#কোনো_এক_শ্রাবণে
পর্ব-১৫
শাহাজাদী মাহাপারা
সময় নিজের গতিপথে এগোয় তার সাথে এগোয় সবার জীবন। দিন যায় রাত আসে সময়ের চক্র তার মতই বহেয়মান থাকে।
সবার জীবনে সময়ের মূল্য অনেক তবুও হঠাৎ জীবনের একটা সময় আসে যখন আর সময়ের চক্রে এগোতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় যদি সময়টা এখানেই থেমে যেতো৷ কিন্তু সময় কবে শুনেছে কার কথা?
আমেরিকা থেকে ফেরার পর অন্য এক বেয়াজিদের দেখা পেলো সূচি৷ তার বহু কাঙ্খিত বেয়াজিদ।তার আমেরিকা প্ল্যান সাকসেসফুলি ওয়ার্ক করেছে৷ তবুও সূচি মাঝে মাঝে চিন্তায় পরে যায় এই বেয়াজিদটা মেকি বেয়াজিদ নয়তো? মন কে স্বান্তনা দেয়।বেয়াজিদ সূচির মাঝে দাম্পত্য সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়েছে। তবুও মাঝে মাঝেই সূচির মনে হয় এই ভালোবাসার স্পর্শটুকুও যেন তার জন্য না।সব ভাবনা এক দিকে রেখে বেয়াজিদকে জীবনে পাওয়ার আনন্দ তাকে নতুন করে উজ্জীবিত করে ভালোবাসার জন্য, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। আমেরিকা থেকে ফিরেছে ২ মাস হলো।বেয়াজিদ গত ১৬ দিন যাবত ক্যাম্পে ফিরেছে।খালি বাসা যেনো গিলে খেতে চায় সূচিকে। শশুর শাশুড়ি বাড়িতে থাকেন তবে সূচি তাদের থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখে৷সূচি মনে মনে ঠিক করেছে এবার বেয়াজিদ ফিরলে সে তার সাথে চাকরি সংক্রান্ত কথা বলবে। দুটো মডেলিং এজেন্সি থেকে কল এসেছিলো। এবার সে কাজে ফোকাস করতে চায়। জানেনা বেয়াজিদ সায় দিবে কিনা? না দিলেও সে কাজ করবে৷এতবড় অফার হাতছাড়া করার প্রশ্নই আসে না৷
——————————————–
বেয়াজিদের হাতে এই মুহূর্তে একটা লেটার। মিলিটারি হেডকোয়ার্টার থেকে এসেছে।লেটারে দুটো কথায় বারবার তার চোখ পড়ছে। ১ম তার প্রোমোশন হয়েছে এবং ২য় তাকে আগামী সপ্তাহে তাকে শীপে যেতে হবে। মাঝে মাত্র ৩ দিনের ছুটি৷ এই ছুটিতে সে তার বাড়ি যাবে বলে ঠিক করলো।কিন্তু বাড়ি যাবে কার টানে? সূচি? চেহারায় তার উপহাসের হাসি ফুটলো।সে জানে একটা মেকি সম্পর্ক বয়ে বেড়ানো কত ভাড়।তবুও সে বইবে। কারণ সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সূচির শুরু থেকে শেষ সবই জানে বেয়াজিদ তবুও সে চুপ রবে।কারণ সে মাহাপারার কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। আমেরিকা যাবার কি উদ্দেশ্য ছিলো সূচির সেটাও সে জানে। তবুও সূচিকে প্রশ্ন করেনি কখনো। এবার সে বাড়ি ফিরবে শুধু মাহাপারার প্রতিজ্ঞার টানে। মাহাপারাকে যে কথা দিয়েছে সূচির কোনো অযত্ন হতে দিবে না।
মাহাপারার সাথে দেখা হবার দুদিন পরই বেয়জিদ বাংলাদেশে চলে আসার প্ল্যান করে। সূচি বাধা দেয় নি। চলে আসার দিন বিকেলে বেয়াজিদ মাহাপারার ডোমে হাজির হয়। জানতে পারে মাহাপারা সেখানে নেই। মাহাপারা যে স্কুলে বাচ্চাদের পড়ায় সেখানের ঠিকানা নিয়ে স্কুলে উপস্থিত হয়৷ কিছুক্ষণ পরেই মাহাপারাকে বের হতে দেখা যায়। তার সামনে গিয়ে দ্বারাতেই তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে মাহাপারা।বেয়াজিদ পথ রোধ করলে মাহাপারা জিজ্ঞেস করে – “কেনো এসেছো আবার বেয়াজিদ? অপমানের কি কিছু বাকি রয়েছে আরো?”
“আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না মাহাপারা?”
” তোমাকেতো ক্ষমা করেছি কবেই। সূচনার সাথে আমার কথা হয়েছিলো। তোমার বোনকে কেউ পালাতে সাহায্য করেনি বেয়াজিদ। আর আমি জানি তুমি তোমার মায়ের কথায় আমার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছো৷ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে এরজন্য দোষারোপ করছি না।” ” আমি জানি মাহাপারা। কিন্তু তুমি নিজেকে কেনো কষ্ট দিচ্ছো?তুমি কেনো ভালো নেই?”
” আমি ভালো আছি বেয়াজিদ।”
“কফি খাবে মাহাপারা?আজ ব্যাক করবো বাংলাদেশে। আবার কবে দেখা হবে জানিনা৷”
মাহাপারা এক পলক চাইলো বেয়াজিদের চোখের দিকে৷ কই আগের মতো সেই ডুবে যাওয়ার অনুভূতি আর হচ্ছে না। সময় হয়তো সত্যিই মহৌষধ।সময় সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
কফি শপে বসে মাহাপারা বেয়াজিদকে জিজ্ঞেস করলো-
“তোমার বউ কে আনোনি?হানিমুনে এসে বউকে একা ফেলে রেখে এসেছো হোটেলে?”
” না সে বাকিদের সাথে আছে।”
“মানে?”
” আমার কলিগরাও এসেছে। এটা হানিমুন না। এটা একটা হলিডে মাহাপারা।”
“আচ্ছা। তোমার বউ বেশ সুন্দরী। তোমার মায়ের চয়েজ ভালো। এবার তার পুত্রের জন্য পারফেক্ট পুত্রবধূ খুঁজেছেন তিনি।”
” তুমিও আমার মায়েরই চয়েজ ছিলে।”
” হ্যাঁ তাইতো এত সহজে মায়ের কথাতেই ছেড়েছিলে।” তাচ্ছিল্যের সাথে বললো মাহাপারা।
বেয়াজিদ হাসলো শুধু।”সেদিন যার বুকে পরে কান্না করছিলে সে নিশ্চয় নতুন জন।” মাহাপারা শান্ত চোখে বেয়াজিদের দিকে তাকালো।
” সবার জীবনে মুভ অন করার রাইট রয়েছে। মাহাপারারও রয়েছে।”
শীতল সে কন্ঠ শুনে খেই হারিয়ে ফেললো বেয়াজিদ। নিজেকে সামলে নিলো দ্রুত।
“পরিচয় তো করালে না। তুমি সেদিন আমাকে দেখে কান্নাই বা করছিলে কেনো?”
