেকার দূরত্ব সম্পূর্ণ কমিয়ে এনে, মুখটা চিত্রার মুখের সামনে নামিয়ে এনে বলল, “চাইবো না? এতদিন পর!”
চিত্রা মুচকি হাসল। তাঁর আধভেজা চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে মৃত্যু হেলতে শুরু করেছে। মুখটা পরিষ্কার। চোখে যেটুকু কাজলের আবরণ ছিল আগে থেকেই, সেটুকু অবশিষ্ট আছে এখনো। সে নিচের ঠোঁট আলতো করে কামড়ে ধরে, একটা হাত রাখল ফিরোজের দুই চোখের উপর। এরপর উঁচু হয়ে ওর গালে একটা চুমু এঁকে দিলো। আবার নিচু হয়ে বলল, “হয়েছে? এবার ছাড়ো আমাকে।”
চোখের সামনে থেকে চিত্রার হাত সরিয়ে ফিরোজ বলল, “এতদিন পর এইটুকুই বুঝি যথেষ্ট? তাছাড়া বললেই ছেড়ে দিবো?”
মৃদু হেসে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো চিত্রা। আবার আয়নার দিকে ঘুরে বলল, “এতদিন যখন থাকতে পেরেছ, এখনো পারবে।” এই বলে তোয়ালেটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দরজার দিকে এগোলো চিত্রা।
ফিরোজ অবাক হয়ে জানতে চাইল, “কোথায় যাচ্ছ?”
চিত্রা ঘুরে জবাব দিলো। “কনার ঘরে।”
“এইসময়? কেন?”
“সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে কনার ঘরেই থাকব।”
“মানে?” থতমত খেয়ে গেল ফিরোজ। “কিন্তু কেন? এই ঘরে কী সমস্যা?”
চিত্রা ভ্রু-জোড়া উপরে টেনে বলল, “সমস্যা নেই বুঝি? তবে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এতদিন আমাকে ওই বাড়িতে রেখে দিয়েছিলে কেন? আমি এতদিন এই ভেবে ওখানে ছিলাম, যে আমার এখানে থাকলে তোমার অসুবিধা হবে।”
“কিন্তু এখন তো চলে এসেছ।”
চিত্রা ফিক করে হাসল ফিরোজের কথা শুনে। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, “আমি এসেছি, তুমি কিন্তু আনোনি। আর যতদিন না তুমি গিয়ে নিয়ে আসবে, ততদিন তুমি সুনিশ্চিত থাকো, আমাদের দেখা খুব কমই হবে। কারণ আমি এই ঘরে থাকব না। যেদিন তোমার মনে হবে, এবার আমাকে ফিরিয়ে আনা উচিত, সেদিন আমাকে বোলো, আমি আবার ওই বাড়িতে ফিরে যাব। এরপর যেভাবে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলে, সেভাবেই সসম্মানে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। আর যতদিন না এইরকম ঘটনা ঘটছে, ততদিন তুমি ভেবে নাও, তোমার স্ত্রী বাড়িতে উপস্থিত নেই।”
চিত্রার কথা শুনে আক্রোশে ফেটে পড়ল ফিরোজ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “এই পাগলামির মানে কী, চিত্র? কী করতে চাইছ তুমি?”
চিত্রা হেসে বলল, “তুমি যা করতে চেয়েছিলে, আমি অন্তত সেরকম কিছু করতে চাইছি না। ওইরকম কোনো উদ্দেশ্যও আমার নেই। আমি শুধুমাত্র সম্মান চাই।”
এরপর ফিরোজকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল চিত্রা। সোজা কনার ঘরে গেল।

