দু’মুঠো_প্রেম
ফারজানা_আফরোজ
৯
বাসের বাম পাশের মাঝের দুটি সিটে বসেছে আদিবা আর অরিন। তাদের মাঝে অর্থাৎ দুইজনের কোল ভাগাভাগি করে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আদুরী। কতবার করে সে বলেছে তার জন্য আলাদা সিট রাখতে কিন্তু ওর দুই পঁচা বোন রাখেনি। উল্টো ওরা বলেছে,
— টাকা কি গাছে ধরে? এক্সট্রা টাকা খরচ করার মানেই হয় না তাছাড়া একা একা কার সাথে বসবি যদি কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তখন কি হবে?
অরিন ও আদিবার ঝাড়ি খেয়ে চুপ বনে যায় আদুরী। তার ভীষণ লজ্জা করছে অন্যের কোলে বসতে।
অরিন ব্যাগ বের করে পানির বোতল বের করতে যাবে দেখলো বোতল নেই। রাজ্যর বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
— মাথা নস্ট হয়ে গিয়েছে আমার। বোতলটা যে কোন দুঃখে আনিনি কি জানি।
আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— আদু আমি পানির বোতল কিনে আনতেছি। জানিসই তো মিনিট মিনিটে পানি পান করতে হয় আমার।
কোল থেকে আদুরীকে নামিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো অরিন। আশে পাশে কোথাও ঠাণ্ডা পানি না পেয়ে কিছুটা দূরে যেতেই একজন ছেলেকে দেখে রাজ্যর বিরক্তি নিয়ে অন্য পাশ ফিরতেই ছেলেটি বলে উঠলো,
— ওয়াও কি মীরাক্কেল। ঝাঁসিকা রাণী তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে হাতে হারিকেন ধরতে বাধ্য হয়েছি আর সেই তুমি কিনা আজ আমার সামনে। একেই বলে পৃথিবীটা গোল। তাছাড়া আমার ভালোবাসার একটা দাম আছে বুঝছো।
— ওই মিয়া ফলো করছেন আমাকে? মার খেতে চান। সেদিন রাতেই বুঝছি আপনি ছেলেটা সুবিধার নয়। আস্ত একটা জলহস্তী।
— আরিফকে বকা দিচ্ছ বাহ সাহস আছে দেখছি। এই প্রথম কোনো মেয়ের কাছ থেকে বকা খাচ্ছি। দেখো মেয়ে আমি কিন্তু খুব রোমান্টিক তাইতো রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলছি।
— মরণ। আপনার নাম কে জানতে চেয়েছে? আমি বলেছি নাম বলতে? ওওও বুঝছি নিজের নামটা কিভাবে জানাবেন সেইজন্যই জাল ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। বড্ড ভেজাল মানুষ আপনি।
আরিফ ভাবতে লাগলো,
— এইখানে কোনো ভোট হচ্ছে না তাহলে এই মেয়ে জাল ভোট কিভাবে দেখলো। মেয়েদের কথার আগা গোড়া ঠিক নেই কিছু বললেই ঝগড়া লাগবে তারচে বরং কিছুক্ষণ কথা বলি। শালার ফয়সালটাও এলো না এখনও। কোথায় ওর হবু বউ সাজেক যাচ্ছে আগে ওর আসা উচিৎ কিন্তু এখন ও নিজেই হাওয়া। এখন যদি বলা হতো কোথায় দরবারে যেতে হবে সময় মতো ঠিকই চলে আসতো। আমি নিশ্চিত এই ছেলের কখনো বিয়ে হবে না।
আরিফের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে অরিন বলে উঠলো,
— আমার পথ ছাড়েন বলছি।
— যদি না ছাড়ি কি করবে?
