ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_২৫

0
2006

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_২৫
#সুলতানা_সিমা

লুপার মা কী তাহলে অরিনের রুমে গেছিল? নাকি অন্য কেউ? হতে ওতো পারে উনার শাড়ি অন্য কেউ পড়েছিল। লুপার মা লারার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন”

_ওমা এতো সকাল ওঠে গেলে?
_জ্বি আমি এই টাইমেই উঠি।
_তুমি তো দেখি অনেক লক্ষি মেয়ে।” লারা কিঞ্চিৎ হাসলো। তারপর বলল”
_আপনার শাড়িটা অনেক সুন্দর। আচ্ছা এটা আপনার শাড়ি?
_সুন্দর না? এটা আমার চয়েজ। জানো বড়ো ভাবির চয়েজ না একদম পঁচা।
_বলছি এটা আপনার শাড়ি?
_হ্যাঁ আমার কিন্তু এটা আমার না বললেও চলে। জানো এটা এই বাড়ির সবাই পড়ে কেউ বাদ নাই।
_অহ। ” লারা একটু কী যেন ভাবল তারপর বলল”
_আচ্ছা উনি রাতে যেন কী বললেন। মিহান না কী যেন নাম। আচ্ছা মিহান কার ছেলে?” লুপার মায়ের হাস্যজ্বল চেহারায় আঁধার নেমে আসল। ঠোঁটের কোণে হাসির কোনো ছিটেফোঁটা নেই। সব যেন কালবৈশাখীর কোনো এক ঝড়ে উড়ে গেছে। উনি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন এখান থেকে। লারার কপাল কুঁচকে এল উনি মুখটা এমন বানালেন কেন? মিহান উনার সন্তান নয়তো? না না উনি তো একদম সাদামাটা মানুষ উনি কীভাবে নিজের সন্তানকে খুন করে ফেলবেন?লারা কথাগুলা ভাবতে ভাবতে চলে গেল কিচেনে। আপাতত সে এই বিষয় টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায়। আজ তাঁর ইচ্ছে করছে জিহানের জন্য কিছু বানাতে। স্বামীকে নানা রকম রেসিপি বানিয়ে খাওয়াতে কার না ইচ্ছে করে। জিহান তাঁর অজান্তেই তাঁর মনের ঘর দখল করে নিয়েছে। মানুষটা যতই রাগী হোক তাঁর প্রতি লারার একটা দূর্বলতা কাজ করে। আজ জিহানের সব প্রিয় জিনিস গুলা বানাবে।

ঘুমন্ত অরিনকে যে এতটা আবেদনময়ী লাগে তা জানা ছিলনা দিহানের। সেই কখন থেকে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তবুও যেন দেখার তৃপ্তি মিটছেনা। কই এই নেশা তো কখনো তন্দ্রার জন্য হয়নি? তন্দ্রাকে কখনো এতটা ক্ষণ ধরে দেখেইনি সে। অরিনের ঠোঁট গুলা তাকে খুব কাছে টানে। রাতেও ইচ্ছে করছিল একবার ছুঁয়ে দিতে এই ঠোঁট জোড়া। কিন্তু ঠিক হবে কিনা এটা ভেবে অনেক কষ্ট করে নিজেকে কন্ট্রোল করেছে সে।

ঘুম ভেঙে যেতেই অরিন পিটপিট করে চোখ খুলে দেখল দিহান তার দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠে নিজের দিকে এভাবে দিহানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরিনের লজ্জা লাগল। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরল। অরিন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল তার ওড়না নেই সে ছিৎ হয়ে শুয়ে আছে। তারমানে দিহান এই অবস্থায় এতক্ষণ তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল? অরিন তৎক্ষণাৎ ওঠে বসে ওড়না খুঁজতে লাগে। দিহান বুঝে যায় অরিন লজ্জা পেয়েছে সে চোখ নামিয়ে নেয়। অরিন ওড়না নিয়ে ওয়াসরুম যায়। অনেকক্ষণ পর ওয়াসরুম থেকে এসে আবার শুয়ে পড়ে। দিহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে”

