(১)
-“এনাফ আম্মু, অনেক হয়েছে।কী পেয়েছো তোমরা আমাকে?আমি ও মানুষ কোনো খেলার পুতুল নই।”
-“ইয়ারাবী, আজকাল প্রচুর বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তুই?মানুষের ছেলেমেয়েকে গিয়ে দেখ, তাদের বাবা-মা যা বলে ওরা তাই করে।কিন্তু তুই,তোকে তো কিছু বলা যায়না।”
-“তো যাও না তাদের কাছে আমার কাছে কেন আসছো?”
-“ইচ্ছাতো করছে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর মারি।তোর বড় আন্টির মেয়েকে দেখ, মায়ের কথার উপর একটা কথাও বলেনা।দেখ তোর সাথে ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করার নূন্যতম ইচ্ছা আমার নেই।”
-“দেখি সরো, আমি ভার্সিটিতে যাবো।নয়তো ক্লাসের লেট হয়ে যাবে।”
এবার না পেরে ওর মা একটা চড় মেরে দেয়।এটা নতুন কিছু নয়।বলতে গেলে ইয়ারাবীর কথার বা কাজের কেউ গুরুত্ব দেয় না।ওর প্রয়োজন ওর ফ্যামিলির কাছে অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে যখন ওর ছোট বোনের জন্ম হয়। দেখতে খুবই সুন্দর,ছোট থেকেই চটপটে টাইপের যার জন্য ওর নাম রাখা হয় ইয়ামিলা।
ওর মা বলে,
-“এই চড়টা আবার না খেতে চাইলে এখনি রেডি হয়ে আবরারের সাথে দেখা করতে যাবি।দু’দিন ধরে ছেলেটা তোর সাথে দেখা করতে চাইচ্ছে আর তুই নিজের কাজ নিয়ে পড়ে আছিস।ভুলে যাস না ওর সাথে তোর ইনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।আজ যদি না যাস তোর আব্বুকে বলবো।ছেলেটা কাজ শেষ করে টাইম পায়না,তারপরও তোর সাথে দেখা করতে চায়।জানিস ও কত বিজি থাকে।ভালো মেয়ের মতো এই ড্রেসটা পড়ে যাবি।”
গ্রীন-গোল্ডেন কালারের একটা গাউন,আর একটা গোল্ডেন কালারের হিজাব ইয়ারাবীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওর মা চলে যায়।ইয়ারাবী টান দিয়ে ড্রেসটা ফেলে দেয়।ওর মাথায় রাগ ওঠে গেছে।সবাই মিলে ওর হাসি-খুসি,আনন্দগুলো কেড়ে নিতে ব্যাস্ত।হঠাৎ ওর চোখ যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ইয়ামিলার দিকে।
মেয়েটা ক্লাস টু’তে পড়ে।কিন্তু বোনের পিছনে কীভাবে লাগতে হয় তা খুব ভালো করেই জানে।আগে আপি ছাড়া কিছু বুঝতো না।কিন্তু যখন থেকে দেখে ইয়ারাবী সাথে সবাই খারাপ ব্যবহার করে তখন থেকে ইয়ামিলা ও নিজেকে গুটিয়ে নেয়।বাড়িতে কিছু খারাপ হলে বা নিজে ভুল কোনো কিছু করলে দোষ দেয় বড় বোনকে।ফলস্বরুপ ইয়ারাবীকে বকা,চড়-থাপ্পর খেতে হয়।এগুলো দেখে ইয়ামিলাও খুব আনন্দ পায় আজকাল।
ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কী চাই তোর এখানে?তোর আব্বু না সেদিন বললো আমার কাছে আসবিনা।তাহলে কেন এসেছিস?”
-“বাহ্,আব্বু কী শুধু আমার নাকী? তোর ওতো আব্বু।তাহলে এমন করিস কেন আপু?”
