ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_২৮

0
2016

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_২৮
#সুলতানা_সিমা

আজ তিনদিন হল দেশে এসেছে নীল। এই তিনদিনে সে বাসা থেকে বের হতেই পারেনি। আজ লুপার সাথে দেখা করার জন্য বের হচ্ছে, তার সাথে শামুও যাচ্ছে। সে শামুকে নিবেনা বলছিলো, কিন্তু তার মা তাকে বলেন সে যেন শামুকে সাথে নিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে শামুকে সাথে নিচ্ছে। বাইকে বসে শামুর অপেক্ষা করছে নীল। এই কয়েকদিনে শামুর সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তবে শামু যে তাকে শুধু বন্ধু ভাবেনা এটা সে ঠিকই আন্দাজ কর‍তে পারে। কিছুক্ষণ পরে শামু আসে। শামু হোয়াইট টপস এর সাথে ব্ল্যাক জিন্স পরেছে। জিন্সের হাঁটুতে উরুতে ছেড়া নীল কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে ফেলে এই ছেড়া ছেড়া জামাগুলা তাঁর খুব বিরক্ত লাগে। আর মেয়েরা পরছে দেখলে তো আরো বেশি বিরক্ত লাগে। সে ছেলে হয়েও এমন জামা পরতে তাঁর লজ্জা লাগে, আর শামু কিনা সবসময় এইগুলা পড়ে। শামুর উপরে অধিকার ফলানো ঠিক হবেনা তাই নীল চুপ থাকল। শামু এসে বাইকে বসে এক হাতে নীলের পেট জড়িয়ে ধরলো। শামুর এভাবে ধরাতে নীলের শরীরে কারেন্ট শকডের মতো লাগে। লাগাটা স্বাভাবিক, সে একটা যুবক ছেলে কোনো যুবতীর ছোঁয়ায় তার এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। নীল বাইক স্টার্ট দেওয়ার পড়ে শামু কিঞ্চিৎ হেলে পড়ে নীলের পিঠের ওপর।

নীলের পেট জড়িয়ে ধরে বসে আছে শামু ।বাতাসের ঢেউয়ে শামুর সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আছে তাঁর। টকটকে লাল গাল চিকচিক করছে রোদে। বাইকের ছোট আয়নায় মাঝে মাঝে এই সুন্দর দৃশ্যটা একপলক দেখে নিচ্ছে নীল। অবাধ্য চোখ কথা শুনে না তাঁর। না চাইতেই চলে যায় আয়নায় ভেসে ওঠা শামুর প্রতিচ্ছবিতে। সুন্দর মূহুর্তটা অবিলম্বে শেষ হয়ে যায়। শামুর মনে হচ্ছে মাত্রই তো বাইকে ওঠলাম এতো তারাতাড়ি এসে গেলাম। বাইক থেকে নেমে নীল আর শামু একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।

একটা টেবিলে বসে বসে এতক্ষণ নীলের অপেক্ষা করছিল লুপা। নীলকে আসতে দেখে খুশিতে তাঁর মুখে হাসির ফুল ফুটে ওঠলো। কিন্তু নীলের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে তা সাথে সাথেই ঝরে গেল। চেহারায় নেমে আসলো দুনিয়ার সমস্ত আঁধার। নীল এসে একটা চেয়ার টেনে বসল, নীলের পাশে শামুও বসল। নীল লুপাকে বলল”

