#কাছে_দূরে ♥️
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___১৮ ♥️
—-” বিয়েতে দুই রকম কার্ড কেন অর্ডার হবে?”
সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বিস্মিত কন্ঠে কথাটা বলে উঠলো হীর। সাবাব জবাবে কিছুই বললো না। শুধু একবার শান্ত চোখে তাকালো হীরের দিকে। হীরের চোখ মুখ বিস্ময়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। সাবাব আবার কোন ধরনের হেয়ালি শুরু করল তার সাথে কে জানে! প্রশ্ন করলেও জবাব দিচ্ছে না।
দোকানের লোকটি হীরের মুখের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বুঝতে চেষ্টা করল তারা কি দুই রকমের কার্ডই অর্ডার করবে নাকি এক রকমের। হীরের মুখে তো আর জবাব লেখা নেই। তাই সে এর কোনো রকম উত্তর খুঁজে বের করতে পারল না। তাই সাবাবকেই আরেকবার জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হলো। তবে সাবাবকে প্রশ্ন করার জন্য ততোদূর কষ্ট তাকে করতে হলো না। তার পূর্বেই সাবাব তার বিভ্রান্ত দূরে করতে বলে উঠলো,
—-” কনফিউজড হওয়ার কিছু নেই! আপনি দু’রকমের কার্ডই সাপ্লাই দিবেন। আর শুনুন, আগামীকাল কিন্তু কার্ড নিতে লোক পাঠানো হবে। সময় মতো কার্ড পৌঁছানো চাই। বুঝতেই পারছেন হাতে সময় খুব কম তার উপর প্রচুর গেস্ট। সবার দোরে দোরে গিয়ে কার্ড পৌঁছাতে হবে।”
দু’রকমের সবচেয়ে আনকমন ডিজাইনের হাজার তিনেক কার্ডের অর্ডার পেয়ে লোকটার খুশি যেন আর ধরেনা। লোকটা আনন্দে মনে মনে শ’খানেক নাচ পেড়ে বলে উঠলো,
—-” অবশ্যই! অবশ্যই স্যার। আমরা কালই ঠিক সময় মতো কার্ড পৌঁছে দিবো স্যার। আরও যদি কার্ডের দরকার পড়ে তবে অবশ্যই একটা কল করবেন। আমরা তৎক্ষনাৎ কার্ড পাঠিয়ে দিবো স্যার।”
সাবাব লোকটার খুশিতে চকচক করা মুখখানা দেখে স্মিত হাসল। লোকটার সাথে হ্যান্ডশেক করে হাসি মুখে বলল,
—-” শিওর।”
সাবাব যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরতে হীরও তার পেছন পেছন হাঁটা ধরলো। পেছন থেকে লোকটার কন্ঠ আরেকবার ভেসে আসল, ‘স্যার আবার আসবেন।’
সাবাব গাড়ির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই হীর তার সামনে এসে দাঁড়ালো। কোমরে হাত চেপে হাঁপিয়ে উঠে বলল,
—-” এত দ্রুত কেন হাঁটছো? তোমার যাওয়ার ট্রেন কি ছুটে যাচ্ছে?”
হীর হঠাৎ সাবাবের সামনে এসে দাঁড়াতে সাবাব ভড়কে গেলো খানিকটা। থমথমে মুখ করে বলল,
—-” তুই এতক্ষণ আমার পেছন ছিলি?”
সাবাবের এহেম রিয়াকশনে হীরের কপাল কুঁচকে এলো। বিস্মিত কন্ঠে বলল,
—-” মানে? আমি যে তোমার সাথে এসেছিলাম তুমি কি সেটা ভুলে গিয়েছো নাকি?”
সাবাব চোখ জোড়া এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভাবুক কন্ঠে বলল,
—-” তুই আমার সাথে এসেছিলিস? তাহলে আমি এতক্ষণ খেয়াল করলাম না কেন?”
