চারুলতা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮ /শেষ পর্ব (১ম খন্ড)
এদিকে আমার ফাটা পেটটার দিকে তাকাতেই আরও চমকে গেলাম। লক্ষ্য করলাম আমার পেট থেকে অদ্ভুত ভাবে আলোক রশ্নি বের হচ্ছে। আমি এতক্ষণে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার ছিল। মূলত পেট থেকে আলোক রশ্নি বের হওয়ায় চারপাশটা আমার চক্ষুগোচর হয়েছিল। ভয় আমাকে গ্রাস করতে লাগল। অপরদিকে আমার ফাঁটা পেটটা জোরা লাগতে শুরু করল। আলোকরশ্নিটা পেট থেকে গোলাকার বৃত্ত হয়ে বের হয়ে ঘরের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। এদিকে বাচ্চাটার রূপ আরও পরিবর্তন হতে লাগল। এত কুৎসিত বাচ্চা আমার চক্ষুগোচর এর আগে কখনও হয়নি। শরীরটা কেমন জানি ভয়ে শিউরে উঠছে। রক্ত যেন হিম হয়ে যাচ্ছে।
বৃত্তাকার আলোটা চারদিকে অনবরত ঘুরতে ঘুরতে কোথাও যেন মিলিয়ে গেল। ফলশ্রূতিতে ঘরটায় একটু অন্ধকার নেমে এলো। এদিকে একটা সময় পর আমার পেটটা স্বাবাভিক হয়ে গেল। পেট স্বাভাবিক হলেও শরীটায় তেমন শক্তি অবশিষ্ট নেই যাতে করে আমি শুয়া থেকে উঠে দাঁড়াব। অন্যদিকে বাচ্চাটা গড়িয়ে গড়িয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগল। আমার ঘাড়ের কাছে এসে আমাকেই কামড়ে ধরল। দম যেন বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। এবার আমার মৃত্যু হয়ে যাবে বুঝতেই পারছিলাম ৷ এমন সময় কারও উপস্থিতি টের পেলাম। মনে হলো বাচ্চাটাকে কেউ ধরে আমার ঘাড় থেকে ছুটিয়ে দূরে ছুড়ে মেরেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না সে কে! বন্ধ চোখটা খুলে লক্ষ্য করলাম মৃধা আমার সামনে বসা। কিছুটা উৎকণ্ঠার সহিত জিজ্ঞেস করলাম
– মৃধা তুমি? এটা কী কোনো মায়াবল নাকি সত্যিই তুমি?
মৃধা হালকা মুচকি হেসে বলল
– এরিকের মায়াজালে তুমি ফেঁসে গিয়েছিলে এটা সত্য। তবে আমি সত্য ছিলাম। আমি এরিকের বলির শিকার হই। আমার বয়স যখন ষোলো তখন এরিক আমাকে তুলে নিয়ে এসে আমার দেহ থেকে মাথাটা ছিন্ন করে শয়তানের নামে বলি দেয়। আমাকে বলি দেওয়ার পর আমার লাশটা ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায়। সেখান থকে এক সাধু আমার মাথাবিহীন লাশটা এনে আমার মধ্যে কিছু শুভ শক্তি দেয়। আর তার বলেই আমি নতুন ময়াশক্তির জীবন পাই। আমার শরীরের রক্তও এরিককে ধ্বংস করার জন্য টগবগ করতেছে। তবে আমি অপারগ । কারণ এরিকের ধ্বংস কেবল তুমিই করতে পারবে। আমি শুধু তোমাকে সাহায্য করতে পারব এর বাইরে কিছু না।
আমি কিছুটা চমকে গেলাম। বিস্ময় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম
– কিন্তু এর আগে যে কাহিনি গুলো তুমি বলেছিলে সেটা কী মিথ্যা?
মৃধা হেসে উত্তর দিল
– তোমাকে সাথে সাথে সত্য বললে বিষয়টা আরও জটিল অবস্থায় চলে যেত। তাই একটা কাহিনি সাজাতে হয়েছিল।
মৃধার কথা শুনে আমি অস্থির হয়ে যেতে লাগলাম। মৃধা আমার অস্থিরতা দেখে বলল
– শান্ত হও চারুলতা। তোমাকেই এরিককে ধ্বংস করতে হবে। আর এজন্য তোমাকে আগে স্থির হতে হবে।
মৃধার কথায় নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা অবিচল রাখলাম । যদিও অস্থিরতার খানিক তকমা বিরাজমান আমার মধ্যে। তবুও শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু শত চেষ্টা করেও অস্থিরতা কাটাতে ব্যর্থ হলাম।
আমি অস্থিরতা না কাটিয়েই মৃধাকে বলে উঠলাম
– আমার যে বাচ্চাটা হয়েছে সেটা কী শুভ নাকি অশুভ?