_কিরে কেমন আছিস?” লুপা অবাক হয়ে থাকায়। নীল তাকে তুই করে বলছে? তার বুঝ হয়েছে থেকে নীল তাঁকে তুমি করে বলে,আর আজ কিনা তুই? লুপা নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবেই বলল”
_জ্বি ভালো। আপনি?
_হুম আমিও ভালো আছি।” শামুকে দেখিয়ে বলল” ও হচ্ছে শামীমা আমার কাজিন।
কাজিন শুনে কেন জানি লুপার খুব খারাপ লাগে। ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে শামীমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল” লুপা।
শামু হ্যান্ডশেক করে বলল”
_শামীমা। সবাই আমাকে শামু বলেই ডাকে চাইলে তুমিও ডাকতে পারো।
_হুম। আপনাদের জন্য কী অর্ডার দিবো বলুন।
_আমার জন্য একটা কোল্ড কফি আর আইসক্রিম।[শামু]”
নীল শামুর দিকে চোখ গরম করে তাকায়। কাল থেকে গলা বসে আছে শামুর। বার বার শামুর মা নীল ও তাঁর মাকে কল দিয়ে বলছেন শামুর খেয়াল রাখতে। এখন কিনা সে এসব অর্ডার করছে। নীল শামুকে কিঞ্চিৎ ধমক দিয়ে বলে”
_শামু তোমার গলা বসে আছে আর তুমি এসব খেতে বলছো?
_কিচ্ছু হবে না একটুই তো খাবো।
_উঁহু একটুও খাওয়া যাবেনা। পরে অসুস্থ হলে তোমার আম্মু আমার আম্মু কেউই আমায় ছাড়বে না।
_নীল ভাই প্লিজজজজজজজজ।
_ওকে ফাইন খাও।” নীল কিঞ্চিৎ রেগেই কথাটা বলল। শামু নীলের হাত ধরে অনুরোধের গলায় বলল”

_আজকেই খাবো আর কোনোদিন খাবো না প্লিজ।
_ওকে।

সম্মতি পেয়ে শামু নীলকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দিল। শামুর এই একটা অভ্যাস একটুখানি খুশি হলেই জড়িয়ে ধরে। লুপাকে তীক্ষ্ণ চোখে তাঁদের দিকে তাকাল। বুকটা পোড়ে যাচ্ছে তাঁর। ইচ্ছে করছে টেবিলটা তুলে শামুর মাথায় মারতে। নীলকে ছেড়ে দিয়ে শামু সোজা হয়ে বসে লুপাকে বলল”
_নীল ভাইও কফি খাবে।” লুপা কিঞ্চিৎ হাসলো জোরপূর্বক হাসি। নীল কী খাবে না খাবে সেটা কী নীল বলতে পারবেনা এসবও উনাকে বলতে হবে যত্তসব। মনে মনে শামুর গোষ্ঠী উদ্ধার করছে লুপা। শামু এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশ দেখতে লাগল। নীল চুপচাপ বসে আছে না একবার লুপার দিকে তাকাচ্ছে না লুপার সাথে কোনো কথা বলছে। নীলের এমন আচরণ লুপার কলিজাটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। যে নীল নির্লজ্জের মতো লুপার দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকতো, সে নীল কিনা আজ আঁড়চোখেও একবার তার দিকে তাকাচ্ছে না। ওয়েটার এসে তাঁদের কফি দিয়ে গেল। নীল কফিতে চুমুক দিয়ে লুপার দিকে না তাকিয়েই বলল ”

_কী জানি বলবি বললি। কী বলবি?”। লুপা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। নীলের কি একবারও ইচ্ছে করছেনা লুপার দিকে তাকাতে। কত শখ করে আজ শাড়ী পড়ে সেজেগুজে এসেছে সে। সবকিছু তো নীলের জন্যই। লুপা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে বলল”
_আব,,,শামু আপু যদি একটু বাইরে যেতেন। না না আপনাকে যেতে হবেনা “নীলের দিকে তাকিয়ে” আপনি একটু আমার সাথে বাইরে আসবেন?

