শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_৫

0
599

#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_৫

অনেকটা সময় ধরে হৃদিতা কপি শপের সচ্ছ গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।আরাফ তার সামনে বসেই অংকের উওর মেলাতে ব্যস্ত।সম্পূর্ণ অংকটা শেষ পর্যায়ে কিন্তু উওর তার মিলছে না। বাম পক্ষ সমান ডান পক্ষ কিছু তো গড়বড় আছেই।বোকা আরাফ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা তার অংকের শুরুতেই গন্ডগোল শেষের মিলটা আশা করা একদম বোকামি।আরাফ বিরক্ত হয়ে হৃদিতার দিকে তাকায়। কিন্তু হৃদিতা অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। তৎক্ষণাৎ হৃদিতার দৃষ্টি অনুসরণ করে আরাফ।বাইরে একটি বেঞ্চিতে বিড়াল হাতে নিয়ে সাদা শাট পরা একটি ছেলে বসে আছে।ছেলেটা একদম কপিশপের মুখোমুখি বসে আছে যার কারনে হৃদিতা ছেলেটাকে খুব সহজেই দেখতে পাচ্ছে।ছেলেটা আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বিড়ালটার গায়ে, আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছে।আরাফ মাথা ঘুরিয়ে হৃদিতার দিকে তাকায়। হৃদিতা এখনো তাকিয়ে আছে সেই ছেলের দিকে; বিষয়টা মোটেও ভালো লাগলোনা আরাফের কাছে।মূহুর্তেই রাগ যেন সাত আসমানে উঠে গেছে।সামনে থাকা খাতাটা হৃদিতার দিকে ছুড়ে মেরে ধমকের সুরে বলে,

– পিচ্চি!আমি অংকটা পারছিনা বুঝিয়ে দে।
আরাফের হঠাৎ ধমকে কেঁপে উঠে হৃদিতা।বুকে হাত রেখে জোরে শ্বাস ছেড়ে তড়াক করে আরাফের দিকে তাকায়।
– কি সমস্যা ?
– ওই ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলি কেন?
খাতা থেকে তড়িৎ গতিতে হৃদিতা চোখ সরিয়ে আরাফের দিকে তাকায়।আরাফের এমন গম্ভীর কন্ঠের কথা শুনে বেশ অবাক লাগে তার।
– মানে?
নিজের হঠাৎ রিয়েকশেনে আরাফ নিজেই থতমত খেয়ে যায়।কথা ঘুরাতে আমতা আমতা স্বরে বলে,
– না মানে বুঝতে পারছি না পুরো অংকটায় কোথায় সমস্যা তুই আরেকবার বুঝিয়ে দিবি প্লিজ!
– ওকে।
হৃদিতা পুরো অংকটা আরাফকে আরেকবার বুঝিয়ে দেয়।আরাফ পড়ায় মগ্ন হয়ে গেলেই হৃদিতা আবার ডুব দেয় সামনে থাকা সেই ছেলের দিকে। বিষয়টি ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে আরাফ।
– সমস্যা কি তোর ওই ছেলের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?
কথাটি বলেই আরাফ টেবিলের উপর থাবা মেরে দাড়িয়ে যায়।বিকট শব্দে ভড়কে যায় হৃদিতা সহ কপি শপে থাকা ম্যানেজার আর চারজন কর্মচারী।তারা দ্রুত আরাফের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।এদিকে হৃদিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।হঠাৎ এই ছেলেটা রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারছেনা সে।আশেপাশে থাকা কর্মচারী গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে তার দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। লজ্জায়, ক্ষোভে ইচ্ছে করছে আরাফের গালে কষিয়ে একটা চড় দিতে কিন্তু সেই দুঃসাহস করবেনা হৃদিতা।
– সমস্যা কি আরাফ? হঠাৎ এমন করার মানে কি?
আরাফ যেন বাস্তবে ফিরে এসেছে আশেপাশে থাকা কর্মচারী গুলোর দিকে তাকিতে দূরে সরে যেতে বলে,ম্যানেজারকে হাত ইশারায় করে ডেকে বলে,
– আমি বলেছিলাম আমি যখন এখানে থাকবো তখন যেন এখানে কেউ না আসে। তাহলে এরা কি করছে?কাল থেকে যেন ভুল না হয়।
– ওকে স্যার।
ম্যানেজার মাথা নুইয়ে চলে যায়।আরাফ ধুপ করে চেয়ারে বসে পরে। কিন্তু হৃদিতা এখনো দাঁড়িয়ে আছে একদম অবাক হয়ে।
– কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস।
আরাফের শান্ত কন্ঠের কথা শুনে হৃদিতা বসে যায়। ভ্রু কুচকে সন্দিহান গলায় বলে,