-“তুই যা এখান থেকে।তোর মতলব যে ভালোনা সেটা ঠিকই বুঝতে পারছি।নিঃশ্চয় এবার কিছু করে আমার ঘাড়ে দোষ দিবি।”
-“যাও একটু তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলতে আসলাম কিন্তু তুই।আসলে আব্বু-আম্মু ঠিকই বলে তুই সত্যিই খারাপ।”
ইয়ারাবী আর কথা বাড়ায় না।জানে কথার পিঠে কথা ওঠে।কিন্তু ও বুঝে ওঠতে পারেনা, ও খারাপ কীসে।আজ অব্দি পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে বাইরে যায়নি,কোনো পার্টি তো দূরে থাক কোনো ফ্রেন্ডের বাসাও তেমন যাওয়া আসা করেনি।আর বয়ফ্রেন্ড, এই শব্দটা ও সহ্যই করতে পারেনা।তাহলে আসবে কোথার থেকে।জীবনটা কত অদ্ভুত না। যারা খারাপ কাজ করে বেড়ায় ওর বাবা-মা তাদের ভালো বলে আর ও………
এবার ফ্লোর থেকে উঠে কালো একটা বোরখা বের করে পড়ে নেয়।মাথায় কালো হেজাব বেঁধে নেয়।মোটামোটি সাধারন ভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিচে নেমে আসে।ওর মা ওকে দেখে ভ্রু কিছুটা কুচকে ফেলে।ওর বাবা সোফায় বসে পেপার পড়ছিলো,কিন্তু ওকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।ও সবাইকে উপেক্ষা করে যেই বাইরে যাবার জন্য পা বাড়ায়,ওমনি ওর মা পিছন থেকে বলে,
-“তোকে না আবরার সাথে দেখা করতে যেতে বললাম।এত ঘাড় ত্যারে মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি।দেখিস তোর কপালে দুঃখ আছে।জীবনেও সুখে থাকতে পারবিনা।”
-“ওটাতো সারাটা জীবন ধরেই।আর নতুন করে কিছু বলার থাকলে সেগুলো বলো,কেননা এগুলো গত ৭-৮ বছর ধরে শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গেছে।আর কী বললে আবরার?হ্যাঁ,ওর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।তবে ফিরতে লেট হবে,কেননা আজকের নোটগুলো তো নিতে হবে।আজতো আর ক্লাস করা হবেনা তোমাদের জন্য।”
এবার ওর বাবা ওর মার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি শুধু শুধু চিল্লাও। আমি বলছিলাম না ও দেখা করতে যাবে।”
ইয়ারাবী ওর বাবার কথা শুনে শুধু একটা মলিন হাঁসি দেয়।ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“যাচ্ছিস সেটা তো ভালো কথা।কিছু খেয়ে যা।কাল দুপুর থেকে তো কিছুই খাসনি।এখন একটু খেয়েনে।তুই তো চিংড়ি পছন্দ করিস।তাই আজ চিংড়ি করেছি।ইয়ামিলাও খেতে চেয়েছিলো ভাবলাম করেনি।”
ইয়ারাবী ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আচ্ছা আম্মু,এর আগেও তো অনেকবার না খেয়েছিলাম।কই তখন তো এমনভাবে ডাকনি।আর কী বলে আমি পছন্দ করি বলে রেধেছ?আসলেই কী তাই?মন থেকে বলতো আমার জন্য নাকী তোমার মেয়ে খেতে চেয়েছিলো বলে।সে যাই হোক,একদিন না খেলে মরে যাবোনা।আর এমনিতেও তোমার হবু জামাই আমাকে না খাইয়ে তো আর ছাড়বেনা।তাছাড়াও অনুদের বাসায় যাবো।আল্লাহ হাফেজ।”
ইয়ারাবী বেড়িয়ে পড়ে।ওর মা ভাবতে থাকে ওর বলা কথাগুলো।যা বলেছে একদম ঠিক,এবাড়িতে সব সময় ইয়ামিলার আর বাবা-মায়ের পছন্দের জিনিস রান্না হয়।এখন যদি ওনাদের প্রশ্ন করা হয় ইয়ারাবীর কী পছন্দ,নিঃসন্দেহে বলা যায় ওনারা এর উত্তর দিতে পারবেনা।ইয়ারাবীর মা ওর বাবাকে প্রশ্ন করে,
-“আচ্ছা,আমরা কী ইয়ারাবীকে হারিয়ে ফেলেছি।ওর মুখের শেষ হাসিটা ২ বছর আগে দেখেছি।তারপর ওকে কখনো মন খুলে হাসতে দেখিনি।”
ইয়ামিলা বলে,
-“তোমার জন্যতো আপু আর কখনো হাসেনা।আপু যখনি হাসতো তুমি কীসব বলতে মনে নেই।”
