ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৩৯

0
1950

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৩৯
#সুলতানা_সিমা

মিটিং শেষ করে দিহান আর শাওন এসে গাড়িতে উঠল। এখন দুপুর দুইটা বাজে। ১০টায় মিটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১০টায় মিটিং শুরু হয়নি। দিহান ড্রাইভিং সিটে বসেছে। শাওন মনে মনে খুশি হলো। ড্রাইভ করতে তাঁর মোটেও ভালো লাগেনা। কারণ ড্রাইভ করলে সে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে পারেনা। হেডফোন দিয়ে গান শুনলে, চোখ বন্ধ না করলে তাঁর ভালো লাগেনা। শাওন তাঁর মতোই গান শুনা শুরু করলো। গান শুনে শুনে সাথে সাথে গান গাইতে লাগলো।

just give me another change
Baby I’m close to you
Life for me is not the same
Girl i really need you tonight
Tell me the way you feel
Baby come close to me
Wish i can stay in your heart
Baby can you feel it
Believe me
Tell me what i can do
Baby can you feel it
Believe me
Tell me what’s going wrong
Now i down the road oh baby all alone
want you just by my side
Baby you come closer to me
I be feeling all right
Girl i can make you feel
Baby come close to me
Wish i can stay in your heart
Now I’m broken inside here [বাকিটা মনে নাই]

এইটুকু গেয়ে চোখ ভিজে এলো শাওনের। গত ছয় মাস থেকে সে মরার মতো বেঁচে আছে, যা তাঁর খুব কাছের মানুষও জানেনা। বুকের ভেতর চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে দিহানকে বললো।” দিহান আমরা আর এখানে কতদিন আছি রে?” দিহানের কোনো রেন্সপন্স নাই। শাওন দিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো দিহান মিটিমিটি হাসছে। শাওন কপাল কিঞ্চিৎ ভাঁজ করে বলল” কিরে? মনে রং লেগেছে নাকি?” দিহান কিছু বললো না। শাওন বললো “দেখ ভাই ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছে দয়া করে তাড়াতাড়ি রেস্তোরাঁয় চল। তোর হাসি দেখে আমার পেট ভরবে না।” দিহান গাড়ি থামালো। এখনো তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। শাওন আবার বললো “গাড়ি থামালি কেন ?” দিহান এবারও কিছু বললো না, গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। শাওন আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। হটাৎ করে দিহানের হলোটা কী? দিহান একটু পরে আসলো। হাতে চকলেট, আইসক্রিম,চিপস,ললিপপ আরো অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। দিহান গাড়িতে উঠে বসতেই শাওন বললো ” ওই আমাকে কোন দিক থেকে তোর কাছে মেয়ে বলে মনে হচ্ছে? এগুলা আমি খাবো? বাচ্চারা খায় এগুলা। ত্রিশে এসে এগুলা খেলে মানুষ আমায় নিয়ে হাসাহাসি করবে।” দিহান আগের মতোই মুচকি হাসতেছে। যেন তাঁর মনে খুশির রং লেগেছে। হাতের প্যাকেটটা পিছনের সিটে রেখে ড্রাইভ করতে লাগলো। শাওন একেরপর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে দিহান কিছু বলছেনা, শুধু ফোনের মধ্যে থাকাচ্ছে আর গাড়ি চালাচ্ছে। শাওন উঁকি দিয়ে দেখতে চাইলো, দিহান ফোন সাইডে রেখে দিলো। রাগে শাওন সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলো। দিহান তাঁর গন্তব্যে পৌঁছে গিয়ে গাড়ি থামালো। শাওন খুব তেজ নিয়ে উঠে গাড়ি থেকে নামলো। নেমেই সে থম মেরে গেলো। দিহান রেস্তোরাঁয় আসেনি অন্যকোথাও এসেছে। দিহান তাঁর জিনিসপত্র নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসে বললো”
_চল।
_কোথায়?
_ওই পিচ্চিটার নানু এই এড্রেস দিলো না?
_কীইইইইইইইই? তুই এই পিচ্চি মেয়ের বাড়িতে এসেছিস? আজ এড্রেস দিলো আর তুই আজই চলে আসলি?
_তুই না গেলে এখানে দাঁড়িয়ে থাক, আমি যাচ্ছি।
_দেখ দিহান আমার খুব ক্ষিধে লাগছে, আমি ভাত খাবো চল।” দিহান কিছু না বলে চলে গেলো। শাওন পিছু পিছু দৌঁড়ে এসে বলে ” আরে ভাই এটা তো ভাব, হতে পারে এই মেয়েটা এখনো স্কুল থেকে আসেনি, আমরা রাতে আসবনে আবার প্লিজ ভাই চল।” শাওনের কথা কানে নিলোনা দিহান। কলিং বেল দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। কেউ এসে দরজা খুলে দিলোনা। দিহান আবার কলিং দিল এখনো কেউ খুলছে না। শাওন বলল “কেউ বাসায় নাই চল আমরা চলে যাই।” দিহান শুনলো না। আরও কয়েকবার কলিং দিলো। শাওন বার বার বলছে চল চলে যাই। যখনি দিহান শাওনের কথা শুনে চলে যেতে লাগলো, তখনই এসে দরজা খুলে দিলো অরিনের মামা। শাওনের ইচ্ছে হলো উনাকে পঁচা পানিতে চোবাতে। এতোক্ষণে দিহানকে ফিরে যেতে রাজি করলো, এখন উনি এসে দরজা খুলে দিলেন। রাগটা দমিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল।

_আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন?[দিহান]
_হুম। তোমরা,,,ঠিক ছিনলাম না।
উনি কথাটা শেষ করতে না করতেই, শাওন বলে উঠল”
_ওহ আমরা মনে হয় ভুল বাসায় চলে এসেছি, সরি আংকেল। দিহান চল।” দিহান পা দিয়ে শাওনের পায়ে গুঁতা দিলো। শাওন লাফিয়ে উঠল। অরিনের মামা জিজ্ঞাসুক চোখে তাকালেন। শাওন জোরপূর্বক হাসি দিলো। দিহান বলল”
_ওই যে আংকেল, সকালে আমাদের এড্রেস দিয়ে আসলেন। ” উনার মনে পড়তেই উনি বললেন” ও আচ্ছা আসো ভিতরে আসো। আমি ছাঁদে ছিলাম তাই লেট হলো। আসো।” ভিতরে গিয়ে সোফায় বসে দিহান চারদিকে তাকালো। ড্রয়িংরুমটা অনেক বড়সড়। দামি দামি ফার্নিচার দিয়ে সাজানো। খুব ভালো লাগলো দিহানের কাছে। যে ঘরটা গুছায়, তাঁর হাতে যাদু আছে। দিহান অজনিকে না দেখে বলল” আংকেল পিচ্চি কই?” সার্ভেন্ট চা দিয়ে গেলো। একটা ছোট পিরিচে মাত্র দুইবার বিস্কুট। উনি হাতের ইশারায় চা নিতে বললেন। দিহান চা নিলো, শাওন নিলোনা। দিহান চা খেতে খেতে দশবার জিজ্ঞেস করছে পিচ্চি কই। উনি কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ পরে উপরে গিয়ে অজনিকে নিয়ে আসলেন তিনি। অজনিকে দেখে দিহানের বুকের আগুনটা নিভে গেলো। এতো ক্ষণ ধরে তাঁর বুক জ্বলে যাচ্ছিলো। এতো টান কেন এই বাচ্চাটার প্রতি সে বুঝতে পারেনা। দিহান অজনির দিকে হাত বাড়ালো, অজনি তাঁর নানুর দিকে তাকালো, উনি সম্মতি দিলেন। অজনি দিহানের কোলে এসে উঠল।

সবকিছু উলট পালট করে দেওয়ার পরে প্রবল ঘুর্ণিঝড় থেমে গেলে যেমন মানুষের মনে শান্তি আসে। ঠিক তেমনিই দিহানের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। এতক্ষণ তাঁর মনে বয়ে চলা ঝড় মূহুর্তেই থেমে গেছে। মনের অনেক গভীরে সুখের স্পর্শ লাগলো। দিহান অজনির গালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ইচ্ছে করছে এই বাচ্চা মেয়েটাকে তাঁর কলিজায় ভরে রাখতে। কোমল গলায় বলল”

