ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৩৮

0
2022

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৩৮
#সুলতানা_সিমা

অজনির কান্নার বেগ বেড়েই চলছে। এভাবে একটা বাচ্চার কান্না দেখলে কে না ছুটে আসে। অরিন মানুষ টেলে এসে অজনিকে কোলে নিলো। এতো মানুষ জড়ো করেছে তাঁর মেয়ে। পুরো পার্কের মানুষ চলে এসেছে। অরিন অজনিকে কোলে নিতেই অজনি কান্না থামিয়ে দিলো, কিন্তু তাঁর ফোঁপানো বন্ধ হলোনা। অজনিকে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো অরিন। তারপর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে কোমল গলায় বলল” কাঁদো কেন তুমি? কী হইছে?” অজনি আবার কেঁদে দিলো। অরিন স্নেহ মাখা গলায় বলল” কী হইছে মাম্মাম কে বলো। না বললে বুঝবো কেমনে?
_আমার বেলুন ফাটিয়ে দিছে।
_কে তোমার বেলুন ফাটিয়ে দিছে? আর সেজন্য তুমি কান্না করছো কেন? তুমি মাম্মাম কে ডাক দিবা।
_তুমি তো বলেছো মানুষের সামনে কথা না বলতে। নয়তো সবাই পঁচা বলবে।” অরিন অবাক হলো। আজ থেকে দুয়েক মাস আগে অজনিকে নিয়ে হসপিটাল গেছিলো। রুগী দেখার সময় অজনি বকবক করছিল। তাই অরিন বলছিল বাইরের মানুষদের সামনে কথা বলনা, লোকে পঁচা বলবে। ব্যস। এই কথাটা এখনো তাঁর মনে আছে। অরিন অজনির কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলল”

_তখন তুমি যেখানে ছিলে ওখানে অনেক পেশেন্ট ছিলো। তুমি কথা বললে তাঁরা বিরক্ত হতো,তাই চুপ থাকতে বলছিলাম। সবার সামনে তো চুপ থাকতে বলিনি।” অজনি ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকলো। অজনিকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো অরিন। অজনির কর্মকান্ড গুলা তাঁকে খুব আনন্দ দেয়। জীবনের সব কষ্ট ভুলে যায় তাঁর এই ছোট পরিটার দিকে তাকিয়ে। এটা যে শুধু তাঁর কলিজা না। এটা তাঁর দিহানের অংশ। তাঁর ভালোবাসার স্বামীর ভালোবাসার ফসল।

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রেস্তোরাঁর সামনে এসে থাকলো দিহান আর শাওন। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছে দুজন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে হো হো হেসে উঠে দিহান। এইটুকু মেয়ের ভয়ে তাঁরা দৌঁড়ানি খায়, সত্যিই এটা হাস্যকর ব্যাপার। শাওন অবাক হয়ে তাকালো দিহানের দিকে। কতোদিন পরে দিহানকে এভাবে হাসতে দেখলো। এই হাসির পেছনে কোনো কষ্ট লুকিয়ে নেই, শুধু সুখ ঝরে পরছে। শাওনের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। তাঁর কলিজার বন্ধুটা এভাবে খুশিতে হাসছে দেখে তাঁর নিজেরও খুশি লাগছে। ভিতরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো দুজন। আজ একটা মিটিং আছে। ১০টার আগে তাঁদের পৌঁছাতে হবে। শাওন ড্রাইভ করছে আর দিহান সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। শাওন চোখ ফিরিয়ে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিছুক্ষণ পরে আবার তাকালো। দিহানের চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে কানের পাশ ছোঁয়ে গেলো। শাওনের বুকটা ধুক করে উঠল। প্রতিদিন প্রতিরাত দিহানের কান্না দেখতে হয় তাঁকে। দিহানের কাছের বন্ধু হয়েও দিহানের জন্য কিছু করতে পারছেনা দেখে খারাপ লাগে তাঁর। ব্যথিত গলায় শাওন বললো”