ওনারা একে অপরের মুখের দিকে তাকায়।ওনারা না চাইতেও ইয়ারাবীকে অনেকটা দূরে ঠেলে দিয়েছেন।ওর ইচ্ছা,ওর খুসির কখনো দাম দেননি।ওনারা এখন হাজার চাইলেও আগের ইয়ারাবীকে ফিরে পাবেননা।
ইয়ারাবী পুরো নাম ইয়ারাবী বরকতুল্লাহ ইস্মা।বাবা-মায়ের বড় মেয়ে।অনেকটা শ্যামলা বর্নের ,চোখ দুটা বিড়ালের মতো দেখতে অনেকটা, দু’চোখের কর্নারে দু’টা তিল আছে যা ওকে আরো ফুটিয়ে তোলে।হাসলে গালে টোল পড়ে,কিন্তু হাসেনা।চুলগুলো পাতলা ব্রাউন কালারের মাজা পর্যন্ত।পাঁচ ফুট তিন-চার ইন্চি হবে।ঢাকা ভার্সিটিতে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে।যদি বা এটা নিয়ে পড়তে চায়নি কিন্তু ওযে বললাম ওর গুরুত্বের কোনো দাম নেই।তাই না চাওয়া সত্ত্বেও করতে হচ্ছে। ছোট বেলায় যে অনেকটা ওর আনন্দে কেটেছে তা কিন্তু নয়।বলতে গেলে মাত্র জীবনের শুরুর চার-পাঁচ বছর ওর আনন্দে কেটেছে।সেটা নয় আছতে আছতে যানবেন।
(২)
সকাল দশটা বেজে ত্রিশ মিনিট।একটা ক্যাফেতে ইয়ারাবী বসে আছে,ঠিক ওর সামনে আবরার বসে আছে।
আবরার চৌধুরি ফুয়াদ,নামের সাথে চেহারা আর পার্সনালিটির পুরো মিল।একজন সাইক্রেটিস ডাক্তার অপরদিকে একজন সাইন্টিস্ট। পড়াশোনা ইংল্যান্ড থেকে কম্পিলিট করে এসেছে।তবে দু’জায়গাতে অল্প বয়সে অনেক নামডাক আছে।তিন ভাইবোন,ওর বড় ভাই সে একজন ইন্জিনিয়ার,আর ওর ছোট বোন কলেজে পড়ে। ওর বাবা একজন বিজনেসম্যান, ওর মা একজন প্রফেসর। বর্তমানে আরেকটা পরিচয় হলো ইয়ারাবীর উডবি।
আবরার অনেকক্ষণ ধরে ইয়ারাবীকে পর্যবেক্ষন করছে।মেয়েটা না কিছু বলছে না কিছু খাচ্ছে।তবে আবরার পাশের চেয়ারে রাখা ওর সাদা এপ্রোনের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে।তবে ওর দৃষ্টিতে আছে এক শুন্যতা,কোনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার আর্তনাদ। আবরার আরো একটা জিনিস খেয়াল করলো ইয়ারাবীর বা পাশের মুখের জায়গাটা অনেকটা লাল হয়ে আছে।বুঝায় যাচ্ছে মেকাপ করে ঢাকার চেষ্টা করেছে।
আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এমনটা নয় যে ইয়ারাবী এই বিয়েতে রাজী নয়।তবে ওর সমস্যাটা কী সেটা বুঝতে পারেনা আবরার।অনেকক্ষণ চুপ থেকে আবরার বলে উঠে,
-“আচ্ছা, আমাকে কী তোমার পছন্দ নয়?তুমি কী রাজি না বিয়েতে?”
ইয়ারাবী এপ্রোন থেকে চোখটা সরিয়ে বলে,
-“আমাদের ইনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।এখনতো এসব প্রশ্ন করার কথা নয়।আর আমি যদি রাজী না থাকতাম তাহলে কখনো সম্ভব হতোনা।”
-“তাহলে এতচুপ কেন তুমি?ইনগেজমেন্টের দিনও দেখলাম।জানো গানটা তোমাকে ডেডিকেটেড করে গেয়ে ছিলাম বদলে তুমি কিছুই বললেনা।না তোমাকে কখনো হাসতে দেখেছি।কী হয়েছে তোমার?”
-“আমি বরাবরই চুপ থাকতে পছন্দ করি।আর হাসি…এসব বাদ দিননা।আচ্ছা ডাক্তারের লাইফটা খুব সুন্দর হয় তাইনা।সবাই কত রেসপেক্ট করে,তারা কত পরিশ্রম করে রোগীদের সুস্থ করতে আর মানুষেরাও অনেক ভালোবাসে আপনাদের।সবাই বলে মন থেকে চাওয়াটা কখনো বিফলে যায়না। সত্যিই কী তাই?”
আবরার কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ,মন থেকে যদি তুমি কিছু চাও তাহলে পাবে।”
ইয়ারাবী এপ্রোনটার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কিন্তু আমার তো হয়নি।”
আবরার কফি খেতে যেয়ে ওদিকে তাকিয়ে টেবিলে রাখে।তারপর বলে,
-“মানে?”
-“ক্ কিছুনা।আচ্ছা আপনি দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিছু বলবেন?”