এইরকম একটা সময়ে চিত্রাকে দেখে কনা ভারী চমৎকৃত হলো! জানতে চাইল, “কী ব্যাপার, ভাবী? এইসময় তুমি? কিছু লাগবে?”
চিত্রা মৃদু হেসে বলল, “ঘরে একটু জায়গা হবে?”
কনা হতভম্ব হয়ে গেল চিত্রার কথা শুনে। পথ ছেড়ে সংকুচিত ভাবে বলল, “কী যে বলো ভাবি! এসো, ভেতরে এসো।”
চিত্রা ঘরের ভেতরে ঢুকলে কনা জানতে চাইল, “হঠাৎ কী হলো, ভাবি?”
“তেমন বড় কিছু না আপাতত।”
“ঝগড়া করেছ বুঝি?”
মৃদু হেসে বিছানায় বসল চিত্রা। মাথানত করে, ঠোঁট টিপে বলল, “তোমার ভাইকে জব্দ করে এলাম। আজ সারারাত যেন ও আমাকে নিয়ে ভাববে বাধ্য হয়, সেই ব্যবস্থা করে এলাম।”
চিত্রার পাশে বসে কনা বিস্মিত গলায় বলল, “আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না, ভাবি।”
“বুঝবে বুঝবে!” দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল চিত্রা। এরপর বিমর্ষচিত্তে বলল, “ভালোবাসার মানুষের সাথে দূরত্ব বাড়লে যন্ত্রণায় কেমন করে ছটফট করতে হয়, তা সেদিনই তুমি বুঝবে, যেদিন কাউকে খুব ভালোবাসবে।”
কনা জানতে চাইল, “আজ রাতে কি তুমি এখানেই থাকবে?”
“শুধু আজ না। আরও ক’টা রাত থাকতে হবে বোধহয়। থাকতে দিবে না?”
কনা লজ্জা পেয়ে বলল, “আমি ‘না’ দেওয়ার কে শুনি? এটা তোমার সংসার। আর মাত্র ক’টা মুহূর্ত। একদিন হুট করে এই বাড়ির অতিথি হয়ে যাব। এরপর বাকি জীবন এভাবেই চলতে হবে; এই বাড়ির অতিথি হয়ে!”
কনার কথা শুনে চিত্রা একটা হাত ওর গালে রাখল। মুচকি হেসে বলল, “এটাই নারী প্রজাতির জীবন। আমরা সবখানেই অতিথি হয়ে বসবাস করি।”

৩৮.
সকাল ৯টা। শুক্রবারের দিন। খালেদ সাহেব গভীর মনোযোগে খবরের কাগজ পড়ছেন আর চা খাচ্ছেন। তাঁর পরণে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা। চোখে চশমা। চশমার ফ্রেমটা নাকের ডগায় এসে ঠেকেছে। মনে হয়, এই বুঝি টুপ করে নিচে পড়ে যাবে, ভেঙে যাবে। কিন্তু পড়ে না! চিত্রা আর সুলতানা রান্নাঘরে, সকালের খাবার তৈরি করছে। অফ-ডে বলে আজ তাড়াহুড়ো নেই। সমস্তকিছু চলছে আরামদায়ক ভাবে। ফিরোজ আর কনা একটা মোবাইলে কিছু দেখছে, আর নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি করছে। দীপালি বেগম এই মুহূর্তে ঘরে অবস্থান করছেন।
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল। খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে সদর দরজার দিকে তাকালেন খালেদ সাহেব। চশমাটা নাকের ডগা থেকে সরিয়ে, ঠিক করে পরলেন। কলিংবেলের আওয়াজ পরপর তিন-চার হতেই তিনি বললেন, “কনা, দেখে আয় তো, কে এলো এই সকালবেলা।”
কনা সাথে সাথে খুব বিরক্তি নিয়ে বলল, “বাবা প্লিজ, সুলতানাকে বলো।”
“আহা! ও তো রান্না করছে।” খালেদ সাহেব বললেন।
কনা জবাব দিলো না। তাঁর মধ্যে কোনোরকম উত্তাপ-ও দেখা গেল না। খালেদ সাহেব খবরের কাগজ হাত থেকে নামিয়ে রাখতে রাখতে তীব্র অসন্তোষের সাথে বললেন, “এই আজকাল-কার ছেলে-মেয়েরা না, একদম অবাধ্য। গুরুজনদের সম্মানই দিতে জানে না।”
কনা সহসাই ওঠে দাঁড়াল। অনাগ্রহে বলল, “যাচ্ছি, বসো তুমি।” এরপর দরজার দিকে এগিয়ে বলল, “আমাদের কোম্পানিরই একটা বিজ্ঞাপন দেখছিলাম। দর্শকের চোখ দিয়ে কিছু নিম্নমানের দৃশ্যগুলো উল্লেখ করে দিচ্ছি। লাভ তোমাদেরই। তবুও বকো।”
কথা বলতে বলতে দরজা খুলে দিলো কনা। দরজার বাইরে রশ্মির মা-কে দেখে বেশ চিন্তান্বিত হয়েই বলল, “আন্টি আপনি? সবকিছু ঠিকঠাক তো?”
রুমানা বেগম দুর্বল চাহনিতে কনাকে দেখলেন। ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললেন, “সবকিছু ঠিক আছে। আমি আসলে তোমার বাবার সাথে কথা বলতে এসেছি। উনি বাড়িতে আছেন তো?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। বাবা বাড়িতেই আছেন। আপনি আসুন না, ভেতরে আসুন।” হাসিমুখে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল কনা।