“দাস্তান হ্যারোল্ড ওর নাম।”
“ওহ।”
” আমার এখন ওঠা উচিৎ। ডোমে ফিরতে হবে। তুমি ভালো থেকো বেয়াজিদ।আর তোমার বউ বেশ মিষ্টি। তাকে কখনো কষ্ট দিও না। সে তোমায় ভালোবাসে। পুরোনো কথা ভেবে নিজেদের মাঝে দূরত্ব রেখোনা। আমি ভালো আছি। আমার ভালো থাকার চাবিটাও পেয়ে গিয়েছি।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো মাহাপারা। বেয়াজিদকে সে চেনে। বিয়ে করলেও সূচির সাথে তার বৈবাহিক জীবন অস্বাভাবিক। বেয়াজিদের এখানে আসবার মূল কারণই মাহাপারা কেমন আছে তা জানা।আশা করাই যায় এরপর আর কোনো সমস্যা হবেনা।
রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে বেয়াজিদ নাম ধরে ডাকলো মাহাপারাকে।
মাহাপারা পিছন থেকে আসা ডাকটা স্পষ্ট হলেও আজ আর সেই ডাকে মাহাপারার হৃদয়ে কম্পন হচ্ছে না। হঠাৎ মাহাপারার মনে হলো তার নাম মাহাপারার থেকে “মাহাপ্যারা” শুনতে বেশি ভালো লাগে৷আচ্ছা কেনো লাগে?আচ্ছা কেনোই বা সে দাস্তানের নাম জানালো বেয়াজিদকে? কিছু কেনোর কোনো উওর হয় না।
————————————————
সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে মাহাপারা ডোমে ফেরে নি৷সন্ধ্যার সময়টা লেইকের কাছে কাটিয়ে দাস্তানের বাসায় গিয়েছিলো। দাস্তান বাসায় না থাকায় বহুক্ষণ বাহিরে গার্ডেন এরিয়াতে রাখা বেঞ্চে বসে ছিলো। একসময় বেঞ্চটার উপরেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। রাতে বাসায় ফিরে দাস্তান গার্ডেনের বেঞ্চে মাহাপারাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বেস অবাক হয় সে।
মাহাপারার এ সময় ডোমে থাকার কথা। দরজা খুলে মাহাপারাকে ডাকে সে৷ ঘুম ঘুম চোখে দাস্তানকে দেখে হাত বাড়িয়ে দেয় মাহাপারা। মাহাপারার হাত ধরে উঠে বসায় দাস্তান। হাত ঠান্ডা বরফের মতো জমে যাচ্ছে দ্রুত তাকে ঘরে যেতে বলে৷ মাহাপারা উঠে দাড়ায় ধীরে ধীরে শাড়ির আচঁল সামনে টানতে টানতে বাড়ির ভেতরে যায় সে।
কফি ব্লেন্ডিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে মাহাপারাকে দেখছে দাস্তান। ফায়ার বোনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। ঘাড় ঘুরিয়ে দাস্তানের দিকে তাকাতেই এক দন্দ চোখাচোখি হয়। দাস্তান কফির কাপ নিয়ে এসে মাহাপারার হাতে দেয়।
“ধীরে ধীরে পান করো। কফিটা গরম।”
মাহাপারা কফির ঘ্রাণ নেয় মন ভরে৷
দাস্তান মাহাপারার পাশে এসে বসে।
” হঠাৎ আমার বাসায় কি মনে করে?”
” আসতে বারণ আছে? চলেই যাবো কিচ্ছুক্ষণ পর।তোমায় দেখতে মন চাইলো তাই চলে এলাম।”
” তোমার এক্স এসেছিলো বুঝি দেখা করতে?” মাহাপারা মোটেও অবাক হয়নি। যেনো সে জানতোই দাস্তান এভাবে বলবে৷
” হুম” মাহাপারা কফিতে চুমুক দিলো।