হীর এবার বিরক্ত হলো। প্রচন্ড রকমের বিরক্তিতে তার রাগ চড়ে গেলো মাথায়। সাবাবকে আর কোনো জবাব দিবে না ভেবেই উল্টো পাশে চলে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। হীরের রাগ দেখে সাবাব হেসে উঠলো মনে মনে। প্ল্যান ঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে ধরা পড়া যাবে না। সাবাব চোখে মুখো ফুটিয়ে তুলল উদাসীনতার ছাপ। এপাশ থেকে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে আঁড়চোখে একবার তাকালো হীরের দিকে। হীর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সাবাব হীরকে আরেকটু জ্বালাতে উদাসীন কন্ঠে বলে উঠলো,
—-” আসলে কি বল তো? কাল রাত থেকে না একজনের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। তার জন্য খুব দুঃখী দুঃখী ফিলিংস হচ্ছে। দেশে ফিরে আসার পর তার সাথে আর তেমন কোনো কনটাক্টও নেই! বুঝতে পারছি না কীভাবে কনটাক্ট করব?”
হীর বিস্ফোরিত চোখে তাকালো সাবাবের দিকে। সাবাব সীটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। হীর নিজের রাগটাকে দমিয়ে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-” কে সে?”
—-” তুই চিনবি না!”
সাবাবের সহজসরল স্বীকারোক্তি। যাতে হীরের শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো। যদিও বা হীর প্রকাশ করছে না সাবাবের সামনে। কিন্তু সাবাব ঠিকই আন্দাজ করতে পারছে।
—-” পরিচয় কিভাবে?”
—-” তুই শুনে কি করবি? তাকে কি এনে দিতে পারবি আমার কাছে? আর তাছাড়া ওর কনটাক্ট নাম্বারও তো নেই আমার কাছে!”
হীর তেজি কন্ঠে বলে উঠলো,
—-” যখন কিছুই বলবে না তখন এতো ঢং করে আমার কাছে এসে আফসোস করছো কেন?”
সাবাব বোবা চোখে তাকালো হীরের দিকে। হীর এবার ভীষণ রেগে যাচ্ছে। আর কথা পেঁচানো যাবে না। কথাটা মনে মনে ভেবেও মুখে কিছু বলল না সাবাব। হীরকে আরেকটু জ্বালাতে মন্দ হবে না। সাবাব অসহায় কন্ঠে বলল,
—-” তুই রেগে যাচ্ছিস কেন হ্যাঁ? তুই কি বুঝবি আমার পেইন? লাস্ট ফোর ইয়ারস আমরা একসাথে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। প্রথম থেকেই ওর সাথে খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গিয়েছিলো। আর তারপর মন দেওয়ানেওয়া! আর হঠাৎ করে আমি এভাবে দেশে ফিরে আসবো বুঝেছি নাকি? তাই তো ভুল করে কন্টাক্ট নাম্বারটাও নেওয়া হয়নি!”
—-” এতো যখন ভালোবাসা ছিলো তো দেশে কেন ফিরতে গেলে? আর যেখানে চার বছর রিলেশন ছিলো সেখানে কন্টাক্ট নাম্বার কি একদিনও নেওয়ার সময় হয়নি?”
সাবাব ধরা পড়ার ভয়ে আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
—-” আমি কি তোর মতো মাথামোটা নাকি? তুই কি ভাবছিস আমি ওর কন্টাক্ট নাম্বার নেই নি? নিয়েছিলাম তো। আর চার বছর আরামসে প্রেমও করেছি। কিন্তু হঠাৎ এলো সেই কালো রাত! ওর ফোনটা চুরি হয়ে যায়। সেই সাথে ওর কন্টাক্ট নাম্বারও হারিয়ে যায়। আর তার পরদিনই আমি দেশে ফিরে আসি। তখনই তো সব হারিয়ে গেলো!”
—-” তোমার গার্লফ্রেন্ডের এতো বড় একটা সর্বনাশের দিন তুমি কি করে দেশে ফিরলে?”
—-” বারে আমি কি জানতাম না কি ওর সাথে এসব কিছু ঘটেছে! আমার তো অনেক দিন থেকেই প্ল্যান ছিলো দেশ ফেরার। সো ঐ দিন ফ্লাইট ছিলো আর আমিও চলে এলাম!”
—-” তখন না জানলে এখন কি করে জানো ওর সাথে এমন কিছু ঘটেছিলো?”
—-” আমার একটা রুমমেট কল করে জানিয়েছিলো!”
—-” তোমার রুমমেট তোমার গার্লফ্রেন্ডকে চিনতো?”