_দোস্ত প্লিজ কাঁদবি না। দেখবি অরিন ফিরে আসবে।” চট করে মাথা তোলে চোখটা মুছে নিলো দিহান। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চেষ্টা করলো। শাওন বলল”
_দেখ এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি তোকে একা ফেলে চলে যাবো। বললাম তো ফিরে আসবে অরিন।” দিহান কান্নাজড়িত গলায় বলল ”
_সেটা তো এতো বছর ধরে বলে যাচ্ছিস তোরা। কই অরিন? আসেনা কেন ফিরে? “একটু থেমে চোখের পানিটা মুছে আবার বলল” আজ আমারও একটা বাচ্চা থাকতো। ফুটফুটে,মায়াবতী রাজকন্যা। যাকে দেখলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। যাকে স্পর্শ করলে হৃদয়ের গভীরে গিয়ে সুখের দোলা লাগে। যার মুখ দেখলে পৃথীবির সব কষ্ট উড়ে যায়। মনটা নেচে উঠে অজানা সুখে। আচ্ছা শাওন, এই মেয়েটা কী আমার বাচ্চা হলে পারতো না। জানিস,এতোকিছুর পরেও না আমি এই বাচ্চা মেয়েটার উপর রাগ করতে পারিনা। ও যা করে সব কেন জানি আমার ভালো লাগে। কোলে নেওয়ার লোভ হয়।” দিহানের কথা শেষ হতেই শাওন গাড়ি থামিয়ে দিলো। তারপর মৃদুস্বরে বলল”