নীল টেবিলের দিকেই দৃষ্টি রেখেই বলল”
_যা বলার এখানে বল। আমি কোথায় যেতে পারব না আর শামুকে একা বাইরে যেতে দিবনা।” লুপা অসহায় চোখে তাকাল। নীলের এত এত পরিবর্তন সে মেনে নিতে পারছেনা। সত্যিই মানুষ বড়ো আজব প্রাণী
। কখন কাকে ভালো লেগে যায় কখন কাকে মন দিয়ে বসে সেটা তাঁরা নিজেও জানেনা। আজ যেটা ঘৃণিত কাল সেটা প্রিয় হয়ে যায়। আর কাল যেটা প্রিয় তো আজ সেটা বিরক্তকর হয়ে যায়। লুপা কষ্টটা চাপা রেখে অপরাধী গলায় বলল”
_সরি নীল ভাইয়া সেদিন আমি অবুঝের মতো এমন কান্ড না করলে আপনাকে সবার সামনে এতটা ছোট হতে হতনা আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।” নীল তাচ্ছিল্য হাসল। শামু উৎসুক গলায় বলল”
_কী হয়েছিলো?
_কিছু না তুমি খাও।” গম্ভীর গলায় বললো নীল। তারপর লুপাকে বলল”
_আমি কিছু মনে করিনি। আর এবিষয় নিয়ে কথা না বললে আপাতত খুশি হবো।
_আমার আরো কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।” এতক্ষণে নীল লুপার দিকে চোখ তুলে তাকাল। কারণ লুপার গলা কান্নাজরিত। চোখ তুলে তাকিয়ে তাঁর মনে হলো সে ভুল করে ফেলেছে। এবার তো এই মায়া পরীর মায়ার জালে সে আঁটকে যাবে। লুপা আজ কাজল পরেছে চোখে চশমা পরেনি। অরেঞ্জ কালার শাড়ী সাথে ম্যাচিং করে দু হাত ভরে চুড়ি পরেছে। নীল স্বপ্নে লুপাকে এই ভাবে সাজাতো আজ স্ব চোক্ষে দেখছে। এইতো তাঁর স্বপ্ন পরী। লুপাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নীল চোখ নামিয়ে নিল। এই মায়ায় সে আঁটকে পড়তে চায়না বলেই তো সে চোখ তুলে তাকাচ্ছেনা। আবারও টেবিলের উপর চোখ রেখে নীল বলল”
_কী কথা?” লুপা শামুর দিকে তাকাল। শামুর সামনে কীভাবে সে বলবে কিন্তু না বলেও যে থাকতে পারবেনা। লুপা নীলকে বলল”

_আসবেন একটু বাইরে প্লিজ?” নীল কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল তারপর বলল”
_ওকে চলো।” শামু আইসক্রিম খাচ্ছিল, নীল দাঁড়াতেই শামুর কনুইয়ের সাথে তাঁর গা লেগে ধাক্কা খেয়ে শামুর হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে যায়। শামুর ঠোঁটে মুখে বুকে অনেক জায়গায় আইসক্রিম ছিটকে পড়ে। নীল তৎক্ষণাৎ টিস্যু নিয়ে শামুর ঠোঁটে মুখে লেগে যাওয়া আইসক্রিম মুছতে লাগে। লুপার বুকের ভেতর আগুনে দাউদাউ করতে লাগে। এই দৃশ্যটা লুপাকে এতো কষ্ট কেন দিচ্ছে? শামুর ঠোঁট মুখ মুছে তাঁর গলা মুছে দিয়ে হাত আরেকটু নিচে নামাতে লাগলো।

তাহলে কী এখন? লুপা আর একমূহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না বড় বড় পা ফেলে চলে গেল এখান থেকে।

নীলের হাত বুকের সামনে এসে থেমে যায়। তাঁর হাত কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। অবিলম্বে হাত সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত হয়ে কিছুক্ষণ শুধু বসে থাকে। শামুও লজ্জায় লাল হয়ে আছে। নীল একটা টিস্যু শামুর হাতে তুলে দেয়। তারপর সেও বেরিয়ে আসে। লুপা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নীল তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। লুপা মাথা নিচু করে আছে। নীল বলল”
_হ্যাঁ বল। কী যেন বলবি?” লুপা যা বলতে এসেছিল আপাতত তা আর তাঁর বলা হবেনা। এক কথায় লুপা কথাই বলতে পারবেনা তাঁর গলায় সব আঁটকে আছে। নীল বলল”
_কী হলো বলছিস না কেন কী কথা?
লুপা মাথা নিচু করেই থাকল মাথা তুললে হয়তো তার ছলছল চোখ নীলের চোখে পড়ে যাবে। লুপা মাথা নিচু রেখেই না সম্মতি মাথা নাড়ালো। তারপর কিঞ্চিৎ কাঁপা গলায় বলল”
_কি কি কিছু না।” লুপা তড়িঘড়ি করে ওখান থেকে চলে গেল। নীল হতভম্ব হয়ে গেল। হঠাৎ লুপার কী হলো সে কিছুই বোঝতে পারল না। সে নিজেইতো বাইরে ডেকে আনলো কিছু বলবে বলে। তাহলে? বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রেস্টুরেন্টের দিকে পা বাড়ায় নীল। লুপার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় সে বড্ড ভুল করে ফেলেছে। বার বার চোখে শুধু লুপার মুখটা ভেসে উঠছে।