—-” চিনতো না কি বলছিস? আমাদের চার বছরের প্রেম সে তো পুরো আমেরিকার অলিগলি জানতো।”
—-” বাহ্ বেশ! তাহলে তুমি তোমার ফ্রেন্ডের থেকে চেয়ে ওর কনটাক্ট নাম্বার নিতে পারলে না?”
সাবাব থমকে গেলো হীরের প্রশ্নে। মিথ্যে মিথ্যে খেলায় এবার সে ফাঁসতে চলেছে। হীর তো পুরো গোয়েন্দাদের মতো তাকে জেরা করতে শুরু করেছে। সাবাব হীরের দিকে তাকিয়ে শুঁকনো হাসি দিলো। আরেকটা মিথ্যে সাজাতে সাজাতে বলল,
—-” ক,,কি করে দিবে? ও তো আমেরিকা ছেড়ে এশিয়ার আমুদরিয়ায় শিফট হয়ে গিয়েছিলো।”
হীর তীক্ষ্ণস্বরে বলল,
—-” কুল রেখে নদীতে গিয়ে শিফট করলো কেন?”
সাবাব বিরস মুখে তাকালো হীরের দিকে। করুন সুরে বলল,
—-” তুই এতো জেরা কেন করছিস? আমুদরিয়াতে কি মানুষ থাকে না?”
—-” বিশাল নদী! আমি তো জানি না নদীতে লোক থাকে কি না!”
সাবাব শুঁকনো গলায় ঢোক গিলল। আমতাআমতা করে বলল,
—-” আমার ফ্রেন্ড শুধু জানিয়েছিলো এটুকুই। তারপর আর ও কিছু জানে না। আর আমিও জানিনা!”
—-” তুমি আর তোমার ফ্রেন্ড এতো কিছু জানো অথচ এই এতকিছু জানার মাঝে মেয়েটার কন্টাক্ট নাম্বার নিতে পারলে না!”
সাবাব ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরল। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
—-” আমার ফ্রেন্ড কিছুদিন আগে কল করেছিলো। বলেছে ওর কন্টাক্ট পেলে আমাকে জানাবে।”
—-” আচ্ছা তাহলে তো হয়েই গেলো! ওঁর কন্টাক্ট পেলে তুমিও আর উদাসীন হবে না, আর সাথে কাকে নিয়ে আপির বিয়ের কার্ড অর্ডার করতে এসেছো তাও ভুলবে না!”
সাবাব বোবা চোখে তাকালো হীরের দিকে। হীরের এতসব জেরা করার মুলে এটাই তবে ছিলো আসল কারন! সাবাব ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
‘( কোথায় তাকে জেলাস করানোর জন্য হেঁচকি তুলতে তুলতে মিথ্যা বললাম! উল্টে সে তো আমায় জেরার সাগরে ফেলে চুবিয়ে চুবিয়ে উঠালো। সাবাব, বল আরও মিথ্যা!)’
—-” বাসায় যাবে তো এবার?”
হীরের প্রশ্নে অসহায় চোখে তাকালো সাবাব। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,
—-” হুম বাসায়ই যাবো।”
_________________♥️
(দু’দিন বাদে) সকাল ৯ টা। হাতের ভাজে বিয়ের কার্ড নিয়ে হীর দাঁড়িয়ে আছে আদ্রর বাসার সামনে। কলিং বেল বাজাবে কি না সেই নিয়ে মহা চিন্তা তার। তার পাশে সাবাব, মিলি আর এশা দাঁড়িয়ে আছে। সাবাব আর সে প্রথমে মিলি আর এশার বাড়িতে কার্ড দিতে গিয়ে তাদের আজ সঙ্গে করেই নিয়ে এলো। এখন আদ্রকে নিতে আসা। এশা আর মিলি যদিও হীরকে পঁচাতে ছাড়েনি বিয়ের কার্ড নিয়ে তাদের ইনভাইট করতে আসার জন্য! কিন্তু আদ্র তো সবার উপরে। সে একবার কাউকে পঁচাতে শুরু করলে ধুয়েমুছে পরিষ্কার না করে ছাড়েনা। হীর তারই ভয় পাচ্ছে। মিলি আর এশা হীরের অসহায়ত্বে ঘেরা মুখটা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে! আদ্র যে হীরের দেওয়া কার্ড নিয়ে হজম করবে না তা বেশ ভালো করে জানে তারা। তাদের বন্ধুত্বের নীতি হলো, সব চলবে তবে ফর্মালিটি চলবে না। তবে এখানে হীরের কোনো দোষ নেই। সে তো প্রথমে বলেইছিলো তার ফ্রেন্ডদের এতো ফর্মালিটি করে ডাকতে হবে না। তাদের ফোন করলেই তারা হাজির হয়ে যাবে।
—-” কি হলো? দাঁড়িয়ে গেলি কেন? কলিং বেল চাপ!”