আবরার ইয়ারাবীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি।ইয়ারাবী হাতটা বারিয়ে দেয়।আবরার অনেক সুন্দর একটা চেইন সিস্টেম ব্যাসলেট পরিয়ে দেয়, যার উপর লিখা আছে ইংরেজি অক্ষরে সোলোমেন্ট ।তারপর বলে,
-“এটা ইংল্যান্ডে থাকতে ওখানকার একটা শপে দেখেছিলাম।দ্যান অর্ডার দিলাম আর কাল এসে পৌছালো।”
-“এটাতো পুরো ডায়মন্ডের,এটা আমি নিতে পারবোনা।”
-“অদ্ভুত তো, আমি তো তোমার জন্যই কিনেছি।”
-“এটা খুব দামী আর তাছাড়া বাদরের গলায় মক্তার মালা শোভা পায়না।”-কিছুটা হেসে কথাটা বলে
-“তারমানে?দেখ এসব আনসেল্স কথা একদম বলবেনা।আর শোনা এটা যেন তোমার হাত থেকে খুলতে না দেখি।আর যদি এটা খুলে রাখো তাহলে আমার থেকে খারপ কেউ হবেনা।আমি কিন্তু খুব রাগী।আমার রাগ সহ্য করার মতো ক্ষমতা তোমার নেই।”
ইয়ারাবী আর কিছু বললোনা।হঠাৎ আবরার ফোনে একটা কল আসে।ওকে এখনি ল্যাবে যেতে হবে।একটা ছোট সমস্যা হয়েছে তাই।আবরার ইয়ারাবীকে ড্রপ করে দিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ইয়ারাবী বলে ও চলে যেতে পারবে।আবরারের খুব তাড়া থাকায় ও বেরিয়ে পরে।ইয়ারাবী তার কিছুক্ষণ পরে অনুর বাসার উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
(৩)
ইয়ারাবী অনুর বাসায় বসে আছে।অনু একাই থাকে এখানে পড়াশোনার জন্য।আর ওর হোস্টেলে থাকতে ভালো লাগেনা।তাই ওর বাবা বারিধারায় একটা ফ্লাটে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।ইয়ারাবী আর অনু ক্লাস ফাইভে একসাথে পড়তো।তখন একে অপরের ফ্রেন্ড ছিলো।কিন্তু সিক্সে উঠার পর ইয়ারাবী অন্য স্কুলে চলে যায়।তারপর আবার ওরা কলেজে এক হয়।হয়ে যায় একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড।যদি ওর মন খারাপ থাকে তো এর সাথে কথা বলে ভালো হয়ে যায়।
ইয়ারাবী ক্যাফেতে তেমন কিছুই খায়নি।আজকাল ওর গলা দিয়ে কোনো খাবার নামতেই চায়না।ও যদি সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকে তবুও ওর পরিবার সেটা বুঝতে পারেনা,কিন্তু এই মেয়েটা সব বোঝে যায়।অনু ইয়ারাবীর জন্য খাবার আনতে কিচেনে গেছে।এদিকে ইয়ারাবী বেলকনির গ্রীলে হেলান দিয়ে হাতের ইনগেজমেন্টের আংটির দিকে তাকিয়ে অতিতের কথা ভাবতে থাকে
সেদিন ইয়ারাবীকে দেখতে আসবে।অবশ্য ইয়ারাবী চেয়েছিলো নিজ পায়ে দাড়িয়ে তারপর বিয়ে করতে।কিন্তু ওর পরিবারের জন্য সেটা হবেনা মনে হয়।ছোট থেকে ইয়ারাবীর স্বপ্ন ছিলো সে একজন সিআইডি অফিসার হবে।কিন্তু ওর ফ্যামিলি ওর কাছে এমন ভাবে ডাক্তারের কাহিনী জপতো যে না চাইতেও ওর মনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন গেথে যায়।ফাইভে খুব ভালো রেজাল্ট করে,এইটেও একি হয়।কিন্তু এসএসসিতে রেজাল্ট একটু খারাপ হয়।পরীক্ষার আগেই ছয়মাস অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলো বিছানায়।এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট আসে।কিন্তু কপাল খারাপ।সবাই যখন কোচিং করতো তখন ওকে বাসায় পড়তে বলা হতো।কিন্তু তারপরও পড়তো নিজে থেকে যতটা পড়া যায়।এর মাঝে ওর বাবা বলে ওকে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য দেশের বাইরে পাঠাবে।কেননা ওর পয়েন্ট কিছুটা কম ছিলো।কিন্তু পরবর্তীতে ওকে আর বাইরে ডাক্তারি পড়তে যাওয়ার জন্য পাঠানো হয়না।কেননা ওর মায়ের কাছে তার বোনেরা মেয়েকে যাতে বাইরে ডাক্তারি পড়াতে না পাঠায় তার মালা জপতো।যখন ডাক্তারি পড়াবেনা তখন আর কি করা।ও নিজের চেষ্টার অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড ভার্সিটিতে এপ্লাই করে।পেয়েও যায় কিন্তু যেতে দেয়না।কিন্তু ওর আন্টিরা প্লান করে যেতে দেয়না।ওর বাবা বরাবরই আইন নিয়ে পড়া পছন্দ করতোনা।পড়াতে চেয়েছিলো ইংলিশ,বা গবেষনা বিষয় নিয়ে।কিন্তু ও জেদ ধরে রাখে।বলে তোমরা যখন স্বপ্নগুলো একে একে শেষ করলে তখন আর নয়,এবার তোমাদের পছন্দ নয় এমন টপিক নিয়েই পড়বো।
