#কাছে_দূরে ♥️
#muhtarizah_moumita
#পর্ব___১৭
ড্রয়িং রুমে মিটিং বসিয়েছেন আজিম সাহেব। নেহালদের বাড়ি থেকে কল এসেছিলো। নেহালের বাবা-মা জানালেন আগামি ৩০-এ মে তারা বিয়ের তারিখ টা ফেলতে চান। আজ ২১-এ মে। হীরও এখন বলতে গেলে পুরোপুরি সুস্থ। তাই আজিম সাহেবও আর দ্বিমত পোষণ করলেন না। তার গিন্নির মত নিয়ে নেহালের বাবা-মাকে জানিয়ে দিলেন ৩০-এ মে-ই তবে সানিয়া এবং নেহালের বিয়ে হবে। আহমেদ ভিলায় এই মুহুর্তে লোকজন বলতে কেবল তারা বাড়ির মাত্র ছয়জন লোকই আছেন। আপাতত এই মিটিংএর মূখ্য উদ্দেশ্যে কার কেমন গেস্ট আসবে তার একটা লিস্ট করা। সাবাব বসেছে খাতা-কলম নিয়ে। বাবার আদেশের অপেক্ষা মাত্র। আদেশ পড়তেই খাতায় এক এক করে নাম লিখবে সবার। আর তারপর সেই নাম অনুযায়ী সবার বাড়িতে কার্ড যাবে। সবার প্রথমে আজিম সাহেব হীরকে দিয়ে শুরু করলেন।
—-” মামনি? তোমার ক’জন বন্ধুরা আসবে ঝটপট নাম বলে ফেলো দেখি?”
হীর চোখ জোড়া সরু করে বলল,
—-” বাবাই, আমার তো তিনটাই বন্ধু! ওদের কে এতো ফর্মালিটি করে ডাকতে হবে না। আমি ওদের ফোন করে আসতে বললেই ওরা চলে আসবে।”
হীরের কথা শুনে সানিয়া না সূচক মাথা নেড়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলল,
—-” না বাবা! তুমি ওর কথা একদম শুনো না। এশা,মিলি আর আদ্র ওর যতই বেস্ট ফ্রেন্ড হোক ওদের একটা সম্মান আছেনা? কার্ড না দিলে কেমন দেখায়?”
হীর গাল ফুলিয়ে আবারও চোখ জোড়া সরু করে ফেললো। মৃদুস্বরে বলল,
—-” ওরা এভাবেই চলে আসতো আপি। কোনো সমস্যা হতো না। আর ওরা রাগ করবে কি বলছো? আমি যদি ওদের বাড়িতে কার্ড নিয়ে হাজির হই তাহলে ওরা এমন ভাব করে আমাকে দেখবে মনে হবে আমি ওদের সোনার থালা নিয়ে বরন করতে গিয়েছি।”
হীরের কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই। নাজমা বেগম হীরের হাত ধরে বাঁধ সেধে বললেন,
—-” না মা! যতই হোক ওরা তো আমাদের গেস্ট হয়ে এখানে আসবে তাই না? তবে যদি এমন হতো, ওরা তোমার বিয়েতে আসছে তাহলে না হয় ওদের মুখে বললেই হতো!”
হীরের নিজের বিয়ে হবে? এমন যেন হীর দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনা! বড়মার কথা শুনে হীর চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির ন্যায় করে বলে উঠলো,
—-” অসম্ভব! আমি বিয়ে-ফিয়ে করছি না!”