_কোলে নিবি?” শাওনের কথায় কপাল কুঁচকে তাকাল দিহান। শাওন আঙুল দিয়ে রাস্তার দিকে দেখালো। সেই ছোট এঞ্জেলটা একজন বৃদ্ধ লোকের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে ঝুলছে স্কুল ব্যাগ। কালো স্কার্ট আর সাদা শার্ট দিহানের চোখ জুড়িয়ে গেলো। এতো বেশি কিউট লাগছে ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে ছোট ছোট গালে চুমু এঁকে ভরিয়ে দিক। সাথে সাথে দিহানের সব কষ্ট যেন উড়ে গেলো। মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠল। কে বলবে মাত্রই কেঁদেছে সে। শাওন মৃদু হাসলো। দিহান শাওনকে বলল
_চল যাই। একটু কথা বলে আসি। এখনতো ওঁর সাথে কেউ আছে। ভ্যা ভ্যা করলেও দৌঁড়ানি খেতে হবে না।
_কিন্তু দিহান আমাদের মিটিংয়ের সময় চলে যাবে।
_তাহলে থাক তুই আমি যাচ্ছি।” দিহান গাড়ি থেকে নেমে গেলো। শাওন পিছন থেকে বলল” আরে দিহান মিটিংটা আমাদের জন্য ইম্পর্টেন্ট।
_আরে গোল্লায় যাক সব।” দিহান দৌড়ে চলে গেল। না পারতে শাওনও নেমে আসলো। দিহান অজনির সামনে এসে দাঁড়ালো ওঁরা মনে হয় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। দিহান রাস্তায় উঁকিঝুঁকি করছে, যেন সেও গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অজনি শাওন আর দিহানকে দেখেই বলে উঠল” নানুভাই নানুভাই, সেদিন তুমি ওয়াসরুমে গেছিলা তখন এই লোকটা আমার আইসক্রিম খাইছে। [শাওনকে দেখিয়ে] আর সকালে এই লোকটা আমার বেলুন ফাটাইছে। ” অরিনের মামা কপাল কুঁচকে রাগি লুকে তাকালেন। শাওন দিহানের কানের কাছে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে বলল” দিহান মনে হয় হাতের লাঠি দিয়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে পিঠাবে।” দিহান জোরপূর্বক হাসি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বলল” আসলে বাচ্চাদের সব কথা বিশ্বাস করতে নাই।” উনি আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে রইলেন। দিহানের কিছুটা ভয় লাগলো। তবুও মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে বললো “আসলে বাচ্চাটা অনেক কিউট তো, তাই ওঁর সাথে খেলা করতে ইচ্ছে করে। এজন্যই বার বার ছুটে আসি। আপনি কিছু মনে,,,,।” দিহানের কথা কেড়ে নিয়ে শাওন বলল” আচ্ছা আংকেল এই বাচ্চাটার বাপ কী খাটাস?” শাওনের কথায় অরিনের মামার কপালের ভাঁজ বিলিন হয়ে গেলো। মুখটা গম্ভীর করে বললেন “ওঁর বাবা নেই।” দিহানের কলিজাটা মুছড় দিয়ে উঠল। বাবা নেই শব্দটা যেন ওর বুকে এসে সুচের মতো বিঁধলো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল” আংকেল আমি কী একবার কোলে নিতে পারি?” দিহানের কথা শেষ হতেই উনাদের গাড়ি চলে আসলো। অরিনের মামা গাড়িতে উঠে গেলেন। দিহানের কথা যেন উনি শোনেননি। দিহান গাড়ির গ্লাসের দিকে ঝুঁকে কাতর গলায় বলল” আংকেল প্লিজ আমাকে খারাপ ভাববেন না। আমি সত্যি বলছি,বাচ্চাটার প্রতি আমার দূবর্লতা কাজ করে তাই কোলে নিতে বলছি। আপনার বাসার এড্রেসটা দিবেন প্লিজ? আমি আপনাদের বাসায় না হয় একদিন ঘুরে আসবো।” অরিনের মামার কেন জানি খুব মায়া হলো। উনার বাসার এড্রেস দিয়ে বললেন” আমার বাসায় একদিন দাওয়াত রইলো। এখন যেতে হবে ওঁর স্কুল শুরু হয়ে যাবে।” উনারা চলে গেলেন। দিহানের মনটা খুশিতে নাগিন ডান্স দিচ্ছে। বাসার এড্রেস পেয়ে গেছে মানে সে প্রতিদিন একবার এই এঞ্জেল কে দেখবে,ছোঁবে,কোলে নিবে। ইস, ভাবলেই কেমন সুখ সুখ লাগে। ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠল দিহান। এই মূহুর্তে তাঁর থেকে সুখী মানুষ দুটি আছে বলে মনে হচ্ছেনা।

___________________

মাঝে মাঝে মন খারাপের কারণটা আমাদের জানা থাকে না। ভেতরটা হঠাৎ করে কেঁদে উঠে। কোনো কারণ ছাড়াই খুব কান্না পায়। চারপাশের সবকিছু বিরক্তিকর মনে হয়। প্রিয় জিনিসগুলাও অপ্রিয় লাগে। মন খারাপের কারণ খোঁজতে লাগলে মাথা ভনভন করে উঠে। কাঁদতে মন চায়। মনে হয় কাঁদলে ভেতরে শান্তি আসবে। নীল এখন এইরকম একটা সময় পার করছে। কাল রাত থেকে নীলের মনটা খারাপ হয়ে আছে। ভেতরটা বার বার কেঁদে উঠছে । খুব অশান্তি লাগছে তাঁর। সে জানেনা হঠাৎ করে কেন এমন লাগছে। ক্লান্ত শরীর এলিয়ে রেখেছে বিছানায়, তবুও সারারাতে ঘুম এসে উঁকি দেয়নি চোখে। বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াসরুমে গেলো নীল। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো তাঁর ফুপি বসে আছেন সোফায়। শামুর মা আর তাঁর মাও আছেন। সারারাত না ঘুমানোর কারণে নীলের চোখ লাল হয়ে আছে। নীলকে দেখে নীলের ফুপি বললেন”