কিন্তু আজ যখন ওকে দেখতে আসবে শুনে তখন ও রাজি হয়না।ওর মা ওকে বলে ও যদি রাজি না হয় তাহলে ওকে এখানেই কেটে টুকরো টুকরো করবে।এসব কথা ওকে আর ভাবায় না, আর বিষয়টা নতুনও নয়।না পেরে ওর মা অনুকে ফোন করে।অনু এসে ওকে বোঝায়।অনু ও চায় কেউ অসুক ইয়ারাবীর জীবনে,যে ওর জীবনের সব কষ্ট মুছে দিবে,ঢাল হয়ে দাঁড়াবে ওর সামনে।যারা ওকে দেখতে এসেছে সে ওর বাবার অফিসের বস।ইয়ারাবী ছোটবেলা থেকে আদার-এক্টিবিটে পারদর্শী। গল্প,ডিবেট,কবিতা, পেইন্টিং এগুলো করতে ওর ভালোলাগে।তাছাড়া সোস্যাল কাজগুলোর সাথেও যুক্ত আছে।নিজেকে এসবের ভিতর ঢুবিয়ে রেখে কষ্টটাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলতে চায়।
আবরার আগে থেকেই ইয়ারাবীকে চেনে।ওর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ওর বাবাকে জানায়।এদিকে ইয়ারাবীর বাবা নিজের মেয়ের কিছুটা প্রশংসা করতো তার কলিগের কাছে।তেমনি একদিন উনি ওনার সহকারীর সাথে কথা বলছিলেন। সেই সহকারী আবার ওনাদের বসের সাথে গল্পে গল্পে ইয়ারাবীর কথা বলে।এদিকে আবরার কথা অন্যদিকে সহকারীর কথা পুুরো মিলে যায়।এদিকে মি.ফুয়াদ একটা কাজের জন্য বসের সাথে দেখা করতে রুমে যায়।তখনি উনি ইয়ারাবীকে দেখতে চান।ব্যাস হয়ে গেল পছন্দ।মি.ফুয়াদ প্রথমে না করেছিলো কারন পড়ালেখা শেষ না করিয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন না।কিন্তু বসের জোড়াজোড়িতে রাজী হয়ে যায়।
এদিকে আবরাররা সহ পরিবারে এসেছে ইয়ারাবীকে দেখতে। অনু ইয়ারাবীকে নিয়ে আসে।একটা পিংক কালারের লং গাউন, গলায় স্কার্ফ পোচানো,চুলগুলো ছাড়া,চোখে চশমা,হাতে ঘড়ি,আর কানে ছোট কানের দুল।এর বাইরে আর কিছুই করেনি।যেমনটা সব সময় থাকে ঠিক তেমন করেই এসেছে।ওর মায়ের তো দেখে মেজাজটা গরম হয়ে গেছে কিন্তু গেস্টদের সামনে কিছু বলতেও পারছেনা।
ইয়ারাবীকে মি.রায়হান(আবরার বাবা)প্রশ্ন করে,
-“মামনি তোমার পুরো নামটা কী একবার বলবে?”
ইয়ারাবী উনার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ইয়ারাবী বরকতুল্লাহ ইস্মা”
-“জানো তোমার নামে বরকত,পূন্য,বিশুদ্ধতা আছে।আর তোমাকে ঠিক তোমার নামের মতোই লাগছে।”
ইয়ারাবী কিছুটা মনে মনে হাসে।মিসেস হেনা বলে,
-“আমরা জানি,তুমি পড়াশোনা করো।তবে ভয় নেই বিয়ের পরও তুমি লেখাপড়া চালিয়ে যাবে, চাকরি যদি করতে চাও করবে আমাদের কোনো বাধা নেই।এই দেখো আমি কিন্তু একজন প্রফেসর ছিলাম।রিটায়ার্ড করেছি দু’মাস আগে।আর ইকরা এ কিন্তু একজন টিচার।”
এর মধ্যেই ইয়ারাবীদের বাড়িতে আসে ওর বড় আন্টি আর তার মেয়ে।বাসার সবাই কিছুটা অবাক হয়।কেননা আদিবা কোনোদিন বাসায় আসেনি।তাহলে আজ ওর মায়ের সাথে কেন এলো?অবশ্য ইয়ারাবী ব্যপারটা ঠিক ধরতে পেরেছে।আদিবা ইয়ারাবীর আট বছরের বড় কিন্তু লেখাপড়া গেপ দেওয়ার কারনে ইয়ারাবীর সাথেই পড়ে তবে আলাদা ডিপার্টমেন্ট। আদিবা দেখতে খুব ফর্সা হলেই চেহারাটা তেমন ভালো নয়। ওর আন্টি অবশ্য জানে বাসায় গেস্ট কেন এসেছে।তারপরও সে তার চিরচেনা নাটক করে মিসেস.ফুয়াদকে বলে,
-“কীরে ইশানি?এনারা কারা?”
-“আপু তোকে বলেছিলাম না ইয়ারাবীকে দেখতে আসবে এনারা তারাই।”
তারপর মিসেস জামান আদিবাকে টেকনিকে মুখ খুলতে বলে।আদিবা মুখের ঢাকা অংশ থেকে হেজাবটা সরায়।তারপর মিসেস জামান আবরারদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“আপনাদের কী ইয়ারাবীকে পছন্দ হয়েছে?”