হাতের ঘড়িতে ব্যস্ত সময় দেখে সাবাব বলে উঠলো কথাটা। হীর শুঁকনো মুখে তাকালো সবার পানে একবার। মিলি আর এশা প্রথম থেকেই মুখ টিপে হাসছে। হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে কলিং বেল চাপল। কলিং বেল দু’বার বাজতেই তড়িঘড়ি এসে দরজা খুলল এক মধ্যবয়স্কা মহিলা। হীর তাকে দেখতেই প্রথমে লম্বা করে সালাম দিলো। ভদ্রমহিলা স্মিত হেসে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,
—-” আরে তোমরা হঠাৎ? ভেতর এসো মা, ভেতরে এসো।”
হীরদের ভেতরে ঢোকার জন্য অনুরোধ করতে মহিলার দৃষ্টি গেলো সাবাবের প্রতি। উনি সাবাবের দিকে একবার তাকিয়ে হীরের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকাতেই হীর জবাব দিলো,
—-” আন্টি, এটা আমার সানিয়া আপুর ভাই। ঐ যে যমজ ভাই। তোমায় বলেছিলাম তো সাবাব ভাইয়ের কথা।”
সাবাবের পরিচয় পেয়ে আদ্রর মায়ের চোখ জোড়া ঝলমলিয়ে উঠল। আমোদিত গলায় বললেন,
—-” হ্যাঁ হ্যাঁ সাবাব। মনে আছে! বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে তাই না? মনে আছে।”
হীর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তে আদ্রর মা আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
—-” আরে বাবা, তুমি দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? এসো এসো ভেতরে এসো। এই ইলিনা? ইলিনা মা?”
আদ্রর মা গলা উঁচিয়ে ডাকলেন আদ্রর বড় বোন কে। মায়ের ডাক পেয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে এলো ইলিনা। সদ্য ঘুম ভেঙে এলোমেলো কাপড়েই এসে দাঁড়ালো হীরদের সামনে। মুখে হাত চেপে এখনও হাই তুলে যাচ্ছে সে। আচমকা চোখ খুলে সামনে হীরদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই যেন খানিক ভড়কে গেলো সে। সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার হলো হীর,এশা, মিলি বাদেও একজন অপরিচিত সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। যাকে দেখতেই মা-মেয়ে দু’জনেরই একই সাথে হৃদয়ে ঘন্টা বেজে গেলো। সাবাবও ইলিনাকে এমন অবস্থায় দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। এলোমেলো চুল, কপালের টিপ ঘেঁটে আছে সেই সাথে চোখের কাজল ঘেটে আছে করুন দশায়। টি-শার্টের কনুই অব্দি হাতা একটা ঝুলানো আরেকটা গোটানো! মেয়েটা ঘুম থেকে উঠল নাকি যুদ্ধ থেকে ফিরল তা নিয়ে বেশ কনফিউশানে ভুগতে হলো সাবাবকে।
হীর ইলিনা আর সাবাবের চোখাচোখি হওয়ার মাঝেই আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো,
—-” গুড মর্নিং ইলিনা আপু!”
হীরের কন্ঠ পেয়ে ইলিনা চোখ সরালো সাবাবের থেকে। খানিক অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে একবার মায়ের দিকে তো একবার হীরের দিকে তাকালো। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে আমতাআমতা করে বলল,
—-” গ,,গুড মর্নিং হীর।”
কথাটা বলেই ঝড়ের বেগে দৌড়ে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকল ইলিনা। বাকি সবাই তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। পেছন থেকে তার মা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন,
—-” মাত্র ঘুম ভাঙল। ত,,তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো না? হীর মা? তোমার ভাইকে বসাও!”