_কী রে তোর চোখ এতো লাল কেন?” নীল কোন কথা বলল না। তাঁর ফুপির সামনে বসলো। চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে তাঁর মন খারাপ। নীলের ফুপি বললেন”
_মন খারাপ তোর?” নীল না সম্মতি মাথা নাড়াল। তারপর ভারি গলায় বলল” কেমন আছো? কখন এলে?”
_এইতো অঅনেকক্ষণ হলো।” নীলের ফুপিকে তাঁর মা ইশারা দিলেন । নীলের ফুপি ইশারায় হুম সম্মতি দিলেন। নীল বুঝলো কিছু শুধু দেখেই গেলো। নীলের ফুপি গলাটা একটু পরিষ্কার করে বললেন”
_শামু মেয়েটা কিন্তু অনেক মিষ্টি। আমরা শামুকে তোর জন্য পাত্রী হিসাবে পছন্দ করেছি। তুই কিন্তু না বলতে পারবি না।” নীল উনাদের কথায় একটুও অবাক হলোনা। সে আগে থেকেই আঁচ করেছিলো শামুকে তাঁর মা আবারও পাত্রী হিসাবে পছন্দ করেছেন।। একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে নিলো নীল। গম্ভীর গলায় বললো”
_ফুপি আমি এখন বিয়ে করবো না। মানে করবো, কিন্তু এখন না।
_তারমানে তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিস?” ধারালো গলায় বললেন নীলের মা। নীল শান্ত গলায় বলল”
_আমি মিথ্যে বলেনি, কিন্তু আমাকে একটু সময় তো দিবে তাইনা? ” নীলের মা মুখটা অন্ধকার করে বসে থাকলেন উনার মুখে বিষন্নতার চাপ। নীলের কলিজাটা মুছড় দিয়ে উঠে। মায়ের মলিন মুখ দেখতে পারেনা সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল”
_ওকে তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটা করো।
_তুই এভাবে বললে তো আমরা আগুতে পারিনা নীল। তুই ক্লিয়ারলি কিছু বল। “নীলের ফুপির কথায় নীল কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে বলল ”
_আমি আর কী ক্লিয়ারলি বলবো। তোমরা তো সব ঠিক করে ফেলেছো তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন।” নীল রাগে ফ্লোরে তাকিয়ে ফুঁসতে লাগলো। শামুর মা এখানে না থাকলে আরও কিছু বলতো। কিন্তু উনার সামনে উনার মেয়ের এসব কথা বলা ঠিক হবেনা।” নীল তাঁর মাকে কিছু বলতে উনার দিকে তাকালো। তাঁর মা আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতেছেন। দৃশ্যটা নীলের বুকের গভীরে গিয়ে আঘাত করলো। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল”
_ওকে, বিয়ে ঠিক করো আমি রাজি।” কথাটা বলে নীল উঠে চলে গেলো উপরে। তাঁর মাকে সে কষ্ট দিতে চায়না। মায়ের অবাধ্য ছেলে সে কখনোই ছিলোনা আর আগামীতেও হতে চায় না। কিন্তু তাঁর মন যে অন্য কোথাও আটকে আছে। সেটা কী ফিরিয়ে আনতে পারবে?