হীরের কথা শুনে আঁড়চোখে তাকালো সাবাব। হীরের দিকে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করতেই আজিম সাহেব হাসতে হাসতে সাবাবের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
—-” সাবাব, নাম লেখো। আগে আব… আদ্র, মিলি আর এশার নাম একসাথে লিখো।”
সাবাবের ভেতরে খুব দুঃখী দুঃখী ভাব হলো। হীর নিজের বিয়ে সম্মন্ধে নিজের বক্তব্য পেশ করছিলো, আর সেও মনোযোগী হয়ে শোনার চেষ্টা করছিলো! কিন্তু মাঝখান থেকে বাবা সবটায় জল ঢেলে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিলো! সাবাব দুঃখী দুঃখী মন নিয়েই নাম লিখল তাদের। অতঃপর সানিয়ার সব বন্ধুদের নাম লেখানো হলো। আর তারপর বাড়ির বাকিসব আত্মীয়স্বজনদের।
_____________♥️
হীরের জন্য মালেশিয়া থেকে কল এসেছে। কথাটা হীরের কানে যেতেই এক দৌড়ে এসে ল্যান্ডফোনের সামনে হাজির হলো হীর। ফোনটা উপুড় করে পাশেই রাখা ছিলো। নাজমা বেগম প্রথমে কথা বলে রুবিকে দিয়ে খবর পাঠালো হীরকে ডাকতে। হীর আসছে দেখে সেও ফেনটা পাশে নামিয়ে রেখে ছুটলেন রান্নাঘরে। হীর ফোনটা উঠিয়ে কানে ধরতেই হুবহু মায়ের কন্ঠের মতো ভেসে আসল তার মনির কণ্ঠ।
—-” মনি! কেমন আছো তুমি?”
—-” খুব ভালো আছি মাম্মাম। আমার মেয়েটা কেমন আছে?”
—-” আমিও খুব ভালো মনি। কতদিন পরে তোমার গলা শুনলাম বলো তো! আমি তোমায় ভীষণ মিস করি মনি! তুমি দেশে কবে ফিরবে বলোতো?”
—-” এই তো মাম্মাম খুব জলদিই ফিরব। হঠাৎ করে ফিরে সারপ্রাইজ দিয়ে দিবো সবাইকে। সানিয়ার বিয়ের ইনভাইটেশন কিন্তু পেয়েছি আমি।”
—-” এবার তাহলে তাড়াতাড়ি করে ফিরে এসো প্লিজ! সেই ছোট বেলায় শুধু একবার দর্শন পেয়েছিলাম তোমার। আর তারপর? কতগুলো বছর কেটে গেলো!”
—-” মন খারাপ করে না মাম্মাম। মনি বলছে তো এবার খুব জলদিই সে ফিরে আসবে তোমার কাছে। আচ্ছা মাম্মাম, আমায় সত্যি করে একটা কথা বলবে?”
—-” হ্যাঁ বলো না কি কথা?”
—-” তুমি ঐ বাড়িতে খুশি তো মাম্মাম? ওরা তোমার কোনো অযত্ন করছে না তো?”
হীর স্মিত হাসল। মনিকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
—-” এই বাড়িতে আমি খুব খুশি মনি। কেউ আমার যত্নের কোনো ত্রুটি রাখছে না। বরং তারা আমাকে এতো বেশি ভালোবাসা দিয়েছে যে, আমি বলবো আমার বাবা মা আজ বেঁচে থাকলে তারাও হয়তো এতোটা ভালোবাসা আমায় দিতে পারতো না।”
মনিকা খুশি হলো হীরের কথা শুনে। ফোনের ওপাশ থেকে এখন কেবল মনিকার উচ্ছ্বসিত কন্ঠই ভেসে আসতে লাগলো।
ওপাশ থেকে সিঁড়ি থেকে নেমে আসছিলো সাবাব। হঠাৎ চোখে পড়ল হীর কারোর সাথে বেশ মনোযোগ দিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। সাবাবের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো! কপালটা খানিক কুঁচকে এলো। মনের মধ্যে প্রশ্নের ঝড় উঠে গেলো, ফোনের ওপাশে কে? স্পেশাল কেউ? খুবই স্পেশাল? নাকি মোটামুটি স্পেশাল? নিজের উপর একটু বিরক্ত হলো সাবাব। স্পেশাল তো স্পেশালই হয়! তাতে খুব বেশি এবং মোটামুটি হওয়ার কোনো অপশন থাকে না! সাবাবের মন পুড়ে পোড়া গন্ধও বের হলো! ভেতরটা দুঃখের গান গাইতে লাগল। আফসোস হতে লাগল, কই হীর তো তার সাথে কখনও এমন হেসে হেসে কথা বলে না! হাসা তো দূর হীর তো তার সাথে কখনও এক কথার বেশি দুই কথাও বলে না! সাবাবের ইচ্ছে হলো হীরের সামনে গিয়ে নিজের কঠিন ভঙ্গিমা ব্যক্ত করে দাঁড়াতে। অতঃপর কঠিন স্বরে প্রশ্ন করতে, ‘এতো হেসে হেসে কার সাথে কথা হচ্ছে?’