– তুই রেগে গেলি কেন আরাফ?
– না কিছুনা। আসলে পড়াটা মাথায় ডুকছেনা।তাই সব কিছু অসহ্য লাগছে।
হৃদিতা কিছুক্ষন চুপচাপ তাকিয়ে ছিল আরাফের দিকে।গলা ঝেরে কেশে বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলে,
– এভাবে না রেগে কোথায় সমস্যা বললেই পারতি শুধু শুধু সিনক্রিয়েট করার কোন মানে হয় না।
– তুই ওই ছেলের দিকে কেন তাকিয়ে ছিলি?বুঝলাম না নিজেকে আড়াল করে লুকিয়ে লুকিয়ে ছেলে দেখিস।
হৃদিতার কথা শেষ হতেই আরাফের এমন বাজঁখাই সুরে বলা কথাটি মনে সন্দেহ সঞ্চার করে হৃদিতার।
– আমি কখন ওই ছেলের দিকে তাকালাম? আমি তো বিড়ালটাকে দেখছিলাম।কত সুন্দর একটা আদুরে বিড়াল।লেজটা আর কানটা দেখ এটা আমাদের দেশীয় বিড়াল না। নিশ্চই বাইরের কান্ট্রির।কত্তো আদুরেভাব ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে আদর করি।
আরাফ দ্রুত আবারো পেছনে তাকালো।সত্যি লোকটার কোলে বিড়ালটি সাদা অন্য জাতের।হৃদিতার বলা উওর শুনে সঙ্গে সঙ্গে মন ভালো হয়ে যায় আরাফের। হৃদিতার চোখে চোখ রেখে বলে,
– তোর কি বিড়াল পছন্দের?
– অবশ্যই।দেখ কতো আদুরে!
– ওকে তুই জাস্ট আধা ঘন্টা বসে থাক আমি আসার আগে পর্যন্ত কোথাও যাবিনা ভুলেও না।
– কিন্তু কেন?
– আহ! বসতে বলেছি বসে থাক।আমার কথার বাইরে গেলে কিন্তু উলটা পালটা কিছু হয়ে যাবে।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হৃদিতাকে রেখে আরাফ দ্রুত কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেলালো।ফিরলো ঠিক কাটায় কাটায় বেয়াল্লিশ মিনিট পর।হাতে তার সেই বিড়ালের মতো দেখতে একই রকম দেখতে আরেকটা বিড়াল।
– নে এবার পড়া খবরদার বাইরের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকবিনা।বিড়াল দেখার একান্ত ইচ্ছে থাকলে আমার দিকে তাকিয়ে থাক।
আরাফের কান্ডে আহাম্মক বনে যায় হৃদিতা।

ঘরের রোয়াকে বসে সুপারি কাটছেন আর এক মনে বকে যাচ্ছে নেহার দাদী হৃদিতাকে।
– কইছিলম পড়ানোর দরকার নাই,শুনবো কে কার কতা।হজ্ঞলে মিললা ওই মাইয়ারে এতদূর পড়তে পাঠাও।এত পইড়া কি করবো?চাকরি করবো?চাকরি।যতসব সময় থাকতে থাকতে মাইয়াডারে বিয়া দিয়া দাও,মাথা থাইকা বোঝাটারে নামাও।