_কী ব্যাপার আবার শুয়ে পড়লে যে?” অরিন কোনো কথা বলেনি। দিহান আবার বলে”
_কী হলো ওঠো।” অরিন আগের মতই চুপ থাকল। দিহানের ভ্রু কুঁচকে এলো। দিহান সোফা থেকে উঠে এসে অরিনের পাশে বসে বলল”
_পেট ব্যথা করছে?” অরিন এবারও চুপ। দিহান অরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু গলায় বলল”
_লজ্জা পাচ্ছ কেন? বন্ধু না আমরা? বল পেট ব্যথা করছে?” অরিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। অরিনের চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে কান ছুঁয়ে গেল। দিহানের বুকটা যেন ছ্যাৎ করে ওঠল। অরিন কাঁদলে এত কষ্ট হয় কেন তাঁর? দিহান অরিনের চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বেরিয়ে গেল। ক্ষানিক পরে হট ওয়াটার ব্যাগ আর কিছু ফল নিয়ে আসল । অরিন কাত হয়ে শুয়ে ছিল দিহান তাকে ছিৎ করিয়ে তাঁর তলপেটের উপর ব্যাগ রাখল। অরিনের তুলতুলে নরম পেটে দিহানের হাতের ছোঁয়া লাগতেই অরিন কেঁপে ওঠে দিহানও তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিল। তাঁর কেমন জানি একটা ফিল হচ্ছে বুকের ভেতর ধুকধুক করছে। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে অরিনের কোলে মাথা রেখে অসংখ্য বার ঘুমিয়েছে। অরিনের কোলে ঘুমালে তাঁর মনে আলাদা একটা সুখ পায়, যা সে অন্য কোথায় পায়না। প্রতিবারই অরিনের ছোঁয়া লাগতেই তাঁর বুকে এভাবে ধুকধুক করেছে। অরিন কেঁদে যাচ্ছে দিহান আবারও অরিনের মাথায় হাত রেখে বলল”

_প্লিজ কেঁদো না ঠিক হয়ে যাবে।” অরিনের চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়তেই থাকল। দিহানের রাগ ওঠে গেল ধমকের স্বরে বলল”
_এই কান্না থামাবা নাকি থাপ্পড় দিব? এখন কান্না করছো কেন? এখন যাও সবার রুম মুছে দিয়ে আসো। কেয়ারলেস কোথাকার।” অরিন কান্না থামিয়ে গাল ফুলিয়ে থাকল। দিহানের হাসি পেল অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ঝুরি থেকে আঙুর এনে অরিনকে খেতে দিল,অরিন গাল ফুলিয়েই থাকল হাঁ করল না দিহান ধমক দিয়ে বলল”

_কী হলো খাও?” অরিন ভদ্র মেয়ের মতো হাঁ করল। দিহান অরিনকে কয়েকটা আঙুর খাওয়ানো পর অরিনের খুব বমি পেল। অরিন মুখ চেপে ওঠে বসে ওয়াসরুমে যাওয়ার জন্য। দিহান বলল “কী বমি পাচ্ছে?” অরিন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। দিহান তাড়াতাড়ি বালতি নিয়ে আসে ওয়াসরুম থেকে অরিনের মাথা ব্যথা পেট থাকলে তখন যদি কিছু খায় তার বমি হয়। অরিন বমি করার পর দিহান অরিনকে পানি খাইয়ে শুইয়ে দিল। বালতিটা নিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে অরিনের পাশে বসল। অদ্ভুত বিষয় হলো বমি জিনিসটা তাঁর অনেক ঘৃণা লাগে অথচ আজ তার কোনো রকম খারাপ লাগছে না।

_আপনি এবার আপনার রুমে চলে যান। সবাই আপনায় খুঁজবে” ভাঙ্গা গলায় কথাটা বলল অরিন। দিহান বলল”
_নিজের চিন্তা করো।
_কেউ দেখে ফেললে আপনাকে কথা শুনাবে।
_তাতে তোমার কী চুপচাপ শুয়ে থাকো।” অরিন আর কথা বাড়াল না। দিহান বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে সারারাত সে ঘুমায়নি। অরিন একটু সরে গিয়ে দিহানকে বলল”

_আব,,,আপনি শুয়ে পড়েন এখানে।” দিহান অরিনের দিকে একবার থাকাল তারপর শুয়ে পরল। একটু শুয়া তাঁর বড্ড প্রয়োজন সারা রাত তাঁর ঘুম হয়নি। অরিনকে একবার বলতে চাইছিল আমি “যদি কিছু মনে না করো আমি একটু শুই এখানে” পরক্ষণে বলেনি যদি অরিন খারাপ কিছু ভাবে তাই। দিহান অরিনের দিকে ঘুরে শুইল। এক খাটে দুটো মানুষ দুই প্রান্তে শুয়ে একজন আরেকজনের চোখে ডুবে যাচ্ছে। দিহানের এমন নেশা ধরা চোখ অরিনের মনে অন্য রকম ঢেউ তুলছে অরিন চোখ নামিয়ে নিল। দিহান তাকিয়েই তাকল অরিনের দিকে। কোনো একদিন সে এই মেয়েকে বলেছিল কালো,অযোগ্য,অসামাজিক আরও কত কী। অথচ আজ এই মেয়েটা তাঁর সব থেকে প্রিয় একটা মানুষ। সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও যেন মন ভরবেনা। কিছুক্ষণ পরে অরিন আচমকা ডুকরে কেঁদে উঠে দিহান অবাক হয়।