-“এখানে তো পছন্দ না হওয়ার কিছু নেই।আমরা তো আগে থেকেই ইয়ারাবীকে পছন্দ করতাম শুধু আজ দেখতে আসা।”-পাশ থেকে আবরার ভাবী ইকরা বলে উঠে।
মিসেস জামান বলে,
-“তা অবশ্য ঠিক।লেখাপড়ার সাথে সাথে আরো অনেক কাজে পারদর্শী আমাদের ইয়ারাবী। কিন্তু কি জানেন তো এসব দিয়ে তো আর সংসার হয়না।মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে ইয়ারাবীতো ঘরের কাজ তেমন একটা পারেনা।বলতে গেলে কিছু করতেই পারেনা।তার উপর শ্যামলা মেয়ে।আর আপনারা এত বড় ঘরের মানুষ বসিয়ে বসিয়ে তো আর খাওয়াবেন না।এইযে দেখুন আমার মেয়ে,ইংলিশ নিয়ে লেখাপড়া করছে।আজকাল কিন্তু ইংলিশের ডিমান্ড অনেক।তাছাড়া আমার মেয়ে যেমন রুপবতী তেমন গুনবতীও।”
এসব শুনে ইয়ারাবীর মা-বাবার মুখটা কালো হয়ে যায়।যদি এখন এসব মানুষ না থাকতো তবে ইয়ারাবী যে কি করতো সেটা সে নিজেও জানেনা।ওর খুব রাগ লাগছে।অনু বুঝতে পেরে ওর হাত চেঁপে ধরে।পাশ থেকে আবরার বড় ভাই আবির বলে উঠে,
-“ঠিকই বলেছেন, আমরা বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর জন্য বৌ নিয়ে যাচ্ছেনা।আর না আমরা বৌ দেখতে এসেছি।শুনেছি মেয়ে লেখাপড়া করে, তাই তাকে বসিয়ে না রেখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবো।আর রইলো কাজের কথা,আন্টি আমাদের বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই। আর আমাদের বাবা-মা বাড়ির বৌকে বাড়ির মেয়ে মনে করে।তাই ওসব আপনাকে চিন্তা না করলেও হবে।”
বড় আন্টির মুখটা দেখার মতো ছিলো।মনে হচ্ছে কেউ হাড়ির কালি তার মুখে ঘষে দিয়ছে।ইয়ারাবীর তো সেই লেভেলের হাঁসি পাচ্ছে।এর মধ্যে আবরার বলে ও ইয়ারাবীর সাথে কিছু কথা বলতে চাই।তাই ইয়ারাবী ওকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।ইয়ারাবীর রুমটা অনেক সুন্দর,তবে দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের স্টিকার দিয়ে ডিজাইন করা।ওর বিছানার উপর ব্রাউন কালারের খরগোশ খেলা করছে।আবরার যেয়ে বিছানার এক কর্নারে বসে খরগোশটাকে আদর করে।ইয়ারাবীকে দেখে খরগোশটা ওর কাছে চলে যায়।আবরার বলে,
-“তোমার এটা তাইনা।”
-“আমার বলতে কিছু নেই,ইয়ামিলি বলে এটা ওর।তবে আমার কাছেই বেশি থাকে।”
-“নাম কী ওর?”
-“এইস আমি রেখেছিলাম।কিন্তু ইয়ামিলি সেটা চেন্জ কর রেবি রেখেছে।সবাই ওকে রেবি ডাকে।দেখুন কী সুন্দর না এদের জীবন।না কেউ এদেরকে বকে,না কেউ কথা শুনায়,না কেউ মিছে মিছে দোষারপ করে।”
-“সরি, বুঝিনি। ”
-“কিছুনা।আচ্ছা আমার বোনকে কেমন দেখলেন?আপনার সাথে মানাবে ভালো।আপনিও ফর্সা ওই ফর্সা,তাছাড়া সব কাজ পারে।এদিকে আমি শ্যামলা,তেমন কিছুই পারিনা।আর আন্টির কথা শুনে মনে হলো তিনি আপনাকে পছন্দ করেছে আপির জন্য।”
আবরার মাথায় রাগ উঠে যায়।ও রাগটাকে কন্ট্রল করার চেষ্টা করছে।কেননা ও রাগলে ওকে খুব ভয়ংকর দেখায়।আর ও চাইনা ওকে এভাবে দেখে ইয়ারাবী ভয় পাক।ও ইয়ারাবীর সামনে যেয়ে বলে,
-“এখানে তোমাকে দেখতে এসেছি,আদিবাকে নয় বুঝলে।”
-“এক মিনিট, কেউ তো বলেনি ওর নাম আদিবা। আপনি কিভাবে জানলেন?”
-“আ আসলে,চলো নিচে যায়। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
আবরার কথা কাটানোর চেষ্টা করছে সেটা ইয়ারাবী ভালোই বুঝেছে।কিন্তু ও আর কোনো প্রশ্ন করেনা।নিচে এসে ইয়ারাবী শুনতে পায় সামনের সপ্তাহে ওদের ইনগেজমেন্ট। ওর বাবা-মা ওর কাছে একবার শুনার প্রয়োজনবোধ করলোনা।আবরাররা ডায়মন্ডের একটা ছোট লকেটের মোটা চেন পরিয়ে দিয়ে যায়।
(৪)
অনুর কথায় বাস্তবে ফেরে ইয়ারাবী। রুমে এসে দেখে অনু প্লেটে প্রচুর খাবার নিয়ে বসে আছে।
-“কী করে?এত খাবার একবারে খেলে মোটা হয়ে যাবি তুই।এমনিতে তো মোটু আসিস?”