। কিন্তু এমন কিছুই সাবাব করতে পারল না! হীর যে তাকে এমনিতেই ভয় পেয়ে সারাক্ষণ সিঁটিয়ে থাকে। আর তারউপর যদি তাকে গিয়ে এমন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করা হয় তাহলে নিশ্চিত হীর আর বারো বছরেও তার সামনে নিজের সুন্দর মুখশ্রী দেখাবে না। সুতরাং, চুপচাপ গিয়ে তার পাশের সোফায় বসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর যদি সুযোগ হয় তবে প্রশ্ন করা যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সাবাব চুপচাপ গিয়ে হীরের পাশের একটা সোফায় গিয়ে বসল। হীরের কথার সুর কিছুটা স্পষ্ট তো কিছুটা অস্পষ্ট আকারে ভেসে আসছে এদিকে। সাবাব ফোন ঘাটার ভান করে হীরের কথা শোনার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে কান খাঁড়া করল। ‘প্লিজ এবার অন্তত এসো.. আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো… না না সব ঠিক আছে!’ এমন টাইপ কিছু কথা শুনতে পেলো সে। যা শোনার সাথে সাথে তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো! হীর এতো অনুনয় বিনয় করে কাকে আসতে বলছে? সত্যিই কি তবে স্পেশাল কেউ?
সাবাব গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো। সোফার নরম গদিতে পিঠ ঠেকিয়ে বসেও মনে কোনো প্রশান্তি নেই তার। যতক্ষণ না সে জানতে পারছে হীরের সাথে কলে ওপাশে কে আছে ততক্ষণ যেন তার শান্তি নেই! মিনিট পনেরো অপেক্ষা করতে করতেই পার করে ফেলল সাবাব। হীর এখনও কথা বলেই যাচ্ছে! সাবাব ভ্রু কুঁচকে হীরকে পর্যবেক্ষন করতে করতে ভাবল, ‘এই দু’দিন আগে না হীর অসুস্থ ছিলো? তাহলে আজ হঠাৎ তার এতো কথা বলার এনার্জি কোথা থেকে এলো?’
—-” আমি কিন্তু তোমার প্রতীক্ষায় রইলাম।”
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টেনে কথাটা বলে হীর ফোনটা কান থেকে নামিয়ে রাখল। লাইন কেটে গিয়েছে বুঝতে পেরে ফোনটা ঠিক জায়গায় রেখে নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। সাবাব যে এতক্ষণ ধরে এখানে বসেছিলো তা একবারের জন্যও তার খেয়াল হয়নি। তাই সাবাবকে না দেখেই চলে যাওয়ার অপরাধে সাবাবের মন আরেকটু রুষ্ট হলো। হীরকে থামাতে এবার সে নিজের কঠিন ভঙ্গিমাই ব্যাক্ত করল।
—-” আমাকে দেখেও আমার সামনে থেকে ড্যাংড্যাং করে চলে যাচ্ছিস! ভারী সাহস বেড়েছে তো তোর!”
আচমকা সাবাবের রুষ্ট কন্ঠ কানে বাজতেই থমকে গেলো হীর। সামনের দিকে তাকিয়ে সাবাবের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে যেয়ে মনে হলো সাবাব তার হাতের ডানে সোফায় বসে আছে। এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি।
হীর ভীত চোখে তাকালো সাবাবের দিকে। সাবাব যথেষ্ট রাগ নিয়ে বসে আছে সোফায়! কিছু বলবে না তো?
—-” ভাইয়া! তুমি ক,,কখন এলে?”