_আরে কাঁদো কেন?” অরিন কিছু বলেনা হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে। দিহান অরিনের দিকে এগিয়ে আসে”
_কী হয়েছে অরিন?” দিহানের প্রশ্নে অরিন আরও বেশি কাঁদে তাঁর কষ্ট হচ্ছে,দিহানকে সে ঠকাচ্ছে এটা ভাবলেই তাঁর বুক ফেটে যায়। দিহান অরিনকে বলেই যাচ্ছে অরিন কেন কাঁদছে এটা যেন একবার বলে। দিহানের আহ্লাদী গলা শুনে অরিনের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। দিহান বলে”

_প্লিজ কেঁদো না বল কী হইছে? খুব ব্যথা করছে? কষ্ট হচ্ছে তোমার? বল প্লিজ। ডাঃ ডাকবো? ” অরিন কেঁদে কেঁদে বলল ”

_আত্মহত্যা মহাপাপ কেন বলবেন? যার এই জগতে কেউ নাই তাঁর জন্য কেন আত্মহত্যা হালাল নয় বলুন। আমার মতো অসহায়দের মরণের সময়টাও বুঝি অনেক দূর থাকে? বাঁচতে ইচ্ছে করেনা আমার। আমি সত্যি অনেক খারাপ আমার মৃত্যু কেন হয়না বলুন? এভাবে প্রতিদিন একবার মরার থেকে একেবারে একদিনেই ম,,,, “দিহান এতক্ষণ ধরে চুপ করো চুপ করো বলতে বলতে শুনাতে পারেনি অরিনকে। তাই আর কিছু না ভেবেই অরিনের ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিল। আপাতত অরিনকে চুপ করানোর জন্য এটাই বেস্ট উপায়। দিহান অরিনের ঠোঁট ছেড়ে দিতেই দুজনেই লজ্জায় চোখে চোখ রাখতে পারল না। দিহানের বাহুডোরে এখনো আছে অরিন। দিহানও অরিনকে ছেড়ে দিলনা অরিনও সরে গেলনা এভাবেই শুয়ে থাকল দুজন। অরিনের মুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠেছে। দিহানেরও কেমন জানি অনুভূতি হচ্ছে। পবিত্র সম্পর্কের সবকিছুই হয়তো এত সুখের।

জিহান ঘুম থেকে উঠে দেখল কোলবালিশটা খাট থেকে পড়ে গেছে সে তাঁর বালিশে নয় লারার বালিশে আছে। জিহান লাফ দিয়ে উঠে বসে। তাহলে কী সে আজও বালিশের দেয়াল ভেঙ্গে লারাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল? কালও সেইম ভুল করেছে সে, লারা তখন ঘুমে ছিল,যখন দেখেছিল লারাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে লারা টের পাওয়ার আগে তৎক্ষনাৎ ছিটকে সরে গেছিল। লজ্জা লাগছিল খুব আবার মনে অনেক কিছু আসছিল। মন চাইছিল একটা অপরাধ করে ফেলুক। লারার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিক।

আজও জিহানের লজ্জা লাগছে। লারা আগে ওঠেছে আল্লাহ জানে সে কীভাবে ঘুমাচ্ছিল। লারা তাকে নিয়ে কী কী ভাব্বে এটা ভেবে লজ্জাটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। জিহান ফ্রেশ হয়ে এসে কিছুক্ষণ রুমে বসে থাকল বের হতে তার লজ্জা লাগছে লারার সম্মুখীন হয় যদি সেই ভয়ে। কিন্তু কী বা করার বের তো হতেই হবে। জিহান রুম থেকে বেরিয়ে নিচে আসল। ডাইনিং রুম থেকে কিচেন টা খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়। লারা কোমরে আঁচল বেঁধে কাজ করছে। পেট অনেকটা উন্মুক্ত হয়ে আছে। জিহানের চোখ পড়তেই চোখ ফিরিয়ে নিল।কিন্তু ফিরিয়েও লাভ হলনা,আবার তাঁর চোখ আপনা আপনি চলে গেল লারার ফর্সা উন্মুক্ত পেটে। নীল শাড়িতে ফর্সা নারীদের বুঝি আরও সুন্দর লাগে? জিহানের অবাধ্য চোখ বার বার লারার দিকে যাচ্ছে।