_নাম কী তোমার?
_অজনি।
_শুধুই অজনি?
_দিহা মালিয়াত অজনি।
_আচ্ছা তুমি জানো আমার নাম দিহান। তোমার সাথে আমার নামের কতো মিল দেখছো?” শাওন কিছু একটা ভেবে অজনিকে বলল”
_আচ্ছা তোমার আম্মুর নাম কী?
_সেটা জেনে আপনি কী করবেন?” ধারালো গলায় বললো অজনি। এইটুকু মেয়ের এমন কথায় টাসকি খায় দুজনই। শাওন বলল”
_এমনি জানতে চাইলাম আরকি। তুমিও আমার কাছে জানতে চাও আমার আম্মুর নাম কী।
_আমার জানার কোনো প্রয়োজন নাই তো আমি জানবো কেন?
_না মানে তোমার নানু ভাই তোমার আম্মুকে কী বলে ডাকে?
_মা বলে ডাকে।
_অন্য সবাই কী বলে ডাকে?
_চুপ করতো এতো প্রশ্ন করছিস কেন?” ধমকের স্বরে বলল দিহান। শাওন আর কিছু বলল না। দিহান অজনিকে নিজ হাতে আইসক্রিম খাইয়ে দিলো। অজনিকে পেয়ে যেন সে তাঁর জীবনের সব কষ্ট ভুলে গেছে। কিছুক্ষণ পরে দিহান বললো ”
_অজনি তুমি আমার বন্ধু হবে।” অজনি চট করে দিহানের কোল থেকে নেমে গেলো। দিহান বলল “আমাকে বন্ধু বানাবে না?” অজনি না সূচক মাথা নাড়ালো। দিহান বলল” কেন?”
_আমার মাম্মাম বলেছে মাম্মাম ছাড়া কাউকে বন্ধু না বানাতে।
_কেন?
_মাম্মাম বলেছে বন্ধুরা খুব খারাপ হয়। ওরা ধোঁকা দেয়।” দিহানের বুকটা ধুক করে উঠল। শাওনের কপালে ভাঁজ পরল। ধোঁকা তো অরিন খেয়েছিলো লুপার থেকে। কেন জানি তাঁর মন বলছে এটা অরিন। শাওন দিহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল” দিহান আমার মনে হচ্ছে এটা অরিনের মেয়ে।” দিহান কিছু বলল না। তাঁকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। অজনিকে আবার কোলে তোলে বলল” ঠিক আছে আমি তোমার বন্ধু হলাম না, তুমি আমার বন্ধু হও। তুমি তো কাউকে ধোঁকা দিবেনা।” অজনি কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বললো” আচ্ছা বন্ধু হবো। আমার সাথে আমার স্কুলে যেতে হবে।
_ওকে ডান। এবার বলোতো তোমার মাম্মামের নাম কী? কী করে সে?
_আমার মাম্মামের নাম ডাঃ,,,,,এইটুকু বলে থেমে গেলো অজনি। উৎসুক চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে দিহান ও শাওন। অজনি তাঁর মায়ের নাম বলল না, শয়তানি করে বলল” ডঃ জুহা। আর আমার পাপার নাম ডঃ সুমিত।” নামটা শুনে শাওন দিহানের আশার প্রদীপ নিভে গেলো। ডঃ জুহা আর সুমিতকে কম বেশ সবাই চিনে। সাফল্য চিকিৎসক বলে উনাদের অনেকবার টিভি শো-তে দেখিয়েছে। শাওন জিহানকে ফিসফিসিয়ে বললো “ডঃ সুমিত তো এখনো বেঁচে আছেন, তাহলে অজনির নানু যে বললেন ওঁর বাবা নেই?” দিহানের মনেও এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে আপাতত কিছুই বললো না সে। অজনির নানু বসে বসে তাঁদের দেখছেন। এক কথায় তাঁদের পাহারা দিচ্ছেন।

আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে আসলো তাঁরা। বাইরে এসে শাওন বললো “এই লোকটা এতো কিপটা কেনো রে? এতোক্ষণ বসলাম খেয়ে যেতেও বললো না। শুধু চা আর বিস্কুট কেউ মেহমানকে খাওয়ায়? আর মাত্র দুইটা বিস্কুট? লাইক সিরিয়াসলি। আর দেখেছিস? যতক্ষণ আমরা বসেছিলাম খাটাসের মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। যেন আমরা উনার নাতনিকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।” শাওনের কথা বলা শেষ হতেই দেখলো তাঁর পাশে অজনির নানু দাঁড়িয়ে আছেন। উনার বড় বড় চোখ আর ইয়া মোটা গোফে পুরাই ডাকাত লুক হয়ে গেছে। শাওন শুকনো এক ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ বসে পড়লো। উনাকে দ্রুত হাতে সালাম করে বললো ” আংকেল আপনি এতো কষ্ট করে আর এগিয়ে দিতে এসেছেন কেন? আমরা যেতে পারবো।” উনি আগের ন্যায় চেয়ে আছেন। উনার চোখে স্পষ্ট সন্দেহ দেখা যাচ্ছে। দিহান উনাকে বলল” আংকেল কিছু মনে করবেন না। ওঁর মাথায় একটু সমস্যা আছে। কী বলতে কী বলে ফেলে নিজেই বুঝেনা। অনেক গুলা ছ্যাঁকা খেয়েছে তো,তাই ওঁর মাথায় গন্ডগোল ধরে গেছে।” শাওন রাগি লুকে তাকালো। দিহান শাওনকে একটা চোখ টিপ দিয়ে আবার উনাকে বলল” আমি জানি আংকেল আপনি আমাদের বলতে এসেছেন আমরা যেন আরেকদিন আসি। আমরা অবশ্যই আরেকদিন আসবো আংকেল। আরেকদিন না,আমরা প্রতিদিন আসবো। আজ তাহলে আসছি। বাই।” দিহান এসে গাড়িতে উঠল। শাওন অলরেডি গাড়িতে বসে রাগে ফোঁসফোঁস করছে। দিহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুদূর এসে বলল” কী রে কুত্তার মতো মুখ বানিয়ে বসে আছিস কেন?” শাওন অগ্নিচোখে তাকালো। দিহান হাসলো। শাওনের পিঠে চাপড় দিতে দিতে বলল” মন খারাপ করিস না দোস্ত, আজ আমার খুশির দিন। ছোট এঞ্জেল টাকে কোলে নিয়ে যে সুখ পেয়েছি আমার পুরো জীবনের সুখ পাল্লায় নিলেও এ সুখের সমান হবেনা। কাল আবার আসবো ডক্টর জুহার কাছে। উনাকে বলে অজনিকে নিয়ে একদিন ঘুরতে যাবো। অজনি পাশে থাকলে আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যায় রে। এতো কম সময়ে কারো জন্য এত মায়া লাগেনি আমার,যতটা অজনির জন্য লেগেছে।” দিহানের কথায় শাওনের মন খারাপ উড়ে গেলো। আর যাইহোক দিহানের মলিন মুখে হাসির রেখা ফুটেছে এটাই বা কম কিসে?

___________________________________

নীলের অসয্য লাগছে। ইচ্ছে করছে সময়টা এখানে থামিয়ে দিতে। হোক সময়টা বিষাক্ত, তবু তো সে নিশ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু শামুর সাথে বিয়ে হলে যে তাঁর নিশ্বাস আটকে যাবে। মাকে কষ্ট দিতে পারেনা সে। মায়ের মলিন মুখ দেখলে তাঁর ভেতর পোড়ে যায়। কিন্তু সে যে কিছুতেই মানতে পারছেনা শামুকে। একটু আগে তাঁর মা তাঁকে বলে গেলেন পঁচিশ তারিখ তাঁর বিয়ে। এখন চলছে বারো তারিখ, তারমানে আরো বারো দিন পরেই তাঁর আর শামুর বিয়ে। এখন সে যদি তাঁর মাকে গিয়ে বলে আমি এ বিয়ে করবো না। তাহলে তাঁর মা কাঁদতে কাঁদতে নিজের অবস্থা বেহাল করে দিবেন। কিন্তু যদি শামুর পক্ষ থেকে না আসে তাহলে হয়তো এতোটা কষ্ট পাবেন না। হ্যাঁ এটাই করতে হবে। আপাতত নীলের মাথায় এর থেকে ভালো বুদ্ধি আসছে না।