—-” ওহ তবে এতক্ষণ চোখে পড়ল আমায়!”
—-” ম,,মানে?”
—-” গত আধঘন্টা যাবত এখানে বসে আছি। আর এখন আধঘন্টা পর তুই জিজ্ঞেস করছিস আমি এখানে কখন এলাম?”
হীর শুঁকনো গলায় ঢোক গিলল। সাতপাঁচ কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
—-” কথা বলছিলাম তো ফোনে! তাই খেয়াল করতে পারিনি!”
—-” তো কার সাথে এতো কথা হচ্ছিলো শুনি? যে আশেপাশে কে এলো আর কে গেলো তোর খেয়ালই হয়নি?”
হীর হাসার চেষ্টা করে চটপট উত্তর দিলো,
—-” ফোনে! ফোনে তো মনি ছিলো। মনির সাথেই কথা বলছিলাম!”
‘মনি’ নামটা শুনতেই সাবাবের শক্ত ভাবমূর্তি কোমল হয়ে উঠলো। চোখ জোড়া আশেপাশে ঘুরিয়ে সেও হীরের মতো জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল। ঘাড়টা হালকা বাঁকিয়ে ডান হাত চাপালো ঘাড়ের মধ্যে। গলা খাঁকারি দিয়ে পূনরায় হীরের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” মনির কল ছিলো? তো আগে বলবি না? আমিও একটু কথা বলতাম না হয়। আব… সানির বিয়ের ইনভাইটেশন পেয়েছে তো?”
সাবাবের হঠাৎ কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যেতে হীর খানিক ভড়কে গেলো। সাবাবের হঠাৎ কি হলো ভাবতে ভাবতে আমতাআমতা করে উত্তর দিলো,
—-” হ্..হ্যাঁ পেয়েছে।”
—-” গুড। তা বিয়েতে আসছে তো মনি?”
—-” হ্যাঁ আসবে বলল।”
—-” ভেরি গুড। আচ্ছা তুই এক কাজ কর বরং। রুমে গুয়ে ঝটপট রেডি হয়ে নে। আমরা বের হবো!”
হীরের চোখ এবার ছানাবড়া হয়ে গেলো। সাবাব তাকে নিয়ে বের হবে? কোথায়?”
—-” ক..কোথায় ভাইয়া?””
—-” কি কোথায়?”
—-” মানে, কোথায় বের হবে?”
—-” ওহ, সানির বিয়ের কার্ড অর্ডার দিতে। বাবা তখন বলল না তোকে আর আমাকে গিয়ে বিয়ের কার্ড অর্ডার দিয়ে আসতে। শুনিস নি?”
হীর ভাবনার জগতে ডুব দিয়ে মনে করার চেষ্টা করল বাবাই এই কথা কখন বলল? ভেবেও কিছু মনে পড়ল না হীরের। তাই পূনরায় সাবাবের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকালো। সাবাব ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল “কি?”