ড্রয়িংরুমে বসলেন রুমানা বেগম। সামনে খালেদ সাহেব। ফিরোজ, কনা দুজনেই এখন চুপচাপ, উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে রুমানা বেগমের দিকে। চিত্রা রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মনোযোগও ভদ্রমহিলার দিকে।
খালেদ সাহেব খানিক ইতস্তত বোধ করছেন এই মুহূর্তে। অতবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন তিনি, প্রতিবারের প্রত্যাহার রুমানা বেগমের সাথে তাঁর সম্পর্কের মধ্যেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। ফিকে হয়েছে। তাই এই জড়তা!
সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুমানা বেগম আড়ষ্টভাবে বললেন, “কেমন আছেন ভাইসাব?”
খালেদ সাহেব উৎসুক চাহনি ফিরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার সচেষ্টা করে বলল, “আমি ভালো আছি, ভাবি। আপনি কেমন আছেন?”
“জি, ভালো আছি। আল্লাহ যেমন রেখেছেন।” এইটুকু বলে থেমে গেলেন রুমানা বেগম। তীব্র অস্বস্তি নিয়ে বসে রইলেন।
এমনসময় চা নিয়ে এলো চিত্রা, রুমানা বেগমের দিকে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে, টুপ করে তাঁর পাশে বসে পড়ল। রুমানা বেগমও তাকালেন চিত্রার দিকে, আপাদমস্তক হাসলেন।
চিত্রা সহসা বলল, “আন্টি, আপনি নির্বিদ্বায় বলুন, যা বলবেন? অবশ্য আমরা জানি আপনি কী বলবেন। সত্যি বলতে, ব্যাপারটা নিয়ে আমরাও খুব খুশি।”
চিত্রার কথা শুনে রুমানা বেগমের ভুরু কুঁচকে গেল। তিনি থেমে থেমে বললেন, “স-সবাই জানে?”
“কী ব্যাপার, বলো তো, মা?” খালেদ সাহেব বিস্মিত কণ্ঠে জানতে চাইলেন।
চিত্রা শ্বশুরের দিকে তাকাল। একগাল হেসে বলল, “ভয়ংকর কোনো ব্যাপার না, বাবা। বরং অতি সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন আন্টি। আসলে, সুব্রত ভাই আর রশ্মির বিয়েতে আন্টি রাজি হয়েছেন।”
“কী বলছ!” চমকে উঠলেন খালেদ সাহেব। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন রুমানা বেগমের দিকে।
রুমানা বেগম নতকণ্ঠে বললেন, “আসলে ভাইজান, অতবার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আপনাকে। আজ আবার এসেছি একই প্রসঙ্গে কথা বলতে। আপনাকে খুব অসম্মান করেছি আমি। সেজন্য কথাটা সরাসরি বলতে সংকোচ বোধ হচ্ছে। তবে পূর্বের আচরণের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।”
খালেদ সাহেব বলে উঠলেন, “না না, ভাবি, এভাবে বলবেন না। বিয়েতে অসম্মতি জানানোর পিছনে আপনার যুক্তিকে আমি আগেও সম্মান জানিয়েছিলাম, এখনো জানাচ্ছি। আপনি নিঃসংকোচে আমাকে বলতে পারেন।”
মৃদু হেসে চিত্রার দিকে তাকালেন রুমানা বেগম। ওর চুলগুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন, “আমি তো ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আপনি আবার কীভাবে রিয়্যাক্ট করেন! চিত্রাই বারবার সাহস দিলো। ওকেই বলেছিলাম আজ আসবো। ব্যাপার হলো ভাইসাব, সেদিনের ঘটনাটার পর মেয়েটাকে নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। বলা যায় ‘স্বস্তিবোধ’ একেবারে হারাম হয়ে গেছে আমার জন্য। সারাক্ষণ ওকে নিয়েই ভাবতে হয়। সেজন্য চাচ্ছি, এবার খুব তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে বিয়ে দিতে হবে।”