_________________________

জিহান বাসায় এসেছে প্রায় আধা ঘণ্টা মতোই হবে। কিন্তু এখনো লারার কোনো খোঁজ নেই। বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হলো জিহান। মনে মনে লারাকে বকতে বকতে তাঁকে খোঁজতে লাগলো। এই মেয়েটা একটা মাথা মোটা। তাঁকে না দেখলে যে জিহানের কিছু ভালো লাগেনা, এটা কী সে জানেনা? তাঁর বাবার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো তাঁরা তাহানকে নিয়ে খেলা করছে। তাহান হলো লারা আর জিহানের ছেলে। কিছুদিন আগে তাঁর চারবছর পূর্ণ হলো। এক সাথে থাকতে থাকতে লারাকে সে ভালোবেসে ফেলেছিলো। যখন শুনলো লারা সব করেছে লুপার কথায়,তখন লারাকে নিজের করে না নিয়ে থাকতে পারেনি। সারা বাসা খোঁজে না পেয়ে ছাদে গেলো জিহান। ছাদের এক পাশে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে লারা। জিহান ছাদে পা রাখতেই তীব্র রোদ এসে তাঁর গা ছোঁয়ে দিলো। ঘামে ভিজে শীতল শরীরে গরম এসে ভির করলো। মনে হচ্ছে আগুন তাঁর গা ঘেঁষে গেছে। জিহান লারার কাঁধে হাত দিলো। লারা তৎক্ষণাৎ চোখের পানি মুছে পিছন ফিরে তাকালো। রোদে তাঁর দুধে আলতা চামড়া লাল হয়ে গেছে। জিহান তাঁর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে লারার বাম চোখের কোণের রয়ে যাওয়া জল মুছে দিয়ে বলল”

_এই রোদের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? চেহারার কী হাল হয়েছে। আসো ঘরে আসো।” জিহান লারার হাত ধরে টান দিলো লারা নড়লোনা। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। জিহান বললো”
_আচ্ছা তুমি কাঁদলে কী আমার খারাপ লাগেনা? রোজ রোজ যে এভাবে কাঁদো,আমার যে কষ্ট হয় বুঝনা?” লারা ডুকরে কেঁদে উঠল। জিহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_আপনি আরেকটু খোঁজ নিয়ে দেখুন না প্লিজ।
_আর কতো খোঁজ নেব লারা? ছয় বছর থেকে খোঁজ নিয়ে আসছি।
_আমার কষ্ট হয়,খুব কষ্ট হয় ওর জন্য। ওকে তো আমি নিজের বোন ভাবতাম। আমি জানি ও আমার উপর অভিমান করে আছে। ও ভাব্বে হয়তো আমি খুন করে ওকে ফাসিয়ে দিয়েছি। আমার না নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আমি যদি ওকে পিস্তল না দিতাম দিহান ওকে সন্দেহ করতে পারতো না। ও প্রেগন্যান্ট ছিলো আমি তো জানতামই না। ওই অবস্থায় ও কেমনে কী করেছে ভাবলেই কলিজা শুকিয়ে যায়।
_লারা কান্না থামাও প্লিজ। প্রতিদিন কী সব শুরু করো বলোতো? আসো নিচে আসো আমার ক্ষিধে লাগছে।
_আপনারা খুব পাষাণ,আপনাদের কারো মন কাঁদেনা ওর জন্য।
_লারা কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য। কিন্তু কম চেষ্টা কী করেছি বলো? এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে ওকে খোঁজা হয়নি। আমি না হয় পেলাম না দিহান তো ওকে তন্নতন্ন করে খোঁজেছে। সে কী পেয়েছে তাঁকে বলো?” লারা স্থির হয়ে গেলো। কিন্তু তাঁর শরীর এখনো ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে। বাইরের কান্না থামালেও ভিতরের কান্না থামাতে পারছেনা। জিহান আর কথা আগালো না কোলে তোলে নিয়ে আসলো রুমে। লারা এখন জিহানের কথা শুনবেনা,তা জিহান জানে। অরিনকে খোঁজতে খোঁজতে জিহান ক্লান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পায়নি অরিনের খোঁজ। ওই যে বলেনা, হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খোঁজে পাওয়া যায় কিন্তু যে নিজে থেকে হারায় তাঁকে খোঁজে পাওয়া যায়না। কথাটা আসলেই সত্যি। অরিন তো নিজে থেকে হারিয়েছে, ওকে কেমনে পাবে তাইলে?

চলবে……..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here