হীর আর জবাব দিতে পারল না। তার আগেই কেউ সাবাবের হাত ধরে এক টান মারল তার দিকে। সাবাব আচমকা টান খাওয়াতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল খানিকটা। চোখ দুটো বড় বড় করে সামনের দিকে তাকাতেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গেলো তার! তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সুন্দরী ললনা। সাবাব তাকে চিনেনা। হীর তাকে চিনে। মেয়েটা পাশের বাসার মজিদ আকবরের মেয়ে মুনা। সাবাব সানিয়ার থেকে এক বছরের ছোট। মুনার ভাষ্যমতে সাবাব আর তার নাকি বাল্যকালের প্রেম ছিলো। পুরো তিন বছরের প্রেম। ক্লাস টু থেকে শুরু করে ক্লাস ফাইভ অব্দি নাকি তাদের প্রেম ছিলো। হীর আর সানিয়া মুনার এই বাল্যকালের প্রেমের কাহিনী শুনতে শুনতেই বড় হয়েছে। বলতে গেলে হীরের এই গল্প একদম ঠোঁটের আগায় মুখস্থ। মুনা-সাবাবের প্রেম কাহিনী পাড়া-মহল্লা জানলেও জানে না সাবাব নিজেই। আর সাবাব মুনাকেই ছোট বেলা থেকে ঠিকঠাক ভাবে চিনতোও না। কারন সে মেয়েদের গা জড়ানোর ভয়ে ছোট বড় সব মেয়েদের থেকই দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। আর সেই সুবাদে মুনার থেকেও তার বেশ দূরত্ব ছিলো। সানিয়া হীরকে মাঝেমধ্যে বলত, তারা যখন ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়ত তখন একটা ফ্রগ পরে মুনা মাঝেমধ্যে তাদের বাসায় আসতো তার মায়ের সাথে। সানিয়ার সাথেও মুনার পরিচয় সেখান থেকে। পরিচয় থাকলেও তেমন মেলামেশা করত না সানিয়াও। কারন সে ছোট থেকে বরাবরই ভীষণ চুপচাপ এবং শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলো। হীর এ-বাড়িতে আসার পর সানিয়া এর আগে যাও একটু বাইরে বের হতো পরে আর তেমন বের হতে দেখা যেতো না। সারাক্ষণ সে আর হীর বাসায় থেকেই খেলাধুলা করত। আর এর মাঝেই সাবাব বিদেশ চলে যাবার পর মুনার বেশ আসা যাওয়া বাড়তে থাকে।
—-” সাবাব! কি খবর মি. হ্যান্ডসাম? দেশে ফিরে যে একবারও আমার সাথে দেখা করতে এলেনা! এটা কি ঠিক হু? আমেরিকায় থেকে তো রোজই আমার সাথে এই কথা সেই কথা বলে বলে একদম পাগল করে দিতে।”
‘আমেরিকায় থেকে এই মেয়ের সাথে কথা হয়েছে?’ কি করে সম্ভব! সাবাব চোখ জোড়া চড়কগাছে চড়িয়ে বোকা গলায় প্রশ্ন করল,
—-” আপনি কে মা জননী? আর এসব কি বলছেন?”
মুনা থতমত খেলো সাবাবের রিয়াকশন দেখে। পেছন থেকে হীর ফিক করে হেসে দিতেই মুনা ফুঁসে উঠল রাগে। সাবাবের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল,
—-” হোয়াট! মা জননী! এ,,এই এসব তুমি কি বলছো হু? বাড়ি ফিরে দু’দিনেই সব ভুলিয়ে গেলে হ্যাঁ? আরে আমি তোমার মুন সোনা! আমরা রোজ ফেসবুকে চ্যাটিং করতাম? ভুলে গেলে!”
সাবাব চোখ জোড়া সরু করে নিলো। বিরস মুখে বলল,
—-” আমার তো মনে পড়েনা আমি কখনও ফেসবুকে কোনো একাউন্ট ওপেন করেছিলাম! তাহলে আপনি আমায় কোথায় পেলেন? কিভাবে পেলেন!”
মুনার চোখে অসহায়ত্বের ছাপ পড়ল। কি বলবে বুঝতে না পেরে হীরের দিকে তাকালো। হীর মুনার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” ফেসবুকের সাবাব ভাইয়া কি এই সাবাব ভাইয়ার মতো দেখতে মুনা আপু?”
মুনা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
—-” ওর একাউন্টে তো কোনো ছবি ছিলো না রে। তাই তো বুঝতে পারছি না ওকে ভেবে এতোদিন কার সাথে প্রেম করেছি!”
হীর নিজের হাসিটা আর দমিয়ে রাখতে পারল না। মুখে হাত চেপে হেসে ফেললো সে। হীরের হাসিতে আবারও গা জ্বলে উঠলো মুনার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সাবাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আমি জানি ওটা তুমিই ছিলে! কারন আমি তোমায় যখন যা বলেছি তুমি আমায় ইনশিওর করে বলেছো হ্যাঁ ওটা তুমিই ছিলে। তুমি আজিম আঙ্কেলের একমাত্র ছেলে। তুমিই সানিয়ার জমজ ভাই। আরও কতকি! তাহলে তুমি বলো ওটা তুমি ছাড়া আর কে ছিলো?”