_______________________________

তিন চার দিন থেকে জিহান লক্ষ্য করছে লারা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সবসময় একা একা বসে থাকছে জিহানের উপস্থিতিতে কেঁপে ওঠছে। রাত জেগে রুমে পায়চারী করেছে। খেতে বসলে না খেয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকছে। জিহান বুঝতে পারছেনা হঠাৎ লারার হলোটা কী। নতুন বিয়ে করেছে বলে জিহান একমাসের ছুটি চেয়েছিল এরমধ্যে পনেরোদিন চলে গেছে। এই পনেরোদিনে সে কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারেনি লারার বিষয়ে। তবে এতে কোনো আফসোসও হচ্ছেনা জিহানের,কেননা এতোদিনে সে নিশ্চিত হয়ে গেছে লারা আর যাই করুক জিহানের খারাপ করবেনা।এই বিয়ের পিছনে লারার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকবে না। হতে ওতো পারে লারা জিহানকে ওই রাতটার জন্যই বিয়ে করছে। যে রাতটায় সে মাতাল হয়ে ডুব দিয়েছিল লারার মাঝে। জিহান আপাতত লারার বর্তমান বিষয় নিয়ে ভাবছে। লারা কেন হঠাৎ এমন হয়ে গেল তা তাঁর জানতেই হবে। ভেবেছিল যা হওয়ার হোক এনিয়ে সে মাথা ঘামাবেনা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লারার কী হয়েছে এটা জানা খুব জরুরী। নয়তো যে জিহানেরও শান্তি লাগবেনা। লারা খাটে বসে ছিল জিহান গিয়ে লারার পাশে বসল। জিহান গলা খাঁকড়ি দিল। লারার আগের মতই বসে আছে। জিহান লারাকে ডাক দিল। লারার কোনো ভাবান্তর হলোনা। জিহান লারাকে কিঞ্চিৎ ধাক্কা দিয়ে ডাক দেয়, লারা কিঞ্চিৎ চমকে ওঠে। জিহান বলে
_এভাবে চমকালে কেন? কী এতো ভাবো?
_ক ক ক কই না না নাতো কী ভাব্ব।” লারা এভাবে চমকানো কথা বলা দেখে জিহান কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে ফেলে। লারা বরাবরই চালাক মেয়ে জিহান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে দেখে সে নিজেকে সামলে জিহানকে বলল”

_আব,,,আ মানে,,আসলে বাড়িতে যা ঘটে গেছে আমি এসব মেনে নিতে পারছিনা। এভাবে দিহান ভাই অরিনের চলে যাওয়া আমার মোটেই ভালো লাগেনি। তাছাড়া বাড়ির সব মানুষ কেমন জানি হয়ে গেছে। সবসময় সবাই মন মরা হয়ে থাকে এসব দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। ” জিহানের মন খারাপ হয়ে গেল, আসলেই তার বাড়িটা মৃত বাড়ির মতো হয়ে গেছে। সবাই সবসময় মরা মুখে বসে থাকে। লারা জিহানের হাতের উপর হাতটা রাখল জিহান লারার দিকে তাকালো। লারার কোমল হাতের ছোঁয়া তার হৃদয়ে অন্যরকম শিহরণ জাগায়। লারা জিহানকে বলল”

_আপনি ওদের ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলুন না প্লিজ।
_আমি কীভাবে বলবো। তুমি শুননি সবাই কী বলছে? কেউ কোনোদিন ওদের এই বাড়িতে তুলবে না। আর মেজো আম্মুতো বলেই দিয়েছে উনার গলায় ছুরি লাগালেও উনি এই মেয়েকে মেনে নিবেন না।
_এগুলাতো রাগের মাথায় বলছেন আপনি প্লিজ ওদের আসতে বলুন দেখবেন ওরা আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
_কিন্তু,,,
_প্লিজ।” জিহান কেন জানি লারাকে না বলতে পারল না। লারার টানাটানা চোখে আঁটকে গেল। জিহান হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে বলল”
_হুম। আমি দেখছি।
_ধন্যবাদ।”লারা হাত সরিয়ে নিল। জিহানের কেন জানি খুব খারাপ লাগছে লারা হাত সরিয়ে নেওয়াতে। ফোনটা নিয়ে জিহান বারান্দায় চলে যায়। দিহানকে ফোন দেওয়া দরকার।