নীল শামুর রুমে গেলো। শামুকে বলে দেখবে যদি শামু গিয়ে তাঁর মাকে বলে সে বিয়েতে রাজি না,তাহলে বিয়ে আটকে যাবে। আর তাঁর মাও কষ্ট পাবেন না। সে যদি বলে তাঁর মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন। লুপা বলেছে স্ট্রেস না নিতে। লুপার কথা মনে আসতেই লুপার কান্নার দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠল। কলিজা মুচড় দিয়ে উঠল নীলের। একটা মেয়ে তাঁকে এতো বছর ধরে ভালোবেসে আসছে। এতোদিন দূরে থাকার পরেও সে ভুলে যায়নি নীলকে। আর নীল কিনা পাষাণের মতো তাঁর দিকে চোখ তোলেও চায়নি?

নীল শামুর রুমে এসে নক করলো। শামু এসে দরজা খুলে দিলো। হলুদ রংয়ের সেলোয়ার-কামিজ পরেছে সে। ওড়নাটাও সুন্দর করে রাখা। ড্রেসাপটা নীলের ভালো লাগলো। শামু আঙুলে ওড়না পেঁচাতে পেঁচাতে লজ্জায় মিটিমিটি হাসছে। দরজা ছেড়ে সাইড দিলো শামু। তাঁর চোখে মুখে লজ্জার আভা ফুটে ওঠেছে। নীল রুমে ঢুকে খাটে গিয়ে বসলো। কথাগুলা কীভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। শামু লজ্জায় লাল হয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নাই চুপচাপ বসে আছে দুজন। একজনের মনে চলছে যন্ত্রণার ঝড়, অন্যজনের মনে চলছে খুশির ঝড়। অনেকক্ষণ নিরবতায় কাটিয়ে কথার সূত্রপাত করলো নীল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল”

_ তোমাকে কিছু বলতে চাই শামু আশা করি বুঝবে তুমি।” শামু লজ্জায় সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালো। নীল বলল” শামু আম্মু চায় আমি তোমাকে বিয়ে করি। শুধু আম্মু না ফুপি তোমার আম্মুও সবাই চায়, কিন্তু,,,,,।”
_আমি জানি তুমি কী বলবে,বলতে হবেনা। আন্টি আমায় সব বলে দিছেন, আমার চলাফেরায় ঘাটতি আছে। পোশাকের দিকটা খেয়াল রাখতে বলেছেন। এগুলা তোমার পছন্দ না। আর তোমার পছন্দ মতো চলতে বলছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে, আর কোরআন পড়া সহীহ্ করতে। সব কিছুতে আমি রাজি আছি। আর আন্টি আজ সকালে আমাকে এই ড্রেস আর [হাত দেখিয়ে] এই বালা আর রিং পড়িয়ে দিছেন।” নীলের কথা পুরোটা না শুনে, তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে,এক দমে কথাগুলা বলে ফেলল শামু। নীল বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তার মা এতোদূর চলে এসেছে? বালা আংটি সব পড়িয়ে দিছে? শামুকে আর কিছু না বলে দ্রুত পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো নীল। নিজের রুমে গিয়ে টাস করে দরজা লাগালো। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। মায়েরা নাকি সন্তানের মুখ দেখলে মনের কথা বুঝে যায়। তার মা কী বুঝেনা তাঁর ভেতরটা পোড়ে যাচ্ছে? মাকে কষ্ট দিতে চায়না বলে সে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আর তাঁর মা কিনা নিজ হাতে তাঁর জীবনটা নরকে ঠেলে দিচ্ছেন? মন যাকে চায়না, তাঁর সাথে থাকা কী খুব সহজ? রাগে কষ্টে চোখ ভিজে এলো নীলের। সাহস নেই তাঁর মাকে কষ্ট দেওয়ার, উনার হাসি কেড়ে নেওয়ার। নয়তো এক্ষুনি সবকিছু থামিয়ে দিতো।

চলবে……..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here