দাস্তান মাহাপারার দিকে ফিরতেই দেখলো মাহাপারার কিউপিড বো তে কফির স্মুচ লেগে আছে। ওই মুহূর্তে তার কি হলো কে জানে? টুপ করে চুমু বসিয়ে দিলো। বিস্ময়ে মাহাপারার চোখগুলো যেনো অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। একদন্ডও আর বসলোনা মাহাপারা কফির কাপটা সেন্টার টেবিলে রেখেই দৌড়ে বের হয়ে গেলো সে৷ এহেন কান্ড দেখে দাস্তান নিজেও হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো দরজার দিকে।
———————————————–
নিপা আবরার ঢাকায় শিফট হয়েছে ২ মাস হতে চললো। নিপার দেখা শোনা করার জন্য সিলেটে কেউ নেই। আর আবরারেরও অফিসের কাজের প্রেসার যাচ্ছিলো তাই প্রথমে নিপাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো ঢাকায়। তার ঠিক এক মাস পর পোটলাপাটলি গুছিয়ে নিজেও হাজির হয়েছে সে। সিলেটের কাজের জন্য অন্য কাউকে ট্রান্সফারের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে এসেছে সে৷ তার এভাবে চলে আসায় নাফি জাদিদদের হাসি তামাশার শেষ নেই।সূচনা তো বলেই দিয়েছে আবরার ভাইয়ের এখন আর নিপাকে ছাড়া চলবেনা। আবরারও অকপটে শিকার করেছে। বিয়ের পর এত দিনের জন্যও আলাদা থাকেনি ওরা। আর আবরারের মুখেও এখন বুয়া খালাদের রান্না রোচে না। তাই চলে এসেছে।
হসপিটাল থেকে রিপোর্ট পাওয়ার দিনের কথা মনে পড়লে এখনো আবরারের চোখের কোনে চকচক করে ওঠে। এত আনন্দ এর আগে কখনোই হয়নি তার।
নিপার এখন সাড়ে তিনমাস চলছে প্রেগন্যান্সির।শরীর কাহিল হয়ে যায় অল্পতেই তাই আবরারের যত্নের শেষ নেই৷ ইদানীং প্রায়ই নিপার মা নিপাকে দেখতে আসে এটা সেটা নিয়ে। দোলাও আসে তার দুই বাচ্চাকে সাথে নিয়ে। নিপা মাঝে মাঝে ভাবে এত সুখ কি তার কপালে লিখা ছিলো। দিন গুলো স্বপ্নের মতোই কাটুক। এই স্বপ্ন কোনোদিন না ভাঙুক।
সুখপায়রাটা তার আকাশময় উড়ে বেড়াক স্বাচ্ছন্দ্যে। ভালোবাসারা বাঁধা পরুক তার উঠোনে।
———————————
সেদিনের পর দাস্তানের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় সে বলিভিয়ার জন্য চলে যায়। ফিরতে ফিরতে মাসখানেক লাগে। এ কদিন মাহাপারা তার মাস্টার্সের রেজাল্ট পায়। স্কোরিং ভালো।এত ভালো স্কোরার সে কখনোই ছিলো না। জীবন আর সময় মানুষকে অনেকটাই বদলে দেয়। এই যেমন টপ টোয়েন্টির রেংকিং এ তার নাম রয়েছে তা সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা।
মাহাপারা চিন্তা করলো দ্রুত এমফিলের জন্য আপ্লাই করবে।সেমিস্টার আগামী মাস থেকেই শুরু হয়ে যাবে। এখন তো বিয়ে করে বাচ্চার ফলন দেয়ার মতো টেনশন নেই। তাই পড়াশোনাই নাহয় চলুক।তার ইউএস সিটিজেনশিপের জন্যও আপ্লাই করেছিলো। আর কিছু মাসের মধ্যে সেটাও হাতে এসে পড়বে।
জীবনে আর কি চাই! সময় সুযোগ করে একবার দেশ থেকে ঘুরে আসবে।