সুফিয়ার কথায় এতক্ষন চুপচাপ দাতে খিল দিয়ে বসে থাকলেও শেষ পর্যায়ে আর বসে থাকতে পারলোনা নেহা।দ্রুত বিছানা থেকে নেমে সুফিয়ার সামনে দাঁড়ায়
-এইসব কি কথা দাদী?কোন দিক থেকে হৃদিতাকে তোমার বোঝা মনে হয়?সে তো তোমার ছেলের টাকায় পরে নেই।সে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে তবে তোমার সমস্যা কি?
– এমন মুখে মুখে তর্ক করবিনা কইলাম। ওই মাইয়াডারে বিয়া দিতে পারলে তোরে একটা ভালো ঘরে বিয়া দেওন যাইবো।ওই মাইডারে আগে বিদায় কর।
– কেন হৃদিতা থাকলে সমস্যা কি?হৃদিতা তো আমার বোন হিসেবে কোন অংশে কম নয়।
– চুপ কর!একখান ভালো পোলার সন্ধান মিলছে আমার। পোলা চাকরি করে । তার কোন যৌতুকের দাবিও নাই।আমি মাইডার কথা বইলা রাখছি।যেকোন এক সময় দেখতে আসবো, খবরদার তোরা বাধা দিবি না। নাইলে আমি এই সংসার ছাইড়া চইলা যামু কইলাম।
সুফিয়ার কথায় রাগের মাত্রা প্রবল হয়ে যায় নেহার।সামবে থাকা স্টিলের গ্লাসটাকে মাটিতে ছুড়ে মারে।তৎক্ষনাৎ ঝনঝন করে করে উঠে বিকট শব্দে।
– আম্মা তুমি এই বুড়িরে কিছু বলো, সমস্যা কি তার হৃদিতা পড়বে; আমি চাই হৃদিতা পড়বে।
কথাটা শেষ করেই আর এক মুহূর্তে না দাঁড়িয়ে দ্রুত কল পাড়ে যায় নেহা।এতক্ষন সবটাই নিরব দর্শক হিসেবে দেখছিলেন নেহার মা হামিদা।কি বলবেন তিনি? কি বলার আছে?যদি মুখ খুলে তবে তার মৃত বোন আর দুলাভাইয়ের নামে কুৎসিত কথা রটিয়ে ছাড়বেন তিনি।তার থেকে ভালো চুপচাপ দাতে দাত চেপে সবটা সহ্য করাই মঙ্গল।