-“ওই আমাকে মোটা বলবিনা তুই।আর এসব আমি না তুই খাবি।”
-“তোর মাথা খারাপ হয়েছে?বললাম তো ক্যাফেতে আবরার জোর করে অনেক গিলিয়েছে।”
-“দেখ চুপচাপ এসব শেষ করবি।তুই যে কী খেয়েছিস সেসব আমি বুঝতেই পারছি।আর ভাইয়া আমাকে বলেছে তুই কী গিলেছিস?”
-“ভাইয়া বলেছে মানে?”
-“আরে আবরার ভাইয়া।আসলে তোর সাথে দেখা করার আগে আমাকে ফোন করেছিলো। তারপর আসায় সময় ফোন করে বলে তুই কিছুই খাসনি।”
-“বাপরে বাপরে বাপ!এই কয়দিনে এত মিল হয়ে গেলো তোদের।”
-“আরে তেমন কিছুনা।আবরার ভাইয়ার ফ্রেন্ড আমার দাদা হয়। সেই থেকেই চেনা।তোর ইনগেজমেন্টের দিন যে ছেলেটা লাল পান্জাবি পরে আসছিলো সেটা।”
-“ও..কিন্তু দেখ এসব আর খেতে পারবো নারে।”
-“আমি ওসব শুনবোনা।তুই খেয়েনে।”
ইয়ারাবীর আর কী করার ।ও খেতে বসলো।এদিকে অনু বকবক করছে।হঠাৎ অনু এক পর্যায়ে বলে,
-“তোর ইনগেজমেন্টের দিন ভাইয়া কি সারপ্রাইজটা দিয়েছিলো।গানটা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিলো।”
-“হু”
-“তোর কী মন খারাপ।”
ইয়ারাবী অনুর কথায় হেসে দেয় আর বলে,
-“মন বলতে কিছু থাকলে তো খারাপ হবে তাইনা।”
-“ওভাবে বলছিস কেন?দেখবি তুই অনেক সুখী হবি।”
ইয়ারাবী খাবারটা শেষ করে বলে,
-“যার জীবনে অভিসাপ আছে, সে কখনো সুখি হয়না।তাও কাদের দেওয়া জানিস নিজের বাবা-মার দেখা অভিসাপ।আমি মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র সেই মেয়ে যার বাবা মা উঠতে বসতে মেয়ের ইহকাল পরকালের অভিসাপ দেয়।”
অনু আর কিছু বলতে পারেনা।ইয়ারাবীর মনটা অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য বলে,
-“জানিস পরশু না মোটার একটা বাচ্চা হয়েছে।দেখতে হেব্বি কিউট।তুই বস আমি নিয়ে আসি।”
মোটা হলো অনুর বিড়ালের নাম।খালি ফ্লাটে ওর সাথী হয়েছে তিন চারটা বিড়াল।ইয়ারাবী অনুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বাসায় চলে আসে।
(৫)
আদিবা ভার্সিটি থেকে বাসায় এসেই ব্যাগটা টান মেরে ফেলে দেয়।বোরখা,স্কার্ফ সব খুলে ছুড়ে মারে।ওর মা মিসেস জামান মেয়ের এমন রেগে যাওয়া দেখে প্রশ্ন করে,
-“এসব কী আদিবা?কী হয়েছে বলবি তো?না বলে সব কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলছিস কেন?”
আদিবা হাতের মোবাইলটা নিচে ফেলে দিয়ে বলে,
-“আম্মু আমি কীসে খারাপ বলোতো।৫ ওয়াক্ত নামায পড়ি,পর্দা করে চলি।কখনো কোনো ছেলের ধারে কাছেও যায়নি।”
-“হ্যাঁ,তো কী হয়েছে।”
-“তুমিই বলোতো।আমিতো ইয়ারাবীর থেকে দেখতে ভালো,ওর থেকে ফর্সা,বাসার সব কাজও পারি।ওর থেকে বয়সেও বড়।তাহলে আমার আগে ওর কেন বিয়ে হচ্ছে?তাও এমন ভালো ফ্যামিলির সাথে।আর যেখানে আব্বু আমার জন্য কোথায় এক ব্যাংকে জব করা ছেলেকে ধরে এনেছে।মা আমি আবরারকে চাই।প্রথম দেখায় আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।আই নিড হিম মা।যেভাবেই হোক তুমি ওকে এনে দাও।”
এসব শুনে আদিবার বোন সাদিয়া বলে,
-“তুই কী পাগল হয়ে গেছিস আপু?ইয়ারাবী আপুর সাথে ইনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।আর এমনটাতো নয় যে ওনারা তোকে দেখতে এসে ওকে পছন্দ করেছে।ওনারা ওর বাসায় যেয়ে ওকে পছন্দ করেছে।এর মধ্যে তুই আসলি কোথার থেকে?”