— জানেন আমি কে? আমি কিন্তু ফয়সাল আহমেদের গার্লফ্রেন্ড।
অরিন নিজেকে আরিফের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা কথাটা বলল। আরিফ ভাবলো এই মেয়েই তাহলে সেই বাঘিনী। আরিফ আদিবাকে দেখেনি তাই অরিনের কথা বিশ্বাস করে মুখটা আঁধার করে রাখলো। প্রথম দেখাতেই একটু বেশিই ভালো লেগেছিল মেয়েটাকে কিন্তু এই মেয়ে তার ভাবী ইসসসসসস ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও মনটা শক্ত করে বলল,
— সরি সরি ভাবী আমি বুঝছি। আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কোনো সমস্যা হচ্ছে আপনার?
অরিন কিছুটা ভাব নিয়ে মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো। আরিফ তখন ফোন লাগালো ফয়সালের নাম্বারে….
— হ্যালো বল, কোথায় তুই?
— শালা, এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি কোথায় তুই?
— আর বলিস না আসার পথেই শুরু হলো গ্যাঞ্জাম তাই দেরি হচ্ছে। পাঁচ মিনিটের ভিতর চলে আসবো।
— তাড়াতাড়ি আয়। বাই দা ওয়ে ভাবীর সাথে দেখা হয়েছে। তোকে বলছিলাম না একদিন রাতে এক মেয়েকে ভীষণ ভালো লাগছে সেই তোর হবু বউ মানে আমার না হওয়া গার্লফ্রেন্ড।
— বাজে বকিস না। তুই চিনবি কিভাবে আদিবাকে?
— ভাবী নিজেই তো আজকে বলেছে সে নাকি ফয়সাল আহমেদের গার্লফ্রেন্ড। দেখ ভাবী তোকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে বলে না। কি সুইট দেখতে ভাবী।
— শালা নজর দিবি না। আসছি আমি। দেখে শোনে রাখ তোর ভাবীকে।
ফয়সাল ফোন কেটে দিলো। অন্যদিকে আরিফ ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা মার্কা মুখ নিয়ে অরিনকে খুঁজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কথা বলার সময় অরিন কোথায় গিয়েছে সে জানে না। বেস্ট ফ্রেন্ডের একটা মাত্র হবু বউ বলে কথা দেখে শোনে তো রাখতে হবে তাই না?
পাঁচ মিনিট হয়ে যাবার পরেও আসছে না অরিন। কিছুক্ষণের মাঝেই বাস ছেড়ে দিবে। জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরেও কোনো খুঁজ মিলছে না অরিনের। আদুরী বসে বসে চিপস খাচ্ছে। হঠাৎ করেই ফয়সাল এসে সিট থেকে আদুরীকে কোলে নিয়ে সে সিটে বসে পড়লো। আদুরী ও আদিবা ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
— সমস্যা কি এইখানে বসেছেন কেন?
— আমার ইচ্ছা।
আদুরী বলে উঠলো,
— মামার বাড়ির আবদার পেয়েছ। এক্ষুনি কোল থেকে না নামালে হিসু করে দিবো বলে দিলাম।
— বাহ বাহ ছোট শালী দেখি ধানি লংকা। ওকে দেও হিসু করে তাহলে আমিও ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়ে বলব, দেখেন এত বড় মেয়ে এখনও হিসু করে তখন কি হবে তোমার? রাস্তা ঘাটে মুখ দেখাতে পারবে?
আদুরী রেগে গিয়ে ফয়সালের চুল টেনে ধরে বলল,
— বড্ড পঁচা তুমি। দেখতে জিরাফের যমজ ভাই।
— কি খাবে চিপস নাকি চকোলেট?
আদুরী একবার বড় বোনের দিকে তাকিয়ে ফয়সালের কানে ফিসফিস করে বলল,
— ওই তুমি কাকে পটাতে এসেছো? আমাকে নাকি আপুকে?