আজ বড্ড বাড়ির কথা মনে পড়ছে।আম্মু,আব্বু, ভাই ভাবি, আপারা,দুলাভাইয়েরা, তাদের আন্ডা বাচ্চা গুলো,কামাল ভাই, নাসরিন ভাবি, দাস্তান… দাস্তান! ওর কথা মনে পড়ার মতো কিছুই না। তবুও মনে পড়ছে৷ গত একমাস যাবত ওর সাথে যোগাযোগ হয়নি।সে চেষ্টা করেছে। আমি নিজেই করিনি৷ কি লাভ যোগাযোগ করে! বেচারা শুধু শুধু কষ্ট পাবে।এটাতো অস্বীকার করার মতো না যেই আমার সাথে জড়িয়েছে সেই কষ্ট পেয়েছে। প্রফেসর ড. ড্যানিয়েল ওয়াকারের বাসায় সেদিন রাতে দাওয়াত করেছিলেন।তার স্ত্রী ডর্ম ছেড়ে আমাকে তাদের সাথে থাকতে বললেন। এই দুজন নিসন্তান বৃদ্ধ বৃদ্ধা। প্রতি বছর তাদের আয়ের একটা অংশ বিভিন্ন দেশের অনাথ মেধাবী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য দান করেন। এই সূত্রেই আমার কলেজের স্যারের সাথে তার পরিচয় হয়েছিলো। তিনিই আমার নাম প্রফেসর ওয়াকারকে রিফার করেন।
আমার ইউ এস আসার পর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্সের শুরুর দিকে স্যারের সাথে আমার পরিচয় হয়।অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান লোক তিনি৷ডাউন টু আর্থ। তার স্ত্রী এবং তার মাঝে অহংকারের কোনো চিহ্ন নেই।তখন রাজি না হলেও এখন ভাবছি ওখানে শিফট হয়ে যাবো।
মাহাপারা ল্যাপটপটা ওপেন করে ভিডিও কল করলো বাসার মাউন্টে। ঢাকায় আজ শনিবার সবাই বাসায় আছে সম্ভবত সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। এই গোধূলি সময়টা বেশ ভালো লাগে মাহাপারার। তার আর দোলা আপার রুমের ছোট বেলকনি কাম ছাদ টায় এ সময় দোলনায় বসে তারা কতো শত গল্প করতো আজ সব মনের কুঠুরীতে আটকে রেখেছে। আবার কবে এভাবে নিজের বারান্দাটায় বসে গল্প করবে বোনেরা মিলে, দোল খাবে দোলনাটায় ভাবতেই চোখের কোণে জল জমা হলো।এখন আর সহজে কান্না পায় না। ছিচকাদুনী মাহাপারাটাও হঠাৎ করে বড় হয়ে গিয়েছে। বয়স বাড়ছে ২৬ চলে এখন।
দেশে ফেরার আগে দাস্তানের সাথে দেখা হলে মন্দ হতো না।তবে তাকে এখন পাওয়া দুষ্কর।কে জানে কোন দেশে আছে তার মেডিকেল টিম নিয়ে।
দাস্তানের কাজ সম্পর্কে শুরুতে কিছুই জানা ছিলোনা।ভেবেছিলাম ওর বাবার মতই সম্ভবত রেস্টুরেন্ট সামলায়। পারিবারিক ভাবে সে তিনটে রেস্টুরেন্ট এবং দুটো মোটেল এর মালিক।তা থেকে বেশ ভালোই আয় হয়।এ ছ’মাসে যখন সে দু বার গায়েব হয়ে গেলো বহু দিনের জন্য যখন তার খোঁজ পেলাম না তখন সন্দেহ করেছিলাম সম্ভবত বিভিন্ন শহরে থাকা ব্যবসা গুলো দেখতে যায়। কিন্তু যখন সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম তার সে কি হাসি! কি আশ্চর্য ব্যাপার।
“এভাবে হাসার মানে কি!”
“মাহাপ্যারা তুমি সত্যিই ভেবেছিলে আমি রেস্ট্রোর ব্যবসা করি?” ” হ্যাঁ।কারণ তুমি আমাকে কখনোই তোমার পেশা সম্পর্কে বলো নি।” ” তা ঠিক।” “হুম”। “ঠিকাছে আজ তোমাকে আমার পেশা সম্পর্কে বলি।”
“আমি একজন কোয়ালিফাইড ডাক্তার।”
“ইউএসএএ -এর একজন নিউরোসার্জন হিসেবে কমিশন্ড অফিসার।”
“তুমি এ জন্যই কিছুদিন পরপর লম্বা সময়ের জন্য গায়েব হয়ে যেতে?”