“এটা উত্তম ভাবনা, ভাবি।” আচমকা দীপালি বেগম বলে উবলেন; সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে।
সবাই তাকালো দীপালি বেগমের দিকে। রুমানা বেগম বললেন, “আসুন, ভাবি। আপনার উপস্থিতিও প্রয়োজন।” দীপালি বেগম সোফায় এসে বসলে তিনি আবার বললেন, “সুব্রত যেভাবে বারবার আমাদের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, ওর এই উপকার আমাদের চিরঋণী করে রাখবে।” খালেদ সাহেবের দিকে তাকালেন আবার। “আমি অনেক ভাবলাম, ভাইসাব; আমিই আসলে ভুল। মানুষ তো সারাজীবন একরকম থাকে না। আমার মনে হয়, সে ব্যক্তি অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে, তাঁর থেকে সুন্দর মনের মানুষ আর হয় না। চিত্রার সাথে আলোচনা করলাম এই ব্যাপারে। সত্যিই সুব্রত আর আগের মতো নেই। আমার মেয়েটা বোধহয় ওর সাথে থাকলে নিরাপদ থাকবে। সুব্রতও রশ্মিকে বুঝতে পারবে, সহজেই। রশ্মি একজন শক্ত অভিভাবক পাবে। আমি যে সাপোর্টটুকু দিতে পারিনি, হয়তো সুব্রত তা দিতে পারবে।”
সোজা হয়ে বসলেন খালেদ সাহেব। বড় একটা শ্বাস ফেলে বললেন, “এটা সত্যিই খুব আনন্দের সংবাদ, ভাবি। অথচ আপনি কুণ্ঠাবোধ করছিলেন।”
পাশ থেকে ফোঁস করে উঠলেন রুমানা বেগম, “কীসের সুসংবাদ? বরং এটা বিপদের সংকেত। ভাবি হয়তো জানে না, তোমার ভাইপো এখনো মদমুদ খেয়ে ঘরে পড়ে থাকে। প্রথম বউয়ের মতো একেও খাবে।”
খালেদ সাহেব চোখ রাঙিয়ে বললেন, “আহ! দীপালি, একটু চুপ থাকো। উনার সামনে এইসব!”
“উনার সামনে এইসব কী, হ্যা? উনি কী জানেন না কিছু? পূর্বে কী ঘটেছিল দেখেননি? শোনো, এইসবের দরকার নেই। যেমন আছে ও, তেমনই থাক। আরও একবার সমাজের কাছে কলঙ্কিত হতে চাই না।”
খালেদ সাহেব দীপালি বেগমের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বললেন, “ওর কথাকে এত গুরুত্ব দিবেন না তো, ভাবি। ও কখনো সুব্রতর ভালো নিয়ে ভেবেছে? আমি তো আমার ভাইপোর জীবনটা এভাবে শেষ হতে দিতে পারি না, তাই না?”
দীপালি বেগম দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, “অসমবয়সী দুজন মানুষ ওরা। তোমরা কীভাবে ভাবতে পারো, ওদের মধ্যে কখনো বনিবনা হবে? তোমরা নিজেরাই ওদের নিয়ে ভাবছ। একবার ওদের জিজ্ঞেস করে দেখো, ওরা কী চায়। তবে না হবে বিয়েটা!”
দীপালি বেগমের কথা শুনে সবাই আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন। সত্যিই তো, ওদের মতামতই তো সবচেয়ে জরুরি!
কিছুক্ষণ পর খালেদ সাহেব নড়েচড়ে বসে বললেন, “চিত্রা, সুব্রত কী ঘরে আছে?”
চিত্রা বলল, “আছে বোধহয়। আজ তো শুক্রবার। বেরোয়নি এখনো।”
“যাও, ডেকে নিয়ে আসো।” এরপর কনার দিকে তাকালেন খালেদ সাহেব। বললেন, “তুই গিয়ে রশ্মিকে ডেকে নিয়ে আয়।”

কিছুক্ষণের মধ্যে ড্রয়িংরুমে নতুন দুজন উপস্থিত হলো; সুব্রত আর রশ্মি। গোটা ড্রয়িংরুম কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে আছে! কোথাও বাতাস নেই, উত্তাপ নেই। প্রচণ্ড ভারী একটা পরিবেশ! শ্বাসরুদ্ধকর!

৩০তম পর্ব এখানেই সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব শীঘ্রই আসছে।

গত পর্বের লিংক – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=845108649767170&id=100028041274793

বি:দ্র: চেক দিইনি। সকালে ওঠে লিখে মাত্র পোস্ট দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here