ধপধপে সাদা বিড়ালটা কোলে নিয়ে তাকে আদর করতে মগ্ন হৃদিতা।আরাফ আড় চোখে তাকিয়ে হৃদিতার কান্ড দেখছে। কি সুন্দর আদুরে কন্ঠে কথা বলছে একটা বিড়ালের সাথে।আর আরাফ সে একটা জলজ্যান্ত মানুষ হয়েও কোন দিন মিষ্টি স্বরে দুইচারটা কথা বলে নি এই মেয়ে।
– এই যে বিড়াল মশাই আপনার গাল দুটো এত কিউট কেন? লেজটাতো সবচেয়ে বেশি সুন্দর।
হৃদিতার কথায় আরাফ দ্রুত জবাব দেয়,
– ওকে বিড়াল ডাকবিনা ওর নাম “হৃদি”।
-” হৃদি ” এটা আবার কেমন নাম। মানে কি আমার নাম হৃদিতা আর ওর নাম….
হৃদিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরাফ হাত ইশারায় তাকে থামিয়ে দেত।ভ্রু নাচিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বলে,
– তুই কি ভেবেছিস আমি তোর নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছি। নো নেভার “হৃদি” মানে হৃদয়! যেহেতু এই বিড়ালটাকে হৃদয়ের শুদ্ধ কোন থেকে ভালো লেগেছে তাই তার নাম রাখলাম “হৃদি”।
আরাফের এমন বচন ভঙ্গি কিছুই মাথায় ডুকলোনা বোকা হৃদিতার। উলটো মাথা নাড়িয়ে আরাফের কথার সম্মতি জানায়।
কিছুক্ষণ পর একজন কর্মচারী কফি নিয়ে এলে আরাফ হৃদিতাকে ইশারা করে কফি নেওয়ার জন্য।কিন্তু হৃদিতা কফি হাতে নেওয়ার সাথে সাথে বিড়াল মশাই থাবা মেরে সম্পূর্ন কফি হৃদিতার হাতের উপর ফেলে।গরম গরম কফির উত্তাপে ছিটকে দাঁড়িয়ে যায় সে।
– হৃদিতা বেশি জ্বালা করছে?
– ন..না অল্প ঠিক হয়ে যাবে তুই বস
হঠাৎ আক্রমণে হৃদিতার কন্ঠ কাপঁছে। হাতের দিকটায় অসহ্য জ্বালাপোড়া করছে।
– আমি ওয়াশরুমে গেলাম।
হৃদিতা দ্রুত চলে যায়।আরাফ বিড়ালটাকে টেনে নিয়ে লেজের মধ্যে গরম কফির ছ্যাকা দিয়ে বলে,
– এবার কেমন লাগছে তোর?অসভ্য বিড়াল। আসতে না আসতেই আমার পিচ্চিটাকে আঘাত দিয়ে দিলি।অথচ আমি কি না তার নামের সাথে মিলিয়ে তোর রেখেছি।
আরাফ ম্যানেজারকে ডেকে দ্রুত একটি মলমের ব্যবস্থা করে।তারপর সবার আড়ালে দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
হৃদিতা একা দাঁড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কাদঁছে।অসহ্য যন্ত্রনায় বার বার বাম হাতে পানি ঢালছে।টলমলে চোখদুটো আর স্থির রাখতে পারলো না। বাধঁ ভেঙ্গে নিঃশব্দে কান্না শুরু করে।নেকাবটা উপরে উঠিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।তখনি দরজায় কেউ আসার শব্দ হয়।

হৃদিতা নেকাব দেওয়ার আগেই ধড়ফড় করে রুমে ডুকে যায় আরাফ।তাকে দেখে বিষ্ফরিত চোখে তাকিয়ে থাকে সে।
– ত..তুই এখানে কি করছিস?
আরাফ কয়েক সেকেন্ড হৃদিতার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। হৃদিতার হাতে হাত রাখলেই ঝারা মেরে হাত সরিয়ে দেয় হৃদিতা।
– এইসব কি আরাফ? তুই এখানে কেন এসেছিস।
হৃদিতার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আরাফ উলটো আরো এক ধাপ এগিয়ে আসে তার দিকে। কয়েকপা পেছাতে গেলেই দেয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে স্থির হয়ে যায়।আরাফ হৃদিতার হাতে হাত রাখলে দুজনে যেন বরফে জমে যায়। এই প্রথম কোন পরপুরুষের ছোঁয়া হৃদিতার গায়ে গেলেছে।অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গিয়ে নিজের হাত ঝারা দিয়ে সরিয়ে নেয় কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া আরাফ উল্টো আরো শক্ত করে হাত মুছড়ে ধরে। যার দরুনে চোখ মুখ কুচকে কেঁদে দেয় সে।
– প্লিজ লাগছে ছেড়ে দে।
আরাফ তৎক্ষণাৎ হৃদিতার হাত ছেড়ে দেয়। এবার আলতো করে ধরে মলম লাগিয়ে দেয়।এখনো ঠোঁট চেপে কাদঁছে হৃদিতা কিন্তু কেন?গরম উত্তাপে জ্বালাপোড়ায় নাকি আরাফের ছোঁয়ায় তা বোঝা গেলনা।
আরাফ ধীরে সুস্থে তাকায় হৃদিতার দিকে।তার ভেজা চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে স্থির থাকতে পারলোনা আরাফ। ত্বরান্বিত তার হাত দুটো পৌছে যায় হৃদিতার দুই গালে। বৃব্ধ দুই আঙুল দিয়ে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয় তার।আরাফের বদ্ধতা থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছটফট শুরু করে হৃদিতা।
– একদম ভয় পাবি না। অন্য কেউ তোকে ছোঁয়ার দুঃসাহস করেনি।একমাত্র আরাফ ছুঁয়েছে তোকে।
– মানে কি আরাফ কে? যে আরাফ আমায় ছুঁয়ে দিতে পারবে।তুই কোন সাহসে এখানে এসেছিস। মলম লাগানোর হলে আমি লাগিয়ে নিতাম তুই এখানে কেন এলি?
হৃদিতার তেজপূর্ণ রাগী গলার কথা আরাফের মাঝে কোন প্রভাব ফেললো না বরং এখনো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মনে।
– তোর কোমল মায়া মাখানো মুখটার দেখার যে
সুযোগ্য সময় ছিল না।এখন যখন হয়েছে আমি ছাড় দেই কি করে বল?
– তোর মাথা ঠিক আছে? কি বলছিস এইসব তুই? সর সামনে থেকে আমায় যেতে দে।
হৃদিতা যেতে নিলেই পথ আটকে দাঁড়ায় আরাফ।হৃদিতার ভেজা দু চোখে ফু দিয়ে বলে,
– একদম ভয় পাবিনা আমায়।তোর জন্য যদি ঘরের বাইরে সবচেয়ে নিরাপদ অপশন থাকে সেটা হলো আমি।
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সুযোগ পেয়ে একা,ছিহহ!
– একদম উলটা পালটা ভাববিনা।তোকে আমি শ্রদ্ধা করি সম্মান করি স্নেহ করি।তাই তুই তোর সম্মান বজায় রেখে চলবি সবসময়।ভার্সিটির কমনরুমে মেয়ে থাকলেও নেকাব খুলবিনা খবরদার এটা আমার আদেশ।
– তুই সরবি সামনে থেকে আমার কাছে তোকে এখন অসহ্য লাগছে প্লিজ আমায় যেতে দে।
– আমি তোর অসহ্য নয় সহ্যর কারন হতে চাই। তোর কাছে থেকে দূরে নয় আরো কাছে আসতে চাই কিন্তু কি করে একটু বলবি আমায়?