ফয়সালও ফিসফিস করে বলল,
— দুইজনকেই।
— ওকে আপুকে পটাতে সাহায্য করব তবে তার জন্য তোমাকে অনেক কিছু করতে হবে। প্রচুর গিফট, মজা দিতে হবে।
— ওকে ওকে দিবো। এখন পটাতে সাহায্য করো।
আদুরী মনে মনে হাসল। মনের ভিতর দুষ্টুমি ভরপুর হয়ে উঠেছে তার। বিড়বিড় করে বলল,
— আমাকে অপমান করেছো তার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে দুলাভাই। পটাতে ঠিকই সাহায্য করবো কিন্তু তোমার অবস্থা নাজেহাল করে ফেলব। যদি বিয়ে হয় তাহলে তো সারাজীবনই শায়েস্তা করতে পারবো। আমার ভিডিও আপলোড দিবে তাই না, দেখো তোমার এমন এমন পিক তুলবো আর আপুকে বলে ভাইরাল করবো কল্পনায়ও করতে পারবে না। পাজি দুলাভাই।
অন্যদিকে ফয়সাল ভাবছে,
— একবার তোমার বোনকে বিয়ে করি তখন আমার চুল ধরে টানার প্রতিশোধ নিবো। বাসর রাতে ভাইরা ভাইকে আটকিয়ে রেখে তোমাকে শায়েস্তা করবো, বড় হয়ে প্রেম করতে চাইলে তখন শুধু ছ্যাকা খাওয়াবো। তখন বুঝবে দুলাভাই কি জিনিষ হুহহ।
আদিবা তখন চেঁচিয়ে উঠে বলল,
— আমার ফ্রেন্ড বসেছে এইখানে উঠুন বলছি।
— উঠবো না কি করবে? আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবো ওকে।
আদিবা ভাবলো কিছুক্ষণ। ভাবনার জগত থেকে একটা কথাই রিপ্লাই আসছে,
— বসতে দে আদু। তাহলে তো তোরই লাভ। সুন্দর সুযোগটি হাত ছাড়া করিস না পাগলী।
আদিবা কিছু না বলে জানালার দিকে মুখ এনে বসে রইলো। আদুরী ফয়সালের কোলে এখনও। তারা দুজন ফিসফিস করে কথা বার্তা বলছে যেন আদিবা না শোনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর অরিন বাসে উঠলো তার পিছনে আরিফ। অরিন একবার পিছনে আরেকবার সামনে তাকিয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে আটকে উঠলো। আরিফের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে দিয়ে বলল,
— আমার উনি চলে আসছে এখন আপনি যেতে পারেন।
ভ্রু জোড়া কুচকালো আরিফ। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো অন্য একটি মেয়ের সাথে বসে আছে তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু। অরিনের সাইড কাটিয়ে ফয়সালের সামনে এসে দাঁড়ালো আরিফ। স্ল্যাং ভাষা ইউজ করে বলল,
— বা** ল তুমি গার্লফ্রেন্ড রেখে এখন অন্য মেয়ের সাথে বসেছো। খালি আমার চরিত্রের দোষ ধরিস এখন যে তোর চরিত্র কেমন সেটা চেয়ে দেখ। আমি তো তাও লুকিয়ে লুকিয়ে চার পাঁচটা প্রেম করি আর তুই, তুই তো সামনা সামনি। এমন চরিত্র থাকলে কোন মেয়ে প্রেমে পড়বে তোর?
আরিফের কথা ফয়সালের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। অরিন বুঝতে পারছে আরিফ আর ফয়সাল যে একে অন্যকে চিনে। দাঁত দিয়ে আঙ্গুল কামড় দিয়ে আদিবাকে ইশারা করে বলল সে যে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে।
ফয়সাল বলল,
— পাগলের মত কিসব বলছিস স্পষ্ট ভাবে বল।
আরিফ কিছু বলতে যাবে তার আগে অরিন এমন একটি কাজ করে বসলো যাতে আরিফের চোখ কপালে। রসগোল্লার মতো চোখগুলো তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে,
চলবে,