‘তোমার ভাইকে বসাও’ কথাটা শোনার সাথে সাথে হীর সাবাবও দু’জনেরই কান থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে গেলো। তবুও প্রকাশ পেলো না কারোরই অনুভূতি। হীর তার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আন্টি তুমি চিন্তা করো না। আমরা সবাই বসব তবে তার আগে তুমি একটু আদ্রকে ডেকে দাও না প্লিজ। ওকে নিয়ে আমাদের এক্ষনি বের হতে হবে। আর কয়েকদিন বাদে আপির বিয়ে। তাই বড় মা ওদের সবাইকে নিতে পাঠিয়েছেন। (কার্ড এগিয়ে দিয়ে) এই নাও কার্ড। আমরা আদ্রকে আজই নিয়ে যাবো। আর তোমরাও কিন্তু আসবে বিয়ের দিন। বড় মা সবাইকে আসতে বলেছে কিন্তু!”
আদ্রর মা কার্ডটা হাতে নিতে নিতে বললেন,
—-” হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই যাবো। তোমার বড়মার সাথে এবার বুঝি আমারও একটু আলাপ-আলোচনা করতে হবে।”
কথাটা বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসলেন তিনি। সাবাব আর হীর তার কথায় মুখ চাওয়াচাওয়ি করার মাঝে তিনি আবারও বলে উঠলেন,
—-” তোমরা একটু বসো আমি আদ্রকে এক্ষনি ডেকে নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, কেউ নাস্তা না করে কিন্তু যাবে না!”
—-” না গো আন্টি নাস্তা তো করতে পারবো না। আরও অনেক জায়গা যেতে হবে তো! হাতে বেশি সময় নেই। আজই সবার বাড়িতে কার্ড দিতে হবে।”
—-” আরে সমস্যা নেই। নাস্তা খেয়ে না হয় যেও সব জায়গায়। সকাল সকাল এলে তোমরা, না খাইয়ে কি করে যেতে দে।”
হীরের জবাবের আর প্রতীক্ষা করলেন না তিনি। ইলিনার রুমের পাশের রুমে গিয়ে আদ্রর নাম করে চেঁচাতে শুরু করলেন। তিনি চলে যেতেই সাবাব যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। সোফায় বসতে বসতে আঁড়চোখে একবার হীরকে দেখে বলল,
—-” তোরা তাহলে নাস্তা করে ডিরেক্ট বাসায় চলে যা। আমি এখান থেকে কিছু একটা নিয়ে হানিফ আঙ্কেল, মোরশেদ আঙ্কেল আর বিলাল আঙ্কেলদের বাসায় গিয়ে কার্ড দিয়ে ইনভাইট করে আসি। এতো পথ জার্নি করে তোকে যেতে হবে না। আর একটা কাজ করিস বাসায় ফিরতেই আমাকে ফোন করিস। আমি আমার লোকেশন পাঠিয়ে দিলে খালেক ভাইকে গাড়ি নিয়ে সেখানে যেতে বলিস।”
হীর কার্ড বাঁছাই করতে করতে বলল,
—-” ঠিকাছে, এই নাও।”
হীরের এতো সহজে মেনে যাওয়াটা সাবাবের হজম হলো না যেন। ভোরের দিকেই তো সে ভীষণ জেদ করছিলো তার সাথে সব বাসায় যাবে বলে। তাহলে হঠাৎ এতো সহজে মেনে যাওয়ার কারন টা কি? আদ্রর মা আর তার বোন? তাহলে হীর কি জেলাস? কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হীরের থেকে কার্ডগুলো নিয়ে সাবাব বেরিয়ে গেলো। সাবাব বেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় চোখ ডলতে ডলতে হাজির হলো আদ্র। সকাল সকাল তিন বন্ধুকে বসে থাকতে দেখে হাই তুলে বলল,
—-” এতো সকাল সকাল কি চাই তোদের?”
মিলি দাঁত খিঁচিয়ে বলল,
—-” কুত্তার গু পার্সেল করে আনছি। খেতে চাইলে বেড়ে আনি?”
আদ্র মুখ কুঁচকে তাকালো মিলির দিকে। এশা আর হীর ফিক করে হেসে ফেলতেই আদ্র রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
—-” তুই এনে খা খচ্চর বেডি।”
মিলি প্রতিত্তোরে বলল,
—-” আমি কেন খাবো? এনেছি তো তোর জন্য! তুই খাবি।”
আদ্র মিলির সাথে কথায় না পেরে মাকে ডেকে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—-” মাআআ, তুমি সকাল সকাল ওঁদের বাসায় ঢুকতে দিলে কেন বলো তো?”