দাস্তান হাসলো।
ফোনের রিংটোন অতীত থেকে বর্তমানে টেনে আনে মাহাপারাকে। নাফি কল করেছে। নিশ্চই দেশে যাওয়া নিয়ে বলতে কল করেছে।ফোন ধরে কথা বলা শুরু করলো মাহাপারা।
ছ’মাসের ব্যবধানে বেয়াজিদ আর সূচির সম্পর্ক যথেষ্ট শুধরেছে।একটা পিছিয়ে পরা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে তাদের মাঝে সমঝোতা আর সম্মান দুটোই বেড়েছে। সূচি এর মাঝে বেশ কয়েকটা মডেলিং এসাইনমেন্টও পেয়েছে। বেয়াজিদ তাতে সায় দিলেও তার শাশুড়ী খুব একটা ইচ্ছুক না। তবুও ছেলে আর ছেলের বউয়ের সুখ দেখতে চান তিনি।তাই খুব একটা উচ্চবাচ্য করেন নি। বেয়াজিদ বেশির ভাগ সময় শিপে কিংবা ক্যাম্পেই কাটায়।বাড়িতে আসে খুব কম।গত ছমাসে মাত্র তিন বার এসেছে তাও ৩-৪ দিনের বেশি ছুটি পায় নি।
ইদানীং সূচির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। সামনে দুটো প্রজেক্ট রয়েছে।আগামী বছর সম্ভবত তার নতুন মিউজিক এ্যালবামও আসবে৷ আর এখন এমন ঘন ঘন শরীর খারাপ লাগাটা তার ভালো লাগছেনা৷ সামথিং ইজ গোয়িং রঙ। কিন্তু ব্যাপারটা ধরতে পারছেনা।একবার ডাক্তার দেখানো উচিৎ।কালই যাবে সে ক্লিনিকে।
নিপার পেট ফুলে ফুটবল আকৃতি নিয়েছে। ১২ কেজি ওজন বেড়ে শরীর ফুলে ঢোল। এখন নাফি রোজ আলুর বস্তা বলে চেতায়। তবে নিপার রঙ আগের চেয়ে বেশি খুলেছে৷সাতের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।ঋতু এক হাতে সব সামলাচ্ছে। কিছুদিন আগে নিজের মিসক্যারেজের খবরটা পেয়েও শক্ত ছিলো সে। নাফি বেশ ভেঙে পড়েছিলো। শত হোক নির্ভান তো আর তার প্রথম সন্তান না। যে আসতো সেই প্রথম বলে গণ্য হতো। কিন্তু এখন তো সেই আশাও নেই। আবার কবে আল্লাহ মুখ তুলে চাইবেন কে জানে! প্রেসার হাই ছিলো ঋতুর তাই এইভাবে মিসক্যারেজটা হয়েছে। বাচ্চাটা চলে যাওয়ার তিনদিন পর যখন কেউ বাসায় ছিলো না খালি বাসায় চিৎকার করে কেঁদেছে সে তার সাক্ষ্মী এ বাড়ির দেয়াল গুলো৷ এখন তার বেশির ভাগ সময়ই কাটে নিপার জন্য এটা সেটা করে। ঋতুর শাশুড়ীও ঋতুকে ইদানীং অনেক সাহস দেন।ঋতু তার শাশুড়ীর এমন রূপ দেখে যারপরনাই বিস্মিত। তার শাশুড়ী তার জন্য ভালো ভালো রাধছেনও। যদিও তার শরীরটা খুব একটা ভালো থাকে না৷ তবুও তিনি ছোট করে কিছু একটা রোজ তৈরি করবেনই।
কামাল আর নাসরিন সবচেয়ে সুখী দম্পতি এ বাড়ির।ছেলেকে নিয়ে বেশ আছেন৷ এখনো মাঝে মাঝেই রান্নার সময় নাসরিন গুণ গুণ করে গান গেয়ে ওঠে। জাদিদ তো কিছুদিন আগে তার গান শুনে বলেই ফেলেছি বাংলাদেশ আইডলে নাম লেখাতে৷ নাসরিন চোখ বড় বড় করে চেয়েছিলো৷
শুধু এক মাহাপারার অভাব বোধ হয় এ বাড়িতে। সেও চলে আসবে আর কিছুদিনের মাঝেই।
চলবে…!
Shahazadi Mahapara’s Inscription