সাবাব নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
—-” আই ডোন্ট নো সে কে ছিলো! বাট আমার কথা বললে আমি বলবো, ইন্টারনেটের জগতে আমার পদচারণ কখনই ছিলো না আর ইনফিউচারেও কখনো থাকবে না। এই অত্যাধুনিক সব জিনিসাদি আমার কখনই পছন্দ ছিলো না। তবে হ্যাঁ আমার মনে পড়েছে তুমি কে?”
সাবাবের শেষের কথাটা শুনে মুনা খুশিতে লাফিয়ে উঠল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল,
—-” স,,সত্যি! সত্যি তোমার মনে পড়েছে আমার কথা?”
সাবাব হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,
—-” হ্যাঁ মনে পড়েছে। তুমি আমাদের পাশের বাসার মজিদ আঙ্কেলের মেয়ে না? ছোট বেলায় তোমায় খুব সম্ভবত একবার তোমার মায়ের সঙ্গে আরেকবার তোমার বাবার সঙ্গে দেখেছিলাম। তোমার বাবার সঙ্গে সালাম আঙ্কেলের ভাইয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিলে। আর টেবিলে বসে খাবারের প্লেট হাতের নাগালে পাচ্ছিলে না বলে তোমার বাবা তোমায় টেবিলের উপর উঠিয়ে দিয়েছিলো!”
সাবাবের কথা গুলো শুনে মুনার মুখ খানা চুপসে গেলো। কিছু বলতে নিলে সাবাব হঠাৎ হেসে ফেললো। অতঃপর আবারও বলে উঠলো,
—-” তোমার ঐ সময়টায় সর্দিকাশি লেগেছিলো মনে আছে? তুমি কেমন করে সব লটকে পটকে খেয়েছিলে? হাহাহা, বীভৎস কাহিনী ছিলো কিন্তু।”
মুনা বুঝতে পারল সাবাব এখন তার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছে। তাই লজ্জায় আর তার সামনে দাঁড়ানো সম্ভব হলো না। ফ্যাকাসে মুখে সাবাবের দিকে একবার তাকিয়ে মুনা হীরের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এই হীর আন্টি কইরে? মা উনার থেকে একটু গুঁড়া মসলা চেয়ে পাঠিয়েছে।”
হীর রান্নাঘরের দিকে ইশারা করে বলল,
—-” বড় মা রান্না ঘরে মুনা আপু। রান্না করছে।”
মুনা আর কিছু না বলে সাবাবের দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে। সাবাব তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হেসে ফেললো। পেছন থেকে হীর হাসতে হাসতে বলল,
—-” ইশ, তুমি ওকে প্রথমে চিনতে পারলে না? ও তো তোমার বাল্যকালের প্রথম প্রেম ছিলো। একবছর নয় দু’বছর নয় তিন তিনটে বছর তোমাদের প্রেম ছিলো। ভাবা যায়।”
সাবাব হেসে উঠে বলল,
—-” হোয়াট রাবিশ! আমার তো মনে পড়ে জন্মের পর আমি মাত্র একবছর থেকেছি এই দেশে! তাহলে ওর সাথে তিন বছর কি করে প্রেম ছিলো?”
কথাটা বলে হাসতে হাসতে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল সাবাব। যেতে যেতে আবার কি মনে করে দাঁড়িয়ে গেলো সে। হীরের দিকে ফিরে তাকিয়ে তাকে তাড়া দিয়ে বলল,
—-” আমাদের কিন্তু বের হতে হবে। তুই জলদি গিয়ে রেডি হ!”
হীর তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
—-” কার্ড অর্ডার করতে যেতে আমার যাওয়া কি জরুরি?”
—-” অবশ্যই জরুরি! বিয়ে কি আর সানির একার হবে নাকি?”
—-” মানে!”
—-” কিছু না জলদি রেডি হতে যা।”
কথাটা বলেই সাবাব উপরে উঠে গেলো। হীরকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না।
#চলবে_♥️