-“হ্যাঁ,হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি।তুই জানিস আজকের বাজারে একজন ব্যাংকে জব করা ছেলের থেকে ও কতটা উপরে।যার জন্য মা কৌশলে ইয়ারাবীকে বিদেশে পড়া থেকে আটকে দিলো সেখানে কী না।আম্মু কিছু করো।তুমি সেখানেই যায় শুধু ইয়ারাবীর প্রশংসা শুনি।”
এবার মিসেস জামান বলে উঠে,
-“চেষ্টা কী আর কম করেছি?যেদিন ওকে দেখতে এলো টেকনিকে তো তোকে ওদের সামনে নিয়ে গেলাম।কিন্তু ওরা তো তোর দিকে ফিরেই তাকালোনা।ইয়ারাবীকে শেষ করার জন্যতো কত তাবিজ-কবজ পর্যন্ত করলাম,কিন্তু ওই মেয়ের একচুল পরিমান ক্ষতি হলোনা।কলেজে ওঠার পর থেকেই তো করলাম ওকে কিন্তু সেই মেয়ে দিব্বি ঘুড়ে বেরাচ্ছে। ”
-“মা তুমি যে হুজুরের কাছে গিয়েছিলে তার কাছে আবার যাও।আবরারকে আমার চাই।তাবিজ-কবজ করো,যেন ওর দিকে থেকে দৃষ্টি ফেলে আমাকে বিয়ে করতে চাই।”
-“তাহলে ইয়ারাবীর কী হবে?”
আদিবা কথাটা শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে ওর ভাবী ইতি দাঁড়িয়ে আছে।আদিবা ইতির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনাকে এখানে কথা বলতে কে বলেছে?”
-“আদিবা তুমি ভুলে যেওনা আমি এই বাড়ির বৌ।”
-“শুধুমাত্র তোমার বাচ্চার জন্য আব্বু-আম্মু মেনে নিয়েছিলো।কেননা তোমাদের মতো লো ক্লাস মেয়েদের কোনো যোগ্যতা নেই আমাদের পরিবারে আসা।”
আদিবার কথাশুনে ওর ভাবী হেসে দেয়।বাবুর ফিডারে দুধ ঢেলে বলে,
-“ঠিকই বলেছো তুমি,আমি লো ক্লাসের মেয়ে।তবে কী জানো তোমার মতো আমার মনটা কুলুষিত নয়।তুমি যে নামায পরো,পর্দা করো এসব কোনো কাজেই আসবেনা যদি তোমার মন পবিত্র না থাকে।আর কী বললে ভালোবেসে ফেলেছো?তুমি তো অনেক হাদিস জানো, তাহলে তুমি নিঃশ্চয় বুঝতে পারছো তোমার ওই চোখের দৃষ্টিকে ক্রাস বা ভালোবাসা নয় যিনা বলে।আর কী জানো,তোমার ভাইয়ায় কিন্তু আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো আমি না।”
কথাগুলো বলে ইতি ওখান থেকে চলে যায়।এদিকে আদিবা খুব রেগে ঘরের জিনিসপত্র ফেলতে শুরু করে।এই ব্যবহারটা আদিবা আগে কোনোদিন করেনি তবে আজ করছে।শয়তান ওকে পেয়ে বসেছে।তবে আদিবা যে ভালো মেয়ে তা কিন্তু নয়।
শ্যামলীর একটা চার তালা বাসার তিন তালার দু’রুমে আর ডাইনিং মিলিয়ে একটা ছোট ফ্লাটে থাকে।অবশ্য বাড়িটা ওদের নয়।ওর মামার ,তবে ওরা ভাড়া থাকে।আদিবার বড় ভাই বিয়ে করে বৌ নিয়ে আলাদা থাকে।কয়েকদিন হলো এই বাড়িতে এসেছে।আর যখন ওর ভাই আসে চিলেকোঠার রুমটাতে থাকে।
আদিবের সম্পর্কের বিয়ে ইতির সাথে।ইতিদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।ওরা তিন ভাই বোন,বড় বোনের তিনবার ডিভোর্স হয়েছে।তবে এমনি এমনি হয়নি,ওর বোনটা কিছু পাগলি টাইপের, ব্রেনে সমন্যা আছে।টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি ওর বাবা।আর ছোটভাই কেবল টেনে পড়ে।তবে আদিব যে ওর মধ্যে কী দেখেছে সেটা আদিবই জানে।গোপনে ওরা বিয়ে করে রাখে।স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের যে পর্যায়টা থাকে সেখানে পর্যন্ত পৌঁছে যায়।যখন বেবী হবে কথাটা শোনে তখন আর গোপন রাখেনা, একেবারে ঘরে তুলে নেয়।অবশ্য কেউ ইতিকে পছন্দ করেনা গরীব বলে।কিন্তু ইতির সেটাতে কিছু আসে যায়না।কেননা যার সাপোর্ট দরকার সে তো সব সময় পাশেই থাকে।
#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Irini Ori
#পর্ব:১