মৃধা হালকা গলায় বলল
– তোমার বাচ্চাটা দুয়েই মাঝে রয়েছে। এখন এটা তোমার কাজ বাচ্চাটাকে তুমি কোন দিকে পরিচালিত করবে। বাচ্চাটাকে তোমাকে দ্রূত আয়ত্ত করতে হবে। অন্যথায় কোনোক্রমে এরিক যদি বাচ্চাটাকে আয়ত্ত করে ফেলে তাহলে আমাদের পরাজয় সুনিশ্চিত।
আমার অস্থিরতা যেন ক্রমেই বেড়ে চলছে। শরীরটা অসাড় হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই। উঠার শক্তিও পাচ্ছিনা। সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠতে নিয়েও পড়ে যাচ্ছিলাম। মৃধা আমার অবস্থা দেখে আমার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিল। মৃধার হাতের স্পর্শে যেন আমার শরীরের ব্যথা কিছুটা উপশম হলো। আমি কিছুটা শক্তি শরীরে পেতে লাগলাম। তাই শুয়া থেকে উঠে বসলাম। মৃদু গলায় বললাম
– বাচ্চাটা তো উদ্ধত। আমাকে দেখলেই তেড়ে আসে। তাকে আমি কীভাবে শান্ত করব? কীভাবে নিজের আয়ত্তে আনব আমাকে উপায় বলে দাও।
মৃধা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে তা পরক্ষণেই ছেড়ে দিয়ে বলল
– বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা করো। বাচ্চা তোমাকে খামচে বা কামড়ে ধরলেও তাকে ছেড়ো না। তাকে তোমার শাল দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করো। একবার যদি তাকে শাল দুধ খাওয়াতে পারো তাহলে সে বাচ্চাটার তোমার প্রতি মায়া জন্মাবে আর তুমি তাকে খুব সহজেই আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারবে। আর কাজটা করতে হবে দ্রূত। এরিক এখনও টের পায়নি তোমার বাচ্চাটা প্রসব হয়েছে। তাই যা করতে হবে দ্রূত।
আমি মৃধার কথা শুনে বাচ্চাটার দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে আলোকপাত করলাম। ঘরের এক কোণে লেপ্টে লেগে শুয়ে আছে। এত কুৎসিত দেখতে যে তার কাছে যেতে ভয় করছে ভীষণ। তবুও আমাকে এ ধ্বংস লীলা থেকে বাঁচতে হলে বাচ্চাটাকে আয়ত্তে আনতে হবে।
আমি বসা থেকে এবার একটু উঠে দাঁড়ালাম। আস্তে করে বাচ্চাটার কাছে গেলাম। রুমটা যদিও আগের মতো অন্ধকার না। কিছুটা আলো কোথায় থেকে যেন প্রবেশ করেছে। যদিও আলোর প্রবেশ পথ বের করার কোনো উপায় নেই আর বের করার মতো কোনো চিন্হ বা পথও নেই। এখন অবশ্য সেসব ভাচারুলতা বার সময়ও নেই। নিজেকে যথাসম্ভব সামলিয়ে নিলাম। বাচ্চাটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। কোনোরকম সাড়া শব্দ পেলাম না। কদাকার বাচ্চাটাকে ধরতেও বেশ ভয় লাগছে। তবুও বাচ্চাটাকে হাতে স্পর্শ করলাম এবং কোলে তুলে নিলাম। বাচ্চাটা আমার কোলে একদম লেপ্টে আছে এখন। মৃধা পাশ থকে বলতে লাগল বাচ্চাটাকে যেন স্তন পান করাই। মৃধার কথায় বাচ্চাটাকে এবার নিজের স্তন পান করার চেষ্টা করলাম। ঠিক সে মুহুর্তে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম। প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম বাচ্চাটা কী আমার আয়ত্তের বাইরে চলে গেল?
কপি করা নিষেধ।