আরাফের এইসব আবেগের কন্ঠের কথা সব হৃদিতার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত আরাফকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। টেবিলের উপর থেকে লেডিস ব্যাগটা নিয়ে কফিশপ থেকে সোজা মেইন রাস্তা ধরে হাটতে থাকে।মনে মনে সিধান্ত নেয় আরাফকে আর পড়াবেনা। ভুলেও আরাফের সামনে আসবেনা সে।
এদিকে আরাফ তার আঙুল গুলোতে আলতো করে ঠোঁট বুলিয়ে দেয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাতে ভর দিয়ে মাথা ঝুকে বিড়বিড় করতে থাকে,
– তোর কান্নার ফলে লেপ্টে যাওয়া চোখের কাজল আমার সব উলট পালট করে দিচ্ছে।একদিন তোকে আমার করে পাই,সেদিন, নিজের দুই হাত দিয়ে তোকে সাজাবো।লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, ঝকঝকে লাল কাচের চুড়ি, পায়ে আলতা, খোলা এলো মেলো চুল,ঠোঁট ভর্তি লেপটানো লাল লিপস্টিক,এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়ির আঁচল বিছিয়ে; ঘুটিয়ে বসে কাদবি তুই আর তোর সামনে আমি বসে তোকে শুধু নিষ্পলক ভাবে দেখবো।তোর লেপটানো চোখের কাজলে আরেকবার উম্মাদ হতে চাই।আজকের মতো আবেগের সুরে শত এলোমেলো জড়ানো কন্ঠে তোর সাথে কথা বলতে চাই! কিন্তু সুযোগ পাবো কি আমি?

আরাফ বিড়াল হাতে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায় কপিশপ থেকে। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সে যেন বাস্তবতায় ফিরে আসে।পক্ষান্তরেই মনে পড়ে যায় সে তো মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করেই সুখ পায়।তাহলে হৃদিতা তার জীবনে কী যে তার আবেগ বাড়িয়ে দেয় শত গুনে, অনুভূতি গুলো নাড়িয়ে দেয় ক্ষনে ক্ষনে!
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here