রান্নাঘর থেকে শব্দ এলো,
—-” ঐ বেয়াদব? মেহমানদের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? সালাম দে ওঁদের! সালাম দিয়ে সুন্দর করে কথা বল!”
আদ্রর মায়ের কথা শুনে এশা আর মিলি যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেল হাতে। দু’জনেই একসাথে পা এগিয়ে দিয়ে বলল,
—-” নে সালাম কর।”
আদ্র কপাল কুঁচকে বলল,
—-” একটা লাত্থি মারুম। এই হীর? কি রে কাহিনি কি বলতো?”
হীর মিলি আর এশাকে থামিয়ে বলল,
—-” আপির বিয়ের ডেট পড়েছে। তাই তোকে নিতে এসেছি। জলদি রেডি হয়ে চল আমাদের সাথে।”
—-” অহ, সানি আপুর বিয়া। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে এই কুত্তা দুইডারেও আপুর বিয়ায় আসা কোনো টাকলু আঙ্কেলের সাথে বিয়া দিয়া দিমু দেখিস। দুই বেডি এক টাকলু আঙ্কেলের ঘর করবি। কয়দিন পরপর চুলোচুলি করবি আমরা লোকজন ভাড়া করে দেখতে যামু।”
আদ্রর কথায় ফুঁসে উঠল দু’জনেই। এশা খেঁকখেঁক করে উঠে বলল,
—-” তো তুই কি ভাবছোস তোরে আমরা কচি মাইয়ার লগে বিয়া দিমু? তোরে তো বিয়াই করতে দিমু না আমরা। তোরে সারাজীবন কুমারী রাখুম!”
এশার কথার মাঝে মিলি ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
—-” ইশশ, বেচারার জেন্ডারই চেঞ্জ করে দিলি।”
কথাটা বলতেই হাসির রোল পড়ল। আদ্র বেচারা আর জবাব খুঁজে না পেয়ে চলে গেলো নিজের রুমে। এশা আর মিলি তাল মিলিয়ে হাসার মাঝে খেয়াল করল ইলিনা শাড়ি পড়ে একদম সাজের বহার বসিয়ে নিজের রুম থেকে বের হলো। হীরকে সেদিকে ইশারা করে মিলি মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল,
—-” হেতিরে গিয়া কেউ কানে কানে ক সাবাব ভাই আরও আধঘন্টা আগে চলে গেছে।”
এশা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল মিলির গায়ে। ইলিনা তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। হীর মনে মনে হাসছে। ইলিনা তাদের সামনে এসে দাঁড়াতেই এশা বলে উঠলো,
—-” মাশাল্লাহ আপু। তোমায় কি লাগছে! পুরাই ললনা”
ইলিনা লজ্জা পেতে গিয়ে খেয়ালই করল না সাবাব এখানে নেই। সে নিজের মতো করে লজ্জা পেয়েই যাচ্ছে। এর মধ্যেই ট্রে করে নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন আদ্রর মা। মেয়েকে দূরে দাঁড়িয়ে সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে মনে মনে ভাবল,’ এবার বুঝি কাজটা হয়ে যাবে’ কিন্তু কোথায় কি? যার জন্য তার মেয়ে ঐ দূরে দাঁড়িয়ে এতো লজ্জা পাচ্ছে সেই লোকই তো নেই। সাবাবকে দেখতে না পেয়েই সে মেয়ের উপর খেঁকখেঁক করে উঠলেন। ইলিনা হঠাৎ চমকে উঠে সামনের দিকে ভালো করে দেখতেই বুঝল সাবাব নেই! মায়ের দিকে অসহায় মুখ করে তাকাতেই তার মা বলে উঠলেন,
—-” সাজগোজ হয়েছে এতক্ষণে? এখনো কিছু বাদ থাকলে সেজে আয় গিয়ে আহাম্মক কোথাকারে।”
মায়ের বকা খেয়ে বেচারি থতমত খেয়ে গেলো। অসহায় চোখ জোড়া একবার দরজার দিকে নিক্ষেপ করে পূনরায় মায়ের মুখ ঝামটি খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
#চলবে_ ♥️