রুহান সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে তারমানে রুহান এসে ডাইনিং টেবিলে বসবে? তাহলে তো কিচেনে তাকালে রুহানও,,,,,,। জিহান ওঠে গিয়ে লারার পাশে দাঁড়াল। কী বলবে সে বুঝতে পারছে না। লারার সাথে কথা বলতে গেলে তাঁর এই এক সমস্যা, কী বলে সম্বোধন করবে সেটাই বুঝতে পারেনা। জিহান ইতস্ততবোধ করে চলে যাচ্ছিল। রুহান বসে আছে দেখে আবার ঘুরে আসে লারা তাঁর কাজ করেই যাচ্ছে। জিহান একটু গলা ঝেড়ে বলল”

_উহুমমম। তো তো তোমার পে পে পেট দেখা যাচ্ছে।” আচমকা জিহানের কথায় চমকে ওঠে লারা। পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি তাঁর পেটের অনেক অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে। লারার দুহাতে আটা লেগে আছে তাই তাঁর হাতের কনুই দিয়ে কোমরে গুঁজে দেয়া আঁচল খুলতে চেষ্টা করল। জিহান হাত বারিয়ে দিল তার হাত কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবেই কাঁপছে। জিহান আঁচল কোমর থেকে ছাড়িয়ে দিল জিহানের হাতের ছোঁয়া লারার পেটে লাগতেই লারা কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠল, পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। জিহান একমুহূর্ত দাঁড়ায়নি চলে আসে ওখান থেকে। বুকের ভেতর তার হাতুড়ি পিটাচ্ছে কেউ। লারার প্রতি নেশা ধরে যায় তার। তাই দূরে দূরে থাকা ভালো। এদিকে লজ্জায় লারা লাল হয়ে গেছে। এমনিতেই সে লজ্জায় আছে এখন আবার লজ্জা পেল কী দরকার ছিল কোমরে কাপড় গুঁজার? নিজেকে নিজে গালি দিতে দিতে কাজ করতে লাগল।

দিশার একটা বদ অভ্যাস আছে সেটা হল সে ঘুম থেকে উঠে এসে আগে তাঁর ভাইয়ের রুমে আসবে পরে ভাইকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে যাবে। দিশা দিহানের রুমে উঁকি দিল দিহান রুমে নাই। ভাবল দিহান হয়তো নিচে চলে গেছে তাই সে নিচে চলে আসল। নিচে আসার পরে দেখল সবাই আছে কিন্তু দিহান নেই। দিশা বলল”

_কী ব্যাপার ভাইয়া এখনো আসেনি?” সুমনা কিচেন থেকে পানি এনে টেবিলে রাখছিলেন দিশার কথায় হাতের জগটা টাস করে টেবিলে রাখলেন। একটু জোরে রাখায় জগ থেকে কিছুটা পানি ছিটকে পড়ে আশেপাশে। সবার দৃষ্টি যায় সুমনার দিকে তিনি হনহন করে কিচেনে চলে যান। দিহানের উপর প্রচুর রাগ চেপে আছে উনার। অরিনের জন্য দিহান উনাকে রুম থেকে বের হতে বলে? সামান্য একটা মেয়ের জন্য উনার সাথে তর্ক ধরে? সুমনা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হানিফ চৌধুরীর জন্য রুটি নিয়ে যান। সবাই উনার দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে তাকে। উনি কোনো ভনিতা না করে বলেন”

_দিহান ওই মেয়ের রুমে আছে।” সুমনার কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকায়। দিহানের বড় চাচ্চুর রাগ সপ্তম আকাশে উঠে যায়। উনি দিহানকে বলেছিলেন অরিনকে কোনোদিন তিনি এই বাড়ির বউ বলে মেনে নিবেন না। আগেই বলছিলেন দিহান যদি কোনোদিন এই মেয়েকে মেনে নেয় তাহলে তিনি দিহানের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে দিবেন। দিহান আজ অরিনের রুমে মানে সে অরিনকে মেনে নিয়েছে। রাগে গিজগিজ করতে করতে উনি হানিফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন”