_____________________

দিহানের বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে অরিন। দিহানের ফোন বাজতেছে টেবিলের উপর। দিহান নড়ছেনা নড়লে যদি অরিনের ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই কারণে। সারারাত ভালোবাসার সাগরে ডুবে ছিলো দুজন। সকালে অরিনের হঠাৎ করেই মাথা ব্যথা ধরে যায়। দিহান অরিনের মাথা টিপে দেয় কিন্তু অরিনের মাথা ব্যথা কমেনা, দিহানও থেমে থাকেনি সে অরিনের মাথা টিপে দেয় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অনেক্ষণ পরে অরিনের ঘুম লাগে, তাই দিহান এখন অরিনের ঘুম ভাঙ্গাতে চাইছেনা। দিহানের ফোনে দুবার কল এসে আর আসলো না দিহান অরিনের নিস্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। পাগলীটা তাকে এতো ভালোবাসে তার উপর এতোটা আসক্ত, আজকের রাত না আসলে সেটা হয়তো কখনো জানাই হতোনা। কয়েকটা জোনাকপোকা আর কিছু বৃষ্টি জল পেলে যে কেউ এতো খুশি হয় তা তার জানা ছিলোনা। দিহান অরিনের মাথায় একটা চুমু এঁকে দিল। অরিনের সবসময় ঘুম পাতলা। আজ সে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।

_বিকাল ৪টায় অরিনের ঘুম ভাঙ্গে। অরিন ঘুম থেকে উঠে দেখে দিহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। দিহান মৃদু গলায় বলে”
_গুড আফটারনুন সুইটহার্ট।” অরিন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। ঠোঁটের কোনে লজ্জার হাসি। দিহান অরিনের থুতনি ধরে বলে”
_কী লজ্জা লাগছে? রাতে তো বাঘিনী হয়ে গেছিলা এখন দেখি ভেজা বেড়াল হয়ে গেলা।” অরিন চোখ বন্ধ করে থাকলো। লজ্জায় সে লাল হয়ে গেছে। দিহান দুহাতে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো। অরিনও তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল তাঁর বুকে।

অনেক্ষন পরে দুজন ওঠে। অরিন ওয়াসরুমে চলে যায়। দিহান রান্নাঘরে যায়। তরকারি ঠান্ডা হয়ে আছে ভাতও ঠান্ডা। ঠান্ডার মাঝে ঠান্ডা খেতে ভালো লাগেনা। আর রাতে যে দুজন খেয়েছিল আর খাওয়া হয়নি। দিহান চুলায় আগুন জ্বালিয়ে ভাত বসায় তরকারি গরম করে ভাত তরকারি নিয়ে আসে। এসে দেখে অরিম উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। দিহানের চেহারায় চিন্তার চাপ ফুটে উঠলো। এভাবে শুয়ে আছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? রক্তপাতটা একটু বেশিই হয়ে গেছিলো। এমনিতেই অরিনের শরীর দূর্বল। এখন হয়তো আরো বেশি দূর্বল লাগছে। দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরিনকে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো”

_শরীর খারাপ লাগছে?” অরিন ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে না সম্মতি মাথা নাড়াল। গরম ভাতে ধোঁয়া উড়ছে। দিহান গিয়ে হাত পাকা নিয়ে ভাত ঠান্ডা করতে লাগে। ভাত কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এলে দিহান অরিনকে ধরে বসিয়ে মুখে তুলে খাওয়ায়। অরিনকে খাইয়ে নিজে খেয়ে এসে ফোন হাতে নেয়। জিহান কল দিছিল। দিহান জিহানকে কল দেয়, জিহান বলে বাসায় যাওয়ার জন্য, দিহান সাফ সাফ না বলে দেয় সে যাবেনা। কিছুক্ষণ পরে আবার কল আসে কল ধরার পরে ফোনের ওপাশ থেকে লারার গলা ভেসে আসে। লারা অরিনের সাথে কথা বলে। অরিন লারাকে বলে যে করেই হোক সে দিহানকে মানিয়ে সে বাসায় ফিরবেই। ফিরতে যে তাকে হবেই। নাহলে কীভাবে সে এই মুখোশধারীকে স্ব চোক্ষে দেখবে।

চলবে…..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here