_তুই কী তোর ছেলেকে দিয়ে আমাদের সম্মান নষ্ট করেও শান্তি পাসনি? এবার এই রাস্তার মেয়েকে ঘরের বউ বানিয়ে সংসার ভাংতে চাইছিস?” হানিফ চৌধুরী নিজের ভাইয়ের কথার রেগে গেলেন তিনিও গর্জে উঠে বললেন”

_প্রতিদিন শুধু একটা কথা কেন বল আমি আমার ছেলেকে দিয়ে সম্মান নষ্ট করাইছি। পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে শুধু আমার ছেলে করেনি। তোমার ছেলে কী ঢাকঢোল বাজিয়ে বিয়ে করছে?
_ভাইয়া তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? বড় ভাইয়া রাগের মাথায় বলছে বাদ দাও।[লুপার বাবা]
_তুই চামচামি করবি না। সব সময় বড় ভাইয়ার চামচামি করিস। তোর সামনে যে প্রতিদিন আমায় যা তা বলে, তুই কখনো তাকে বাদ দিতে বলেছিস? চামচা কোথাকার।
_খবরদার আমাকে চামচা বলবা না ভাইয়া। আর বড়ো ভাইয়া তো ঠিকি বলছে তোমার ছেলের কারণে আমাদের মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। [লুপার বাবা]

_হ্যাঁ দুষ সব আমাদের ছেলের। আর তোমাদের সন্তানরা সাদা কাগজ। আমি চাইলে কী এটা লুকিয়ে রাখতে পারতাম না যে দিহান ওই মেয়ের রুমে আছে। লুকাইছি আমি? তোমাদের মতো এতো প্যাচ আমাদের ভেতরে নাই। [দিহানের মা]
_আমরা কী প্যাচ লাগাইছি? ওই আমরা কী প্যাচ লাগাইছি? [বড়মা]
_আম্মু চুপ করো কিসব শুরু করছো তোমরা? [জিহান]
_কী বলল ও শুনিস নাই আমাদের মতো ওদের প্যাচ নাই আমরা কী প্যাচ লাগাইছি ওকে বলতে হবে।[বড়মা]

এইভাবে তর্কাতর্কি করতে করতে এক সময় অনেক বড় ঝগড়া লেগে যায়। সারারাত না ঘুমানোর কারণে দিহানের চোখ লেগে গেছিল। চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুম ভেঙে যায়। দিহান অরিন নিচে নেমে আসে। এসে দেখে তার বাবাকে জিহান ধরে আটকাচ্ছে আর তার বড়ো চাচ্চুকে তার ছোট চাচ্চু ধরে আটকাচ্ছে। ধরেও লাভ হচ্ছেনা একজন আরেকজনকে যা তা বলে যাচ্ছে আর মারতে তেড়ে আসছে। এদিকে দিহানের মা আর তার বড় মা চেঁচিয়ে পুরোনো দিনের কথা তুলে তুলে একজন আরেকজনকে খুঁটা দিয়ে যাচ্ছেন। লুপার মা আর লারা তাদের দুজনকে থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশেই লুপা,দিশা,ইশি,দিয়া,রুহান কান্না করে যাচ্ছে। দিহান দৌড়ে নিচে আসলো। সে তাঁর বাবাকে মাকে থামতে বলল কেউ থামার নাম নেই। লারার কষ্ট হচ্ছে কত শখ করে এতকিছু বানালো আর এখন কিনা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হল? লারা অরিনের পাশে এসে দাঁড়ালো অরিন জানতে চাইল কেমনে কী হইছে লারা সব বলে গেল। সব শুনে অরিনের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। নিজেকে অপরাধী মনে হলো। সে সিদ্ধান্ত নিল এই বাড়িতে আর থাকবে না সে চলেই যাবে। যতদিন সে এই বাড়িতে থাকবে ততদিন এভাবে ঝগড়া হবে। তার জন্যই আজ এই শান্তি নীড়ে অশান্তির ছায়া নেমে এসেছে। চলে যাওয়া উচিত তাঁর কী লাভ মিথ্যে সম্পর্কের টানে এই সুন্দর সংসারে আগুন জ্বালিয়ে?

চলবে…..।

কিছু কিছু পাঠক পাঠিকা মনে হয় বোরিং হচ্ছেন৷ তাদের বলছি রহস্য সব খোলাসা হবে তবে সেটা সময় মতো গল্পের ট্রেইলার যেটা ছিল সেটা মনে হয় অনেকে পড়েছেন। এবার বুঝেন কত কাহিনি গল্পের বাকি আছে এখানে তো এখনো দিহানের অরিনের ভালোবাসাটা শুরু হয়নি একটু ধৈর্য ধরুন প্লিজ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here